দ্বীপবাসী দিন

ফারুক হাসান এর ছবি
লিখেছেন ফারুক হাসান (তারিখ: শুক্র, ০৪/০৭/২০০৮ - ১২:৫৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১.
বাংলাদেশ থেকে সিংহপুরে ফিরেছি সপ্তাহের শুরুতে, কিন্তু এখনো কোনোকিছুতেই মন বসাতে পারছি না। অন্যান্য বারের চেয়ে এবার খারাপ লাগছে বেশি। বেশ দ্রুত কেটে গেল দেশে কাটানো দিনগুলি। অনেকের সাথে অনেকদিন পর দেখা হলো, অনেকের সাথে হলো না।

কোথায় ফিরে এসে ব্যস্ত হয়ে যাবো তা না, ব্যস্ত ছুটি কাটিয়ে এসে এখন ঝিমাচ্ছি। প্রফেসর আউট অফ টাউন, দিনগুলি নিশ্চিন্ত আরামের, ঢিলেঢালা। রক্তে এখনো দেশি নিকোটিনের চিকন আসক্তি, জিহবায় এখনো খিরশাপাতি আমের স্বাদ, কানে এখনো মায়ের কন্ঠস্বর, বন্ধুর হাঁক। গায়ে এখনো যানজটের স্থবির ধুলিকণা।
নেক্সট উইকএন্ডের মধ্যেই ঝেড়েমুছে আবার দ্বীপান্তরের পরিপাটে অভ্যস্থ হয়ে যাবো, সবকিছু ওকে-লা হয়ে যাবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন ব্যবস্থার ব্যবস্থাপনায় যারা আছে তাদেরকে কেন যেন ইদানিং চড়থাপ্পরের উপর রাখতে ইচ্ছে হচ্ছে। অব্যবস্থাপনার চূড়ান্ত। অযথাই একটা অহেতুক ঝামেলা বাধানোতে এদের জুড়ি নেই। বালস্য বালেরা প্রতি সেমিস্টারের শুরুতে এমন প্যানিক তৈরি করে যে ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়, যদি পরের বার এপার্টমেন্ট না পাই! সিঙ্গাপুরে বাসাবাড়ির ভাড়ার এখন যে আকাশচুম্বি অবস্থা, ক্যাম্পাসের মধ্যেকার এই সবেধন নীলমণি এপার্টমেন্ট না পেলে মাঠে মারা যেতে হবে। কিন্তু সমস্যা সেটা নয়, সমস্যা হলো এর ব্যবস্থাপনায় থাকা লোকজনের খামখেয়ালি। মাত্রই পুরোনো এপার্টমেন্টে উঠেছি, কালকে মেইল পাঠিয়েছে- আগামী মাস থেকে অন্য এপার্টমেন্টে থাকতে হবে। আরে বাবা, তাহলে চেক ইনের আগেই বলতি!
মাত্র দেশ থেকে ফিরেছি, মন মেজাজ এখনো নরম। ভাবছি কালকে ত্রিশ মিনিটের বেশি ঝাড়া ঠিক হবে না।

২.
এবারে দেশে বৃষ্টিভেজা ভ্রমণও হয়েছে কিছুটা। তবে ততটা ভালো লাগেনি।
আগের সেই তীব্রতা কি হারিয়ে গেল? না কি এখন বড় বেশি আবেগশূন্য হয়ে গেছি? কে জানে!
তবে বৃষ্টি দেখেছি
ভালো লেগেছে।

সিঙ্গাপুরে গরম পড়েছিলো গত কয়েকদিন। আজ রাতে বৃষ্টি হচ্ছে। এখানে এই একটা জিনিস আমার পছন্দ- ঝুম বৃষ্টি। দেশের রাত দুপুরে হঠাত ঘন বর্ষনের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার স্বর্গসুখ যদিও পাওয়া যায় না, তবু ভালো লাগে।

রাতের খাওয়ার পর প্রায়ই বাপ-ব্যাটা মিলে টিভিতে খবর দেখা হলো এবার। খবর এবং খবরের বিশ্লেষণ- বেশ জম্পেশ, বেশ রসালো ব্যাপার। রাতের এসময়টাতে সবকটা চ্যানেলে হয় খবর না হয় সরাসরি মতামতের কোনো না কোনো অনুষ্ঠান। সবগুলোই বর্তমান রাজনীতিকেন্দ্রিক। গত এক বছরে অনেক নতুন মুখের আগমন ঘটেছে টিভি পর্দায়। বোঝা গেল,সবকিছুতেই নতুন লোক। নব্য অর্থনীতিবিদ, নব্য ব্যবসায়ী নেতা, নব্য অভিনেতা- সবাই নব্য। সবচেয়ে নব্য তাদের কথাবার্তা, চালচলন।

বাবা এলপিআরে আছেন। আগামী বছর অবসরে যাবেন। একঘুয়ে জীবনের শুরুর দিকটাই খুব যন্ত্রণার। সেই দিক থেকে রাতের এই টিভিপর্বটা তাকে যথেষ্ঠ হাস্যরস আর প্রাণোন্মাদনা জুগিয়ে যাচ্ছে বলে মনে হলো। যাক, দিনে অন্তত ঘন্টা দুয়েক আমোদের ব্যবস্থা হয়ে গেছে তার। প্রতি চ্যানেলে এসময় এক জিনিস: এক/একাধিক বিশেষজ্ঞ রামছাগলের উপস্থিতিতে দর্শকের সরাসরি অংশগ্রহনে রাজনীতির হালচাল ব্যাখ্যায় ব্যতিব্যস্ত প্রোগ্রাম। ঘুমানোর আগে এক নির্মল বিনোদন।

আর বিটিভি আলো করে এখনো আছেন আমাদের শরাফত ভাই। পাইলট তার চিচি গলায় যতই বিশেষজ্ঞ মতামত দিন না কেন, মন্দিরা বেদি পারলে আমাদের শরাফত ভাই কী দোষ করেছেন!

