বিফোর সানসেট

ফারুক হাসান এর ছবি
লিখেছেন ফারুক হাসান (তারিখ: সোম, ০৮/১০/২০০৭ - ৫:০৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

Memory is a wonderful thing, if you dont have to deal with the past.
নয় বছর আগে একসাথে কিছুটা সময় কাটানোর স্মৃতি বুকে আগলে রেখে দুজন মানুষ বেঁচেছিলো। কোনো ঠিকানা বা ফোন নাম্বার- কিছু বদল ছাড়াই। শুধু ভিয়েনায় একবার দেখা হবার কথা ছিলো। দেখা হয়নি। বয়ে চলা জীবনের কোনো কোনো বাঁকে হয়তো কখনো তারা বাস করেছে একে অপরের খুব কাছে, তবু দেখা হয় নি। অহর্নিশ দুজন চেয়েছে দেখা হোক, হয় নি। যাপিত জীবনের মুহুর্তগুলো তারা পার করেছে আবার হয়তো দেখা হবে এই আশা নিয়ে। আমেরিকান ছেলেটি ফরাসী সেই মেয়েটির সাথে কাটানো এক রাতের স্মৃতি নিয়ে বই লিখেছে, হয়তো মেয়েটি পড়বে এই আশায়।

নয় বছর পর, সেই বইয়ের সূত্র ধরেই আবার দেখা হয় দুজনের, প্যারিসে। কিন্তু ব্যস্ত লেখক ছেলেটির এয়ারপোর্টে যাবার আগে তখন হাতে সময় বলতে একটা বিকালেরও কম, কয়েকটা মিনিট।
সিনেমার শুরুটা তখনি। প্যারিসের রাস্তায় হাটতে হাটতে ক্যাফেতে চা-সিগারেট সহযোগে, নৌবিহারে ঘুরতে ঘুরতে স্মৃতির রোমন্থন, পারস্পরিক জীবনের খবরাখবর, আরো কত কিছু!
দুজন মানুষ কেবল বকবক করতে করতে একটা সিনেমা টেনে নিয়ে যায়, দর্শককে কথায়, গল্পে আটকে রাখে, মোহিত করে তার অনুভুতিকে। দু'জন কেবল গল্প করে আর ক্যামেরা কেবল পিছায়, লং শটের ফ্রেমে ক্রমশ জমতে থাকে কিছু প্রশ্ন আর তার উত্তর। কি হতো যদি তাদের দেখা হতো ভিয়েনা'য়, কি হতো যদি তাদের দেখা হতো আরো আগেই!
কিন্তু তাদের আলাপচারিতা কেবল 'যদি' আর ফেলে আসা পানসে 'অতীত' আর নয় বছর আগে কাটানো সেই 'মোহময় রাতে'র গল্পেই সীমাবদ্ধ থাকে না। অদ্ভুত এক প্রাণ নিয়ে এগোয়। কাম, ভালোবাসা,স্বপ্ন, বাস্তবতা, হাহাকার- সব, সব যেন আগ্নেয়গিরির উদগীরনের মত প্রকাশিত হয়ে যায়।
মিনিটগুলো যতই ফুরিয়ে আসে, ছেলেটা ততই ব্যগ্র হয় আরেকটু মুহুর্ত একসাথে কাটানোর টানে। খুব সূক্ষ্ম দাগে এই প্রশ্নটা সামনে আসে, যা গেছে তা কি একেবারেই গেছে?
ছেলেটা শুধু আর কিছুটা সময় মেয়েটার সাথে কাটানোর বাহানা খোঁজে।
*
ইউটিউবের যে ভিডিও লিংকটা দিলাম, সেটা এই 'Before Sunset' ম্যুভির শেষ অংশ। মজা শেষ হয়ে যাবে ভেবে ভিডিওটা দেখতে ভয় পাবেন না। পরিচালক সাহেব নিনা সিমোনে'র 'Just in time, You meet mejust in time' গানটা কেন শোনান আমাদের?

ছবিটায় শুধু কথা, কথা আর কথা। তবে একবারের জন্যও মনে হয় না, বোরিং। একটা সাসপেন্স শেষাবধি থাকে।
বিফোর সানসেট একটা সিক্যুয়েল। প্রথম পর্বটি ছিল 'বিফোর সানরাইজ'। নয় বছর আগের সেই ঘটনাই আপনি পাবেন বিফোর সানরাইজে। তবে সূর্যাস্ত্য দেখতে হলে যে আপনাকে সূর্যোদয়ের আগের কাহিনীও দেখতে হবে এমন কোনো কথা নেই।'বিফোর সানসেট' একটি পূর্ণাঙ্গ ভালোবাসার ছবি। সব মিলিয়েই।


মন্তব্য

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

রিভিউ পছন্দ হইছে ... দেখতে হবে মুভিটা ...

