শেরালী তেইশ (উৎসর্গ সকল নারী সচলকে)

পুতুল এর ছবি
লিখেছেন পুতুল (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৮/০৮/২০০৮ - ৯:৩৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

জলের ঘাটে বাঁশী
বাজে গো কমলা
আমরা জলে যাই।
আগের কলসী জলে ভরা
পাছের কলসী কাঙ্খে
ঢেউ লাগিয়ে ভাইসা গেল
রূব্বানের কলসী গো কমলা
আমরা জলে যাই।

রুব্বান কন্যা আর রহিম বাদশার যাত্রা পালার রিহার্সেল শোনার পর থেকে মায়া উপরের গানটার কথা একটু নিজের মত করে নিয়েছে। বাঁ হাতে কলসীর গলা জড়িয়ে ধরে ডান হাত কোমরে রেখে প্রতি পায়ে একটু থেমে থেমে তাল রাখে আর আগের পা আগেই বাড়িয়ে পেছনের পা টেনে আবার
পেছনেই ফেলে। চক্রাকারে ঘুরতে ঘুরতে গায়;

জলের ঘাটে বাঁশী বাজ এ গো কমলা
আমরা জলে যাই।
আছাড় খাইয়া ভাইঙ্গা গেল
রূপবানের কলসী গো কমলা
আমরা জলে যাই।

মায়ার গলায় রূব্বানের ভাঙ্গা কলসীর বিবর্তন অমুলক নয়। দেব-দেবী আর রাজা-বাদশাহদের রোষানলে সীতা, বেহুলা রূপবানদের বনবাসে, মান্দাসে স্বামী নামক দেবতাদের প্রাণ রক্ষায় অতিমানবীয় পরীক্ষা দিতে হয়। অর্ধেক মানবী আর অর্ধেক দেবীত্বের আকাঙ্খায় পুরুষ শ্রোতারা উৎর্কীণ হয়ে থাকে। কিন্তু তাদের বাসনায় সমন্বয় ঘটাতে বিধাতা পুরুষ সে সকল উপাখ্যানে শেষ পর্যন্ত নারীকে আর দেবীত্বের মর্যাদায় আসীন করেন না!
বাল্যে পিতার আশ্রয় শেষে, যৌবনে স্বামীর আশ্রয়ে থাকতে থাকতেই নারী, বার্ধ্যকে ছেলের গলগ্রহ হতে পুত্র সন্তানের কমনায় বলে;
একটি পুত্র দেরে আল্লাহ,
একটি পুত্র দে,
কামাই খাইবার সাধতো নাইরে
মাটি দিবো কে?
সে সব উপাখ্যানের বাইরে দাঁড়িয়ে নারী যদি রক্ত-মাংসের মানুষের মত কাম-ক্রোধে আসক্তি দেখায় তবেই সমাজপতিরা গোস্বা করেন।
