বাংলাদেশ, মাই গোল্ডেন বেঙ্গল

ফারুক হাসান এর ছবি
লিখেছেন ফারুক হাসান (তারিখ: মঙ্গল, ১৫/০১/২০০৮ - ১২:২১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

যদিও নতুন বছর শুরু হয়ে গেছে তাও প্রায় সপ্তা দুয়েক আগে, আমাদের কেমিকৌশল বিভাগ (ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সিঙ্গাপুর) থেকে নিউ ইয়ার পার্টির আয়োজন করা হলো গত শুক্রবার। পার্টি বলতে খুব একটা আহামরি কিছু না- স্ন্যাকস, গেট টুগেদার আর ছুটকো গেমস। চিলি কনটেস্টে ম্যাক্সিক্যান চিলি চাঁখতে গিয়ে ঝালের চোটে একচোট কান্নাকাটি করাও হলো। 'বেলুন ফাটাও'তে এক গোয়ার ইরানি বেশ নর্তন কুর্দন করেও হেরে গেলো এক মিনকা ইন্ডিয়ানের কাছে। আমাদের শিমা দুটো গেমসে প্রাইজ পেল।
আর ছিলো ডিপার্টমেন্টে আমরা যারা বাংলাদেশী ছাত্রছাত্রী আছি তাদের তৈরী একটা উপস্থাপনা- বাংলাদেশের উপর। উপস্থাপনার ব্যাপারটা অন্যান্য দেশের জন্যও ঐচ্ছিক থাকলেও শুধু আমরাই করলাম- এই বিশ্বাস থেকে যে, যে কোনো মওকায় বাংলাদেশকে তুলে ধরা আমাদের এখন এক বড় দায়িত্ব হয়ে দাড়িয়েছে, আমাদের স্বার্থেই। বিদেশে অনেককেই বাংলাদেশিদেরকে ঢালাওভাবে ইন্ডিয়ানদের কাতারে ফেলে দিতে দেখা যায়। আমরা যে ভারত কিংবা ভারতের কোনো অঙ্গপ্রদেশ কিংবা পাকিদের ভাই-ব্রাদার না, আমরা যে বাংলাদেশি, বাংলাদেশ বলে যে আলাদা স্বাধীন একটা দেশ আছে, এই ব্যাপারটা চোখে আঙ্গুল দিয়ে সবাইকে দেখানো দরকার হয়ে পড়ছে ক্রমশই। উপস্থাপনায় এই দিকটার উপরেই নজর ছিলো বেশি।

যদিও প্রফেশনালিজমের ধারে কাছেও না; ভালো, বস্তুনিষ্ঠ আর বলিষ্ঠ উপস্থাপনার জন্য যতটুকু সময় নিয়ে এটা প্রস্তুত করা প্রয়োজন ছিলো তার নুন্যতমও করা হয়নি, তবু ইচ্ছাটা বজায় থাকায় যা হয়েছে তাই বা কম কি!

এখানে একটা কথা বলা দরকার। উপস্থাপনাটা প্রস্তুতির সময় এতে জড়িত সবারই ইন্টারনেট ঘাটতে গিয়ে নেতিবাচক ধারণাই হয়েছে। যদিও কিছু কিছু প্রচেষ্ঠা লক্ষ্য করা যায়, তবু অন্তর্জালে বাংলাদেশকে বিশ্ববাসীর সামনে সংক্ষিপ্তাকারে উপস্থাপন করার নিদারুণ অভাব রয়েছে- একথা স্বীকার করতেই হবে। প্রপাগান্ডা আর আন্তর্জাতিক অবহেলার ভীড়ে বস্তুনিষ্ঠ আর সত্য ইতিহাস চাপা পড়ে যাচ্ছে। এক ইউটিউব ঘাটলেই দেখা যায়, ভারতীয় আর পাকিস্তানীরা যার যার মত করে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে বর্ণনা করছে আর তাদের পদলেহনকারীরা সেই সুযোগে উপস্থাপন করছে মুক্তিযুদ্ধের বিকৃত ইতিহাস। সর্বোপরি রয়েছে আশ্চর্য্য সুন্দর বাংলাদেশকে বিশ্বমানসের সামনে তুলে ধরার নিদারুণ অভাব। অন্তর্জালে বাংলাদেশ এখনও উঠে আসেনি যতটা দরকার ছিলো। সবখানে কেবল অভাব আর অভাব।
তাই বাংলাদেশকে তুলে ধরার জন্য, যে আন্তর্জাতিক ছাত্র বা বন্ধুটি বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছুই জানেনা, বা জানলেও ভুল জানে, যারা ভুল ধারণা নিয়ে আছে তাদেরকে উদ্দেশ্য করেই এই উপস্থাপনাটা তৈরি করা হলো। সুসংসবাদ এই যে, তা পরিবেশিতও হলো কোনো ঝুটঝামেলা ছাড়াই।

সচলদের সাহায্য নিয়ে এটা তৈরী করতে পারলে বেশ হতো, কিন্তু সময় ছিল না। তার উপর আগের দিন সচলায়তন ডাউনও ছিলো অনেকক্ষণ। কনটেন্ট নিয়ে চিন্তা করার সময় তো একদমই ছিলো না। যাই হোক, উপস্থাপনাটা নীচে তুলে দিলাম।

