ওয়ার অন টেররের ভারতাগমন: মুম্বাই সন্ত্রাসের রাজনৈতিক তাতপর্য

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি
লিখেছেন ফারুক ওয়াসিফ (তারিখ: শনি, ২৯/১১/২০০৮ - ১১:১০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গোলমালে মাথা ঘোরে বলে সবকেই গোল লাগে আর মালও খোয়া যায়। মুম্বাই সন্ত্রাসের পর এমন গোলমালই চারদিকে ঠাহর করা যাচ্ছে। ৯/১১ এর ধাক্কা এখনও দুনিয়াবাসীর হাড্ডিতে বাজছে, মুম্বাইয়ের ধাক্কা যে কোথায় গিয়ে বাজে, সেটা এখন দেখার অপেক্ষা।
প্রতিটি ঘটনারই একটা পটভূমি থাকে। মুম্বাই সন্ত্রাসও ঘটেছে বিশেষ একটা পটভূমিতে। এর কিছুদিন আগেই বিশ্বে জঙ্গিবাদের একচেটিয়া খেতাবে ভাগ বসিয়েছে হিন্দু জঙ্গিবাদ। মালেগাঁও, নান্দেদ, আজমীর, পাটনা, সমঝোতা এক্সপ্রেস, আহমেদাবাদসহ গত কয়েক বছরের আলোচিত বোমা হামলাগুলোর পেছনে বিজেপি তথা সংঘ পরিবারের হাত আবিষ্কৃত হয়েছে। একজন সন্ন্যাসিনী ও কর্মরত কর্ণেল প্রসাদ পুরোহিত ও সাবেক মেজর রমেশ উপাধ্যায়কে জেরা করে ভারতজোড়া জঙ্গিবাদী নেটওয়ার্ক ক্রমশ উন্মোচিত হচ্ছিল। সংঘ পরিবারের তরফে বাংলাদেশে হিন্দুদের নির্যাতনের প্রতিশোধে হিন্দু জঙ্গিবাদের শাখা খোলার সংবাদও প্রকাশ হয়। (টাইমস অব ইন্ডিয়া ২৪ নভেম্বর, ২০০৮)। বেরিয়ে আসছিল তাদের বিভিন্ন মিলিটারি স্কুলের কথা। বিভিন্ন রাজ্যের প্রশিণ শিবিরের কথা। এদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো, হিন্দু জনজাগরণ মঞ্চ, পানভেলের সান্তনা আশ্রম এবং ১৯৩৫ সালে হিন্দু উগ্রবাদী বি.এস. মুঞ্জে প্রতিষ্ঠিত সেন্ট্রাল হিন্দু মিলিটারি এডুকেশন সোসাইটির ভোনশালা মিলিটারি স্কুল। এসব অভিযোগ ও আলামত ভারতে সন্ত্রাসবাদের নতুন মুখচ্ছবি সাজিয়ে তুলছে। বিজেপি'র হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির সঙ্গে মিলিয়ে একে বলা হচ্ছে, 'হিন্দু সন্ত্রাসবাদ'। রমেশ উপাধ্যায় বলেছেন, কেবল এই দুজনই নয়, ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিভিন্ন স্তরে আরো হিন্দুত্ববাদী রয়েছেন। সব মিলিয়ে বিজেপি বাবরি মসজিদ ধ্বংস ও গুজরাত গণহত্যা করেও এতটা ভাবমূর্তির সংকটে পড়েনি, যতটা এসবে পড়েছে। সামনে পাঁচটি রাজ্যে নির্বাচন। জঙ্গিত্বের দায়ে সেই নির্বাচনে বিজেপির মার খাওয়ার ভয় ছিল। তা ঠেকাতে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে মুসলিম জঙ্গিবাদ দমনে কঠোরতার অভাব এবং সংখ্যালঘু তোষণের অভিযোগ তুলে বিজেপি ভোটারদের কাছে নালিশ করে সাম্প্রদায়িক জাদু দিয়ে ভোটজয়ের আঁটঘাট পাকা করছিল। সেরকম সময়েই ফাঁস হলো হিন্দু জঙ্গিবাদ, তথা হিন্দু ফ্যাসিবাদ। একেই বলে বাড়া ভাতে ছাই ঢালা। মুম্বাই বোমা আবারো পরিস্থিতিকে একতরফা ভাবে তাদের পক্ষে নিয়ে গেল। ইতিমধ্যে নির্বাচন পিছিয়ে নেয়া হয়েছে এপ্রিলে। অতএব কেল্লা ফতে।

এতদিন মুসলিম জঙ্গিবাদের নামনিশানা দেওয়া এই ছাঁচেরই বিস্তর সংবাদ আমরা পড়েছি। এমনকি ওপরে যে হিন্দু-বোমার কথা বলা হলো, সেসবের জন্য বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে এবং কাশ্মীর ভিত্তিক লস্কর ই তাইয়েবা ও ইন্ডিয়ান মুজাহেদীনের নিশ্চিত দায়স্বীকারের সংবাদও দেখা হয়ে গেছে। অথচ, সেই ভারতীয় তদন্ত কর্মকর্তারাই প্রমাণ করলেন, ভারতে যেমন মুসলিম জঙ্গিবাদ রয়েছে, তেমনি রয়েছে হিন্দু জঙ্গিবাদও। একসময় শিখ জঙ্গিও ছিল, শ্রিলঙ্কায় আছে তামিল জঙ্গি। এরা সবাই আত্মঘাতীও হতো। এর বাইরে উলফা, মাওবাদী, বোড়ো লিবারেশন টাইগার্স ইত্যাদিও রয়েছে। এতসব ছেড়ে কেন তবে মুসলিম জঙ্গিবাদ নিয়ে মেতে থাকা?

The ATS under Karkare had arrested a Hindu Sanyasin and an army Lt. Colonel. Several other retired army personnel and retired Intelligence Bureau officials were also named in the affair. Indian news papers had carried pictures of the Sanyasin sitting with the president of the BJP and the Madhya Pradesh Chief Minister Prithvi Raj Chauhan. Then came the startling revelation that the International General Secretary of Vishwa Hindu Parishad (VHP), had donated money to Abhinav Bharat the organ বিনু ম্যাথিউ
এবার মুম্বাই সন্ত্রাসের দিকে তাকানো যাক। কে করেছে তা নিয়ে অকাট্য প্রমাণ কেউ দিতে পারেনি। তারপরও ভারতীয় মিডিয়ায় ডেক্কান মুজাহেদিনের নাম এসেছে। কারণ তারা ই-মেইল মারফত দায় স্বীকার করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, কেবল এর ভিত্তিতে কিছু কি আসলেই প্রমাণ হয়? আসলে এসব ঘটনার যথাযোগ্য প্রমাণ সঙ্গে সঙ্গে কখনোই মেলে না। তাই আজকের বিশ্বে কোনো দায়িত্বশীল লোকের পক্ষে সরকারি বয়ানকে নিউটনের সূত্রবত প্রমাণিক ভাবা উচিত নয়। তারপরও দেখা যাচ্ছে, একদল লোক ভারতীয় মিডিয়া ও ভারত সরকারের বয়ানকেই বিশ্বাস করতে ভালবাসছেন। ঠিক যেভাবে একসময় তাঁরা ইরাকে সাদ্দামের গণবিধ্বংসী অস্ত্রে বিশ্বাস করেছিলেন, এখনো বিশ্বাস করেন ওয়ার অন টেররের ছককে। তাঁদের সেই বিশ্বাসের ভিত্তি প্রমাণ নয়, যুক্তি নয়; অনুমান ও সরকারি ভাষ্যের প্রতি অনুরাগ। তা না হলে চোখে পড়তো যে, ভারতীয় মিডিয়া ও সরকারি কর্মকর্তারা ঘটনা ঘটার কয়েক ঘন্টা পর থেকে এখন পর্যন্ত যে বয়ান দিচ্ছেন, তা আসলে নানান দিকে ঢিল ছোঁড়া। একবার বলা হচ্ছে, দাক্ষিণাত্যের সন্ত্রাসীদের কথা, আরেকবার বলা হচ্ছে এরা এসেছে গুজরাত-হায়দ্রাবাদ কিংবা পাঞ্জাবের থেকে, আরেকবার বলা হয়েছে কাশ্মীরী জঙ্গির কথা। এখন জোরসে বলা হচ্ছে পাকিস্তানীদের কথা। আবার এক ন্যাভাল অফিসার বলেছেন, এটি কয়েকদিন আগে সোমালি জলদস্যুদের আস্তানা ধ্বংস করা ইন্ডিয়ান নেভির রক্তাক্ত অভিযানের প্রতিশোধ।

বিষয়টা সম্পর্কে ব্রিটিশ লেখক ও গবেষক তারিক আলির বয়ান প্রাসঙ্গিক: সম্প্রতি সিআইএ স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, আল কায়েদা য় পাচ্ছে। ৯/১১ এর কাছাকাছি মাত্রার আঘাত ঘটবাবার সামর্থ্য আর তাদের নেই। ওসামা বিন লাদেনও সম্ভবত মারা গেছেন। মার্কিন নির্বাচনের প্রাক্কালে তাঁর স্বভাবসুলভ ভিডিও বক্তৃতাও তাই এবার দেখা যায়নি। তাঁর সহকারি আল জাওয়াহিরিও সুবিধাজনক অবস্থান নেই।
কিন্তু পাকিস্তান কি জড়িত থাকতে পারে না? আফগান যুদ্ধের ধাক্কায় বিপর্যস্ত পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এখন উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশেরর সমস্যায় কাহিল। দেশটির রাজনৈতিক নের্তৃত্বও ভারতের প্রতি মিত্রভাবাপন্ন। আবার এত বড় আয়োজন করবার মতো আর্থিক বন্দোবস্তও তাদের নেই। অন্যদিকে লস্কর-ই-তাইয়েবা কখনোই তাদের কৃতকর্ম স্বীকার করতে লজ্জিত হয় না। তারাও শক্তভাবে মুম্বাই হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার দায় অস্বীকার করেছে।'' (গার্ডিয়ান, ২৯-১১-০৮)

অন্যদিক থেকেও বিষয়টার গভীরে প্রবেশ করা যাক না কেন? একটি ঘটনার তাৎপর্য ও দায়দায়িত্ব বুঝতে গেলে প্রথমে দরকার খতিয়ে দেখা যে, এ ঘটনা থেকে কী মোটিফ বেরিয়ে আসে এবং তাতে কাদের লাভ। প্রথমত, ভারতে যে মুহূর্তে হিন্দু জঙ্গিবাদের গুমর ফাঁস হওয়ায় বিজেপি বেকায়দায়, সেই মুহূর্তে ইসলামী সন্ত্রাস ঘটিয়ে বিজেপিকে দায়মুক্ত করবে কোন ব্যাক্কেল মুসলিম জঙ্গিরা? কেন তারা বিজেপিকে দায়মুক্ত করতে চাইবে, যখন সামনেই নির্বাচন এবং বিজেপির পরাজয় প্রায় নিশ্চিত? করবেই যদি, তবে কেন ব্রিটিশ-আমেরিকান-ইসরায়েলিদের জিম্মি করা হলো কিন্তু ভারতীয়দের আটকানো হলো না? তাজ হোটেলের ক সংখ্যা ১ হাজারেরও বেশি। অল্প ক’জন জঙ্গি কীভাবে এত বড় হোটেলকে টানা দুই দিন দুর্ভেদ্য করে রাখতে পারলো? সে সময় ভেতরে কী ঘটছিল? ভারত সরকার কি কিছু লুকাতে চাইছে?
সরকারও স্বীকার করছে যে, এতবড় কাণ্ড ঘটাতে শতাধিক কর্মীবাহিনী দরকার। যদি তারা বহিরাগতই হবে, তাহলে তাদের নড়াচড়া, প্রস্তুতি, হোটেলের ভেতর অতিথির ছদ্মবেশে অস্ত্র মজুদ করা কিছুই কেন ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর নজরে পড়লো না? তারা কি ঘেসো বাঘ?
জিম্মি করা হয়েছে এই সরল সত্যটা জানাতে কেন সরকার ২৩ ঘন্টা দেরি করলো? আর কে কবে শুনেছে, আত্মঘাতী বোমারুরা জিম্মি রাখে? এবং জিম্মিদের কোনো তি না করেই নিজেরা টপাটপ মারা যায়? (যে বিদেশিরা মারা পড়েছেন তারা মরেছেন প্রথম আঘাতে, জিম্মি অবস্থায় নয়)

জঙ্গিদের আসল উদ্দেশ্য কোনটা: ব্রিটিশ-আমেরিকান-ইজরায়েলিদের জিম্মি করে মুজাহেদিনদের মুক্ত করা? স্টেশনে পাখির মতো মানুষ মেরে আতঙ্ক ছড়ানো? বিশ্ব মিডিয়ার নজরে থাকার রোমান্টিক খায়েশ? তার জন্য এত আয়োজন?
আপাতদৃষ্টে জঙ্গিরা ব্যর্থ হয়েছে। একজন বাদে সকলে মারা পড়েছে। (এখনো তাদের নাম-পরিচয় বলা হচ্ছে না কেন?) এ থেকে মনে হয় যে, বিশ্বের নজর কাড়া এবং আতঙ্ক সৃষ্টিই তাদের মূল উদ্দেশ্য।
এই দিক থেকে দেখলে ঘটনার একটা ধারা চোখে পড়ে। তিন পরাশক্তির নাগরিকদের হুমকির মধ্যে ফেলার মাধ্যমে আসলে ভারতের ওয়ার অন টেররে ব্রিটিশ-আমেরিকান-ইজরায়েলিদেরও জড়িয়ে ফেলা হলো। এর ফল হতে পারে, একে দক্ষিণ এশিয়ার ৯/১১ আখ্যা দিয়ে পাকিস্তান ও বাংলাদেশকে ইরাক ও আফগানিস্তানের মতো টুঁটি চিপে ধরা। এর সঙ্গে বারাক ওবামার আফগান যুদ্ধের প্রতিশ্রুতিও মিলে যায়। একজন তো বলেইছেন যে, জঙ্গিরা বারাক ওবামার প্রতি মেসেজ পাঠালো যে, তারা এখনো আছে। অন্যদিকে এ ঘটনার পর ভারতে যারা মুসলিম নিধন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার, যারা আমেরিকার অক্ষে ভারতের প্রবেশের বিরোধী তারা চরমভাবে কোণঠাসা হলো।

আরেকটি কাকতাল (?) মনে খটকা বাঁধিয়ে রেখেছে। তাজ হোটেলের ঘটনায় একইসঙ্গে এমন তিনজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা মারা গেছেন, যাঁরা বিজেপির হিন্দু জঙ্গিবাদকে উন্মোচিত করার তদন্তে নিয়োজিত ছিলেন। হেলমেট ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরার পরও বুকের মোম স্থানে তিনটি গুলি লেগে মারা যান মুম্বাইয়ের সন্ত্রাসবিরোধী স্কোয়াডের প্রধান হেমন্ত কারকারে। তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। তিনি ছাড়া অন্য দুজন ছিলেন সন্ত্রাস বিরোধী স্কোয়াডের সহপ্রধান এবং প্রধান সন্ত্রাসবাদ বিশেষজ্ঞ। আগের দিন দুয়েকদিনের মধ্যেই হেমন্তের বাড়ি বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়া ও তাঁকে হত্যার হুমকি এসেছিল। তিনিও এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, 'আমি বুঝছি না কেন এই কেসটা নিয়ে ভয়ঙ্কর রাজনৈতিক চাপ আসছে।' যারাই তাঁকে হত্যা করুক, তাঁর দায়িত্বে যিনি আসবেন তিনি বিজেপির জঙ্গিত্ব তদন্তে ভয় পাবেন। এমনকি কেসটা চাপা পড়ে বা ফালতুও হয়ে যেতে পারে।

