গল্প: অনাহূত আগন্তুক

অমিত আহমেদ এর ছবি
লিখেছেন অমিত আহমেদ (তারিখ: শনি, ২০/০৩/২০১০ - ৭:৪৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পাঠপূর্ব হিতকথা
এটা পূর্ণাঙ্গ গল্প। কিস্তি-টিস্তির বালাই নেই। তাই আকারে প্রকান্ড। আগেই ভাগেই জানিয়ে দেয়া জরুরি মনে করলাম।

এক

এনযো স্কদিত্তি কৌতুহল নিয়ে চেয়ারের সাথে হাত-পা বাঁধা যুবককে দেখে। চেতনা নেই। মাথা বামদিকে নুয়ে আছে। এলোমেলো চুল ভিজে গেছে ঘামে। খুলির বামদিকে কেটে গেছে বেশ অনেকটাই। সেখান থেকে চুল বেয়ে পনেরো সেকেন্ড অন্তর অন্তর রক্তের ফোটা ঝরছে। টপ টপ!

বোঝাই যাচ্ছে ছোকরা ধরা পড়ার সাথেসাথেই তাকে ডাকা হয়নি। আগে একদফা মারধোর করা হয়েছে। এনযো বিরক্ত হয়। হাতে একদমই সময় নেই। এখন প্রতিটা মিনিটের গায়ে আলাদা করে দাম লেখা আছে। এই অবস্থাতেও গর্দভগুলো মাথা ঠান্ডা রাখতে পারে না! এনযো মুখে কিছু বলে না; বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে একে একে ঘিরে দাঁড়ানো তিনজনের দিকে তাকায়। তিনজনই সন্ত্রস্ত ভঙ্গিতে অটোমেটিক এম-সিক্সটিন ধরে আছে।

আবার ফিরে তাকায় এনযো। কে হতে পারে?

চেহারা দেখেই সব বলে দিতে পারে বলে নাম আছে এনযোর। অভিজ্ঞতা তো আর কম হলো না! বড় হয়েছে আপটাউনের ইটালিয়ান পাড়ায়। ছেলেবেলা থেকেই চালাচালি আর মারদাঙ্গায় গা সয়ে গেছে। সতেরো বছর বয়সে নাম লিখিয়েছিলো ফিলিপ্পো পরিবারের পারিবারিক ব্যবসায়। এই ব্যবসায় গাফলতির ক্ষমা নেই। বিশ্বাসঘাতকের রেহাই নেই।

অনেক আগের কথা। এনযো আর জিয়ান্নির নাম তখন সবে ফিলিপ্পো পরিবারের খাতায় উঠেছে। জিয়ান্নি বয়সে বড় ছিলো। পঁচিশ কী ছাব্বিশ। ওর বন্ধু ছিলো ফিওন। ইটালিয়ান নয়, সোনালী চুলের আইরিশ। দুই দোস্ত মিলে তখন আপটাউন মাতিয়ে রাখে। একসাথে ক্লাবে যায়। মদ খায়। মারামারি করে। গোলাগুলি করে। মেয়ে নিয়ে মোটেলে ওঠে। মনে আছে জিয়ান্নির চাপাচাপিতেই বুড়ো সান্তো ফিলিপ্পো ওদের সাথে সাথে ফিওনকেও দলে নিয়ে নিলো। পরে জানা গেলো ফিওন আসলে পুলিশের সোর্স!

জানা জানি হবার পরে ফিওনের কিচ্ছু হলো না। তবে দু'দিন বাদে জিয়ান্নির লাশ পাওয়া গেলো ব্ল্যাক ক্রিক পার্কে। সেই থেকে কারো সাথে পরিচয় হলেই তাকে যাচাই করে নেবার অভ্যাস এনযোর। শখে নয়, এটা আত্মরক্ষার জন্যই।

তবে এই যুবককে দেখে এনযো কিছুই ধরতে পারে না। নিখুঁত চুলের ছাঁট। পয়সাওয়ালা ধনীর দুলালেরা দু'শো ডলার দিয়ে এভাবে চুল কাটায়। শরীরে দামী স্যুট। কোনো লেবেল নেই। তার মানে এমন কারো শেলাই করা যিনি নির্দিষ্ট কয়েকজন খদ্দের ছাড়া আর কারো কাজ করেন না। বাকি সবও পয়সার কথাই বলে। গুচি জুতো, রোলেক্স ঘড়ি, সাদা সিল্ক শার্ট। অন্য সময় হলে এনযো হয়তো তাই ভাবতো। কিন্তু কিছু ব্যাপার খাপ খাচ্ছে না।

একে ছেলের লম্বা পেটানো শরীর। না শখ করে বানানো শরীর এ নয়। এসব দেখলেই বোঝা যায়। আর, শরীর জুড়ে অসংখ্য ক্ষতচিন্থ। কিছু দাগ চিনতে পারে এনযো। তার নিজেরও আছে। সে পঞ্চাশে পড়লো গত সপ্তাহে। আর এই ছেলের বয়স সাতাশের বেশি হবে না। তবু ছেঁড়া শার্টের ফাঁকে পুরানো চিন্থগুলোর নমুনা দেখে শিউরে ওঠে স্কদিত্তি!

অন্য সময়, অন্য কেউ হলে, এনযো এতো ভাবতো না। সরাসরি কপালে একটা বুলেট ঢুকিয়ে দিতো। পারছে না এই দাগগুলোর জন্যই। যে ছেলে এতো ক্ষতচিন্থের স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে, তাকে কিছুতেই অচেতন অবস্থায় গুলি করে মারা যায় না। এতো হারামী এনযো হয়নি এখনো!

