ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রমাণঃ মোহাম্মদের মানসিক নিরাপত্তা ও নৈতিক জিঘাংসা

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি
লিখেছেন ধ্রুব বর্ণন (তারিখ: রবি, ০৫/০৬/২০১১ - ৮:৫০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমি মানুষের বিশ্বাস নিয়ে আগ্রহবোধ করি। এ কারণে মানুষের বিশ্বাস নিয়ে আমি তাদের সাথে আলোচনা করি। আমার ল্যাবে একজন ইরানি ছাত্র এসেছে। নাম মোহাম্মদ। ঠিক আমার পিছে বসে, উল্টোদিকে ফিরে। সে অতিরিক্তরকমের ফিলোসফিক্যাল এবং অতিরিক্তরকম বাচাল। একবার শুরু করলে আর থামতে চায় না। প্রায়ই নৈর্ব্যক্তিক বাস্তবতা/অবজেক্টিভ রিয়েলিটি আর ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে চায়। আর যেকোন কথা থেকে ঘুরেফিরে নৈতিকতা, নৈর্ব্যক্তিক বাস্তবতা আর বিজ্ঞানের দর্শনে চলে যেতে পারে সে। একবার বাসা ভাড়া করা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে চলে গিয়েছিলো নন-টিউরিং কম্পিউটেবল ফাংশনে। তাকে জায়নামাজ ভাঁজ করতে দেখেছি। আবার বিয়ার পার্টিতে বিয়ার খেতেও দেখেছি। এখন আবার খারাপ সুগারের উছিলায় বিয়ার খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। বিশ্বাস নিয়ে সে দোদুল্যমান। আজ অজ্ঞেয়বাদী আস্তিক তো কাল অজ্ঞেয়বাদী নাস্তিক। শেষবার সে অজ্ঞেয়বাদী আস্তিকে স্থিত হয়েছে এবং বিশ্বাসের একটা সুসংবদ্ধ গাণিতিক সিস্টেম সে প্রস্তাব করেছে। এটার একটা ভালো দিক আর একটা খারাপ দিক। ভালোদিক এই যে সে স্বীকার করেছে যে সব শেষে এটা একটা বিশ্বাসই কেবল। খারাপ দিকটা এই যে এই সুসংবদ্ধ সিস্টেমে তার নৈতিকভাবে খুন করার সুযোগ রয়েছে।

শুরুটা এমন ছিলো - সে প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছিলো যে ঈশ্বরের অস্তিত্বের একটা গাণিতিক প্রমাণ আছে। সেটা মহান গাণিতিক গোডেলের করা প্রমাণ। সেই প্রমাণ খুঁজে পাবার পর সে বোধ করলো যে সে মহার্ঘ্যটা পেয়ে গেছে। আর কোনও সংশয় নেই। ঈশ্বর আর বিশ্বাসের বিষয় নয়। এটা নিতান্তই একটা বিশ্বাস, এমন কথা শুনে শুনে আর চলতে হবে না। এটা এখন গাণিতিকভাবে প্রমাণিত সত্য এবং এই প্রমাণ এখনও কেউ ভুল প্রমাণ করতে পারে নি!

আমি বাধ সাধলাম। তাকে গণিতের জগত আর পর্যবেক্ষণগত জগতের পার্থক্য বোঝালাম। পর্যবেক্ষণগত জগতের নিজস্ব স্বরূপ আছে। সেটা পর্যবেক্ষকের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে না। কিন্তু গাণিতিক জগত অ্যাক্সিওমেটিক। অর্থাৎ কিছু অনুমানকে স্বতঃসিদ্ধ ধরে নিয়ে এগোয় সে। গাণিতিক জগতের স্বরূপ নির্ভর করে গৃহীত অনুমানগুলোর উপর। এক সেট আদি অনুমানের উপর ভিত্তি করে যদি ত্রিভুজের তিনকোণের সমষ্টি ১৮০ ডিগ্রি প্রমাণ করা যায়, ভিন্ন অনুমান ধরে এগুলে অন্যথাও প্রমাণ করা সম্ভব। গাণিতিক জগত পর্যবেক্ষণের জগতের জন্যে একটা ভালো মডেল তখনই হয়, যখন গাণিতিক জগতের ধরে নেয়া অনুমানগুলো পর্যবেক্ষণের জগতের জন্য যথার্থ হয়। যদি সেটা না হয়, তখন ওই গাণিতিক জগতের সূত্রগুলো পর্যবেক্ষণের জগতের জন্য সত্য নয়। প্রায় সকল গাণিতিক জগত কাল্পনিক।

ফলে তাকে সাহায্য করলাম এটা বুঝতে যে, একটা গাণিতিক প্রমাণ আমাদের পর্যবেক্ষণগত বাস্তবতার ব্যাপারে কোনও সত্য তখনই উদ্ঘাটন করতে পারবে, যখন গাণিতিক প্রমাণটার আদি অনুমানগুলোকে পর্যবেক্ষণ জগতের জন্য যথার্থ দেখানো সম্ভব হবে। ফলে গোডেলের প্রমাণটা সত্য হতে হলে গোডেলের অনুমানগুলোও আমাদের পর্যবেক্ষণগত বাস্তবতার জগতে যথার্থ বা সত্য হতে হবে। মোহাম্মদ সেদিন মাথা চুলকে বিদায় হয়েছে। চিন্তা করার খোরাক পেয়েছে যথেষ্ট। তাকে এখন উদ্ধার করে দেখতে হবে যে গোডেলের প্রমাণের অনুমানগুলো আমাদের পর্যবেক্ষণের জগতের সাপেক্ষে কতটা যথার্থ বা প্রামাণ্য।

হপ্তাখানিক সময় নিলো। এরপর একদিন ল্যাবে আবার ঝড় তুললো। শ্রোতা গ্যাবর, জেম্স আর আমি। তার দাবী, সে বিশ্বাসের একটি সুসংবদ্ধ গাণিতিক সিস্টেম প্রস্তাব করছে। সেটা কী? প্রথমত এটা একটি অনুমান দিয়ে শুরু হয়। সেটা গোডেলের প্রমাণের প্রথম অনুমানটা। মোহাম্মদের ভাষায় অনুমানটা হলো, আমাদের পর্যবেক্ষণগত বাস্তবতার জগতসহ সকল বিদ্যমান বাস্তবতার জগতে অবজেক্টিভ মোরালিটি বা নৈর্ব্যক্তিক নৈতিকতা বিরাজ করে, যেটা দ্বারা প্রতিটি ঘটনা ভালো কি ভালো নয় নির্ধারণ করা সম্ভব। বা সংক্ষেপে, যা কিছু ভালো, তার নিশ্চয়ই অস্তিত্ব আছে, এবং সেই ভালোর সাপেক্ষে বাকি সব জিনিসের ভালো খারাপ নির্ধারণ সম্ভব। বাহ্! সাথে তার (এবং গোডেলের) ঈশ্বরের সংজ্ঞা হলো - কেবল সকল ভালো কিছুতে বা সকল নৈতিক কিছুতে যে সমন্বিত। এর সাথে আরও কিছু খুঁটিনাটি অনুমান যোগ করলে এবং অংক কষলে ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ হয়ে যায়। বোঝা গেলো যে তার সুসংবদ্ধ সিস্টেমটা হচ্ছে গোডেলের প্রমাণটাই। কিন্তু এটা কি সে বাস্তবতা সম্পর্কে সত্যভাষণ হিসেবে উপস্থাপন করছে? নাকি একটা অ্যাক্সিওমেটিক গণিত হিসেবে উপস্থাপন করছে?

