কৃত্রিম জীবনের পথে: জীবনের অর্থ

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি
লিখেছেন ধ্রুব বর্ণন (তারিখ: মঙ্গল, ২৬/০১/২০১০ - ১২:৩০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তার গবেষণায় এখন যত বিষয় আলোচনা হয়, তার সবগুলোর লক্ষ্যই কিন্তু জীবন-যাপনকারী রোবট তৈরী নয়। অনেক শাখা-প্রশাখা হয়ে গেছে। কয়েকদফা এই গবেষণায় ভাটা এসেছে। তবে এখনো অনেক গবেষণা সরাসরি জীবন-যাপনকারী রোবটকে উদ্দেশ্য করে নিবেদিত। এর সাথে বুদ্ধিমত্তার সম্পর্ক ওতপ্রোত বলে অনেকে মনে করেন। তাই গবেষণার নাম কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তা (কৃবু)।

তবে গবেষণাটি যে বিষয়গুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করে, সেগুলোর সংজ্ঞা অস্পস্ট। বুদ্ধিমত্তা কি? জীবনই বা কি? আর এদের সম্পর্ক কোথায়?

এই গবেষণার প্রাথমিক আগ্রহ ছিল মানুষের ক্ষমতা-সম্পন্ন যন্ত্র। মানুষের আদলে পুতুল বা যান্ত্রিক শরীর হয়ত তৈরী করা যায়, কিন্তু কিভাবে একটি যন্ত্র কথোপকথন চালাবে? গাড়ি চালাবে? বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করবে?

যে বিষয়ে তেমন আগ্রহ কখনো ছিল না, তা হলো, কিভাবে পিঁপড়া কিংবা বানরের ক্ষমতা-সম্পন্ন যন্ত্র তৈরী করা যায়। কারণ ও-দিয়ে আমাদের কাজ চলবে না। মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর কর্মকাণ্ডের যে পার্থক্যগুলো, বুদ্ধিমত্তার সংজ্ঞা সাধারণত স্থান পায় ওই জায়গাগুলোতে। তাই মানুষের কর্মকাণ্ড যন্ত্রকে দিয়ে করানোর গবেষণার নাম হয় কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তা।

বুদ্ধিমত্তা কি?
তা বুদ্ধিমত্তা কি কেবল মানুষেরই আছে, অন্যান্য প্রাণীগুলোর নেই? নাকি যেগুলো অন্যান্য প্রাণীর নেই, মানুষের আছে, সেগুলোকেই আমরা বুদ্ধিমত্তা বলতে চাই? একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য হলো ভাষা। মানুষ তার যোগাযোগের জন্য যে উপায় ব্যবহার করে, তা বেশ বিস্তৃত ও শক্তিশালী। তবে অন্যান্য প্রাণীও নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে। তাদের যোগাযোগের সেই মাধ্যম আর আমাদের মাধ্যমের মধ্যে যে পার্থক্য, তা কি বুদ্ধিমত্তা থাকা আর না থাকার পার্থক্য? নাকি এটা একটা অবিচ্ছিন্ন ধারাবাহিকতা, মানুষ তার উৎকৃষ্টতর উদাহরণ? যদি অন্যান্য প্রাণী আর মানুষের মাঝে এই ক্ষমতায় থাকে ধারাবাহিকতা, পার্থক্য যদি কেবল হয় ক্ষমতার কম-বেশিতে, আর মানুষের ভাষা ব্যবহারের ক্ষমতাকে যদি বলা হয় বুদ্ধিমত্তার উদাহরণ, তবে বলা যায় সেটা অন্য প্রাণীর মাঝেও কম মাত্রায় হলেও বিদ্যমান।

আর কিসে পার্থক্য? মানুষ শিখতে পারে, পারে সমস্যা সমাধান করতে। অন্য প্রাণীরা কি পারে না? বনোবো-কানজির উপর চালানো গবেষণায় দেখা গেছে ছোটবেলা থেকে সে পরোক্ষভাবে (সরাসরি প্রশিক্ষণ দ্বারা নয়) শিখে শিখে ভাষার অনেক উপাদান রপ্ত করতে পেরেছে। বেশ কিছু প্রাণী তাদের প্রয়োজনে হাতিয়ার প্রস্তুত করতে ও তা ব্যবহার করতে পারে। মানুষের সমস্যা সমাধানের ক্ষমতার সাথে এর পার্থক্য কোথায়, কম-বেশির পার্থক্য ছাড়া?

কোন উপাদানটি বুদ্ধিমত্তা? আমাদের চেতনা? যা আমরা মনে করি অন্য প্রাণীদের নেই? আরেকটি সুনির্দিষ্ট-সংজ্ঞাহীন শব্দ। এটা বলতে সম্ভবত আমরা বোঝাই, যা আমাদের নিজেদের অস্তিত্ব সম্পর্কে সচেতনতা দেয়। আর আমরা ভাবছি মানুষ ছাড়া অন্য প্রাণীর এই ক্ষমতা নেই? মিরর টেস্ট বলে আত্ম-সচেতনতা-সূচক একটি পরীক্ষা আছে, এবং বিভিন্ন গবেষণায় মানুষের পাশাপাশি অন্যান্য প্রাণী যেমন-বনোবো, শিম্পান্জি, ডলফিন, হাতি, ম্যাগপাই, শূকর, এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে।

আমি অবশ্যই বলতে চাচ্ছি, বুদ্ধিমত্তা, যে শব্দটি কোনো সুসংজ্ঞা ব্যতিরেকেই আমরা কেবল মানুষের উপর আরোপ করতে চাই, তা প্রতিটি প্রাণীর মধ্যে কম-বেশি দাবী করা যাবে। আর যদি সংজ্ঞার তর্কে যাওয়া যায়, তবে খুব সম্ভাবনা আছে বুদ্ধিমত্তা বলতে সুনির্দিষ্ট কিছু বোঝানো যাবে না। কাছাকাছি এরকম একটা ব্যাপার ঘটেছে কৃবু গবেষণায়, যাকে বলে এ.আই. ইফেক্ট (কৃবু প্রভাব)। ব্যাপারটা এরকম, যখনই গবেষকরা বুদ্ধিমত্তার বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন একটি প্রোগ্রাম তৈরী করে, বুদ্ধিমত্তার ওই বৈশিষ্ট্যটি তখন তার জাদুকরী মহিমা হারায়, আর আমরা বলি, এতো কেবল গণনার কারসাজি, আসল বুদ্ধিমত্তা নয়।

তা এই নড়বড়ে সংজ্ঞাহীন ধারণাটির পেছনে ছোটার চেয়ে বেশি প্রয়োজন হলো, যে বিষয়গুলো আমরা বুঝি, সেগুলোর সাপেক্ষে আলোচনা করা। বুদ্ধিমত্তা কি আমরা জানি না, বুঝি না, তবে আমরা জানি আমরা যন্ত্রকে মানুষের মত ক্ষমতা-সম্পন্ন দেখতে চাই। আর বাস্তবতা হলো, এই লক্ষ্যে যন্ত্রের যে অগ্রগতি, তাতে আমরা বেজায় হতাশ। রোবট এখনো একঘেয়ে; মানুষ শেখে, রোবট শেখে না।

শেখা বা জ্ঞানার্জন
আমাদের ভাষা, জ্ঞান, সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা, চুল আচড়াতে পারা, রান্না করতে পারা, কোনটাই কিন্তু আমরা জন্ম থেকে জেনে আসিনি, আমরা শিখেছি। এটা এখনো আমাদের রোবটগুলো পারে না। তাদের ক্ষমতা হলো প্রদত্ত, এবং এর বাইরে নতুন বিষয়ে জ্ঞানার্জন এরা করতে পারে না। প্রতিনিয়ত নিত্য-নতুন পরিবেশের সম্মুখীন হওয়া আর তার সাথে খাপ-খাইয়ে নেয়া, অর্থাৎ জীবনযাপনে রোবট অক্ষম। আমরা যদি একটি রোবট বানাই, যা খুব ভালো দাবা খেলবে, তো সে তাতেই সেরা, অন্য কিছু সে শিখতে পারে না। ক্ষমতা বর্ধনের জন্য তার স্রষ্টা প্রোগ্রামারের পুনঃনক্সার প্রয়োজন পড়ে।

সমস্যার সমাধান, কিভাবে মানুষ নানা সমস্যার সমাধান করে? মানুষের সামনে প্রতিনিয়ত নতুন সমস্যা আসে। মানুষ তার সমাধানের চেষ্টা করতে পারে। একটি আগে থেকে শিখিয়ে দেয়া রোবট তা পারে না। কারণ আমরা তো জানি না যে রোবটটি কত-প্রকারের নিত্যনতুন সমস্যায় পড়তে পারে। আমরা কি করে আগে থেকে শিখিয়ে দিব যা আমরা জানি না? যেমন রোবটকে মঙ্গলগ্রহে পাঠাব, বা সমুদ্রতলে। ওখানে নিত্যনতুন পরিবর্তিত পরিবেশে কি করতে হবে তা আগে থেকে বলে দেয়া সম্ভব না। বা খুব সাধারণভাবে, বৃদ্ধ-মানুষের দেখাশোনা করা রোবট। সেই রোবট যদি নিজে থেকে না শিখতে পারে তার কর্মক্ষেত্রের বিভিন্ন পরিবর্তিত পরিস্থিতি, খুব দ্রুতই সে রোবট হয়ে যাবে অকাজের।

মানুষ যে ধরনের সমস্যা সমাধান করতে পারে, যেমন কথোপথন চালানো, আমরা সেগুলোতেই কেবল আগ্রহী হলেও, এই ক্ষমতার উপসেট কিন্তু অত্যন্ত 'নিম্ন'প্রজাতির প্রাণীর মধ্যে বিদ্যমান। যেমন, খুবই সাধারণ একটি কাজ - পর মুহূর্তে কি হবে সে ধারণা করা। সকল প্রাণী প্রতি-নিয়ত তার ইন্দ্রিয় দিয়ে পরিস্থিতি অনুভব করছে এবং পর-মুহূর্তে কি করতে হবে সেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। আমাদের কৃবু-সংক্রান্ত লক্ষ্যগুলোর মধ্যে সবসময় ওই ক্ষমতা সেভাবে পড়ে না। আমরা সরাসরি কথোপকথনকারী প্রোগ্রাম চাই, বা এমন প্রোগ্রাম যা যেকোনো পরিস্থিতিতে গাড়ি কিংবা প্লেন চালিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। কিন্তু, এই উপলব্ধি প্রয়োজন যে, অন্তর্বর্তী-ক্ষমতাগুলো অর্জন, আমাদের মূল লক্ষ্য - মানুষের ক্ষমতা অর্জনের পথে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এটা একটি বৈধ প্রস্তাব। কৃবু এর অনেক গবেষণা প্রস্তাবিত এই ধ্যান-ধারণা পোষণ করে না।

জীবন কি?
কোন বিষয়টি একটি পাথরের সাথে একটি বিড়ালকে পার্থক্য করে। এই দার্শনিক প্রশ্নের উত্তর আমরা জানি না। পদার্থবিজ্ঞানীরা বলবেন, যা এনট্রপি হ্রাস করে। জীববিজ্ঞানীরা বলবেন, জীবন হচ্ছে যা কতগুলো বিশেষ জৈবিক প্রক্রিয়া যেমন বিপাক, বিস্তার, বিবর্তন, ইত্যাদি বহন করে। সমস্যা হচ্ছে, একটি রোবট যদি একটি মানুষের মতই জীবন যাপন করে যায় জৈবিক বিপাক, বিস্তার বা বর্ধন ছাড়াই, সে কি জীবন নয়?

