সবকিছু নষ্টদের অধিকারে চলে যাবে

অভিজিৎ এর ছবি
লিখেছেন অভিজিৎ (তারিখ: রবি, ২৩/০৯/২০০৭ - ১:১৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সবকিছু নষ্টদের অধিকারে চলে যাবে
অভিজি

আমি খুব সহজে আশাহত হই না।  "আশা নিয়ে ঘর করি, আশায় পকেট ভরি" টাইপের মানুষ আমি।  যখন সবাই হাল ছেড়ে দিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকে, তখনো আমি নির্ঘুম রাত জেগে থাকি এক চিলতে সোনালী রোদ্দুরের আশায়।  মনে মনে হয়ত আউরাই- "মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে"। আমার গাড়িতে একটা সিডি রেখে দিয়েছি, মাহমুদুজ্জামান বাবুর। অফিস যেতে যেতে প্রতিদিন সকালেই শুনতে থাকি  অফিস যাওয়ার পথটুকুতে- 

"ভোর হয়নি, আজ হল না
কাল হবে কিনা তাও জানা নেই
পরশু ভোর আসবেই
এই আশাবাদ তুমি ভুল না"।

হ্যা, আশাবাদ আমি ভুলি না।  পরশুর ভোরের প্রত্যাশা করি। কিন্তু আমার মতন এই যে চরম আশাবাদী এ মানুষটিও গত কয়েকদিনে বাংলাদেশের গতিপ্রকৃতি দেখে যেন আশা হারিয়ে ফেলতে চাইছে।  আজ আর কালকের দুর্দৈব দেখে পরশু ভোর নয়, যেন অপেক্ষা করছি ঘোর অমানিষার।  অথচ ঘটনার শুরু হয়েছিল সামান্য একটা কৌতুকাশ্রিত কার্টুনকে কেন্দ্র করে। এমন একটা কৌতুক যা সম্ভবত শতাব্দী প্রাচীন। এমনই সাধারণ যা কিনা শিবিররাও তাদের কিশোর পত্রিকায় দেদারসে ব্যবহার করেছে।  কিন্তু সেই কৌতুকই কাল হল। আমাদের মতি মামার কাপুরোষোচিত বদান্যতায়  এক বিশ  বছর বয়সী তরুণ কার্টুনিস্টের জেল হল, আর আলপিন সম্পাদকের গেল চাকরী। আমি এ নিয়ে ক'দিন আগেই সচলায়তনে একটা লেখা লিখেছিলাম - যে দেশে শস্যের চেয়ে টুপি বেশি।  

আমি ভেবেছিলাম সময়ের সাথে সাথে টুপিওয়ালাদের দৌরাত্ম অচীরেই কমে আসবে। আশা ছিল গণমানুষের সচেতনতার প্রতি। ভেবেছিলাম গণমানুষ নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলে আর আইন-শৃংখলারক্ষাকারী বাহিনী একটু টাইট দিলেই আবার সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসবে। কিন্তু এরপরের কয়েকদিনে যা হল, তা আমার কল্পণাকেও হার মানালো।  দেখলাম ব্যারিস্টার মইনুল সহ অন্য উপদেষ্টারা মোল্লা মহিউদ্দিন আর ওবায়দুল্লাহর সাথে গলাগলি করে দেশের আর ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র খুঁজতে লেগেছেন। ওই যুগল-সর্পিল কোল দিয়ে, বুক দিয়ে দেশ আর ধর্মের ভাবমূর্তি রক্ষা করার পণ করে নেমেছেন।  আর্মি আর মোল্লা যখন "স্ট্রেঞ্জ বেডফেলো"তে পরিণত হয়- তা হয় এক অতি কুৎসিৎ দৃশ্য।  শকুন আর শৃগালের শয্যাদৃশ্য যেন এটি।  তাও না হয় সহ্য করলাম। তখনো আশা হারাইনি।
 