“তোমার সিস্টেমের আদি অনুমানটা কি বিশ্বাস, নাকি এটা পর্যবেক্ষণগত বাস্তবতায় প্রমাণযোগ্য?” আমি জিজ্ঞেস করলাম।

“এটা প্রমাণযোগ্য না।” সে বলল। আমি বুঝলাম, এট তার বিশ্বাস। তাহলে সে স্বীকার করলো যে এটা প্রথমত এবং মূলত প্রমাণের বিষয় নয়, বিশ্বাসের বিষয়।

তারপর আমি জানতে চাইলাম, “কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ, সেটা কি আমাদের পক্ষে বের করা সম্ভব?”

সততার সাথে উত্তর করলো, “সম্ভবত না।”

তাহলে তার প্রস্তাব করার মতো আর কী থাকলো? সে কেবল প্রস্তাব করলো - এটা বিশ্বাস করতে যে যা কিছু ভালো, তা নিশ্চয়ই আছে। তার উপর যদি সংজ্ঞায়িত করি যে ঈশ্বর হলো কেবল সকল ভালো কিছুতে সমন্বিত সত্তা, তাহলে প্রমাণ করা যাবে যে ঈশ্বরও আছে। কিন্তু নিশ্চিত করে বলার উপায় নেই, যা কিছু ভালোর সেই ভালোগুলো আসলে কী কী। মানে অন্ধকার রুমে কিছু একটা আছে বিশ্বাস করতে হবে, কিন্তু সেই কিছুটা ঠিক কী, সেটা জানা নেই। তাহলে বিশ্বাস না করলেই বা কী? এটাকেই বলে অজ্ঞেয়বাদী আস্তিক। আর সবচেয়ে সংকটজনক ব্যাপার হলো যে আদি অনুমান, যেটার উপর গাণিতিক প্রমাণটা দাঁড়িয়ে আছে, সেটা মোটেও প্রমাণযোগ্য নয়।

আমি আমার ধারণাটা বললাম, “আমি মনে করি, তোমার অনুমানের ঠিক উল্টোটা সত্য। যা কিছু ভালো তা অবশ্যই অস্তিত্বশীল, এমনটা সত্য নয়। কোনটা ভালো, কোনটা খারাপ, সেই বিচারটাই ব্যক্তিক বা সাব্জেক্টিভ। মানুষ আছে বলেই ভালো খারাপের বিচার আছে। মানুষ না থাকলে জগতে ভালো খারাপের ধারণার কোনও অস্তিত্ব থাকতো না। এটা মানুষের আরোপিত ধারণা বা কৃষ্টি। কোন কষ্টি পাথরে খোদাই করে লেখা নেই কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ। ভালো খারাপের বোধ মানুষ সাপেক্ষ।”

জেম্স মাথা নাড়লো। “হুমম। যুক্তি আছে। মোহাম্মদের অনুমানটাতো কেবলই বিশ্বাসের বিষয়। সেটার উপর নির্ভর করে একটা সুসংবদ্ধ গাণিতিক সিস্টেম হয়তো তৈরি করা যায়, কিন্তু সেই বিশ্বাসটা আরেকজন কেনো পোষণ করবে, সেটার কোন বালাই নাই। অন্যকে কনভিন্স করার কোনও যুক্তিসঙ্গত উপায় নেই।”

আমি মোহাম্মদকে বললাম, “তাহলে বলো, মোহাম্মদ। তুমি তো বললেই তোমার সুসংবদ্ধ গাণিতিক সিস্টেমের আদি অনুমানটা একটা বিশ্বাস ছাড়া আর কিছুই নয়। তাহলে আমি যে তোমার অনুমানটার ঠিক উল্টোটা সত্য বলে মনে করি, সেই অনুমান সম্পর্কে তুমি কী বলবে?”

“ওয়েল। এরকম বিশ্বাস পোষণ করা মানুষের ব্যাপারে আমি অত্যন্ত সতর্ক থাকবো। তোমাকে আমি ভয় পাবো।”, মোহাম্মদ বলে।

“আমাকে তুমি ভয় পাবে!” আমি হেসে ফেললাম, “তুমি আমাকে ভয় পেলে আমার চলবে। আমি তাতে তেমন সমস্যা দেখি না। তুমি আমাকে ভয় পেলে কী হবে?”

“তখন সে তোমাকে খুন করে ফেলবে-”, গ্যাবর ঠাট্টাচ্ছলে বলতে নিলো।

“রাইট!” মোহাম্মদ সায় দিলো।

আমি একটু চমকালাম। জেমস সবসময়ের মতই প্রায় নির্বিকার তাকিয়ে থাকলো, ঠোঁটের কোণে খালি একটা হাসি ঝুললো তার। গ্যাবরের চোয়াল ঝুলে পড়লো প্রায়। তোতলাতে তোতলাতে বললো, “হোয়াট?!”

“হ্যাঁ! একটা বাঘ দেখলে তুমি কী করবে? তুমি জানো যে বাঘটা তোমাকে মেরে ফেলবে। তখন তোমার ঠিক কাজটা হলো গিয়ে বাঘটাকে খতম করে ফেলা।” বোঝাতে পেরেছে এমন একটা হাসি হাসলো মোহাম্মদ।

বাঘ মারার শিশুসুলভ গাণিতিক সিস্টেম! বাঘ দেখলেই মেরে ফেলতে হয়, এমন কথা সভ্য সমাজে বহুদিন শুনিনি। বাচ্চা ছেলেপেলে এসব বলে। আর বলে জয়নাল হাজারী। কিন্তু সেটার ইম্প্লিকেশান সুবিধের নয়। এবং গোডেলের গণিতকে অ্যাবিউস করে এই সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব। কারণ, মোহাম্মদের সিস্টেমের আদি অনুমানটা বাই নেসেসিটি তার সিস্টেমে নৈতিক। ফলে সেটা যে মানবে না, সে অনৈতিক। এটাতে আসার জন্যে গোডেলের প্রমাণের আরেকটি অনুমান ব্যবহার করা গেছে (যা নৈতিক, তার উল্টোটা নৈতিক নয়), সেই একই অনুমান, যেটার উপর ভিত্তি করে ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করা গেছে। আর সবশেষে - আমি যেহেতু অনৈতিক, আমার নাই হয়ে যাওয়া হলো নৈতিক। মোটাদাগে এই হলো নৈতিক জিঘাংসা।

আমি সেই যাত্রা তাকে কেবল এটাই বললাম যে, “তুমি হয়তো ভাবছো যে নৈর্ব্যক্তিক নৈতিকতায় বিশ্বাস না করলে একটা মানুষের পক্ষে ক্ষতিকর যেকোনও কিছু করে ফেলা সম্ভব। কিন্তু এটা ঠিক না। তুমি নৈর্ব্যক্তিক নৈতিকতায় বিশ্বাস করেও আমাকে মেরে ফেলার ভাবনায় উদ্যত হচ্ছো, আর আমি নৈর্ব্যক্তিক কোনও প্রকার নৈতিকতার অস্তিত্বে বিশ্বাস না করার পরও কিন্তু তোমাকে বা পৃথিবীর কাউকেই মেরে ফেলার কোনও উদ্দেশ্য বা প্রণোদনা পোষণ করি না।”

