সাহায্যের প্রতীক্ষা-

ধুসর গোধূলি এর ছবি
লিখেছেন ধুসর গোধূলি (তারিখ: মঙ্গল, ২০/১১/২০০৭ - ৮:৪৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

small

সার্বক্ষণিক অপটিমিস্টিক আমি না। মাঝে মাঝে তাই নেতি দিকগুলো দলা পাকিয়ে তেড়ে আসে আমার দিকে। অনেক সময়ের অপটিমিস্টিক আমার প্রতি শোধ নিতেই আপাদমস্তক গিলে খায় আমাকে। কিছুই করার থাকে না আমার এক গুটিশুটি মেরে থাকা ছাড়া। আমি নিজেকে গ্রাস হতে দেখি, ক্রমাগত, বারবার।

সত্তর সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের কথা শুনেছি, পড়েছি। তার ছোবলের হিংস্রতার কথা জেনেছি। একানব্বইয়ে ঝড়ের রাতের কথা মনে আছে। শীতলক্ষার পানি একদম তলায় চলে গিয়ে ঠেকেছিলো, এটাই প্রলয়ংকরী সেই ঝড়ের আমার অভিজ্ঞতা। তার কিছুদিন পর চট্টগ্রাম সেনানিবাসে সেসময় অবস্থানরত এক কাজিন এসে যখন তার নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করলো, বারবার শিহরিত হয়েছি। ত্রিশ ফুট উঁচু পানির বিশাল ঢেউ, মাইলের পর মাইল বাড়িঘর নিশ্চিহ্ন, ফসলী জমি বিরাণ, গাছের মাথায় আটকে থাকা মানুষের প্রাণহীন দেহ- আমি আতঙ্কিত হয়েছি পৌনপুনিক ভাবে।

সিডর, আরেক প্রাকৃতিক দানব। আমাদের দেশটাকে দুমড়ে মুচড়ে, ছিন্নভিন্ন করে চলে গেলো। আবারও সেই একই দৃশ্য। হাজার হাজার মানুষের অকালে, বেঘোরে চলে যাওয়া, আবারও নাক সমান পানিতে একটু অক্সিজেনের আশায় প্রাণপ্রিয় সন্তানের গায়ের ওপর পা দিয়ে দাঁড়ানো কোন মমতাময়ী মা, আবারও একরের পর একর ফসলী জমির ভ্যানিশ হয়ে যাওয়া, আবারও কষ্ট, সরকারী আশ্বাস, বিদেশী সাহায্য, ত্রাণ লুট, অনাহারে আরও মানুষের মৃত্যু, কতিপয় মানুষের পাকা বাড়িতে আরও কয়েকতলা যোগ!

আজকে দুপুরে একজন বলছিলো তোমাদের দেশে কী হয়েছে? কালকে টিভিতে দেখলাম। বন্যা নাকি?
তাকে বুঝানোর চেষ্টা করলাম, বন্যা না। বাংলাদেশ দেখেছে প্রকৃতির ভয়াবহ রূপ। ব-দ্বীপ অঞ্চলের সবচাইতে বড় যে শত্রু, তার আক্রমন।
তোমাদের তো তাহলে এখন সাহায্যের প্রয়োজন। না হলে এতো বড় বিপদ মোকাবেলা করবে কী করে?
আমি তাকে এবার বুঝানোর চেষ্টা করলাম না যে সাহায্য পেলেও আমাদের বিপদ কমবেনা মোটেও। যারা ভুক্তভোগী তারা একেকজন শ্রেষ্ঠ ক্ষত্রিয়। তারা জানে কোন সাহায্যই তাদের দোরগোড়ায় পৌঁছুবে না। তাদের নিজের হাত আর গায়ের বল সম্বল করেই উঠে দাঁড়াবে তারা।

সন্ধ্যায় একটা নিউজস্ট্যান্ডে চোখ আটকে গেলো "স্যুড ডয়েশে সাইটুং"-এর প্রথম পাতায় বিশাল ছবিটায়। হাতে নিয়ে দেখি আমাদের দেশটিকে নিয়েই লেখা। একজন সর্বহারা বাঙালী নারীর বিশাল ছবিটার পাশে ছোট করে লেখা "ভারতেন আউফ হিলফে" - সাহায্যের জন্য প্রতীক্ষা!

মুহূর্তেই আমার নেতি চিন্তাগুলো ভর করলো আমার উপর। সিন্দাবাদের ভূতের মতোন আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেললো আমাকে অক্টোপাসের মতো।
জার্মানী হয়তো বিশাল একটা অংকের সাহায্য পাঠাবে। সাহায্য পাঠাবে উন্নত বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোও। কিন্তু যাদের তরে সেই সাহায্য, তারা কি কোনদিনও দেখবে সেই সাহায্যের মুখ!

আমাদেরকে কি আবারও বলা হবে তলাবিহীন ঝুড়ি, তাও মুষ্টিমেয় কিছু লোলূপ বঙ্গসন্তানের জন্য?

small

প্রথম ছবিটির বড় আকার এখানে-
এবং দ্বিতীয়টি এখানে


মন্তব্য

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

একেকটা ঝড় ,,, হাজার লক্ষ লোকের জন্য অভিশাপ ,,ঘরবাড়ী সব শেষ ,,, গুটিকয়েকের জন্য আশীর্বাদ ,,,তারা হয়ত আজই গাড়ীর শোরুমে গিয়ে ঘুরছে কোন নতুন মডেলটাতে আপডেট করা যায় সেটা নির্ণয়ের জন্য ,,,, মন খারাপ
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- রোম পুড়ে যায় তখন নীরু না জেনে বাশী বাজালেও আমাদের দেশের নীরুরা ধিনাকধিনাকধিন বোলে চেঁচিয়ে তুড়ি বাজায় আঙুলে থুঁতু লাগিয়ে।

জেনারেল আনসাইগারে শিক্ষার প্রতি আমাদের গুরুত্ব বুঝাতে খোলা আকাশের নীচে পাঠশালার ছবি ছাপিয়েছে। তার ঠিক পাশের ছবিটিই ছিলো উপদ্রুত বরগুনায় পৌঁছানো সর্বপ্রথম সাহায্যের খবর।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।