এর পরদিন দেখলাম সব বাঘা বাঘা সাংবাদিকেরা- যাদের কলমের আঘাতে এতদিন আকাশ বিদীর্ণ হয়, ধরিত্রী চৌচির হয়ে যায় বলে ভাবতাম - তারা হাতজোড় করে, নতজানু হয়ে কতগুলো অর্ধশিক্ষিত হুজুরের পালের (সরি, বলা উচিৎ বিশিষ্ট আলেম সমাজ) কাছে ক্ষমাভিক্ষা করছেন। তখনো আমি আশায় বুক বেধে আছি।  এর মধ্যে আবার সাপ্তাহিক ২০০০ এর ঈদ-সংখ্যা বাজেয়াপ্ত হল।  কবি দাউদ হায়দার তার একটি আত্মজীবনীমূলক লেখায় মক্কার উপমা দিয়েছিলেন। এ ধরণের উপমা সাহিত্যে হরহামেশাই দেওয়া হয়।  লর্ডসকে ক্রিকেটের মক্কা বলে। আমরা কথায় কথায় বলি মক্কার মানুষ হজ পায় না, ইত্যাদি। আমি নিজেও সিঙ্গাপুরের বাঙ্গালীদের নিয়ে একসময় লিখতে গিয়ে আমার একটা লেখায় লিটল ইন্ডিয়া জায়গাটাকে সৌদি আরবের মক্কার সাথে তুলনা করেছিলাম। লেখাটি জনকন্ঠ আর ভোরের কাগজে ছাপাও হয়েছিল।

আমার কখনো মনে হয়নি কারো কোন অনূভুতিকে আমি আঘাত করছি। 
'মক্কা' শব্দটি বর্তমানে সাহিত্যের এক অনিন্দসুন্দর উপমায় পরিণত হয়েছে, যেমনি ইংরেজী ভাষায় হয়েছে 'বাইবেল' শব্দটি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আমার স্যারেরা প্রায়-ই বলতেন অমুক বইটা বাঈবেল অব ফিসিক্স, কিংবা অমুক বইটা গনিতের বাইবেল।  যে কোন প্রোগ্রামার  কম্পিউটারের বইয়ের দোকানে গিয়ে বুকশেলফে খুঁজলেই পাবেন - "জাভা, এক্স-এম এল ওয়েব সার্ভিসেস - বাইবেল বুকস", কিংবা "জে.টু.ই.ই - বাইবেল বুকস" ইত্যাদি। শুধু  প্রোগ্রামিং এর নিরস  বই নয়, খুঁজলে বাইবেল টাইটেল সমৃদ্ধ সরস বইও পাওয়া যাবে : The Sex Bible: The Complete Guide to Sexual Love (by Susan Crain Bakos) কিংবা The Wine Bible: Books (by Karen MacNeil) এমনকি The Brothel Bible: The Cathouse Experience এর মত বই।    কারো মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ছে না।  কারণ সবাই জানে বাইবেল এখানে আক্ষরিক 'বাইবেল' হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে না- বরং  এখানে বাইবেল-এর প্রয়োগ হচ্ছে 'এন্সাইক্লোপিডিয়া' কিংবা 'সমগ্র' হিসেবে। নিরেট মুর্খ ছারা কেউ  'ওয়াইন-বাইবেল' বা 'ব্রোথল বাইবেল'কে বাইবেলের অপমান  হিসেবে নেয় না, অথচ দাউদ হায়দারের লেখায় লৌক্ষ্মের বালাখানার পাশে মক্কার উপমা দেখে আমাদের ধার্মিক শিশ্ন খাড়া হয়ে ওঠে।   অবশ্য যে জাতির পন্ডিতদের নিছক বিড়ালের আগে মোহম্মদ দেখলেই শিশ্ন দিয়ে লাভার উদ্গীরণ ঘটে, সে জাতির ধর্মরক্ষকেরা লৌক্ষ্মের বালাখানার পাশে মক্কা দেখলে কি করবে তা সহজেই আনুমেয়।  আমার আগের 'যে দেশে শস্যের চেয়ে টুপি বেশি' প্রকাশের পর এক পাঠক একটি মন্তব্য করেছেন, যা উদ্ধৃত করার লোভ সামলাতে পারলাম না:
 

