ব্যক্তিক জ্ঞান

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি
লিখেছেন ধ্রুব বর্ণন (তারিখ: শনি, ০২/০৬/২০১২ - ৪:২৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এআই গবেষক প্রফেসর রিচার্ড সাটন এআই-সংক্রান্ত তার মৌলিক কিছু ভাবনা নিয়ে ২০০১ সালে কয়েকটি ব্লগ লিখেছিলেন। ভাবনাগুলো আমার কাছে সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। নিজের ভাবনার সাথে মিল ও ওনার সাথে ভাবনাগুলোর আদান-প্রদানের ব্যক্তিগত ইতিহাসের কারণে। এখানে ওনার Subjective Knowledge ব্লগটির ভাবানুবাদ করলাম।

মানুষের মন-সংক্রান্ত একটা পুরাতন চিন্তাকে আমি ফেরত আনতে চাই। এই চিন্তাটা বলে যে ‘পরিবেশের’ সাথে স্নায়বিক আদান-প্রদান থেকেই মনের উদ্ভব। স্নায়বিক আদান প্রদান মানে আমরা যেমন আমাদের ইন্দ্রিয় বা অজস্র স্নায়ু দিয়ে পরিবেশ সম্পর্কে তথ্য গ্রহণ করি। এবং যেমন আমাদের হাত পা জিহ্বা ইত্যাদি প্রত্যঙ্গ নড়াচড়া করানোর মাধ্যমে পরিবেশকে প্রদান করি মানে পরিবেশের উপর প্রভাব বিস্তার করি। এখানে ‘পরিবেশ’ বলতে কেবল প্রাকৃতিক পরিবেশ ভাবার প্রয়োজন নেই। বরং ‘সত্তার’ ইন্দ্রিয়ের পরিসীমার বাইরে যা কিছু পড়ছে, যা থেকে তার কাছে তথ্য আসছে, যার উপর সে ক্রিয়াশীল হয়ে প্রভাব বিস্তার করতে পারছে, তার সবকিছুই পড়ে বলে ধরা চলে। একটা মানব শিশুর জন্যে তার বিছানা, বালিশ, কাঁথা, খেলনা, তার অভিভাবক এইসবই শিশুটির সাপেক্ষে তার পরিপার্শ্ব বা পরিবেশ তৈরি করে। আর ‘সত্তা’ বলতে বুঝবো যা কিছু ইন্দ্রিয় দিয়ে তথ্য গ্রহণ করতে পারে আর নড়াচড়ার মাধ্যমে কিংবা শব্দ উৎপাদনের মাধ্যমে ক্রিয়া সঞ্চালন করতে পারে। একটা যন্ত্রে যদি এই বৈশিষ্ট্য থাকে, আমরা তাকে এই কাতারে ফেলতে দ্বিধা হয়তো কমই করবো।

তো পুরনো চিন্তাটাতে ফেরত আসি। চিন্তাটা বলে যে সত্তার সাথে পরিবেশের স্নায়বিক আদান-প্রদানের মাধ্যমে মনের উদ্ভব। মূলত এই আদান-প্রদানই মনের মূল বিষয়। এই চিন্তাটা বলে যে আমাদের আশেপাশের দুনিয়া-সংক্রান্ত জ্ঞান, স্থান-সংক্রান্ত ধারণা, বস্তু ও অন্যান্য ব্যক্তি সম্পর্কে যে বোধটা, সেটার উদ্ভব পরিবেশের সাথে আমাদের এই আদান-প্রদানের অভিজ্ঞতা থেকে। এই অভিজ্ঞতা আমাদের ভেতর প্রবেশ করেছে আমাদের অনুভব (sensation) ও কাজ (action, হাত পা জিহ্বার নড়াচড়া) এই দুইয়ের সমন্বয়ে গঠিত সংকীর্ণ একটা চ্যানেল দিয়ে। এটা বেশ বিপ্লবী চিন্তা, কিন্তু নানাদিক দিয়ে খুব আগ্রহ-জাগানিয়া একটা চিন্তাও বটে! এটা বিপ্লবী কারণ এটা বলে যে আমাদের ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতাই একমাত্র সেই বস্তু যেটাকে আমরা সরাসরি ‘জানতে’ পারি। আমাদের আশেপাশের দুনিয়া সম্পর্কে আমাদের যা কিছু বোধ সেটা তৈরি হয়েছে মূলতই আমাদের ব্যক্তিক ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতাটিকে ভালোভাবে ব্যাখ্যা করার নিমিত্তে। চিন্তাটা আধ্যাত্ম্যকে (mental) বস্তজগতের (physical) সামনে এনে খাঁড়া করছে না কেবল, বরং ব্যক্তিককে (subjective) তুলে ধরছে নৈর্ব্যক্তিকের (objective) উপরে।