গাণিতিকভাবে সুসংবদ্ধ বিশ্বাসের সিস্টেমে কীভাবে খুন করার কথা বলতে পারাটা একটা সহজ ব্যাপার হয়ে যায় সেটা দেখলাম। আমি তেমন বেশি বিচলিত হই নি। আমি মনে করি, মোহাম্মদ নিজের পথ খোঁজার পালায় আছে। নানান চিন্তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সেই তালে একটা সুসংবদ্ধ সিস্টেমে এসে আপাতত স্থিত আছে, যেটা - তার ভাষায় - তাকে মানসিকভাবে নিরাপদ ও ভারসাম্যপূর্ণ রাখছে। যুক্তিসম্পন্ন এবং সঙ্গতিপূর্ণ রাখছে। একটা সঙ্গতিপূর্ণ জিঘাংসু ধারণা থাকা মোটেও অবাককর নয়। এমন বিশ্বাসের সিস্টেম থাকতেই পারে যেটা যুক্তি ও সঙ্গতিতে পূর্ণ, এবং যেটার ভেতরে খুন করবার প্ররোচনা প্রোথিত। অসীম সংখ্যক ভিন্ন ভিন্ন সুসংবদ্ধ গাণিতিক সিস্টেম থাকতে পারে, যারা একটা আরেকটার সাথে সংঘাতপূর্ণ। কিন্তু এদের সকলটাই আদি কিছু অনুমান দিয়ে শুরু হয়, যেগুলো প্রমাণযোগ্য নয়, ফলে বাস্তবে মানতে গেলে অন্ধবিশ্বাস হতে হয় সেগুলোকে।

সুসংবদ্ধ অন্ধবিশ্বাসের সিস্টেম কেবল আমাদের এই মোহাম্মদকেই নয়, দুনিয়াজোড়া এমন হাজার হাজার মোহাম্মদকে যুগযুগ ধরে মানসিক নিরাপত্তা এবং নৈতিক জিঘাংসা দুই-ই দিয়েছে। এগারো বছর আগে ঈশ্বরে বিশ্বাস না থাকার কারণে আনরেজিস্টার্ড মাদ্রাসার ছাত্র আব্দুল আজিজের হত্যাযোগ্য মুরতাদদের লিস্টে নাম লিখিয়েছিলাম। এবার গণিতে উচ্চশিক্ষারত মোহাম্মদের ঈশ্বরের অস্তিত্বের গাণিতিক প্রমাণের প্রাথমিক অনুমানে ইমান আনিনি দেখে গাণিতিকভাবে হত্যাযোগ্য পশুর লিস্টে নাম লিখালাম। ল্যাবে ঘাড়ের পিছে আগামি বহু বছর বসে থাকবে এই মিঃ মোহাম্মদ। এখানে আমার তেমন কিছুই করার নেই।

কিছু করার আসলে প্রয়োজনও কি আছে? ভয়ে হিস্টিরিয়াগ্রস্তবোধ করলে হয়তো কিছু করার প্রয়োজন পড়তো। জেল পুলিশের চিন্তা-ভাবনা মাথায় আসতো, দু'জন সাক্ষী যখন আছেই। কিন্তু এটা কোনও ঠাণ্ডা মাথার সমাধান মনে হচ্ছে না। এটা হচ্ছে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শান্তির জন্যে যুদ্ধের মতো। আমি ওর শুভবুদ্ধির উপরই ভরসা করবো। বা তাকে সেটায় সাহায্য করতে পারি। আর শুভবুদ্ধি মানে কোনও নৈতিক উপলব্ধি বোঝাচ্ছি না। একেবারেই দুনিয়াদারি দৃষ্টিভঙ্গির কথা বোঝাতে চাচ্ছি। সে যদি উপলব্ধি করে, একটা খুন - তা সে যে কারণেই হোক - করলে তার এই জীবনটা যাপনের মতো সুখকর কিছু আর কোনোভাবেই থাকবে না, তখন খুন করার ইচ্ছা বা খুন করার ইচ্ছার কথা প্রকাশ করার ইচ্ছা তার আর থাকবে না। সেই দুনিয়াদারি উপলব্ধির সূচনা ঠিক কীভাবে হবে আমি বলতে পারি না, তবে এটা জানি যে এর জন্যে নৈতিকতা লাগে না। বিশেষ করে নৈতিকতা যেখানে সাক্ষাৎ জিঘাংসার প্ররোচনা দেয়ারও ক্ষমতা রাখে। শুনেছি কারাগারে দুনিদারের সংখ্যা সবচেয়ে কম। দুনিয়াদারেরা আসল দুনিয়ায় ব্যস্ত। কারাগারে থাকা তাদের পোষায় না। আল্লাহ নৈতিক মানুষদের দুনিয়াদারি হবার হেদায়েত দিক। পৃথিবীতে কয়েকটা খুন কম হোক।


মন্তব্য

দ্রোহী এর ছবি

মুসলমানের পোলা হয়ে এডি কী কন?

দেখেন আল্লাহ কী বলেছেন:

إِذۡ يُوحِى رَبُّكَ إِلَى ٱلۡمَلَـٰٓٮِٕكَةِ أَنِّى مَعَكُمۡ فَثَبِّتُواْ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ‌ۚ سَأُلۡقِى فِى قُلُوبِ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ ٱلرُّعۡبَ فَٱضۡرِبُواْ فَوۡقَ ٱلۡأَعۡنَاقِ وَٱضۡرِبُواْ مِنۡہُمۡ ڪُلَّ بَنَانٍ۬ (١٢) ذَٲلِكَ بِأَنَّهُمۡ شَآقُّواْ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُ ۥ‌ۚ وَمَن يُشَاقِقِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُ ۥ فَإِنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلۡعِقَابِ (١٣)
(সুরা: আল- আনফাল আয়াত: ১২-১৩)

আংরেজি অনুবাদ:

[Remember] when your Lord inspired to the angels, "I am with you, so strengthen those who have believed. I will cast terror into the hearts of those who disbelieved, so strike [them] upon the necks and strike from them every fingertip."(12) That is because they opposed Allah and His Messenger. And whoever opposes Allah and His Messenger - indeed, Allah is severe in penalty. (13)

সুতারাং, চটজলদি ঈমান আনেন। নাইলে কইলাম ঘাড় থেকে কল্লা নামাইয়া ফালাইবো লোকজন।

সূত্র

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

মোহাম্মদ অবশ্য মুসলমানের ধর্মকে রিজেক্ট করেছে বলে অন্তত মুখে বলেছে। করতেই হবে। গোডেলের ঈশ্বর আর আল্লাহর মধ্যে পার্থক্য আছে। গোডেলের ঈশ্বর এক সেট অবজেক্টিভ মোরালিটির সাপেক্ষে ডিফাইন্ড। অন্যদিকে আল্লাহ কারও মুখাপেক্ষী নয়। আল্লাহকে একটা অবজেক্টিভ মোরালিটির সাপেক্ষে ডিফাইন করলে আল্লাহকে সেই অবজেক্টিভ মোরালিটির দাস বানানো হয়। সেটা শিরক।