বাঙালি মুসলমানের দুইটা মাত্র অনুভূতি খুব পোক্তা, একটা যৌনানুভূতি, আরেকটা ধর্মানুভূতি। তবে যৌনানুভূতিটা প্রখর হলেও জানপ্রাণ দিয়ে ওটা আড়াল করে রাখে, আর ধর্মানুভূতিটা ভোঁতা হলেও ছুঁতা পেলেই ওটার উৎকট প্রকাশ ঘটায়।

 
সাপ্তাহিক ২০০০ ঈদ সংখ্যার বাজেয়াপ্ত করণে উপরের উক্তির যথার্থতা প্রমাণিত হল মাত্র। এখন থেকে মনে হয় অর্ধশিক্ষিত মোল্লা ওমরদের কাছ থেকে কবি সাহিত্যিকদের সাহিত্য রচনায় শব্দ-প্রয়োগের তালিম নিতে হবে, আর তারপর লেখালিখি শুরু করতে হবে। তারপর-ও আমি বলব - আশার ঢোল ফুটো হয়ে গেলেও  তখনো আশা পুরোপুরি হারাইনি।

 
 
কিন্তু কাল যে ঘটনা পেপারে পড়লাম তার পর আশা রাখাটিই বোধ হয় এখন দুরাশা মাত্র। বায়তুল মোকারমের বৈঠক খানায় গিয়ে  বাংলাদেশের হেড মোল্লা খতিব ওবায়দুল হকের দলবলের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে এসেছেন চার সাংবাদিক আর দুই উপদেষ্টা। প্রথম আলোতে প্রকাশিত ছবিতে দেখলাম মোল্লা ওবায়দুল দলবল নিয়ে আয়েশে সফায় আসীন আর আসামী সাংবাদিক আর দুই উপদেষ্টা কাচু মাচু মুখে কাঠের চেয়ারে।  আসামী মতি হাত কচলাতে কচলাতে বার বার-ই হুজুরের কাছে ক্ষমা চেয়ে গেলেন এই বলে - "ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশের ঘটনার মধ্য দিয়ে আমরা যে-ভুল করেছি, তার জন্য দুবার ক্ষমা প্রার্থনা করেছি। আজ আবারও ক্ষমাপ্রার্থনা করা হবে। আমরা সচেষ্ট থাকব যেন এ ধরনের ভুলের আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে"। আর শেষ মেষ মোল্লা ওবায়েদ  মহাপুরুষ সেজে মতিকে মাফ করে দিলেন এই বলে -"আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার পর নবী করিম (সা.)-এর উসওয়া এবং সুন্নত হলো এটাকে মাফ করে দেওয়া"। 

এই রংগ-নাটক সাফল্যজনকভাবে মঞ্চায়ন করে ফলে বাংলাদেশ সরকার দুটো দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন।  এক, সরকারীভাবে হেড মোল্লা ওবায়দুল হকের রাজনৈতিক ক্ষমতা মেনে নেওয়া হল। ইরানে যেমন একসময় খোমেনি কিংবা আফগানিস্তানে যেমন একসময় মোল্লা ওমরের তাগুদি নির্দেশে দেশ চলত, ঠিক তেমনি বাংলাদেশেও ফ্যানাটিক ওবায়দুল হকের সবক নিয়ে এখন থেকে বাংলাদেশ চলবে।  রাষ্ট্রের কর্ণধরেরা, উপদেষ্টারা, রাজনীতিবিদেরা, সাংবাদিকেরা সব একযোগে উবু হয়ে হেডমোল্লার পায়ের কাছে বসবেন, কেউ কেউ হয়ত অতি উৎসাহী হয়ে হুজুরের হস্ত-পদ ধৌত করবেন,  আর হুজুরে আলমপনা আশীর্বাদের ভঙ্গিতে সবক দিবেন, পবিত্র গ্রন্থ থেকে দিকনির্দেশনা দিবেন, আর সেই পবিত্র সবক মাথায় নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালিত হবে। 