অপয়া বালিকা-বধূ বৃদ্ধ-স্বামীর সহমরনে সাথী হয়েছে। তখন পূন্যবান লোকে কাশীরাম দাসের অমৃত সমান মহাভারতের কথা মন দিয়ে শুনেছে! রামায়নে সীতার দুঃখে কত মানুষের চোখের জল নাকের পানির সাথে মিশেছে! হ্রেষা রবে মর্দরা সেনদের রক্তে তরবারি রঞ্জিত করে ভারতে সালতানাত কায়েম করার পর রাম-লক্ষণ-সীতার শোকগাঁথায় ভাটা পরে। রাজর্ষিদের দাক্ষিণ্য মিটাতে দরিদ্র বণিকেরা সুলতানের সহযোগী হয়ে সওদাগরী উপঢৌকন লাভের পর; বেহুলার দুঃখে বুক ভাসায়।
এখন বেলায়েতের মানুষ বংশবৃদ্ধির জোরে ভারতবাসী সেজেছে। বহুদেবত্বের হিন্দু পুরানে অশ্রু বিসর্জণ অনভিপ্রেত। তাই রহিম বাদশাহ আর রূপবান কন্যা নাম নিয়ে নারীর অসহায়ত্বে পুরুষের ক্রন্দনরোল রচিত হয়েছে। দেবদেবীর জায়গায় বাদশাহ-র পুত্রানুতাপে রূপবান নারীর আত্মত্যাগের মহিমা অভিনীত হচ্ছে। সীতা আর বেহুলা রূপবানে রূপান্তরিত হয়েছে। কাহিনী যা ছিল তাই রয়ে গেছে।
সোনার বাংলা যাত্রা পালার কুশিলবরা বিবেকের "আল্লা-হরি, রাম-রহিমে কোন প্রভেদ নাই রে" গানের শেষবাণী গাওয়ার আগেই আইউব খানের হুক্কায় টান দেয়ার মর্দরা বাংলার মঞ্চ দখল করেছে। বিসমিল্লাহ বলে এখন সে মঞ্চে সেনাপতির প্রবেশ।
তারই অংশ বিশেষ পাল বাড়ীর প্রাইমারী স্কুলে অভিনীত হবে। খাল কাটলে তো কুমির আসবেই। সে ভাবেই গ্রাম সরকারে লোকমান রাজাকাররা নেতা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত হয়ে সৌদি আরবে পালিয়ে গিয়ে জীবন ও জীবীকা, দুটোই রক্ষা করেছে। উপরি পাওনার মত আলহাজ টাইটেল সাথে নিয়ে সুযোগ বুঝে এখন জনসেবার বাসনায় গ্রাম সরকারে লোকমান হাজী সভাপতি হয়েছে। সিংহাসন দখলের রক্তপাত মুছতে "আমরা শক্তি আমরা বল" শ্লোগান মুখে নিয়ে সমবেত ছাত্রদলকে রূপবানের ক্রন্দনে উৎসাহিত করাই আপাততঃ গ্রাম সরকারের প্রধান দায়িত্ব।