ফারুক হাসান এর ছবি

ধন্যবাদ। দুটি ছবিই কিন্তু ইউটিউবে দেখতে পারেন। হাসি
----------------------------------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী-
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।

সৌরভ এর ছবি

দেখতে হয় তাহলে।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

ফারুক হাসান এর ছবি

না দেখলে মিস করবেন।
----------------------------------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী-
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।

দ্রোহী এর ছবি

Before Sunset দেখার আগে Before Sunrise দেখে নেয়া ভালো হবে।
অসাধারণ দুটো ছবি.....


কি মাঝি? ডরাইলা?

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ক্লিপ ভাল লাগলো। দেখতে হবে।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

সেই তো 'যদি' 'যদি না হয়' এর লজিক হাসি
দেখতে হবে শিগগির ।
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- সেরেন্ডিপিটির কাহিনীটা কিছুটা এরকম না?
একটা বই আর একটা ডলারের ওপর।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

ফারুক হাসান এর ছবি

'সেরেন্ডিপিটি'তে ডেসপারেশন অনেক বেশি। বলা যায় মুভির ড্রাইভিং ফোর্সই ছিল, মিলিত হবার বাসনা। 'বিফোর সানরাইজ' সেই হিসেবে অনেকটাই হালকা লিকারে চুমুক, ভেলায় ভেসে যাওয়া হাসি
----------------------------------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী-
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।

অতিথি লেখক এর ছবি

সত্যিই কি মেয়েটা আরকিছু চেয়েছিল ঐ রাত্রির পর? নাকি ওটা ছিল শুধু একটা শারীরিক অবসেশন একজন আমেরিকান পুরুষের প্রতি?
যদি বলি মেয়েটা একটা স্ট্যান্ডার্ড ফ্রেন্চ নার্সিসিস্ট যে ছেলেটিকে প্রেমে পড়ার Mixed Signal দেয় কিন্তু তার শুন্য অন্তর কিছুই ধারণ করে না। অন্য দিকে ছেলেটি একটা অবসেসিভ ক্যারেকটার যে এই সূক্ষ ছলনা বুঝতে পারেনা এবং ভালবাসার মরিচিকা জীয়িয়ে রাখে সারা জীবনের জন্য। এই অ্যাবিউজ স্টোরিতে ভালবাসা কোথায়?

- অপ্রিয়

ফারুক হাসান এর ছবি

এভাবে ভেবে দেখা হয়নি। না ভাবার কারণটাও সোজা, দরকার হয়নি।
দু'জনের কথোপকথনের মধ্য দিয়ে যে কাহিনীর জন্ম হয় তাকে আমরা এভাবে দেখতে পারি- নয় বছর আগের রাতের পর বিচ্ছিন্ন জীবন কিন্তু দু'জনেই মেনে নিয়েছিলো। ছেলেটি বিয়ে করেছে, মেয়েটি একের পর এক বয়ফ্রেন্ড পাল্টেছে, জীবন বয়ে চলেছে একজন সাহিত্তিক আর একজন পরিবেশবাদীর ঘোমটা টেনে নিয়ে। কেউই কিন্তু পুণর্মিলনের আশা করেনি। মেয়েটির বদৌলতেই আবার তাদের দেখা হয়, আর তখনই একটা সম্ভাবনা মনে উঁকি দিতে শুরু করে- সেকেন্ড চান্স পেলে আপনি কি করবেন- এই প্রশ্নের জবাব তারা দু'জনেই খুঁজতে চায়।
মেয়েটার শারীরিক অবসেশন থাকতেই পারে ছেলেটার প্রতি, ছেলেটা ভালোবাসার মরীচিকায় ধরা খেতেই পারে। তবে ভালোবাসার উপস্থিতি কিন্তু আপনি পাবেন অনেক জায়গায়-
গাড়িতে বসে মেয়েটির অকপটে তার ব্যর্থ ভালোবাসার কথা ছেলেটির কাছে উগরে দেয়ায়, ছেলেটির আরো কিছুটা মুহুর্ত একসাথে কাটানোর আর্তিতে, মেয়েটির গাওয়া গানে ছেলেটার নামের উচ্চারণে, ছেলেটির শেষ ডায়লগে, - আপনি ভালোবাসা পাবেন।
হয়তো তা ফরাসী কিংবা আমেরিকান স্টাইল, তবু পাবেন।
আর যদি বলি অবসেসিভ কারেক্টারের কারণেই দু'জনের এত কথা, ভালোবাসা, এই সিনেমার উদ্ভব- তাহলে?
----------------------------------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী-
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।