আরেকটা দ্বিতীয় নজির-ও সেই সাথে স্থাপিত হল। এতদিন রাষ্ট্রীয় বিবাদ-বিপত্তি নিষ্পত্তির জন্য সংসদভবন, বঙ্গভবন এগুলো ছিল উপযুক্ত এবং নির্বাচিত স্থান। আমাদের অতি বুদ্ধিমান রাষ্ট্রের কর্ণধরেরা সেটিকে সংসদভবনের বদলে বায়তুল মোকারমের বৈঠকখানায় নিয়ে ঊঠালেন। এই কাজের সুদূর-প্রসারী প্রভাব কি তারা ভেবে দেখেছেন? এ ব্যাপার-স্যাপারগুলো হয় শারিয়া-কেন্দ্রিক রাষ্ট্রে।  বাংলাদেশে শারিয়াভিত্তিক দেশে পরিণত হতে আর কয়েক পা দূরে রয়েছে বলে মনে হয়।  শারিয়া রাষ্ট্রে পরিণত হলে তার আবস্থা কি হবে তা সম্বন্ধে আমাদের দেশের বিদ্যাবাগীশদের কোন ধারণা আছে?  আদালতে যেতে হবে না, স্রেফ মুখের কথাতেই স্ত্রীকে তালাক দেওয়া যাবে, তা সে গাঁজা খেয়েই হোক আর সুস্থ মাথাতেই হোক, কিন্তু স্ত্রী স্বামীকে কোন অবস্থাতেই তালাক দিতে পারবে না (Shafi’i Law # N 3.5, p.560; Hanafi Law, p.81, 523; Deen Ki Bnate, Maolana Ashraf Ali, Thanvi, p.254, Law 1537), মেয়েদের ধর্ষন প্রমাণের জন্য চারজন পুরুষ সাক্ষী লাগবে (Shafi’i Law # 0.24.9),  হিলা বিয়ের মাধ্যমে তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে ঘরে তুলতে হবে (Islamic Laws by Ayatollah Seestani, Law # 2536, p.469; Hanafi Law, p.15; Shafi’i Law #p.29.1, p.673), হুদুদ মামলাতে মেয়েদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হবে না  (Hanafi Law, p.353; Shafi’i Law # 0.24.9, p.638; Penal Law of Islam, p.44,45.), সম্পত্তিতে মেয়েদের অধিকার থাকবে পুরুষের অর্ধেক (Abdur Rahman Doi, p.299)ইত্যাদি।  আমাদের রথী-মহারথীরা কি একবারো চিন্তা করেছেন দেশটাকে কোন চুলায় তারা নিয়ে যাচ্ছেন? 
 
তর্ক করার সময় আমি নিজেই বলি আমাদের একাত্তুরের মত গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস আছে, এ দেশ কখনোই শারিয়া ভিত্তিক দেশে পরিণত হবে না।  কালকেও এক বন্ধুর সাথে কথা বলতে গিয়ে একাত্তরের, নব্বই-এর উদাহরণ হাজির করলাম।  কিন্তু দেখলাম নিজের কাছেই নিজের কন্ঠ এখন অপরিচিত লাগছে। আমাদের জীবনে সত্যই কি কখনো একাত্তুর ঘটেছিল? কেমন যেন স্বপ্নের মত মনে হয় সবকিছু। বাংলাদেশের ভবিষ্যত নিয়ে ভাবলে এখন সবার আগে চোখের সামনে ভেসে উঠে ইরাণে আর আফগানিস্তানের মত রাস্তায় রাস্তায় মিছিল করা শশ্রুমন্ডিত জিহাদী বাহিনীর অগণিত মুখ। বাংলাদেশ কি ওই দিকেই চলেছে? অথচ,আমার সিডিতে এখনও বেজে চলেছে মাহমুদুজ্জামান বাবুর সুললিত কন্ঠের গান -
 
"ভোর হয়নি, আজ হল না
কাল হবে কিনা তাও জানা নেই
পরশু ভোর আসবেই
এই আশাবাদ তুমি ভুল না"।
 
২২ সেপ্টেম্বর ২০০৭


মন্তব্য

অভিজিৎ এর ছবি

যারা লেখা পড়ে ভোট দিয়ে যাচ্ছেন, তারা যদি দয়া করে কিছু কমেন্ট-ও সাথে দক্ষিণা হিসেবে দিয়ে যেতেন তাহলে বাধিত হতাম।

কি মনে হয়, ভোর আসবে?
নাকি সবকিছু নষ্টদের অধিকারে চলে যাবে?