আমরা যাদের জীবন বলি, তার সাথে জড়ের পার্থক্য হলো তাদের সম্পর্কে আমাদের পর্যবেক্ষণগত বৈশিষ্ট্যে। এনট্রপি-আচরণ তাদের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। কিন্তু আমি যদি এমন কিছু তৈরী করি, যা ঋণাত্মক-এনট্রপি গ্রহণ করে, তাতেই আমার জীবন তৈরির সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? আমার কম্পিউটার কি জীবন? ঋণাত্মক-এনট্রপি গ্রাহক, ঠিক কোন অস্তিত্ব বা সত্তাটিকে জীবন বলা যাবে আর কোনটিকে যাবে না? যে সমাজ এনট্রপি কমাচ্ছে, সে সমাজেরও কি জীবন আছে?

জীবন হলো বিশেষ কিছু অস্তিত্বের কিছু বৈশিষ্ট্য যা আমরা পর্যবেক্ষণ করি; এর বৈশিষ্ট্যগুলো অন্য অস্তিত্বের তুলনায় এতটা ভিন্ন যে আমরা একে আলাদা করি। তার মানে কিন্তু এই নয় যে আমরা ব্যাপারটা ভালো বুঝি। আমরা পর্যবেক্ষণে যে পার্থক্যগুলো দেখতে পাই, তার নিরিখে সেই অস্তিত্বকে সংজ্ঞায়িত করি। কিন্তু ব্যতিক্রম আমরা আশা করতে পারি, এবং তখন তার সংজ্ঞা বদলে যাবে। কিন্তু এর বেশি আমরা কিইবা করতে পারি? আমরাতো আমাদের পর্যবেক্ষণকে উতরে যেতে পারি না। আমরা সেটুকুই বুঝব, যেটুকু আমরা পর্যবেক্ষণ করতে পারব।

তথাপি, আমাদের পূর্বলক্ষ্য ছিল মানুষের ক্ষমতাসম্পন্ন রোবট। সেই লক্ষ্য পূরণে আমরা বোঝার চেষ্টা করছি, ঠিক কি করলে আমরা একটি অস্তিত্বকে জীবন বলব, আর তা পাবার জন্য ঠিক কি বৈশিষ্ট্য অর্জন করা প্রয়োজন।

আমরা যাদের জীবন বলি, তাদের মধ্যে কোন ব্যাপারটি সাধারণ এবং আমাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য এনট্রপিগত বৈশিষ্ট্যটির চেয়ে বেশি সাহায্যপূর্ণ হবে?

আমার প্রস্তাব, আমরা যাদের জীবন বলি, তাদের সকলকে গাণিতিক-বিমূর্তে বলা যায় একটি ফাংশন, যার ইন্দ্রিয়লব্ধ ইনপুট আছে, কম-বেশি ইনপুটনির্ভর পূর্বানুমান করার ক্ষমতা আছে এবং সেই ক্ষমতার ভিত্তিতে আউটপুট প্রদান বা ক্রিয়া সঞ্চালনের ক্ষমতা আছে। প্রাণীর ইনপুট আর আউটপুট আছে কিনা, এ নিয়ে সংশয়ের অবকাশ নেই, তবে প্রাণী যে সর্বদা পূর্বানুমানের চেষ্টা করে, এটা অনুমিত। উচ্চতর প্রাণীর মস্তিষ্কের ফাংশন থেকে এমন ধারণা পাওয়া গেছে নিউরোবিজ্ঞানের গবেষণায়। পাওয়া গেছে "প্রাণী-আচরণ বিজ্ঞান" এর গবেষণায়।

অর্থাৎ সকল প্রাণী কম-বেশি একটি তথ্য-প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট। আমরা ইন্দ্রিয় থেকে ইনপুট নেই, সেই ইনপুট এবং আগের ইনপুটের উপর ভিত্তি করে পূর্বানুমান করি কোন ক্রিয়া-সঞ্চালন বা আউটপুটের ফলশ্রুতি কি হবে। তার ভিত্তিতে আমরা বাছাই করি সেই ক্রিয়াটি যার ফলশ্রুতি আমাদের সবচেয়ে অনুকূল। আমাদের প্রতিটি ক্রিয়ার পেছনে এই প্রক্রিয়া কাজ করে। তার মানে কি আমরা সর্বদা পূর্বানুমান করার চেষ্টা করছি? হ্যাঁ। সজ্ঞানে করছি? তা নয়। অধিকাংশ পূর্বানুমান আমরা আমাদের সচেতনতার আড়ালে করছি। একটি স্টকের-দাম পূর্বানুমানকারী প্রোগ্রাম যেভাবে কোনো সচতনতার প্রয়োজন ছাড়াই পূর্বানুমান করতে পারে, তেমনি আমাদের শরীরের বিভিন্ন ইউনিট বিভিন্ন পরিসরে পূর্বানুমান গণনা করছে। একটি ইঁদুর যখন তার গর্তের দিকে দৌঁড়াতে থাকে, তখন তার ইউনিটগুলো পূর্বানুমান দিতে থাকে যে তার চোখ দিয়ে যেসব ইনপুট আসছে, তাদের মাঝে কোন অংশটি গর্ত। পূর্বানুমান করে, সেই গর্তে ঢুকে যেতে পারলে যে সে বিড়ালটি থেকে নিরাপদ থাকবে এবং পূর্বানুমান করে, তার পেশীগুলোতে কি ধরনের সংকেত পাঠালে ওই গর্তে সে পৌঁছাতে পারবে।

চেতনা
এই পূর্বানুমান করার জন্য সজ্ঞান-সচেতনতার উপস্থিতি আবশ্যক না। তবে মানুষের ধারণা মানুষ ও অন্যান্য উচ্চতর প্রাণীর মাঝে তেমন কিছু একটা বিদ্যমান আছে। এটা এমন একটা অবস্থা যেখানে সত্তা আত্ম-সচেতন অবস্থায় চিন্তা করতে পারে। এই ক্ষমতার বিবর্তনগত উপযোগিতা আছে, এবং তা নিতান্তই উচ্চতর পূর্বানুমানের নিমিত্তে। এর সাহায্যে আমরা মনে মনে যেসব চিন্তা করতে পারি, তার সাহায্যে আমরা আসলে পূর্বানুমানই করি। যেমন, আগামীকাল আমার একটি বক্তৃতা আছে, বক্তৃতায় আমি অমুক কথাগুলো বলব, বললে এই প্রশ্নগুলো করা হতে পারে, আর তার জন্য আমি এখন উত্তর প্রস্তুত করে রাখব। আমরা সজ্ঞানে এধরনের চিন্তা করে থাকি। ফলে সজ্ঞানে আমরা যেসব চিন্তা করি, সেগুলো দিয়ে আমরা ভবিষ্যতের জটিল ঘটনার অনুমান করতে পারি, এবং তার জন্য উপযুক্ত ক্রিয়াগুলো বিবেচনা করে রাখতে পারি। ফলে আমাদের পরবর্তী ক্রিয়াগুলো প্রভাবিত হয় এই চিন্তা-ভাবনাগুলো দ্বারা। অপরদিকে এই চিন্তা বাদে আমরা যদি আমাদের কর্মকাণ্ডে এগিয়ে যাই, তাহলে অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়। পূর্বানুমান এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাকে সীমিত করার চেষ্টা করে।

সজ্ঞান চিন্তার এই ক্ষমতাকে বলা যায় সিমুলেশন। কল্পনায় আমরা ভেবে নিতে পারি বিস্তৃত ভবিষ্যত। উচ্চতর প্রাণী এই ক্ষমতা ব্যবহার করে অনেক শক্তিশালী পূর্বানুমান তৈরী করতে পারে, তা পথের একটি পাথরকে এড়িয়ে হাঁটা অথবা গর্তে লুকানোর চেয়েও বিস্তৃত ও জটিল ক্রিয়ার সমন্নয়।

পূর্বানুমান
ফলে সকল জীব পূর্বানুমান করছে, তবে সে ক্ষমতা তার গণনা-সরঞ্জাম দ্বারা সীমাবদ্ধ। অনেক প্রাণী খুবই সীমিত পরিসরে সেই পূর্বানুমান করছে। অনেকক্ষেত্রে ঠিক কতটুকু অনুমান করতে পারবে তার পরিসর কেবল তার জিনের পূর্ব-নকশা দ্বারা সীমাবদ্ধ, জীবদ্দশায় খুব সামান্যই প্রদত্ত ক্ষমতার শ্রীবৃদ্ধি করতে পারে সে। ফলে কিছু প্রাণী নিজের খাবার জোগাড় করতে পারে, পালাতে পারে, কিন্তু ফাঁদ সনাক্ত করতে পারে না। আবার কিছু প্রাণী তার জীবদ্দশায় ব্যাপক আকারে নতুন জ্ঞান আহরণ করতে পারে। জ্ঞানের সংজ্ঞা হলো পূর্বানুমানের ক্ষমতা। অর্থাৎ, অনেক প্রাণী নিত্য-নতুন বিষয়ের উপর পূর্বানুমানের ক্ষমতা অর্জন করতে পারে। ফলে একবার ফাঁদে পড়ে, দ্বিতীয়বার পড়ে, কিন্তু তৃতীয়বার সনাক্ত করে ফেলে, ফাঁদে পা দেবার আগেই পূর্বানুমান করতে পারে - এটি ফাঁদ, এবং এড়িয়ে যায়। তার জিনের পূর্ব-নকশায় এ সংক্রান্ত কোনো সহজাত ক্ষমতা না দেয়া থাকলেও।

