ফের্মা'র শেষ উপপাদ্য- দ্বিতীয় কিস্তি

ফারুক হাসান এর ছবি
লিখেছেন ফারুক হাসান (তারিখ: মঙ্গল, ২৩/০৯/২০০৮ - ১০:৪৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গণিত ট্যাগ নিয়ে সচলায়তনে সর্বমোট পোষ্ট ছিল মাত্র একটি। তাও আবার একটি কবিতা!

সুতরাং 'ফের্মা'র শেষ উপপাদ্য' নামের গত পোষ্টটি দেবার সময় চিন্তিত ছিলাম, আদৌ কেউ পড়লে হয়! কিন্তু দেখা গেল অনেকেরই গণিত, বিশেষত গণিতের রহস্যময়তা নিয়ে বেশ ভালোরকমের আগ্রহ রয়েছে।

প্রায় সাড়ে তিনশো বছর ধরে অপ্রমাণিত ফের্মা'র শেষ উপপাদ্যটি প্রমাণ করে ছেড়েছেন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গণিতবিদ এন্ড্রু ওয়াইলস। ১৯৯৫ সালে এই রহস্যের সমাধানের পর স্বভাবতই বিজ্ঞানের জগতে তোলপাড় উঠে। কেবল বিজ্ঞান নয়, মিডিয়াতেও ব্যাপক সাড়া পায় এই আবিষ্কার। এরই ধারাবাহিকতায় 'বিবিসি হোরাইজন'এর পক্ষে সাইমন সিং এবং জন লিন্চ একটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করেন। নিচে তুলে দিচ্ছি ইউটিউব থেকে সেই প্রামাণ্যচিত্রটি। খুবই উচ্চমার্গের চিত্র বলবো না, তবে এডিটিং ভালো, আর গণিতকে সহজভাবে এবং ইতিহাসের গল্প শোনানোর মত করে তুলে ধরা হয়েছে।

যদিও ফের্মার উপপাদ্যটি খুবই সহজবোধ্য, এই প্রামাণ্যচিত্র থেকে অন্তত এটুকু ধারণা পাওয়া যাবে যে এরকম সহজ জিনিসকে প্রমাণ করা কতটা কষ্টসাধ্যই না হতে পারে। বর্তমান যুগে কম্পিউটারের চিন্তাতীত কর্মদক্ষতা থাকার পরও কেউ যদি একটা একটা পূর্ণসংখ্যা ধরে ধরে ফের্মার উপপাদ্য প্রমান করতে চান (brute force search) তাহলে আক্ষরিক অর্থেই কিয়ামত পর্যন্ত হিসেব কষে যেতে হবে, তবু সবগুলো সম্ভাবনা (combination) যাচাই করে দেখা শেষ হবে না। কিন্তু কেউ যদি গাণিতিকভাবে প্রমাণ করে দিতে পারেন, তাহলে এত কষ্ট করার আর কোনো প্রয়োজনই নেই! সেই কাজটাই করেছেন এন্ড্রু ওয়াইলস।

যখন সবাই ফের্মার উপপাদ্যটি প্রমাণ করা সম্ভব নয় বলে হাল ছেড়ে দিয়েছেন, তখনই আবির্ভাব এন্ড্রু ওয়াইলসের।

আশা করি, প্রামাণ্যচিত্রটি ভালো লাগবে এবং অনেক প্রশ্নের উত্তর সহজাত ব্যাখ্যায় মিলবে।

১. ফের্মার শেষ উপপাদ্য

.
.

২. ইলেপ্টিক কার্ভস এবং তানিয়ামা-শিমুরা কনজেকচার

.
.
৩. তানিয়ামা-শিমুরা: ফের্মা'র উপপাদ্য প্রমাণের চাবিকাঠি

.
.
৪. ব্যর্থতা: এত কাছে, তবু কতই না দূরে!

.
.
৫. প্রমাণিত


মন্তব্য

শিক্ষানবিস এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ, লেখাটার জন্য। প্রামাণ্য চিত্রটা তো সরাসরি দেখতে পারব না। স্পিড খুবই খারাপ। ডাউনলোড করে দেখার ইচ্ছা রইল।

ফারুক হাসান এর ছবি

ডকুমেন্টারিটা আমার কাছে দারুণ লেগেছে। পারলে দেখে ফেলুন।

একবার ভেবেছিলাম, ডকুমেন্টারিটার সাথে কিছু কিছু বর্ণনাও দিয়ে দেবো। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে দেখা গেল যে ডকুমেন্টারি দেখা যত সহজ, এইটা বর্ণনা করা ততটা না। গাণিতিক জিনিস মুহুর্তেই বোরিং হবার চান্স থাকে। শেষে না আবার ভিডিওগুলি দেখার ইচ্ছে উবে যায়!