===================
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আশাবাদের চেয়ে নিরেট বাস্তবতাটাই বিবেচনা করা ভালো । আশাবাদের জায়গাগুলো সংকুচিত হতে হতে প্রায় নিঃশেষ হয়ে গেছে ।

ধর্মজীবি রাজনৈতিক গোষ্ঠী এবং সামরিক বাহিনী দুটোই সম্মিলিত যোগাযোগে এই রাষ্ট্রের ক্ষয়রোগ তৈরী করেছে । প্রথমটাতো জন্মলগ্নেই আর দ্বিতীয়টা মাত্র ৩ বছরের মাথায় । '৭৫ এর হত্যাকান্ডের দায় যদিও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী স্বীকার করেনা,কয়েকজন মেজরের উপর দায় চাপিয়ে দেয় -আসলে কিন্তু গোটা সেনাবাহিনীই এর বেনিফিশায়ার । '৭৫ এর হত্যাকান্ডের ধারবাহিকতায়ই তো পরের প্রায় পনের বছর উর্দিওয়ালারা সরাসরি রাষ্ট্রশাসন করলো ।
ধর্মজীবি-উর্দিওয়ালা-চরিত্রহীনবুদ্ধিজীবি রা মিলে এর পরের পনের বছরে(৯১-২০০৬)রাজনীতিকে করেছে গনবিমুখ যেনো চুড়ান্ত সময়ে এসে গনরাজনীতি প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনা ।

বাস্তবতা হলো-এই ফেজ এ তারা জয়ী ।ভ্যাকুয়াম তৈরী করা গেছে । অনেক উদাহরনের একটা বিএনপি ।বিএনপির মতো বিশাল সংগঠনকে ছিবড়ে কানা করে দিয়েছে জামাত,তারপর জিরো আওয়ারে এখন উর্দিওয়ালাদের কোলে চলে গেছে । বিএনপি টোটাল লুসার ।

আমি আশাবাদী নই । আমি দাঁতে দাঁত চেপে দেখতে চাই সর্বনাশের আর কতোটুকু বাকী?

-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

অভিজিৎ এর ছবি

আসলে ঘটনা হল, প্রতিটা সরকারই মৌলবাদীদের প্রত্যক্ষ মদদ না দিলেও এটলিস্ট মাথায় তোল্লা করে রেখেছে সবসময়-ই। মৌলবাদের যে চারাগাছ রোপন করা হয়েছিল, ফলন বারাতে যে জলসিঞ্চন করা হয়েছিল, এগুলো যে এক সময় বাম্পার ফলন দিবে তা ত সহজেই বোঝা যায়। তাই দিচ্ছে এখন। উপদেষ্টারা ফসল ঘরে তুলতে বায়তুল মোকারমে দৌড়াচ্ছেন।

===============================

পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

সৌরভ এর ছবি

আশা একেবারেই শেষ হয়ে যায় নি - আমি মনে করি। আমি অন্য একটা পারস্পেকটিভ থেকে এই ব্যাপারটা আরো একটু বড়ো পরিসরে দেখার চেষ্টা করি সবসময়।

শুধু "বিশ্বাস" নামক স্তম্ভের উপরে ধারণ করে থাকা এই "ধর্ম"-দানব যতোই শক্তিশালী হোক না কেনো, একটা সময় পরে এর দিন শেষ হবেই।
তরুণ প্রজন্মের মানুষ বেশি ভোগবাদী এবং "ধর্ম" ব্যাপারটা অনেকের কাছেই সামাজিক লৌকিকতা ছাড়া বেশি কিছু নয়।

