সময় যেমন চলছে

দিগন্ত এর ছবি
লিখেছেন দিগন্ত (তারিখ: সোম, ১৫/১২/২০০৮ - ৫:০৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কালকে অনেকদিন পরে একটা হিন্দি সিনেমা দেখলাম। শাহরুখের রব দে বানা দি জোড়ি। সিনেমাটা একটা আজগুবি ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে, তাও ভালই লাগল। বলিউডে পরিচালকেরা নতুন কিছু চেষ্টা করছেন দেখে ভাল লাগল। আসলে, কেবল টিভির কল্যাণে হলিউডি সিনেমা দেশের মার্কেটে ঢুকে পড়ার পরেই এদের টনক নড়েছে। গত বছর পাঁচেক হল বলিউডের সিনেমায় ক্রমোন্নতি দেখতে পাচ্ছি – কখনও গল্পে, কখনও ক্যামেরার কাজে আবার কখনও স্পেশাল এফেক্টসে উন্নতি হচ্ছে। ওয়ার্নার ব্রাদার্সের চাঁদনি চক টু চায়না সিনেমার ট্রেলার দেখলাম – একেবারে হলিউডি সিনেমার মত – তবে সিনেমাটার কাছ থেকে বিশেষ কিছু আশা নেই আমার।

মুম্বই এর ঘটনার পরে আজকেই প্রথম সিএনএনে শুনলাম ভারত নাকি যুদ্ধপ্রস্তুতি নিচ্ছে। কে যে কার সাথে কেন যুদ্ধ করে আর তা করে যে কি লাভ হয় জানি না। দেশের অর্থনীতির অবস্থাও ভাল না, রপ্তানী কমছে। তবে এতদিনে অনেকেই মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গেছেন এই হামলা পাকিস্তান থেকেই হয়েছিল – সৌজন্য পাকিস্তান মিডিয়া। ভারতীয় মিডিয়া অনেক লম্ফঝম্ফ করলেও আসল কাজটা তাদের সীমান্ত-পারের ভাইয়েরাই করেছে। একমাত্র ধরা পড়া জঙ্গী আজমল কাসভের নাম-পরিচয় বের করে এনেছে, প্রকাশ করেছে তার বাবার স্বীকারোক্তিও। গোপন ক্যামেরায় এসেছে গ্রামবাসীদেরও বক্তব্য। তবে, এক দিনের মধ্যেই সব হাওয়া। আর কোনো প্রমাণ নেই – কাসভের বাবা-মাও গায়েব। পাক -প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়ে বলছেন যে দারিদ্রই প্রধান কারণ এই ধরনের ছেলেদের বিপথে যাবার। অথচ দেশের নেটওয়ার্কগুলো অটুট থাকছে। আচ্ছা এই একজন ধরা না পড়লে কি কিছুই প্রমাণিত হত না? মনে মনে ভাবি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে প্রমাণ ব্যাপারটাই একটা হাস্যকর ব্যাপার। দেশে যখন দাঙ্গা হয়, তখনও এভাবেই প্রমাণ গায়েব হয়ে যায় – আর তেহেলকার মত সাংবাদিকদের গোপন ক্যামেরা নিয়ে ঘুরে ঘুরে সত্য উদ্ধার করতে হয়। সত্য সামনে আসার পরেও কিসের যে বিচার চলে।

মিডিয়ার কথায় এলে আরেকটা কথা মনে পড়ল। আমাদের কোম্পানীতে সবকিছুর বিক্রি কমেছে, কিন্তু বেড়ে গেছে এক্স-বক্সের (ভিডিও গেম খেলার যন্ত্র) বিক্রি। দেখলাম ব্যাখ্যা হল যে যাদের চাকরি চলে যাচ্ছে তারা বাড়িতে বসে নাকি বেশী বেশী ভিডিও গেমস খেলছে। তাই বিক্রি বাড়ছে। একই ভাবে দেখলাম ব্রিটেনে কন্ডমের বিক্রিও বেড়ে গেছে খাইছে

