অবঅচেতন

এরশাদ আলমগীর এর ছবি
লিখেছেন এরশাদ আলমগীর (তারিখ: মঙ্গল, ১৫/০১/২০০৮ - ৮:৫৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অনেকদিন ধরে কিছুই লিখিনি সচলায়তনে। আসলে কিছু লিখতে পারছিলামনা। তবে বেশ কিছুদিন আগে অনেক রাতে আমার শোয়ার ঘরের সোফায় হেলান দিয়ে বসে ছিলাম। চোখ মুদে আসছিল। তবুও বসে ছিলাম; কারণ সেদিন কেন যেন মনে হচ্ছিল কিছু একটা লিখি। আসলে আমার এই আর্জটা প্রতিদিন প্রশ্রয় পায়না। সময় খুব খারাপভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে জীবন থেকে। সে কথা আজ থাক্। তো,সেদিন প্রচন্ড ঘুম জড়ানো চোখে আমার (বেশ কিছু মাস ধরে সযত্নে সংরক্ষিত) কালো মলাটে রিংবাইন্ড করা নোটবুকটাকে প্রথমবারের মত কাজে লাগানো যাবে তা ভেবেই খুব পুলক বোধ হচ্ছিল। রুমে টেবিল ল্যাম্পটা জ্বলছে। লেখার জন্যে অতটুকু আলোই যথেষ্ট। সামনে টিভিটা মিউট করে রাখা। আমার স্ত্রী গভীর নিদ্রায় শায়িতা। রুমের সিলিংয়ে নানা রঙের আলো তাদের ব্যস্ত পদচারণায় মুখরিত করে চলেছে সমস্ত ঘর-তবে খুব নিরবে। ধীরে ধীরে কোলাহলে ভরে যাচ্ছে চারপাশ। নিরব এই কোলাহল কয়েক মুহূর্ত পর অর্থবহ হয়ে উঠতে লাগল। আমি কান পেতে মাথাটা আরো একটু পেছনে ফেলে দিয়ে চুপচাপ বসে রইলাম। নির্বাক কলমটা হাতে নিরুপায় হয়ে বসে রয়েছে। আমার ঘুমের আবেশ সমস্ত শরীরকে গ্রাস করছে। আমি টের পাচ্ছিলামনা। তবে আর কিছুই স্মৃতিতে ধরে রাখতে পারছিনা। শেষ কোন বর্ণের আলো আঘাত করেছিল অর্ধনমিত চোখের পাতা, সিলিংয়ে অস্পষ্ট জড় আকুতি, জানালার বাইরে বৃষ্টির ঝাপটা-কিছুইনা। এমন সময় হঠাৎ মনে হল আমার হাত চলতে শুরু করেছে। কলমটা দূরবর্তী স্মূতির কোন জানালার কপাটের মত যেন একটা চাপা শব্দ করে চলতে শুরু করলো। আমি আর তেমন কিছু দেখতে পাচ্ছিলামনা। দেখতেও ইচ্ছে হচ্ছিলনা।

আমার নোটবুকটা ভরে উঠছিল। আমি কি ভাবছিলাম তখন তাও আজকে আর মনে পড়ছেনা।

তবে কিছুক্ষণ পরে দেখি আমি সম্পূর্ণ চিন্তাশূণ্য হয়ে পড়েছি (মানুষ কি এরকম কোন পর্যায়ে আসলেই পেৌছতে পারে!) আমার লেখার শেষ ইচ্ছেটার কিংবা শক্তির মৃত্যু কিভাবে ঘটেছিল বা কেন ঘটেছিল তাও আর মনে পড়েনা। নোটবুকটা বন্ধ করে সোফাতেই রেখে দিয়েছিলাম। হঠাৎ করে জড়জীবন গুলো স্থীর হয়ে গেল। নির্বাক হয়ে গেল সমস্ত কোলাহল। আমি ঘুমোতে চলে গেলাম। ঘরটা অন্ধকার হয়ে গেল বাতি নেভানোর সাথে সাথে।