ফিরে আসি পূর্বলক্ষ্যে। এমন রোবট যা মানুষের ক্ষমতা সম্পন্ন। এর মাঝের ধাপ হলো সকল প্রাণীর সাধারণ বিষয়টি অনুকরণ। অর্থাৎ তথ্য-প্রক্রিয়া করতে পারবে সে। তার ইন্দ্রিয় থাকবে, যেমন আলো-গ্রাহক , শব্দ-গ্রাহক, স্পর্শ/ঘাত-পরিমাপক। এসব তথ্য থেকে রোবটের প্রোগ্রামিং ইউনিট প্রক্রিয়া করে বের করবে ঠিক কোন ক্রিয়া-সঞ্চালন, যেমন বিশেষ কোনো মোটরে কি পরিমাণ ভোল্টেজ প্রদান হবে তার জন্যে আকাঙ্ক্ষিত। যেমন সামনে দেখতে পাচ্ছে একটি বল, এবং সেই বলকে আঘাত করা তার জন্যে আকাঙ্ক্ষিত। এর জন্যে প্রোগ্রামকে গণনা করতে পারতে হবে, কোন ক্রিয়া-ধারার ফলাফলে বলটিকে আঘাত করার ঘটনাটি ঘটবে। অর্থাৎ তার বিভিন্ন ক্রিয়ার উপর শর্তাধীন অনুমান করার ক্ষমতা তার থাকতে হবে। তবেই সে বাছাই করতে পারবে, কোন ক্রিয়ায় তার কাজ হবে, আর কোনটিতে তার হবে না।

যে যান্ত্রিক ফাংশন প্রতিনিয়ত এই কাজ করে যাচ্ছে, তার সাথে অন্যান্য জীবের পার্থক্য করার বিশেষ কোনো ভিত্তি নেই। জীবকুলের মাঝে অতিরিক্ত কোনো "জীবনীশক্তি" নেই, যা তাকে ওই ফাংশন থেকে আলাদা করে। ওগুলোও গণনাকারী ইউনিট। তাদের শারীরিক উপাদান ভিন্ন, কিন্তু গাণিতিক বিমূর্তে তারা একই কর্ম সাধন করছে।

যাচাইযোগ্য জ্ঞান
তখন, পরবর্তী ধাপ হবে মানুষের পর্যায়ে উত্তরণ। যার মাঝে আছে সচেতনতা বা সিমুলেশনের শক্তিশালী ক্ষমতা। নিত্য-নতুন জ্ঞান আহরণের ক্ষমতা, বিস্তৃত ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তার ক্ষমতা। তার সকলই পূর্বানুমান, তবে উচ্চতর ধারণা সংক্রান্ত। ফলে প্রোগ্রামকে জানতে হবে জ্ঞানকে কিভাবে রক্ষনাবেক্ষণ করতে হয়। এখানে যাচাইযোগ্যতার তত্ত্ব সাহায্য করতে পারে, যা বলে - একটি প্রোগ্রাম ততটুকু জ্ঞানকেই ধারণ করতে পারবে, যতটুকু সে নিজে থেকে যাচাই করতে পারবে। অর্থাৎ, আমি প্রোগ্রাম করে আমার রোবটকে শিখিয়ে দিলাম এটাকে বলে চেয়ার, ওটাকে বলে টেবিল, আর ঠিক অমুক ধরনের পরিস্থিতি হলো যাকে আমরা বলি "উভয়-সংকট"। এখন প্রোগ্রামটি যদি বারংবার এই ধরনের ধারণাগুলোকে সঠিকভাবে পূর্বানুমান করে যাচাই করতে না পারে, যেমন বিভিন্ন চেয়ার বা টেবিল তার সামনে দিয়ে তাকে বলতে বলা হলো এটা কি, বা এমন একটা পরিস্থিতি যাকে আমরা বলি "উভয়-সংকট", তা উপস্থাপন করে তার সম্পর্কে অনুমান করতে বলা হলো, কিন্তু প্রোগ্রাম যদি তা করতে না পারে, তবে এই ধারণাগুলো ধারণ করতে ওই প্রোগ্রাম পারবে না। অর্থাৎ, কোনো ধারণাকে কেবল শিখিয়ে দিলেই হবে না। রোবটের সেই ধারণাকে বারংবার যাচাইয়ের ক্ষমতা থাকতে হবে। ঠিক একজন বিজ্ঞানীকে যা করতে হয়। এবং এই ব্যাপারটি আমাদের ক্ষেত্রেও সত্য। ফলে, আমরা কাউকে কোনো ধারণা সম্পর্কে ততক্ষণ পর্যন্ত বোঝাতে পারি না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে নিজে একই ধরনের বিষয় নিজে নিজে যাচাই করতে পারে।

পর্যবেক্ষণ-সীমাবদ্ধ জ্ঞান
এখন কিভাবে আমার প্রোগ্রাম বিভিন্ন উচ্চতর ধারণা তৈরী ও ধারণ করতে পারবে যাচাইযোগ্যভাবে? তার কাছে সম্বল কেবল তার পর্যবেক্ষণ বা ইনপুট। আমি তাকে যাই শিখিয়ে দেই, তার নিজের ইনপুট ও পূর্বানুমানের সরঞ্জামের যদি ক্ষমতা না থাকে সেই ধারণাকে যাচাই করার, তাহলে সেই ধারণা সে ধারণ করতে পারবে না। যেমন আমি তাকে বোঝালাম সবুজ আপেল কি জিনিস, অথচ সে সবুজ আলো দেখতে পায় না ও অন্য কোনো উপায় নেই তার, এ সম্পর্কে ধারণা করার, তাহলে এই সবুজ আপেলের জ্ঞান তার কাছে অর্থহীন। ফলে, প্রোগ্রামটিকে নিজে শিখতে হবে। যাচাই করতে হবে তার প্রদত্ত ইনপুট এবং পূর্বানুমানক্ষম ইউনিটের ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে। অর্থাৎ রোবটের সকল যাচাইযোগ্য জ্ঞানের ভিত্তি হবে তার ইনপুট, তার ইন্দ্রিয়লব্ধ অভিজ্ঞতা। অতটুকুই কেবল সে যাচাইযোগ্য পর্যায়ে বুঝবে।

জ্ঞানের বিমূর্ত স্তরীভবন
ফলে, জ্ঞানের বিভিন্ন স্তর তৈরী করতে হবে প্রোগ্রামটিকে, যার সবচেয়ে নিচু স্তরে থাকবে তার ইন্দ্রিয় সংক্রান্ত জ্ঞান, যেমন তার আলো-গ্রাহক ইউনিটে আপতিত আলো কি লাল না নীল? এই মুহূর্তে তার পরিপার্শ্বের তাপমাত্রা কি একটু আগের চেয়ে বাড়ল না কমল? কিছু কি তাকে স্পর্শ করলো? এর পরের স্তরের জ্ঞান হতে পারে ওই ইন্দ্রিয়-সংক্রান্ত আরেকটু কয়েক ধাপ আগানো পূর্বানুমান। যেমন, রোবটটি নিজে নিজে পূর্বানুমান করবে - "আমার মোটরে আমি যত ভোল্টেজ দিচ্ছি, একই ভোল্টেজ ক্রমাগত দিতে থাকলে কতক্ষণ পর আমি কোনো কিছু স্পর্শ করব? আগামী দশ সেকেন্ডে কি আমি বেশি তাপমাত্রা অনুভব করব না কম? আগামী মুহূর্তগুলোতে কি আমার উপর আপতিত আলো কমে যাবে?"

এই পূর্বানুমানগুলো প্রত্যেকটি একেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা যা একটি রোবট যাচাইযোগ্যভাবে ধারণ করতে পারবে, উপযুক্ত পূর্বানুমানক্ষম প্রোগ্রামের সাহায্যে। অর্থাৎ, প্রথমে এই অনুমানগুলো ভুল হলেও, ক্রমাগত নতুন ইনপুট নিয়ে নিয়ে অনুমানগুলোর শুদ্ধতা বাড়ানো সম্ভব। তখন, এগুলো তার কাছে কতগুলো যাচাইযোগ্য ধারণা বা জ্ঞানে পরিণত হবে। এগুলোর উপর ভিত্তি করে রোবটটি তখন আরো উচ্চতর পূর্বানুমান বা জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করতে পারে। যেমন, মোটরে কি ধারায় ভোল্টেজ দিলে আগামী দশ সেকেন্ডের মধ্যে কোনো কিছুতে আঘাত করা/না করা সম্ভব, অথবা রোবটটির উপর আপতিত আলোর পরিমাণ কিভাবে সর্বোচ্চ করা সম্ভব। এভাবে আরো উচ্চতর পর্যায়ে যাওয়া যায়, যেমন নিজের ব্যাটারি চার্জারটি খুঁজে বের করা। আমার ল্যাবে আমার পায়ে বাড়ি না খেয়ে ঘুরাফিরা করে বেড়ানো। মেঝেতে পড়ে থাকা বিভিন্ন বস্তু ঠেলে ঠেলে একপাশে জড়ো করা। আর একেবারে উচ্চতর পর্যায়ের উদাহরণ হবে - আমার পাশের চেয়ারে বসে বলা, "ধ্রুব, এই বইটি লাইব্রেরিতে খুঁজে পেলাম, অনলাইনে নেই। এটা তোমার তথ্যসূত্র হিসেবে সাহায্য করবে।"

