তিন কন্যা

দেবোত্তম দাশ এর ছবি
লিখেছেন দেবোত্তম দাশ (তারিখ: মঙ্গল, ২৮/০৪/২০০৯ - ৯:৩৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

auto

প্রথম দৃশ্য
------------------
ফুফাদের বাড়ীতে কোরবানীর মাংস দিতে গিয়ে আজ নিজে কোরবান হয়ে এসেছে আবিদা। সারা গায়ে নরখাদক হায়নাদের আঁচড়। ভয়ে কুঁকড়ে জবুথুবু হয়ে বসে আছে। ফুফার বাড়ী মাত্র পাঁচ মিনিটের পথ, তার মধ্যেই ঘটে গেছে অঘটন।

বছরের সবচেয়ে খুশীর দিন আজ, সারা বছর স্বপ্ন দেখে শুধু আজকের দিনটার জন্যই। আজকের দিনে বকা-ঝকা কিছুই খেতে হয় না। কাল রাত্তিরে আবিদা ঘুমাতেই পারে নি তবুও সেই ভোর বেলাই বিছানা ছেড়েছে।

অন্ধকারে কতক্ষন বসে আছে মনে নেই, আম্মার ডাকে সম্বিত ফিরে এলো। আম্মা আম্মা করে চীৎকার করতে চাইলেও গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোতে চাইলো না, নিজেকে টেনে তুলতে চেষ্টা করেও পারলো না, কোমরের নীচের দিকটা অসাড় হয়ে আছে। শেষ বারের মত আম্মাকে ডাকার চেষ্টা করেও ব্যার্থ হলো।

মেয়েকে কোলে নিয়ে আবিদার মা ভাবছে কম বয়সে মেয়েকে বিয়ে দেবেনা বলে আবিদার আব্বার সাথে ঝগড়া না করে মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিলে কি তাহলে ভালো হতো

“আবিদার আম্মা, এই খবর কুনোমতে বাইরান দেবার যাইব না, তুমি কাইলকাই আবিদার চাচার বাড়ী চইলা যাবা। ওইহানে কিছুদিন থাকলেই সব ঠিক হইয়া যাইবো” --- ফিসফিস করে বলা কথাগুলো আবিদার আব্বা করিম মিঞার ফ্যাকাশে মুখে কিরকম জানি ভুতুড়ে শোনায়।

************************

দ্বিতীয় দৃশ্য
------------------

রুচিরা সাহা, ক্লাস নাইনে পড়ে, এবার পরীক্ষা দিলেই মাধ্যমিক, তার পর কলেজ। সামান্য কেরানীর চাকরী করা সুবিমল সাহার গর্ব একটাই, মেয়ে পড়াশোনায় একেবারে গুল্লি। ব্যাংকে টাকা পয়সা না থাকলে কি হবে বাপ-মায়ের একমাত্র মেয়েই হচ্ছে ব্যাংক। ইনভেষ্টমেণ্ট চলছে, সুখ-দুঃখ আশা ভরসা সবই তাদের রুচিরাকে ঘিরে।

আজ বিজয়া দশমী। রুচিরা তার সবথেকে কাছের বান্ধবী তুলির বাড়ী এসেছে। বিরাট বড়লোক ওদের বাড়ীতে প্রতিবছর পূজো হয়, তুলির বাবা নামকরা ব্যাবসায়ী, পাঁচতলা বাড়ীতে কত যে ঘর দোর, কত যে চাকর বাকর তার ইয়ত্তা নেই।

তিনতলার ঘুপচি ঘরে রুচিরাকে আজ ছিঁড়েখুঁড়ে খেয়েছে কতগুলো নেকড়ে। অসহায় রুচিরার ব্যার্থ হাহাকার কারো কানে পৌঁছায় নি। দানবেরা চেপে ধরেছিল তার মুখ। বিস্ফোরিত চোখে রুচিরা দেখতে পেয়েছিল সেই দানব তাকে পিষে মারছে যাকে সে ভালোবাসতো, এই সেই তুলির দাদা যার নাকি তুলনা হয় না।

রুচিরার জ্ঞান ফিরলো নার্সিং হোমে। মেয়ের উপর অত্যাচারের এই আর্জি নিয়ে সুবিমল বাবু গেছিলেন তুলির বাবার কাছে। কান দেননি, নিজের ছেলে এরকম করতেই পারে না বলে তার বিশ্বাস। স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ীও এফ আই আর লিখতে অস্বীকার করল।

হাল ছাড়ে না সুবিমল, প্রয়োজনে উপরতলার দরজায় কড়া নাড়বে, বিচার কি পাবে সুবিমলের মেয়ে?