.
.
কিছুদিন আগে সিঙ্গাপুরের আরেকটা বিশ্ববিদ্যালয় এন.টি.ইউ (নানইয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি)র বাংলাদেশি ছাত্ররা মিলে করেছিল 'বাংলাদেশি সন্ধ্যা'। সেখানেও আমাদের মতনই একটা উপস্থাপনা ছিলো, ছিলো সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড, পিঠা প্রদর্শনী, বাংলাদেশি টি-শার্ট বিতরণ। এরকম বিশ্বের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই বাংলাদেশী ছাত্ররা বাংলাদেশকে সামনে নিয়ে আসেন সুযোগ পেলেই। আশা করি, তারাও তাদের কর্মকান্ড অন্তর্জালে ছড়িয়ে দেবেন।
উপস্থাপনাটি ইউটিউবেও তুলে দিলাম এই আশায় যে বাংলাদেশ নিয়ে যারা আগ্রহী তারা একটু হলেও বাংলাদেশকে আমাদের দৃষ্টিকোণ থেকে জানতে পারবেন। একে অনেকটা প্রচারণাও বলা যায়। বাংলাদেশকে তুলে ধরার যেকোন প্রচেষ্ঠাকে অন্তর্জালীয় প্রচারণায় আনতে হবে, যত বেশি সম্ভব। বাংলাদেশ মানেই বন্যা, সাহায্য,কিংবা ইন্ডিয়ান রেস- আর নয়।

কৃতজ্ঞতা পর্ব:
উপস্থাপনার অধিকাংশ ছবিই ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত। উপস্থাপনায় কন্ঠ দিয়েছে সুদীপ্ত কণিকা দিশারী। এছাড়া মৃদুতালে ব্যবহার করা হয়েছে মাহমুদুজ্জামান বাবুর গলায় 'আমি বাংলার গান গাই' এবং শেষের দিকে হাবিব ওয়াহিদের 'চলো সবাই'। এর জন্য বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। বিনীতভাবে আশা করছি, কপিরাইট নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না।
তৈরির বিভিন্ন পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য জড়িতদের মধ্যে ছিলো রাজীব সাহা, মো. ইফতেখার হোসেন, ফারুক হাসান, আকলিমা আফজাল সহ বিভাগের সকল বাংলাদেশি ছাত্র।


মন্তব্য

ফারুক হাসান এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ। যারা জড়িত ছিলেন পোস্টে তাদের নাম উল্লেখ করেছি। আপনার সাধুবাদ সবার কাছে পৌছে যাবে।
----------------------------------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী-
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

সাধুবাদ আমার পক্ষ থেকেও। বুঝতে পারছি সময় পেলে অনেক ভালো কিছু করার সামর্থ্য আপনাদের আছে।

বড়কথা হলো সার্ম্যটা আপনারা একটু হলেও ঝেড়েছেন। আমাদের অনেকেরই কি করা উচিৎ সেটার একটি ইঙ্গিত এখানে পাওয়া যাবে।

গানটা শুধু ইন্স্ট্রুমেন্টাল বাজাতে পারলে আরোও ভালো হতো। গানটা একটু ডিস্ট্রাক্ট করে। বিশেষতঃ যেহেতূ একটা অডিও রোল অন আছে।

ফারুক হাসান এর ছবি

গানটার ব্যাপারে আপনি ঠিকই বলেছেন। ডিস্ট্রাকশনটা আরো বেশি হয়ে গেছে ভিডিও ফরমেটে ট্রান্সফার করার পর। শুরুতে অতটা খারাপ লাগছিলো না। তবে ইন্স্ট্রুমেন্টাল বাজাতে পারলে আসলেই ভালো হত।
প্রেজেন্টেশানটা আসলে উঠে এসেছে অনেকটা বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে। চেহারায় মিল থাকার কারণে বিদেশে অনেকেই আমাদেরকে ভারতের নাগরিক বলে মনে করেন। সেটা ঠিক আছে, কিন্তু সমস্যাটা হয় তখন যখন ভারতীয় বা পাকিস্তানিদের কুত্ সিত ব্যাপারগুলোকেও আমাদের সাথে গুলিয়ে ফেলা হয়। আর আমাদের অর্জন আর ক্রেডিটগুলো বাংলাদেশের অর্জন বা ক্রেডিট না হয়ে চলে যায় ভারতের দখলে।
আর পাকি পোলাপানগুলার ভাব এমন যে আমরা এখনও ওদের ভাই লাগি।
----------------------------------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী-
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

উত্তম কাজ করেছেন। দেশের বাইরে আমাদের পরিচয়ের সংকট কম ভোগায় না। যদিও আগের মতো বাংলাদেশ নামটা আর অতো অপরিচিত নয় বিদেশীদের কাছে, কিন্তু অনেক ভুলভাল ধারণা প্রচলিত হয়ে আছে। এই জঞ্জালগুলো পরিষ্কার করতে হবে।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

সাফি এর ছবি

দারুন ফারুক ভাই। পোস্টটা আগে দেখিনি দেখলে কাজে দিত। ভিডিও টা কি এইখানে পোস্ট করতে পারি, কৃতজ্ঞতা উল্লেখপূর্বক?

ফারুক হাসান এর ছবি

অবশ্যই!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।