মন-সংক্রান্ত এই দর্শনটার সবচেয়ে বিশেষ দিক হলো এই ব্যক্তিকতা। দুনিয়া-সম্পর্কে আমাদের সকল জানাশোনার উদ্ভব যদি হয় আমাদের ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতা, তাহলে অভিজ্ঞতা অন্তঃপ্রকৃতিগতভাবেই (inherently) নির্ঘাত একটা ব্যক্তিক উপাদান।

বিজ্ঞানী ও পর্যবেক্ষক (observer) হিসেবে ব্যক্তিককে খাটো চোখে দেখে নৈর্ব্যক্তিককে মাথায় তুলে রাখতেই আমরা অভ্যস্ত। প্রথাগত এই মূল্যায়নটার বিপরীতে যাওয়ার জন্যে কিছু কৈফিয়ত তাই দেওয়া দরকার!

মনকে দেখার নতুন যে উপায়টির আমি ওকালতি করছি, তাকে বলা চলে ব্যক্তিক দৃষ্টিকোণ (subjective viewpoint)। এই দৃষ্টিকোণ মতে সকল জ্ঞান ও বোঝাশোনা উদ্ভূত হয় ব্যক্তির অভিজ্ঞতার ভেতর থেকে এবং সেই অর্থে জ্ঞান যেসবের মাধ্যমে প্রকাশিত সেগুলো অন্তঃপ্রকৃতিগতভাবে একান্ত (private), ব্যক্তিগত (personal) ও ব্যক্তিক (subjective)। যথাঃ একজন সত্তা হয়তো জানেন যে - অমুক কাজটা (action) করলে উনি অমুক অনুভূতিটা পান - অথবা যে - অমুক অনুভূব করার ঠিক পরপর তমুকটা অনুভব হয়। কিন্তু এই সব কাজ আর অনুভূতি কেবল সেই সত্তার নিজের কাজ, নিজের অনুভূতি। এইসব ক্রিয়া ও অনুভূতির সাথে আরেকজন সত্তার ক্রিয়া বা অনুভূতির কোনো অপরিহার্য সম্পর্ক কিন্তু নেই। তেমন সম্পর্ক আছে ভাবাটা কাজের হলেও হতে পারে, কিন্তু ব্যক্তিক অভিজ্ঞতার সাপেক্ষ থেকে উদ্ভুত সেটা সর্বদাই হবে অপ্রধান ভাবনা। অভিজ্ঞতার সাপেক্ষে চিন্তাটাই মূলত হবে প্রধান।

