কেন লেখি ?

সবজান্তা এর ছবি
লিখেছেন সবজান্তা (তারিখ: শনি, ১৯/০১/২০০৮ - ২:০২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ব্যাপারটা হাস্যকর। এ ধরণের কৈফিয়তমূলক লেখা সাধারনত বড় মাপের লেখক বা কবিরা লেখে থাকেন। আমার মত অলেখক চ্যাংড়া ছোড়ার আদৌ এই ধরনের লেখা, লেখবার অধিকার আছে কিনা, তা নিয়েই আমি দৃঢ়ভাবে সন্দিহান। তবুও লেখতে মন চাইলো তাই লেখলাম।

আমার লেখার হাত ভালো না। আমি জানি সেটা। আমার থেকে অনেক ভালোই অনেক লোকে লেখে। তবু আমি লেখি। কেন লেখি ? না লেখলে কি হয় না ? এর উত্তর আমি জানি না।

আমি আসলে অন্যকারো জন্য লেখি না। লেখি নিজের জন্য। আমার লেখা কেউ পড়লে খুশি হই। কেউ ভালো মন্তব্য করলে আনন্দিত হই, কেউ সমালোচনা করলে বিচলিত হই। হ্যা, তারপরও আমি বলবো, আমি লেখি নিজের জন্যই।

আমার ব্লগে যারা এসে রোজ আমার লেখা পড়ছেন, আমার সব সুহৃদ বন্ধু কিংবা বড়ভাইরা, যারা মন্তব্য করছেন আমি তাদের সবার কাছেই ঋণী। তারপরও সবিনয়ে বলতে চাই, কেউ না আসলেও আমি লেখবো।

ইন্টারনেট এসে প্রকাশনা আজ এক অর্থে অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। আজ থেকে ১০-১৫ বছর আগেও হয়ত আমার বয়েসী কোন তরুন কিংবা কোন কিশোর লিখেছে। হয়ত আমার চেয়ে ভালোই অনেকে লিখেছে। কিন্তু তা পড়তে পারেনি কেউ। আর এখন আমি ছাইপাশ যাই লেখি, তাই প্রকাশ হয়ে যায়। এই ট্রেন্ড ভালো না মন্দ সে নিয়ে তর্কে আমি যেতে চাই না, শুধু এটাই বলতে চাই, প্রযুক্তির জন্যই আজ লোকে আমার লেখা পড়ে।

লেখালেখির ক্ষেত্রে আমার কিছু বদ্যাভাস আছে। পরিচিত/পরিচিতা অনেকেই আমাকে এর জন্য মৃদু অনুযোগ করেছেন, আমি যথেষ্ট মনোযোগী না। কথাটা সর্বাংশে সত্যি। আমি লেখি চরম অবহেলার মধ্যে। আমার লেখার মধ্যে অযত্নের ছাপ স্পষ্ট তাও আমি স্বীকার করি। খাতা কলমে আমার কিছু লেখা হয় না। আমি লেখতে বসি কী বোর্ডে। হয়ত তখনো ৪-৫ টা মেসেঞ্জার উইন্ডো ব্যস্ত থাকে। গান বাজতে থাকে উচ্চ স্বরে। আমি যা মাথায় আসে তাই লেখি। কোন দ্বিতীয় চিন্তা করি না। কখনোই দ্বিতীয়বার পড়ে দেখি না কি লেখলাম, এমন কি বানান পর্যন্ত না। তাই ফলাফল যেমন হওয়ার তেমনি হয়। এখন হয়ত আপনি ভাবছেন,"তো বাপু, কি দরকার এত ঢং করে, নখরামি করে লেখবার ? কেউ কি মাথার দিব্যি দিয়েছে যে লেখতেই হবে ? " কিন্তু ব্যপারটা আসলে তাই হয়ে গিয়েছে। আমাকে লেখতেই হবে। আমার নিজের জন্য।

মাঝে মধ্যে আমি কবিতা নামক কিছু উদ্ভট বস্তু লেখার চেষ্টা করি। সেগুলো নিয়ে এ যাবৎকালে সর্বাধিকবার সমালোচনার শিকার হয়েছি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অভিযোগের তীর এদিকেই যে, আমার লেখা কবিতাগুলি বহুলাংশে আধুনিক কবিতা দ্বারা অণুপ্রানিত এবং অনেক সময়ই তা একদম প্রথাগত আধুনিক কবিতার রূপ ধারণ করে। এমন অভিযোগও পেয়েছি যে এমন কবিতা শুক্রবারের সাময়ীকিতেই প্রচুর পাওয়া যায়। এর কোন অভিযোগ খন্ডানোর ক্ষমতা আমার নেই, আমি তা চাইও না। সব অভিযোগই আমি মাথা পেতে নিয়েছি। বিনীতভাবে বলতে চাই যে, তবু আমি লেখবো।

