শিরোনামহীন

বিপ্লব রহমান এর ছবি
লিখেছেন বিপ্লব রহমান (তারিখ: শনি, ২১/০২/২০০৯ - ২:৩৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

..চাকরীটা আমি ছেড়ে দিয়েছি, বেলা শুনছো?...
-----------------------------------------

অবশেষে আরটিভির সামান্য বেতনের উঁচু পদের গ্লানিময় বস্তিবাস-জীবনের অবসান ঘটেছে। সেদিন সুন্দর এক সকালে অফিসে ঢুঁকে আমার ডেস্কের ডেল-কম্পিউটারে দ্রুত টাইপ করে ফেললাম পদত্যাগপত্র।

'বরাবর, চেয়ারম্যান, আরটিভি। বিষয়: পদত্যাগপত্র। জনাব, বিনীত নিবেনদন এই যে, ব্যক্তিগত কারণে আমি বর্তমান কর্মস্থল থেকে পদত্যাগ করছি। একই সঙ্গে আবেদন জানাচ্ছি, আজ থেকে আমার পদত্যাগপত্র কার্যকর করার জন্য। পেশাগত জীবনে আমি সব সময়ই আমার সহকর্মীদের কাছ থেকে সব ধরণের সহযোগিতা পেয়েছি, এ জন্য আপনার মাধ্যমে তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনার সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ। নিবেদক--ইত্যাদি।

সকালে অফিস বেশ ফাঁকা থাকে। তবু যে আট-দশজন সহকর্মী তখন সকালের সংবাদ তৈরিতে ব্যস্ত, তাদের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করে আমি ব্যাগ গুছিয়ে উঠে পড়ি।

যাবার বেলায় কয়েকজনের কৌতুহলী প্রশ্নের ছোট্ট করে জবাব দেই: এমনি, বিশেষ কোনো কারণে নয়; এখানের পরিবেশটা আমার পছন্দ হচ্ছে না। নাদিম কাদিরের মতো বড় সাংবাদিকই যখন এখানে টিকতে পারেনি, তখন আমি আর কোন ছাড়? নাহ্, আপাতত কোথাও যোগ দিচ্ছি না। কয়েকদিন বিশ্রাম নেবো, বই মেলায় আড্ডাবাজী করবো। তারপর না হয় চাকরী খোঁজা যাবে। ...আমি কাজ জানি, তাই চাকরী নিয়ে খুব ভাবি না।...

বিশাল ভবনের লিফট টপকে (হায়, লিফটম্যান!) কারওয়ানবাজারের ব্যস্ত অফিসপাড়ার পরিবেশে আমি খানিকটা হতচকিত হয়ে পড়ি। এখন আমি কর্মহীন, বেকার! টানা ১৭ বছরের পেশাগত জীবনে এই প্রথম। এখন আমার কোনো গন্তব্য নেই, কাজ নেই, লেখার জায়গাও নেই।....তবে কথা কী না, বরাবরই নিজের কাছে আমি খুব পরিস্কার। আর প্রত্যেক মানুষেরই তো আত্নমর্যাদা বলে একটা বস্তু থাকা উচিৎ, তা-ই না? বিশেষ করে তার যদি আবার নকশাল-ব্লাড হয়!

তবু কী আমি সামনের অনিশ্চিত ভবিষ্যত ভেবে বিপন্নতাবোধ করি? আমি ফোন করে বসি, আমার করপোরেট বন্ধুটিকে, ধরা যাক, সেই বেলা বোস।...

সে তখন অফিস অ্যাকাউন্ট মেলাতে খুব ব্যস্ত। আর আমি জানি, তার ভেতরের গহিনের অস্থিরতাটুকুও। বিগত প্রেম মুছে ফেলার জন্য তাকে কতখানিই না মানসিক পীড়ন সহ্য করতে হচ্ছে! এমন কী সে এ জন্য আমার শরণাপন্ন হতেও দ্বিধা করেনি!

তো সেই বেলা বোস বলে, অ্যাঁ, তুমি এই সকালে এ সব কী বলছো? দুষ্টুমী করছো না তো? শোনো, এখন আমার অফিসে এসো না প্লিজ। আমার সামনে একগাঁদা ক্লায়েন্ট বসে আছে, অ্যাকাউন্ট নিয়ে খুব বিজি; আমি একটু ফ্রি হয়ে তোমাকে ফোন করছি, কেমন?