আরেকটা যেটা সমস্যা - গোডেলের ঈশ্বর স্রষ্টা-ঈশ্বর হতে পারেন না। কারণ তিনি যদি ব্রহ্মাণ্ড তৈরি করেন, তাহলে জগতের যত "অনৈতিক" ঘটনা (নৈতিকতার সংজ্ঞা সাপেক্ষে), সেগুলোর উৎপত্তিও তিনিই ঘটিয়েছেন। কিন্তু গোডেলের সংজ্ঞায়িত ঈশ্বর "কেবল সকল ভালো কিছুতে বা সকল নৈতিক কিছুতে সমন্বিত।" ফলে ওনার হাতে খারাপ কিছু ঘটতে পারে না। ফলে উনি সকল ব্রহ্মাণ্ড তৈরি করতে পারেন না। অন্য দিকে আল্লাহ হলো স্রষ্টা-ঈশ্বর।

প্রচলিত ইসলাম একটা বিশাল টেক্সটের সমারোহ। এতে যদি খুন করার বাণী পান, আদর করার বাণীও পাবেন। বহু সংঘর্ষে পূর্ণ। সেরকম সুসংবদ্ধ সিস্টেম হিসেবে দেখা কঠিন। সেটা থেকে নৈতিক খুনের প্রণোদনা পাওয়ার জন্যে একজন মুসলমান ঠিক গণিত ব্যবহার করে না। অনেক বর্ণনাসমৃদ্ধ ডগমা থেকে সিলেক্টিভলি বাছাই করে। অন্যদিকে আমাদের এই মোহাম্মদ কিন্তু অত্যন্ত দক্ষতার সাথে প্রায় মিনিমাল অ্যাসাম্পশন ও গণিত ব্যবহার করে খুন করার লৌহকঠিন যুক্তি খুঁজে পেয়েছে। খুনেটে মুসলমানকে ইসলামের টেক্সটের আদর করার বাণী দেখিয়ে ফেরানোর উপায় আছে বলে মনে করি। অন্তত সে চেষ্টার সুযোগ আছে। কিন্তু এই মোহাম্মদকে ফেরাতে হলে তার আদি অনুমানকে পাল্টাতে হবে। অবজেক্টিভ মোরালিটিতে বিশ্বাস থেকে অবজেক্টিভ মোরালিটিতে অবিশ্বাসীকে খুন করার সুসংবদ্ধ যুক্তির জন্যে মাত্র মিনিমাল কিছু গণিত কষতে হয়েছে তাকে।

ফলে এই মোহাম্মদের সিস্টেম প্রচলিত ইসলামের চেয়ে অনেক বেশি সুসংবদ্ধ। মিনিমাল বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে তার সিস্টেম ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারে। তার সিস্টেম গাণিতিক। তার সিস্টেমে খুন করার জন্যও মিনিমাল অ্যাসাম্পশন প্রয়োজন।

আল্লাহ চৌদ্দশ বছর আগে লেখালেখি ছেড়ে দিয়েছেন দেখে। না হলে ওনার নেক্সট পুস্তকটার প্রকাশক-পয়গম্বর হিসেবে তিনি নির্ঘাত আমাদের এই মোহাম্মদকে সিলেক্ট করতেন।

কৌস্তুভ এর ছবি

চলুক

বিশ্বাস তো শুধুই একটা বিশ্বাস নয়, একটা পুরো সিস্টেম। তার সঙ্গে অনেক অনাবশ্যক মালপত্র থাকে। প্রচলিত সিস্টেমগুলোয় তো মালপত্রগুলোই মুখ্য হয়ে পড়ে।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

ভালো কথা বলেছেন।

ফাহিম হাসান এর ছবি

আপনার চিন্তাভাবনা এবং তার প্রকাশ দুটোই বেশ গোছানো।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

জেনে ভালো লাগলো। হাসি

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

মন্তব্য লাফাং। আনবিলিভেবল!

কবি-মৃত্যুময় এর ছবি

ভালো খারাপ এটা আসলেই আপেক্ষিক/সাবজেক্টিভ বিষয়। আপনি 'সভ্য সমাজ' শব্দটি ব্যবহার করলেন(কোট করতে পারলাম না জাভাস্ক্রিপ্টের কারণে), সভ্য/অসভ্যও তেমনি আপেক্ষিক/সাবজেক্টিভ বিষয় নয় কি?

ঈশ্বর সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাসের বিষয়! আমার মনে হয় না কোনদিন ঈশ্বরের অস্তিত্ব বস্তুগতভাবে প্রমাণ করা যাবে। এটা ব্যক্তিগত বিশ্বাসের বিষয়। এই বিশ্বাসটা অন্য কারো জন্য ক্ষতির কারণ না হওয়া পর্যন্ত আপাত সমস্যা নেই। কিন্তু একজনের ধর্মপালন মাঝে মাঝে ঠিকই অন্যের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, এমনটা রোধ করা দরকার। ধর্মের অস্তিত্ব অবশ্য সংকটাপন্ন, কারণ এর প্রাগৈতিহাসিক রূপটি এই চূড়ান্ত বৈজ্ঞানিক সময়ে টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে।
ধর্ম নিয়ে চিন্তাভাবনা করা সময় নষ্টের সমান, এর চেয়ে অনেক ফলপ্রসূ বিষয় রয়েছে যা নিয়ে চিন্তা করলে দেশ-সমাজ আরো আগাবে-সমৃদ্ধ হবে। আমাদের এখন ফলপ্রসূ বিজ্ঞানী দরকার, গবেষক দরকার, অর্থনীতিবিদ দরকার, সৎ ও শিক্ষিত রাজনীতিবিদ দরকার; ধর্মাধর্ম নিয়ে সময় নষ্ট করার আর ফুরসত নাই।

কল্যাণ হোক।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

ঠিক বলেছেন। সভ্য সমাজ অবশ্যই আপেক্ষিক। আমি প্রচলিতের সাপেক্ষে সভ্য সমাজ যেটা সেটার দিকে ইঙ্গিত করেছি। সেটা আর্গুমেন্ট হিসেবে তেমন কোনও কাজ করছে ঠিক না। আমার ধারণা যারা ভীতু, তারাই সবচেয়ে হিংস্র। জয়নাল হাজারী সব বাঘ মেরে ফেলতে বলে কারণ বাঘ ক্ষতিকর, মানুষ খায়। এতে কিন্তু হাজারীর যে ভয় বা হিস্টিরিয়া, সেটাই প্রকাশ পায়। সভ্য সমাজ না বলে শক্তিশালী সমাজ বলা উচিত ছিল, মানে যারা প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা রাখে। তার পক্ষে কিন্তু সম্ভব একটা বাঘ আক্রমণ করা না পর্যন্ত অপেক্ষা করা বা আত্মরক্ষার প্রয়োজন পড়লেও পাল্টা প্রাণঘাতী ব্যবস্থা না নিয়ে চেতনা-নাশক বস্তু ব্যবহার। ফলে বাঘ না মারাটা সভ্য সমাজের যতোটা না সেন্সিবিলিটি, তার চেয়ে বেশি তার ক্ষমতার বা নিয়ন্ত্রণের প্রকাশ। তবে নিয়ন্ত্রকের হাতে প্রকৃতির নির্বিচার ধ্বংসটা আবার ভিন্ন গল্প।

