সম্পাদকের কথা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ০৩/১০/২০০৭ - ৫:২৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আত্মহত্যার আগে প্রায় দুই মাস ধরে দিনরাত পরিশ্রম করে সুনীল সাইফুল্লাহ তাঁর কবিতার সংশোধন করছিলেন; এটা তাঁর মৃত্যুর প্রস্তুতি- তখন আমরা বুঝতে পারিনি। মৃত্যুর পর তাঁর বালিশের নীচে একটি পান্ডুলিপি পাওয়া গেল। তা দেখেই বোঝা যায় তা...আত্মহত্যার আগে প্রায় দুই মাস ধরে দিনরাত পরিশ্রম করে সুনীল সাইফুল্লাহ তাঁর কবিতার সংশোধন করছিলেন; এটা তাঁর মৃত্যুর প্রস্তুতি- তখন আমরা বুঝতে পারিনি। মৃত্যুর পর তাঁর বালিশের নীচে একটি পান্ডুলিপি পাওয়া গেল। তা দেখেই বোঝা যায় তাঁর অন্তিম ইচ্ছা ছিল তাঁর বন্ধুবান্ধব ও শুভানুধ্যায়ীগন হয়তো তার কবিতাগুলো প্রকাশের ব্যবস্থা করবেন। তাঁর অন্তিম ইচ্ছা পূরণ করার জন্যই জাকসুর উদ্যোগে ‘‘দুঃখ ধরার ভরা-স্রোতে’’ বের হলো।

সম্পাদক হিসেবে লেখা নির্বাচনের ব্যাপারে আমাকে কিছুই করতে হয়নি- এ সংকলন কবি সুনীল সাইফুল্লাহরই স্বনির্বাচিত কবিতা সংকলন; আমি শুধু বই এর নির্দিষ্ট আকার রক্ষা করতে গিয়ে তাঁর চূড়ান্ত নির্বাচন থেকে চারটি কবিতা বাদ দিয়েছি। জাকসুর সাহিত্য সম্পাদক হয়েও যদি তাঁর কবিতা প্রকাশের ব্যবস্থা করতে না পারতাম তাহলে সারাজীবন স্বস্তি পেতাম না- তাই কিছুটা ঝুঁকি নিয়েই কাজে হাত দিয়েছিলাম। জাকসুর সভাপতি অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, সহ সভাপতি মোঃ মোতাহার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক এ. এফ এ. সামসুদ্দীন আমার কাজে যেভাবে সাহায্য করেছেন সেজন্য আমি তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ। কবি মোহাম্মদ রফিক এ গ্রন্থের ভূমিকা লিখে দিয়েছেন। সুনীল সাইফুল্লাহর প্রতি তাঁর অনুভূতির সাথে আমি পরিচিত; তাই তাঁকে ধন্যবাদ বা কৃতজ্ঞতা জানানো থেকে বিরত রইলাম।
‘দুঃখ ধরার ভরাস্রোতে’ মূলতঃ সুনীল সাইফুল্লাহর মৃত্যুর দুবছর আগ পর্যন্ত রচিত কবিতার স্বনির্বাচন- শেষের দিকে কয়েকটি পুরনো কবিতা তাঁর নিজেরই জুড়ে দেয়া। তাঁর আরো যে সব কবিতা আমাদের সংগ্রহে আছে তা দিয়ে আরো দু’টি বই বের করা যায়;- ভবিষ্যতের আগ্রহী প্রকাশকের জন্য জানিয়ে রাখলাম-; জানিনা সেগুলো কোনদিন আলোর মুখ দেখবে কিনা।

সুনীল সাইফুল্লাহর ১৯৭৪ সাল থেকে ১৯৮১ সালের মে মাসে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রচুর কবিতা রচনা করে গিয়েছেন। তাঁর কবিতার মান এবং সংখ্যা বিচার করে তাঁকে আশির দশকের অন্যতম প্রধান কবি বলতে আমার কোন দ্বিধা নেই। এই অল্প বয়সেই তিনি স্বতন্ত্র ও মৌলিক কন্ঠস্বর অর্জন করেছিলেন। তাঁর জীবন ও কবিতা অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে গিয়েছিল। কবিতায় এত ঋদ্ধ ও সত্য উচ্চারণ সত্যি বিরল ঘটনা। তাঁর কবিতা কোন নির্দিষ্ট ছন্দে লেখা নয়- অথচ শব্দ চয়ন, শব্দের গাঁথুনি ও গদ্যভঙ্গীর চলমানতা কোথাও ছন্দপতন ঘটতে দেয়নি। বাংলা কবিতায় এ তাঁর এক নতুন অবদান ।
কীটস, রেঁবোর মতো অমরতা হয়তো তাঁর ভাগ্যে নেই- অন্তত বাংলা কবিতার ইতিহাসে তাঁর নাম লেখা থাকবে এ আমার বিশ্বাস। আপাততঃ বাংলা সাহিত্যের অকাল প্রয়াত কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য, আবুল হাসান, হুমায়ুন কবির, খান মোহাম্মদ ফারাবীর নাম উচ্চারণ করতে সুনীল সাইফুল্লাহর নামও উচ্চারিত হোক- ‘দুঃখ ধরার ভরাস্রোতে’ প্রকাশ করার প্রধান উদ্দেশ্য তাই। ব্যর্থতা আর সার্থকতা নির্ণয়ের ভার ভবিষ্যতের হাতে ছেড়ে দিলাম।


জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
২৪.৬.৮২
শামসুল আলম
সাহিত্য সম্পাদক, জাকসু ১৯৮২
সাভার, ঢাকা।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।