"মার্কো, লুসিও, জিরাল্ডো... হা করে মুখের দিকে তাকিয়ে আছিস কেনো হারামজাদারা? যা পানি নিয়ে আয় এক্ষুণি। মুখে ছিটিয়ে দে।" পাশে দাঁড়ানো ছেলেগুলোর দিকে তাকিয়ে খেঁকিয়ে ওঠে এনযো স্কদিত্তি।

দুই

ফিলিপ্পো পরিবার গত দুই বছর থেকে "কার্লোস ওয়্যারহাউস" তাদের ব্যবসার কাজে ব্যবহার করে আসছে। ওয়্যারহাউসটা আকারে প্রায় একটা ফুটবল মাঠের সমান। চল্লিশ ফিট উঁচুতে দায়সারা টিনের সিলিং।

ওয়্যারহাউসটা আসলে ছিলো বার্থেজ ভিনিকোভার। বুড়ো জাহাজে করে চোরাই গাড়ি আনাতো জার্মানি থেকে। বড় বড় মানুষেরা ছিলো তার খদ্দের। সেই বুড়ো একদিন কী মনে করে ব্যবসা-ট্যাবসা সব গুটিয়ে থাইল্যান্ডে চলে গেলো! বার্থেজ থাইল্যান্ডে আসলে কী করে সেই নিয়ে শহরে নানান গল্প চালু আছে। তার একটাও অবিশ্বাস্য মনে হয় না এনযোর। বার্থেজের কাছ থেকে নিজের জন্য বেশ কয়েকটা গাড়ি সেও কিনেছে। সেসব সাক্ষাতে কমবয়সী মেয়েদের প্রতি বুড়োর লোভ কখনোই গোপন থাকেনি।

বুড়ো চলে যাবার পর বেশ কিছুদিন ওয়্যারহাউসটা খালিই পড়ে ছিলো। পরে "এলাকায় পড়ে" সেই দাবিতে ফিলিপ্পো পরিবার এর দখল নিয়ে নেয়। ওয়্যারহাউস এখনো সাড়ে আট ফিট উঁচু, আট ফিট চওড়া, আর নয় ফিট লম্বা ধাতব জাহাজী কন্টেইনারে ভর্তি। আর আলো বলতে ছাদ থেকে ঝুলে আসা কিছু হলুদ বাল্ব। পরিবার এসব সারাই করাবার প্রয়োজন বোধ করেনি। কারণ তাদের প্রয়োজন শুধু লোকালয়ের কাছে ফাঁকা এলাকায় কোনো দালান, যেখানে মানুষের চোখ এড়িয়ে ব্যবসার কথা বলা যায়।

আজ এই ওয়্যারহাউসেই এযাবতকালীন শহরের সব চেয়ে বড় নারকটিক ডিলটা হতে যাচ্ছে। রাত বারোটায় প্রাইভেট জেট থেকে সরাসরি এখানে আসবে পাবলো আর তার গ্যাং। সাথে থাকবে বড় তিনটা কাঠের বাক্স। বাক্স ভর্তি থাকবে সাদা কোকেনে। একদম খাঁটি!

এই তিন বাক্সের কোকেন ঝুটের সাথে মিশে সারা শহরের কোকেনের যোগান দেবে।

এর আগে কোকেন রিং ভাগ হয়েছিলো তিন ভাগে। শহরের পূর্বে ঝ্যাং পরিবার, পশ্চিমে আলীবাবা গ্যাং, আর মাঝে ফিলিপ্পো পরিবার। এই প্রথম, চার মাসের পারিবারিক যুদ্ধ শেষে, সবাইকে টেক্কা দিয়ে সারা শহরের দখল নিচ্ছে ফিলিপ্পো পরিবার। এনযো সেই রাত এগারোটা থেকে পরিবারের সবচেয়ে বিশ্বস্ত পাঁচজনকে নিয়ে এখানে অপেক্ষা করে আছে। আন্তঃপারিবারিক ঝামেলা যদিও শেষ, তবুও একদম অসতর্ক থাকা ঠিক নয়।

মুখে পানি ছিটিয়ে দিতেই চোখ মেলে ছোকরা। প্রথমে কোনো কথা না বলে চোখ পিটপিট করে আলোর সাথে মানিয়ে নেবার চেষ্টা করে। এরপর মাথা ঘুরিয়ে সবাইকে দেখে মোটাসোটা খর্বকায় লোকটির চোখে চোখ রাখে। নির্লিপ্ত গলায় এনযোকে বলে, "প্যুত্তোস্তো গ্রেজ্যো গ্লি আমিসি! এহ্ সিনইওরে?"

এনযো চমকে ওঠে! ছোকরা ইটালিয়ান বলছে! তাও খাঁটি সিসিলিয়ান টানে। চামড়ার রঙ একটু সাদাটে হলে যে কেউ একে সিসিলিয়ান বলে ভুল করতো। রাগ উঠে যায় এনযোর। শুওরের বাচ্চা নিশ্চিত ভাবেই ওকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। এনযো স্কদিত্তি আর যাই হোক এসব সস্তা বেয়াদবি সহ্য করে না।

এনযো হেঁটে গিয়ে ছেলের ভেজা চুল ধরে পেছনে টানে। মাথা নামিয়ে ছেলের চোখে চোখ রেখে দাঁতে দাঁত ঘষে বলে, "নন এভেত্তে ভিস্তো নিনেন্তে মাইয়ালে! নন এভেত্তে!" এরপর হাতের উলটো পিঠ দিয়ে প্রচন্ড চড় মারে মুখে। ঘাম-পানি মেশা চটচটে রক্ত লেগে যায় হাতে; এনযো ছেলের সাদা শার্টে হাত মুছে ফেলে।

এনযোর কিছুতেই হিসেব মেলে না। এই ছোকরা নিশ্চিত ভাবেই এফবিআই, ডিইএ, কিংবা আইএনএলের লোক নয়। এসব কথা বলার ভঙ্গিতেই বোঝা যায়। আর ওদের মধ্যেও ফিলিপ্পো পরিবারের লোক আছে। তেমন কিছু হলে আগেই খবর চলে আসতো।

ঝ্যাং আর আলীবাবার সাথেও কিছুদিন আগে মিটিং হয়েছে। পুরো চালানের দখল ফিলিপ্পো পরিবার নিলেও শহরে পূর্ব ও পশ্চিমপ্রান্তে পরিবারের কোনো ড়্যাকেট নেই। তাই ঠিক হয়েছে সেসব এলাকায় ঝ্যাং আর আলীবাবাই সরবরাহ নিশ্চিত করবে। এ অবস্থায় চালানের সময় কাউকে পাঠানো মানে আবার যুদ্ধ ঘোষণা।