আমাদের এখন ফলপ্রসূ বিজ্ঞানী দরকার, গবেষক দরকার, অর্থনীতিবিদ দরকার, সৎ ও শিক্ষিত রাজনীতিবিদ দরকার

কী দরকার, সেটাও কি আপেক্ষিক বিষয় না? হাসি

কবি-মৃত্যুময় এর ছবি

এখন স্পষ্ট হল।

কী দরকার সেটাও অবশ্য আপেক্ষিক। দেশের সাপেক্ষে, সময়ের সাপেক্ষে, প্রয়োজনীয়তার সাপেক্ষে দরকার বদলায়। যেমন সময়ের সাপেক্ষে, ঘটনার সাপেক্ষে লিমনকে নিয়ে লেখার দরকার ছিল, আপনি লিখেছেনও। আমার কাছে মনে হয় আমাদের দেশের জন্য ওগুলো দরকার।

একটা কথা বলা হয় নি তা হল আপনি চমৎকার যুক্তনির্ভর প্রবন্ধ-মন্তব্য লেখেন সাবলীলভাবে। আপনি মন্তব্যে বিভিন্ন বিশেষ শব্দের লিংক দিয়েছেন, ওগুলো নিয়ে নিজেই আপনার চিন্তা-জ্ঞান গুলো লিখে ফেলেন সময় করে উঠতে পারলে। আপনার জ্ঞানার্জন অব্যহত থাকুক।

কল্যাণ হোক।

অপছন্দনীয় এর ছবি

একটা সমস্যায় তো প্রায় প্রতিদিনই পড়তে হয়। প্রচুর অ-চরমপন্থী শিক্ষিত(!) ব্যক্তি আছেন, ধর্মীয় কোন নেগেটিভ ব্যাপার সামনে আনলেই সোজা বলে দেবেন "এটা অপপ্রয়োগ"। যে বিশেষ নিয়মটা প্রয়োগ করেই মানুষের ক্ষতি করা যায় সেটাকে অপপ্রয়োগের প্রয়োজনটা কী সেটা কখনো বোঝানো যাবে না।

ভালোমন্দ সাবজেক্টিভ হলেও অধিকাংশ মানুষের ধারণা খুব সহজ। তার নিজের ধর্ম প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যা বলে সেটা সবসময় ভালো, কখনোই নিজের ধর্ম খারাপ কিছু বলতে পারে না। এমনকি নিজে যদি ধর্ম থেকে কোন ধরনের ধারণা করে, সেটা ভুল আর ঠিক যা-ই হোক না কেন সেটা ভালো হতেই হবে। সেগুলোকে সমর্থন করার জন্য যা না তাই যা ইচ্ছা কথাবার্তা আকাশ থেকে নামিয়ে এনে তার ভালোত্ব প্রমাণ(!) করে ছাড়বে। কাজেই যদি মনে হয় ধর্ম রক্ষার জন্য খুন করতে হবে, তাহলে তা-ই, খুন করা খুব ভালো জিনিস। চোখের সামনে মানুষ মেরে পয়সা দিয়ে ছাড় পাওয়ার রীতিকে অমানবিক বলে, নিজের ধর্মে সেটা আছে জানার পরে পুরো উল্টে যেতে দেখেছি এক পি. এইচডি. ক্যান্ডিডেটকে। সন্তান পুরুষ হলে নারী তাঁর নিজের সন্তানের নির্দেশের অধীন(!!!) এই কথা বলে আরেক ডক্টরেটকে দাবী করতে দেখেছি এর ফলে নাকি নারীর সম্মান অনেক বেড়ে গেছে!

আব্দুল আজিজ মার্কা লোকজনের চেয়ে আপনার এই মোহাম্মদ ধরনের প্রাণীগুলো অনেক বেশি ভয়ঙ্কর। এরা উচ্চশিক্ষিত বলে নিজের কনফিডেন্স লেভেল অনেক বেশি থাকে। এবং কোন এক অজ্ঞাত কারণে এদের মাথার ওই একটা চ্যানেল পুরোপুরি ব্লকড। এই ব্লকড চ্যানেল যখন কনফিডেন্সের সাথে একসাথে হয় তখন ভালোমন্দের ধারণা খুব অদ্ভুত রূপ নেয় - একটা রূপ তো আপনি বর্ণনাই করেছেন। আমার সাথে এ ধরনের এনকাউন্টার হয়েছে বাংলাদেশের ইউনিভার্সিটিতে, কর্মক্ষেত্রে, এবং এখন ক্যানাডার ইউনিভার্সিটিতে। জীবনের উপরে হুমকিও বাদ যায়নি। প্রত্যেক ক্ষেত্রেই অবাক হয়েছি - পুরোপুরি যুক্তিনির্ভর কাজ করে, জীবনের অন্য প্রতিটি ক্ষেত্রে যুক্তি ব্যবহার করে এই একটা ব্যাপারে এই মানুষগুলো এত অন্ধ হয় কি করে?

যাঁরা ওইসব গ্রুপে পড়েন না, তাঁদেরও যে সবাই অন্যরকম চিন্তা করেন কি করে বলি? যখন দেখা যায় কেউ নিজেকে ধর্মের পক্ষ এবং বিপক্ষের প্রচারবিরোধী দাবী করে সোজাসুজি ধর্মের রাস্তায় আহ্বান কিংবা ধর্মীয় বস্তুর জাদুকরী গুণ বর্ণনার সামনে নীরব থাকেন, কিন্তু এমনকি ধর্মের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত অভিমতকেও, বা অনেকক্ষেত্রে এমনকি ধর্মের নয়, বরং ভন্ড ধার্মিকের বিরুদ্ধে করা মন্তব্যকেও, বিরুদ্ধপ্রচার আখ্যা দিয়ে উপদেশ ঝাড়েন তখন অনেক কিছুই মনে হয়।

আপনার বর্ণনা ভালো লাগলো। তবে সংলাপগুলো পড়তে গিয়ে অনেকটা রবীন্দ্রনাথের উপন্যাসের কথা মনে পড়লো। সংলাপগুলো একটু সহজ ভাষায় লিখলে বুঝতে সুবিধা হতো হাসি

চলুক

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

প্রত্যেক ক্ষেত্রেই অবাক হয়েছি - পুরোপুরি যুক্তিনির্ভর কাজ করে, জীবনের অন্য প্রতিটি ক্ষেত্রে যুক্তি ব্যবহার করে এই একটা ব্যাপারে এই মানুষগুলো এত অন্ধ হয় কি করে?

