রাতের গল্প------৩(খ)

ক্যামেলিয়া আলম এর ছবি
লিখেছেন ক্যামেলিয়া আলম (তারিখ: মঙ্গল, ১২/০৮/২০০৮ - ১২:২১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


দুইটা বেনসন কিনতে কিনতে কয়েকটা সুপারী মুখে দিয়ে চিবুতে থাকে আতিক। দিনের রোদ লেগে কিছুটা শান্ত হয়েছে মন ওর। আর আবারও একগাদা ক্লান্তি এসে ভর করেছে শরীরটাতে। রাতের ঘুম না হওয়াতে চোখের পাতাগুলো ফুলে আছে। কেমন যেন মাতাল লাগছে নিজেকে। সুপারীর কষটে ভাব মুখটাকে স্বাদহীন করে দেয়। এই সময়ই একটা সিগারেট ধরিয়ে আয়েশে ছাড়তে ছাড়তে হাঁটতে থাকে আতিক। আজ অফিসেও যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না। তবুও হাঁটতে থাকে। একটা সময় বাস স্টপেজে পৌছে যায়। নানা রকমের মানুষ এসে লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। দুইজন সরকারের গুষ্টি উদ্ধার করছে। কথা শুনে মনে হচ্ছে, বাস দেরীতে আসাকে সরকারের অপরাধের সাথে যুক্ত করে মনের ঝাল মিটাচ্ছে অফিসে দেরীতে পৌছাবার সম্ভাব্য দুর্ভাবনায়। হাসি পায় আজ আতিকের। সবাইকেই কেমন প্রাণখোলা মনে হচ্ছে। তিনটি কলেজ ছাত্রী একসাথে দাঁড়িয়ে অনবরত হেসেই যাচ্ছে। ভারী অবাক হয় আতিক মাঝে মাঝে, মেয়েরা হাসির এত খোরাক পায় কি করে? মেয়েগুলো কোন কথা ছাড়াই এভাবে প্রায় দশ মিনিট ধরে হাসছে। আশ্চর্যতো!

শান্তারা ছিল তিনবোন। কান্তা, শান্তা আর অজন্তা। শান্তার সাথে প্রেম করার তিনদিনের মাথাতেই ওর বাড়িতে বাকি দুইবোনের মাঝে হাজির করালো। আর আতিককে চরম বিব্রত করে তিনবোন একযোগে হাসতে লাগল। কোন কথা বা আড্ডার ধারেই এরা গেল না। এমনকি খাবার টেবিলে বসেও একই ভাবে হাসতে থাকলো। প্লেট আর মুখের দূরত্ব যে কত বড় সেদিন টের পেল আতিক। এরপর বিয়ে হবার আগে আর কোনদিনও আতিককে ওর বাড়ির ত্রিসীমানায় নিতে পারেনি শান্তা। বিয়ের পর শুনলো এরা সেদিন হাসি থামাতে না পেরে টেবিলের নীচে বসেও নাকি হেসে আবার চেয়ার ঠিকঠাক করে বসেছে। আতিকের অবস্থা তখন এত জড় পদার্থের মত যে সামনের সমস্ত পৃথিবীকে সেদিন বায়বীয় মনে হয়েছিল। কখন চেয়ারে বসেছে আর কখন টেবিলের নীচে বসেছে কিছুই ওর চোখে ধরা পড়েনি। আরও শুনল শান্তার বড় বোনের নিপাট ভদ্রলোক স্বামীটিরও নাকি প্রথম দিকে এমন নাকাল হতে হত। কারণ শান্তার মাও নাকি মেয়ে জামাইয়ের সামনে এসে পিট পিট করে হাসতো আর হাসি চেক করার চেষ্টা করত। সৌম শান্ত দুলাভাই বেশ বিরক্ত নিয়ে চুপিচুপি আতিককে জানাল।

একটা সময় বাস এল। ঠিক তখনই মন হাঁসফাস করতে লাগলো আরেকটা সিগারেট জ্বালাবার। কষ্টে সংবরন করে শরীরটাকে টেনে হিচড়ে বাসে তুলল। উঠেই ধমকের শব্দ শুনলো। সেই তিনমেয়ে এক লোককে সমান তালে ধমকে যাচ্ছে। হাসির লেশ মাত্রও নেই ওদের মুখে। ধমক খাবার ভয়ে ওদের দিকে তাঁকাতেও ভয় লাগলো আতিকের। বাসে সিট না পেলেও ভাল একটা জায়গায় দাঁড়াতে পারল সে। জানালা দিয়ে ফুরফুরে বাতাসটা এসে আবারও মন ভাল করে দিল। মাঝে মাঝে পৃথিবীটাকে বড় বেশি ভাল লাগে। অন্তত আজ তার মনে হচ্ছে।


মন্তব্য

অবাঞ্ছিত এর ছবি

আমি বেচারা আতিকের অসহায়ত্বের সাথে অন্তর থেকে সহানুভূতি ও সহমর্মিতা প্রকাশ করছি। ভীতিকর অভিজ্ঞতা! সব ছেলেরই মনে হয় কখনো না কখনো এমন দুঃসময় এর অভিজ্ঞতা হয়েছে । নারীরা বড়ই নির্মম অত্যাচারী।

I think , therefore i am - Descartes

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

মাহবুব লীলেন এর ছবি

মাথাটা পুরাটাই গেছে তোর
ঝকঝকে দিনের কাহিনী রাতের গল্পে ঢুকিয়ে দিয়েছিস
(পাগলা পানির পরিমাণ কি বেশি হয়ে গেছে আজ?)

০২

মেয়েরা হাসির এত খোরাক পায় কি করে?

ওগুলা হাসি না
হাসির নাম করে আশপাশে মুখের দুর্গন্ধ ছড়ানোর প্রকল্প

মুজিব মেহদী এর ছবি

হাসিটা মোটেই সমস্যা না, হাসা ভালো। আতঙ্কের বিষয় হলো হাসিটা তারা অনেককাল ধরে রাখতে পারে না। সমাজ ধরে রাখতে দেয় না।

সমাজ বদলাক, মেয়েদের মুখে হাসি টিকে থাকুক তাদের সবরকম বয়সে। প্রাণ উছলে পড়ুক সবদিকে।
................................................................
আমরা তা-ই করি, বন্দিরা যা করে
আমরা তা-ই করি, বেকারেরা যা করে :
আমরা ফলিয়ে যাই আশার আবাদ।
(মাহমুদ দারবীশ)

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

অম্লান অভি এর ছবি

পুন: মাহাবুব লীলন ( সম্বোধন তথৈবচঃ তবে আপনি বিবেচ্য)

মরণ রে তুহু মম শ্যাম সমান.....

মুশফিকা মুমু এর ছবি

হা হা হা মজার হাসি
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

সুমন চৌধুরী এর ছবি

আমারো ভাল্লাগলো...



অজ্ঞাতবাস

কীর্তিনাশা এর ছবি

আমিও জানিয়ে যাই ভালোলাগা।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

উদ্ধৃতি

মাঝে মাঝে পৃথিবীটাকে বড় বেশি ভাল লাগে।

____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

মজা লাগলো।
কিন্তু এটা পুরোটাই দিনের গল্প হয়ে গেলো না? হাসি

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।