আমি জানি, কেউ কথা রাখেনি, কেউ কথা রাখে না। ...সুনীলের সেই '৩৩ বছর' কেটে যাওয়ার অর্থও জেনেছি ফেলে আসা প্রথম যৌবনেই। তাই নিশ্চিতভাবেই বেলা যখন আর ফোন করে না, তখন আমি একেই স্বাভাবিক বলে মেনে নেই।

বাসায় ফিরে, চুপচাপ নিজের ঘরে ঢুকে ঘর অন্ধকার করে শুয়ে পড়ি। অবসরপ্রাপ্ত রেডিও অফিসের আপার-ক্লার্ক বৃদ্ধ মা কী ভাবে যেনো কোনো বিপদ সংকেত টের পান। দরজার পর্দা সামান্য সরিয়ে সভয়ে জানতে চান, বাবু, তোর কী শরীর খারাপ? আজ না তোর নাইট-ডিউটি? ...

আমাকে বিরক্ত করো না মা। একটু একলা থাকতে দাও....আমার মন ভালো না।...

আহ, একুশের মেলা
-------------------

একুশের বইমেলায় পরদিন একটু তাড়াতাড়ি যাই। বেকার হলেও সাংবাদিক তো, নাকী? তাই অনেক বছর পর অনিয়মিতভাবে নিয়মিত মেলায় এসে নানান পরিবর্তন সহজেই চোখে পড়ে। পুরনো বন্ধু, আমার প্রথম বই 'রিপোর্টারের ডায়েরি, পাহাড়ের পথে পথে'র প্রকাশক, ‌'পাঠসূত্রের' রাজিব নূরকে ভীড়ের মধ্য থেকে টেনে আলাদা করি। শিববাড়ি মন্দিরের পাশে কফি খেতে খেতে ওকে বলি চাকরী ছেড়ে দেয়ার ইতিবৃত্ত। রাজিব সব কিছু চুপচাপ শোনে, সে-ও একসময়ের স্টার-রিপোর্টার; মিডিয়া জগতের নোংরামি কী তাকেও স্পর্শ করে নি? পরে সে বলে, খুব ভালো করেছেন। এখন কয়েকদিন চুপচাপ বিশ্রাম নেন, ভালো করে ঘুম দেন। টাকা-পয়সা লাগলে আমি তো আছিই। একটু ভেবে দেখি, চাকরির জন্য আপনাকে কোথায় কোথায় নক করতে হবে। জানেনই তো এখন মিডিয়ার-বাজার খুব খারাপ!...

এরই মধ্যে 'শুদ্ধস্বরে' গিয়ে যথারীতি একবার ঢুঁ দেই। টুটুল ভাই এসেছেন? সচল প্রকাশ বের হয়েছে? শ্যাজাদি, পিয়াল ভাইয়ের বইটা আসেনি? নাহ্, যে বইটা নিয়ে সবচেয়ে অনিশ্চয়তা ছিলো, লীলেন ভাইয়ের কবিতার সেই বইটাই সবার আগে প্রকাশ হয়েছে!

হঠাৎ সেখানে ছড়াকার সহব্লগার লুৎফর রহমান রিটনভাই আমাকে আবিস্কার করে ফেলেন: তোমার বাবা কেমন আছেন? তোমার বইটা কী বের হয়েছে? ...

আমি টুটুল ভাইয়ের জন্য আনা বইটাই রিটনভাইকে লিখে দেই। উনি বলেন, বাহ, খুব সুন্দর প্রচ্ছদ! অরূপের করা তো, তাই!... শোনো, তুমি কাল তথ্যকেন্দ্রের সামনে বিকাল ৪টার সময় এসো। তোমার একটা লাইভ ইন্টারভিউ নেবো।....

