বেহুদা পোস্ট: গন্দম/গন্ধম ধন্দে গল্প লেখার কলাকৌশল

অমিত আহমেদ এর ছবি
লিখেছেন অমিত আহমেদ (তারিখ: বুধ, ০৪/০৭/২০০৭ - ১২:২৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

auto

সামহোয়্যারে লেখা পোস্ট করার পুর্ব মূহুর্তে লগআউট হয়ে লেখা হারাবার অভিজ্ঞতা আমার বেশ কয়েকবারই হয়েছে। একবার তো "গন্দমের" পুরো একটা পর্ব গায়েব হয়ে গিয়েছিল। এবার সচলায়তনেও একই অভিজ্ঞতা হলো। লেখার আর্ধেকটা লিখে প্রিভিউ চাপ দিয়েছি, লেখা ভোজবাজীর মত গায়েব হয়ে গেল! সে যাই হোক, বেহুদা পোস্টের দ্বিতীয় পর্বে আপনাদের স্বাগতম জানাচ্ছি।

শিরোনাম দেখেই বুঝে যাবার কথা এ লেখা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ ভাবে আমার লেখা সিরিজ গল্প (উপন্যাসও হতে পারে) "গন্দমের" সাথে জড়িত। যারা "গন্দম" কখনও পড়েননি তাঁদেরকে জানাই, "গন্দম" আমার লেখার ব্যগ্র প্রচেষ্টার (ব্যর্থ নাকি সে বিবেচনা সম্মানিত পাঠকদের) একটি অসমাপ্ত ফল। সামহোয়্যারে ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হচ্ছিল। কথা না বাড়িয়ে আসল আলোচলায় আসা যাক:

গন্দম ফলের বানান কি?

আমার জানা ছিল গন্দম ফলের বানান গন্ধম। সে বানানেই গল্পটির প্রথম পর্ব আমি লিখেছি। পরে কমেন্টে আরিফ ভাই জানালেন গন্ধম নয়, হবে গন্দম। আমিও সে অনুযায়ী বানানটা ঠিক করে নিলাম। কিন্তু সেদিন অনলাইনে একটা কবিতা পড়তে গিয়ে দেখি সেখানে গন্দম বানান করা হয়েছে "ন্ধ" দিয়ে। আমি তখনই মেসেঞ্জারে এক বন্ধুকে জিজ্ঞাস করলাম। সে প্রথমে বলে "ন্ধ", পরে "ন্দ" হতে পারে নাকি জিজ্ঞাস করার পর সে যায় কনফিউসড হয়ে। বলে "ন্দ"ও হতে পারে।

আমার কাছে কোন বাংলা অভিধান নেই। তাই মিলিয়ে দেখতে পারছি না। অনলাইনে কিছু বাংলা অভিধানে চেষ্টা করলাম, সেগুলোতে "গন্দম" কিংবা "গন্ধম" কোনটারই এন্ট্রি নেই।

কোন একটা বিশেষ কারনে গন্দম গল্পটার উপর আমার একটা আলাদা টান আছে! তাই নিশ্চিত না হয়ে গল্পটা সম্ভাব্য ভুল শিরোনামে চালাতে চাইছি না। কেউ যদি দয়া করে অভিধান দেখে আমাকে জানাতেন তাহলে কৃতজ্ঞ থাকতাম!

গল্প লেখার কলাকৌশল

সুলেখক কনফুসিয়াস(যার আমি মুগ্ধ পাঠক) এ পোস্টে জানতে চেয়েছিলেন প্রতিষ্ঠিত গল্পকাররা কিভাবে গল্প লেখেন। সমস্যাটা হয়ে গেছে "প্রতিষ্ঠিত" শব্দটা ব্যবহার করায়। প্রতিষ্ঠিতের "প"ও আমি নই, তাই ওই পোস্টে কমেন্ট করার সাহস যোগায়নি। কিন্তু আমার লেখার ধরনটা এখানে জানানোর লোভ সামলাতে পারলাম না।

আমার লেখার ধরনটা সুনির্দিষ্ট কিছু নয়। "বেহুদা পোস্ট" শিরোনামে যে পোস্ট গুলো পোস্টাচ্ছি সেগুলোতে পুর্বচিন্তা বা ছক থাকেনা বল্লেই চলে। নতুন পোস্টের বাক্স খুলে ধুমধারাক্কা কমপিউটারের চাবি চালাতে থাকি। যা মনে থাকে তা-ই লেখার আকারে স্ক্রিনে উঠে আসে।

পূর্বচিন্তা নিয়ে যেসব গল্প লিখি সেগুলো আমার কয়েক দিন থেকে কয়েক মাসের সাধনার ফসল। সামহোয়্যারে একটা গল্প দিয়েছিলাম "বিবর্তন" (সেটা পরে ডিলিট করেছি, এখানে হয়তো দেব পরে)। সে গল্পটা অনেক হিসাব করে লেখা। প্রবাসী কিছু মানুষের জীবনধারা, চিন্তা-চেতনা ফুটিয়ে তোলার একটা চেষ্টা ছিল, তাই প্রতিটা মোড়ই চিন্তা করে লেখা। এ ধরনের গল্পে প্রতিটা লাইনই কোননা কোন উদ্দেশ্য বহন করে। মনে আসলো হুট করে লিখে দিলাম তা কখনই নয়।