জ্ঞান ও বোঝাশোনার ব্যক্তিক এই দৃষ্টিকোণকে নৈর্ব্যক্তিক বাস্তবতাবাদী (objective realist) দৃষ্টিকোণের বিপরীতে তুলনা করা চলে। নৈর্ব্যক্তিক বাস্তবতাবাদীর দৃষ্টিকোণে ভৌত বস্তু, স্থান, কাল ও অন্যান্য ব্যক্তি, ইত্যাদি সত্যি সত্যি বিরাজ করে। ঘটনা কার্যকারণের মিথস্ক্রিয়া অনুযায়ী সত্যি সত্যি ঘটে, প্রধানত পর্যবেক্ষকের কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়াই। আমাদের কখনো কখনো ব্যক্তিক কোনো অভিজ্ঞতা, অনুভব বা আন্দাজ হয়, পরে আমরা মনস্থির করি যে তেমন কিছু বাস্তবে ও নৈর্ব্যক্তিক অর্থে ঘটে নি। যেমন, আমাদের হয়তো মনে হলো যে রুমটা উষ্ণ হয়ে গেছে, কিন্তু থার্মোমিটার আদৌ কোনো পরিবর্তন দেখাচ্ছে না। এই দৃষ্টিকোণ অনুযায়ী আমাদের কোনো অভিজ্ঞতা থাক না থাক, অভিজ্ঞতা-নিরপেক্ষভাবে, বাস্তবতার (reality) একটা অস্তিত্ব আছে। এই দৃষ্টিকোণকে অস্বীকার করা খুব সহজ হতো দুনিয়ায় যদি কেবল একটি সত্তা থাকতো। সেক্ষেত্রে এটা খুব সহজে বলা যেতো যে সত্তাটি নিছক তার অভিজ্ঞতাকে ব্যাখ্যা করার জন্যে ‘বাস্তবতা’কে উদ্ভাবন করেছে। নৈর্ব্যক্তিক দৃষ্টিকোণ তার জোরটা পেয়েছে এ কারণে যে একাধিক ব্যক্তি এই একই চিন্তাটা পোষণ করতে পারে। জগতে একের অধিক সত্তা আছে। বিজ্ঞানে ব্যক্তিক ও নৈর্ব্যক্তিকের পার্থক্যসূচক প্রায়-সংজ্ঞাটি হলো: যা কিছু একজন একক ব্যক্তির একান্ত, তা-ই ব্যক্তিক এবং যা কিছু অজস্র ব্যক্তি দ্বারা পর্যবেক্ষণসাধ্য ও পুনরুৎপাদনযোগ্য, সেটাই নৈর্ব্যক্তিক।

এখানটায় একটা বিষয় কিঞ্চিৎ তাড়াহুড়ো করেই আগে স্বীকার করে নিচ্ছি। ব্যক্তিক দৃষ্টিকোণ বস্তুজগতের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে না। আমরা প্রথাগতভাবে বস্তুজগত বলতে যাকে মানি, সেটা এখন পর্যন্তও আমাদের ব্যক্তিক উপাত্তগুলোর (subjective data) সেরা ব্যাখ্যাটা প্রদান করে। তফাৎটা এটাই যে এই বস্তুজগতটা সেই ব্যক্তিক উপাত্তের কাছে অপ্রধান। ব্যক্তিক উপাত্তটাই এখানে প্রধান, ব্যাখ্যা করার জন্যে যাকে ব্যবহার করা অপরিহার্য। অর্থাৎ যাকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হচ্ছে সে নিজে নিশ্চয়ই ব্যাখ্যাটার চেয়ে মুখ্য বিষয়। অধিকন্তু: বস্তুজগত প্রকল্পটার (hypothesis) অবস্থান ঠিক এটাই যে সে একটা প্রকল্প, একটা ব্যাখ্যা কেবল। আসলে আধ্যাত্ম্য ও ভৌত বলে দুই ধরনের ভিন্ন এমন কোনো জিনিস নেই। এখানে আছে কেবল দুই ধরনের আধ্যাত্মিক জিনিস: ব্যক্তিক অভিজ্ঞতার উপাত্ত ও সেটাকে ব্যাখ্যাকারী প্রকল্পসকল।