এদিকে রাত জেগে লিখতে লিখতে খেলা দেখছি অনেকদিন পরে। শচিন সেঞ্চুরীর করল। ভারতও ৩৮৭ তাড়া করে জিতে গেল। ভারত গত কয়েকমাস ধরে অসম্ভব ভাল ক্রিকেট খেলছে, অবশ্যই দেশের মাঠে। তাও অস্ট্রেলিয়া আর ইংল্যান্ডকে টেস্টে হারানো, একদিনের ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৫-০ – সবই আমার আশার চেয়ে অনেক আগে উঠে গেছে। দেশের ফর্ম বিদেশের ধরে রাখতে পারলে হয়। এই তো কদিন আগেই ইমরান খান বলল শচিন নাকি ম্যাচ জেতায় না। ক’দিনের মধ্যে শচিন অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে একদিনের সিরিজের ফাইনালে হারাতে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হল – আবার এই পঞ্চম দিনের ঘূর্ণি পিচে রান তাড়া করা।

তবে ম্যাচের শেষে মুম্বইকর শচিন যেভাবে মুম্বই-এর ঘটনার উল্লেখ করল তাতে বোঝা গেল যুদ্ধ হবে না, কিন্তু ক্রিকেট আবার বলি হতে চলেছে। ভারত-পাকিস্তান খেলা দেখার মজাটা কিছুদিনের জন্য মনে হয় পাব না। কি আর করা, সময় চলুক যেমন চলছে ... দুদিনের বরফঢাকা সপ্তাহান্ত কাটিয়ে আবার কাল অফিস যেতে হবে।


মন্তব্য

স্পর্শ এর ছবি

অনেকদিন হিন্দি সিনেমা দেখা হয়না। তবে নতুন কিছু সিনেমার ট্রেলার দেখে আবার ইচ্ছে হচ্ছে। দেখতে হবে।

অনেক কিছু মিলিয়ে সুন্দর লিখেছেন।
....................................................................................
অতঃপর ফুটে যাবার ঠিক আগে হীরক খন্ডটা বুঝলো, সে আসলে ছিল একটা মামুলি বুদবুদ!


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

আমার কাছেও মনে হয়েছে, টেকনিক্যালিটির দিক দিয়ে বলিউডের মুভিগুলো অনেক এগিয়ে গেছে। পরিবর্তনের এই হাওয়াটা ভালই। তবে সবকিছুর পরও মনে রাখার মত সিনেমার সংখ্যা কিন্তু খুবই কম।

সাম্প্রতিক ঘটনার প্রেক্ষিতে, ইন্ডিয়া-পাকিস্তান ম্যাচ হয়ত সহসা আর হবে না। তবে সেক্ষেত্রে এই ম্যাচগুলোর জন্য অপেক্ষা করে থাকার যে ব্যাপারটা, সেটা আবার আগের পর্যায়ে চলে যাবে। অনেক আগে যেমন ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ দেখার জন্য আগ্রহের কমতি থাকত না, একেকটা ম্যাচ যেন একেকটা উৎসবের আমেজ এনে দিত।

লেখাটা ভাল লাগল।


A question that sometimes drives me hazy: am I or are the others crazy?

অনিকেত এর ছবি

দিগন্ত, ছবির নাম 'রব নে বানা দি জোড়ি' হবে বোধ হয়!

দিগন্ত এর ছবি

ধন্যবাদ, ঠিক করে নিলাম। এত বড় সিনেমার নাম মনে থাকে না যে ...


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

ধুসর গোধূলি এর ছবি
সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

হুমম... যুদ্ধ যদি লাগে তাইলে তো বিরাট বিপদ... তার উপরে অর্থনীতির এই বেহাল দশার যুগে... খবরাছে...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

দিগন্ত এর ছবি

আজকেই আবার দেখলাম প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেছেন কোনো যুদ্ধ হবে না। এসবই ডিপ্লোম্যাসির অঙ্গ ...


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

কালবেলা এর ছবি

পাশের বাড়ির যুদ্ধে নিজেরো ঘুম নষ্ট...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।