করুক বা না করুক, এ ঘটনার থেকে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে বিজেপি ও ভারতীয় সেনাবাহিনী। এমনকি বিজেপির দাবি মতো আমেরিকার প্যাট্রিয়ট অ্যক্টের মতো মুসলিম বিরোধী আইনও হয়ে যেতে পারে। হতে পারে পাকিস্তানী জঙ্গি কার্ড খেলে আগামী নির্বাচন জিতে সরকার গঠন। এবং তার মাধ্যমে অহিন্দু মুক্ত ভারত করবার ফ্যাসিবাদী কর্মসূচি এগিয়ে নেয়াও সহজ হয়।
ভারতে জঙ্গিবাদকে কেন্দ্র করে একধরনের ভয়ের রাজনীতি ও সংস্কৃতি দাঁড়িয়ে গেছে। বোমা ফুটলেই পাকিস্তান ও বাংলাদেশকে দোষারোপ, নাশকতা হলেই মেজরিটি হিন্দুদের সাম্প্রদায়িক ঘৃণার রসায়নে সিক্ত করে চালনা করার মাধ্যমে তার প্রকাশ ঘটে। এ ঘটনায় সেই রসায়ন আরো ধন্বন্তরি হলো। ইতিমধ্যে মোদী জনগণকে রায় ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে জাতির ত্রাতার ভূমিকায় নেমেছেন। এই ঘটনায় সর্বভারতীয় নেতা হিসেবে তাঁর অভিযাত্রার সূচনাও দেখা গেল।

হামলার হোতারা ভারতীয় মুসলিম হতে পারবে না কেন? ভারতীয় মুসলিমদের দরিদ্র অংশের ওপর চলা পরিকল্পিত নির্যাতন ও সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রচণ্ড ক্রোধ রয়েছে অধিকাংশ মুসলমানের। ২০০২ সালের গুজরাত গণহত্যায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও স্থানীয় প্রশাসনের জড়িত থাকার বিষয়টিও তারা ভুলে যায়নি।
অন্যদিকে কাশ্মীরে ভারতের দখলদারি উপস্থিতি, গণগ্রেফতার, নির্যাতন, হত্যা ও ধর্ষণ। বিভিন্ন রাজ্যে বিনা বিচারে মুসলিম তরুণদের এনকাউন্টারের নামে হত্যা-নির্যাতন-বন্দি রাখা। সম্প্রতি মহারাষ্ট্র সরকার বিনা অপরাধে নির্যাতনে পঙ্গু হয়ে যাওয়া কয়েকজন মুসলমান তরুণকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে ছেড়ে দিয়েছে মানবাধিকারকর্মীদের চাপে। যেমন টাডা আইনে আটক ৫ হাজার জনের মধ্যে দোষী করা গেছে মাত্র ১০০ জনকে অর্থাত .২ শতাংশকে। একে কি বলা যাবে আইন না রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস? ভারতে যে নাতসি জার্মানীর ইহুদি নিধনের মতো মুসলিম দলন-পীড়নের কর্মসূচি ষোল আনা পাকা তা প্রমাণে এরকম ভুরিভুরি পরিসংখ্যান হাজির করা যায়, হাজির করা যায় বিজেপি-কংগ্রেস মায় সরকারের বিভিন্ন দলিলপত্র। (এখানে জায়গার অভাবে কিছু নমুনাই কেবল দেওয়া গেল। প্রয়োজনে আরো দেয়া যাবে।)

সুতরাং আমার বলবার কথা এটাই: যে দেশে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মতো করেই জঙ্গিবাদকে লালন-পালন করা হয় এবং যেদেশে একটি জঙ্গিবাদী দল সরকার গঠন করতে পর্যন্ত পারে এবং সেই দলের প্রধান নিজেই যখন সন্ত্রাস ও গণহত্যায় মদদ এবং বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার দায়ে অভিযুক্ত, যেদেশের মিডিয়া কেবল এমবেডেডই নয়, ঐ দমন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সত্যকে লোপাট করে, সেই দেশ তা মার্কিন, ভারত, ইসরায়েল, ইরান, পাকিস্তান বা বাংলাদেশ যাই-ই হোক, তাদের সরকারি ভাষ্যকে বিনা প্রশ্নে বিশ্বাস করার মতো অন্ধভক্তি আর কী হতে পারে?

পুনশ্চ: যারা উপমহাদেশে বাস করছেন, তারা বুঝছেন পরিস্থিতি কত দ্রুত চরমে চলে যাচ্ছে এখানে। বাংলাদেশে জাতিসংঘের ব্লু হেলমেটের আগমণ পথ প্রশস্ত হচ্ছে, পাকিস্তান এক লেজুড় ও ভঙ্গুর রাষ্ট হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে বিচলিত ভারত বৈশ্বিক ফ্যাসিবাদী উত্থানে সামিল হচ্ছে উপমহাদেশে হিন্দু ফ্যাসিবাদ কায়েম করবার পথে। এর জন্য যে মতাদর্শিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক সামর্থ্য লাগে সেটা এশিয়ায় ভারত ও চীনেরই আছে। এরই মধ্যে রাজনৈতিক ইসলাম প্রতিরোধের আবরণে জাগ্রত হচ্ছে। একদিকে আধুনিক ফ্যাসিবাদ অন্যদিকে ধর্মীয় প্রতিক্রিয়াশীলতার উত্থানের মাছে জনগণের ভূত-ভবিষ্যত বলি হচ্ছে। এরকম সময়ে ম্যাট্রিক্সের ঐ মনোজগত থেকে বেরিয়ে সাম্রাজ্যিক ভাইরাস মুক্ত মস্তিষ্কে দুনিয়াও দিকে তাকানো দরকার। বিবিধ শত্রুর বিবিধ চেহারার মধ্যে মিল-অমিল খুঁজে কর্তব্য নির্ধারণ দরকার। মুম্বাইয়ের ঘটনা ভারত তথা উপমহাদেশের জনগণের জন্য যে হুমকি বয়ে আনছে, তার সার্বিক বিশ্লেষণ ছাড়া আজকে পথ খুঁজে পাওয়া কঠিন।

দ্রষ্টব্য:
১.ভারতে ফ্যাসিবাদের উত্থান
২. হেমন্ত কারকারের সাক্ষাতকার
৩. হিন্দু সন্ত্রাস

৪. রিলিজিয়নস ডাবল রোল/ তেহেলকা


মন্তব্য

নিবিড় এর ছবি

হুম...... মুম্বাই এর ঘটনার এই দিক গুলো আসলেই চিন্তার বিষয় ।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

এইমাত্র আরেকটি লেখা পেলাম মুম্বাই সন্ত্রাস থেকে কারা লাভবান হলো সে বিষয়ে। আগ্রহীরা সেটা পাবেন এখানে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ভারতের ইন্টেলিজেন্স, স্থানীয় পুলিশ, প্রশাসন, হোটেলের সিকিউরিটি কেউই এর দায় থেকে মুক্ত থাকতে পারেনা। যেসব সন্ত্রাসী মারা পড়েছে তারা হয়তো ভারতীয়, হয়তো নয়। পাকিস্থানী সন্ত্রাসীদের দ্বারা এই ঘটনা ঘটে থাকলে তার ৮ আনা দায় ভারতেরও।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

এটিও একটি জরুরি লেখা :

Who Benefits From Mumbai
Terror Attacks?

By Binu Mathew

29 November, 2008
Countercurrents.org

Mumbai terrorist stand off is almost over. More than 200 civilians and about 20 police and army officials lost their lives. Taj Mahal palace, a symbol of India's business and commercial well being bears a ghostly look. The terror stricken populace slowly limp back to life. Will Mumbai be the same again? Will India be the same again?

There are talk in the media that the Mumbai terror attack is India's 9/11. The similiarities may be far fatched, but there are so many things that bears stark resemblances to each other. Both attacks are carried out apparently by muslim terrorist organisations. Both New York and Mumbai are commercial and business centers of the respective nations. Although the magnitude of the attacks may look dissimilar, the sheer psychological impact on the populace of both the nation and the world in general is comparable in dimension. 9/11 was an earth shattering event that unleashed a chain of reactions that changed the world irremediably, both inside the USA and around the world. And what about India's 9/11? It's very possible that the chain of reactions that followed the US 9/11 are likely to follow here as well. The leader of the opposition and a prime ministerial candidate of the Hindu right wing Bharatiya Janata Party (BJP) has called for stringent anti terror laws. A patriot act may not be far behind.

That gives us a clue to who is going to benefit from these terror attacks. The BJP has been calling for new anti-terror laws ever since the Congress led UPA government repealed the much reviled Prevention of Terrorist Atrocities Act(POTA). The UPA repealed the law as there were many complaints, especially from minority communities that it has been used selectively to frame innocents from a particular community. In the aftermath of Mumbai terror attacks, a new terror law is imminent.

One other tragedy of the terrorist attack is that the chief of Anti
Terrorism Squad (ATS) of Mumbai, Hemant Karkare, lost his life to terrorist's bullets. He was a brave and upright official who was probing the link between Hindu fascist organisations and terror blasts in several parts of India. The ATS under Karkare had arrested a Hindu Sanyasin and an army Lt. Colonel. Several other retired army personnel and retired Intelligence Bureau officials were also named in the affair. Indian news papers had carried pictures of the Sanyasin sitting with the president of the BJP and the Madhya Pradesh Chief Minister Prithvi Raj Chauhan. Then came the startling revelation that the International General Secretary of Vishwa Hindu Parishad (VHP), had donated money to Abhinav Bharat the organisation that master minded the September 29 Malegaon blast. The investigation was reaching such a stage that more top functionaries of Sangh Parivar (a general denomination for the various Hindu supremascist organisations) were likely to be named. Now, that Karkare is gone, and the nations attention is turned elsewhere, the enquiry may face a slow death.

Yesterday, a hindu colleague (who is a level headed moderate man himself) text messaged me saying, 'you people will make us terrorists'. He was suggesting that Muslims and Christians (the minorities in India) will make the majority Hindus terrorists! This is another fall out of India's 9/11. To put it simply, the position of minorities in India, especially Muslims has become more precarious. India will be communally more divided. It will only strengthen the Hindutva forces and their political wing, BJP. India is going to polls next year. These blasts are going to weaken the ruling Congress and strengthen the BJP.

And then the big international picture. The 'War on Terror' has come to India! Even though Indian Muslims had been demonised by the Hindutva forces in India, it had only a local impact. They were not part of the bigger war on Muslims perpetrated by the Israel- Neocon promoted George W. Bush regime. Diplomatically also,India kept a safe distance from the US war on terror fearing the backlash of the strong domestic muslim population. Now with the Mumbai terror attacks they have come under the radar of the 'War on Terror.' Now that the Obama regime is intending to spread this war into Pakistan and expand its operation in Afghanistan, India could be a willing strategic partner in the region.

And now to the question that is on everybody's mind. Who did this dastardly act? Although, this is not the topic of this article and also it is for the investigation agencies to decide, and as I dont want to engage in wild guesses I can suggest only this much, those forces who destroyed the twin towers in New York might be behind the Mumbai terror attacks too. Whoever benefitted from 9/11 will benefit from the Mumbai terror attack internationally and the Hindutva forces will benefit from it locally.

And the final question, Whither India?

And I fear how long can I write articles such as this.

Binu Mathew is the editor of www.countercurrents.org. He can be reached at

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

অনিকেত এর ছবি

ফারুক ভাই, বহুদিন পর লেখা দেখলাম।
এখনো পড়া হয়নি----শুধু শিরোনামে 'তাতপর্য' বানানটা চোখে লাগছে দেখে বলতে এলাম।

পরে পুরোটা পড়ে নিয়ে মন্তব্যে আসব।

কিছু মনে নিয়েন না ভাই।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

আমার কী বোর্ড থেকে সচলায়তনে কোনোভাবেই খণ্ড ত লেখা যায় না, অতএব দিলাম যখন পূর্ণ ত-ই দিলাম।
কেমন আছেন অনিকেত? আশা করি লেখাটা পড়বেন।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

সুহাস এর ছবি

ঠিক। সবাই মুসলিমদের বিরুদ্ধে কন্সপিরেসি শুরু করেছে।

৯/১১ কন্সপেরিসি ছিলো, মুম্বাইয়ের ঘটনায় আসলে হিন্দুরা জড়িত ছিলো, তালিবানরা বৌদ্ধ মুর্তি ভেঙ্গে ফেলেছিলো - সেটাও আসলে অন্য কেউ করেছে। সুদানে জেনোসাইড, পাকিস্তানে বা আরব বিশ্বে লাগাতার সন্ত্রাস, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার - এমনকি ভাস্কর্য ভাঙ্গা সবই নিশ্চয় কন্সপিরেসি। সবই হিন্দু-ইহুদি-নাসারাদের চক্রান্ত। খুব সাবধান।

ফারুক ওয়াসিফ জিন্দাবাদ।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

সুহাস, নির্দিষ্ট ঘটনায় নির্দিষ্ট বিশ্লেষণটাই আমি করেছি। তার জবাবে আপনি আমাকে পরিহাস করলেন। আপনি আমার অন্য লেখা দেখলে জানতেন, হিন্দু-মুসলিম উভয় ফ্যাসিবাদ নিয়েই আমি ইদানিং লিখে চলেছি। হতে পারে তা ভুল। কিন্তু আমি যা মনে করেছি, সেটা জানানো কর্তব্য মনে করেছি। তাই, যুক্তির জবাবে যুক্তিই কাম্য, পাতলা মশকরা নয়।
দয়া করে এই লিংক দেখুন :

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

সুহাস এর ছবি

ভাইজান, পাতলা মশকরা আমার মন্তব্যে না খুঁইজা আপ্নের নিজের লিখায় দ্যাখেন। মুম্বাইয়ের ঘটনার পর এর পিছে নাকি হিন্দুরা জড়িত এ কইয়া এক জব্বর লেখা লিখলেন- এ ছাড়া আর এখন কি কইবেন। এইগুলান আমি বহুত দেখছি। ৯/১১ এর পরও আপনের মত টেরোরিস্ট ডিফেন্ডাররা কইছিলো ঐটা নাকি আমেরিকানরাই ঘটাইছে। হের লাইগাই কই - মশকরা খুঁজলে নিজের লেখাতেই খুঁজেন ভাইজান।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

আপনি মহান আপনি সঠিক, কালের ঘড়ি টিক টিক!!!

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

রাগিব এর ছবি
দিগন্ত এর ছবি

The country's educated Muslim élite was effectively blocked from administrative jobs in the government. Between 1858 and 1878, only 57 out of 3,100 graduates of Calcutta University — then the center of South Asian education — were Muslims.