গত চার মাসের যুদ্ধে তিন পরিবারেরই অসংখ্য লোক মারা গেছে। টাকা খোয়া গেছে অগুনতি। এতো তাড়াতাড়ি আবার যুদ্ধের ভার কোনো পরিবারই নিতে পারবে না। ঝ্যাং আর আলীবাবা কিছুতেই এই ঝুঁকি নেবে না। এই ছেলে ওদেরও লোক নয়।

পরিচয় না জেনেই মেরে না ফেলাটা একটা বুদ্ধিমানের কাজ হয়েছে। ছোকরা ঠিক কার হয়ে কাজ করছে এটা জানা জরুরী। এনযো ঘড়ি দেখে। আর দশ-পনেরো মিনিটের মধ্যে পাবলো চলে আসবে। এর আগেই ঝামেলা শেষ করে ফেলতে হবে।

জিরাল্ডোর দিকে তাকায় এনযো, "কার্লো আর লিওনার্ডোকে কোথায় রেখেছিস?"
জিহবা বের করে শুকনো ঠোঁট ভেজায় জিরাল্ডো। বলে, "কন্টেইনারগুলোর পেছনে, ভ্যানে শুইয়ে রেখেছি। আধা ঘন্টার আগে জ্ঞান ফিরবে না। ভালোই হয়েছে। না হলে ব্যাথায় চিল্লাচিল্লি শুরু করতো।"
ভ্রু কুঁচকায় এনযো। কার্লো আর লিওনার্ডো ওয়্যারহাউসের বাইরে পাহারা দিচ্ছিলো। এই ছোকরা দু'জনেরই পাঁজরের হাড় ভেঙে দিয়েছে।

"লুসিও, তুই বাইরে নজর রাখ। এ হয়তো একা আসেনি।"

চারপাশে যদিও খোলা মাঠ ছাড়া কিচ্ছু নেই। তবুও সতর্ক থাকাটা এনযোর অভ্যাস।
"দূর থেকে কোনো গাড়ি আসতে দেখলেই আমাকে খবর দিবি। ঠিকাছে?"
"ওকে বস্‌।" মাথা নাড়ে লুসিও।

"মার্কো, জিরাল্ডো, তোরা আমার সাথে থাক।"

"বস্‌!" একটু আমতা আমতা করে বলেই ফেলে লুসিও, "ঘটনাটা ওক্টাভিওকে জানানো দরকার না?"
ঝট করে লুসিওর দিকে ফিরে তাকায় এনযো। লাল চোখে বলে, "যখন জানানোর দরকার হবে তখন আমিই জানাবো। সাবধান লুসিও! ফের যেনো আমাকে উপদেশ দেয়া না হয়।"
মাথা নামিয়ে ফেলে লুসিও, "স্যরি বস্‌!"

লুসিও ওয়্যারহাউসের বাইরে চলে গেলে জিরাল্ডোর দিকে হাত বাড়ায় এনযো, "জিরাল্ডো?"
কোনো কথা না বলে জিনসের পেছন থেকে একটা পিস্তল এনযোর হাতে তুলে দেয় জিরাল্ডো। পয়েন্ট ফোরওয়ান ক্যালিবারের বেবি ঈগল।

একটা স্টিলের চেয়ার টেনে নিয়ে ছোকড়ার মুখোমুখি বসে এনযো। একটু ঝুঁকে পড়ে বলে, "একটা প্রশ্ন একবারই জিজ্ঞেস করবো। তুই কি সাংবাদিক?"
"হাঃ হাঃ হাঃ!"

অপ্রস্তুত হয়ে মুখ কাচুমাচু করে ফেলে এনযো। প্রশ্নটা একটু বোকার মতো হয়ে গেলেও হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ছোকরা এভাবে হেসে উঠবে বুঝতে পারেনি এনযো। অনেক ভেবে সে এই একটা উপসংহারেই আসতে পেরেছে। এ সময়ে আর কারো এখানে আসার সাহস হবে না। তবে সাংবাদিকদের হিসেব আলাদা। এদের কান্ডজ্ঞান কম থাকে। খবরের লোভে যে কোনো জায়গায় আগা-মাথা চিন্তা করেই গিয়ে উপস্থিত হয়। তবে অনুমান যে ঠিক হয়নি তা তো ছেলের হাসি দেখেই বোঝা যাচ্ছে।

অধৈর্য হয়ে এক পা এগিয়ে আসে মার্কো। হাত তুলে থামায় এনযো।

"তোর সাথে আর কে কে আছে?"
কোনো জবাব দেয় না ছেলে। মুখটা আগের মতোই হাসি হাসি করে রাখে।

এবার আর সহ্য করে না এনযো। বাম হাত মুঠো করে ফুসফুস বরাবর বেমক্কা ঘুষি চালায়। ধনুকের মতো বেঁকে গিয়ে হুস করে সব বাতাস ছেড়ে দেয় ছেলে। বড় করে শ্বাস টানতে গিয়ে ঘড়-ঘড় শব্দে কেশে ওঠে। সেই দমকে রক্তমেশা লালা গড়িয়ে পড়ে ঠোঁটের কোন দিয়ে। ওকে স্থির হবার জন্য একটু সময় দেয় এনযো। এরপর বলে, "ঠিক মতো উত্তর না দিলে খালি আঙ্গুল দিয়ে চোখ উপড়ে নেবো শুওরের বাচ্চা! তোর সাথে আর কে আছে?"
কাশতে কাশতেই কথা বলার চেষ্টা করে যুবক, "আর কেউ নেই!"

"তোকে কে পাঠিয়েছে? আলীবাবা? ঝ্যাং?"
"না!"

বিশ্বাস করার মতো উত্তর নয়। তবু কেনো জানি বিশ্বাস হয় এনযোর। অধৈর্য হয়ে পিস্তলটা তুলে ছোকরার মাথায় তাক করে। এরপর আবার নামিয়ে নেয়। এর কী করা যায়?
"শেষ বার জিজ্ঞেস করছি। তুই কে?"

জবাব পাবার আগেই ওয়্যারহাউসের দরজা দিয়ে দৌড়ে ঢোকে লুসিও। বলে, "বস্‌! পাবলোর গাড়ি আসছে!"