নাবালকেরা...
--------------
আমার বইটির একজায়গায় পাহাড়ের কথিত পূর্নস্বয়ত্বশাসনপন্থী, শান্তিচুক্তি বিরোধী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) কে 'নাবালক বিপ্লবীদের গ্রুপ' বলা হয়েছে।

তো ইউপিডিএফ-এর নেত্রী সমারী চাকমার বান্ধবী, হেনরী কীভাবে যেনো আমার ফোন নাম্বার খুঁজে বের করে, মেলায় এসে হাজির। বিপ্লব দা, আমি তো সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগের ওপর 'সালমা সোবহান ফেলো' (ইহা হয় কোন অশ্বডিম্ব?) করেছি; এখন খাগড়াছড়ি থেকে প্রথম আলোতে টুকটাক সাংবাদিকতা করছি, কিন্তু আমি চাচ্ছি, ঢাকায় এসে সাংবাদিকতা করতে...আমার জন্য একটু ব্যবস্থা করুন না প্লিজ। এই নিন আমার সিভি। আপনি তো খুব নামকরা সাংবাদিক, এখন দেখি, আমার জন্য কী করতে পারেন!

আমি সিভিটা ব্যাগে ঢুঁকাই। চাকমা ভাষা পরদর্শী, বব-কাট চুলের কৃষকায় হেনরীয়েটা সুখকে, আমার অসুখি করতে ইচ্ছে করে না; তবু ওকে সত্যি কথা বলি: হেনরী, আমার নিজেরই চাকরী নেই। কাল আমি চাকরী ছেড়ে দিয়েছি। তবে শিগগিরই আমার কাজ জুটে যাবে। আর আপনার জন্যও আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।

দুবছরের সাংবাদিকতায় অভিজ্ঞ হেনরী কিছুতেই আমার কথা বিশ্বাস করে না: ও মা, এ কী কথা বিপ্লব দা! আমার মনে হয়, আপনি মিথ্যে বলছেন। নিশ্চয়ই আপনার চাকরী চলে গেছে! কেউ আবার চাকরী ছাড়ে না কী!

এরই মধ্যে সমারী চাকমা এসে হাজির। আমার এক সময়ের বেস্ট-ফ্রেন্ড! সেই আগের মতোই উজ্জ্বল এবং মস্তিস্ক-শুন্য। বিপ্লব দা, আমরা এখন যাই। চলে আয় হেনরী, আমরা তো আবার নাবালক বিপ্লবীর দল!

খুনে গপ্পোবাজ
--------------

লেখক, সাংবাদিক আহসান কবির একটি বই লিখেছেন, বিদেশী কাহিনী আবলম্বনে থ্রিলার টাইপের বই। এটিও 'পাঠসূত্র' প্রকাশনা। বইটির নাম-খুনে গল্পরাজ, আমি দুষ্টুমী করে একটু ঘুরিয়ে বলি খুনে গপ্পোবাজ। আর সামান্য হিংসে হলেও স্বীকার করতে দোষ নেই , কবির ভাইয়ের বইটির কাটতি বেশ ভালো।...

কবির ভাই সাবেক নৌ-বাহিনীর কর্মকর্তা, পরে চাকরীচ্যুত ও ভাগ্যচক্রে সাংবাদিক। পাহাড়ে অনেক বছর সেনা নির্যাতন প্রত্যক্ষ করায় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের (তিনি সাবেক হলেও) সম্পর্কে আমার ভেতর একটি অন্য রকম প্রতিক্রিয়া কাজ করে। তবে কবির ভাইয়ের সঙ্গে আমার এক ধরণের সখ্যতা আছে। ...নৌ-বাহিনীর সাবেক তো, তাই আমি তাকে দুষ্টুমি করে চাকমা ভাষায় বলি, পাইন্ন্যা সাপ। সংক্ষেপে, পাইন্না কবির!

তো, ওই সন্ধ্যায় পাইন্নার সঙ্গে মদ গিলে বেহেড হতে হতে চাকরী-বাকরী ইত্যাদির শুলক-সন্ধান করি। তাকে আমি কিছুতেই বোঝাতে পারি না: আমার সাংবাদিকতার মাস্টার, রাঙামাটির সুনীল দা, এখনো তার দরজায় লিখে রেখেছেন, আপোষ করতে করতে মানুষ ক্রমেই ছোট হয়ে যায়! আমি পারি না, অনেক কিছুই পারি না হে!...

---
ছবি: পটেটো ইটার্স, ভ্যানগগ, অন্তর্জাল।।


মন্তব্য

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

এই মন্দায় নিজের ইচ্ছায় চাকরি ছাড়সে এমন একজন পাওয়া গেল!