একদিনে কি অবস্থা পরিবর্তন হয়? স্বাভাবিকভাবেই যারা প্রথমে এগিয়ে গিয়েছিল তারা সুবিধা পেয়েছিল এবং এখনও পেয়ে চলেছে। এই একই কারণে হিন্দু অস্পৃশ্য আর আদিবাসীরাও পিছিয়ে। যেসব জায়গায় মুসলিম রাজারা ছিলেন সেসব জায়গায় এখনও মুসলিমেরাই পড়াশোনায় এগিয়ে। নিজামের হায়দ্রাবাদ এর খুব ভাল উদাহরণ।


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

রাগিব এর ছবি

কিন্তু ৬১ বছরেও সেই এক দিন না আসাটাই তো রাষ্ট্রের ব্যর্থতা। কোনো এলাকায় সামগ্রিকভাবে শিক্ষা দীক্ষার হার যা, বিশেষ কোনো ধর্মীয় গোষ্ঠী তার চেয়ে পিছিয়ে থাকলে বৈষম্যের প্রশ্ন ওঠাটা স্বাভাবিক।

সাচার কমিশনের রিপোর্টেও কিন্তু এই কথাটাই উঠে এসেছিলো। এখনো কিন্তু IAS এ ৩%, IFS এ ১.৮% আর IPS এ ৪% মাত্র মুসলিম, যা জনসংখ্যার অনুপাত (১৩%) এর অনেক কম।

সাচার কমিশনের রিপোর্ট অনুসারে পশ্চিমবঙ্গের কথা দেখা যেতে পারে, এখানে কিন্তু মুসলিমদের অনুপাত ২৫% বা তার কাছাকাছি (আর মুর্শিদাবাদ তো ঐতিহাসিক ভাবে মুসলিম রাজাদের এলাকা, মুসলিম প্রধান এলাকা)। অথচ এখানে সরকারী চাকুরেদের মাত্র ৪.২-৭% মুসলমান। এটাকে কোনো ভাবেই ব্যাখ্যা করা যায় না, একমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্য দিয়েই ব্যাখ্যা করা যায়।

(এই বিষয়ে দি হিন্দু পত্রিকার রিপোর্ট "Muslim Deprivation Widespread: The Sachar Committee" )

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

দিগন্ত এর ছবি

৬১ বছরেও সেই এক দিন না আসাটাই তো রাষ্ট্রের ব্যর্থতা।

দুঃখিত, আমি রাষ্ট্রের ব্যর্থতা নয় এমন কথা বলিনি। রাষ্ট্র আরো অনেক ধর্মীয় ও জাতিগোষ্ঠীর ক্ষেত্রেও ব্যর্থ সেটাই বলেছি। সেটা হায়দ্রাবাদে হিন্দুদের ক্ষেত্রে ও সারা দেশে আদিবাসীদের ক্ষেত্রেও সত্য, শুধু মুসলিমদের ক্ষেত্রে নয়। আবার দেখুন শিখেরা অনেক সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও অনেক বেশী সফল। ভারতের সব সার্ভেতে ধনীতম ধর্মীয় গোষ্ঠী হিসাবে শিখদের নামই উঠে আসে। এটার মানে এই নয় যে রাষ্ট্র শিখেদের দিকে পক্ষপাতিত্ব দেখিয়েছে।

আবার দেখুন অন্য দিকে ভারতে পার্লামেন্টে ১০% এর বেশী মুসলিম (১২% ভোটার), পশ্চিমবঙ্গেও বিধানসভাতে ১৬% মুসলিম (ভোটার ১৯%) - দুইই ১৯৪৭-এর পরিপ্রেক্ষিতে অসম্ভব ছিল। সেটা রাজনৈতিক ক্ষমতার সাফল্যও বলতে হয়। সব দেশেই সাফল্য আর ব্যর্থতা নিয়েই থাকে।

পশ্চিমবঙ্গের হিসাবটা অন্যরকম। এখানে বামশাসনে যারা বাম-দলের পক্ষে ভোট দেন তারা ত্রিশ বছর ধরে অনেক উন্নতি করে ফেলেছেন, যারা দেন না তারা উন্নতি করতে পারেননি। সেটা জেলার ভিত্তিতেও সত্যি। মুর্শিদাবাদ, মালদা ও উত্তর দিনাজপুরে মূলত কংগ্রেস ভোটে জেতে (আবার এই রাজ্যগুলোই মুসলিমপ্রধান), রাজ্য সরকার এই জেলাগুলোর বিরুদ্ধে বিমাতৃসুলভ আচরণ করে। তাই ১৯৭০এর দশকে রাজ্যে সরকারী চাকুরীতে মুসলিমদের ১০% থেকে এখন নেমে যাচ্ছে ৫%-এর দিকে। অথচ এই একই সময়ে মুসলিমদের শিক্ষার হার অনেক বেড়েছে। ধর্মীয় পক্ষপাত থাকলে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে জনপ্রিয় হত। কিন্তু এখনও অবধি একবারই একটিমাত্র আসন (বিধানসভা ও লোকসভা মিলে) বিজেপির হাতে গেছে।

এবার এর মানে এই নয় যে ধর্মীয় পক্ষপাত একেবারে নেই। আমি ব্যক্তিগতভাবে জানি পুলিশ ফোর্সে মুসলিমদের কম নেওয়া হয় - বায়াসড সিলেকশন পদ্ধতির জন্য। সব মিলেই কারণ, পক্ষপাত একা কারণ নয়।


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

আলমগীর এর ছবি

এবার এর মানে এই নয় যে ধর্মীয় পক্ষপাত একেবারে নেই। আমি ব্যক্তিগতভাবে জানি পুলিশ ফোর্সে মুসলিমদের কম নেওয়া হয় - বায়াসড সিলেকশন পদ্ধতির জন্য। সব মিলেই কারণ, পক্ষপাত একা কারণ নয়।

আমাকে আরেকটা বিষয় বলুন।
এটা নিয়ে আমি আর আমার স্ত্রী অনেকদিন ভেবেছি, পরে দেখি একদিন তারাবাংলায় এনায়েতুর রহমান একই প্রসংগ তুলছেন। কোলকাতার টিভি অনুষ্ঠানের কুশীলবের তালিকায় কোন মুসলিম থাকে না কেন? পোশাক সরাবরাহ আর রূপসজ্জা ছাড়া আর কোন ভূমিকায় কোন মুসলিম নাম আমি কখনও দেখিনি। তার মানে কি মুসলিমরা সংস্কৃতিতে উদাসীন? নাকি কোলকাতার শিল্পীসমাজ মুসলিম মুক্ত থাকতে পছন্দ করেন?

রাগিব এর ছবি

হুবুহু একই প্রশ্ন আমার মনেও জেগেছে। পশ্চিমবঙ্গের মিডিয়া, পত্রিকা এসবের কোনো কিছুতেই দুই একজন বাদে মুসলিমেরা অনুপস্থিত। ৪ জনে ১ জন যদি মুসলিম হয়, তাদের অনুপস্থিতিটা বেশ প্রকট ভাবে চোখে পড়ে। হিন্দি সিনেমাতে বরং মুসলিম কুশলীদের সংখ্যা অনেক বেশি। কিন্তু অভিনয় থেকে শুরু করে উপস্থাপনা, গান গাওয়া ইত্যাদিতে ২৫% জনসংখ্যা প্রায় পুরোই অনুপস্থিত কেনো? এই ২৫% মানুষ তাহলে করে টা কী?

----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
http://www.ragibhasan.com

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

আলমগীর এর ছবি

এই ২৫% মানুষ তাহলে করে টা কী?

হিসাবে কয় বোমা বানায় আর মারে চোখ টিপি

দিগন্ত এর ছবি

সেকি, পশ্চিমবঙ্গে বোমা বানানোর খবর পাইনা তো হাসি । এমনকি কোনো বাঙালী এখনো সন্ত্রাসী কাজে ধরা পড়েছে বলে জানি না।

২৫% মানুষ অবশ্যই অনেক পিছিয়ে আছে। আপনি কতজন আদিবাসী (পদবী - মুর্মূ, ওরাঁও, লেপচা) নাম শোনেন? সমস্যাটা শুধু মুসলিমদের নয়। আর পক্ষপাত একমাত্র কারণ নয় এটাই আমার বক্তব্য।


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

দিগন্ত এর ছবি

আমি আপনাকে আরো অনেক তথ্য দিতে পারেই - উত্তরবঙ্গের কতজনের নাম শোনেন? উত্তরবঙ্গের (দিনাজপুর, মালদা, দার্জিলিং, কোচবিহার আর জলপাইগুড়ি) জনসংখ্যা পশ্চিমবঙ্গের এক তৃতীয়াংশ। অসাম্য অনেক আকারে অনেক ভাবে বসে আছে। রাষ্ট্র ব্যর্থ তো বটেই ...


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

আলমগীর এর ছবি

সাধুবাদ সরল স্বীকারোক্তির জন্য।

দিগন্ত এর ছবি

ভাল প্রসঙ্গ - তবে এ নিয়ে আমার কোন বক্তব্য নেই, কারণ আমি নিজেও কোলকাতার টিভির গান শুনি না খুব একটা। পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতিচর্চা সম্পর্কে আমার সঠিক কোনো ধারণা নেই আবার আমার হাতের কাছে তথ্যপ্রমাণও নেই কোনো। তবে বলি পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমদের একটা ভাল অংশই উর্দুভাষী (১০%) আর তারা উর্দু-সাহিত্য চর্চাও করেন। উর্দু আর সাঁওতালি পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় ভাষা। তবে অনুপস্থিতির অবশ্যই একটা বড় কারণ শিক্ষাক্ষেত্রে মুসলিমদের পিছিয়ে থাকা।


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

আলমগীর এর ছবি

পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতিচর্চা সম্পর্কে আমার সঠিক কোনো ধারণা নেই আবার আমার হাতের কাছে তথ্যপ্রমাণও নেই কোনো।

কোলকাতার মুসলিমরা কতভাগ উর্দু চর্চা করে তার হিসাব দিলেন, অন্যান্য আদিবাসীদের সব হিসাব দিলেন, আর এটা সম্পর্কে ধারণা নেই?

শিক্ষাক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকার সাথে সংস্কৃতির যোগাযোগ কতটা? নাকি মুর্খদের কোন সংস্কৃতি নাই বলছেন?

এক কবীর সুমন (যদি যুক্তির খাতির তাকে মুসলিম বলেন) ছাড়া সারা পশ্চিম বাংলায় কোন মুসলিম নাম নেই।

দিগন্ত এর ছবি

এক কবীর সুমন (যদি যুক্তির খাতির তাকে মুসলিম বলেন) ছাড়া সারা পশ্চিম বাংলায় কোন মুসলিম নাম নেই।

- রূপম ইসলামের ব্যান্ড ফসিলস ছাড়া বাংলা আধুনিকে আমার জানা নেই - কারণ আমি ক্ল্যাসিকাল মিউসিক ছাড়া খুব একটা গান-ভক্ত নই। আপনি ক্ল্যাসিকাল মিউসিকের ভক্ত হলে অনেক নাম দিতে পারি - উস্তাদ আলি আকবর খাঁ, উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, উস্তাদ বাহাদুর খান, বিদ্যুত খান, উস্তাদ রশিদ খাঁ (এখন কোলকাতায় থাকেন)। পশ্চিমবঙ্গের ক্ল্যাসিকাল মিউসিকের ধারাটা মূলত মুসলিমদের হাতেই। আপনাকে এটাও বলতে পারি যে উদীয়মান ক্ল্যাসিকাল মিউসিকের নক্ষত্রদের মধ্যে অধিকাংশই মুসলিম। শিক্ষা আর সংষ্কৃতি নিশ্চয় রিলেটেড - কারণ দুটোই অনেকটা ঘরাণার ওপর নির্ভর করে।

লেখক - আবুল বাশার, সৈয়দ মুজতবা আলি (আদপে সিলেটের লোক - কিন্তু ভারতে সেটল করেন), সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ।

একজন খুব খ্যাতনামা বাঙালী মুসলিম শিক্ষাবিদের কথা বলি, যাকে সারা দেশেই শ্রদ্ধা করা হয়। ইনি হুমায়ুন কবির। ইনি ভারতের আই-আই-টি গুলোর পরিকল্পনাকারী।

তবে এ নিয়ে আমার তর্ক করার কিছু নেই, আমি আগেই বলে দিয়েছি পশ্চিমবঙ্গে মুসলিমেরা পিছিয়ে ও তার কারণ রাষ্ট্রযন্ত্রের ব্যর্থতা।


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- ভাই, সর্ব ভারতের প্রেসিডেন্টও তো ছিলেন এ পি জে আবুল কালাম। এবং তিনি একজন নামী মুসলমান। এভাবে নাম বের করতে চাইলে মনেহয় অনেক মুসলমান নামই বের করা সম্ভব!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

দিগন্ত এর ছবি

সে তো বটেই, উনি নামই চেয়েছিলেন, আমি তাই দিয়েছি হাসি ... নামে কিছু যায় আসেনা, ব্যক্তিবিশেষের সাফল্য সামগ্রিক চিত্রের বিকল্প নয়।

আবদুল কালাম এই কারণে উল্লেখযোগ্য যে উনি উচ্চবর্ণীয় মুসলিমও নন। এটা একটা উল্লেখযোগ্য পয়েন্ট যেটা মিডিয়া কখনই তুলে ধরেনা।


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

তানভীর এর ছবি

মুসলিমও আবার উচচবর্ণের আছে নাকি? জানতাম না তো! হায় হায়, আমার বর্ণ তাইলে কোনডা? চিন্তিত

দিগন্ত এর ছবি

উচ্চবর্ণের মুসলিম -> উচ্চবর্ণের হিন্দু কনভার্ট + মুঘল আমলের জায়গির ও রাজকর্মচারী। ভেবে দেখে নিন আপনি কোন দলে হাসি