সেই অর্থে, এই প্রজন্ম সামনের দিনগুলোতো সামাজিক ও অর্থনৈতিক যে ভোগবাদী পরিবর্তনের মুখোমুখি হবে , তাতে ধর্মদানবের অস্তিত্ব সংকটের মুখোমুখি হওয়ার কথা। তবে, শাসন ও সরকারে এই দানব শেকড়ে-শাখায় বসে গেলে কী হবে - বলা মুশকিল।

তাই আশাবাদী হলেও, আত্মবিশ্বাসী হতে পারছি না।



আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

অভিজিৎ এর ছবি

শুধু "বিশ্বাস" নামক স্তম্ভের উপরে ধারণ করে থাকা এই "ধর্ম"-দানব যতোই শক্তিশালী হোক না কেনো, একটা সময় পরে এর দিন শেষ হবেই।

একদম ঠিক কথা।

=================================
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

ধ্রুব হাসান এর ছবি

"৭৫ এর হত্যাকান্ডের দায় যদিও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী স্বীকার করেনা,কয়েকজন মেজরের উপর দায় চাপিয়ে দেয় -আসলে কিন্তু গোটা সেনাবাহিনীই এর বেনিফিশায়ার ।"...এই কথাটাই আমার মনে হয়েছে সবসময়;এটাই বাস্তবতা! আমারতো মনে হয়,গোটা বিশ্বেই মিলিটারি মানেই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, ব্যক্তি মানুষের অধিকারহরনের সর্বোচ্চ পেশীবহুল সংগঠন। এই কথা শুনে ভাবতে পারেন আমি নৈরাজ্যবাদী; কিন্তু আশাবাদী হওয়ারও সুযোগ নেই,আবার আশা ছাড়া বাচাঁও দায়...যেন নো ম্যানস্‌ল্যান্ডে বসবাস,আগামীর স্বপ্নবিহীন!

অভিজিৎ এর ছবি

"৭৫ এর হত্যাকান্ডের দায় যদিও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী স্বীকার করেনা,কয়েকজন মেজরের উপর দায় চাপিয়ে দেয় -আসলে কিন্তু গোটা সেনাবাহিনীই এর বেনিফিশায়ার ।"...এই কথাটাই আমার মনে হয়েছে সবসময়;এটাই বাস্তবতা! আমারতো মনে হয়,গোটা বিশ্বেই মিলিটারি মানেই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, ব্যক্তি মানুষের অধিকারহরনের সর্বোচ্চ পেশীবহুল সংগঠন।"

ঠিক তাই। আমি আমার আগের একটা লেখায় লিখেছিলাম ঃ
আমাদের জন্য কোন আর্মির প্রয়োজন নেই। শুধু জিয়া বা এরশাদই নয়, খালেদ মোশারফ, কর্ণেল তাহের, মঞ্জুর, নাসিম, ফারুক, রশীদ, মহিউদ্দিন বন্দুক উঁচিয়ে বে-আইনীভাবে ক্ষমতা দখল করতে চেয়েছে বিভিন্ন সময়; অথচ মুখে বলে এসেছে তারা নাকি জনগনের সেবক। তা সেবকই বটে। জনসেবার নামে তারা বংগবন্ধুকে হত্যা করেছে, হত্যা করেছে শিশু রাসেলকে, পাহাড়ী জনগণের উপরে নির্বিচারে অত্যাচার চালিয়েছে, কল্পণা চাকমাদের ধর্ষণ করেছে নয়ত অপহরণ করেছে, ছাত্র নির্যাতন করেছে, চোলেশ রিছিলদের গুম করেছে, সাংবাদিক পিটিয়েছে, মহিলাদের হেন্সথা করেছে, আল বদরদের মত রাতের আঁধারে ড. আনোয়ার হোসেন আর হারুণ হারুন অর রশীদকে ক্যাম্পে উঠিয়ে নিয়ে গেছে, নির্যাতন করেছে। এমন পরোপকারী জনন্সেবক বাহিনী আমাদের না থাকলেও চলবে। শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা পৃথিবী জুড়েই আর্মি একটি "এন্টি পিপল ইন্সটিটিউশন"। তাদের একমাত্র কাজই হচ্ছে সরকারের ধামাধরা হয়ে জনগণকে ঠ্যাঙ্গানো, প্যাদানো, হত্যা, খুন, ধর্ষন আর নয়ত অন্য দেশে গিয়ে যুদ্ধ লাগানো। আর্মি নামক ইন্সটিটুশনটি আছে বলেই বেহায়া বুশের পক্ষে সম্ভব হয় ইরাকে সৈন্য প্রেরণ, আর্মি ছিল বলেই একাত্তুরে ইয়াহিয়ার পক্ষে সম্ভব হয়েছিল ত্রিশ লাখ বাংগালী নিধন।
লেখাটা পাওয়া যাবে এখানে

