নক্ষত্রেরা যদি তাহার কথা কয়?

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি
লিখেছেন ফারুক ওয়াসিফ (তারিখ: বুধ, ০৯/০৭/২০০৮ - ১১:২৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১.
স্বপ্ন থেকে স্বপ্নে সন্তুরণ করে বাঁচি,
জাগরূক ক্ষতের মতো জেগে থাকে খাকের শরীর;

জলপোকাদের অরক্ষিত নকশা যেমন
জলছবি হয়ে জলের অধিকারে_
তেমনি বুঝেছি বেঁচে থাকা_আয়ুক্ষয়,
বেপথু হাওয়া এসে মাস্তুল নাড়ায়।

প্রেতের আত্মায় উড়ে উড়ে বাঁচি
প্রেতেরা অধিক জীবিত, কেননা
থাকে না তার অপারের ভয়।

চৈতন্যের জ্বর ছেড়ে যাবার পর দেখি,
ঈষাণ অবধি যেতে পারি কোনাকুনি
ছুঁতে পারি চুপসানো সে বৃত্তের মন।

সোঁতায় সোঁতায় ঘুরে হয়েছি অলীক;
মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে।
৭.৭.৯৯
২.
শেষের দিকের রাত্রি_
তলাতে তলাতে যেই কিনারে আসার ভয়,
সেইখানে ঝরে
আকাশের শেষ ফোঁটা: টুপ!
সব তারা চুপ।

নিভন্ত নক্ষত্রদের মাঝে ব্যথার তরঙ্গ বয়।
আমার যে লাগে ভয়
নক্ষত্র যদি আমার কথা কয়?

আমার যে লাগে ভয়,
যা সয় না তাও যদি সয়!
নক্ষত্রেরা যদি তাহার কথা কয়?
এপ্রিল-২০০৮


মন্তব্য

শেখ জলিল এর ছবি

মাঝে এরকম দু'একটা কবিতা ছাড়লো মন ভরে যায়।

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

ফারুক হাসান এর ছবি

বাহ্!
----------------------------------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী-
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।

অচল আনি (সুপ্ত) এর ছবি

আমার যে লাগে ভয়,
যা সয় না তাও যদি সয়!

ভয়ের আর কি? এখনতো সবই গা সওয়া হয়ে গেছে।
প্রেতের আত্মায় উড়ে উড়ে বাঁচি
প্রেতেরা অধিক জীবিত, কেননা
থাকে না তার অপারের ভয়।

দুটি কবিতায় অনবদ্য... খুব ভালো লাগল।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

সোঁতায় সোঁতায় ঘুরে হয়েছি অলীক;
মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে।

অভিবাদন গ্রহণ করুন কবি... কুর্ণিশ করি।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

এই মিয়া ফাঁকে ফুঁকে কবিতা লিখলেই কবি নাকি? এরশাদা চাচাও তো কবিতা লিখতো।
তা যুগলে নেট অভিসার কেমুন লাগছে ভায়া?

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

শেষের দিকের রাত্রি_
তলাতে তলাতে যেই কিনারে আসার ভয়,
সেইখানে ঝরে
আকাশের শেষ ফোঁটা: টুপ!
সব তারা চুপ।

নিভন্ত নক্ষত্রদের মাঝে কথার তরঙ্গ বয়।
আমার যে লাগে ভয়
নক্ষত্র যদি আমার কথা কয়?

আমার যে লাগে ভয়,
যা সয় না তাও যদি সয়!

এরকমভাবে চলে দিন যদি হয়ে যায় রাত আর রাত যদি হয়ে যায় দিন
পদচিহ্নময়পথ হয় যদি দিকচিহ্নহীন
.....................



ঈশ্বরাসিদ্ধে:

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

পদচিহ্নময়পথ হয় যদি দিকচিহ্নহীন.....................

বাহ!
মনে পড়লো প্রান্তিকে চা খেতে খেতে শশাঙ্ক এন্ড গং মিলে প্রত্যেকে পরপর চার লাইন করে ততক্ষনাত লেখা জলদি কবিতাগুলো। তোমার একটাও আছে আমার কাছে। একদিন দুম করে পোস্ট করে দেব নাকি?

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

টফি এর ছবি

এরকমভাবে চলে দিন যদি হয়ে যায় রাত আর রাত যদি হয়ে যায় দিন
পদচিহ্নময়পথ হয় যদি দিকচিহ্নহীন.....................

এটা তো জীবনানন্দ দাশের এইসব দিনরাত্রি কবিতার শেষ দিককার একটা লাইন তাই না?

সুমন চৌধুরী এর ছবি
তানবীরা এর ছবি

আকাশের শেষ ফোঁটা: টুপ!
সব তারা চুপ।

কেউ কেউ কেনো সবদিকে এতো ভালো হয়? তাদেরকে আমার মন থেকে ভীষন হিংসে হয়, সত্যি হয়।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

তানবীরা, আপনার হিংসে দেখে মনে হচ্ছে তাবিজ-কবজ নিতে হবে।
জয় গোস্বামীর ওই বইটা পেয়েছেন?

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

ফকির ইলিয়াস এর ছবি

পড়ে গেলাম এক নি:শ্বাসে ।

পলাশ দত্ত এর ছবি

কবিতাটা সচেতন মনের লেখা মনে হচ্ছে কেনো?

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

তাইলে নিশ্চয়ই সচেতন ভাবেই লেখা হয়েছে।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

পলাশ দত্ত এর ছবি

কবিতা জিনিসটা অবশ্য আবশ্যিকভাবেই সচেতনভাবে লিখিত হওয়া উচিত!

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

কীর্তিনাশা এর ছবি

কবিকে আমিও কুর্নিশ করে যাই।
----------------------------------
সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে !

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

আমি মাথা নত করে রাখলাম।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

চেতন আর চৈতন্য'র ভেদ যদি মানি, তাহলে কবিতা চৈতন্যের ভাষা_হৃদয়েরও নয়, বুদ্ধিরও নয়। চৈতন্য-কে আমি বুঝতে চাই সেই দীপশিখার মতো করে, যার প্রজ্জ্বলনই একটা জাগরূক অবস্থা। কিন্তু তাই বেল মোম বা সলতে তো আর আগুন নয়, আলো নয়। আমাদের চেতন মন ও হৃদয় ওই মোম ও সলতের মতো। কিন্তু এরা 'চমকজ্বরা' বইয়ে দিতে পারে না। অন্তত লালন যে অর্থে গান, 'আমার চমকজ্বরা বইছে গায়'। কিংবা 'ওরে আমার মনে পোনা মাছের ঝাঁক এসেছে'।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

খেকশিয়াল এর ছবি

অদ্ভুত অসাধারন !

------------------------------
'এই ঘুম চেয়েছিলে বুঝি ?'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

আহমেদুর রশীদ এর ছবি

বর্ষার আকাশে নক্ষত্রেরা কোথায় লুকায়!

---------------------------------------------------------
আমাকে ডাকে আকাশ, বোঝে মাটি হাওয়া জল
বোঝে না মানুষ আর বিনাশী মুদ্রার ছল

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

দারুণ কবিতা! আমাকে ভাবালু করে তুলল, তারারা এসে ছুঁয়ে গেল আমাকে...
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

২. অসাধারণ হলেও আপনের গদ্যের ভষ্যিৎ উজ্জ্বল।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

জিফরান খালেদ এর ছবি

ফারুক ভাই কবিতা লিখেন, এইটা আমি পুরাই খাই ফেলসিলাম...

৯৯ এর শেষ স্তবকটি চৈতন্যে ধরলো।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।