হাঁসফাঁস লাগে এনযোর। এখন আর ছোকরার পরিচয় জানার সময় নেই। হাতে ধরা পিস্তলটার দিকে তাকিয়ে জিরাল্ডোর দিকে ঘুরে তাকায় এনযো, "সাইলেন্সার কই?"
"বস্‌?" জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায় জিরাল্ডো।
"এখন গুলি করলেই শব্দ পাবলোর কানে যাবে। সে নার্ভাস টাইপের লোক। শব্দ শুনে হয় এদিকে আর আসবে না। নতুবা আক্রমন হয়েছে ভেবে গোলাগুলি শুরু করবে। সাইলেন্সার লাগবে।"
"সাইলেন্সার তো আনিনি!"

"মার্কো? লুসিও?"
মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে দু'জনে, "বস্‌, এখানে দূর পর্যন্ত মানুষ নেই। এজন্য তো সাইলেন্সার..."

বিরক্তিতে মুখ কুঁচকে টাকরা দিয়ে "টাক্" করে একটা শব্দ করে এনযো।

"বস্‌," বলে মার্কো, "পিস্তলের মুখে টাওয়েল জড়িয়ে গুলি করলে হয়তো..."
"হবে না...", এক হাত তুলে মার্কোকে থামিয়ে দেয় এনযো, "একে পেছনে লুকিয়ে রাখ। আর মুখে কাপড় গুঁজে দিস। টু শব্দটাও যেনো করতে না পারে। জলদি!"

তাড়াহুড়ো করে ছোকরার চেয়ার ধরে হিঁচড়ে একটা কন্টেইনারের পেছনে টেনে নিয়ে যায় মার্কো আর লুসিও। সেদিকে তাকিয়ে জিরাল্ডোকে পিস্তলটা ফিরিয়ে দিয়ে আনমনে বিড়বিড় করে এনযো, "প্রথমেই গুলি না করাটা ভুল হয়ে গেছে। মাল বুঝে পেলেই এর কেচ্ছা আগে খতম করবো!"

তিন

জিরাল্ডো,লুসিও, মার্কোকে নিয়ে ওয়্যারহাউসে পাবলোর বুলেটপ্রুফ হলুদ হামার ঢুকতে দেখে এনযো। ওর শরীর শিরশিরিয়ে ওঠে। এখন পর্যন্ত সব পরিকল্পনা মাফিক হয়েছে। এখন মাল ভালোয় ভালোয় পৌঁছে দিতে পারলেই নির্ভার হওয়া যায়!

গাড়ি থামতেই সামনের দরজা খুলে ছাইরঙা স্যুট পরা দু'জন বেরিয়ে আসে। পাবলোর ড্রাইভার আর ব্যক্তিগত দেহরক্ষী। দু'জনের হাতেই সতর্ক ভাবে কার্বাইন ধরা। এরপর পেছনের দরজা খুলে বের হয় নীল স্যুট পরা পাবলোর ব্যক্তিগত একাউন্টেন্ট লুইজাক কুয়েলো। সেও খালি হাতে নেই; একে-ফর্টিসেভেন ধরা। তিনজন দাঁড়িয়ে পজিশন নিলে সবশেষে বের হয় পাবলো ক্যারামেল। ধবধবে সাদা সাদারঙের স্যুটের সাথে কালো টাই পরে আছে।

বেরিয়ে এনযোকে দেখেই হেসে দুই হাত মেলে ধরে পাবলো, "আররে বন্ধু! দেরি করে ফেললাম নাকি?"

মুচকি হাসে এনযো। ভিতু বলে পাবলোর নাম এমনি এমনি হয়নি! যেখানেই যাবে অস্ত্রধারী দেহরক্ষী সাথে যাবেই। এনযোরা নিজেরাও প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে। তবুও ওদের এম-সিক্সটিন অটোমেটিক এ্যাসাল্ট রাইফেলগুলো পাবলোর কার্বাইন সাব-টুথাউজ্যান্ড আর একে-ফর্টিসেভেনের সামনে খেলনাই তো!

"একদম না। তোমার সময়জ্ঞান ভালো, পাবলো।" হেসে আগে বাড়ে এনযো, "কাস্টোমসে কোনো সমস্যা হয়নি তো?"

"হাঃ হাঃ হাঃ!", উদাত্ত হেসে চোখ টেপে পাবলো। "ফালতু কিছু পয়সা খরচ হয়েছে বটে। এর বেশি কিছু না!" এনযোকে জড়িয়ে ধরে দুই গালে চুমু দিয়ে পিঠ চাপড়ে দেয় পাবলো, "নাইস টু স্যি ইউ মাই ফ্রেন্ড! নাইস টু স্যি ইউ!" হাত তুলে এনযোর চোখের সামনে তর্জনি আর বুড়ো আঙুল ঘষে পাবলো, বলে, "পয়সা? এনেছ তো?"

ব্যবসার কথা শুরু হয়ে গেছে। সিরিয়াস হয়ে যায় এনযো, "এনেছি। আর আমার বাক্স?"
"গাড়িতে আছে। তবে নামানোর আগে, পয়সার ব্যাপার... বোঝোই তো, একটু যাচাই করে দেখতে হচ্ছে যে!"

"অবশ্যই।" লুসিওর দিকে তাকায় এনযো।
ইশারা বুঝে মাথা নাড়ে লুসিও। এম-সিক্সটিন কাঁধে ঝুলিয়ে নিয়ে একটা কন্টেইনারের পেছনে চলে যায়। বাদামী চামড়ার বড় বড় দু'টো স্যুটকেস টেনে আনে।

"যেমন কথা ছিলো স্যুটকেসে ঠিক তেমনই আছে। তবে আমারও যে একটু যাচাই করে নেবার ব্যাপার আছে পাবলো!"
"তা তো বটেই। তোমার লোককে যাচাই করে নিতে বলো।"

পরিবারের সেরা কোকেন স্নিফার জিরাল্ডো। ওকে বলতে হয় না। নিজে থেকেই হামারের দিকে পা বাড়ায়।