এরপর অনেক মাস পার হয়ে গেছে। নতুন বছর এসেছে। আমি সেদিন কি লিখেছিলাম তা আর একবারের জন্যেও পরে দেখিনি কিংবা দেখার তাগিদ বোধ করিনি। আজ আমার সহধর্মিনী তার পছন্দের একটা গানের লিরিক লেখার জন্যে আবারো সেই নোটবুকটা খুলল। হঠাৎ তার চোখে পড়ে গেল সেদিন রাতের সেই অসচেতন লেখাটা। আমি তখন সচলায়তনে অন্যদের ব্লগ গুলো দেখছিলাম। ও চুপচাপ লেখাটা পড়ছিল বুঝতেও পারিনি। জানতে পারলাম যখন ও আমার কাছে জানতে চাইল কবের লেখা সেটা।
আমি নোটবুকটা হাতে তুলে নিলাম। পড়লাম। নিজের অবচেতনের কন্ঠস্বর শুনতে খুব ভালো লাগলো। ইচ্ছে হচ্ছে বাকি সবার সাথে একটা অবচেতন স্বকথন তুলে ধরি। আগেই জানিয়ে রাখি লেখাটা অসম্পূর্ণ। তবে আমার লেখাটার সম্পূর্ণতা থেকে সেদিনের অচেতন বোধের স্মৃতি আমার কাছে অনেক বেশি তাৎপর্যবহ।

--------------------------------------------
অদৃশ্য ব্যস্ততার নিমোর্হ আয়োজনে

একঘেয়ে নিয়মে রাত্রিযাপন-যেমন

সাদা কাগজের পূত সরবতা তার অর্থহীন

শৃঙ্খল বেহিসেবের পঁাচিলে হেলান

দিয়ে বিস্মৃতির নিরন্ন উদ্গার

নিরুপায় শব্দবহে মুক্ত করে

শ্লীলতাহীন বিলাসিতার মেৌন

মিছিলে---প্রতীক যেন.. .. .. .. ..

.. .. .. .. .. .. .. .. ... ... ... .. ...

(এরপরের ঘটনা সবাই ইতিমধ্যেই জেনে গেছেন।)

http://youtube.com/watch?v=pARWwOkED5U


মন্তব্য

এরশাদ আলমগীর এর ছবি

আমিও হয়ত আপনার তরতাজা এই মন্তব্যটা পড়ার জন্যেই কম্পিউটার সাট্ ডাউন না করেই ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ধৈর্য্য ধরে পোষ্টটা পড়ার জন্যে অসংখ্য ধন্যবাদ।তবে আমরা মানষেরা এত জটিল চিন্তায় অভ্যস্ত, তার লেখা সহজ হয় কি করে বলেন?

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

কবিতাগুলো পড়ে একটু সভ্য হতে চাই মাঝে মাঝে। কিন্তু বুঝতে খুবই কষ্ট হয়। সবাই এতো কঠিন করে লিখে।

আপনারে আর কি বলবো, আপনি তো ঘোরের মধ্যে লিখছেন বলে আগেই হাত তুলে রাখছেন।

আগের উপক্রমণিকাটুকু পড়ে ভালো লাগছে। কারণ বুঝতে কষ্ট হয় নাই। ঐটাতেই আপনাকে একটু বুঝলাম!

নোটবুকটা ভরে ফেলুন।

এরশাদ আলমগীর এর ছবি

নোটবুকটা ভরে ফেলুন।

খুব কঠিন প্রস্তাবনা। যেমনটা বলেছিলাম, আমার একটা উদ্ভাসনের (এপিফ্যানাস অনুভূতি)প্রয়োজন পড়ে কিছু একটা কাগজে তুলতে যদিও মাথায় কত শত কথার ভার নুজ করে দিচ্ছে আমাকে দিনের পর দিন। এ যাবৎ আমার বিফলতার স্বাক্ষর দুটো অসম্পূর্ণ উপন্যাস (একটা বাংলা ্ও অপরটা ইংরেজী), যা আর কখনও হয়তো শেষ হবেনা আর আমিও হয়ত কখনও সে লেখাগুলোর দেখা পাবোনা। কারণ খাতাগুলো এখানে আসার সময় ফেলে এসেছিলাম; শুনেছি কোন এক বর্ষাকালে অসাবধানতা বশতঃ আমার ফ্ল্যাট্ টা আংশিক প্লাবিত হলে রুমের ফ্লোরে রাখা কয়েকটা বইয়ের বক্সের সাথে সে লেখাগুলোও ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে।
আর এখানে আসা অব্দি আরেকটা ইংরেজী উপন্যাস লেখায় হাত দিয়েছি। কিন্তু গত কয়েক মাস সে লেখার সাথেও মুখ দেখাদেখি প্রায় বন্ধ। তাই আপনার কথাটা আশীর্বাদের মত শুনালো। তাই যেন হয়!

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

শুভ জন্মদিন।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।