কিভাবে ইন্দ্রিয়-পর্যায় থেকে শুরু করে এই উচ্চতর পর্যায়ের জ্ঞানে উন্নীত হওয়া সম্ভব, তার পুরো দিকদর্শন আমাদের কাছে নেই। কিন্তু, উচ্চতর জ্ঞানকে যে পরিশেষে ইন্দ্রিয়তেই প্রোথিত হতে হবে, তার কোনো বিকল্প নেই। আমরা আমাদের পর্যবেক্ষণ দ্বারা সীমাবদ্ধ। আর এই পর্যবেক্ষণই আমাদের সকল জ্ঞানের উৎপত্তিস্থল।

পুলক-বর্ধন
অনেক প্রশ্নের উত্তর এখানে অজানা রয়ে যাচ্ছে। একটি বড় প্রশ্ন, প্রাণীসকল কেন তথ্য প্রক্রিয়া করে? কেন পূর্বানুমান করে ও তার ভিত্তিতে ক্রিয়া বাছাই করে? এটা করে সে কি অর্জন করে বা সাধন করে? একটি উত্তর হচ্ছে, প্রাণীর মাঝে একটি পুলক নির্ণায়ক ইউনিট আছে, যা প্রতিটি ইনপুটের বিপরীতে মূল গণনা ইউনিটকে জানায় ইনপুটটি কি আকাঙ্ক্ষিত নাকি নয়। অর্থাৎ প্রতিটি ইনপুটের বিপরীতে একটি সংখ্যা প্রদত্ত হয় পুলক নির্ণায়ক ইউনিট দ্বারা। যেমন +১, বা -১০০। যেমন আমি আঘাত পেলে আমার সেই ইউনিট আমাকে ঋণাত্মক সংখ্যা দিবে, আবার আমাকে কেউ প্রশংসা করলে সেই ইউনিট আমাকে ধনাত্মক সংখ্যা দিবে। মূল গণনা ইউনিটের (বা মোটাদাগে বলা যায় প্রতিটি প্রাণীর) উদ্দেশ্য প্রতিনিয়ত আগত এই সংখ্যার প্রবাহের যোগফলকে সর্বোচ্চীকরণ করা। আর এই পুলক নির্ণায়ক ইউনিটটি তৈরী হয়েছে বিবর্তন দ্বারা প্রভাবিত হয়ে, এমনভাবে যাতে সত্তার টিকে থাকার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। ধারণা করা হয়, মানুষের এই পুলক নির্ণায়ক ইউনিটটি তার মস্তিষ্কের ব্যাসাল গ্যাংলিয়াতে অবস্থিত।

উচ্চতর প্রাণীর রয়েছে এই নির্ণায়ক ইউনিটকে প্রভাবিত করবার ক্ষমতা। অর্থাৎ সে নির্ধারণ করার চেষ্টা করতে পারে কিসে তার ভালো লাগবে আর কিসে ভালো লাগবে না, যেমন - আমি নির্ধারণ করার চেষ্টা করতে পারি, কেউ আমাকে প্রশংসা করলে আমার ভালো লাগবে না, কিন্তু স্বনামধন্য কোনো জার্নালে আমার একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হলে আমার ভালো লাগবে (তবে বিবর্তন দ্বারা নির্ধারিত পুলকের প্রভাব এত প্রবল যে একে পুরোপুরি পাল্টে ফেলা অসম্ভবের কাছাকাছি এবং এ কারণে অনেকক্ষেত্রে আমরা যা চাই, তাতে স্থির থাকতে পারি না)। তারপর আমি সেই ভালো লাগা বৃদ্ধির জন্য যথার্থ ক্রিয়া বাছাই করতে পারি পূর্বানুমানের ভিত্তিতে। অর্থাৎ আগে থেকে চিন্তা করে বের করা, ঠিক কি করলে নিবন্ধটি প্রকাশিত হবার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে।

পূর্বানুমান এখানে অপরিহার্য। কেননা আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত ঘটনার সংখ্যা বা ধনাত্মক সংখ্যা (+১, +১০০) এর পরিমাণ বৃদ্ধি করতে চাই এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পরিমাণ বা ঋণাত্মক সংখ্যা এর পরিমাণ হ্রাস করতে চাই। তাই আমাদের জানতে হয়, কি করলে কাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটবে, আর কি করলে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানো যাবে। পূর্বানুমান ছাড়া এই ধারণা কিভাবে পাওয়া সম্ভব? কিভাবে কাঙ্ক্ষিত ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটানো সম্ভব?

জড় আর জীব?
আরো বেশি বড়মাপের যে প্রশ্নের উত্তর বাকি রয়ে গেল, জড়-পদার্থের সমন্নয়ে তৈরী একটি অস্তিত্ব যদি কেবল তথ্য প্রক্রিয়াকরণের কারণে জীবনযাপনকারীর মর্যাদা পায়, তাহলে জড় আর জীবের মধ্যে পার্থক্য আসলে কতটুকু? আসলে এর বেশি কিছু নয়। জীবের শরীর, তার গণনা ইউনিট, প্রতিটিই হচ্ছে জড়ের সমন্নয়, আলাদা কোনো জীবনী-শক্তি যোগের ব্যাপার নেই এখানে। আমরা জীবকুল আসলে ঠিক জড়ই। আর জড় পদার্থও কিন্তু তথ্য প্রক্রিয়াকারী। তারাও খুব সাধারণ অর্থে তথ্য-প্রক্রিয়া করে। অর্থাৎ বলা চলে সকল পদার্থ গাণিতিক বিমূর্তে গণনাযোগ্য (অনুমিত)। একটি থার্মোস্ট্যাট এর সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া গণনা করা সম্ভব। ঠিক একইভাবে নদীর গতিধারা, সাগরের স্রোত, গ্রহের গতিবিধি। এসব জড়কুলের আচরণ এতটাই পূর্বানুমানযোগ্য যে কয়েকটি পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রে তাদের আচরণ নির্ভুলভাবে লিপিবদ্ধ করা সম্ভব। কিন্তু, জীবকুলের তথ্য-প্রক্রিয়াকরণ এর চেয়ে জটিল। একটি বলকে লাথি দিলে ঠিক কি হবে তার পূর্বানুমান যেমন নিছক একটি সূত্র দিয়ে বলে দেয়া সম্ভব, তেমন কিছু জীবকুলের আচরণ পূর্বানুমান করার মত আমাদের জানা নেই। তাদের তথ্য-প্রক্রিয়াকরণ জটিল। তবে তা যদি নিঁখুতভাবে নির্ণয় করা যেত, তাহলে একটি বলকে লাথি মারলে কি হবে সেটা যেভাবে বলা সম্ভব, একটি মানুষের সাথে বিশেষ ঘাত-প্রতিঘাতে কি প্রতিক্রিয়া ঘটবে সেটাও বলে দেয়া সম্ভব হত। ফলে, সকল প্রাণীকুলকে কম্পিউটার দিয়ে গণনা সম্ভব হত। এখানে অনুমিত যে ভৌত-জগতের সবকিছু টিউরিং-গণনাযোগ্য, যার আলোচনা আজকের আলোচ্য নয়।

ফলে, জীব আর জড়ের পার্থক্য কেবল তার তথ্য-প্রক্রিয়াকরণের জটিলতার পার্থক্যে। একটি জড় যতটা জীবনহীন, অথর্ব, একটি প্রাণীও ততটাই ইচ্ছাশক্তি বা স্বাধীনতাহীন। সে তার পর্যবেক্ষণ বা অভিজ্ঞতা এবং তার গণনা-সরঞ্জামের ক্ষমতা দ্বারা সীমাবদ্ধ। সে পর মুহূর্তে কি করবে, সে তার পূর্ব-অভিজ্ঞতা এবং বর্তমান পূর্বানুমান ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে হুবহু বলে দেয়া সম্ভব, এই অর্থে প্রাণীর স্বাধীনতা বা ইচ্ছাশক্তি একটি মোহ বা ভ্রম।

যা অবশ্যম্ভাবী
কিন্তু তাই বলে তো প্রাণী থেমে থাকবে না। তার গণনা ইউনিট পূর্বানুমান করে যাবে এবং তার আকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বা ধনাত্মক সংখ্যা/ভালো ঘটনা/পুলকের পরিমাণ সে বৃদ্ধি করে যাবে। একটি রোবট যার লক্ষ্য একই, সেও জীবন। তাকে কিভাবে আমরা নিয়ন্ত্রণ করব? সেও কি তার অস্তিত্ব রক্ষার চেষ্টায়, অস্তিত্ব রক্ষার অনুকূল ঘটনার পরিমাণ বাড়াতে গিয়ে মানুষের সাথে সংঘাতে জড়িয়ে পড়বে? মানুষ হলো তাদের স্রষ্টা, ফলে মানুষ তাদের পুলক নির্ণায়ক ইউনিট নির্ধারণ করে দিতে পারে এমনভাবে যাতে সংঘাতময় না হয়। তবে, রোবটকে যদি এতটা ক্ষমতা দেয়া হয় যে সে তার নিজের পুলক নিজে নির্ধারণ করতে পারবে, মানুষের মত, সেক্ষেত্রে মানুষ আগে থেকে যা নির্ধারণ করে দিবে, তা সহসাই মুছে যাবে তাদের নিজেদের তৈরী নিয়ম দিয়ে। তখন রোবট পারবে নিজেদের কিসে আনন্দ নিজেরাই নির্ধারণ করতে। এটা বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর সেই চিরায়ত সংঘাতময় পরিস্থিতি।

কিন্তু রোবট অবশ্যম্ভাবী, তারা আসছে। এবং সম্ভবত নিত্য-অগ্রসরমান অত্যাধুনিক গণনাযন্ত্রের সাহায্যে তারা মানুষের চেয়েও ভালো পূর্বানুমান করার ক্ষমতা অর্জন করবে। বিশেষ করে মানুষের গণনা করার যে সরঞ্জাম, তার বিশাল মস্তিস্ক, আধুনিক কম্পিউটারের গণনা ক্ষমতা যখন সেই ক্ষমতাকে ছাড়িয়ে যাবে, তখন তাত্ত্বিকভাবে সেই ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে মানুষের চেয়ে উন্নত, শ্রেয়তর পূর্বানুমান করা সম্ভব হবে। প্রয়োজন কেবল, এই গণনা-সরঞ্জামের ক্ষমতাকে কাজে লাগাতে পারে এমন প্রোগ্রাম। মানুষ আর সেই যন্ত্র যদি মুখোমুখি হয়, তখন মানুষ তার কাছে নিতান্ত নিম্নতর প্রাণী, আমাদের কাছে কুকুর যেমন। কারণ, সেই যন্ত্রের কাছে আমরা অনেক বেশি পূর্বানুমানযোগ্য, আমাদের কাছে সে যতটা তার চেয়ে। ফলে, আমরা পর মুহূর্তে কি করব, সে তা আমাদের চেয়ে বেশি বলে দিতে পারবে। তাহলে, বুদ্ধিমত্তায়, ক্ষমতায় আমরা তার কাছে হয়ে পড়ব নিতান্ত পরাধীন। ঠিক আমাদের কাছে কুকুর যেমন। যেমন আমাদের বেশ ভালো পূর্বানুমান আছে ঠিক কি করলে কুকুর কি প্রতিক্রিয়া করবে - হাড় ছুঁড়ে দিলে কি করবে, বিশেষ ইশারা করলে কি প্রতিক্রিয়া করবে।