ওর দিকে তাকিয়ে হেসে কী যেনো বলতে যায় পাবলো। কিন্তু কথা বের হবার আগেই "ধুপ্" করে একটা শব্দ হয়। ওয়্যারহাউসে, সেই শব্দই যেনো বোমার মতো ফাটে। বাতাসে চেনা একটা গন্ধ ভেসে থাকে। আর পাবলোর কপালের ঠিক মাঝখানে, নতুন তৈরি হওয়া লাল-গোল জায়গাটা থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ে একফোঁটা। দুই চোখে প্রচন্ড বিস্ময় নিয়ে ঠিক এক মুহূর্তের জন্য স্থির হয়ে থাকে ওর দেহ। এরপর ঝপ করে পড়ে যায় মাটিতে।

ব্যাপারটা এতো আচমকা হয় যে প্রথমে কেউই বুঝতে পারে না ঠিক কী হলো। অভিজ্ঞতায় সবার আগে ব্যাপারটা ধরে ফেলে এনযোই। বাতাসে বারুদের গন্ধ। আর এই শব্দও চেনা। কেবল পয়েন্ট ফোরওয়ান ক্যালিবারেই এমন ধাক্কার মতো শব্দ হয়। ভারী দেহ নিয়ে শব্দ করে মাটিতে ঝাপিয়ে পড়ে কভার নেয় এনযো। ওর ঝাপিয়ে পড়া দেখেই সবাই বুঝে যায় কী হয়েছে। ভয়ার্ত চোখে কার্বাইন আর একে-ফোর্টিসেভেন তাক করে পাবলোর দেহরক্ষীরা।

ওদিকে হামারের দিকে হেঁটে যেতে যেতেই ঝট করে ঘুরে তাকায় জিরাল্ডো।

এমন অবস্থায় আগে কখনো পড়েনি পাবলোর একাউন্টেন্ট লুইজাক কুয়েলো। তাই টানটান উত্তেজনায় জিরাল্ডোর এই সামান্য নড়াতেই চমকে উঠে ওর দিকে ঘুরে সাব-মেশিনগান চালিয়ে দেয় লুইজাক। পাবলোর দুই দেহরক্ষীও চমকে কার্বাইনের ট্রিগার চেপে দেয়। রাইফেলে হাত রাখার আগেই কেঁপে কেঁপে উঠে গুলি খায় জিরাল্ডো। নিমিষেই অসংখ্য লাল গোল তৈরী হয় জিরাল্ডোর দেহ জুড়ে। এরপর প্রান হারিয়ে ছিটকে পড়ে দুই হাত পেছনে।

জিরাল্ডোর গুলি খাওয়া দেখে এক লাফে পেছনের কন্টেইনারের পেছনে চলে যায় মার্কো। লুসিও দাঁড়িয়ে ছিলো স্যুটকেসের কাছে। সে লাফিয়ে টাকা ভর্তি স্যুটকেসের পেছনেই কভার নেয়। আর মাটিতে শুয়ে চিৎকার করে এনযো, "গুলি করবে না! কেউ গুলি করবে না! আমাদের লোক গুলি চালায়নি।" লুইজাক আর দেহরক্ষীদের এলোমেলো গুলির শব্দে হারিয়ে যায় এনযোর কথা।

দুই কুনুই মুড়ে ক্রল করে মার্কোর কন্টেইনারের দিকে যাবার চেষ্টা করে এনযো। কিন্তু কন্টেইনারের উপরে নাড়াচাড়া দেখে স্থির হয়ে যায়। উপর থেকে বাজিকরের মতো আলতো পায়ে লাফিয়ে ওপাশে পড়ে সেই ছেলেটা। একটা গুলির শব্দ হয়। কন্টেইনারের পেছন থেকে ছিটকে আসে মৃত মার্কোর দেহ।

হতাশায় নিজের চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে হয় এনযোর। অচেতন কার্লো আর লিওনার্ডোকে জিরাল্ডোরা ভ্যানের পেছনে রেখে এসেছিলো। ওদের সাথে ওদের অস্ত্রও। ছেলে যেভাবেই হোক, বাঁধন খুলে সেই অস্ত্র নিয়েছে। এতো বড় বোকামী কেউ করে!

লুইজাক পাগলের মতো চিৎকার করতে করতে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়েই যায়। আর দেহরক্ষীর একজন এগিয়ে এসে পাবলোর মৃতদেহটা টেনে নিয়ে যাবার চেষ্টা করে। সহজ টার্গেট। টাকার স্যুটকেসের পেছন থেকে একগুলিতে ওকে ফেলে দেয় লুসিও।

দেহরক্ষীর হাতে ধরা কার্বাইন ছিটকে আসে এনযোর দিকে। সেদিকে তাকিয়ে কী করবে সিদ্ধান্ত নেবার আগেই কন্টেইনারের পেছন থেকে ক্ষ্রিপ্ত চিতার গতিতে গড়িয়ে এসে কার্বাইন তুলে নেয় অচেনা ছেলেটা। এক ব্রাশফায়ারে অন্য দেহরক্ষীও পিঁছু হটার আগেই গুলি খেয়ে ছিটকে পড়ে।

সঙ্গিদের পড়ে যাওয়া দেখে ট্রিগারে আরো চাপ বাড়ায় লুইজাক। কিন্তু এবারে আর কোনো শব্দ হয় না। গুলি শেষ হয়ে গেছে বুঝতে পেরে বোকার মতো এক মুহূর্ত ফ্যাল-ফ্যাল তাকায় লুইজাক। এরপর ছুটে যায় বুলেটপ্রুফ হামারের দিকে।

টাকার স্যুটকেসের পেছন থেকে ছাড়া পাওয়া অচেনা ছেলেটা আর নিরস্ত্র লুইজাককের মধ্যে কাকে আগে গুলি করবে ভাবতে ভাবতে লুইজাককেই বেছে নেয় লুসিও। হামারে উঠে গেলে ওকে আর ধরা যাবে না।

গুলি খেয়ে লুইজাককে পড়তে দেখেই লুসিও বুঝে ফেলে ভুল হয়ে গেছে। ছোকরা এর মধ্যেই ওর কাছে চলে এসেছে। ওর দিকে রাইফেল তাক করতেই বিদ্যুতের মতো বামহাত দিয়ে সেটা উপরে তুলে দেয় ছেলেটা। এরপরে ডানহাত মুড়ে কুনুই দিয়ে কোনাকুনি ভাবে মারে থুতনির নিচে। কট করে হাড় ভাঙে একটা চোয়ালের। চিৎকার করার আগেই ওর রাইফেল ধরা হাত পেছনে মুড়ে বগলের নিচে প্রচন্ড লাথি মারে ছেলে। জ্ঞান হারায় লুসিও।