ব্যক্তিক অভিজ্ঞতার আকর্ষণীয় ব্যাপারটি হলো এটা মূলে প্রোথিত (grounded)। ব্যক্তিক অভিজ্ঞতাকে কল্পনা করা যায় উপাত্ত হিসেবে, এমন উপাত্ত যে ব্যাখ্যা হবার জন্যে অপেক্ষা করছে। এক অর্থে কেবল ব্যক্তিকই পরিষ্কার এবং দ্ব্যর্থহীন ধারণা। এই ধারণা যে - “যাই ঘটে থাকুক না কেনো, এতে কোনো সন্দেহ নেই যে আমি সত্যি সত্যি রুমটাতে উষ্ণতা ‘অনুভব’ করেছি”। কেউ আমাদের ব্যক্তিক অভিজ্ঞতা নিয়ে তর্ক করতে পারে না। তর্ক করা সম্ভব কেবল এর ব্যাখ্যা নিয়ে, এবং আমাদের অন্যান্য অভিজ্ঞতাগুলোর সাথে এর সম্পর্কটা নিয়ে। ব্যক্তিক অভিজ্ঞতাকে যতোই আমরা নিরীক্ষণ করি, ততোই তাকে আরো অব্যাখেয় মনে হতে থাকে, আরো বেশি ব্যক্তিক মনে হতে থাকে। যতো বেশি ব্যক্তিক অভিজ্ঞতাকে আমরা বোঝার চেষ্টা করি, ততোই সে আরো বেশি বেশি করে উপাত্ত হিসেবে পরিদৃষ্ট হয়। এ সংক্রান্ত নৈর্ব্যক্তিক ও বস্তুগত ধারণাটা হতে থাকে অস্পষ্ট ও জটিল। পুরাতন সেই ধাঁধাটির কথা মনে করুন, যেখানে এক লোক যেটাকে অন্যেরা সবুজ দেখে সেটাকে দেখে অন্যদের লাল রঙ হিসেবে এবং একইভাবে অন্যদের লাল রঙটাকে দেখে সবুজ রঙ হিসেবে। কিন্তু লোকটা এই তারতম্যটা কখনোই উপলব্ধি করতে পারে না বা পারবে না কেননা সে “লাল” আর “সবুজ” শব্দ দুটাও ব্যবহার করে উল্টোভাবেই। এই আজগুবি গল্পটা এটাই আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে আসলে দেখায় যে ভিন্ন ভিন্ন মানুষের ব্যক্তিক অভিজ্ঞতা তুলনা করা যায় না। যে অভিজ্ঞতাটিকে আমি বলি লাল রঙ দেখা আর যে অভিজ্ঞতাটিকে আপনি বলেন লাল রঙ দেখা, এরা পরস্পর খুব জটিল উপায়ে সম্পর্কিত, যার সাথে, উদাহরণস্বরূপ, রয়েছে আলো, তার প্রতিফলন, দৃষ্টি অবস্থান কিংবা এমন কি রঙিন চশমার সম্পর্ক। আমাদের ভিন্ন এই গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতাটিকে নিদর্েশ করার জন্যে আমরা একই শব্দ ব্যবহার করতে শিখেছি। কিন্তু তারপরেও নৈর্ব্যক্তিক এখানে শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিকের কাছে অবনত হতে বাধ্য হয়েছে।

নৈর্ব্যক্তিক দৃষ্টিকোণের আকর্ষণীয় বিষয়টি হলো এটা বহু ব্যক্তির সাধারণ (common) ব্যাপারকে নির্দেশ করে। একটা পরীক্ষার ফলাফলকে আমরা নৈর্ব্যক্তিকভাবে সত্য বলে থাকি যদি আমরা পূর্বাভাস করতে পারি যে আপনি এবং আমি উভয়ই সেই পরীক্ষাটি করলে একই ফলাফল পাবো। কিন্তু এটা কীভাবে যুক্তিসম্মত হতে পারে? কীভাবে আমরা বুঝবো যে একটা পরীক্ষার একই ফলাফল পাচ্ছি যেখানে আপনি দেখেন কেবল আপনার চোখ দিয়ে আর আমি দেখি আমার চোখে? সত্যিকার অর্থে “একই” পরীক্ষাই বা আমরা কীভাবে সাধন করতে পারি? এই সবই সমস্যাসঙ্কুল প্রশ্ন। এর জন্যে প্রয়োজন “একই” এবং “ভিন্ন”কে নির্দেশ করার সবিস্তার তত্ত্ব। বিশেষত, এর জন্যে আমাদের একজনের অনুভবের সাথে অন্যেরটাকে মেলানোর বা কাছাকাছি করার (calibration) প্রয়োজন। এটা কেবল আমাদের দুইজনের একই বিষয়কে একই নাম দিয়ে নির্দেশ করার বিষয় না। লাল/সবুজের ধাঁধাটা থেকে আমরা ইতোমধ্যে জেনে গেছি যে সেটা একটা নির্বুদ্ধিতা হতে পারে। অভিজ্ঞতার কথা যখন আমরা বলি তখন ব্যক্তি নির্বিশেষে একই বস্তু নির্দেশ করার কোনো সন্তোষজনক উপায়ই আমাদের নেই। মৌলিক ও চূড়ান্ত উপাত্ত হিসেবে ব্যক্তিক অভিজ্ঞতার অবস্থানটা পরিষ্কার, কিন্তু কীভাবে সেটাকে একজনেরটা আরেকজনের সাথে নৈর্ব্যক্তিকভাবে তুলনা করা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। এই ধারণাটাকে মোটামুটি (approximately) কাজ চলার মতো অবস্থায় আনা যেতে হয়তো পারে, কিন্তু সেই কাজ চলার মতো ধারণাটাকেও ব্যক্তিক অভিজ্ঞতার প্রাধান্যের (primacy) অনুকুল অবস্থান থেকেই দেখা দরকার।