ওয়েলকাম ব্যাক, বিপ্লব-দা। লেখা যেন আরেকটু ঘন ঘন পাই!
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

বহুত দিন পর একটা "ব্লগ" পড়লাম। শান্তি!

বিপ্লব রহমান এর ছবি

কস্কি মমিন!


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

আরিফ জেবতিক এর ছবি

দূর্দান্ত লেখাটি তৃপ্তি নিয়ে পড়লাম ।
-
ওটা এহসান কবির নয় , আহসান কবির । তিনিও বর্তমানে চাকুরিশূন্য সাংবাদিক ।

বিপ্লব রহমান এর ছবি

হুমম তাই তো! ...এই বাজারে একটা চাকরী যে কোথায় পাই! মন খারাপ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

স্বপ্নাহত এর ছবি

পুরা সেইরকম লেখা। ঝরঝরে গদ্য ।

---------------------------------

বিষণ্ণতা, তোমার হাতটা একটু ধরি?

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

বিপ্লব রহমান এর ছবি

ওরে বিষন্নতা! ও বন্ধু আমার!


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

ধ্রুব হাসান এর ছবি

চাকরী ফাকরী কোন ব্যাপার না দাদা, আমরা হলাম এমন ধরনের আর্মস আরো অনেকদিন কাজে আসবে! আপনারো হুট করেই হয়ে যাবে আরেকটা। তবে দাদা মনে হয়, চাকরী মানেই একধরনের আপোষ! আর ঐটা মেনেই আমরা চাকরীটা করি। মাঝে মাঝে হয়তো ধৈর্যের সীমা ভেঙ্গে গেলে সুইস করি বা ছেড়ে দেই! তাছাড়া যে জায়গা থেকে ছেড়েছেন ঐটার নিজের ভবিষ্যতই ভালোনা। মনে হয় এই সিদ্ধান্তটা ভালো নিয়েছেন চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললাম লেখা টা,

ছেড়ে দিয়ে বুক ভরে শ্বাস টানতে পারলে
তার থেকে বড় কিছু নেই
হোক না বিশ্ব মন্দার বাজার-

এত ভালো যারা লেখেন তাদের এখানে মন্তব্য করতেও কেমন ভয় ভয় ঠেকে।
মেঘ

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

পাইন্না কবির আর পাহাড়ি রিপোর্টারের ক্রসফায়ারে পড়া নিরীহ নাবালকের পক্ষ থেকে আপনাকে বিপ্লব।
-----------------------------------------------------------------------
The philosophers have only interpreted the world in various ways; the point, however, is to change it.
[MARX : Theses on Feuerbach]


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

বিপ্লব রহমান এর ছবি

অ্যাঁ !


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

জুয়েল বিন জহির এর ছবি

অনেকদিন পর আপনার লেখা পড়লাম। আশা করছি আরো ভালোকিছু অপেক্ষা করবে আপনার জন্য...।

মুস্তাফিজ এর ছবি

আপনার ভবিষ্যত শুভ হোক। সেদিন ঘুনাক্ষরেও টের পাইনি ঘটনাটা।

...........................
Every Picture Tells a Story

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

অসম্ভব দারুন একটা লেখা। খুবই তৃপ্তিবোধ হলো পড়ার পর। লেখার গভীরতা, প্রাঞ্জলতা, অনুভূতি, সবকিছুই ছুঁয়ে গেল। চাকরি ছাড়লে যদি এমন লেখা সম্ভব হয়, তাহলে কিছুদিন পরপর চাকরি ছাড়তে পারেন চোখ টিপি

রণদীপম বসু এর ছবি

মন্তব্যের জন্য প্রহরীকে বুড়ো আঙুল।
বিপ্লব দা, সেদিন তো তাহলে কফি আপনাকেই আমার খাওয়ানো উচিৎ ছিলো ! ঘটনাটা উল্টো হয়ে গেলো না ! স্যালুট ম্যান !!

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

গৃহান্তরী এর ছবি

আপনাকে বিপ্লব! শুভকামনা রইল, চাকরি-ফাকরি কোন ব্যাপার না।
আর ধ্রুব হাসানের মন্তব্যে -

মনে হয়, চাকরী মানেই একধরনের আপোষ! আর ঐটা মেনেই আমরা চাকরীটা করি।

সহমত। পতিতা তবু স্বাধীন ব্যবসা করে, আর আমরা করি চাকরি!