হাঁচড়ে পাঁচড়ে উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করে এনযো। অনেকদিন পর, এই প্রথম, নিজের ফুলে ওঠা শরীর নিয়ে অনুতাপ হয়। এখান থেকে বেঁচে বেরুতে পারলে আর জীবনেও মাংস-পনির খাবে না, মেরীর নাম নিয়ে কিরা কেটে ফেলে এনযো। সেদিকে অনাগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে দেখে ছেলে। এরপর ধীরে হেঁটে গিয়ে পাবলোর মৃতদেহ থেকে টাইটা খুলে নেয়। বলে, "খামাখা কেনো তামাশা করছো এনযো। লক্ষী ছেলের মতো একদম চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকো দেখি।"

বরফের মতো জমে যায় এনযো। বোঝে, এবার ওর পালা!

চার

পাবলোর টাই দিয়ে দুই হাত শক্ত করে বেঁধে এনযোকে বসিয়ে রাখে ছেলেটা।

সবকিছু কেমন যেনো অবিশ্বাস্য মনে হয় এনযোর। ওর সাথে ছিলো পাঁচজন। সবার হাতে এম-সিক্সটিন এ্যাসাল্ট রাইফেল। দুইজনের কাছে পিস্তলও ছিলো - বেবি ঈগল জেরিকো, নাইনফোর্টিওয়ান। পাবলোর সাথে ছিলো তিনজন। দু'জনের হাতে কেল-টেক কার্বাইন সাব-টুথাউজেন্ড, আরেকজনের হাতে একে-ফর্টিসেভেন। আর এই ছেলে ধরা পড়েছিলো একদম খালি হাতে। তাও হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে ছিলো পেছনে। সেই ছেলে একা... সবাইকে...! এনযোর হঠাৎ-ই মনে হয় জিরাল্ডোর হাতে এই ছেলে এতো সহজে এমনি-এমনিই ধরা পড়েনি। বরং ধরা দিয়েছে। এসব কিছুই এর পরিকল্পনায় ছিলো। কিন্তু কেনো?

দুই হাতে টেনে ওয়্যারহাউসের একপাশে টাকার স্যুটকেস দু'টো রেখে আসে ছেলে। এরপর হামার থেকে কোকেনের একটি বড় বাক্স নামিয়ে হিঁচড়ে একই দিকে নিয়ে যায়। কী হচ্ছে ধরতে পারে না এনযো। ওর ধারণা ছিলো স্যুটকেসগুলো হামারে তুলে ছেলে টাকা আর কোকেন, এই দুই-এরই দখল নেবে।

প্রথম বাক্স রেখে এসে আরেকটা বাক্স নামায় ছেলেটা। টেনে নিতে নিতে এনযোর দিকে তাকিয়ে হাসে। বলে, "এই তো হয়ে গেছে প্রায়! আর অল্প কিছুক্ষণ।"

কী প্রায় হয়ে গেছে সেটা আর জিজ্ঞেস করার সাহস পায় না এনযো।

একে একে কোকেনের সব বাক্স টাকার স্যুটকেসের সাথে রেখে, হামারের পেছন খুঁজে একটা দুই-গ্যালন প্লাস্টিক-কন্টেইনার নিয়ে আসে যুবক। ক্যাপ খুলে ভেতরের তরল ছিটিয়ে দেয় স্যুটকেস আর কোকেনের উপর। এরপর পকেট থেকে একটা দিয়াশলাই বের করে ওর দিকে তাকায়। গন্ধে পেট গুলিয়ে আসে এনযোর। গলার ঠিক মাঝখানে কী যেনো একটা দলা পাকিয়ে ওঠে। গ্যাসোলিন!

ধীর পায়ে ওর দিকে হেঁটে এসে হাঁটু ভেঙে বসে ছোকরা, "টি ডিস্পিয়াচে?" হাত বাড়িয়ে এনযোর বুকপকেট থেকে প্যাকেটটা তুলে নিয়ে অনেক সময় নিয়ে একটা সিগারেট ধরায়।

ঢোক গিলে শুকনো গলা ভেজাবার চেষ্টা করে এনযো। বলে, "তুমি... তুমি কী..."
সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে হাসে ছেলেটা। বলে, "হুম। জ্বালিয়ে দেবো।"
"কিন্তু... কেনো?"

মুখ উপরে তুলে ধোঁয়া ছাড়ে ছোকরা। বলে, "প্যাট্রিক ও'ব্রায়ানকে মনে আছে এনযো?"

কথা না বলে ফাঁকা দৃষ্টিতে ওর দিতে তাকিয়ে থাকে এনযো।

"প্যাট্রিক আমার বন্ধু ছিলো। খুব ভালো বন্ধু!", মুহূর্তের জন্য ছেলেটার কাঠিন্য চলে যায়, "সারা জীবনে প্যাট্রিক একটা মানুষের গায়েও হাত তোলেনি। ওর কাজ ছিলো রাস্তায় উড়ে বেড়ানো গুজবগুলো এজেন্সিতে রিপোর্ট করা।" ভুল হতে পারে, তবে এনযোর মনে হয় ছেলের চোখ যেনো একটু চিক চিক করে ওঠে। এনযো বুঝতে পারে এই আপাতঃকঠিন ছেলেটার মাঝে কোথাও যেনো খুব কোমল একটা মন লুকিয়ে আছে।

"সেই অপরাধে, শুধু সেই অপরাধে ফিলিপ্পোর লোক ওকে খুন করেছে।" চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে ছেলের। "ছোট ছোট দু'টো মেয়ে ছিলো প্যাট্রিকের। বাবা ছাড়া কিচ্ছু বোঝে না! গত চার বছর ধরে একটা সামারহাউস কেনার জন্য টাকা জমাচ্ছিলো প্যাট্রিক। বউকে সারপ্রাইজ দেবে।"

"প্রতিশোধ! এসব কিছু শুধুই শোধ তোলবার জন্য?" অবিশ্বাসে মুখ হা হয়ে যায় এনযোর।

ঠোঁট টিপে হাসে ছেলেটা। বলে, "আমাকে যারা চেনে তারা জানে... বন্ধু হত্যার শোধ আমি তুলে ছাড়ি। এটা কেবল একটা নমুনা ছিলো। এরপরে ওর, ডন ফিলিপ্পোর, পালা। ওকে বলবে যে দোষ সে করেছে তার শোধ আমি তুলবোই।"

"কে তুমি?"

