রাতের গল্প---৩(ক)

ক্যামেলিয়া আলম এর ছবি
লিখেছেন ক্যামেলিয়া আলম (তারিখ: সোম, ১১/০৮/২০০৮ - ৪:৫৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


সময় গতির প্রতিটি ছন্দ, প্রতিটি স্পন্দন, প্রতিটি মোড় ঘুরে চলা আতিক আজ ঘড়ি বা আকাশ না দেখেও টের পাচ্ছিল। এত দীর্ঘÑ এত পেখম মেলে Ñ এত দুলকী চালেই প্রতিটি দিন যায়? ভাবতেই অবাক লাগল ওর। অথচ দিন কত দ্রুত রাত হতে পারে আর রাত কত দৌড়ে দিন তা তো অর্হনিশি টের পায় ও। আর আশ্চর্য আজকের সকালের সূর্য ওঠা দেখতে গিয়ে রীতিমত ঘাম ছুটে গেছে তার।
রাত্রি তাহলে এত বড়? আর বছরের পর বছর দেখে এসেছে চোখ বুজলেই দিন। শ্রান্ত ক্লান্ত দেহটাকে টেনে হিচড়ে তুলতে কতরকম কসরত যে করতে হয় তা যদি কেউ জানতো। আর আজ মধ্যরাত্রি থেকে মন অবশ আর শরীর ফুরফুরা। দমকা বাতাস গাঁয়ে লেগে কাপুনী জাগে, কি যেন গলায় ঢোক গিললে বাঁধে। সাথে সাথেই বোঝে আনন্দের কাটা। কাটাকে আর নড়তে চড়তে না দিয়ে চুপচাপ রাখে। আজ রাতের সত্য যদি মিথ্যে হয়ে যায়? সাথে সাথেই কেমন একটা ঠান্ডা হাওয়া পেট থেকে গুড়গুড় করে মাথায় উঠে যায়। মাথা ঝিমঝিম করে। তবু শান্ত নিস্পৃহ ভাব নিয়ে আতিক পায়চারী করে বেড়ায় ঘর থেকে চিলতে বারান্দায়Ñবারান্দা থেকে ঘর। একসময় শান্তা পাশ ফিরে শোয়। আতিক চট করে সাবধানী হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। হাঁটবে কি হাঁটবে না ভাবতেই শান্তার ঘুম জড়ানো গলা।
এত সকালে এভাবে হাঁটছো কেন?
আতিক থমকে দাঁড়ায়। শান্তার দুইচোখই বন্ধ।
আসো কাছেÑ মাথায় হাত বুলিয়ে দেইÑএকটু ঘুমিয়ে ওঠো
আতিক লজ্জিত, বিব্রত। কারণ আজ রাতের আনন্দ, উদ্দীপনাকে যেমন সে কারও সাথে ভাগাভাগি করতে চায়না তেমনই চায় না তার অতি আগ্রহী ভাব কারও কাছে প্রকাশ পাক।
কিগো, কি ভাবছ? বস¬ আমার পাশে। নাহয় আমার মাথাতেই একটু হাত রাখো।
আতিক এবার শব্দ করে বাথরুমের দরজার কাছে যায়। আর কিছু শুনতে চায় না। মাঝে মাঝে আতিক অতিষ্ট হয়ে ওঠে Ñ সত্যিই অতিষ্ট। মানুষের মন নিজের সবচেয়ে আড়ালের বস্তু। এই মনে কখনও যেমন সমাজ কথিত ভাল লুকানো তেমনই মন্দও লুকানো। এই ভাল মন্দের অংশীদারও একমাত্র নিজে। আর এই মেয়েটা চোখ বন্ধ করে একটা হাত স্পর্শ করেও বলে দিতে পারে আজ সিগারেট খেতে গিয়ে কোন আঙুলটিতে ধরা ছিল বেশি। মাঝে মাঝে আতিকের ভয় হয় শান্তাকে। সেই ভয়টা আরও হাসির যোগান দেয় শান্তার অদ্ভুত মায়াবী মুখটায়। বিরক্ত হয় আতিক। এতই সহজ একজন মানুষের মন বোঝা?
এবার চোখ খুলে শান্তা। বাথরুমের মুখ থেকে কুকড়ে যায় আতিক। ধপ করে বন্ধ হয় বাথরুমের দরজা। ম্লান এক হাসিতে ভরে যায় শান্তার মুখ।
এত ভালবেসেও কেন যে মানুষটার মন আমি পাই না? কে আছে ঐ মনে?
তন্ন তন্ন করে শান্তা ওর মগজ ছিড়েখুড়ে বের করার চেষ্টা করে। ক্লান্তিতে চোখের পাতা বন্ধ হয়েও তিরতির করে কাঁপতে থাকে চোখের মনির উপর পাতলা চামড়ার প্রলেপ।