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

সঞ্জীবদার কথা মনে হলো... বলতেন বেকারত্বের অপর নাম স্বাধীনতা...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সাধু এর ছবি

বিপ্লব আপনাকে বিপ্লবী সেলাম ।

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

সব্বোনাশ! আপনেরেও চাকরি ছাড়ার রোগে পাইছে!
আমি আমার এই ক্ষুদ্র চাকরি জীবনে ছাড়ছি দুইবার, চাকরি গেছেও দুইবার! সমকালে পাতা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর অত্যন্ত বিমল আনন্দের সঙ্গে আমি, সায়মন জাকারিয়া, টোকন ঠাকুর হাসতে হাসতে বের হয়ে এলাম... সিএসবি নিউজ বন্ধ হয়ে গেল, এক বিকেলের মধ্যে তিনশো লোক বেকার হয়ে গেল, আমিও তাদের একজন!
সমকাল ছাড়ার দুই সপ্তার মধ্যে আমি আরো বেশি বেতনে চাকরি পেয়েছি, সিএসবি নিউজ বন্ধ হবার দেড় দিনের মাথায় পেয়েছি আরো বেশি বেতনের অফার!
বেঞ্চমার্কের মতো চ-মার্কা প্রতিষ্ঠান, যেখানে ব্যক্তি আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হয়, যেখানে আমার সাহিত্যচর্চাকে সাইজ করার জন্য সচলায়তনের মতো নিরীহ বাংলা ব্লগকে ব্লক করা হয়েছিল যখন অন্য সবাই দিনের পর দিন পর্ন সাইটে সময় কাটায়... আমি মোটামুটি লাথি মেরে সেই প্রতিষ্ঠান ছেড়ে বের হয়েছি! অফার ছিল, কিন্তু সপ্তমে চড়ে থাকা আমার মেজাজে মনে হয়েছিল আর চাকরি না, এবার অন্য একটা কিছু...
এখন আর কিছুতেই অসহায় বোধ করি না। বাংলাদেশে সম্ভবত আর কখনোই আমার চাকরির অভাব হবে না। আর চাকরি নিয়েও চিন্তিত নই। যেকোনো ধরনের মিডিয়া কেন্দ্রিক ব্যবসা করেও অনেককিছু করা যায়। বিনিয়োগ করার গৌরী সেন খুঁজে পাওয়া যাবে ধারে কাছেই। আর আমি নিজে, ক্রিয়েটিভিটির সাথে জড়িত যেকোনো ধরনের কাজ করে বেঁচে থাকতে পারব বলেই বিশ্বাস করি।
কাজেই... চাকরি যাওয়া অতি শুভ লক্ষণ! কোনো বিশাল প্রাপ্তি আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, অল্পকদিন পরেই আপনি আমার কথার প্রমাণ পাবেন।
---------------------------------------------
আমাকে ছুঁয়ো না শিশু... এই ফুল-পাখি-গান সবই মিথ্যা!

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

বিপ্লব রহমান এর ছবি

চলুক


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

প্রিয় বিপ্লব, আপনার লেখা নিয়ে মন্তব্য করা সম্ভব নয়। পরশুদিন মেলায় আপনাকে আমাদের আড্ডা ছেড়ে উঠে বার বার ফোন ধরতে দেখে, আমাদেরকে কফি খাওয়ানোর জন্য জোরাজুরি করতে দেখে ভেবেছিলাম কমরেড বিপ্লব রহমান নতুন প্রেমে পড়লেন না কি? আপনার মুখ, আপনার আড্ডাবাজী দেখে ঘুনাক্ষরেও ভাবতে পারিনি এই নিদানকালে আপনি এমন কাজ করে বসে আছেন। আপনার মেরুদণ্ডের তারিফ করতে হয়। আফসোস, আপনার মত সবসময় মাথা উঁচু করে থাকতে পারলাম না। আপনার জন্য শুভ কামনা। আশা করি শিঘ্রই নিজের পছন্দমত করার কিছু পেয়ে যাবেন।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