জবাব না দিয়ে হামারের দিকে হাঁটতে হাঁটতে সিগারেটটা কোকেন আর স্যুটকেসের দিকে ছুঁড়ে দেয় ছেলে। দপ্ করে আগুন জ্বলে ওঠে।

"পুলিশ আসতে পনেরো মিনিট সময় নেবে। তার আগেই তুমি হাতের বাঁধন খুলে ফেলতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস। ভ্যানের পেছনে তোমার দুই চ্যালাকে বেঁধে রেখেছি। এতক্ষণে ওদের জ্ঞান ফিরে আসার কথা। আর ওরও জ্ঞান ফেরার সময় হয়ে এলো।" অচেতন লুসিওর দিকে আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে বলে ছেলে।

"ভ্যান নিয়ে সোজা ডনের কাছে চলে যাবে। বলবে আমি ওর জন্য আসছি।"

কোকেন আর ডলার পোড়া ধোঁয়ায় চোখ জ্বালা করে এনযোর। তবু পরিচয় আর জানা হবে না সেই ভয়ে মরিয়া হয়েই চিৎকার করে, "ডনকে কী নাম বলবো? কে? কে তুমি?"

হামারের দরজা খুলে এক পা ভেতরে রাখে ছেলে, "সিগারেটের জন্য ধন্যবাদ এনযো।"
এরপর... দাঁতে দাঁত ঘষে বলে, "আর আমার নাম? ... বলবে রানা! মাসুদ রানা!"

© অমিত আহমেদ

ভাবার্থ: আক্ষরিক অর্থ করলে মানে জমবে না।
• "প্যুত্তোস্তো গ্রেজ্যো গ্লি আমিসি! এহ্ সিনইওরে?" - "খুব মারধোর হলো! তাই না?"
• "নন এভেত্তে ভিস্তো নিনেন্তে মাইয়ালে! নন এভেত্তে!" - মারধোরের তো এখনো কিচ্ছু দেখিসনি শুয়োরের বাচ্চা! কিচ্ছু না!"
• "টি ডিস্পিয়াচে?" - "আপত্তি নেই তো?"

উৎসর্গ: শ্রদ্ধেয় কাজী আনোয়ার হোসেন। আমাদের সবার প্রিয় কাজীদা।

ছবি কৃতজ্ঞতা: জিটিএ + ফটোশপ।


মন্তব্য

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

বহুদিন পর অমিতের লেখা... পড়ার আগে মন্তব্য করে নেই... রাতে এসে পড়বো। ওয়েল্কামব্যাক
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

আলমগীর এর ছবি

ওয়েলকামব্যাক।

তিথীডোর এর ছবি

কি কাকতালীয় ব্যাপার!!
আজ দুপুরেই পড়ছিলাম পুরোনো পোস্টগুলো সব... "আমি এখন হিপহপ করি"

ওয়েলকাম ব্যাক!

--------------------------------------------------
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

অমিত আহমেদ এর ছবি

পুরানো লেখাগুলো তাহলে এখনো কেউ খুঁজে পড়ে।
ধন্যবাদ তিথীডোর।


ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফ্লিকার | ইমেইল

অনিন্দিতা চৌধুরী এর ছবি

আরে... দারুণ হয়েছে অমিত।
শেষে এত চমক ছিল বুঝতে পারি নি।
অভিনন্দন

দ্রোহী এর ছবি

শুভ প্রত্যাবর্তন হে অমিত হাসান (!)...

গল্প পরে পড়বো। দেঁতো হাসি

Shizumu Wabishii Tawakemono [অতিথি] এর ছবি

শুরুতেই সন্দেহ হয়েছিল এটা মাসুদ রানা । সেবার বই ত কম পড়িনি !

একটি প্রশ্ন ,বর্ণণায় এই মাসুদ রানা গন্ধ রাখাটা কি ঐচ্ছিক না কি আপনার লেখার Style ই এরকম ? (আপনার আর কোন লেখা পড়িনি)

ভাল লাগল , কাজীদা আপনাকে পেলে ভালই সমাদর করবেন ।

অমিত আহমেদ এর ছবি

ইচ্ছাকৃত। ধন্যবাদ।


ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফ্লিকার | ইমেইল

ফাহিম এর ছবি

পড়ে ফেললাম... বরাবরের মতোই জটিল... যাই, মূর্ছণা থেকে কয়েকটা রানার বই নামায় আবার রিভাইজ দেই...

======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;

=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;

নিঃসঙ্গ গ্রহচারী [অতিথি] এর ছবি

দারুণ !

ছেলের অ্যাকশন দেখেই মনে হচ্ছিল এইটা রানার ছেলে না হয়েই যায় না ! কিন্তু এইটা যে স্বয়ং রানা এইটা ভাবি নাই।

পুরা গল্পে আলীবাবা গ্যাং নামটা কেমন কেমন লাগলো।

ওয়েল্কাম ব্যাক, বস।

অমিত আহমেদ এর ছবি

শুনেছিলাম আলীবাবা নামে কালোদের একটা গ্যাং একসময় আসলেই ছিলো। গ্যাং প্রধানের নাম ছিলো আলী, সবাই ডাকতো আলীবাবা। সেই থেকে নামটা মনে গেঁথে ছিলো। তাই গল্পে চলে এসেছে।

ধন্যবাদ।


ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফ্লিকার | ইমেইল

সুজন চৌধুরী এর ছবি
প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

দারুণ টানটান লেগেছে অমিত। পড়তে পড়তে দুইবার উঠতে হয়েছিল, কিন্তু দৌড়ে এসে আবার পড়তে শুরু করেছি। মনে হচ্ছিল মুভি দেখছিলাম। শেষটাও ভালো হয়েছে।

ছাদে একটা চন্দ্রবিন্দু দিয়েছো কেন? ইচ্ছাকৃত, না ভুলে?