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

এ পর্যন্ত আলোচনাকে স্থিতধী ও যৌক্তিক লেগেছে। সত্যিই ভাল লেগেছে। তবে, একটা আলোচনা তুলতে চাই: ঊনিশ শতকেও মুসলিম শিক্ষাদীক্ষায় পশ্চাদপদতার কথা তোলা হয়েছিল ওয়াহাবি বিদ্রোহের পর। ওয়াহাবি প্রতিরোধ ব্যাপকতা পেলে সেটা ইংরেজ শাসকের গভীরভাবে ভাবায় যে, কেন মুসলমানরা ইংরেজের সঙ্গে সহযোগিতা করছে না_ যেটা সেসময়ের হিন্দু অভিজাত ও মধ্যবিত্তরা করছে। সিপাহি বিদ্রোহেও তাই দেখায যায়। কলকাতা তখন ইংরেজদের পক্ষে দাঁড়িয়েছিল। সেসময় ইউলিয়ম হান্টার নামে এক ইংরেজ বিদ্বান আমলাকে বিষয়টি নিয়ে কাজ করবার দায়িত্ব দেয়া হয়। তাঁর রিপোর্টটিই পরে প্রকাশিত হয় 'আওয়ার ইন্ডিয়ান মুসলিমস' নামে। সেখানেই তখন শিক্ষায় মুসলিম অনগ্রসরতার কথা তোলেন। তারপর থেকে এটা প্রতিধ্বনিত হতেই তাকে। পরে আরেকদল গবেষক দেখান যে, মুসলিমরাও সেসময় ইংরেজি শিক্ষায় ততটা পিছিয়ে ছিল না। কিন্তু দেখা যায়, যারা প্রতিরোধ করছে তারা ফার্সি ও আরবি শিক্ষিত এবং স্থানীয় অভিজাত শ্রেণীর লোক। তারা বিষয়টাকে রাজনৈতিকভাবেই দেখেছে, নিছক বৈষম্য দিয়ে নয়।
আরেকটা পয়েন্টও উল্লেখ করি, ব্রিটিশপূর্ব যুগে এরকম সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ থাকার তেমন বড় নজির নাই। তখন জাতীয়তাবাদ হিন্দু-মুসলিম নয়, বরং মোঘল-পাঠান-তুর্কি-রাজপূত-শিখ-মারাঠা এভাবে ছিল। তাহলে কি তারা আমাদের যুগের থেকে বেশি সেক্যুলার ছিল? অন্তত আওরঙ্গজেবের আমলটা বাদ দিলে, তা কি বলা যায়? সাম্প্রাদায়িকতার শুরু হয় ব্রিটিশ আইন প্রবর্তন এবং ডিভাইড এবং রুল এর সুবাদে।
অন্যদিকে সেই ঊনিশ শতক থেকেই ভারতীয় জাতীয়তাবাদ বঙ্কিমের আনন্দমঠ থেকে শুরু করে কংগ্রেসে মুসলমানদের যথাযথ জায়গা না দেয়া মিলিয়ে একটা সাম্প্রদায়িক জাতীয়তাদে পরিণত হয়। গান্ধিও একে প্রশ্রয় দিয়েছেন। (তবে এটাও সত্য যে যেভাবে ৪৭ এর আগস্টে কলকতায় বসে মুসলিম নিধনের বিরুদ্ধে টানা ১৫ দিন অনশন করে ভারতকে পাকিস্তানের প্রাপ্য অর্থ ফেরত দেয়া এবং দিল্লি ও কলকাতার দাঙ্গা থামানোর জন্য চাপ দিয়েছেন তাতে করে জিন্নাহকে ও বলতে হয় যে, গান্ধি এক মহান হিন্দু। ব্যাপারটা তার থেকেও বেশি। শত ত্রুটি সত্ত্বেও গান্ধি এক মহান ভারতীয়)। যাহোক এই ভারতীয় জাতীয়তাবাদ যে পরিমাণে উচ্চবর্ণের হিন্দু প্রতীক (বন্দে মাতরম, ত্রিসিংহ, ইত্যাদি) মতাদর্শ (রামরাজত্ব) ও ভাষা অবলম্বন করে সেই পরিমাণে তা অন্যদের এক্সক্লুড করতে থাকে। তখনও এই কাজে হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভীর সাভারকার প্রমুখের অবদান ছিল। সেসময় থেকেই তারা সশস্ত্র প্রশিক্ষণ ও সামরিকতাকে এই জাতীয়তাবাদের সহায়ক করে গড়ে তোলে। (দেখুন জয়া চ্যাটার্জির বেঙ্গল ডিভাইডেড)।
অন্যদিকে মুসলিমদের সাবেকি রাজন্যবোধ আর নয়া ব্রিটিশ উপনিবেশিকতার বিরোধিতা সঠিক রাজণৈতিক মতাদর্শ ও নের্তৃত্বের অভাবে সাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদে পরিণত হয়। ভুঁইফোঁড় নবাব নাইটদের হাতে তা আরো অধপতিত হয় যে, স্বাধীনতার এক বছরের মধ্যে তার মুখোশ বাংলা ও পাকিস্তানে উন্মোচিত হয়ে যায়।
বৈষম্যভিত্তিক সমাজে ধর্মভিত্তিক বৈষম্য যে থাকবে তা স্বাভাবিক। কিন্তু সেটা যখন ডেলিবারেটলি করা হয় তখন তা নিয়ে বিশেষ সচেতনতা গড়ে ওঠে। যেটা ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে হচ্ছে। তারওপর রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট রাজনৈতিক শক্তি যখন শতভাবে তাদের ওপর নৃশংস আঘাত করে, তাদের পবিত্রস্থান গুঁড়িয়ে মনোবল ভেঙ্গে দেয়, এবং এর বিরুদ্ধে কিছু বললে সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ তোলা হয়, তখন তারা এটাকে রাজনৈতিক ভাবে দেখা শুরু করে। মুসলিম সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ এখানে প্রতিক্রিয়া। এই প্রতিক্রিয়া প্রগতির পথে যেত, যদি মুসলিম নের্তৃত্বের মধ্যে সেই উপলব্ধি থাকতো। একইসঙ্গে ভারতীয় বামদেরও সমালোচনা করা যায়, এই ইস্যুটা যদি তারা যথাযথভাবে ডিল করতো তাহলে জঙ্গিবাদ সামনে আসা কঠিন হতো।
সুতরাং বৈষম্যের যেমন রাজনৈতিক অর্থনীতি রয়েছে তেমনি রয়েছে মতাদর্শিক ব্যকরণ। সেই ব্যকরণ উভয় সম্প্রদায়কেই প্রতিক্রিয়াশীল করে তুলছে। এটা অভ্যন্তরীণ দিক। এর সঙ্গে আমেরিকার নতুন বিশ্বব্যবস্থা কায়েমের বিভক্তি ও ফ্যাসিবাদী রাজনীতিও আমাদের মতো দেশে ইসলাম বনাম প্রগতি আর ভারতে মুসলিম বনাম হিন্দু বিন্যাস সাজাতে সাহায্য করছে। সেটাও হিসেবে নিতে হবে।
জঙ্গি আক্রমণ যখন যারা করে তা মুসলিম-হিন্দু যেই হোক, তাদের তাদের নামেই চিনতে হবে। কিন্তু এর রাজণৈতিক ও নিরাপত্তাগত অভিঘাতটা কেবল তা দিয়েই বিচার করার পাশাপাশি এর সাইক্লিক বিহাভিয়েরের দিকেও তাকাতে হবে। বিশ্বযুদ্দের সূচনা কিন্তু দেখানো হয়েছিল এক সার্ব সন্ত্রাসীর হামলা থেকে। কিন্তু সেটা শেষ পর্যণ্ত গড়ালো কোথায়?

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

দিগন্ত এর ছবি

পরে লেখেন আলোচনা করব ... এত সাব-কমেন্ট আর পারা যাচ্ছেনা।


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

হ্যাঁ, এই মুহূর্তে আমাদের যত নালিশ, অবিশ্বাস আর যত ফরিয়াদ ও হিংসা সব একসঙ্গে চলে আসছে তো। ফলে আর মূল আলোচনায় যাওয়া যাচ্ছে না। আমিও ভাবছি. অফিস করব, না হুজুরদের ভাস্কর্য ভাঙ্গার পেছনে লাগব নাকি এখানে নিজেকে খোলাসা করবো বা মুম্বাইকে বোঝার চেষ্টা করবো।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

পুরুজিত এর ছবি

বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব কেমন এই ব্যাপারে কোন তথ্য আছে কি? আমার ব্যক্তিগত ধারণা, একই রকম বা আরও খারাপ। যদি তাই হয়ে থাকে আমাদের এই ব্যাপারে কথা বলা ঠিক শোভন না - অন্ততঃ এমন একটা দেশের সম্পর্কে যেখানে একজন সংখ্যালঘু প্রধানমন্ত্রী, আরেকজন বিদেশী প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতা, আরেকজন সংখ্যালঘু রাষ্ট্রপতি ছিলেন কিছুদিন আগেও। এর একটাও বাংলাদেশে খুব তাড়াতাড়ি হবে এমনটাও মনে হয় না...

রাগিব এর ছবি

পুরুজিত, আমার হাতে বিস্তারিত তথ্য নেই, অনলাইনে ঘেঁটে মার্কিন স্টেইট ডিপার্টমেন্টের ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডমস রিপোর্টের ২০০১ সংস্করণে যা পেলাম তা হলো -


The Government has appointed some Hindus to senior civil service positions, and some recent promotion lists from the Ministry of the Establishment included from 3 to 7 percent Hindus and other minorities. However, religious minorities remain underrepresented in government jobs, especially at the higher levels of the civil and foreign services. The government-owned Bangladesh Bank employs about 10 percent non-Muslims in its upper ranks. Hindus dominate the teaching profession, particularly at the high school and university levels. Some Hindus report that Muslims tend to favor Hindus in some professions, for example, doctors, lawyers, and accountants. They attribute this to the education that the British offered during the 19th century, which Muslims boycotted but Hindus embraced.

------

বাংলাদেশের অমুসলিমদের হার প্রায় ৯-১০%, কাজেই এই উপাত্তের ভিত্তিতে (যদিও এটা মূল চাকুরি উপাত্তের অতি ক্ষুদ্রাংশ) বাংলাদেশের অবস্থা ভারতের থেকে ভালো। অন্তত পশ্চিমবঙ্গের ২৫% জনগোষ্ঠীর মাত্র ৪ থেকে ৭% চাকুরির হারের চাইতে ভালো।

(অবশ্য এটা বলবোনা যে মার্কিন দপ্তরের এই রিপোর্টে পুরো বাস্তবতার চিত্র ফুটে উঠেছে। সেনাবাহিনীতে সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব বেশ কম বলে আমারও ধারণা। একই কথা সম্ভবত পুলিশ বাহিনীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আরো বিস্তারিত তথ্য পেলে জানাবেন।)

আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতিদের ধর্ম কি সংখ্যালঘুদের চাকুরির ক্ষেত্রে কিছুই পাল্টাচ্ছে বা পাল্টাবে কখনো? রাষ্ট্রপতি কালাম থাকাকালীন কি চাকুরির ক্ষেত্রে কেরালা বা পশ্চিমবঙ্গের কেউ বেশি সুবিধা পেয়েছে? রাজনৈতিক গুটি কয়েক পদ দিয়ে কখনো সাম্যের বিচার হয় না। বাংলাদেশের ডানপন্থী দলেও সংখ্যালঘু দুই একজন আছেন, একজন তো মন্ত্রীও ছিলেন (যুগ্ম মহাসচিব গয়েশ্বর রায়), তাতে কি ঐ দলের ডানপন্থা এবং সংখ্যালঘু পীড়ণ কিছু কমেছে?

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

দিগন্ত এর ছবি

রাগিবভাই, রাজনৈতিক ক্ষমতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে হিন্দুদের কি অবস্থা?


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

আলমগীর এর ছবি

রাজনৈতিক ক্ষমতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে হিন্দুদের কি অবস্থা?

মোটেই ভাল না।
বিএনপি বলেকয়ে ন্যাশনালিস্ট। তারা দু-একজন হিন্দু নেতা অনেকটা "পোষেণ"। জামাত তো জামাতই। এরশাদের জাতীয় পার্টি আর বিএনপির মধ্যে চরিত্রগত কোন পার্থক্য নেই।

বাকী রইল আলীগ আর বামদল। আলীগ এক সময় সেকুলারিজম বিশ্বাস করত (অন্তত দলীয় মেনুফেস্টেতে ছিল), ক্ষমতার যাবার জন্য সেটা বিসর্জন দিয়েছে। এখন "আল্লাহ সর্বশক্তিমান" দলীয় মূলনীতি। তবে, পার্টিতে এবং নেতৃত্বে বেশ কয়েকজনই আছেন। সমানুপাতিক কিনা, তা বলা কঠিন। সে তুলনায় বামদলগুলোতে হিন্দু আছেন (যদিও তারা কেবল নামেই হিন্দু, চেতনায় বাম)। কিন্তু বামদলগুলোর অবস্থা খুব সঙ্গীন।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

‌দুঃখিত দিগন্ত, আপনি দারুণ সাড়া তুলেছেন বিষয়টাকে ঘিরে। অফিসের কাজের মধ্যে থাকায় যা দরকার তা করতে পারছি না। এখানে কেবল কিছু ইঙ্গিত রেখে যাচ্ছি।
উপমহাদেশের সর্বত্রই সাম্প্রদায়িক বিভাজন-বৈষম্য কমবেশি আছে। সেটা আদিবাসীসহ সকলরকম প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বেলাতেও ঘটছে। বিশ্বে এটা নতুন নয়, চোখ সওয়া বাস্তবতা। আমার জোরটা এখানে নয়, আমি বলতে চাইছি ভারতে ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটছে। ফ্যাসিবাদের জন্য শক্তিশালী শত্রু লাগে। ভারতে মুসলমানদের সেরকম শক্তিশালী শত্রু হিসেবে নির্মাণ করা হচ্ছে, দেখানো হচ্ছে। একইসঙ্গে আদিবাসী খ্রিস্টানরাও আক্রান্ত হচ্ছে। বাংলাদেশেও হিন্দু জনগোষ্ঠী নিরন্তর চাপে থাকেন, বৈষম্যের শিকার হন এবং সময়ে সময়ে তাদের ওপরও দোজখ নেমে আসে; অন্তত ২০০১ সালের নির্বাচনের পরের পরিস্থিতিতে।
কিন্তু এদেশে এখনও ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ ততটা প্রবল নয়, যতটা ভারতে। আবার হিন্দু জনগোষ্ঠীও নয় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে সক্ষম। ৪৭-৫৬, ১৯৭১ এবং তার পরের দেশত্যাগের ফলে হিন্দুরা এখানে একদিকে সংখ্যায় কমে গিয়েছে অন্যদিকে নের্তৃত্বহীন অবস্থায় প্রতিবাদের জোর হারিয়েছে। কিন্তু ভারতে চোখের সামনে মুসলমানরা রয়েছে, রয়েছে কাশ্মীর।
এই ফ্যাসিবাদ কেবল ভারতের অভ্যন্তরীণ প্রয়োজনই নয়, এটা বিশ্ব পুঁজিবাদের বর্তমান রাজনৈতিক ও সামরিক পরিকাঠামো। তার সঙ্গে ভারতীয় পুঁজির সহযোগেই সর্বাত্মক ফ্যাসিবাদ দানা বাঁধার চেষ্টা করছে। ফলে এর সঙ্গে দীর্ঘদিনের চলা বৈষম্য, সামাজিক ভাবে পিছিয়ে থাকার যত না যোগ, তার থেকে বেশি যোগ ভারতীয় জাতীয়তাবাদের আগ্রাসী হয়ে ওঠা. মার্কিনের ওয়ার অন টেররের বিস্তার এবং বিশ্ব পুঁজির সংকট।
একারণেই আমি ভীত। ফ্যাসিবাদের অবলম্বন ইসলামও হতে পারতো, যদি ভারতে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকতো। বাংলাদেশ পাকিস্তানে সেটা আছে, কিন্তু ফ্যাসিবাদ কায়েমের উপযুক্ত অর্থনৈতিক, সামরিক, ও রাজনৈতিক ভিত্তি তাদের নেই। এরা বড়জোর দুবৃত্তপনা-জুলুমবাজি করতে পারে, যেটা আজ দেশদুটিতে চলছে।
এখানে আমার আরেকটি লেখা থেকে উদ্ধৃতি দিচ্ছি।
‌‌''নিঃসন্দেহে জঙ্গিবাদ বিজেপির হিন্দুত্ববাদের প্রধান তরিকাও নয়। বিজেপি হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল: ধর্মনিরপেক্ষ বহুজাতিক ভারতকে তারা ‘হিন্দু ভারত’ বানাতে চায়। তাদের চোখে অ-হিন্দুরা ‘জাতীয়’ শত্র“। ভারতের পুঁজিপতি শ্রেণী ও আধুনিক মধ্যবিত্তদের মধ্যেও এই চিন্তার কদর বাড়ছে। ভয়ের কথা সেটাই। নরেন্দ্র মোদীর গুজরাত এই ধরনের ঘৃণার রাজনীতির অতিকায় কর্মশালা। সরকারি মদদে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা চালানো, ঘর-বাড়ি-দোকানপাট পোড়ানো, গণধর্ষণসহ বহু বীভৎসতার পাথুরে প্রমাণ থাকার পরও গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদী ‘সাচ্চা’ মানুষ, দক্ষ প্রশাসক। তাঁর প্রত্যক্ষ মদদের অকাট্য প্রমাণ থাকার পরও তাঁর পুননির্বাচিত হওয়া ঠেকে থাকেনি। ভারত সরকারের নানাবতী কমিশনও মোদীকে নির্দোষ ঘোষণা করতে দ্বিধা করেনি। একেই বলে, যো জিতা ওহি সিকান্দার। ভয় হয়, একদিন হয়তো একাত্তরের গণহত্যাকারীদেরও এরকম সাচ্চা বনে যেতে মুশকিল হবে না।