সেটাই।

উত্তরা থেকে আজিমপুর বাসভাড়া পচিশ টাকা থেকে এইবার চোখের সামনে আটাশ, তারপর বত্রিশ টাকা হয়েছে। একমাসে। তেলের দাম বাড়ায় নিশ্চই এখন পয়ত্রিশ। চল্লিশের নিচে ভালো চাল নেই। রিকশাভাড়া দ্বিগুণ- এক বছরে। সিনএনজি মোটামুটি নিষিদ্ধের পর্যায়ে ছিল- ছিনতাইয়ের ভয়ে। লোডশেডিং ছিলো, মশা ছিলো, যানজট ছিলো।

আজ চার দিন হলো তবু মনে হচ্ছে, এই দ্বীপবাস থেকে সেটা যেন লক্ষগুণ ভালো ছিলো!


মন্তব্য

ফারুক হাসান এর ছবি

হুম, কিছুই করার নেই। ঝিমানো ছাড়া।
----------------------------------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী-
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।

তানবীরা এর ছবি

এই নিয়েইতো চলছে আমাদের এইসব দিন রাত্রি

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

ফারুক হাসান এর ছবি

ভালো বলেছেন তানবীরা
----------------------------------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী-
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- বৃষ্টি রে বৃষ্টি, ঝুম বৃষ্টি। আপনাদের ঐদিকে আরাম লাগার কথা বৃষ্টির পর। নর্থ পোলীয় এলাকায় অবশ্য কিঞ্চিৎ ভিন্ন অবস্থা হয়। প্রথমে আরাম লাগে তারপর সেটা আবার ব্যারামের দিকে নামতে থাকে। মানে গায়ে হালকা উষ্ণ কাপড় চড়াতে হয়। এই জিনিষটাই বাজে লাগে।

ভাড়া বাড়া নিয়ে দুশ্চিন্তা না করাই ভালো। সয়ে যাবে একসময়, শুধু শুধু চুল খুইয়ে বা পাকিয়ে কী লাভ! আমাদের দেশে রাজনীতি নিয়ে সচেতনতা আগেও ছিলো এখনো আছে ভবিষ্যতেও থাকবে। দৈনন্দিন বাড়ন্ত দামের যতোসব জিনিষের পাশাপাশি আমাদের দেশে যে জিনিষটা এখনও বিনামূল্যে পাওয়া যায় তা হলো "মতামত"। সুযোগ বুঝে সবাই তার মতামত ঝেড়ে দেয়, দিচ্ছে এবং দেবে। এ নিয়েও টেনশনের কিছু নাই।

যাদুর বাক্সের কাজই হলো বিনোদন দেয়া। সেই বিনোদন গানেও হতে পারে আবার কিছু শিম্পাঞ্জির বিশেষজ্ঞ মার্কা মতামত শুনেও হতে পারে!

ইয়া হাবিবি
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

ফারুক হাসান এর ছবি

আপনারা যারা নর্থপোলের কাছাকাছি আছেন তাদের জন্য কষ্ট হচ্ছে- বৃষ্টির পরের পরিবেশ আর আবহাওয়াই যদি উপভোগ করতে না পারেন তাহলে তো ফাসি নিয়ে মরা উচিত!
চইলা আসেন এইদিকে।

আপনার মত করে সব দুশ্চিন্তাকে ঠেলে দূরে সরিয়ে রাখতে পারলে ভালো হতো। সর্বংসহা মনে হচ্ছে আপনাকে। এইটা একটা বিরাট গুণ। আপনি ভাই লাকী গাই!

যাদুর বাক্স নিয়ে আপনার সাথে পুরো সহমত।

----------------------------------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী-
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।

পরিবর্তনশীল এর ছবি

অনেকদিন পর।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

রায়হান আবীর এর ছবি

হুম।
---------------------------------
জানিনা জানবোনা... কোন স্কেলে গাইছে কোকিল
গুনিনা আমি গুনিনা...কার গালে কটা আছে তিল

মুজিব মেহদী এর ছবি

আপনারা তো আসেন আর চলে যান। আমাদের এসবের মধ্যেই থাকতে হয় দিনের পর দিন।

ধেয়ে আসছে কুড়ি হাত উঁচু পানি, অথচ আশ্রয়ের জায়গা নেই, ভাবুন তো একবার আমাদের দশাটা কী করুণ!

................................................................
আমার সমস্ত কৃতকর্মের জন্য দায়ী আমি বটে
তবে সহযোগিতায় ছিল মেঘ : আলতাফ হোসেন

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।