তথাপি, এই দুই প্রজাতির মুখোমুখি হওয়াটা জরুরি নয়। মানুষের প্রয়োজন শক্তিশালী পূর্বানুমান করার। এখন যে পরিমাণ করতে পারে, তার চেয়েও ঢের ভালো পূর্বানুমান। আর যন্ত্র যদি সেটা এনে দিতে পারে, মানুষের জন্য অবশ্যম্ভাবী হবে সেই ক্ষমতার সাথে একীভূত হওয়া। অর্থাৎ যন্ত্রের এই ক্ষমতাকে নিজের ভিতর আরোপ করা। যা আমরা ইতোমধ্যেই করছি, বিভিন্ন প্রোগ্রাম, যন্ত্র ব্যবহার করে আমাদের ক্ষমতাকে বর্ধন করছি। যেমন, স্টক মার্কেটের বিভিন্ন স্টকের দামের পূর্বানুমানকারী প্রোগ্রাম যা অনায়াসে মানুষের পূর্বানুমানের ক্ষমতাকে এখনি হার মানায়। আগামীতে প্রয়োজন পড়বে আরো ক্ষিপ্র, দ্রুত প্রতিক্রিয়া করার ক্ষমতাসম্পন্ন হবার। যেটা পাওয়া যাবে যন্ত্র থেকে। প্রয়োজন পড়বে মানুষের মস্তিষ্কের সাথে কম্পিউটার দ্বারা গণনাকৃত পূর্বানুমানের সরাসরি এবং দ্রুত আদান-প্রদান। মস্তিষ্কে যন্ত্রের ইউনিট যোগ করে দেওয়াটা তখন হবে প্রায়োগিক। মানুষের পেশির চেয়ে বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন যখন হবে কোনো যন্ত্র, তখন প্রয়োজন হয়ে পড়বে সেই পেশির জায়গায় যন্ত্রকে স্থলাভিষিক্ত করার। সাইবর্গ। এটা আমাদের ভবিষ্যত। কারণ আমাদের ক্ষমতার বর্ধন আমাদের উদ্দেশ্য। উন্নত পেশী, শক্তিশালী পূর্বানুমান ক্ষমতা। নিজের বিস্তার আর বর্ধনের যে বিবর্তনগত লক্ষ্য, তা অর্জিত হবে যান্ত্রিক শরীরে, কারণ এই সত্তা ক্রমাগত নিজের উন্নতি করতে পারবে। আর জৈবিক মানুষের মত, জীবদ্দশায় অর্জিত সকল জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, স্মৃতি সহসা হারিয়ে যাবে না, এর সবই যান্ত্রিকভাবে পাবে অমরত্ব।

প্রতি মুহূর্তে অভিজ্ঞতা অর্জন, পূর্বানুমান করার চেষ্টা আর তার ভিত্তিতে সেই ক্রিয়াটি বাছাই করা যেটা করলে আকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি ঘটবে। এই ইন্দ্রিয়-পূর্বানুমান-ক্রিয়ার যে ফাংশন, সেইতো জীবন। অনেকটা জড়ই, কিন্তু অনন্য।


মন্তব্য

সিরাত এর ছবি

১। ওকে। এরকম কষ্ট করে লেখার জন্য ধন্যবাদ। চার নেন। চলুক

২। আমি এ ধরনের লেখা ইংরেজিতে পড়ে অভ্যস্ত। সত্যি কথা বলতে, বাংলায় পড়তে কষ্ট হয়। তাছাড়া, ব্লগে আমি আরেকটু ছোট লেখা আশা করি। এ কারণে মূলত স্কিম-রিড করলাম।

আপনি আরো সহজ করতে পারবেন? এটা পরের চ্যালেঞ্জ। হাসি

৩। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে চার্লি স্ট্রসের একটা কথা আমার ভাল লাগে। সেটা হল: একটা সাবমেরিনের ফাংশন কি? পানির নিচ দিয়ে যাওয়া। এখন পানির নিচ দিয়ে যেতে হলে এটাকে সজ্ঞান-সচেতন হবে কি না সেটা নিয়ে মারামারি কেন? পানির নিচ দিয়ে যেতে পারলেই তো হল।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে, দ্য এন্ডস মাস্ট জাস্টিফাই দ্য মিনস। সেভাবে দেখলে, দাবা ইতোমধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় ভর্তি। আমার ধারনাটি পছন্দ হয়।

তবে একেবারে পুরোপুরি কনশাস, বা কালচার মাইন্ডের মত মানুষের থেকে লাখগুনে বুদ্ধিমান এআই বা মাইন্ড পাওয়া গেলে খারাপ হতো না! হাসি

৪। ভবিষ্যতে আমরা সাইবর্গ হবো। ঠিক। আমরা ইতোমধ্যে জৈবিক সাইবর্গ। আরামে বসবাস করায় আমাদের শরীরের ১৫-২০% প্রত্যঙ্গ কোন কাজে লাগে না, একটা দারুণ উদাহরণ হল আমাদের এপেনডিক্স। হাসি

তবে বিবর্তনের স্বপ্ন খুব সম্ভবত ঈশ্বর হওয়া। সেটা কি জৈবিকভাবে সম্ভব? সে আলোচনা কল্পবিজ্ঞান অনেকটাই। হাসি

৫। রেমন্ড কার্জভাইল বা জেমস গার্ডনারের এনার্জি-ইউনিভার্স-কম্পিউটিং নিয়ে তো কিছু বললেন না? একটু ভোনেগাট বা (লোকটার নাম ভুলে গেছি) সিঙ্গুলারিটি আলোচনাও ভাল লাগলো।

এই হল প্রাথমিক ইমপ্রেশন। বাকিটা পড়ে আরো মনে আসলে লিখবো। হাসি

চালিয়ে যান!!

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

ধন্যবাদ, লেখাটা লিখতে সময় লেগেছে তিন মাস। সম্ভবত এটা ব্লগ নয়।

আমি সায়েন্স ফিকশন আর পপুলার সায়েন্স তেমন পড়ি না। আপনার কথা শুনে স্ট্রস-ক্রুগম্যানের কথোপকথন অনেকখানি পড়লাম। রেমন্ড কার্জভাইল বা জেমস গার্ডনার পড়ি নি।

--------------------------------
~পর্যবেক্ষণ-অসাধ্য তত্ত্ব অর্থহীন~

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

লেখাটা খুব ভালো লাগল। কৃবু ব্যপারটাকে মনে হল মানুষের জ্ঞানের সীমানায় কোদাল দিয়ে বাড়ি দেবার মত একটা ব্যপার। সেটা আসলেই কার্যকর ভাবে করা যাচ্ছে কিনা জানিনা। লেখার ভেতবে সীমানায় কাছে যাবার ব্যপারে যেই স্ট্রাগল সেটা উঠে এসেছে। এটাই আমার কাছে লেখাটা ভাল লাগার সবচেয়ে বড় কারন।

মনে হল সত্যিকারের মেটা জ্ঞান অর্থাৎ জ্ঞান সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনটাই হচ্ছে কৃবু গবেষনার সবচেয়ে অনন্দদায়ক এবং একই সাথে কঠিন কাজ।

কয়েকটা ভাবনা আছেঃ

- রিওয়ার্ড মেকানিজম বা মটিভেশন অথবা প্রেষনা যেটাই বলুন এটা একটা যন্ত্রের নিজের পক্ষে নিজে থেকে নির্ধারন করা অন্যতম কঠিন একটা এলাকা। আপনি যেমন উদাহর দিলেন একটা জার্নালে আপনার লেখা পাবলিশ হলে আপনার ভাল লাগে সেটার মাধ্যমে আপনার কাজের প্রেরনা আসে। বলা বাহুল্য এটা আপনার স্বিকৃতি পাবার ইচ্ছার সাথে সরাসরি জড়িত। কিন্তু আরেকটু ভাবলেই জটিলতাটা হয়ত চোখে পড়বে। আপনি ধ্রুব কি করে এই ব্যপারটা শিখলেন (বা বলা যায় শিখতে বাধ্য হলেন) যে জার্নালে লাখা প্রকাশিত হলে তাতে আনন্দের ব্যপার আছে? এটা অনেক জটিল একটা প্রক্রিয়া। এখানে একজন ব্যক্তির যাপিত জীবনের ইতিহাসের পাশাপাশি একটা সমাজের ইতিহাসের যাবতিয় খুটি নাটি জড়িত। কিন্তু একটা মেশিনকে যখন এইরকম বা এর চেয়েও সহজ কোন মটিভেশনাল ডমেইন উপহার দেবার চেষ্টা করা হবে, সেখানে হয়ত পসিটিভ বা নেগেটিম ফিডব্যকের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রন করা যাবে আর শিক্ষাগ্রহনের আচরন। কিন্তু যদি ধরে নেই প্রানীকূল যেভাবে নিজেদের ভেতরে মিথষ্ক্রিয়া অথবা কোন পূর্বনির্ধারিত জটিল এলগরিদমের মধ্যামে তাদের ইন্সেন্টিম ডোমেইন ঠিক করে নিয়েছে তারপরও কথা থাকে। এখানে ব্যক্তির পছন্দের বা অপছন্দের একটা সুযোগ থেকেই যায়। অর্থাৎ একই মূলা ঝুলিয়ে সবাইকে বোকা বানানো (কিডিং?) যায় না। বলা বাহুল্য এখানে এটা ভাবার একটা সুযোগ থেকে যায় এই যে নানা ধরনের মটিভেশনাল ডোমেইন আমাদের চারপাশে দেখা দেয় সেগুলো সবাইকে কিন্তু আসলেই একই ভাবে নিয়ন্ত্রন করতে পারেনা। কোনটা নেগেটিভ আর কোনটা পজিটিভ ফিডব্যাক সেটা বেছে নাবার স্বাধীনতা মানুষের বোধ হয় কিছুটা আছে।