এই মোদী বাদশা’র রাজ্যে মুক্তবাজার, বহুজাতিক বিনিয়োগ আর কর্পোরেট মডেলের সঙ্গে উগ্র ধর্মীয় আদর্শ একাকার হয়ে ভয়ের রাজত্ব কায়েম করেছে। সংখ্যালঘুদের দলন করা যেখানে বীরত্ব সেখানে ফ্যাসিবাদের উত্থানের পরিবেশ চৌদ্দ আনাই পাকা। নাৎসি জার্মানীতেও ইহুদিদের বিরুদ্ধে জার্মানদের ঘৃণায় মাতিয়ে হিটলার মতায় বসেন। বাদবাকি ইউরোপ তখন ভেবেছিল, দেখি না কী করে! সেই দেখার অপোর খেসারত গোটা মানবজাতিকেই রক্ত আর ধ্বংসের দামে দিতে হয়েছিল। বিজেপিও ওরকম ঘৃণার জিগির ছড়াচ্ছে ভারতের সংখ্যালঘু ও অহিন্দুদের বিরুদ্ধে। সংখ্যালঘু খ্রিস্টানদেরও তারা ছেড়ে কথা বলছে না। বিজেপি’র এক শীর্ষ নেতা তো বলেই ফেলেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগের জার্মানীতে ইহুদিরা যেমন, এখনকার ভারতের মুসলমানরাও তেমন। গুজরাতের পাঠ্যপুস্তকে তাই হিটলার বন্দিত হন। ইহুদিমুক্ত জার্মানির আদলে বিজেপিও অহিন্দুমুক্ত ভারত চায়। বলপ্রয়োগ ও আতঙ্ক ছড়ানো তারই আয়োজন। এ ধরনের রাজনৈতিক মতবাদ ও কর্মসূচির বিশুদ্ধ নাম ফ্যাসিবাদ। বলতে দ্বিধা নেই, আজ ভারতে সেরকম এক ফ্যাসিবাদের উত্থানই আমরা দেখতে যাচ্ছি। ফ্যাসিবাদ ও বড় কর্পোরেশনের সম্পর্ক সুবিদিত। টাটা, রিল্যায়েন্সও বলছে, গুজরাত হলো পুঁজিপতিদের স্বপ্নের গন্তব্য। আকলমান্দ কি লিয়ে ইশারাই কাফি।

বিজেপির এই রাজনৈতিক যাত্রায় সন্ত্রাস এক মধ্যবর্তী স্টেশন মাত্র। তারা দিব্যি জানে, সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্মকে পুঁজি করে নির্বাচনের পথেই মতা পাকা করা সম্ভব। হিটলার, মুসোলিনির মতো নরেন্দ্র মোদীও কিন্তু পরপর দু’বার নির্বাচিত হয়েছেন। যে এল কে আদভানীর জীবনের প্রধান কৃতিত্ব বাবরি মসজিদ ধ্বংস, সেই তিনিও ভারতের ভাবি প্রধানমমন্ত্রী বিবেচিত হচ্ছেন। সুতরাং ভোটেই কার্যসিদ্ধি হলে আর কেন সন্ত্রাসকে হাতিয়ার করা? করা এক এক ঢিলে দুই পাখি মারার খায়েশে। নিজেদের সন্ত্রাসকে মুসলিম মুখোশ পরিয়ে দেখালে একদিকে মুসলিমদের রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করা সম্ভব অন্যদিকে জুজুর ভয় দেখিয়ে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে হিন্দুত্ববাদের পতাকাতলে জমায়েত করাও সহজ। এটা তাদের পরীতি পথ। গুজরাত গণহত্যা তাদের জনবিচ্ছিন্ন করেনি, বরং নির্বাচনী বাজিমাতকে সহজ করেছে। তাই গণতন্ত্রের মধ্যে অধিকাংশের শাসনের যে প্রতিশ্র“তি আছে তা মোদী গংয়ের হাতে পরিণত হচ্ছে অধিকাংশের দাপটে। কতিপয়ের উত্থানের চরিত্র ক্যু কিংবা সন্ত্রাসবাদ। আর অধিকাংশের দাপটের চরিত্র ফ্যাসিবাদ।

এই ফ্যাসিবাদ জার্মান বা ইতালিয় ফ্যাসিবাদের মতোই আধুনিকতার মুখোশ পরা বলে চিনতে অনেকের দেরি হচ্ছে। তাই অরূন্ধতি রায় তাঁর ইস্তাম্বুল বক্তৃতায় যথার্থই বলেন, ‘‘এটা কোনা কাকতাল নয় যে, ওসমানিয়া সাম্রাজ্যের যে রাজনৈতিক দলটি আর্মেনিয়দের ওপর গণহত্যা চালিয়েছিল তার নামও ছিল ‘কমিটি ফর ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস’। হিটলার এবং মুসোলিনিও ছিলেন প্রগতির ধ্বজাধারী। আমেরিকার ভিয়েতনাম ও ইরাক-আফগানিস্তান-কসোভো সবই তো ভেক ধরা গণতন্ত্র ও প্রগতির রক্তাক্ত পদচিহ্ন। আদভানীর বিজয় রথও প্রগতি ও আধুনিকতার নামেই যাত্রা করেছে।’’ তারা দেখাচ্ছে, মুসলিম ও আদিবাসীরা এই প্রগতির শত্র“। অন্যদিকে ভারত যেহারে ইসরায়েল ও আমেরিকার অক্ষে ঢুকছে, তাতে ঐ দুটি পরাশক্তির জাতবিদ্বেষের সঙ্গে ভারতীয় মুসলিম বিদ্বেষও একাকার হওয়ার মওকা পাচ্ছে। পরাশক্তি ভারত যদি সে পথে যায়, উপমহাদেশে তার বিপদ কল্পনা করাও কঠিন।

এখানেই পাকিস্তান ও বাংলাদেশের ধর্মীয় উগ্রবাদীদের সঙ্গে তাদের তফাত। এই দুটি দেশে ধর্মীয় রাজনীতি প্রধানত আধুনিকতা বিরোধী। অথবা তারা আধুনিকতার নিজস্ব বয়ানে বিশ্বাসী। রাজনৈতিক ইসলামের ধারাটি এখানকার শাসকবর্গের মূল অংশ নয়। বড় জোর শাসকবৃত্তের ছোট তরফ তারা। শহুরে উঠতি ধনিক ও নিম্নবিত্ত এবং গ্রামীণ দরিদ্রদের নিয়েই এদের কারবার। জেএমবি প্রধান শায়খ রহমানের জবানিতে থেকেও বোঝা যায় পশ্চিমা আধুনিকতায় ক্ষিপ্ত ও বিত্তবঞ্চিতরাই তাদের সহিংস রাজনীতির খাতক। ভারতের বেলায় তা আসছে অগ্রসর শ্রেণীগুলোর একচেটিয়া ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার রক্ষাকবচ হিসেবে। সনাতন ভারতীয় উচ্চবর্ণের আধিপত্যবাদী মতাদর্শ আর দেশি-বিদেশি পুঁজির বাসনা সেখানে গলাগলি করি পরস্পরকে পুষ্টি যোগাচ্ছে। অন্যদিকে ফ্যাসিবাদ কায়েম করবার জন্য যে অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় তাকদ লাগে তা ভারত ছাড়া উপমহাদেশের অন্য দুটি রাষ্ট্রের নেই, সেরকম মতাদর্শও অনপুস্থিত। আমাদের মতো দেশে তা বড়জোর সেনাশাসন ও প্রধান দুটি দলের হাতিয়ার হওয়ার বেশি যেতে পারে না। ১৯৭১-এ যেভাবে তাদের নির্যাতকদের দোসর হিসেবে দেখা গেছে, সেটাই এখন পর্যন্ত তাদের রাজনীতির সীমানা। নিজের জোরে বড় আন্দোলন কিংবা নির্বাচিত সরকার গঠন তাদের সাধ্যের বাইরে। সরকারি প্রশ্রয় ছাড়া দাপট দেখানোর কোনো নজিরও এখনো মেলেনি। মধ্যপ্রাচ্যের পেট্রোডলার আর মধ্য এশিয়ার রাজনৈতিক মদদের হিসেব কষলে, শক্তি নয় বরং এদের নির্ভরশীলতারই প্রমাণ মেলে।

আবার এটাও খেয়ালে রাখা দরকার যে, ভারতীয় সমাজ ও রাজনীতির মধ্যে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যে সচেতনতা রয়েছে, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে তা খুবই কমজোরি। তাহলেও, ভারতে কিছু ঘটা মানে তার ঢেউ আলবৎ বাংলাদেশকেও দোলাবে। সেটা হবে ব্রিটিশ আমলের সাম্প্রদায়িক হানাহানির নতুন পর্ব। সেই পর্ব আসা মানে উপমহাদেশের সকল ধরনের সংখ্যালঘুদের জীবনে নরক নেমে আসা। সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মের মানুষের জীবনও তখন আর আগের মতো থাকবে না। ফলে, বিপদ ভেতর-বাহির দুদিকেই। বিশেষ করে বৈশ্বিক আর্থিক মন্দার পরিবেশে এই ভয় আরো বেশি। মন্দার মধ্যেই কিন্তু ইউরোপীয় ফ্যাসিবাদ জনগণের হতাশাকে পুঁজি করে বেড়ে উঠেছিল। সবসময়ই মন্দা-নৈরাজ্য হয় বিপ্লব নয়তো প্রতিবিপ্লব ডেকে আনে। আমাদের বেলায় অমঙ্গলের সোনায় সোহাগা আয়োজন দেখে ইতিবাচক পরিবর্তন দুরাশা মাত্র। কিন্তু ইতিহাস মানে পূর্বনির্ধারিত নিয়তি নয়। মানুষই ইতিহাস বানায় ও বদলায়। উপমহাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিগঠন আমাদেরই কর্মফল এবং আমরাই পারি তার খাত বদলে দিতে। '' ভারতে ফ্যাসিবাদের উত্থান

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

দিগন্ত এর ছবি

ভারতে ফ্যাসিবাদের উত্থান আর সন্ত্রাসী হামলা আলাদা ব্যাপার। নিজের দেশে হামলা চালিয়ে নিজের মত প্রতিষ্ঠা হিটলারও করেছিলেন বলে তো মনে পড়ে না ... ফ্যাসিবাদের মূলমন্ত্র বিভাজন, সন্ত্রাসেরও তাই - এটাই মিল।

আপনি কি মনে করেন তদন্তকারী লোকজন বিজেপির এতটা অন্ধভক্ত হবে যে তারা তদন্তে বিজেপির সূত্র পেলে চেপে যাবে? যাবে না - কারণ মারা গেছে যারা তার মধ্যে তাদের নিজেদের সহকর্মী, আত্মীয়স্বজন, চেনাজানা আছে।


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

করেছিলেন, হিটলার ও মুসোলিনিরা শুরু করেন গুপ্তহত্যা ও সন্ত্রাস দিয়ে। সন্ত্রাসের পথেই হিটলার রাইখস্ট্যাগ (জর্মন পার্লামেন্ট) দখল করে ক্ষমতায় এসেছিলেন ও জনপ্রিয়তা নিয়েছিলেন।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

দিগন্ত এর ছবি

মালেগাঁও, নান্দেদ, আজমীর, পাটনা, সমঝোতা এক্সপ্রেস, আহমেদাবাদসহ গত কয়েক বছরের আলোচিত বোমা হামলাগুলোর পেছনে বিজেপি তথা সংঘ পরিবারের হাত আবিষ্কৃত হয়েছে।

- দেখুন, এই সমস্ত আক্রমণে মূল ভিক্টিম ছিল মুসলিমেরাই। তাই স্বাভাবিকভাবেই, হিন্দু উগ্রবাদী সংগঠনের মোটিভ সম্পর্কে কোনো সন্দেহ থাকতে পারে না। মুম্বইএর সাথে সেই মোটিভের কোনো মিল নেই।

তাজ হোটেলের ঘটনায় একইসঙ্গে এমন তিনজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা মারা গেছেন, যাঁরা বিজেপির হিন্দু জঙ্গিবাদকে উন্মোচিত করার তদন্তে নিয়োজিত ছিলেন।

- আপনার এটাও জানা উচিত যে হেমন্ত কার্করে কান্দাহার বিমান হামলায় যে ভারতীয় প্রতিনধিদলটি আফগানিস্তানে গিয়েছিল তার অংশ ছিলেন, যেমন ছিলেন র'এর এজেন্ট। আপনার বর্ণিত শত্রুরাই ওনার একমাত্র শত্রু ছিল সেটা ঠিক নয়।
এসব ছাড়াও আমার মনে হয় হেমন্ত কারকরেকে মারার জন্য এত কিছু করার দরকার ছিল না। কারকরে নিজে জঙ্গীদের তাড়া না করলে জঙ্গীদের ওনাকে মারার কোনো সুযোগই থাকত না।
সবশেষে বলি কারকরে একার পক্ষে কোনো তদন্ত চালানো সম্ভবই হত না যদি না সামগ্রিকভাবে এটিএস তার পেছনে থাকত। শুধু কারকরেকে মেরে কোনো লাভ হবে না, এটিএস তার কাজ চালিয়ে যাবে বলেই আমার ধারণা।

হামলার হোতারা ভারতীয় মুসলিম হতে পারবে না কেন?

- ভারতীয় মুসলিমদের আমেরিকান, ব্রিটিশ আর ইজরায়েলীদের ওপর রাগ থাকার কোনো কারণ দেখিনা, আপনার বর্ণনাতেও আপনি কোনো কারণ দেখান নি। ক'দিন আগে ধরা পড়া একজন সন্ত্রাসী যে আদালতে দোষ স্বীকার করেছে তার বক্তব্য অনুসারে সেটা ছিল ভারতীয় মুসলিমদের দ্বারা সংগঠিত এবং তাতে মোটিভ খুব সুস্পষ্ট, কারণ আহমেদাবাদ ছিল ২০০২ এর দাঙ্গার কেন্দ্রস্থল।

এমনকি বিজেপির দাবি মতো আমেরিকার প্যাট্রিয়ট অ্যক্টের মতো মুসলিম বিরোধী আইনও হয়ে যেতে পারে। হতে পারে পাকিস্তানী জঙ্গি কার্ড খেলে আগামী নির্বাচন জিতে সরকার গঠন।

- তাহলে কোনো মুসলিম-বিরোধী আইন না হলে বোঝা যাবে বিজেপি এর সাথে জড়িত নয়? ভারতে নির্বাচনে অনেক ফ্যাক্টর, সেটা কি আপনি বোঝেন?

