বেখেয়ালীপনা ০২

ধুসর গোধূলি এর ছবি
লিখেছেন ধুসর গোধূলি (তারিখ: সোম, ১৬/০৭/২০০৭ - ৩:৫০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

স্যুট পরা ভদ্রলোক বেশ কড়িৎকর্মা বুঝা গেলো। কয়েক ঘন্টার মধ্যেই সকল আসবাব নামিয়ে, খাট-আলমিরা আর বেশিরভাগ আসবাবই জায়গামতো সেট করে ফেলেছেন লোকজন লাগিয়ে। আমাদের সাথে রাতের খাবার খেলেন ইদ্রিস চাচারা। ইদ্রিস চাচা বাবার পুরানো কলিগ। এক সাথে ছিলেন অনেকটা সময়, একই পরিবারের মতো। বদলির কারণে মাঝখানে এতোগুলো বছর আলাদা হয়ে গেছে। আমি বাইরে থেকে ফেরার পর চাচী কাছে ডেকে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করলেন। টুকটাক কথা বললেন, খুনসুটি করলেন সেই ছোট বেলার মতো করে। শেষে মন্তব্য করলেন আমি 'বড়' হয়ে গেছি, আগের মতো করে খুনসুটির জবাব দিচ্ছিলাম না বলে।

ড্রয়িংরুমের গদি আটা লোহা কাঠের লম্বা সোফায় এক দিকে বাবার পশে বসে আছেন ইদ্রিস চাচা, ওপাশের সিঙ্গেল টাতে ইদ্রিস চাচার ছেলে রবিন বসা। একদা শয়তানের হাড্ডি রবিন চোখে চশমা পরে চুপচাপ একপাশে বসে আছে দেখে হাসিই পেলো। আমরা যখন উপজেলা কমপ্লেক্সের পুকুর পাড় থেকে তারাবীর রাতে ডাব চুরি করতাম, রবিন ছিলো তার অন্যতম উদ্যোক্তা। ডাবের বোটার দিকের শক্ত খোলস ছাড়িয়ে, কামড়ে ডাবের নরম অংশটা খানিক পাতলা করে বুড়ো আঙুল ৯০ ডিগ্রী এঙ্গেলে শক্ত করে সেখানে রেখে অন্য হাতে তাতে 'ক্যারাটে কোপ' দিলেই 'ফচ্চক' করে ডাবের মুখ খুলে পানি বের হয়ে আসে। এবার সেটা মুখে লাগিয়ে ঢকঢক করে গিলো। খবরদার ডাব মুখে লাগিয়ে পানি গিলার সময় যেন 'ঢুক্কুর-ঢুক্কুর' শব্দ না হয়, তাহলে ধরা পড়ে যাবার সমূহ সম্ভাবনা আছে!- এইসব প্রক্রিয়া আর তত্ত্বের প্রচলক রবিন কিনা বসে আছে কোণার এক সোফায়, ইয়ে বাৎ কুচ হজম নেহি হুয়ি!

ইদ্রিস চাচাকে সালাম দিয়ে কুশল বিনিময়ের পর এদিকের সিঙ্গেল সোফাটায় আস্তে করে বসলাম। রবিনের চোখে এখনো সেই একই চাহনী। দুজনের এই একটা জায়গায় দারুণ মিল। আগে থেকে কেউই কথা বলতে পারি না। কিন্তু কেউ একবার শুরুটা করে দিলে সেটা থামাতে ঘাম ছুটে যায়।

রবিনের চশমায় পিটপিট করতে থাকা চোখ থেকে সারা ঘর ঘুরে আমার চোখ আবার লোহা কাঠের লম্বা সেই সোফাটায় ফিরে এলো, বাবার পাশে। চুল ছেড়ে দেয়া, কেবল দুপাশের চুলের কিছু অংশ টেনে মাথার পেছনে একটা বাদামী ক্লিপ দিয়ে আটকানো। কানে কলেজ রিং, সাদা রঙের। গলায় সোনার বিছা চেইন। কোলের ওপর রাখা বাম হাতে কালো বেল্টের খুব কিউট একটা ঘড়ি, ব্র্যান্ডটা বুঝতে পারছি না, 'ফসিল'র কোন একটা এডিশন হতে পারে। ডান হাতে টিপিক্যাল মেয়েলী ব্রেসলেট। 'সুধন্যা''- সৃষ্টিকর্তা কতোটা মহীমায় এই নামের জন্য অদ্ভুত সুন্দর গোলগোল বিশাল চোখের এই হলদেটে মেয়েকে সৃষ্টি করেছেন। প্রাচীন রূপকথার সেই শুভ্র নিম্ফ যেনো সাক্ষাৎ সামনে দাঁড়িয়ে আছে আর আমি যেনো সেই গার্ল্যান্ড সেলার।


মন্তব্য

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আরো নিয়মিত হও ভ্রাতঃ

-----------------------------------
'পড়ে রইলাম বিধির বামে,ভুল হলো মোর মুল সাধনে'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

ঘটনা কী?

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

এই লোক গেলো কই?

_________________________
'আজকে না হয় ভালোবাসো, আর কোন দিন নয়'

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- হই মিয়া বহুত চিপায় আছি।
হাজারদুয়ারীর জন্য কে কে লেখা দেয় নাই তাগো একটা তালিকা করতাছি। শেষ হইলে তারপর বাইতের আন্ধারে.... মুহা হাহাহাহা
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

তালিকাটা আমার কাছে পাঠাইয়েন। দরকার হইলে আমিও রাইতে বাইরামু। হাততালি
_________________________
'আজকে না হয় ভালোবাসো, আর কোন দিন নয়'

দ্রোহী এর ছবি

কি হে?
চিপা থেকে বের হলে!!


কি মাঝি? ডরাইলা?

ধুসর গোধূলি এর ছবি
নজমুল আলবাব এর ছবি

এই বেটা হইছেটা কি? থাকস কই?

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- দেশে আসুম আলবাব ভাই। মাথা আউলানো। এদিকে ছোড ভাইডা সামনের সপ্তায় বিদেশের মোয়া চাইখা দেখার লাইগ্যা আইতাছে। সব মিলাইয়া বেরাছেরা অবস্থা।
পানি দেন পানি, মাথায় ঠান্ডা পানি দেন আমার।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

নজমুল আলবাব এর ছবি

হু, ঠিক আছে। দেশে আসেন। পানি রেডি হাসি পানিপ্রার্থি বালকদের আর কত ছাড়া গরুর মত ঘুরতে দেয়া যায়। এইবার বান্তে হবে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।