তার চেয়ে বরং ডাউনলোড করে দেখলেই মজাটা পাওয়া যাবে।

হিমু এর ছবি

ফ্যঘমা এতো প্যাঁচঘোঁচ মেরে প্রমাণের চেষ্টা কি করেছিলেন? সন্দেহটা ক্রমশ ঘন হচ্ছে। ফুটোস্কোপিক ফ্যান্টাসিটা সত্য হোলেও হোতে পারে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

ফারুক হাসান এর ছবি

দেঁতো হাসি

বজলুর রহমান এর ছবি

সবাই একসাথে বলুনঃ
"আমারও ছিল মনে, ব্যাটা(রা) তা পেরেছে কেমনে জানতে!"

আসলে এ গৌরব এমনি মুখচোরা, লাজুক, একনিষ্ঠ কর্মীকেই মানায়।

তানিয়ামার আত্মহত্যার খবরটা জানতাম না। মন খারাপ হয়ে গেল। আসলে এই প্রমাণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন অংশটা এই ভুলভাল অঙ্ক-করা কিন্তু অসধারণ ইন্টুইশনের অধিকারী গনিতবিদের সঠিক আন্দাজ থেকে এসেছে।

ফারুক হাসান এর ছবি

আসলে এই প্রমাণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন অংশটা এই ভুলভাল অঙ্ক-করা কিন্তু অসধারণ ইন্টুইশনের অধিকারী গনিতবিদের সঠিক আন্দাজ থেকে এসেছে।

আমি আপনার সাথে সম্পূর্ণ একমত। যদি তানিয়ামা'র কনজেকচারটা না থাকতো তাহলে ফের্মার উপপাদ্যের প্রমাণের এতটা কাছে কেউ আর যেতেই পারতো না। অবশ্য ফ্রেই যে কিনা তানিয়ামা এবং ফের্মা'র মধ্যে সম্পর্ক থাকার প্রথম ক্লুটা দিয়েছিল, তার অবদানও কম নয়।
আমার কাছে এই ডকুতে তানিয়ামা সম্পর্কে শিমুরার করা একটা মন্তব্য খুব ভালো লেগেছে, its not easy to make good mistakes!

আমি মাঝে মাঝেই অবাক হয়ে ভাবি, এই যে প্রতিভাবান মানুষগুলো আত্মঘাতী হয়, যদি তারা তা না হতেন, তাহলে আরো কত কিছুই যে আমরা জানতে পারতাম, আবিষ্কার করতে পারতাম! তানিয়ামা তবু আত্মহত্যার আগে তার অবদানের মধ্যগগণে ছিলেন, কিন্তু ভাবুন গালোয়া'র (Galios) কথা, যে কিনা ডুয়েল লড়তে গিয়ে গুলি খেয়ে মরার আগে মাত্র ২১ বছর বেঁচেছিলো, অথচ যাকে মনে করা হয় সর্বকালের অন্যতম একজন শ্রেষ্ঠ গণিতবিদ!

অভিজিৎ এর ছবি

হ্যা আমিও তানিয়ামার আত্মহ্যত্যার খবরটা জানতাম না। তবে কালকেই পড়ছিলাম এন্ড্রু যখন কনফারেন্সে তার প্রমাণটা হাজির করলেন, তার পর যখন ওটার ভুল বেরুলো ... কি অবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছিলেন তিনি। পরে যখন বুঝলেন ভুলটা কোথায় ...এবং সমাধানের সৌন্দর্য এমনই সরল আর অনুপম মনে হয়ছিলো তার কাছে যে তার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে শুরু করেছিলো। কি একনিষ্ঠ গনিতবিদ রে বাবা!

চমৎকার ডকুমেন্টারী, চমৎকার পোস্ট। অনেক ধন্যবাদ।



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

সবজান্তা এর ছবি

ডাউনলোড কইরা আগে দেইখা নেই ! বাকি কাহিনী পড়ে কই......


অলমিতি বিস্তারেণ

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

চমৎকার!
__________________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।