যে দেশে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মতো করেই জঙ্গিবাদকে লালন-পালন করা হয়

- সম্পূর্ণ দ্বিমত, ভারত, পাকিস্তান বা বাংলাদেশ - কোনো জায়গাতেই জঙ্গীবাদকে লালনপালন করা হয় না।

সম্প্রতি মহারাষ্ট্র সরকার বিনা অপরাধে নির্যাতনে পঙ্গু হয়ে যাওয়া কয়েকজন মুসলমান তরুণকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে ছেড়ে দিয়েছে মানবাধিকারকর্মীদের চাপে।

- আপনি হয়ত জানেন না, মালেগাঁও বিস্ফোরণের মূল অভিযুক্তরাও (হিন্দু উগ্রবাদী দল অভিনব ভারত এর অংশ) একইভাবে নির্বিচারে বন্দী করে রাখা ও অত্যাচারের অভিযোগ এনেছেন। এটা সারা পৃথিবীব্যাপি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের ধারার অংশমাত্র। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান এমনকি আমেরিকার গুয়ান্তানামো বে এপিসোড সেদিকেই দেখায়।

ইতিমধ্যে মোদী জনগণকে রায় ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে জাতির ত্রাতার ভূমিকায় নেমেছেন। এই ঘটনায় সর্বভারতীয় নেতা হিসেবে তাঁর অভিযাত্রার সূচনাও দেখা গেল।

- উনি ত্রাতার ভূমিকায় নেমে মৃত তিন পুলিশ অধিকর্তাদের এক কোটি টাকা দিতে চেয়েছেন, পুলিশকর্তাদের স্ত্রীরা সেই টাকা নিতে অস্বীকার করেছেন - উলটে এই নিয়ে রাজনীতি থেকে বিরত থাকতে মোদীকে উপদেশ দিয়েছেন। সর্বভারতীয় নেতার এত বড় 'ব্যর্থতা' দিয়ে শুরু ...

এখনো তাদের নাম-পরিচয় বলা হচ্ছে না কেন?

- নাম পরিচয় (স্ববর্ণিত) প্রকাশিত হয়েছে কালকেই। ছবি হামলার দিনেই বেরিয়ে এসেছে।


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

আলমগীর এর ছবি

- দেখুন, এই সমস্ত আক্রমণে মূল ভিক্টিম ছিল মুসলিমেরাই। তাই স্বাভাবিকভাবেই, হিন্দু উগ্রবাদী সংগঠনের মোটিভ সম্পর্কে কোনো সন্দেহ থাকতে পারে না। মুম্বইএর সাথে সেই মোটিভের কোনো মিল নেই।

এসব ঘটনা ঘটার পরপরই কিন্তু তা বলা হয়নি। গতানুগতিক নিয়মেই মুসলিম জঙ্গীদের দোষ দেয়া হয়েছে। আসল দোষী কারা তা অনেক পরে বের হয়ে এসেছে।

সাগরমতি নিয়ে লোপামুদ্রার গানটাও সংক্রামক লেগেছে।

দিগন্ত এর ছবি

আসল দোষী কারা তা অনেক পরে বের হয়ে এসেছে।

বের নিজে থেকে হয়ে আসেনি, তদন্ত করেই বের করা হয়েছে। তদন্তটাও কোনো বিদেশী সংস্থা চালায়নি, সেই একই রাষ্ট্রীয় সংস্থাই চালিয়েছে। তারা প্রথমে আগের ঘটনাগুলোর মত করেই অনুমান করেছিল, পরে তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতেই অন্য গোষ্ঠীকে ধরেছে।

তবে তদন্তকারী সংস্থার ওপর অন্তত আস্থা রাখা ভাল।


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

আলমগীর এর ছবি

তদন্তটাও কোনো বিদেশী সংস্থা চালায়নি,

ঠিক নয়। গোধরা ঘটনা এমনেস্টি সন্দেহ করেছে। তারা প্রাথমিক তদন্তে ভিন্ন কথা বলেছে বলেই ভারতীয় সরকার পরে বিস্তারিত তদন্ত করেছে। আইরিন খানকে গুজরাটে যেতেই দেয়া হয়নি।

তবে তদন্তকারী সংস্থার ওপর অন্তত আস্থা রাখা ভাল।

সব সময় না।
নরেন্দ্র মোদির হিসাবের খতিয়ান কতটুকু প্রকাশ হয়েছে তদন্তে? রেজোয়ান হত্যার কী হলো? এর আগে প্রণব বাবু বাংলাদেশী সন্ত্রাসীদের যেসব তত্ব দিয়েছেন তার কটা প্রমাণিত হয়েছে?

দিগন্ত এর ছবি

গোধরা ঘটনা এমনেস্টি সন্দেহ করেছে।

গোধরা ঘটনা কোনটা? ট্রেন জ্বালিয়ে দেওয়া না দাঙ্গা? দাঙ্গা নিয়ে ভারতীয় মিডিয়া তৎক্ষণাৎ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল। এমনেস্টি সেখান থেকেই জেনেছে।

আইরিন খানকে গুজরাটে যেতেই দেয়া হয়নি।

- ভাল পয়েন্ট। এবার আপনি বলুন, আমেরিকা সরকার নরেন্দ্র মোদীর ভিসা রিফিউজ করেছে কয়েকবার মানবাধিকার লংঘনের রেকর্ড থাকায়। আপনি নিশ্চয় আমেরিকা সরকারের প্রশংসা করবেন এ নিয়ে হাসি

নরেন্দ্র মোদির হিসাবের খতিয়ান কতটুকু প্রকাশ হয়েছে তদন্তে?

- রাজনৈতিক ক্ষমতাবানদের তদন্তে দোষী সাব্যস্ত করা কতটা সম্ভব? বাংলাদেশে কোনোদিনও হাসিনা, এরশাদ আর খালেদাকে দোষী সাব্যস্ত করে সঠিক মাত্রায় জেল খাটানো যাবে? তাও গণতান্ত্রিক সরকারের মাধ্যমে?

রেজোয়ান হত্যার কী হলো?

- রেজোয়ান হত্যাই হয়েছে আত্মহত্যা করেনি এমন তো কিছু প্রমাণিত হয়নি। তবে তোদিদের আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেবার জন্য গ্রেফতার করার কথা, তারা পলাতক।

এর আগে প্রণব বাবু বাংলাদেশী সন্ত্রাসীদের যেসব তত্ব দিয়েছেন তার কটা প্রমাণিত হয়েছে?

- এটাই তো সমস্যা। আপনি নিজেও জানেন বাংলাদেশে বাংলা ভাই, শায়খ আবদুল রহমানের মত জঙ্গী ধরা পড়েছে যাদের কথা ভারত সরকার বলেছিল। জে-এম-বির অস্তিত্ত্ব কি কয়েকদিনেই নির্মূল হয়ে গেল। আর এরা যদি থেকেই থাকে তারা কি ভারতে আসতে বা অন্য কাউকে সাহায্য করতে পারে না? আপনি সন্ত্রাসীদের দেশ-সাপেক্ষে ভাবা ভুলে যান। আজকে যদি তারা ভারতে বোমা মারে, কালকে আপনাদের দেশে মারবে।

আমার ধারণা প্রণববাবু অভিযোগ করেছিলেন মূলত বর্ডার ব্যবহার করা নিয়ে। আর বর্ডার ব্যবহার করা তো স্বাভাবিক ব্যাপার। আমি ভারতে সন্ত্রাসী দলে যোগ দিলে অবশ্যই বাংলাদেশে পালাব, কারণ বাংলাদেশে আমাকে ধরাটা অনেক সময়সাপেক্ষ।


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

আলমগীর এর ছবি

আপাতত এখানেই রাখি, পাল্টাপাল্টি শেষ হবে না।
রেজোয়ানকে যে মারা হয়েছে সেটা আপনিও জানেন আমিও জানি। কে মেরেছে সেটাও পরিষ্কার। সিস্টেমের জন্যই সেটা প্রতিষ্ঠা করা যায় না।

দিগন্ত এর ছবি

দুঃখিত আমি কিন্তু জানি না রেজয়ানকে মারা হয়েছে, বিশ্বাসও করি না।


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

এটাই প্রমাণ যে, ভারতে সত্যিকার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি আমেরিকার থেকেও শক্তিশালী। আবার তাদের বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদী প্রতিষ্ঠান ও সংষ্কৃতিও কম শক্তিশালী নয়। তবে কোনো দেশই কেবল একটা গুণের সমাহার নয়। সেখানে বিভিন্ন মুখী ধারা পরস্পরের সঙ্গে ঐক্য ও বিরোধের মধ্যে লিপ্ত থাকে। ভারতের হিন্দু সমাজের মধ্যেকার ঐ গণতান্ত্রিক ধারা এবং আদিবাসী মুসলিম খ্রিস্টান দলিতদের গণতান্ত্রিক প্রতিরোধই তাই ভরসা।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

দিগন্ত এর ছবি

হ্যাঁ গণতন্ত্রই দেশের একমাত্র ভরসা। দেশ যাতে ওই ফ্যাসিস্ট হাতে না চলে যায় সেটা আমাদের দেখায় বিষয়। একবারে শিক্ষা হয়ে যাওয়া উচিত।

তবে ভারতে রাজনৈতিকভাবে কোয়ালিশনের মারফৎ ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ করা হয়। যেমন ধরুন, বিজেপি সরকার দেশের ক্ষমতায় থাকাকালে খুব কড়া টেররিসম বিরোধি (পড়ুন মুসলিম-বিরোধী) আইন বানাতে চেয়েছিল। কিন্তু বাধ সাধল তামিল এ-আই-এ-ডি-এম-কে (তামিল দল) আর অকালি দল (পঞ্জাবী দল)। আইন বানালে তো তাতে মুসলিমদের জন্য আলাদা করে থাকতে পারে না - তাহলে সেটা সংবিধান-বিরোধী হয়ে যাবে। আবার সবার জন্য আইন হলে তাতে তামিল এল-টি-টি-ইর সমর্থক বা পঞ্জাবে বব্বর-খালসা বলে অনেক নিরপরাধকে গ্রেফতার করা হবে। আবার এই দুই দল বিজেপির রাজনৈতিক সহযোগী। এরা ছেড়ে গেলে সরকার পড়ে যাবে। তাই, অগত্যা বিজেপি পিছু হটল ...

তাও দাঙ্গা কি আটকানো গেল?


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

আলমগীর এর ছবি

হ্যাঁ গণতন্ত্রই দেশের একমাত্র ভরসা।

আপনি না একটু আগে সমাজতন্ত্র চাইলেন চোখ টিপি

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

কী চাই তা তো বলিনি?

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

দিগন্ত এর ছবি

সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এই ব্যবধান ঘোচানো যায় অনেক তাড়াতাড়ি ... গণতন্ত্রে সময়সাপেক্ষ।


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

চলুক

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

আপনি হয়ত জানেন না, মালেগাঁও বিস্ফোরণের মূল অভিযুক্তরাও (হিন্দু উগ্রবাদী দল অভিনব ভারত এর অংশ) একইভাবে নির্বিচারে বন্দী করে রাখা ও অত্যাচারের অভিযোগ এনেছেন।

জানি, সেরকম নির্যাতনের তেমন নজির নেই। বরং এ নজির রয়েছে যে, আদভাণী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে দেখা করে সাধ্বি প্রজ্ঞাকে জেরায় চাপ না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন এবং মনমোহন সিং সঙ্গে সঙ্গে তা মঞ্জুর করেন।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

আপনি হয়ত জানেন না, মালেগাঁও বিস্ফোরণের মূল অভিযুক্তরাও (হিন্দু উগ্রবাদী দল অভিনব ভারত এর অংশ) একইভাবে নির্বিচারে বন্দী করে রাখা ও অত্যাচারের অভিযোগ এনেছেন।

জানি, সেরকম নির্যাতনের তেমন নজির নেই। বরং এ নজির রয়েছে যে, আদভাণী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে দেখা করে সাধ্বি প্রজ্ঞাকে জেরায় চাপ না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন এবং মনমোহন সিং সঙ্গে সঙ্গে তা মঞ্জুর করেন। বিজেপি বলেছে, তারা সাধ্বীকে ভোটে দাঁড় করাতে পারে।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

আনোয়ারুল কবির এর ছবি

ফারুক ওয়াসিফের পোস্টটি একটি প্রোপাগান্ডামূলক পোস্ট। সচলায়তনের মডারেটররা এধরণের পোস্ট এপ্রুভ করার আগে আরো একবার ভাবলে বেশ হয়। মুম্বাইয়ের ঘটনার দু দিন যেতে না যেতেই ইসলামি সন্ত্রাসবাদকে ডিফেন্ড করে হিন্দুদের অভিযুক্ত করে 'রাজনৈতিক ভাস্যকার' ফারুক ওয়াসিফ একটি পোস্ট দিয়ে দিলেন। ফারুক সাহেব কি সিএনএন দেখেন? ভারতীয় পুলিশ যে তিন সন্ত্রাসবাদিকে গ্রেফতার করেছে তাতে যে পাকিস্তানী মুসলিমা জড়িত তা কি অজানা? এমনকি সমকালেও তো এ নিয়ে লেখা হয়েছে গতকাল

ফারুক ওয়াসিফ বলেন-

এবার মুম্বাই সন্ত্রাসের দিকে তাকানো যাক। কে করেছে তা নিয়ে অকাট্য প্রমাণ কেউ দিতে পারেনি। তারপরও ভারতীয় মিডিয়ায় ডেক্কান মুজাহেদিনের নাম এসেছে।

মনে হচ্ছে ডেক্কান মুজাহেদিনের নাম দেওয়ায় ফারুক সাহেবের খুবই দুঃখ হয়েছে। কিন্তু দুই এ দুই এ চার মেলানো কি খুব কঠিন? আমরাও তো হুমায়ুন আজাদকে কে চাপাতি দিয়ে কুপিয়েছিলো তা জানি না। কিন্তু এটা যে উগ্রপন্থি ইসলামি মৌলবাদিদের কাজ, তা কি বোঝা এতই কঠিন ছিলো? পরে হরকতুল জিহাদ ত নিজ মুখেই তা স্বীকার করেছিলো।

মুম্বাইয়ের ঘটনা ভারত তথা উপমহাদেশের জনগণের জন্য যে হুমকি বয়ে আনছে, তার সার্বিক বিশ্লেষণ ছাড়া আজকে পথ খুঁজে পাওয়া কঠিন।

আপনার লেখা কোন সার্বিক বিশ্লেষনের আওতায় পড়ে না। এটা যাস্ট প্রোপাগান্ডামূলক পোস্ট। আপনি আসলে লিখেছেন মুসলিম টেরোরিস্টদের আড়াল করতে। দিগন্তবাবু এর মধ্যেই আপনাকে পয়েন্ট বাই পয়েন্ট উত্তর দিয়েছেন। আশা করি আপনার লেখার দুর্বলতাগুলো বুঝতে পেরেছেন।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

পোস্টের বক্তব্যের দায়ভার লেখকের। কর্তৃপক্ষের একাউন্ট থেকে এক্সপ্লিসিটলী না বলা পর্যন্ত কোন পোস্ট সচলায়তনকে রিপ্রেজেন্ট করে না।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

আলমগীর এর ছবি

এমনকি সমকালেও তো এ নিয়ে লেখা হয়েছে গতকাল।

সমকালের লেখাটা পড়েছেন তো? তারা কিন্তু ভারতীয় মিডিয়ার বরাতেই বলেছে সব সন্ত্রাসীর পরিচয় এখনও জানা যায়নি।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

সমকালে আরকেটা সংবাদও এসেছিল যে, মুম্বাইয়ের সন্ত্রাসীদের মধ্যে বাংলাদেশীও রয়েছে। এর আগেও তারা এরকম ছেপেছে যা পরে বিজেপির হাত বলে প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশেরজঙ্গিরা ভারতের জঙ্গিদের সঙ্গে যুক্ত থাকাই স্বাভাবিক। আবার ভারত থেকেও এখানে নাশকতা হয়ে থাকতে পারে বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এবারে সমকাল কেবল সিএনএনের একটা উল্লেখ থেকেই এরকম করে বাংলাদেশের সংস্লিষ্টতা নিয়ে রিপোর্ট কেন করলো? উদ্দেশ্যটা কী?