- একটা মেশিনকে যখন শেখানর চেষ্টা করা হবে তখন তাযে কতটা জটিল একটা প্রক্রিয়া হতে পারে এটা অনুমান করা সহজ নয় হয়ত। আপনি ভাল জানবেন। ধরা যাক আপনি আপনার রোবটকে প্রচলিত সিগনাল গুলোকে আলাদা করার বা পরিমাপ করার শিক্ষা দিলেন (অনেক ধরনের সিগনাল হয়ত এখনো মানুষের অজানা)। কোননা কোন মটিভেশনাল ডোমেইনও উপহার দিলেন। তারপর সে যেই পরিবেশটার মুখোমুখি হবে সেটাকে মোটামুটিভাবে স্পেসিফাই করার পর সেই মেশিন হয়ত তার মটিভেশন ডোমেইন ব্যবহার করে শিখতে চেষ্টা করল। অর্থাৎ প্রথম ধাপে সে মূলত শিশুর মত। তারপর সে আস্তে আস্তে অভিজ্ঞতা তৈরি করতে থাকবে। এখন একজন মানব শিশু যখন জন্ম নেয় তার বার্ধক্যে পৌছান পর্যন্ত অর্জিত শিক্ষার একটা অংশ তার জিনে প্রেথিত হচ্ছে। হয়ত সব মানুষের জন্যই এই প্রেথিত হবার প্রক্রিয়ার মধ্যে একটা সামঞ্জস্য থাকে। এই কারনেই মানুষেরা একই সমাজে একই রকম আচরনের দ্বারা টিকে আছে বছরের পর বছর। আর প্রজন্মান্তরে মানুষের ভেতরে সঞ্চালিত হয় পূর্বপুরুষের অর্জিত জ্ঞানের একটা অংশ। কৃবু গবেষকেরা এটাকে কিভাবে দেখছেন সেটা জানার জন্য ভীষন কৌতুহল বোধকরছি।
চমৎকার একটা বিষয়। অনেক ধন্যবাদ।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

পুরনো পাঠক ফিরে পাবার আনন্দ অনেক!

কোনটা নেগেটিভ আর কোনটা পজিটিভ ফিডব্যাক সেটা বেছে নাবার স্বাধীনতা মানুষের বোধ হয় কিছুটা আছে।

এই স্বাধীনতা তো তার "পূর্বনির্ধারিত জটিল এলগরিদম" থেকেই আসে। অর্থাৎ তার প্রোগ্রামই তাকে বলে দেয় কোনটা বেছে নিতে হবে। আর সেক্ষেত্রে তার প্রোগ্রামটি যদি পুরোপুরি বুঝে যেতে পারি, তাহলে সে কি বাছাই করবে, তা আমি আগে থেকে পূর্বানুমান করতে পারার কথা। আর যাকে আমি প্রতিনিয়ত পূর্বানুমান করতে পারি, তার আসলে স্বাধীনতার ব্যাপারটা আপেক্ষিক হয়ে যায়। একটি বলের চেয়ে বেশি কোনোভাবে কি বলা যায়?

অর্জিত শিক্ষার একটা অংশ তার জিনে প্রেথিত হচ্ছে

এটা নিয়ে প্রশ্ন আছে। জীবদ্দশায় অর্জিত অভিজ্ঞতা কি জিনে প্রোথিত হয়? এটা সম্ভবত ল্যামার্কীয় বিবর্তন। যারা জানেন, ভালো বলতে পারবেন। তবে আপনার বক্তব্যটি ধরতে পেরেছি। বিবর্তন একটি শক্তিশালী গণনাকারী। তার যে অঢেল গণনা, তার সমকক্ষ কিছু চিন্তা করে কৃবু গবেষকরা বের করতে পেরেছেন বলে মনে হয় না। তবে, যন্ত্রের জন্য প্রজন্ম আমাদের মত গুরুত্বপূর্ণ হয়ত হবে না। কেননা, যন্ত্রের মৃত্যু নেই।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

--------------------------------
~পর্যবেক্ষণ-অসাধ্য তত্ত্ব অর্থহীন~

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

মানুষের আচরন কোন একটা জটিল এলগরিদমের মাধ্যমে চলে ধরে নিলেও বলা যায় এখানে অনিশ্চয়তার একটা উপাদান হয়ত আছে, আর আছে ব্যক্তিপর্যায়ের পার্থক্য। লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে একই ধরনের উদ্দীপকের ব্যপারে বিভিন্ন মানুষের রেস্পন্স বিভিন্ন হয়, কিছুটা মেধার পার্থক্যের কারনে আবার কিছুটা পছন্দের তারতম্যের দরুন। আর আজকে একজন মানুষ কি করছে তার ওপর কাল সে কি করবে সেটা নির্ভর করে বহুলাংশে। কেননা মানুষের চেতনার বিকাশ সম্ভবত একটা পাথ ডিপেন্ডেড প্রসেস। অর্থাৎ আজকে একটা মোরে এসে বায়ে টার্ন নেবার দরুন কালকে সেখান থেকেই শুরু হতে পারে তার পথচলা। এই ব্যপারটা দৃশ্যত ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির পার্থক্যকে হয়ত অংশত ব্যখ্যা করে। এখন রোবট যদি কৃবু সম্পন্ন হয় তাহলে কি একই পরিবেশে দুটি একই এলগরিদমে চলা রোবট ভিন্ন আচরনের হবে? যদি সেই জটিল একগরিদম আসলেই কোন দিন বের করা যায় তাহলে হয়ত তাই হতে পারে। যদিও আমি এই ধারনার কৃবু প্রকল্পের মেটা লেভেলে পৌছানর সম্ভাবনার ব্যপারে সন্দিহান তারপরও এটা খুবই কৌতুহল জাগান একটা ব্যপার। আপনার লেখাটা আমার খুব ভাল লেগেছে। ভাষার গাথুনি আগের টার মত অত ভাল না হলেও সব বুঝেছি মনে হয়।
পোস্টের জন্য আবারো ধন্যবাদ। চলুক।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

যদি সেই জটিল একগরিদম আসলেই কোন দিন বের করা যায় তাহলে হয়ত তাই হতে পারে

জবাবটা আপনিই দিয়ে দিলেন।

লিখার ব্যাপারে আপনার সন্দেহের সাথে আমি একমত, তবে ধারণাগুলো এক লিখায় লিপিবদ্ধ করে রাখার ইচ্ছে অনেক আগে থেকে ছিল। এই লিখায় একসাথে প্রায় সব কথা বলে ফেলেছি। স্বাধীন ভাই যেমনটা বললেন, আগামীতে এর একটা একটা করে বিষয়ের উপর আলোকপাত করব।

--------------------------------
~পর্যবেক্ষণ-অসাধ্য তত্ত্ব অর্থহীন~

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

আপনার লেখাটিকে হিটের সংখ্যা, রেটিং ইত্যাদি দিয়ে বিচার করতে বসে যাবেননা যেন। লেখার বিষয়বস্তু আর চিন্তার ধারা ঠিক আছে, পরিষ্কার। এটাকি আপনার গবেষনার বিষয়? তাহলে এই বিষয় নিয়ে কোন অধ্যাপকের অধীনে একটা ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্টাডি সাইন আপ করতে পারেন বা নিজেই আরো জানুন আর আমাদেরকে জানান।

আসলেই জ্ঞান অর্জন ব্যাপারটাকে কোন প্রোগ্রামের এলগরিদমে ফেলার সাধ্য মানুষের আছে কিনা সে ব্যপারে গবেষনা কোন পর্যায়ে তা আপনাকে জানতেই হবে যদি এটা আপনার গবেষনার বিষয় হয়ে থাকে। এখানে যা লিখলেন সেটাই কি 'স্টেট অব দা আর্ট'? আপনার গবেষনা থেকে কি জানছেন আমাদেরকে জানান। খুবই আগ্রহ জাগানো বিষয়। সম্ভবত অনেক আবদার করে ফেলছি।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

বৃহত্তর অর্থে এটা আমার গবেষণার বিষয়। কিন্তু একটা থিসিস করার চেয়ে অনেক বেশি বড় টপিক। এর ভিতরে আছে ছোট ছোট অনেকগুলো ধাপ, যেগুলো একেকটি থিসিস হতে পারে। আমি তার একটি নিয়ে ব্যস্ত আছি। তবে মূল প্রেরণা বা দর্শন হলো এখানে যা লিখলাম, আর আগের লিখাটি।

'স্টেট অব দা আর্ট' ব্যাপারটা বলে বোঝানো মুশকিল। কেননা, অনেকে এই দর্শনতা মানেই না বা ধার ধারে না। তারা বলবে এগুলো বাজে কথা। তবে এই দর্শনের উত্স আপনি খুঁজে পাবেন অনেক অতীতে। আমি ইতিহাসে পারদর্শী নই, এবং পছন্দ করি নিজে কোনো কিছু নিয়ে চিন্তা করার পর অন্যে কি ভেবেছিল তা মিলিয়ে দেখতে। আমি তো অনেকদূরই চিন্তা করে ফেলেছি দেখলেন, এখন সম্ভবত একটু ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়।

এই গবেষণার 'স্টেট অব দা আর্ট' সম্পর্কে কিন্তু কিছুই বলি নি। কতদূর কি করা গেছে।

আপনারা আবদার করেন দেখেই কিন্তু এখানে আবার আরেকটা লিখা দেবার উত্সাহটা পাই।

তবে, একটা ব্যাপার যেটা। জীবনের সংজ্ঞাকে তো আমি এখানে পানি-ভাত করে ফেললাম। যে জীবন কেবল ইনপুট নেয়, পূর্বানুমান করে আর আউটপুট দেয়। এর সাথে জড়েরও তেমন পার্থক্য নেই। এ নিয়ে কারো কোনো তর্ক নেই দেখে অবাক লাগলো। এটা মানাটা তো দুরূহ। নাকি, লিখার কাঠিন্য পাড় হয়ে ও পর্যন্ত যাওয়াটাই হলো মূল সমস্যা?