তারই অশং হিসাবে ছাত্রদলের আজকের সমাবেশ। সেখানে লোকমান হাজী উপস্থিত হয়ে সমবেত ছাত্রজনতাকে উদ্দেশ্য করে বলেন; নওজোয়ানরা তোমরা আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ। এদেশ এবং সমাজের ভাল-মন্দের দায়ীত্ব তোমাদের হাতে বুঝিয়ে দিয়ে আমরা বাকী জীবন আল্লাহর নাম জপতে জপতে পার করতে চাই। তো, বাবারা দেশের খোঁজ-খবর তোমরা কিছু রাখ? আমার তো মনে হয় না। শক্তি ও বলের অধিকারী ছাত্ররা বোকার মত একে অন্যের মুখের দিকে তাকায়! ঘটনা কী! বল আর শক্তির সাথে বুদ্ধি মিলিয়ে হাজী সাহেব বলেন; গ্রামে অনেক অনাচার হচ্ছে। তোমাদের কঁচি মাথায় তা ঢুকবার কথা নয়। শোন মিয়ারা; মাওলার বউ, ছাওয়ালের মত বয়সের এতিম পোলা মতির লগে, নাজায়েজ ভাবে, এতদিন ধইরা জেনা কইরা যাইতাছে। আস্তাগফিরুল্লাহ, নাউজুবিল্লাহ বলে হাজী সাবের পেছন থেকে শ্লোগানের মত চিৎকার করে উঠে রকমত আলী।
সমবেত ছাত্ররা বল আর শক্তির সাথে বুদ্ধি যোগ করে বলে; খারান এই অনাচার আমরা আজই আহনই দূর করতাছি। ছাত্রদলের ইউনিয়ন সভাপতির নির্দেশে কয়েকজন যুবক মাওলার বউরে টেনে হিঁচড়ে সভায় নিয়ে আসে।
বিড়ালের সামনে ইঁদুর যেমন, জুবুথুবু হয়ে বসে আছে হুরুনি! বলাই বাহুল্য; এ সভায় হুরুনিই একমাত্র মাইয়া মানুষ। গুঞ্জুণের মাঝে আবহ সংগীতের মত হুরুনির কান্না। তাকে ছাপিয়ে ক্ষিপ্ত জনগনের ক্ষোভ; মাগীর হোগার মনি-রগডা বককাঁচি দিয়া কাটা দরকার। আরেক জন কথার রেশ ধরে বলে; ছিনাইল্যা মাগী আবার বিলাপ পারে! গামছায় মরিচের গুরা বাইন্দা খানকীর বোদায় হান্দাইয়া দেওনের দরকার। তাদের পরামর্শ মন মত না হওয়ায় তৃতীয় মাতবর কয়; আরে মিয়ারা হোনেন; হাদিসে আছে "জিনার বিচার, মাটির নীচে বুক সমান গাইরা যার যতক্ষণ মনে লয়, পাথ্থর মারবা।
বিদ্রোহী জনতার রোষ নিয়ন্ত্রনে রেখে তাকে প্রয়োজন মত প্রবাহিত করার উদ্দেশ্যে এবার হাজী সাবের বয়ান; হোনেন ভাইসাবেরা, আফনেগো দোয়ায় খোদার ঘর জিয়ারতের নসিব হইছে। আপনি আমি এসবের কী বুঝি! বুজুর্গ মানুষ আমাদের ইমাম সাব, তিরিশ ছি পড়া কোরান তার ছিনার ভিতর। আমরা বিচারের দায়ীত্বটা তার হাতে ছাইড়্যা দেই।
এই না হলে সমাজের সর্দার! হাজী সাবের কথায় সবাই এবার ইমাম সাবের দিকে ফিরল। ইমাম সাহেব এতক্ষণ এই মনোযোগের অপেক্ষায়ই ছিলেন। বয়ানের সুয়োগ পেয়ে শুরু করলেন; তওবা আস্তাগফিরুল্লাহ্। জিনার শাস্তি বড় কঠিন! কিন্তু সাক্ষী দেওয়া তার চেয়ে কঠিন! জিনা কারী জেনানাকে জেনার সময় স্বচক্ষে দেখতে হবে। যদি জেনা মশারীর ভেতর ঘটে এবং সাক্ষী মশারীর বাইরে থেকে তা দেখে, তবে সে সাক্ষী গ্রহন করা যাবে না। কিন্তুক চল্লিশজন মমিনের ভেতর একজন খাটি ইমানদার ব্যাক্তি থাকে। এখানে চল্লিশের অধিক মুমিন আছেন। এবং আপনারা সবাই বিশ্বাষ করেন যে, জেনা করেছে। কারো সন্দেহ থাকলে আওয়াজ দেন! একটু চুপ করে থেকে ইমাম সাব ফতোয়া জারী করলেন; যেহেতু প্রত্যক্ষ্য সাক্ষী নাই, তাই শিনা পর্যন্ত মাটির নীচে গাইরা পাথ্থর মারার বদলে একশ দোড়রা মারা হোক!
সমবেত জনতার অনুরোধে হাজি সাহেব ইমামের ফতোয়া মোতাবেক শরীরের সমস্ত শক্তি আর বল দিয়ে দোড়রার কয়েক ঘায়েই হুরুনিকে ভূলুন্ঠিত করলেন।
সমাজের সকল পাপ স্খলন করে এবার রূপবান কন্যা আর রহিম বাদশাহর মহড়ায় সবাই মনোযোগী হতে পারেন।
কৃতজ্ঞ:স্নিগ্ধা, দময়ন্তী, মাহবুব লীলেন।


