গাঞ্জা গল্প: মানব ও মহামানব

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি
লিখেছেন অছ্যুৎ বলাই (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৫/০৭/২০০৭ - ৭:৪৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কেঁচো এসকেন্দার বড়শি দিয়া মাছ ধরায় ওস্তাদ। মাছের খোরাক অবশ্য কেঁচো। এসকেন্দারের ধারণা, মৎস্য রাজ্যে কেঁচো চরম সুস্বাদু খাদ্য।

এসকেন্দারের মৎস্য শিকার জীবনের শুরু পুকুর থেকে। এরপর বেশ কিছুকাল খাল-দীঘি এগুলোতেই সে কেঁচোর লোভ দেখায়া মৎস্য শিকার করে করে হাত পাকিয়েছে।

এসকেন্দারের খ্যাতি তখন চরমে। কিন্তু তার মনে শান্তি নাই। কেঁচো খাওয়াইয়া মাছ ধরা কেমুন জানি দিন দিন বিস্বাদ হয়া যাইতাছে। এসকেন্দার ভাবিয়া চিন্তিয়া বাইর করলো, দিনকাল বিস্বাদের পিছনে কেঁচোর ভূমিকাই শেষ কথা নয়। ক্রমাগত ছোট হয়ে আসা পৃথিবীতে শিকার ক্ষেত্র না বাড়ালে মনের বিরাগভাজন হওন কোনোভাবেই এড়ানো যাইবে না।

এসকেন্দার ছিপ বড়শি আর কেঁচোর ভান্ডার লইয়া নদীর দিকে যাত্রা করলো। তখন শরৎকাল। দুপুর বেলা। মৎস্য শিকার করিতে করিতে এসকেন্দার ঘুমায়া পড়িলো। ঘুমের মাঝে স্বপ্নে সে দুইটা জিনিস দেখলো: ১) তার পোষা মোরগটা একপাল মুরগীকে তাড়া করিয়া ফিরিতেছে। অতপর একটা ধরিয়া অবশ্য কর্ম করিতে সমর্থ হইলো। কাম শেষে তৃপ্তি সহকারে একটা পালক ঝাড়া দিয়া কককক করিয়া দৌড়াইয়া গেলো। ২) সেকেন্ড সীনে সে মাছ ধরা দেখিলো। একটা পুটিমাছ মাত্র কেঁচো গিলিয়াছে, এর মধ্যে কোথা হইতে একটি ধেড়ে অজানা বর্ণের মাছ আসিয়া পুঁটিটিকে গলাধঃকরণ করিলো। আসেপাশে কতশত কেঁচো ঘুরিয়া বেড়াইতেছে, অজানা মৎস্য মহোদয় উহাতে মনোযোগ প্রদান করিলো না।

এসকেন্দার ধড়মড় করিয়া উঠিয়া বসিলো। বড়শিতে একটি ছোটখাট মৎস্য সদস্য কেবলমাত্র ফান্দে পড়িয়া ধড়ফড় শুরু করিয়াছে। এসকেন্দার স্বপ্নেপ্রাপ্ত বিদ্যা প্রয়োগ করিলো। প্রাপ্ত মৎস্যটিকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করিলো। এবং এই লুপ চলিতেই থাকিলো। কেঁচো সমাজ হাফ ছাড়িয়া বাঁচিলো। কিন্তু ওইদিকে একটি বড়সড় মৎস্যকে কন্ট্রোল করার কোশেশে এসকেন্দারের হাঁফ ধরিয়া আসিলো।

বড়সড় মৎস্যটি আসলে মৎস্য নহে। কুম্ভীর ছানা। এসকেন্দার সেদিনের মত ক্ষান্তি দিয়া কুমীর ছানা টিকে বগলদাবা করিয়া বাড়ি ফিরিয়া আসিলো।

সেইদিনের পরে কেঁচো এসকেন্দারকে আর মৎস্য শিকারে দেখিয়াছে, এমন কথা কেহ হলফ করিয়া বলিতে পারিবে না। কে কুম্ভীর ছানা পরিচর্যায় নিজেকে ফুলটাইম বিজি রাখিয়াছে বলিয়াই সবার ধারণা। অবশ্য এ নিয়া তেমন উচ্চবাচ্য হইলো না। কেলেঙ্কারীর সুযোগ না থাকিলে গরীবের ব্যাপারে উৎসাহী লোকজন মনুষ্য সমাজে এমনিতেই বিরল।