দৃশা এর ছবি

'চাকরি ছাড়বেন... চাকরি পাবেন... এই তো পৃথিবীর নিয়ম।'
এইটা একটা জ্ঞানী ব্যক্তির কথা...আমার না। দেঁতো হাসি
বইয়ের জন্য শুভেচ্ছা আর নতুন চাকরি পাওয়ার জন্য শুভকামনা।
লেখা চমৎকার।
-----------------------------------------
দুঃখ তোমায় দিলেম ছুটি...
বুক পাঁজর আজ ফাঁকা।
দুঃখ বিদায় নিলেও সেথায়...
দুঃখের ছবি আঁকা।

দৃশা

বাপ্পি এর ছবি

স্বেচ্ছায় চাকরি ছাড়ার আসলে মজাই আলাদা। গত কয়েকমাস আগে সৌভাগ্য হয়েছিলো ছাড়ার। কিছুদিন আরাম কইরা নেন।

কীর্তিনাশা এর ছবি

আমিও যদি আপনার মতো চাকরি ছাড়তে পারতাম!!

আর ভালো লাগে না ........... মন খারাপ

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

তানবীরা এর ছবি

পৃথিবীতে কতো সুখী মানুষ থাকে, আহা কতো সুখ চারিধারে।

আর আমরা সূচের আগায় জীবন যাপন করি। গ্লোবাল রিসেশনে এ্যপয়ন্টমেন্ট ফ্রীজড অফিসে, এক দফা ছাটাই কর্মসূচী নিয়ে এক দল এক্সপার্টিজ মাঠে নেমে পড়েছে, কাকে কিভাবে রিপ্লেস করা যায় সেই পরিকল্পনা নিয়ে। রাতে ঘুম ভেঙ্গে যায় টেনশনে, ঘেমে ভিজে এই শীতের মধ্যে জেগে উঠি। গোছানো জীবন ঠিক থাকবেতো এই প্রশ্নের জবাব সন্ধানে ...............

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

বিপ্লব রহমান এর ছবি

একটু দেরীতে বলছি:

সহমর্মীতা ও সাহস যোগানোর জন্য সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা। আর যারা লেখাটি ভালোবেসেছেন, তাদের কাছেও আমি ঋণ স্বীকার করছি।

সব সুন্দর করে গুছিয়ে বলার জন্য আলাদাভাবে ধন্যবাদ দিচ্ছি, মৃদূল আহমেদকে।


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

mihir kanti routh এর ছবি

Biplab,

Fiancial crisis ( Recession) is going on. Everyday people are loosing their jobs in USA ans Canada.Although there is no significant difference betwwen America's crisis and Bangladesh's crisis( Comment of economists),its a tension.
Do u know that i am going to do that work which you alredy did.
mihir

বিপ্লব রহমান এর ছবি

হুমমম...জানলাম। ধন্যবাদ মিহিরদা।


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

থার্ড আই এর ছবি

মিডিয়ার বাজার দেশে বিদেশে সব জায়গাতেই খারাপ। তবে শুধু মাত্র বাঙালি মালিকানাধীন মিডিয়ার বাজার আগামী অর্ধ শতাব্দী খারাপ থাকবে বলেই আমার ধারণা। বিবিসি,আইটিভি কিংবা স্কাই টিভির ব্রডকাস্ট জার্নালিস্টরা যেখানে বছরে ১০০ হাজার পাউন্ড বেতন হাঁকে সেখানে আমরা বাঙালিরা বছরে ১৫-২০ হাজার পাউন্ড বেতন যোগার করতেই কষ্ট হয়। আর বেকারত্বের কথা বলছেন। আমি তো লন্ডনের মত জায়গায় ৬ মাস বেকার ছিলাম। আপনি প্রথম মাসটা একটু দম নেন। তার পর দেখেন কারা কারা আপনাকে ফোন করা কমিয়ে দিয়েছে। আগে যারা সুরেলা কন্ঠে কথা বলতো এখন তারাই অকারনে ব্যস্ততা দেখাবে । আরো অনেক কিছুই উপভোগ করবেন বেকার জীবনে। কর্পোরেট পলিটিক্স আমাদের দেশের অনেক মেধাবীকে ধ্বংস করে দিয়েছে।তবে হতাশার কিস্যু নাই। কাজ জানা লোকের বেশী দিন বেকার থাকা লাগেনা।
-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।