মন্তব্য

তীরন্দাজ এর ছবি

অনেকদিন ধরেই সময় পাইনা বলে একেবারেই সচলায়তনে আসতে পারছি না। নিজের লেখালেখিও আপাতত: বন্ধ। হয়তো একদিন শুরু করবো আবার।

এরই মাঝে স্রষ্টা পুতুল তার শেরালীকে নিয়ে অনেকদুর এগিয়ে গিয়েছেন। দেখে ভাল লাগলো খুব। তার স্পষ্ট আর সত্য কথন, দুর্বিনীত বাচনভঙ্গী আর এর মাঝে মন ও মানসের প্রতি আবেগঘন ভালোবাসা শেরালীকে আমাদের করে তুলুক!

**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

পুতুল এর ছবি

ধন্যবাদ তীরুদা। থাকেন কোথায় মিয়া! ঝটপট নতুন লেখা ছারেন!
**********************
কাঁশ বনের বাঘ

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

স্নিগ্ধা এর ছবি

কৃতজ্ঞতার অংশটি দেখে (ধন্যবাদ!) কৌতূহল হলো - বেহুলা-লক্ষ্মীন্দরের কাহিনী কি আপনি এই লেখার জন্যই খুঁজছিলেন? সেটার সাথে এই কাহিনীর সম্পর্ক কি এর পরের পর্বে আসবে?

পুতুল এর ছবি

বেহুলা লক্ষিন্দরের (বেল্লার) গীত একটু জানা ছিল। সেটা ভাষা ভাষা। তাই আপনাদের সাহায্য চেয়েছিলাম। এই পর্বটা লেখার জন্য। পরের পর্বে অন্য কাহিনী বলব। বেল্লার গীত এখানেই আপাতত শেষ। বেহুলারা আর কত কাঁদবে?
তুলনাটা কেমন লাগল?
**********************
কাঁশ বনের বাঘ

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আমি ঠিক করেছি এই উপন্যাসটি ব্লগে পড়বোনা ।
কারন লেখকের কাছে জোর দাবী এবারের বইমেলায় এটি প্রকাশিত হোক ।
-------------------------------------
"শিয়রের কাছে কেনো এতো নীল জল? "

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

পুতুল এর ছবি

হাসান মোর্শেদ, ভাই উৎসাহের জন্য ধন্যবাদ। চেষ্টাতো করছি। দেখা যাক কতদূর এগুতে পারি।
**********************
কাঁশ বনের বাঘ

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

হুরুনি একজন মুক্তিযোদ্ধার প্রতিনিধিত্ব করে। তার ভূমিতে লুন্ঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উঁচু হয় যুদ্ধাপরাধীদের নত মস্তক। নতুন করে তারা বলীয়ান হয়। এসব ফতোয়ার নামে তারা পূরণ করে তাদের অসৎ উদ্দেশ্য। আমরা নপুংসক সমাজ তাকিয়ে থাকি। ভাবি- যদি আমার কীর্তি ফাঁস হয়ে যায়?
আরে কারো যদি ইচ্ছে হয় কারো সঙ্গে মিলনের ক্ষতি কি? কিন্তু সেই সারমেয় সন্তানরা এগিয়ে আসে বিচার করতে। কিন্তু একটি অনাহারী পরিবারের দিকে এগিয়ে আসবে না একবেলা খাবার নিয়ে। হায়রে আমাদের সমাজ। নপুংসক সমাজ।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

পুতুল এর ছবি

প্রিয় জুলিয়ান সিদ্দিকী, সব গুলো পর্ব পরেছেন বলে খুব সঠিক বিশ্লেষন করতে পরেছেন। এই ভানুমতির খেলটা তুলেধরতে চেয়েছিলাম। আমি খুব রাজনৈতিক দৃষ্টি দিয়ে আমার গল্পটা এদেশের ৮০ভাগ মানুষের মুখদিয়ে বলার চেষ্টা করছি। কি বলব আবারো শুধুই ধন্যবাদ।
**********************
কাঁশ বনের বাঘ

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আমারও হাসান মোরশেদের মতোই দাবী... প্রথম কয়েকটা পর্ব পড়ে ভালো লেগেছিলো। নিজের ব্যস্ততায় ধারাবাহিকতা রাখতে পারিনি। এখন মাঝখান থেকে পড়তে ইচ্ছে করে না। বই হলে বেশ হয়।
নইলে গোটাটা পিডিএফ...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

পুতুল এর ছবি

ধন্যবাদ নজরুল ভাই,
পুরোটা শেষ হলে একটা ব্যাবস্থা করতে হবে।
**********************
কাঁশ বনের বাঘ