=================================
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

দুর্বাশা তাপস এর ছবি

বংলা অভিধানে 'বিশ্বাস' শব্দ আর থাকবেনা
সবপাখি শকুন হয়ে যাবে
সব দড়ি হবে সাপ
আর সব বাঞ্চোৎ হবে জাতির বিবেক
--------------------------------------------
আমিও যদি মরে যেতে পারতাম
তাহলে আমাকে প্রতি মুহূর্তে মরে যেতে হত না।

==============================
আমিও যদি মরে যেতে পারতাম
তাহলে আমাকে প্রতি মুহূর্তে মরে যেতে হত না।

বিপ্লব রহমান এর ছবি

আমি জানি, নিশ্চিত জানি, সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে...


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

তারেক এর ছবি

একজন মতি-মইনুলের মাথা নোয়ানোয় কিছু যায় আসে না। বাঙ্গালীর মনন কবে পরাধীন ছিল? সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যেতে ঢের দেরী আছে।

তবে ঐ নপুংসকদের ক্ষমাপ্রার্থণা বায়তুল মোকাররমকে লাল মসজিদ বানানোর দিকে হয়ত একধাপ এগিয়ে নিল।

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

অতিথি লেখক এর ছবি

রাজনৈতিক দলগুলোকে ভেঙ্গে, ছবিযুক্ত অঙ্গুলি ছাপ আইডি ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেশণ করে মানুযের রাস্তায় নামার ক্ষমতা কেড়ে নেয়ার চক্রান্ত সফল হলে আমরা কোথায় যাব ভেবে দেখেছেন কি কেউ?

একটি জিনিষই আমাদের সব আশার মূল, সব শক্তির মূল: মানুযের রাস্তায় নামার ক্ষমতা (এর আপাত ক্ষতি মেনেই বলছি), সেটিকে যেন না হারাই, এই আজকের প্রার্থনা।

- অপ্রিয়

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

মতির কাজকর্মে আশা খোয়ানোর কিছু নেই। লেখাটা পড়ে বেশ ভাল লাগলো। যারা আজকে এত শক্তিশালী, তারা সবাইই শুরু করেছে জনগণের একটা সিলেক্টিভ অংশের কাছে আবেদন করে। আমরা অতিবুদ্ধিমানেরাই সবার কাছে আপিল করার মত চিন্তা করতে গিয়ে ডুবেছি বারবার। ক্ষমতা লাভের টেকনিক হিসেবে ওদের টেকনিকটাই বেশি কার্যকর। বুঝদার মানুষ যদি কম হয় তো অল্প লোকের কাছেই আবেদন করবো আমি -- এরকম মানসিকতা নিয়ে রাজনীতি করে না কেউ। ভোটের লোভে নীতি বিসর্জন দেয় সবাই। নীতি আঁকড়ে থেকে একটা নির্বাচন হেরে যাওয়াকে সবাই দুনিয়ার শেষ বলে মনে করেন, কেউ নীতির পরীক্ষা হিসেবে দেখেন না।

অভিজিৎ এর ছবি

মতির কাজকর্মে আশা খোয়ানোর কিছু নেই।

হুমম, আশা নিয়ে ঘর করি, আশায় পকেট ভরি, আশা রাখি পেয়ে যাব বাকি দু আনা। ......
===============================
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।