যে কোন গল্পের প্লট মাথায় আসলেই আমার মাথার ভেতর চরিত্র গুলো আঁকা হয়ে যায়। ওরা করোটির ভেতরে হাঁটাহাটি করে, আড্ডা দেয়, নামাজ পড়ে, চার্চে যায়, গালিবাজী করে, প্রেম করে, মদের সাথে সিগারেট ধরায়। একটা সময় আসে যখন আমি চরিত্র গুলোর সবাইকে ভালো মত চিনে ফেলি, তখন শুরু হয় লেখার কাজ।

লেখার সময় আমার চেষ্টা থাকে সহজ শব্দসমষ্টিতে অল্প কথায় চটিত্র আর কাহিনী ফুটিয়ে তোলা।

আরেকটা বিষয় জানানো দরকার, আমার একটা অভ্যাস ছিল, সেটা হচ্ছে ছাপার অক্ষরে অগাধ বিশ্বাস। সেটা আমি হারিয়েছি কিন্তু অনেকেই হারান নি। সেটা আমি খুব ভালো মতই জানি, আর জানি বলেই গল্পে যে কোন ইনফরমেশন ব্যবহারে আমি সতর্ক, সম্ভবত প্রয়োজনের চেয়েই বেশী সতর্ক।

একটা উদাহরন দেই, "গন্দমে" কোন এক পর্বে বলেছিলাম, "...আকাশে মেঘের ঘনঘটা..."। দিন তারিখ উল্লেখ না থাকলে এটা বলে দিয়েই ক্ষান্ত হতাম, কিন্তু "গন্দমে" প্রতিটা পর্ব দিন-তারিখ দিয়ে লেখা। তাই মেঘের কথা বলার আগে আমি ২ ঘন্টা ভারতের অনলাইন আবহাওয়া আর্কাইভে কাটিয়েছি, মেঘ আছে এমন দিনের খোঁজে।

আরেক ধরনের লেখা (সাধারণত কবিতা) আসে ঝড়ের মত। সেটা হঠাৎ আসে হঠাৎই লিখে ফেলতে হয়। তখনই না লিখলে সেটা আর লেখা হয়ে ওঠে না। আমার "যদি" গল্পটা এরকম।

© অমিত আহমেদ


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

খারাপ কথা শোনাইলেন! চিন্তিত

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

অমিত আহমেদ এর ছবি

সমস্যাটা সচলায়তনের নাকি আমার নেটওয়ার্কের তা বুঝতে পারিনি বলে জোর গলায় কিছু বলতে পারছিনা। পেজ রিফ্রেস করলে যেমন হয় তেমন হয়েছে। দেখি ফকফকা লেখার বাক্স দেখাচ্ছে। কয়েক সেকেন্ডের জন্য অফলাইনে চলে গেলে এমন হয়।

দেখেন হাসি


আমার বেলা যে যায় সাঁঝ-বেলাতে
তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে

নজমুল আলবাব এর ছবি

আরিফ ভাইরটাই ঠিক। গন্দম

তারেক এর ছবি

ভালো হইছে। সবাই রহস্য ফাঁস করে দিচ্ছে। হাসি

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

কনফুসিয়াস এর ছবি

লজ্জা পাবার কিছু নাই। আমি আসলে প্রতিষ্ঠিত নয়, যারা এইখানে লেখাজোকা করে তাদের সবার ভাবনা জানতে চেয়েছিলাম। হাসি
আপনার স্টাইলটাও চমৎকার লাগলো। পড়ে মনে হলো চরিত্রগুলারে আপনি স্বাধীনতা দেন নিজের ইচ্ছা মত চলার। মজার ব্যাপার।
আমি আমার ঐ পোষ্টটা আর এরকম সব লেখার প্রিন্ট আউট নিয়ে রাখছি, পড়তে ভাল লাগছে।
ধন্যবাদ আপনাকে।

-যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

গন্দম শব্দটাই বিভিন্ন জায়গায় ছাপার অক্ষরে চোখে পড়েছে। গন্ধম কখনো দেখিনি। এটা কি আরবি শব্দ?

একটা গন্দমের লাগিয়া আল্লায় বানাইলো দুনিয়া....
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

অমিত আহমেদ এর ছবি

শব্দটা আরবী কিংবা ফার্সী হতে পারে বটে। আমি গুগলে নানা ভাবে সার্চ করলাম (অ্যাডাম ইভের কাহিনী নানা জায়গায় সে সুযোগে পড়া হয়ে গেল), বাংলা ছাড়া অন্য কোন রেফারেন্স পেলাম না। স্কুলের আরবী আর ফার্সীভাষী সহপাঠীদের জিজ্ঞাস করতে হবে।


আমার বেলা যে যায় সাঁঝ-বেলাতে
তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে

দৃশা এর ছবি

একটা গন্দমের লাগিয়া আল্লায় বানাইলো দুনিয়া....
আদম খাইল আর হাওয়ায় খাইল...
ইবলিশ শয়তান তার আশা ফুরাই (পুরাইল)...o yeee(চিক্কুর)
ফুরাটা কেন গাইলেন না শোহেইল ভাই?? গরররর...

দৃশা

কনফুসিয়াস এর ছবি

অলৌকিক হাসান,
আপনার ভাবনাটাও ভাল লাগলো।
একসময় আমি এরকম করতাম, দুরের দুটা মানুষ, যাদের কথা শুনতে পাচ্ছি না, তাদের মুখে নিজের বানানো সংলাপ বসিয়ে দিতাম। হাসি

-যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।