এই জায়গাটাতে এসে আপনি হয়তো ভাবছেন যে আমি কেনো এই দার্শনিক বিষয়টাকে নিয়ে এতো প্যাঁচাচ্ছি। এটা করছি এ কারণেই যে বিষয়টা বার বার আমাদের কাছে এতো এতো করে ফিরে এসেছে যে সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্ণিত করা ছাড়া নৈর্ব্যক্তিক দৃষ্টিকোণের ভাবনাগুলোর চোরাগর্তগুলোকে (pitfall) এড়িয়ে চলা আমাদের পক্ষে দুষ্কর।এই দুর্ঘটনা এআই গবেষকদের ভাগ্যে পূর্বে বহুবার ঘটেছে। ফলে সমাপ্তির পূর্বে আসুন চেষ্টা করি এআই গবেষণায় ব্যক্তিক দৃষ্টিকোণের ফলাফল কী হতে পারে সে সম্পর্কে যথাসম্ভব একটা পরিষ্কার বক্তব্য প্রদান করতে। জ্ঞান ও মনের ব্যক্তিক দৃষ্টিকোণ সঞ্জাত ধারণা গঠনের নিমিত্তে কোন বিষয়গুলো কাঙ্ক্ষিত আর কোন বিষয়গুলোকে আমাদের বাদ দেয়া প্রয়োজন?

সকল জ্ঞানকে প্রকাশ করা প্রয়োজন এমন জিনিসের মাধ্যমে যা মূলত ব্যক্তিক, যা অভিজ্ঞতা (experience), অনুভূতি (sensation) ও ক্রিয়ার (action) উপাত্ত (data) দ্বারা প্রকাশিত। ফলে আমরা এখানে সকল মানব জ্ঞানকে ব্যক্তিক প্রকাশে উপস্থাপন করার উপায় খুঁজচ্ছি। এই ধারণাটা সংযোগবাদিতার (associationism) ধারণার সাথে জড়িত ও প্রায়শই একে খাটো চোখে দেখা হয়। হয়তো সকল মানব জ্ঞানকে ব্যক্তিক প্রকাশে উপস্থাপন পরিপূর্ণভাবে করা অসম্ভব, কিন্তু এটার চেষ্টাটা না করার কারণ নেই। আর নাল প্রকল্পের (null hypothesis) মতো একে মিথ্যা বা ভুল প্রমাণ করাটাও কঠিন। জ্ঞানকে ব্যক্তিকভাবে প্রকাশের সাথে সাথে আমাদের ব্যক্তিক জ্ঞান নিয়ে কাজ করার উপায়গুলোও জানা প্রয়োজন। ব্যক্তিক জ্ঞান নিয়ে কীভাবে যুক্তি প্রয়োগ করা যায় যাতে করে আরো আরো জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব হয়? কীভাবে ব্যক্তিক জ্ঞানকে পরীক্ষা করা সম্ভব, যাচাই করা সম্ভব, এর থেকে শেখা সম্ভব? কীভাবে সত্তার লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যকেও ব্যক্তিক প্রকাশে উপস্থাপন করা সম্ভব?