মন্তব্য

কীর্তিনাশা এর ছবি

বাহ্! দারুন লাগলো ক্যামেলিয়া আপু।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

ক্যামেলিয়া আলম এর ছবি

আমি কৃতার্থ...........!
.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........

.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

ঈমানে কইতাছি আপু, সেরম হইছে। কয় তারা দিলাম কন তো?

ক্যামেলিয়া আলম এর ছবি

সেরম কি ভাইজান? নীচেরটা তালি দিবার ছবি দিতে চাইলাম তারার জন্য। এইটা কি আসল বুঝলাম না। নিছিলাম আড্ডাঘর থিকা।
=D<

.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........

.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

...............................এক কমেন্ট দুইবার হয়ে গেছিল। দুঃখিত।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

উপস্থাপনটা বেশ ভাল লাগলো। কী যেন বুঝিনি ভাবতে ভাবতেই টের পেলাম, আরে এটা তো সিরিজ। আর আগের গুলো সম্ভবত পড়া হয়নি। পড়ে নিই... তারপর আবার আসছি।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

ক্যামেলিয়া আলম এর ছবি

কোন একক কাহিনীর সিরিজ না। রাতগুলো একেকজনের কাছে একেক রকম। সেই অনুভূতিগুলোই---------।
.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........

.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

-------

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

স্বরূপে আবির্ভূত হয়েছেন, ভালো লাগল খুব হাসি

নিরিবিলি এর ছবি

অবলীলায় অনুভূতির অসাধারন প্রকাশ। অনেক ভাল লাগলো আপু। হাসি

মাহবুব লীলেন এর ছবি

যে যাকে ভালোবাসে সে ভালোবাসে অন্যকে আর যে যার জন্য কাঁদে সে কাঁদে অন্য কারো কথা ভেবে আর যে যাকে টানে তার টান থাকে অন্য কোথাও বাঁধা...

০২
তুই দেখি গৃহস্থ দার্শনিক হয়ে উঠলি

অবাঞ্ছিত এর ছবি

ব্যাটার একটু সমস্যা আছে মনে হয়। ... ইগো প্রবলেম। স্ত্রীর প্রতি তার আচরন (না অবহেলা?) প্রায় অভদ্রতার পর্যায়ে পড়ে।

চমত্কার লেখনী।

I think , therefore i am - Descartes

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

মুজিব মেহদী এর ছবি

মানুষের মন নিজের সবচেয়ে আড়ালের বস্তু।

কিন্তু প্রায়ই আড়াল আর আড়াল থাকে না। এখানে যেমন আতিকের আচরণে তার মনের আড়ালটা খানিক খসে পড়ল। ওখানে অন্য কেউ বসা, হয়ত।
................................................................
আমরা তা-ই করি, বন্দিরা যা করে
আমরা তা-ই করি, বেকারেরা যা করে :
আমরা ফলিয়ে যাই আশার আবাদ।
(মাহমুদ দারবীশ)

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

মানুষের মন যে আসলে কি অসম্ভব রকম বিচিত্র !
ভীষন ভীষন ভালো লাগলো আপনার এই রাতের গল্পটা।

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।