নার্সিং হোমে রুচিরার মায়ের মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে, “হিমালয়ের মেয়ে পার্বতীর সাথে কেন যে আজ নিজের মেয়েটাকেও বিসর্জন দিতে হলো”

************************

তৃতীয় দৃশ্য
------------------

লিলি ও'ব্রায়েন আরো পাঁচ দশটা মেয়ের মতই হাসিখুশী। ক্রিসমাসের ছুটিতে হোষ্টেল থেকে বাড়ীতে এসেছে। হোষ্টেলে থাকার জন্য মা বাবার আদরও এবার একটু বেশী পাচ্ছে। ভাই টম বয়েসে অনেক ছোট হলেও পড়াশোনায় বেশ ভালো হচ্ছে।

ডিসেম্বরের ঠাণ্ডা পড়েও অসম্ভব, তাও ভালো এবার বরফ পড়ে নি। কিন্তু দিনের আলো যে তাড়াতাড়ি মিলিয়ে যায়। লিলিদের বাড়ীর আশে-পাশে প্রচুর ফাঁকা জায়গা হলেও চারিদিক ভীষন সুন্দর। আজকে ক্রিসমাস, তাই আজকের দিনটাও এতো ভালো লাগছে

লিলির মা আজ বাড়ীতে কেক বানাচ্ছেন। ছুটির দিন সবাই বেশ তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছে। লিলির বাবা মাইকেল লিলির মাকে একটু রেড ওয়াইন ঢেলে দিল। লিলি জানে আর বছর চারেক পরে সেও সবার সাথে বসে ওয়াইন পাবে।

ছোট্ট কর্ণার সপ(দোকান) থেকে বাড়ী ফেরার পথে, রাস্তার পাশের ঝোপ থেকে হটাৎ কয়েকটা বন-বেড়াল টেনে নিল লিলিকে, আঁচড়ে ফালা-ফালা করে ফেলল লিলির অপুষ্ট বুক। জ্ঞান ফিরলে অনেক কষ্টে নিজেকে টেনে হিঁচড়ে বাড়ী নিয়ে এলো।

বাড়ীতে অনেক আত্মীয় স্বজন এসেছে, কত আনন্দেরই না দিন আজ, বাবা মা ভাই সবাই কতই না আনন্দ করছে, নাঃ লিলি সবার আনন্দ মাটি করে দিতে চায় না। বাথরুমে লিলির শরীর থেকে বয়ে যাওয়া লাল জল আর কান্নার জল মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছিল।

পরদিন লিলি বাবা মাইকেল আর মা সারা কে সবকিছু খুলে বললে স্থানীয় পুলিশকে জানানো হলে তিন দিনের মধ্যে সব গুলো বনবেড়াল সোজা খাঁচায়


মন্তব্য

সাইফ এর ছবি

দাদা লিখলেন কি কলম দিয়া না ব্লেড দিয়া, আমার ও ভেতরটা একদম ছিড়ে খুড়ে গেল। "truth is stranger than fiction" বাংলায় লিখলে ধার টা থাকে না।

রণদীপম বসু এর ছবি

কোন মন্তব্য নেই দাদা !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

"অচল আনি" এর ছবি

... ... ... ... ... ... ... ... ... ...

রেনেট এর ছবি

লক্ষ্যভেদী আপনার লেখা! চলুক
---------------------------------------------------------------------------
No one can save me
The damage is done

---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

আমাদের এখানে বনবেড়ালরা হাতির পিঠে চড়ে ঘুরে বেড়ায়।
বহুদিন স্বপ্ন দেখি, বাংলাদেশের সকালের নাস্তায় পরোটা ডালভাজির পাশাপাশি বনবিড়ালের নেহারি পাওয়া যাবে...
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়...

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখা ঠিক আছে কিন্তু এর কভার কোনটা বুঝতে পারলামনা...
তিনটা ঘটনা বর্ণনা করেছেন...ঘটনায় মিল আছে..
কিন্তু এটা কি শুধুই তিনটি দৃশ্য......??
এর কি কোন নিজস্ব আলাদা বক্তব্য নেই...?
থাকলে সেটা কি...??

(জয়িতা)

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।