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

দময়ন্তী এর ছবি

অনিয়মিত হওয়ায় তাল হারিয়ে ফেলি বলে, আমি সাধারণত: ধারাবাহিক লেখাগুলো এড়িয়ে চলি৷ কিন্তু "উত্সর্গ সকল নারী সচলকে' দেখে পড়ে ফেললাম ৷ শেষ লাইন পড়ে খুব লজ্জাও পেলাম ৷ আমি খুবই সংক্ষেপে মূল গল্পটা লেকিহে দিয়েছিলাম ৷ অনেককিছু বাদ দিচ্ছি জেনেই বাদ দিয়েছিলাম ৷ ভাগ্যিস পরে লীলেন এসে পুরোটা বলে দিয়েছেন ৷

যাই হোক এই পর্বটা পড়ে আর স্নিগ্ধাকে লেখা আপনার মন্তব্য পড়ে কয়েকটা কথা লিখতে ইচ্ছে করছে ৷ দেখুন আমাদের রূপকথায় কেমন সবসময় সুয়োরাণীরা পাজি বজ্জাত হয়, তাদের সাথে মিশে রাজারাও খারাপ খারাপ কাজ করে, কিন্তু যেই আবার দুয়োরাণী আসে পাটরাণী হয়ে, অমনি রাজা তার সাথে থেকে সব ভাল ভাল কাজ করে ৷ আর সেই পাজি বজ্জাত সুয়োরাণীকে শিয়রে কাঁটা, হেঁটোয় কাঁটা দিয়ে পুঁতে ফেলা হয় ৷ কে না জানে পাজি রাণীর জন্যই তো রাজা বাজেবাজে কাজ করত ৷ তাই রাণীরই বাজে কাজের শাস্তি হয় ৷ আর রাজা আবার ভাল রাণীর সাথে মিলেমিশে ভাল রাজা হয়ে থেকে যায় ৷ দেখুন আমাদের সমস্ত ব্রতকথা বা প্রচলিত গল্প, উপকথায় কেমন সবসময় মেয়েরা চায় স্বামের আগে মারা যেতে৷ সেই ইচ্ছেকেই উত্সাহিত করা হয় ৷ অথচ বৌ তো সাধারণত বরের থেকে বয়সে অনেক ছোটই হত ৷ আমাদের সমাজে কি অবলীলায় সামগ্রিকভাবে মেয়েদের স্ব্ল্পায়ু কামনা করা হয় বা মৃত্যুকামনা করা হয় ৷ আর তা করেন অতি নিকটজনেরাই৷

আপনার উপন্যাসটি শেষ হলে একবারে পড়ে নেব ৷

খুব ভাল থাকুন ৷

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

পুতুল এর ছবি

দময়ন্তী, আমাদের সংস্কৃতি নারীর এই মূর্তিটা কী ভাবে তৈরী করে সেটা একটু দেখাতে চেয়েছিলাম। তার জন্য বেহুলার বিষয়টা একটু নিশ্চত হওয়া প্রয়োজন ছিল। আপনিই প্রথম তা লিখেদেন মন্তব্য আকারে। কিন্তু লীলেন ভাই ই-মেইলে আরো আরো বিস্তারিত আলোচনা-মূল্যায়ন সহ রীতিমত গবেষণা করে অনেক তথ্য দিয়েছেন। মন্তব্যতো ছিলই।

অবশ্য সেসব কাহিনীতে আমি নারীর সামাজিক অবস্থান দেখতে চেয়েছি। এতে হয়তো লেখাটা ঠিক সাহিত্য না হয়ে বিবৃতিটাইপের কিছু একটা হয়ে গেছে। কিন্তু বলার খুব ইচ্ছে ছিল, সেটা পূরণ হয়েছে।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ। লেখা শেষ হলে কোন ভাবে একসাথে দেব। খন্ড খন্ড ভাবে পড়ে উপন্যাস সম্পর্কে একটা ধারণা তৈরী করা খুব কঠিন ব্যাপার।
**********************
কাঁশ বনের বাঘ

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।