আমার এই ক্ষুদ্র জীবনের পরিসরে আমি বেশ বড়মাপের ব্যর্থ একজন মানুষ। কোন ধরনের কাজেই আমার বলার মত দক্ষতা নেই। সে নিয়ে অবশ্য আমার তেমন মাথা ব্যাথাও নেই। আর বাকি ১০টা ব্যর্থ কাজের মতই আমি লেখে যাবো। হয়ত কেউ পড়বে না, হয়ত কেউ পড়বে।

ব্যর্থতার অভিযোগে আর সব কাজ ছাড়লেও হয়ত লেখা আমি ছাড়বো না।

কারন, আমি লেখতে ভালোবাসি।

পুনশ্চঃ আমার লেখার অনেক সমালোচকই হয়ত এ লেখাটি পড়বেন। তাদের উদ্দেশ্যে আমি সবিনয়ে বলতে চাই, এই লেখার উদ্দেশ্য কোন ক্রমেই কাউকে আঘাত করা নয়। এমনও নয় যে, আমি সমালোচনা সহ্য করতে পারি না। আমি আপনাদের যেকোন পরামর্শ সাদরে গ্রহন আগেও করেছি, ভবিষ্যতেও করব। তাই আমার লেখার সম্পর্কে যে কোন ধরনের পরামর্শ নিসংকোচে জানান। আশা করি, এ নিয়ে কোন ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ নেই !


মন্তব্য

রাবাব এর ছবি

এমন অভিযোগও পেয়েছি যে এমন কবিতা শুক্রবারের সাময়ীকিতেই প্রচুর পাওয়া যায়।

শেষ পর্যন্ত এতদূর? হা হা হা হা! লেখতে থাকেন হুজুর!

সবজান্তা এর ছবি

ঝড়, বৃষ্টি, ক্যাটরিনা, কারিনা কিংবা সিডর যাই হোক না কেন, আমি যে লেখতে থাকবোই, তেমন নিশ্চয়তা তো লেখাতেই দিয়েছি।

ধন্যবাদ। আজকাল তোমাকে আমার লেখার বড় পাঠক বলেই মনে হচ্ছে চোখ টিপি
-----------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আপনি আসলেই সবজান্তা, কারণ আপনি কেন লেখেন তা আপনি জানেন।

অমিত আহমেদ এর ছবি

আমার সাধুবাদ রইলো।


ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল

আড্ডাবাজ এর ছবি
সবজান্তা এর ছবি

ভবিষ্যত আর কি !!

মঈন চাচু প্রেসিডেন্ট হবেন, আর আপনার কপালে দেশে আসলে দ্বীপান্তর এর সাজা আছে রাষ্ট্রদ্রোহিতার দায়ে দেঁতো হাসি
----------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ

মুজিব মেহদী এর ছবি

'কেন লিখি?' জাতীয় প্রশ্নের জবাবে বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিনের জন্য আমাকে একাধিকবার লিখতে ও বলতে হয়েছে। মনে পড়ে, প্রতিবারই আমার গলদঘর্ম হবার অবস্থা হয়েছে। এ ধরনের প্রশ্নের সদ্জবাব করা আসলে মুশকিল।

সবজান্তার লেখাটা সে দৃষ্টিকোণ থেকে ভালো লাগল। তবে তিনি লিখতেই থাকবেন এই নিশ্চয়তাকে অতটা সঙ্গত মনে হয় নি, বরং চোপার জোর মনে হয়েছে। কারণ কেজো নয় এমন লেখা (রুটিরুজি বা কাজের সঙ্গে যুক্ত নয় এমন সৃজনশীল লেখাকে আমার অকেজো লেখাই মনে হয়) চাইলেই সম্ভবত লেখা যায় না, যতই একজন পণবদ্ধ থাকুন না কেন। এর জন্য ভেতর দিক থেকে একটা তাড়া থাকা লাগে। সেই তাড়াটা যতদিন বোধ করা যাবে, ততদিনই কেবল লেখা এগোবে।
..................................................................................
অপরিপক্কতা সবসময় একরোখা হয়, আর পরিপক্কতা হচ্ছে সর্বগ্রাহী
-সেলিম আল দীন

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

সবজান্তা এর ছবি

হা হা ......