কয়েকটা বিশেষ অনুমান নিলে ওই অন্ধত্বগুলোও তখন গাণিতিক সিস্টেমের অংশ হয়ে যাবে।

যাঁরা ওইসব গ্রুপে পড়েন না, তাঁদেরও যে সবাই অন্যরকম চিন্তা করেন কি করে বলি? যখন দেখা যায় কেউ নিজেকে ধর্মের পক্ষ এবং বিপক্ষের প্রচারবিরোধী দাবী করে সোজাসুজি ধর্মের রাস্তায় আহ্বান কিংবা ধর্মীয় বস্তুর জাদুকরী গুণ বর্ণনার সামনে নীরব থাকেন, কিন্তু এমনকি ধর্মের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত অভিমতকেও, বা অনেকক্ষেত্রে এমনকি ধর্মের নয়, বরং ভন্ড ধার্মিকের বিরুদ্ধে করা মন্তব্যকেও, বিরুদ্ধপ্রচার আখ্যা দিয়ে উপদেশ ঝাড়েন তখন অনেক কিছুই মনে হয়।

অনেক কিছু মনে হলেও মানুষের মনের ভেতরে কী ঘটছে বলা টাফ। কেবলমাত্র ধর্মের প্রতি অনুরাগ থেকেই যে এই নীরবতা তা কিন্তু না। অনেক ধরনের সেন্সিবিলিটি একে চালিত করে। যেমন, একটা সেন্সিবিলিটি হচ্ছে নাস্তিকের কল্যাণমুখী। তারা ধর্মীয় তুকতাকের প্রচারের বিরোধিতা করেন না, কারণ যুক্তি দিয়ে সেটা করার মানুষ আছে। কিন্তু কোনও নাস্তিক যখন এর বিরুদ্ধে নিজেই আরেক ধরনের রেসিস্ট বা হিস্টিরিয়াগ্রস্ত মন্তব্য করে ফেলেন, তখন সেটার বিরুদ্ধে উপদেশ ঝাড়েন নাস্তিকের দৃষ্টিভঙ্গিতে কল্যাণ আনয়নের জন্য। এই সেন্সিবিলিটির প্রয়োজন আছে। আমি অনেককে এমন করতে দেখেছি। আমি নিজেও এমন করেছি হয়তো। তবে এটা যারা করে, তারা ধর্মের প্রতি অনুরাগ বশত একই কাজ করনেওয়ালাদের সাথে একাকার হয়ে যাওয়ার রিস্ক নিয়েই করেন।

নাস্তিক মাত্রই তো আর মহান ভালো মানুষ নয়। একজন নাস্তিক ধার্মিক ভণ্ডের জারিজুরি ধরতে গিয়ে উপসংহারে গিয়ে সকল আস্তিকের বিরুদ্ধে একটা রেসিস্ট এবং হেয়কর মন্তব্য করে দিচ্ছে, এমনটা বিরল নয়। এসবের সাথে ধার্মিক ভণ্ডামির বিন্দুমাত্র পার্থক্য আমি পাই না। মানুষের মত ও পথের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতাকে ধর্মে অবিশ্বাসের চেয়ে ঢের প্রয়োজনীয় মনে করি। ধর্মে অবিশ্বাসের কোনও প্রয়োজনই নেই, ধার্মিক যদি ভিন্ন মত পথের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে। আর ধর্মে অবিশ্বাসী হয়েও ভিন্ন মত পথকে যে শ্রদ্ধা করতে পারে না, তার এই অবিশ্বাসের কী মূল্য? ফলে এই দুটো বিষয় অর্থোগোনাল। অনেকে ভিন্ন মতের প্রতি শ্রদ্ধাবশত যে আচরণটা করে, সেখান থেকে তার আচরণ সম্পর্কে এই সন্দেহটা আসতে পারে। সেক্ষেত্রে তার ব্যাপারে সরাসরি সিদ্ধান্ত না নিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। মোহাম্মদের আদি অনুমান নিয়ে আমার কোনও সমস্যা নেই, কিন্তু তার অনুমানে যার বিশ্বাস নেই, তাকে যে সে সহ্য করতে পারছে না, এই ব্যাপারটাই কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। না হলে মোহাম্মদ যদি আকাশে উড়ে বেড়ানো সাদা ঘোড়ায় বিশ্বাস করতো, কিন্তু সেটাতে যারা বিশ্বাস করে না, তাদেরকে সহ্য করতো, তাহলে তার ওই সাদা ঘোড়ায় বিশ্বাসে কার কী যায় আসে বলুন যে তাকে উজবুক প্রমাণ করতে যাবো? হাসি

অপছন্দনীয় এর ছবি

সমস্যাটা আস্তিক-নাস্তিক বা ধর্মে বিশ্বাস-অবিশ্বাস ছিলো না, বোঝাতে পারিনি মনে হয় হাসি

mi2 এর ছবি

সহমত...অনেকেই এই সাইড থেকে ব্যাপারটা দেখতে চান না।

সবজান্তা এর ছবি

ব্যস্ততার কারণে সচলের অনেক লেখাই চোখ এড়িয়ে যায়, তাই আপনার কোন লেখাই আমার এর আগে পড়া হয়নি। এই লেখাটা পড়ে আমার দুর্দান্ত লাগলো, খুঁজে খুঁজে আপনার পুরানো অনেকগুলি লেখাই পড়ে ফেললাম। আপনার বলার ভঙ্গি অসম্ভব গোছানো। অনেকদিন পর খুব আগ্রহ নিয়ে কিছু পড়লাম, প্রায় শেষ পর্যন্ত ধরে রাখলেন।

গোডেলের এই মডেলটা আমি আগেও একবার দেখেছিলাম যদিও ধৈর্য্যের অভাবে পুরোটা পড়ে শেষ করতে পারিনি, কিন্তু যতোটুকু পড়েছিলাম খুব একটা কনভিন্সডও হইনি- কারণ ওই একটাই, স্বীকার্য হিসেবে 'বিশ্বাস'কে অন্তর্ভুক্ত করা। ধর্ম একটা খুব শক্তিশালী টুল, মানুষকে বিভ্রান্ত করে রাখার জন্য। আপনার সেই ছাত্র (যার কথা আপনার লিংক ধরে যেয়ে পড়ে আসলাম) হয়তো কম বয়েসী, কিংবা আরো অনেকে যারা দারিদ্র্যের কারণে এই বিভ্রান্তির থেকে বের হতে পারে না- কিন্তু শিক্ষিত একজন মানুষ যখন এই বিভ্রান্তিতে আটকায়, তখন সে শুধু নিজেই বিভ্রান্ত হয় না, আরো দশজনকেও বিভ্রান্তির দিকে টানে।

আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের আমার বিভাগেরই একজন শিক্ষকের ফেসবুক প্রোফাইল দেখছিলাম। শিক্ষক হিসেবে কিংবা মেধাবী মানুষ হিসেবে উনি খুবই উঁচু দরের এ ব্যাপারে কোন সন্দেহই নেই। কিন্তু তাঁর সীমাহীন বিশ্বাস ঈশ্বরের প্রতি আমাকে খুবই অবাক করে বরাবরই। সেদিন দেখছিলাম তাঁরই কোন এক ছাত্র (যতোদূর বুঝলাম সেও একজন বিশ্বাসী) স্যারকে জিজ্ঞসে করছেন হকিং এর সাম্প্রতিক মন্তব্য সম্পর্কে স্যারের মতামত কী ? অনেক কথার মধ্যে একটা কথাতে চোখ আটকে গেলো, স্যার বলছেন We should remember, Science is not the Absolute truth. It is approaching towards the absolute truth.