হিমু এর ছবি
অম্লান অভি এর ছবি

একটানে পড়লাম আমার জীবনের একটানে পড়া প্রথম মাসুদ রানা সিরিজ। দারুণ বেশ কষ্ট হচ্ছিল ঐ সিসিলিয়ান পড়তে কিন্তু শেষে তার কষ্ট বেশ ভরে গেল। দারুণ। মাসুদ রানা সিরিজ তাই তো মানুষ পড়ে একটা কি যেন আছে! ধন্যবাদ অবলীলায় মাসুদ রানা পড়ানোয়।

মরণ রে তুহু মম শ্যাম সমান.....

নৈষাদ এর ছবি

ভাল লাগল।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

গুল্লি

আহ, রানা !!! মনে পড়ে গেলো অগ্নিপুরুষের শেষ ক'টা অনুচ্ছেদ...

অমিত ভাইকে নিয়মিত লেখার তাগাদা।

_________________________________________

সেরিওজা

নিবিড় এর ছবি

ওয়েল্কমাব্যাক অমিত ভাই। ভাল লাগল লেখাটা চলুক


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

হা হা, আমি পড়তে পড়তে ভাবতেসিলাম কমেন্টে লিখবো আপনি মাসুদ রানা লেখা শুরু করেন; শেষ লাইনটা পড়ে তাই বেকুব হয়ে গেলাম দেঁতো হাসি

দারূণ হইসে চলুক
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...

আনাম এর ছবি

হুম, রানাই বটে ! চলুক

শরতশিশির এর ছবি

এরপর... দাঁতে দাঁত ঘষে বলে, "আর আমার নাম? ... বলবে রানা! মাসুদ রানা!"

ইয়েস - রানা, মাসুদ রানা। কতদিন পর!

খুব ভাল লাগলো।

And, benvenuto, straniero! চোখ টিপি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ফাটাফাটি হইছে। আসলে তোমার ডিটেইল দেখে আমি মুগ্ধ। নিশ্চয়ই এসব নিয়ে বেশ গবেষণা করতে হয়েছে। তবে মাসুদ রানা আর কত। নতুন কোন ক্যারেক্টার নিয়ে আসো না।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

এই গল্পটা আরো অনেক রেটিং এবং মন্তব্য দাবী করে।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

নকিয়া এর ছবি

একদম ঠিক

কাকুল কায়েশ এর ছবি

অসাধারণ হয়েছে।
গল্পটা পড়তে পড়তে আমারো মনে হচ্ছিল, কাজীদার ভাত মারার লোক আমরা পেয়ে যাচ্ছি। খুবই ভাল লাগল থ্রিলারটা।

"আর আমার নাম? ... বলবে রানা! মাসুদ রানা!"

এটা একটা চমক ছিল। আর সাথে সাথে আমার কানে যেন জেমস বন্ডের মিউজিকটাও বেজে উঠল। দারুন শেষ করেছেন।

শ্রদ্ধেয় কাজীদাকে উৎসর্গ করেছেন দেখে পরের কমেন্টটা করব কিনা বুঝতে পারছি না। করেই ফেলি......আপনি কিন্তু ইচ্ছা করলেই মাসুদ রানার ছায়া থেকে বের হয়ে একটা নতুন চরিত্রের আগমন ঘটাতে পারতেন এই গল্পে। নতুন একজন স্পাই, যাকে আমরা চিনি না, যে মাসুদ রানা থেকে আলাদা একটা স্বত্তা।

দারুন হত না ব্যাপারটা?? আমরা নতুন একটা স্পাই সিরিজ পেতাম।

তবে এখনো আশা আছে যে, আপনি থামবেন না, থামা কোনক্রমেই উচিত হবে না। অপেক্ষায় থাকব নতুন স্পাই সিরিজের......

===================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!

==========================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!

রেনেট এর ছবি

এই কাহিনীই তো আরো আগে বাড়ার ভালো সম্ভাবনা আছে। টান্টান উত্তেজনা অনুভব কর্লাম।

আরো চাই কিন্তু!
---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে

---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে

ওডিন এর ছবি

চমৎকার!
গল্পটা পড়তে পড়তে আমারো মনে হচ্ছিলো আপনার মাসুদ রানা লেখা শুরু করা উচিত- পরে দেখি আসলেই ঘটনা তাই! হাসি
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

দ্রোহী এর ছবি

অবশেষে পড়লাম গল্পটা।

একটা পাঁচতারা দিয়ে গেলাম। দেঁতো হাসি

বোহেমিয়ান এর ছবি

চমৎকার চলুক
নিয়মিত লিখুন

পড়ার সময় আমিও ভাবছিলাম ...মাসুদ রানায় ফিরে গ্লাম দেখি...
_________________________________________
বোহেমিয়ান কথকতা

_________________________________________
ওরে! কত কথা বলে রে!

বইখাতা এর ছবি

জমজমাট গল্প। দারুণ লাগলো।

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

ওয়েল্কমাব্যাক অমিত ভাই। ভাল লাগল লেখাটা... রানা ভেবেই আগাচ্ছিলাম...শেষে ভাবছিলাম মন্তব্যে বলবো...শেষ লাইনে পুরাই তব্দা খাইলাম!

সেরাম... চলুক

-----------------------------------------------------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে আমার প্রাণের কাছে চলে আসি, বলি আমি এই হৃদয়েরে; সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

খাইছে! হাসি
কিন্তু আমি আপনার ডিটেইল লেখা দেখে মুগ্ধ। আমার শুরুতে মারিও পুজোর ওমের্তা-র কথা মনে হচ্ছিল, কিন্তু শেষে এসে বন্ধু হত্যার প্রতিশোধ দেখে বুঝলাম রানাই হবে, আর কে! তবে আসলেই আপনি ইচ্ছা করলেই নতুন আরেকজন বাংলাদেশী স্পাইকে পরিচয় করিয়ে দিতে পারতেন।

আরো লেখা যে কবে আসবে কে জানে!

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

আপনি আর ল্যাখেন্না ক্যান?

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

কল্যাণ এর ছবি

লেখায় ৫ তারা দিয়ে গেলাম। উপরে ত্রিমাত্রিক কবির প্রশ্নটা আমারও

আপনি আর ল্যাখেন্না ক্যান?

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।