ধন্যবাদ খুব সুন্দর একটি মন্তব্যের জন্য।

আসলেই আমি যা বলছি তা চোপার জোরই। আমি এখনো বেশ তরুনই বলা যায়। সম্মান চতুর্থ বর্ষের ছাত্র সবে মাত্র ! জীবন তার পথের কোন মোড়ে আমার জন্য কি লুকিয়ে রেখেছে, তার কিছুই আমি জানি না।

তবে প্রবল প্রতিকূল পরিবেশে নিমজ্জিত হওয়া ব্যতীত, আশা করা যায়, আমি আমার লেখা অব্যাহত রাখবো।

ধন্যবাদ সুন্দর, যৌক্তিক এবং সুপাঠ্য মন্তব্যের জন্য !
----------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ

এহেছান লেনিন এর ছবি

আমার এই ক্ষুদ্র জীবনের পরিসরে আমি বেশ বড়মাপের ব্যর্থ একজন মানুষ। কোন ধরনের কাজেই আমার বলার মত দক্ষতা নেই। সে নিয়ে অবশ্য আমার তেমন মাথা ব্যাথাও নেই। আর বাকি ১০টা ব্যর্থ কাজের মতই আমি লেখে যাবো। হয়ত কেউ পড়বে না, হয়ত কেউ পড়বে।

আপনি লিখে যান, আমার মতো ব্যর্থরা পড়ে যায়। এটাই নিয়ম। আর যাই হোক আপনার লেখা ভালো লেগেছে। ভালো লেগেছে বলেই কষ্ট করে মন্তব্যটা লিখতে ভুলিনি।

ভুলিনি বলতে লেখাটা বোধ করি ভালো লিখেছেন। ব্লগে এমন অনেককেই পাওয়া যায় দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য একই লেখা বারবার দিচ্ছেন। আপনি এমন না।

ধন্যবাদ।

রক্তে নেবো প্রতিশোধ...

সবজান্তা এর ছবি

এবার কিন্তু বেশ লজ্জা পেলাম।

আপনি ব্যর্থ হলেতো মুশকিল, তাহলে আমি নিজের গায়ে ব্যর্থ তকমাটাও লাগাতে পারছি না। আরো পরাজিত কোন বিশেষণ খুঁজতে হবে।

আপনারা অনেক পড়াশোনা করেছেন, বিস্তর লেখালেখিও করেছেন। সেই তুলনায় আমার পড়াশোনা কিংবা লেখার অভিজ্ঞতা দুটোই অপ্রতুল।

আপনার ভালো লেগেছে যেনে অত্যন্ত প্রীত হলাম।

ভালো থাকবেন।
---------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ

অতিথি লেখক এর ছবি

মুজিব মেহদী লিখেছেন:
চাইলেই সম্ভবত লেখা যায় না, যতই একজন পণবদ্ধ থাকুন না কেন। এর জন্য ভেতর দিক থেকে একটা তাড়া থাকা লাগে। সেই তাড়াটা যতদিন বোধ করা যাবে, ততদিনই কেবল লেখা এগোবে।

আমি কবি মুজিব এর উপরের মতের সাথে একমত যদিও আমি নিজে লেখক নই।

নুরুজ্জামান মানিক

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

ভালো লাগলো আপনার এই লেখাটাও।
লিখে যান যদ্দিন ভেতরের এই আহ্বানটা বাজতে থাকে।

সবজান্তা এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ !
-----------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ

দলছুট‌ এর ছবি

aapnar lekha pore bhalo laglo. ami o majhe majhe habijabi lekhar chesta kori, kori karon vitor theke emon jontrona shuru hoy kichu lekhar jonno, tokhon na lekha porjonto shanti pai na. Apnar sathe amar arekta mil ache, ami o ki likhlam na likhlam ta ar pore dekhi na.

গৌতম এর ছবি

আররে... এটা তো আমার লেখার কথা ছিলো! আমার মাথায় ঘুরতেসিলো কথা কয়খান। 'ঘরের কথা পরে জানলো ক্যামনে?'

যাই হোক, লেখার কস্ট এবং কষ্ট- দুটোই বাঁচায়া দিলেন। তয় আপনার লেখা তো শুক্রবারের সাময়িকীর মতো হয়, আমারটা তো তাও না। তারপরও লিখি- যেমন ঘুমাই, বাথরুমে যাই, পড়ি এবং লিখি। বাপ-মায় কষ্ট করে এবং শিক্ষকরা বেত দিয়ে অ আ ক খ শিখাইসিলেন, সেই প্র‌্যাকটিসটা চালিয়ে যাচ্ছি।

এই লাইনটা আপনার পড়া নিষেধ- লেখাটা ভালো লেগেছে।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

সবজান্তা এর ছবি

ওরে ! গৌতম দা ! আপনার আমার লেখা ভালো লাগসে । দেঁতো হাসি

আমি কিন্তু আপনার লেখার বেশ বড় পাঠক একজন, সেই সচল করার থ্রেট থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত ( ছুটা গল্পগুলা পর্যন্ত ) সবই কিন্তু আমি পড়সি দেঁতো হাসি

নিষেধ দেইখা শেষ লাইনটা পড়ি নাই। কি লেখসিলেন দেঁতো হাসি
------------------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ

অতিথি লেখক এর ছবি

লাগে রাহো সবজান্তা ভাই

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।