মন খারাপ হয়ে গেলো। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে যুক্তিবাদি শিক্ষকের সংখ্যা বাড়ে না, অথচ পাল্লা দিয়ে বাড়ে বিশ্বাসী শিক্ষকদের সংখ্যা, এর কারণ সম্ভবত আপনার ল্যাবের ওই মোহাম্মদের মতো মানুষেরাই।

অনেক ভালো লাগলো আপনার লেখা। আরো লিখুন এই রকম।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

এতোদিন কোথায় ছিলেন? হাসি

Absolute truth নিয়ে আপনি কী মনে করেন? এটা নিয়ে বিজ্ঞানের দর্শনেই বহু বহু আলোচনা আছে। এ সংক্রান্ত আমার ধারণাগুলো মুক্তমনায় দেয়া আমার "অধিবিদ্যা বনাম বিজ্ঞান" লেখাটায় দেখতে পারেন। আর বিজ্ঞানের দর্শন নিয়ে কিছু চিন্তাভাবনা পাবেন এখানে

যারা মনে করেন পর্যবেক্ষক ব্যতিরেকেই একটি পরম বাস্তবতা বিরাজ করে, তাদের রিয়েলিস্ট বলে। যারা মনে করেন কোনও পরম, নৈর্ব্যক্তিক বাস্তবতার অস্তিত্ব নাই, তাদের এন্টি-রিয়েলিস্ট বলে। যারা মনে করে বিজ্ঞান পরম বাস্তবতাকেই উদ্ঘাটন করছে, তাদের সায়েন্টিফিক রিয়েলিস্ট বলে। এই বিষয়টা রিজলভড না।

ইন্সট্রুমেন্টালিস্টরা মনে করেন যে বিজ্ঞান কেবল পর্যবেক্ষণকে সূত্রবদ্ধ করছে। সেই পর্যবেক্ষণ পরম সত্যের রিপ্রেজেন্টেটিভ নাকি না, সেই তর্ক অবান্তর বলে তারা মনে করে। আপনার কী মনে হয়? আমাদের এই যে পর্যবেক্ষণ, সেটাই কি পরম সত্য?

সুমন চৌধুরী এর ছবি

ঈশ্বর নির্মাণ মানুষের সৃষ্টিশীলতার পরাকাষ্ঠা বলা যাইতে পারে। তবে তিনিও বুড়ো হইলেন একসময়। তারপর কাব্য আর আউগায় না। পুনশ্চ ১,২,৩ ..দিয়া আরো কয়েক অধ্যায় বাড়ানো গেল।তারপর শুরু হইলো চোথাবাজী। ই-হক বনাম মিশাও। ইউরিয়া প্রস্তুতির প্রবাহ চিত্র ইম্পর্টেন্ট কিনা এই নিয়া খন্ডযুদ্ধও হইয়া গেল চশমখোরদের মধ্যে। তারপর একসময় সিলেবাস বদলাইল। কিন্তু ছাপাখানার গুদাম তখনও পুরানা বই এ ঠাসা। তারা নাড়া দিয়া বললেন ধর্মের ঘট বাতাসে নড়ে। সুতরাং আগে পুরানা চালান শেষ করা লাগবো । তারপর নতুন বই এর কন্ট্রাক্ট আমাগো দেওয়া লাগবো । আরও ঝামেলা লাগলো। পুরাণা চালান ছিল কম্পোজিটার প্রেস থিকা । এখন কম্পিউটার-কম্পোজ ছাড়া চলে না। তারমানে আমাগো কম্পু শিখানো লাগবো। ক্যাচাল লাইগা গেল। তখন আড়তদার অনেক চিন্তা ভাবনা কইরা দেখলো বাজারে দুই চালানেরই খরিদ্দার আছে। তাইলে আর সমস্যা কি? সিলেবাসও দুইটা বানাও। আর সেই ছাপার কাম সবাইরে ভাগ কইরা দ্যাও যাতে আর কেউ চ্যাও ম্যাও না করে। সেই থিকা বাজারে দুই সিলেবাসের বইই চলে। এর নাম প্যারালfল ইনস্টিটিউশান।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

হো হো হো

মহাস্থবির জাতক এর ছবি

মহান জেনেসিসনির্ভর আর ইভো-সাইকো-সোশিওময় বিশ্লেষণ!

_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!

(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

পুরোটা পড়েছি। ওই ছেলে জন্য করুনা হোলো। লেখা চমৎকার লেগেছে। অন্ততঃ একটা চমৎকার লেখা বেরিয়েছে ছেলেটার কারনে, সেকারনে সে খানিকটা ধন্যবাদ পেতে পারে। হাসি

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

অন্ততঃ একটা চমৎকার লেখা বেরিয়েছে ছেলেটার কারনে, সেকারনে সে খানিকটা ধন্যবাদ পেতে পারে।

আমারও তাই-ই মনে হয়। হাসি

মোহাম্মদ একদিন নিশ্চয়ই দুনিয়াদারি হবে। সকল দুনিয়াদারির প্রতি সহমর্মী হবে। মাঝখানে গোডেলের গাণিতিক প্রমাণ আর নৈতিক জিঘাংসার স্বরূপ নিয়ে আলোচনাটা হলো আমাদের প্রাপ্তি।

মন মাঝি এর ছবি

আচ্ছা যে অজ্ঞেয়বাদী আস্তিক কেবলমাত্র নিজের মানসিক প্রশান্তি ছাড়া নৈর্ব্যক্তিক বাস্তবতা, নৈতিকতা, প্রায়োগিক গুরুত্ব বা অন্যের মানা-না মানার ক্ষেত্রে তার বিশ্বাসের কোনরকম প্রাসঙ্গিকতা বা প্রয়োজনীয়তা দাবী করেন না বা আছে বলে মনে করেন না -- তার সেই বিশ্বাসের গুরুত্ব কতটুকু বা দুনিয়াদারীতে তার কোন নেতিবাচক প্রভাব আছে বলে মনে করেন কিনা ?

****************************************

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

মোহাম্মদ তো তার বিশ্বাস প্রস্তাবও করছে, অবিশ্বাসীদের রফাও করার প্রতিজ্ঞা দিচ্ছে। এখন যদি কেউ বলে যে যার যার বিশ্বাস তার তার কাছে, অবিশ্বাসীর জানের ফয়সালা তার হাতে না, তাইলে দুনিয়াদারির সাথে সংঘর্ষের আর কিছু থাকে বলে মনে করি না। এরকম বিশ্বাসের প্রতি আমি শ্রদ্ধাপূর্ণ।

মহাস্থবির জাতক এর ছবি

সর্দি ঠান্ডা থেকে/লেগে হয় না। বড় বড় গবেষণাগারের পরীক্ষা নাকি তাই বলে। লোকেদের জলে ভিজিয়ে, ভেজা কাপড় পরিয়ে রেখে দেখা গেছে নাকি তাদের ঠান্ডা লাগে না। কিন্তু, তাহলে এতো কথা কেন ঠান্ডা লাগা নিয়ে? বোধহয়, সেটা সর্দি ভাইরাসের জন্যে পরিপোষক আবহাওয়া তৈরি করে, তাই।

এখন যদি কেউ বলে যে যার যার বিশ্বাস তার তার কাছে, অবিশ্বাসীর জানের ফয়সালা তার হাতে না, তাইলে দুনিয়াদারির সাথে সংঘর্ষের আর কিছু থাকে বলে মনে করি না।

সমস্যা হচ্ছে, যারা সমস্যাগুলো সৃষ্টি করে, তারা এসব মডারেট ধর্মবিশ্বাসীর কাছ থেকেই পরিপোষক আবহাওয়া পেয়ে থাকে। আপনার বর্ণিত এসব বিশ্বাসীরা অনেকেই টুইন টাওয়ার ধ্বংসে পুলকিত হয়, ওসামার নিরঞ্জনে কষ্ট পায় বাস্তবিকই এবং তারাই অন্য ভবিষ্যৎ সন্ত্রাসকের কোকুন তৈরি করে। কাজেই, নিরিবিলি বিশ্বাস সবসময় উপকারী বস্তু নহে।

_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!

