গতকাল গিয়েছিলাম মাস্টারবাড়ি। গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে পোড়াবাড়ির দিকে গেলে মাওনা বলে একটা জায়গা পড়ে। সেখান থেকে একটু দক্ষিণে হেঁটে যেতে হয়। ঢাকা থেকে খুব বেশি দূরে নয়; তবে গ্রামের গন্ধ পেতে হলে খুব বেশি দূরে কিন্তু যেতে হয় না। বাংলাদেশ এখনো গ্রামের দেশ। শহর থেকে গাড়িতে ঘন্টা-আধা ঘন্টা দূরত্বে গেলেই গ্রামে চলে যাওয়া যায়।
পুরোদমে ঢাকার সন্তান হলেও আমার সৌভাগ্য; যে এলাকাতে বড় হয়েছি সেখানে কিছুটা হলেও গ্রামের ছোঁয়া ছিলো। গোয়ালঘর ছিলো। কলাবাগান ছিলো। বাঁশঝাড় ছিলো। মাঠের পর মাঠ ধানি জমি ছিলো। বাঁশঝাড় থেকে কঞ্চি কেটে ছিপ বানিয়ে পুকুরে মাছ ধরতাম। ধানক্ষেতের আইল ধরে হেঁটে বেড়াতাম অনেক দুপুর। ঢাকার মধ্যে এমন জায়গা মনে হয় আর ছিলো না।
তবে গ্রাম বলতে যা বোঝায় তার স্বাদ পেতাম গ্রামেরবাড়িতে গেলে। যে গ্রামে আমার পরিবারের আদিবাস, সেখানে উঠোন পেরুলেই পদ্মা নদী। চারপাশে শিমুল, তেঁতুল, আম, আতা, বট, অশ্বথ, জলপাই, নিম, ডুমুর, ডালিম, আরো কতো নাম না জানা গাছ। নদীর ধারে বসে শুশুক গুনতাম। অসংখ্য শুশুক ছিলো তখন পদ্মায়। সন্ধ্যা হলেই শেয়ালের ঢাক শুনতাম। আর শ'য়ে শ'য়ে জোনাক পোকা আর আকাশ ভরা তারায় এক ঝিকমিকে বৈরাগ্য হতো রাত্তিরে। এখন ওসব আর কিছু না থাকলেও গ্রামের গন্ধটা রয়ে গেছে। গোবর, কাঁচা মাটি, ঘাস-ফসল আর মজা পুকুরের গন্ধ মিলে একটা আলাদা গন্ধ হয় গ্রামের। যে গন্ধ নাকে গেলে কেমন স্থবিরতা আসে মনে। হাঁটার গতি শ্লথ হয়। মনে হয় কিছু না করেও কোথাও বসে থাকতে পারবো ঘন্টার পর ঘন্টা। গতকাল মাস্টারবাড়িতে সেই গন্ধ পেলাম।
খুব ভালো লেগেছে। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে চারপাশের মানুষকে দেখলাম। মসজিদের উঠোনে রোদ পোহাচ্ছে বেড়াল আর মাওলানা; লেইসফিতার ঝাঁকা ঘিরে দাঁড়িয়ে তরুনী মেয়ে আর বধূরা; মোড়ের চায়ের টঙে চলছে বাংলা সিনেমার গান; তেলমাখা চুলে সিঁথি কেটে চলছে সাইকেলে রেডিও বাঁধা যুবক; এফএম রেডিওর মতো মোবাইল ফোনটা কানের দুই ইঞ্চি কাছে ধরে স্পিকারে কথা বলছে পাওনাদার; কাঁঠাল গাছের নিচে বসে গুলতানি মারছে সদ্য স্কুল পাস করা যুবকেরা। সব গ্রামের মানুষের ছবি যেনো কম বেশি একই।
গাজিপুর শালবন রাস্তার দুই পাশে রেখে গেলেও সময়ের অভাবে আর নামা হয়নি। নামলে শালবনের কিছু ছবি নেয়া যেতো। ভাওয়াল রাজার প্রাসাদ এখন আদালদ বাড়ি। সেটাও দেখা হলো না। কতো কী দেখার বাকি রয়ে গেছে এই বাংলাদেশেই! বেশ ছবি তুলেছি; তার কিছু বরং দেখাই আপনাদেরকে।
© অমিত আহমেদ
রক্ষীর মতো প্রহরায় দাঁড়িয়ে থাকে একসারি তালগাছ।
এই কাঁটাময় গাছের নাম জানি না। আমলকির দেখতে মতো খুব টক এক ধরণের ফল হয়। স্থানীয় নাম - অড়-বড়ই। একটা পাখির বাসাও মনে হয় দেখা যায়!