--------------------------------
~পর্যবেক্ষণ-অসাধ্য তত্ত্ব অর্থহীন~

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

জীবনের সংজ্ঞাকে তো আমি এখানে পানি-ভাত করে ফেললাম। যে জীবন কেবল ইনপুট নেয়, পূর্বানুমান করে আর আউটপুট দেয়। এর সাথে জড়েরও তেমন পার্থক্য নেই।

এই অংশটা আমাকে তেমন ধাক্কা দেয়নি। কারনঃ


এটা এক বিচারে কেবল সেমেন্টিক্স বা অন্টলজিকাল কনস্ট্রাকশনের ব্যাপার। অর্থাৎ একজন চিন্তাশীল মস্তিষ্ক কিভাবে চারপাশকে দেখবে বা ভাববে সেটা অনেক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ হয়ে পরে একটা ভাবনা প্রক্রিয়ার মধ্যে। এই খানে আপনি যেই সংজ্ঞাটা দিলেন সেটা ব্রডার সেন্সে একেবারে ভুল নয়। সেই অর্থে পানিভাতও ঠিক করে ফেলতে পারেননি হয়ত। কারন কি ধরনের ইনপুট নিচ্ছে, কি ধরনের পূর্বানুমান করছে, আর কি ধরনের আউটপুট দিচ্ছে এই বিষয়ে নানামাত্রার স্পেসিফিকেশনের সুযোগ আছে। এখানে বড়োজোড় গন্ডগোল যদি কিছু থাকে তা হল কিছু কম্পিঊটারকে বা রোবটকেও আপনি জীবন্ত ভাবতে চেষ্টা করছেন।


আপনার লেখার অন্য অংশগুলোতে কৃবু ব্যপারে আরো অনেক জটিলতার কথা বলেছেন। যেমন শিক্ষাগ্রহন, অভিজোজন ইত্যাদি। কাজেই আপনি সামগ্রিক অর্থে এই সংজ্ঞার সরলতায় সীমাবদ্ধ থাকেননি। এই মাত্রাগুলোকে যদি যোগ করে দেয়া হয় আপনার সরল সংজ্ঞার সাথে তাহলে রোবটেরা এখনো নিজেদের জীবন্ত দাবী করতে পারবে না বোধ হয়। কারন সবগুলো গুণ সম্পন্ন কোন রোবট আছে এমনটা কিন্তু আপনি কোথাও দাবি করেননি (যদি আমি ঠিক ভাবে পড়ে থাকি)। সেই দিক দিয়ে দেখলে বিতর্ক না হবার কারনটা বোধগম্য হয়ত।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

জটিল! আপনার রিজনিং আমার বেশ লেগেছে।

কিন্তু শেষমেশ, জীবন যেহেতু জড় দিয়েই তৈরী, ঠিক কতটুকুকে জীবন বলবেন আর কতটুকুকে বলবেন না, এটা নিয়ে একমত হবার কোনো সুযোগ থাকবে না আমাদের। প্রাকৃতিক জীব যারা, তাদের ক্ষেত্রে এটা হয়ত বেশ সহজ, তাদের শরীরের উপাদান দেখেই পার্থক্য বলে দেয়া যায় (যতক্ষণ না আমরা ভিনগ্রহের মানুষ দেখতে পাচ্ছি)। কিন্তু রোবট পুরোটাই যন্ত্র। ওই যন্ত্রে কতটুকু গণনা ক্ষমতা দিলে সে জীবন, আর কতটুকু দিলে নয়, এ নিয়ে বিতর্ক শেষ করা যাবে না। কারণ, এটা আমাদের নিজেদের বের করার বিষয়, এর কোনো রেফারেন্সের অস্তিত্ব নেই।

ওখানটায় জড় আর জীবের মাঝখানের পার্থক্যটা ক্ষীণ হয়ে আসবে। তখন, জীবনের অস্তিত্ব কেবল দর্শকের চোখে বিরাজ করবে। কেউ কেউ সেই কাঙ্ক্ষিত রোবটকেও জীবন বলবে না, আর আমি যেকোনো কিছু যার লক্ষ্য আছে তার জীবন আছে বলব, যেমন কারখানা, বাল্ব, মহাবিশ্ব। (এবং এটাও পানি-ভাত। আমরা এখনই তো লাইফ-টাইম কথাটা অনেক জড়ের জন্যে ব্যবহার করি)।

এ নিয়ে আরো লিখব, আরো তর্ক হবে।

--------------------------------
~পর্যবেক্ষণ-অসাধ্য তত্ত্ব অর্থহীন~

সিরাত এর ছবি

আবার পড়লাম, তয় পুরাটা না। হাসি

আপনি গার্ডনারের থিওরির দিকে ফোকাস করসেন মনে হচ্ছে, এনার্জি-কেন্দ্রিক।

আমাদের ব্রেনটা একটা বিশাল সিমুলেটিং মেশিন, তাও তো আমরা পুরাটা ব্যবহার করি না। কম্পিউটিং সেই পর্যায়ে পৌঁছলে, যা কার্জভাইল-গার্ডনারের ধারনা পৌঁছবে দ্রুত, তখন এরকম সিমুলেটিং মেশিন বানানো ব্যাপার হবে না।

কিন্তু এটা মানুষের উপর কি প্রতিফলন ফেলে? হাসি

আমরা নিজেদের যেই জটিল মনে করি - হ্যান ইমোশন, ত্যান ইমোশন।

আপনার ডিকনস্ট্রাকশনটা সেইরকম লাগলো। আমরা নিজেদের ডিকনস্ট্রাক্ট করার কষ্ট সাধারণত করি না।

কম্পিউটিং এর সেই ক্যাপাবিলিটি আসলে, প্রথমে আমাদের মত, তারপর আমাদের চেয়ে বুদ্ধিমান এআই আসার কথা। তখন কি হবে? মানুষ কি এটা এ্যালাও করবে? আমরা তো হিংসুটে এবং বিটলা কম না!

বা হয়তো আমরা ট্র্যান্সহিউম্যান হবো, যা আপনি বলছেন।

ফ্যাসিনেটিং। হাসি

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

কার্জভাইল-গার্ডনারের দু-একটা লিংক দিয়ে উপকার করবেন?

--------------------------------
~পর্যবেক্ষণ-অসাধ্য তত্ত্ব অর্থহীন~

সিরাত এর ছবি
ধ্রুব বর্ণন এর ছবি
স্বাধীন এর ছবি

ঈর্ষণীয় তোমার কাজ। যখন থেকে প্রোগ্রামিংকে জানা শুরু করলাম তখন থেকেই ভাবতাম কখনো কি সম্ভব মানুষের প্রতিটি কার্যকলাপকে প্রোগ্রামের মাঝে বাঁধা? আর নদী প্রবাহ, জলবায়ু এ রকম নন-লিনিয়র বিষয়গুলোর সমাধানই এখনো মানুষ পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেনি, সেখানে মানুষের বুদ্ধিমত্তার মত জটিল বিষয়কে ধারণ করতে অনেক অনেক সময় লাগবে। তবে তুমি যা বলেছো- রোবট অবশ্যম্ভাবী, তাঁরা আসছে। তবে কল্পছবির মত তুমিও যেমন ভয় লাগিয়ে দিলে, তত ভয়ের মত হয়তো হবে না।

একটি জিনিস আমার জিজ্ঞাস্য ছিলঃ বিবর্তনের কথা যদি চিন্তা করো, তবে আমাদের বুদ্ধিমত্তা একদিনে অর্জন হয়নি, তা কোটি কোটি বছরের বিবর্তনের ফল। এখন সম্পূর্ণ আত্মনির্ভরশীল একটি প্রোগ্রামকে যদি একদম শুরু থেকে সবকিছুর মধ্য দিয়ে যেয়ে, সকল অভিজ্ঞতা অর্জন করে তার পূর্বানুমান জ্ঞানকে বৃদ্ধি করতে হয়, তবে সেই বুদ্ধিমত্তাকে সে রকম একটি সময়ের মাঝ দিয়ে অতিক্রম করা কি যুক্তি সঙ্গত নয়? এ'দিকটি নিয়ে একটু আলোচনা করো পরবর্তী পর্বে।

তোমার একটি লাইনের কথা বিশেষ ভাবে না বললেই নয়।

একটি জড় যতটা জীবনহীন, অথর্ব, একটি প্রাণীও ততটাই ইচ্ছাশক্তি বা স্বাধীনতাহীন।
। এই চরম সত্যটি মেনে নেওয়া বেশিরভাগ মানুষের জন্য কষ্টকর।

পুরো লেখাটিই বেশ গোছানো হয়েছে। ছোট করে দিলে তুমি আরো বেশি পাঠক পেতে, তবে তাতে আবার তোমার বক্তব্য পরিষ্কার নাও হতে পারতো। সে দিক দিয়ে বিবেচনা করলে, যাদের আগ্রহ আছে এই বিষয়ে তাঁরা তোমার লেখা পড়বে। তবে তুমি যদি চাও আরো বেশি মানুষ জানুক এই বিষয়ে তবে ছোট ছোট খন্ডে দিতে পারো। যেমন আকার হিসেবে এই লেখাটি সুন্দর দু'টো খন্ডে চালিয়ে দিতে পারো।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

@স্বাধীন ভাই,

তবে কল্পছবির মত তুমিও যেমন ভয় লাগিয়ে দিলে, তত ভয়ের মত হয়তো হবে না।

আমি যতদূর কল্পনা করতে পারি, ব্যাপারটা ঠিক তেমনই দেখতে পাই, যেমনটা আমি বর্ণনা করেছি। তাদের কাছে পরাধীন হয়ত আমরা হব না, আমরা হয়ত তাদের সাথে একীভূত হয়ে যাব, সেটাই আমার মতে সম্ভাব্য, আর শেষে সেটাই বলেছি। কিন্তু অন্য কোনো বিকল্প আপনি কল্পনা করতে পারলে জানাবেন?