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

বুঝলাম। জ্ঞানের প্রকাশের পদ্ধতিটা নিয়ে দ্বিমত করছিনা। কিন্তু ব্যক্তিক জ্ঞান-এর ঘাটতিগুলো ঢাকবেন কিভাবে ! আমার মনে হয় এখানে 'ব্যক্তিক জ্ঞান' কে যুক্তির মাধ্যম হিসেবে ব্যাবহার না করে বরং মানবীয় করার চেষ্টা করা যেতে পারে আগে। তাহলে সমস্ত জ্ঞানের প্রয়োগ বাড়বে, যাচাই শুদ্ধ হবে। তবে সত্তার লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যকেও ব্যক্তিক প্রকাশে উপস্থাপন করা অসম্ভব মনে করি না।

Jawad

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

কৌস্তুভ এর ছবি

আমার ধারণা ছিল যে অনুবাদ করতে গেলে কীওয়ার্ডগুলোর ইংরেজিটা পাশে পাশে দিয়ে রাখলেই বোধহয় সবচেয়ে ভালো। কিন্তু আপনার লেখায় দেখলাম তেমন করাতে পড়তে গিয়ে বারবার হোঁচট খাচ্ছি। একটা ভুল ভাংল, এজন্য ধন্যবাদ।

তবে অনুবাদ যে সহজপাঠ্য হয়নি, সে বিষয়ে বোধহয় আপনাকে নতুন করে বলার কিছু নেই - জার্গনবহুল খটমট স্টাইলই যে আপনি পছন্দ করেন সে তো জানিই।

mental > মনোজগত না হয়ে আধ্যাত্ম্য করাটা ঠিক হল কি?

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

এই সিরিজের অনুবাদগুলো অধিকাংশক্ষেত্রেই নিজে এখন ও পরে পড়ার জন্য। অনুবাদ করতে গিয়ে বহুবার পড়া এই লেখাটার প্রতিটা শব্দ আলাদা আলাদা করে চিন্তা করতে পেরেছি, যেখান থেকে আরো গভীর ধারণা পেয়েছি। অন্যের সাথে শেয়ার করার উদ্দেশ্যটাই মূল যদি হতো তাহলে অনুবাদ করতে আমি যেতাম না। কারণ আমার অনুবাদের হাত বেজায় খারাপ। শুভাশীষ দাশ অনুবাদের একটা গুরু কাজ দিয়েছিলেন, গত এক বছর সেটা করার চেষ্টা করে সেদিন বুঝলাম এটা আমাকে দিয়ে হবে না। এখন উনি আশা করি বুঝবেন কেনো হবে না। হাসি

খটমটে লেখা আমি পছন্দ করি। কিন্তু এই লেখার চিন্তাগুলোই যেখানে কঠিন, সেখানে জার্গন হচ্ছে কফিনে পেরেক ঠোকার মতো। জার্গন যেগুলো ব্যাখ্যার দাবি রাখে সেগুলো যদি জানিয়ে দিতেন সুবিধা হতো।

কষ্ট করে পড়ার জন্যে আর অকপট ইনপুট দেয়ার জন্যে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। ধারণাগুলো নিয়ে যদি আলোচনা করা যায় সে হবে বাড়তি পাওনা। কষ্ট করে পড়লেন, বিষয় নিয়ে কিছু বলবেন না?

পঞ্চক এর ছবি

ইংরেজীটা পড়তে বেশি আরাম, একতা প্রস্তাব করতে পারি, ভাবানুবাদ মনে হয় ভাল হত বেশি, মূলটার বাক্য গঠন ইত্যাদি ঠিক রাখতে গিয়ে মনে হলো সাবলীলতা হারিয়েছে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।