আমাদের জাতীয় ফল। পুরো গ্রাম ভর্তি অসংখ্য কাঁঠাল গাছ, আর তার সবগুলোই ফলে ফলে ফলময়।
অতিথির জন্য আছে গাছের মিষ্টি ডাবের পানি।
মাটির ঘর। অনেকদিন পরে এতো উঁচু মাটির ঘর দেখলাম। এখন এখানে কেউ থাকেনা বলে তেমন রক্ষণাবেক্ষণ নেই।
মন্তব্য
লেখায়
এবারের ছবিগুলো পাগল করে দেয়ার মতো। আর লেখাটা বুকের এক্কেবারে গহীন ভিতরে ছুঁয়ে গেলো !
ক্ষমতা কেবল পঞ্চতারকা দাগানোর। আমি কিন্তু ঢের ঢের বেশি দাগালাম। তাও সাধ মিটছে না !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
অমিত কী জমি কিনলেন? জায়গাটা সুন্দর।
হুঁ, জায়গাটা সুন্দর
...........................
Every Picture Tells a Story
ছবি গুলা দারুন
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
আরে মাওনা? এইটা তো আমার গ্রামের বাড়ির একেবারে কাছে...
জায়গাটা সুন্দর হইলেও হইতে পারে... কিন্তু ছবি দূর্দান্ত... আমিও আজকে শহরের পাদটিকায় এক গ্রামে ছিলাম পুরা বিকাল... সে এমন জায়গা যে রিক্সা থেকে নেমে বাঁশের সাঁকো পার হয়া হাঁটতে হয় মেলা। পছন্দ হইছে জায়গাটা খুব।
আমি অবশ্য নানান ঝামেলায় এতোটাই পর্যূদস্ত ছিলাম যে ছবি তেমন তুলতে পারি নাই।
সবচেয়ে মজা লাগছে, সেইখানে বাজারের রাস্তার পাশে একেবারে ছোট্ট একটা শহীদ মিনার বানায়ে রাখছে গ্রামবাসী...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
অর-বড়ই চিনেন না? দারুণ ভর্তা হয় এই জিনিষের। পাকা বড়ই খেতেও বেশ মজা লাগে। আমাদের বাড়িতে ছিলো না, তবে পাশের বাড়ির গাছে হরহামেশাই হামলা চলতো এই জিনিষের লোভে।
আমাদের গ্রামটাও একসময় বেশ গ্রামই ছিলো। আমাদের দুইটা বাঁশঝাড়ও ছিলো। দিনের বেলায় ঐদিকটায় যেতেই গা ছমছম করতো। পুকুরের দিকে এমনকি বিকেলেও একা যেতে সাহস পেতাম না। এখন এমন অবস্থা হইছে যে কীসের আর গ্রাম! সারাজীবন শহরকে প্রাণভরে গালাগালি করেছি বলে নিজের আপন জায়গাটাই সেমি-শহর হয়ে চোখের সামনে নাচন-কুদন করে এখন।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
তালগাছের ছবিটি বেশ লাগলো।
কাঁঠালের ছবিটা দেখে মন খারাপ হয়ে গেল। মনে পড়ে গেল যে অনেকদিন কাঁঠাল খাইনাই। এই জিনিস যে আমার খুব প্রিয় তাও নয় কিন্তু তাও মনডা খারাপ হইয়া গেলগা। ছবিগুলা বেশ ভাল লাগল। শেষের ছবি আর তালগাছগুলা সবচাইতে বেশি ভাল লাগসে।
--------------------------------------------------------
--------------------------------------------------------
শাবাশ!
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
(Y)
গ্রামের বর্ণনা ভারি সুন্দর
অড়বড়ই পাকলে আর টক থাকেনা। বেশ মিষ্টি আর মজার হয় খেতে
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
কাঠাল দেখলেই খেতে ইচ্ছে করে। পুরা গরমটা গেলো একটুও কাঠাল খেলাম না এবার। ধিক্কার
"লেইসফিতা" শব্দটা বহু যুগ পর মনে হলো শুনলাম। ছোটবেলার সাথে এ সমস্ত জিনিসগুলোও হারিয়ে গেছে ঢাকা থেকে।
---------------------------------------------------------
রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা
সূর্য নাহি ফেরে শুধু ব্যর্থ হয় তারা
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
আমি এই জীবনে কখনও কাঁঠাল খাই নি। কখনও খেতে ইচ্ছেই করে নি! অথচ মানুষজন কী আগ্রহ নিয়েই না কাঁঠাল খায়। কী আছে এই কাঁঠালে?