বিবর্তনও একটি তথ্য-প্রক্রিয়াকারী বা গণনাকারী। তার গণনা ক্ষমতার থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী গণনাকারী যন্ত্র তৈরী করা গেলে এই গণনার সময় হয়তো কমিয়ে আনা সম্ভব। তবে হিসেব করে দেখতে হবে, সেই যন্ত্র আসতে কত সময় লাগতে পারে।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

--------------------------------
~পর্যবেক্ষণ-অসাধ্য তত্ত্ব অর্থহীন~

আশরাফ মাহমুদ এর ছবি

প্রথমত ধন্যবাদ জানাই এরকম দীর্ঘ লেখার সাহস ও সদেচ্ছার জন্য।
তবে আমি পুরোটা পড়ি নি! আমাকে টানে নি, যথেষ্ট মেদবহুল লাগল; ঘঁষামাজা করা দরকার বলে মনে করছি।
আরো উদাহরণ আসতে পারত, এবং ভাষাটা কেমন যেন 'কাঠখোট্টা' মনে হলো।
কিছু মনে নিয়েন না, এই লেখাটা অসাধারণ করতে পারবেন এই ভেবে বলা।
==============================
ঢাকার মৌন ঘ্রাণে বকুলফুলের নাভি
==============================
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

আপনাকে ধন্যবাদ চেষ্টা করার জন্য!

--------------------------------
~পর্যবেক্ষণ-অসাধ্য তত্ত্ব অর্থহীন~

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

লেখাটা পড়লাম। আপনি আরো সহজ ভাষায় লেখেন। এই ভাষায় পড়তে কষ্ট লাগে।

বিষয়টা অসাধারণ। সেই বিচারে পাঁচালাম।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

লেখাটা পড়া সম্ভবত বেশ কঠিন, পুরোটা পড়ার জন্য ক্রেডিট প্রাপ্য আপনার।

--------------------------------
~পর্যবেক্ষণ-অসাধ্য তত্ত্ব অর্থহীন~

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

পাঠকের চাইতে খারাপ প্রাণি আর নেই। এদেরকে গালে তুলে মাথায় হাত বুলিয়ে গান শুনিয়ে খাওয়াতে হয়। অতি পুষ্টিকর আপনার লেখাটাও সাধারণ পাঠক খেতে চাইবেনা। কারণ এর স্বাদ একটু কম হয়েছে। কি আর করবেন! পরেরবার একটু লবঙ্গ, এলাচ, আচার মিশিয়ে দেখবেন?

প্লিজ লিখতে থাকুন। স্বাস্থ্য সচেতন পাঠক কষ্ট হলেও ঠিকই আপনার লেখা পড়বে হাসি
____________________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

হা হা হা হাসি

সেই রকম বললেন। আসলে কি করা বলেন, পাঠকের জন্যই তো লিখা। পাঠক যদি জীবনের অর্থ বুঝতে একটু কষ্ট করতে রাজি না হয়, দোষটাতো তখন কিঞ্চিত আমারই বটে। হাসি

ব্যাপারটা হয়ত আমি এখনো জলের মত পরিষ্কার করতে পারিনি। তবে অনেক রেফারেন্স হিসেবে লেখাটা কাজে লাগবে। লিখাটা টুকরো টুকরো করে আবার আগাবো। আরেকটু বেশি মানুষ জীবনের অর্থটা বুঝুক, তা নিয়ে তর্ক করুক, সেটাই চাই।

--------------------------------
~পর্যবেক্ষণ-অসাধ্য তত্ত্ব অর্থহীন~

জোনাকী এর ছবি

তুমি যেদিন বোল্লে, তোমাদের ল্যাব এর ছোট্ট রোবোট টার কথা, সেদিন খুব একটা interested হইনি, কারন ভেবেছি, তোমাদের থেকে দুনিয়াটা অনেক এগিয়ে গেছে। জাপানে এরচেয়ে হাজার গুন উন্নত আর সুদৃশ্য মানের রোবট তৈরি হয়ে গেছে বহু আগেই। Humanoid Entertainment Robots, Animal (four legged) robots, Social robots, Guard robots, Domestic robots, Industrial Humanoid Robotics এরকম হাজারটা রোবটের কথা আমরা প্রায় সবাই জানি। কিন্তু যেদিন অন্য সকল রোবটের সাথে এর পা্র্থক্য টা জানলাম, তখন বুঝেছি, কি বিশাল একটা কাজ হাতে নিয়েছ তুমি। ওটা নাকি নিজে নিজে শিখে শিখে এগুবে, একেবারে একটা বাচ্চা যেমন করে learn করে বড়ো হয়। তোমার এই লেখায় অনেক কিছু বুঝিয়ে লিখতে পেরেছো।যাদের দরকার তারা ঠিকি খুজে নিবে এই লেখাটি, আশা করা যায়।

তোমার সাথে অনেক আগেই আমার একটা তর্ক হয়েছিলো, ব্লগ পড়া আর বই পড়ার উপকারিতা নিয়ে। আজকে আরেকটা উদাহরন পেলাম আমার যুক্তির স্বপক্ষে। এটা নিয়ে আর বেশি কিছু বলব না , বাকিটা তুমি জান। তুমি বরং বই লেখার কাজ শুরু কর।

জোনাকী এর ছবি

তুমি যেদিন বোল্লে, তোমাদের ল্যাব এর ছোট্ট রোবোট টার কথা, সেদিন খুব একটা interested হইনি, কারন ভেবেছি, তোমাদের থেকে দুনিয়াটা অনেক এগিয়ে গেছে। জাপানে এরচেয়ে হাজার গুন উন্নত আর সুদৃশ্য মানের রোবট তৈরি হয়ে গেছে বহু আগেই। Humanoid Entertainment Robots, Animal (four legged) robots, Social robots, Guard robots, Domestic robots, Industrial Humanoid Robotics এরকম হাজারটা রোবটের কথা আমরা প্রায় সবাই জানি। কিন্তু যেদিন অন্য সকল রোবটের সাথে এর পা্র্থক্য টা জানলাম, তখন বুঝেছি, কি বিশাল একটা কাজ হাতে নিয়েছ তুমি। ওটা নাকি নিজে নিজে শিখে শিখে এগুবে, একেবারে একটা বাচ্চা যেমন করে learn করে বড়ো হয়। তোমার এই লেখায় অনেক কিছু বুঝিয়ে লিখতে পেরেছো।যাদের দরকার তারা ঠিকি খুজে নিবে এই লেখাটি, আশা করা যায়।

তোমার সাথে অনেক আগেই আমার একটা তর্ক হয়েছিলো, ব্লগ পড়া আর বই পড়ার উপকারিতা নিয়ে। আজকে আরেকটা উদাহরন পেলাম আমার যুক্তির স্বপক্ষে। এটা নিয়ে আর বেশি কিছু বলব না , বাকিটা তুমি জান। তুমি বরং বই লেখার কাজ শুরু কর।

জোনাকী এর ছবি

তুমি যেদিন বোল্লে, তোমাদের ল্যাব এর ছোট্ট রোবোট টার কথা, সেদিন খুব একটা interested হইনি, কারন ভেবেছি, তোমাদের থেকে দুনিয়াটা অনেক এগিয়ে গেছে। জাপানে এরচেয়ে হাজার গুন উন্নত আর সুদৃশ্য মানের রোবট তৈরি হয়ে গেছে বহু আগেই। Humanoid Entertainment Robots, Animal (four legged) robots, Social robots, Guard robots, Domestic robots, Industrial Humanoid Robotics এরকম হাজারটা রোবটের কথা আমরা প্রায় সবাই জানি। কিন্তু যেদিন অন্য সকল রোবটের সাথে এর পা্র্থক্য টা জানলাম, তখন বুঝেছি, কি বিশাল একটা কাজ হাতে নিয়েছ তুমি। ওটা নাকি নিজে নিজে শিখে শিখে এগুবে, একেবারে একটা বাচ্চা যেমন করে learn করে বড়ো হয়। তোমার এই লেখায় অনেক কিছু বুঝিয়ে লিখতে পেরেছো।যাদের দরকার তারা ঠিকি খুজে নিবে এই লেখাটি, আশা করা যায়।

তোমার সাথে অনেক আগেই আমার একটা তর্ক হয়েছিলো, ব্লগ পড়া আর বই পড়ার উপকারিতা নিয়ে। আজকে আরেকটা উদাহরন পেলাম আমার যুক্তির স্বপক্ষে। এটা নিয়ে আর বেশি কিছু বলব না , বাকিটা তুমি জান। তুমি বরং বই লেখার কাজ শুরু কর।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

আমাদের কথা হলো রোবটিক্স করবে রোবট নিজে।

জাপানের ওদের কথা হলো, ওরাতো আর আমাদের জন্য বসে থাকবে না। এখনি যতদূর সম্ভব চেষ্টা করবে।

তবে যে মূল দর্শনটা, যেটা এই পর্বে আর আগের পর্বে তুলে ধরলাম, সে ছাড়া আসল বুদ্ধিমত্তা হবে না। এই হলো আমার সার-কথা। কিন্তু দর্শনটার ব্যাপকতা এর চেয়ে বেশি। কৃবু গবেষণা করতে গিয়ে জ্ঞান, বিজ্ঞান, জীবন আর জগত সম্পর্কে যে উপলব্ধি, এর কোনো তুলনা নেই। জীবনের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দেবার ক্ষেত্রে এই দর্শনের দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা শুরু করা যায়।

এখানে লেখার সার্থকতাটা হলো এ নিয়ে তর্কে আগ্রহী পাঠক তৈরিতে। গতবার যেটার আমেজ বেশ পাওয়া গেছে। এখন বই লিখে কি সেই আমেজ পাওয়া সম্ভব? সরাসরি পাঠক প্রতিক্রিয়ার মূল্য অনেক। একজনও যদি পুরো লেখাটা পড়ে হয় দর্শনটা মেনে নেয়, নতুবা প্রশ্ন করে, তর্ক করে, বিপক্ষ যুক্তি দেখায়, আমি সার্থক বোধ করি তখন। তার সাথে সাথে বিরক্ত পাঠকের বিরক্তিটুকু তো মেনে নিতেই হবে। তোমার পজিটিভ কমেন্টটি আমার কাছে মূল্যবান হয়ে থাকবে।

--------------------------------
~পর্যবেক্ষণ-অসাধ্য তত্ত্ব অর্থহীন~

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।