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

আলমগীর এর ছবি

অনেক দিন পর ভাল একটা লেখা পড়লাম।
পঞ্চতারা রইল ফারুক ওয়াসিফ।

দিগন্ত এর ছবি

অন্যদিকে লস্কর-ই-তাইয়েবা কখনোই তাদের কৃতকর্ম স্বীকার করতে লজ্জিত হয় না। তারাও শক্তভাবে মুম্বাই হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার দায় অস্বীকার করেছে।'' (গার্ডিয়ান, ২৯-১১-০৮)

এটা অত্যন্ত অবাক হবার বিষয় যে লস্করের বক্তব্যেরো কোনো বিশ্বাসযগ্যতা আছে। আমি আমার রাষ্ট্র-সরকারকে বিশ্বাস করি না বটে, কিন্ত তা বলে লস্করের বক্তব্য!! আল-কায়দা সহ লস্কর অনেক দুর্বল বটেই, তাই আমেরিকার ওপর না আঘাত হেনে বিদেশে বসবাসরত বা ভ্রমণরত আমেরিকানদের ওপর আঘাত হানছে।

এবার মুম্বই ঘটনা নিয়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দিই।

কেন তারা বিজেপিকে দায়মুক্ত করতে চাইবে, যখন সামনেই নির্বাচন এবং বিজেপির পরাজয় প্রায় নিশ্চিত?

- কেন এবং কি ভাবে এতে বিজেপি দায়মুক্ত হচ্ছে সেটা বোঝা গেলনা। বিজেপির পরাজয় নিশ্চিত - এটা কোন কোন সার্ভে বলেছে?

করবেই যদি, তবে কেন ব্রিটিশ-আমেরিকান-ইসরায়েলিদের জিম্মি করা হলো কিন্তু ভারতীয়দের আটকানো হলো না?

- উল্টোটাও ভাবুন। মৃতদের অধিকাংশই ভারতীয়।

অল্প ক’জন জঙ্গি কীভাবে এত বড় হোটেলকে টানা দুই দিন দুর্ভেদ্য করে রাখতে পারলো?

- কি মনে হয়? বাংলাদেশে কোনো হোটেলে এরকম আক্রমণ করে বেশ কিছু বিদেশীকে জিম্মি করলে ক'দিন লাগবে? কাজটা খুব একটা সোজা নয়।

ভারত সরকার কি কিছু লুকাতে চাইছে?

অবশ্যই, নিজের ইন্টেলিজেন্স ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যর্থতা।

সরকারও স্বীকার করছে যে, এতবড় কাণ্ড ঘটাতে শতাধিক কর্মীবাহিনী দরকার। যদি তারা বহিরাগতই হবে, তাহলে তাদের নড়াচড়া, প্রস্তুতি, হোটেলের ভেতর অতিথির ছদ্মবেশে অস্ত্র মজুদ করা কিছুই কেন ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর নজরে পড়লো না? তারা কি ঘেসো বাঘ?

তাজ হোটেলে অভ্যাগতদের কোনো সার্চ করা হয় না। তাজে আমি থাকাকালে আমিও ব্যাপারটা সমালোচনা করেছি। ভেবে দেখুন, পাশের ওবেরয়তেও জঙ্গীরা হামলা চালিয়েছে কিন্তু সেখানে আগে থেকে ঘাঁটি গাড়েনি। আর সবাই বহিরাগত ছিল এমন কোনো মানে নেই, অনেক স্থানীয়ের সমর্থন থাকতেই পারে।


জিম্মি করা হয়েছে এই সরল সত্যটা জানাতে কেন সরকার ২৩ ঘন্টা দেরি করলো?

- এটা তো প্রথম দিন থেকেই সবাই জানে। সরকার কবে কি জানিয়েছে সেটা অবশ্য আমি জানি না, তবে মিডিয়া প্রথমদিন থেকেই এটাই বলে এসেছে যে ব্রিটিশ ও আমেরিকান পাসপোর্টধারীদের খুঁজে জিম্মি বানানো হয়েছে। ইজরায়েলী ধর্মগুরুকেও সেই একই অবস্থায় জিম্মি করা হয়েছে।

আর কে কবে শুনেছে, আত্মঘাতী বোমারুরা জিম্মি রাখে?
- কিভাবে জানা যাচ্ছে এরা আত্মঘাতী বোমারু? একবারও তো আত্মঘাতী বোমা আঘাত করে নি। সবাই লড়াই করেই মারা গেছে।


এবং জিম্মিদের কোনো তি না করেই নিজেরা টপাটপ মারা যায়? (যে বিদেশিরা মারা পড়েছেন তারা মরেছেন প্রথম আঘাতে, জিম্মি অবস্থায় নয়)

-জিম্মিদের অধিকাংশই মারা গেছেন এবং এদের মধ্যে ইজরায়েলী ধর্মগুরুরাও আছেন। আমি আপডেটও দিয়েছি এ নিয়ে লাইভ ব্লগিং-এ।

আপাতদৃষ্টে জঙ্গিরা ব্যর্থ হয়েছে। একজন বাদে সকলে মারা পড়েছে। (এখনো তাদের নাম-পরিচয় বলা হচ্ছে না কেন?) এ থেকে মনে হয় যে, বিশ্বের নজর কাড়া এবং আতঙ্ক সৃষ্টিই তাদের মূল উদ্দেশ্য।

- সবারই স্বঘোষিত নাম পরিচয় দেওয়া হয়েছে কালকেই। জঙ্গীদের আক্রমণের মুল উদ্দেশ্য অবশ্যই আতঙ্কসৃষ্টি।


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

দিগন্ত এর ছবি

তবে বলে রাখা ভাল, যে জঙ্গী-গোষ্ঠীই করে থাকুক না কেন, তাদের জন্য ঘৃণা রইল। আর প্রাথমিক সন্দেহ কিছু মুসলিম-দের বিরুদ্ধে যাবার মানে এই নয় পৃথিবীশুদ্ধ মুসলিম দায়ী। অভিনব ভারত বলে যে হিন্দু জঙ্গীগোষ্ঠী ধরা পড়েছে তারা আমেরিকার সৃষ্টিও নয় বা বাংলাদেশের সৃষ্টিও নয়। এটা আমার মতই আরও কিছু ভারতীয়ের সৃষ্টি - তার জন্য আমি বিন্দুমাত্র লজ্জিত নই তাদের পক্ষে কথা বলারও আমার কোন ইচ্ছা নেই, কারণ যারা করেছে তারা আমার থেকে আলাদা মানুষ - তাদের চিন্তাভাবনা আমার থেকে আলাদা। জঙ্গীবাদ এখন সারা পৃথিবীর সমস্যা।

কিছু পাকিস্তানী ঘটনায় জড়িত থাকলেই পাকিস্তানের দোষ এমন ভাবার কোনো কারণ দেখি না। পাকিস্তান রাষ্ট্র হিসাবে দেশের লোকের মত নিয়ে চলেছে খুব অল্পদিন। তাছাড়া সেই একই জঙ্গীগোষ্ঠীরাই পাকিস্তানেও কম হামলা চালাচ্ছে না। এমন ভাবার কোনো কারণ নেই যে তারা সুযোগ পেলে ভারতে আক্রমণ চালাবে না। বা, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে ভারতে ঢুকবে না। একই ভাবে অভিনব ভারত প্রশিক্ষিত জঙ্গীগোষ্ঠীও বাংলাদেশে হামলা চালাতেই পারে।

ঘটনার সন্দেহ পাকিস্তানী জঙ্গীগোষ্ঠীদের দিকে যাবার মূল কারণ হল জঙ্গীদের কাজকারবারের সাথে বাকি পাকিস্তানী জঙ্গীগোষ্ঠীদের কাজের মিল। এখনও এটুকুই, পরে তদন্তে উলটো জানা গেলে সেটাই সত্যি ...


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

প্রফাইল এর ছবি

১. ফারুকের হাইপথিসিস আর সন্দেহগুলো একেবারে ফেলনা নয়। এরসঙ্গে পলিটিক্যাল বা ক্ষমতা-কাঠামোর যোগসূত্র আজ বা কাল নিশ্চয় জানা যাবে।

২. তবে এরকম সঙ্কটকালে প্রধানমন্ত্রীর বালকসুলভ আষ্ফালনের সাথে বুশ-প্রশাসনের আষ্ফালনের ধরনে আশ্চর্য মিল দেখা যায়। একে "ইউরেনিয়াম ইফেক্ট" বলা যায়।

৩. তাত্-ক্ষণিক বা দীর্ঘমেয়াদি তদন্তযন্ত্রের ওপর আস্থাশীল হবার কোন বৈজ্ঞানিক কারণ নেই যদি না তা পুরোপুরি ইম্পার্শাল হয়।

৪. ভারত পাব্লিকের জন্য দিন্দিন একটি ভীতিকর ভূখণ্ড ও রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে।

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

প্রসঙ্গক্রমে বলি, আমেরিকার ইতিহাসে সাদা-কালো বিভেদের ইতিহাস আর ভারতের চলমান ইতিহাসে হিন্দু-মুসলিম বিভেদের ইতিহাসে তেমন একটা পার্থক্য নেই ... পার্থক্যটা এখানেই যে আমেরিকায় সত্যটা মেনে নিয়ে তার সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে, ভারতে সত্যটাকে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে ...
এবং এ্যালার্মিং ব্যাপারটা হলো আমাদের বাংলাদেশেও মুসলিম-হিন্দু সম্পর্কের ক্ষেত্রে একই সত্য কার্যকর
মূলতঃ পুরো উপমহাদেশ জুড়েই সংখ্যালঘুরা এই যাঁতাকলে পিষ্ট

এখানে ধর্ম না থেকে অন্য উপাদান থাকলেও একই ঘটনা ঘটত -- সেটাও আমার মনে হয় ... ধর্মীয় পরিচয়টা এত প্রকট হয়ে ওঠে কারণ একই ভাষাভাষী অঞ্চলে দুটো ভিন্ন গ্রুপের পার্থক্যটা ধরা পরে মূলতঃ ধর্মীয় আচরণে ... যতদিন "আমি পাব, সে দেবে" -- এই মনোভাবের পরিবর্তন না হবে, কোন লাভ নেই ... সন্ত্রাস বাড়বেই ...
তথ্যপ্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে সমাজের এলিটরা নিজেদের পায়ে নিজেরাই যে কুড়ালটা মেরেছেন সেটা হলো, সমাজে অবহেলিতরা নিজেরা যে শোষিত সেটা এখন অনেক দ্রুত এবং অনেক বেশী বুঝছে ... বাংলাদেশের গরীবশ্রেনীর জনগনের দুদশক আগের আর বর্তমানের আচরণগত পার্থক্যেও এই সত্যটা কিছুটা টের পাওয়া যায়
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

দিগন্ত এর ছবি

পার্থক্যটা এখানেই যে আমেরিকায় সত্যটা মেনে নিয়ে তার সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে, ভারতে সত্যটাকে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে ...

একদম সত্য, নাহলে সাচার কমিশন বসে স্বাধীনতার ৬০ বছরে পরে?

আমেরিকার ইতিহাসে সাদা-কালো বিভেদের ইতিহাস আর ভারতের চলমান ইতিহাসে হিন্দু-মুসলিম বিভেদের ইতিহাসে তেমন একটা পার্থক্য নেই

আমার ধারণা ডোমেইনটা আরো কিছুটা বড়। ভারতে আসল পার্থক্যটা উচ্চবর্ণ-নিম্নবর্ণের - যা কয়েক হাজার বছর ধরে তৈরী। যারা ভারতীয় মুসলিম, তারা অধিকাংশই আগে নিম্নবর্ণীয় ছিলেন। সুতরাং সমস্যাটা কয়েক হাজার বছরের ... সহজে সমাধানের নয়। একটা উদাহরণ দিই - ভারতের প্রথম ১০০ জন ধনীর মধ্যে কোনো নিম্নবর্ণীয় নেই, মুসলিম আছে। যারা মুসলিম তারা হয় ইরান থেকে আগত বংশোদ্ভূত নাহয় উচ্চবর্ণ থেকে মুসলিম হয়েছেন।

এই বিভেদ ঘোচাতে সমাজতান্ত্রিক ধাঁচের রাষ্ট্রব্যবস্থা ছাড়া কোনো উপায় নেই।


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

আমার ধারণা ডোমেইনটা আরো কিছুটা বড়। ভারতে আসল পার্থক্যটা উচ্চবর্ণ-নিম্নবর্ণের - যা কয়েক হাজার বছর ধরে তৈরী। যারা ভারতীয় মুসলিম, তারা অধিকাংশই আগে নিম্নবর্ণীয় ছিলেন। সুতরাং সমস্যাটা কয়েক হাজার বছরের ... সহজে সমাধানের নয়। একটা উদাহরণ দিই - ভারতের প্রথম ১০০ জন ধনীর মধ্যে কোনো নিম্নবর্ণীয় নেই, মুসলিম আছে। যারা মুসলিম তারা হয় ইরান থেকে আগত বংশোদ্ভূত নাহয় উচ্চবর্ণ থেকে মুসলিম হয়েছেন।

ধন্যবাদ, আরো পরিস্কারভাবে তুলে ধরার জন্য ... চলুক
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

ধ্রুব হাসান এর ছবি

চীনাপন্থীরা কি এই ঢঙ্গেই ৭১ এর ঘটনা প্রবাহকে আমলে মুক্তিযুদ্ধ থেকে নিজেদের বিরত রেখেছিলো? ......সত্যিই বুদ্ধিমানেরা বড় আজব! খোলা চোখেই বাংলাদেশের আজকের অবস্থা বিবেচনায় আনলে বোধহয় আমরা বুঝতে পারি দেশ কোন উঠের পিঠে চেপে কোন মরুর দিকে ধাবমান! আর বেশী কিছু বলার নেই। প্রায় দুশো মানুষের রক্তের উপর দাড়িঁয়ে কনস্পেরেসির গন্ধ খোজাঁটাও মুশকিল!