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
মন মাতানো সব ছবি!
@ শাহেনশাহ, থ্যাংকস ম্যান।
@ রণদীপম বসু'দা, আপনার সাথে আমার দেখার চোখ মিলে গেছে তাহলে, এই জন্যই এতো ভালো লেগেছে। অনেক ধন্যবাদ রণ'দা।
@ আহমেদুর রশীদ ভাই, বাসা ভাড়াই দিতে পারিনা ঠিক মতো, আর তো জমি! জায়গাটা আসলেই সুন্দর। সময় পেলে যেতে পারেন। কাছেই একটা পিকনিক না শুটিং স্পট করেছে যেনো।
@ মুস্তাফিজ ভাই, আসলেই।
@ নিবিড়, ধন্যবাদ ব্রাদার।
@ নজরুল ইসলাম ভাই, কন কী! আপনার দেশের বাড়ি ঘুরে আসলাম তো তাইলে। এই শহীদ মিনারটা এখন কিন্তু সারা দেশ জুড়েই দেখি। গতকাল গাজিপুরের ওইদিকেও একটা দেখলাম। ছবি তুলতে পারলে পোস্টায়েন।
@ ধুসর গোধূলি ভাই, আমি জিনিসটা খেয়েছি ছোটবেলায়। কিন্তু নামটা জানতাম না বস। পকেটে ভর্তি করে রেখে হাত থেকে লবন মাখিয়ে খেতাম। পাকা অড়-বড়ই কখনো খাইনি অবশ্য। দেশ জুড়েই গ্রামগুলোর রূপান্তর ঘটছে। এটা ঠেকানোর কোনো উপায় নেই।
@ প্রকৃতিপ্রেমিক ভাই, ধন্যবাদ। আমার ক্যামেরা দিয়ে কিছুই করা যায় না। তাই চেষ্টা করি সাবজেক্ট, ফ্রেমিং আর অ্যাঙ্গেলটা যেনো একটু ব্যতিক্রম হয়। আর আলোটা অনেক দেখে তুলি। ওইদিন খুব রোদ্দুর ছিলো বলে আলোর কারসাজিটা তেমন করতে পারিনি।
@ ভূঁতের বাচ্চা, ধন্যবাদ। আমারও কাঁঠাল তেমন ভালো লাগে না। এমনকি দেশে এসে কাঁঠাল দেখেও খেতে ইচ্ছে করেনি। এখন আপনার মন্তব্য পড়ে ইচ্ছে করছে। সকালে উঠেই মা'কে জানাতে হবে।
@ বিপ্লব রহমান'দা, ধন্যবাদ।
@ পান্থ রহমান রেজা, ধন্যবাদ।
@ রানা মেহের, ধন্যবাদ রানা। পাকা অড়-বড়ই খাই নাই কখনো। খেতে ইচ্ছে করছে।
@ তানবীরা, আমিও এভাবে গোল হয়ে মেয়েদেরকে লেইসফিতা ওয়ালাকে ঘিড়ে দাঁড়াবার দৃশ্য ভুলে গিয়েছিলাম। গত পরশু অনেকদিন পরে মনে করিয়ে দিলো।
@ মামুন হক ভাই, ধন্যবাদ।
ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফ্লিকার | ইমেইল
খুব সুন্দর!
___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
সুন্দর ছবি!
ঐ অড়-বড়ই-কেই কি রোয়াল বা রোয়াইল বলে? পাতা দেখে তো সে রকমই লাগছে, তবে সে গাছে কাঁটা ছিলো কি না মনে নেই।
দারুণ ছবি। জায়গাটা খুব সুন্দর।
ছবি গুলা খুব ভাল্লাগছে।
-------------------------------------------------------
আমি সেই অবহেলা, আমি সেই নতমুখ, নীরবে ফিরে চাওয়া, অভিমানী ভেজা চোখ।
ধন্যবাদ সাইফুল আকবর খান, অতন্দ্র প্রহরী, ও পেন্সিলে আঁকা পরী।
@ মূলত পাঠক, আমার ঠিক জানা নেই।
ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফ্লিকার | ইমেইল
নতুন মন্তব্য করুন