কুম্ভীর ছানাটি দুধেভাতে বাড়িয়া উঠিলো। কিন্তু তাহার মাথায় কেবলই বদবুদ্ধি খেলিতো, সে কেবলই নদিতে যাইতে চায়। এসকেন্দার তাহাকে এ কথা ও কথায় ভুলাইয়া অনেকদিনই সামাল দিলো। কিন্তু শেষ রক্ষা হইলো না। এসকেন্দার তাহার পিঠে চড়িয়া খালবিল পাড়ি দিয়া নদীতে উপনিত হইলো।

সেকালে নদীতে চড়া পড়ে নাই। ড্রেজিং ছাড়াই স্টীমার চলিতো। কুম্ভীর ছানা স্টীমার দেখিয়া বেজায় উৎসাহে তড়িৎ বেগে সেইদিকে ধাবিত হইলো। সেইদিনের পরে আর এসকেন্দার কাহারো চক্ষুগোচর হয় নাই।

সেই বছর বাজারে তেল চকচকা ইলিশের সরবরাহ পূর্বাপর সকল রেকর্ড ভঙ্গ করিলো।


মন্তব্য

হাসান মোরশেদ এর ছবি

কেঁচো দিয়ে কুমীর আনা!

সবার আগে পড়ে গেলাম হাসি
-----------------------------------
'পড়ে রইলাম বিধির বামে,ভুল হলো মোর মুল সাধনে'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

এই মুহূর্তে একটা মিটিং এ আছি। আজ মিটিংয়ের শেষ দিন। টায়ার্ড। সবাই যখন একটা ঘুমপাড়ানি টেকনিক্যাল বিষয় নিয়া আলোচনায় বিজি, তখন গাঞ্জা গল্প লিখিতো হইলো। ভাষার ব্যবহারে পদে পদে হোঁচট খাইলে বলাই দায়ী নহে।

হাসান ভাই, গাঞ্জায় বিভ্রান্ত হওয়ার জন্য ধন্যবাদ। হাসি

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

আরশাদ রহমান এর ছবি

কেঁচো দিয়া মাছ, মাছ দিয়া কুমীর ................... হাসি

দৃশা এর ছবি

এসকেন্দার তাহার পিঠে চড়িয়া খালবিল পাড়ি দিয়া নদীতে উপনিত হইলো।
- এমুন একটা যান পাইলে মচেতকার হয়...যানজটে জীবন তেজপাতা...
উওম হইছে।

দৃশা

হিমু এর ছবি

বড়ই জটিল! এসকেন্দারের স্বপ্নের মুরগিগুলি এখন শৃগালের প্রহরায় "নিরাপদে" রহিয়াছে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

সৌরভ এর ছবি

মোরগের স্বপ্নের জায়গাটায় প্রীত বোধ করছি।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

শিরোনাম বদলাতে হবে। গাঞ্জা শব্দ রাখা যাবে না। গল্প গল্পই। এর সা থে ভেজিটেবলের কোনো যোগাযোগ নাই।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

আরশাদ ভাই, কুমীর দিয়া নিজেই। চোখ টিপি

দৃশা ভাই, ছাগলকে বাহন হিসেবে ব্যবহার করা গেলে ঢাকার যানজট সমস্যার একটা বিরাট সমাধান পাওয়া যেত। খালেদা জিয়ার ছাগল পালন প্রজেক্টও ফুলেফেঁপে ওঠতো। এখন দরকার ছাগলকে আধুনিকীকরণ, যাতে সেটা বাহন হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে।

গাঞ্জা গল্পের অর্থ বের করতে হিমু ও সৌরভের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানাই।

শোহেইল ভাই, ভেজিটেবল দিয়া গল্পকে স্টেরিওটাইপড করলাম। এই ভেজিটেবলের আওতায় যেগুলো থাকবে, তার অর্থ বলেদিতে লেখক বাধ্য নয়। চোখ টিপি

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

ঝরাপাতা এর ছবি

হ, আরেকটু টানতে পারলে মন্দ হয় না, যা দিনকাল পড়ছে।
_______________________________________
রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।