(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

কিন্তু এই ধরনের ঠাণ্ডা লাগা হাইপোথিসিস কী কাজে লাগতে পারে। পরীক্ষা করে তো সম্পর্ক পাওয়া দুষ্কর। যেটা পর্যবেক্ষণে মেলা ভার, সে নিয়ে মাথা ঘামানোও আমার কাছে কাজের না। ধরেন টুইন টাওয়ার ধ্বংসে কেউ পুলক প্রকাশ করলে তাকে কী করা সম্ভব? আইনত সে বেআইনি কিছু করে নি। তারপরেও যদি রাষ্ট্র তাকে পাকড়াও করতে চায়, তাহলে থট ক্রাইমের ধারণাকে প্রশ্রয় দেয়া হয়, যেটা আবার টুইন টাওয়ার ধ্বংসে পুলক প্রকাশের চেয়ে বহু মাত্রায় ভয়ঙ্কর ব্যাপার। ফলে মডারেট ধর্মবিশ্বাসীদের পরিপোষক আবহাওয়া হওয়া অনেকটা আমরা অনেকে যে গণহত্যাকারী পশ্চিম রাষ্ট্রগুলোকে মেধা শ্রম দিয়ে তাদের গবেষণায়, ধ্বংস আয়োজনে সাহায্য করি, অনেকটা এরকমই। আমাদের অনেকে তো আমেরিকার চলমান গণহত্যাকেও নিরন্তর সমর্থন করে। এর জন্যে দোষ দেয়া সাজে না।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

হে হে হে
ছাগুরাম ত্রিভুজের অতৃপ্ত ভাটাকতুহুয়ি আত্মা দেখি গোটা পৃথিবীতেই ঘুইরা বেড়ায়। এর মধ্যে কিছু কিছু আবার গদাম খাওয়ার জন্য পাছা পেতে দিয়ে বসে।

চমৎকার গোছানো লেখা ধ্রুব বর্ণন। চলুক

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

ত্রিভুজের সাথে বাদানুবাদের অভিজ্ঞতা বলে যে, ওকে যদি আমি জিজ্ঞেস করতাম,

“তোমার সিস্টেমের আদি অনুমানটা কি বিশ্বাস, নাকি এটা পর্যবেক্ষণগত বাস্তবতায় প্রমাণযোগ্য?”

সে বলতো, আমি উপরে যেটা বলেছি/লিখেছি, আবার ভালো করে পড়ুন। তাহলেই আমার উত্তরটা পেয়ে যাবেন।

মোহাম্মদ অন্তত কন্সিসটেন্টলি, স্ট্রেইট ফরোয়ার্ড উত্তর দিয়েছে। হাসি

ধুসর গোধূলি এর ছবি

হে হে হে, ব্রো, ছাগুরাম-ত্রিভুজ সিন্ড্রোমের এই একটাই না, আরও অনেক উপসর্গ আছে। তার একটা হলো নিজেই নিজের কথা টুইস্ট করা। অর্থাৎ বৃষ্টির সাপেক্ষে ছাতা ঘুরায়ে ফেলা। আর প্যাচে পড়লে বলা, যাহা বুঝাইতে চাই তাহা ভুল করে বুঝেন। যাহা বুঝেন তাহা বুঝাইতে নাহি চাই।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

সব থিকা ফাটাফাটি হইলো রেফারেন্স হিসাবে নিজের পুরানা পোস্টের লিঙ্ক দেওয়া দেঁতো হাসি

সিরাত এর ছবি

জায়নামাজ ভাঁজ করতে দেখেছি, আবার বিয়ার পার্টিতে বিয়ার খেতে দেখেছি।

এতে অসুবিধা কী?

কনসিসটেন্সি আশা করা হয়তো খুব বেশি হলে একটা মধ্যবিত্ত মাইন্ডসেট। হোলিস্টিকালি জীবনতত্ত্ব কি কনসিসটেন্ট?

Prithvi এর ছবি

এটা মনে হয় নির্ভর করে আপনার ফ্রেম অব রেফারেন্সের উপর। বেশিরভাগ মুসলমান বিশ্বাস করে ইসলামে নাচ-গান হারাম(গানকে কোনওভাবে হালাল করা গেলেও বেপর্দা নারীর নৃ্ত্য হাজার চেষ্টা করেও কোন উদারপন্থী হালাল করতে পারবে না), কিন্তু তাই বলে তো বাঙ্গালী মুসলমান পয়লা বৈশাখ উদযাপন বন্ধ করে দেয়নি। একজন বাস্তববাদীর(এক্ষেত্রে যিনি নাচ-গানের মত human universalগুলোকে স্বীকার করেন) রেফারেন্স ফ্রেম থেকে দেখলে এই ইনকনসিস্টেন্সীটা স্বাভাবিক, কিন্তু একজন মুসলমানের দৃষ্টিভঙ্গী থেকে দেখলে এই অসামঞ্জস্যতা খুবই অস্বাভাবিক। একটা বিষয়কে সঠিকভাবে বোঝার জন্য রেফারেন্স ফ্রেম পরিবর্তন করার দরকার আছে।

কনসিসটেন্সি আশা করা হয়তো খুব বেশি হলে একটা মধ্যবিত্ত মাইন্ডসেট।

স্ববিরোধীতা তো মনে হয় মানুষের চরিত্রেরই একটা অংশ(যার উদাহরণ কগনিটিভ ডিজোনেন্স), এর সাথে বিত্তের সম্পর্ক কি?

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

আমার কাছে তো এটা চমৎকার ব্যাপার। অসুবিধার প্রশ্নই উঠে না। কনসিসটেন্সি কিন্তু আমি মোটেও আশা করি নি। পুরো লেখায় বরং কনসিসটেন্ট সিস্টেমের গলতি তুলে ধরা আছে বলতে পারো। এই লাইনগুলো হয়তো আরেকটু ব্যাখ্যা করা উচিত ছিল। বলতে চেয়েছি সে বিভিন্ন সাংঘর্ষিক অবস্থানের মধ্যে দিয়ে জিগজ্যাগ করতে করতে একটা কনসিসটেন্ট সিস্টেমে কনভার্জ করেছে। পরিকল্পিত কনসিসটেন্সি মানুষের প্রাচীন প্রাপ্তি। পরিকল্পিত ইনকনসিসটেন্সি মানুষের আধুনিক প্রাপ্তির পরাকাষ্ঠা।

তারেক অণু এর ছবি
এস ইউজুয়াল  এর ছবি

গণিত দিয়ে ঈশ্বর আছে কি নেই এটা বুঝানো কি করে সম্ভব? সমাজে হাজারো অসংগতি আছে ঈশ্বরকে উপেক্ষা করার। সেগুলো বললেই এত মাথা ব্যাথা থাকেনা।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।