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

ধন্যবাদ সকলকে। বিশেষ করে ধন্যবাদ দিগন্ত. রাগিব ও আলমগীরকে। আমার তাৎক্ষণিক লেখার অসম্পূর্ণতা নিয়ে দায়িত্বশীল আলোচনা তুলে বিষয়টাকে গভীরে নিয়েছেন তাঁরা। এটা লিখেছি কাল রাত বারটা পর্যন্ত। তারপর বাড়ি গিয়েছি। এখন আবার অফিসে এসে সব দেখলাম। অফিসের কাজ সেরে আবার যোগ দিচ্ছি।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

আহমেদ  এর ছবি

"ফারুক ওয়াসিফের পোস্টটি একটি প্রোপাগান্ডামূলক পোস্ট।"
এইটারেই বলে সত্যরে এড়িয়ে চলা।
সমস্যা কেনো হইতেছে কোথা থেকে হইতেছে সেইটা না খুইজা আন্দাজেই একটা রঙ লাগায়া পাবলিকে যা খায় তেমন একটা ব্যাখ্যা দাড় করানোর মন মানসিকতা গড়ে উঠছে ৯/১১ এর পর থেকেই।
এইটা শুধু অমুসলিম বা মুসলিম নয়
ধনি বা গরিব নয় সবার মধ্যেই পরিলক্ষিত হচ্ছে ।
আমার মতে মুম্বাই ঘটনা থেইকা শিক্ষা নিয়া বাংলাদেশের আগে ভাগেই সাবধান হওয়া দরকার।
কারন পাশের বাড়িতে আগুন লাগলে নিজের বাড়িতেও তার আচ আসে।
বাংলাদেশে ইদানিং হুদা কারনে যে মুর্তী ভাংগার আওয়াজ উঠানো হইছে এইটাও কিন্তু একটা রোগের লক্ষন।
এখন বাংলাদেশ সরকার যদি এইটারে মেজরটির ধর্ম ইস্যু বইলা চুপ চুপ করা থাকে অথবা এক কোপে গলা কাটতে যায় তাইলে দুইটাতেই গেঞ্জাম লাগবো।
তার চাইতে এখন থেইকাই যদি সমস্যার শুরু কই থেইকা সেইটা চুপ কইরা বাইর কইরা যায়গা মতন একটা হোমিওপ্যাথিক এর ড্রপ দেয় তাইলে দেশের মানুষ বড় সড় একটা ক্যাচাল থেইকা বাচত আর আন্তর্জাতিক ভাবে বাইরের দেশের কাছেও একটু পার্ট লইতে পারতো।
কিন্তু বিলাই এর গলায় টুং টুঙ্গি বানবো কেডা????

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

আমার মতে মুম্বাই ঘটনা থেইকা শিক্ষা নিয়া বাংলাদেশের আগে ভাগেই সাবধান হওয়া দরকার। কারন পাশের বাড়িতে আগুন লাগলে নিজের বাড়িতেও তার আচ আসে।

আমার এত কথার মর্মে এই চেষ্টাটাই ছিল। কেউ কেউ আমার মুম্বাইয়ে নিহতদের প্রতি সমবেদনা নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। সেটা সঙ্গত। সত্যি বলতে কি আরো বড় বিপদের ভয়ে সেই দিকে আমার মন যেতেই পারেনি। ওই অবকাশও আসলে নাই। এর জন্য অবশ্যই আমি দোষী। আগুনে বসিয়া তাই হাসি পুষ্পের হাসি। আসলে বেদনার্ত হওয়ার অভ্যাসটা আমার বেলায় ভিন্নরকম। তার জন্য রেয়াত চাইছি না।

মুম্বাই প্রশ্নে আমার মানবিকতা এটাই যে, যারা তাদের কর্মসূচি বাস্তবায়নে এই লোকগুলোকে ব্যবহার করলো, যারা তাদের দিয়ে আরো লোক মারলো এবং এই ঘটনাকে ব্যবহার করে একদিকে বৃহত্তর একটি ধর্মীয় জনগোষ্ঠীকে ভিক্টিম এবং অপর ধর্মীয় জনগোষ্ঠীকে বিভ্রান্ত করে উপমহাদেশে সাম্রাজ্যবাদী আরেকটি যুদ্ধ চাপিয়ে দিতে যাচ্ছে, তাদের মুখোশ উন্মোচন করা। একে আর ষাট দশকীয় প্রগতি বনাম প্রতিক্রিয়ার লড়াই হিসেবে দেখা যাবে না। দেখতে হবে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় মুক্তির লড়াই হিসেবে। সেই লড়াইয়ে আজকের রাজাকার তারাই, যারা ওয়ার অন টেররের ছক সাজাচ্ছে। সেই কাজে আওয়ামী-বিএনপি আর জামাতেরা এক। সেই চক্রান্তে আমাদের জঙ্গিরাও যে ব্যবহৃত হচ্ছে, তা বুঝতে যত বিলম্ব হবে ততই আমাদের মাথাকে আমরা শত্রুর কাছে বন্ধক দিয়ে রাখব।
আমি আদর্শবাদ দিয়ে বিষয়গুলোকে বিচার করছি না। মানবিকতাও তো কোনো না কোনো আদর্শের রঙে রঞ্জিত এবং কিছুটা বিমূর্ত। আমি যদি আমার মানুষ, আমার ভাষা, আমার ইতিহাস ও ভূগোলকেই আদর্শের ভিত্তি ধরি এবং আমার মানবিকতাকে তার সাপেক্ষেই নির্মাণ করি, তাহলে মতাদর্শের ফ্যাকড়া সহজে পার হওয়া যায়।

তার মানে বলছি না যে, মতাদর্শের দরকার নাই। মতাদর্শ আমার ইমান, ইমান না থাকলে লড়াই হবে কী করে। কিন্তু এই ইমানকে একটা সেক্যুলার ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে হবে অর্থাৎ আপনার ঐ মানবিক ভিত্তির ওপর। আমি সেকুলারিটির পক্ষে জান দেব, কিন্তু সাম্রাজ্যের সহযোগী যে সেকুলারিজম আজ ব্যর্থ বলে প্রমাণিত, তার পুনর্ব্যবহার ঘটাব না। বরং সেকুলারিটির নতুন দেশীয় ভাষাভঙ্গি আনতে হবে। আজ দেশে দেড়-দু কোটি লোক সরাসরি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক ইসলামী স্ট্যাবলিশমেন্টের সঙ্গে যুক্ত। এদের মধ্যে ফারাক আছে। আবার এর বাইরেও আরো বিপুল মানুষ পাশ্চাত্যের সমর ও সংস্কৃতির দ্বারা আক্রান্ত বোধ করে ইসলামকেই আইডেন্টিটি করে এই উথালপাথাল বাস্তবতায় থই কোঁজার চেষ্টা করছে, এই মানুষের সঙ্গে আমাদের মুষ্ঠিমেয় প্রগতিবাদীদের কোনো লড়াই হবে না আসলে। আমরা তাদের ফূঁয়ে উড়ে যাব। এর জন্য তাহলে কি মার্কিন-ভারতের বাহিনীকে ডেকে আনব, তাদের থানা বসাব আমার দেশে? আর তারা কি আমাদের আসলেই মুক্ত করবে? ইরাক ও আফগানিস্তানকে তারা শত বছর পিছিয়ে দিয়েছে। অতএব ঠাণ্ডা মাথায় পথ বের করতে হবে। আমাদের চোখে ধুলা দেয়ার আমাদের পরস্পরের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়ার অনেক আয়োজনই পাকা। আমরা বাস করছি একটা ম্যাট্রিক্সিয় বাস্তবতায়। এই বাস্তব ছদ্ম বাস্তব। এর পর্দা ছিঁড়ে বেরিয়ে আসল বাস্তবকে মোকাবেলা করতে হবে।

মুম্বাই প্রশ্নে আমার মানবিকতা এটাই যে, যারা তাদের কর্মসূচি বাস্তবায়নে এই লোকগুলোকে ব্যবহার করলো, যারা তাদের দিয়ে আরো লোক মারলো এবং এই ঘটনাকে ব্যবহার করে একদিকে বৃহত্তর একটি ধর্মীয় জনগোষ্ঠীকে ভিক্টিম করে অপর ধর্মীয় জনগোষ্ঠীকে বিভ্রান্ত করে উপমহাদেশে সাম্রাজ্যবাদী আরেকটি যুদ্ধ চাপিয়ে দিতে যাচ্ছে, তাদের মুখোশ উন্মোচন করা। একে আর ষাট দশকীয় প্রগতি বনাম প্রতিক্রিয়ার লড়াই হিসেবে দেখা যাবে না। দেখতে হবে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় মুক্তির লড়াই হিসেবে। সেই লড়াইয়ে আজকের রাজাকার তারাই, যারা ওয়ার অন টেররের ছক সাজাচ্ছে। সেই কাজে আওয়ামী-বিএনপি আর জামাতেরা এক। সেই চক্রান্তে আমাদের জঙ্গিরাও যে ব্যবহৃত হচ্ছে, তা বুঝতে যত বিলম্ব হবে ততই আমাদের মাথাকে আমরা শত্রুর কাছে বন্ধক দিয়ে রাখব।
কিন্তু তার আগে জানা চাই, কে আমার মানুষ, কার প্রতি আমার দায়, তারা কী চায়, তাদের স্বার্থ কী। এটা বুঝে সেই মানুষকে নিয়ে আমি কোথায় যাব এবং তারা আমাকে কোন আশ্রয় দেবে তা নির্ধারণ করা আর কঠিন হয় না। বাকিটা আমল করার কাজ, সবচেয়ে কষ্টকর যে কাজ। সেই কাজে আমাকে কিন্তু ঝুঁকি নিতে হতে পারে, এতদিনের মরচে পড়া বিশ্বাসকে, চিন্তাকে জাঁকুনি দিতে হবে, ঘটাতে হবে আমাদের আত্মার বিউপনিবেশায়ন।
ভাল থাকবেন।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

নির্বাক এর ছবি

ফারুক, আপনার বিশ্লেষণ থেকে অনেক কিছু জানতে পারলাম। ধন্যবাদ আপনাকে।

_________________________________________
তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ
আমি আজ চোর বটে!

মাসুদা ভাট্টি এর ছবি

প্রিয় ফারুক,

আজকের দিনে আপনার বলবার কথা কি এই-ই? ভেবে আশ্চর্য হচ্ছি, আপনার এই বক্তব্য কার গোলায় ফসল তুলতে সহায়তা যোগাবে!!! আজকে এই লেখাটি ফরহাদ মজহার, এবনে সামাদ কিংবা আল-মাহমুদ গোত্রের কেউ লিখলে আপত্তি ছিল না, কিন্তু আপনাকে যে ওদের মতো ভাবতে পারছি না।
আপনার লেখায় কোথাওই এই ভয়ঙ্কর হামলার বিরুদ্ধে কিছু বলা নেই, এমনকি এই ভয়ঙ্কর সময়ে কোনও মানবদরদী ভাষ্যও চোখে পড়লো না। এটা দুঃখজনকই শুধু নয়, এটা আপনার অবস্থানকেও মানুষের সামনে অস্পষ্ট করে তুললো। আপনি এই সময়ে জঙ্গিবাদের স্বরূপ সন্ধানে নেমেছেন যখন আপনার-আমার পায়ের তলায় মাটি নেই। যখন আপনার দেশে লালন-বলাকার গলায় ফাঁস পড়েছে।
আপনি ভারত-রাষ্ট্রকে দুয়ো দিয়েছেন যেখানে আজ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া প্রতিটি দাঙ্গার বিচারবিভাগীয় তদন্ত হয়েছে এবং মোটামুটি বলা যেতে পারে যে, দোষী সাব্যস্তও করা গেছে। সংশ্লিষ্ট সরকার এবং মদদদাতাদের স্বরূপও উন্মোচিত হয়েছে জনসম্মুখে। তুলনা টানতে না চাইলেও এসে যাচ্ছে, ভেবে দেখুনতো একবার দু'হাজার এক সালের সংখ্যালঘু ট্রাজেডির আজ পর্যন্ত সুষ্ঠু তদন্তটুকু হয়েছে নাকি বাংলাদেশে? দেখুন আগ্রাসনই আগ্রাসনের জন্ম দেয়, দ্বি-জাতিতত্ত্বের সেই ভয়ংকর উত্থান আজকের হিন্দু মৌলবাদের গোড়াপত্তনী ঘটালেও ঘটাতে পারে কিন্তু ইসলামী মৌলবাদের শুরু কিন্তু সেই আদ্দিকালে, যখন নতুন নতুন দেশ দখল করে সেই দেশের মানুষকে জোরপূর্বক, লোভ দেখিয়ে কিংবা আরও নানা পদ্ধতিতে ধর্মান্তরকরণ সম্পন্ন হয়েছে। নাদির শাহ্‌র দিল্লি লুট, হিন্দুদের কচু কাটা কিংবা বাংলার পুরোনো মসজিদ (আদিনা, সোনা মসজিদ) সমূহের দেয়াল উপমহাদেশ কিংবা বাংলায় এই মৌলবাদী উত্থানের সাক্ষী, যেখানে পাথরের হিন্দু দেবতাকে শক্তির জোরে পরিণত করা হয়েছে মসজিদের দেয়ালে।
আপনার পুরো পোস্টটি আপনি আরও একবার পাঠ করে দেখুন, আপনি কাদেরকে দোষী করতে গিয়ে কাদের সাফাই গাইছেন। ভিটেমাটি ছাড়ার, ফসল কেটে নিয়ে যাওয়ার, স্বামীর সামনে স্ত্রীকে, বাবার সামনে মেয়েকে ধর্ষিতা দেখার অভিজ্ঞতা যাদের আছে তাদের কাতারে গিয়ে দাঁড়ান, তখন হিন্দু-ভারতের মাহাত্ম আপনার কাছেও স্পষ্ট হবে। ভারতীয় ফ্যাসিবাদের জুজু দেখছেন, কিন্তু বিশ্বব্যাপী জিহাদি-জোশকে উপেক্ষা করছেন; সংখ্যাগুরু-সংখ্যালঘুর রাজনৈতিক, সাংবিধানিক এবং অংশগ্রহণের সাম্য সম্পর্কে ভেবে দেখুন একবার, এবং বিশ্ব খুঁজে ভারতের মতো আরো একটি রাষ্ট্রকে বের করুন, তারপর ফ্যাসিবাদ নিয়ে আলোচনায় নামুন, তবে হ্যা নব্য ফ্যাসিবাদী উত্থান এখন বিশ্ব-প্রপঞ্চ, ভারতের একার নয়।

যাহোক, আপনি আপনার কথা লিখেছেন, কিন্তু সুরটা আমার কাছে মনে হয়েছে (আমার ভুলও হতে পারে) একটি বিশেষ গোষ্ঠীর বেহালার, বাংলাদেশে যারা আওয়ামী লীগকে ঠেকাতে গিয়ে জামায়াতের কাঁধে সওয়ার হতেও দ্বিধা করে না। তাই বলে আপনি সেটা করেছেন এটা আমি স্বপ্নেও ভাবি না, কল্পনাও করি না।

দিনমজুর এর ছবি

শেষ পর্যন্ত বিশেষ গোষ্ঠীর বেহালার সুরই পেলেন!!!
একটু ভেবে দেখুন তো- এই সুর পাওয়ার মধ্যে আপনার নিজের মধ্যে আরেকটি গোষ্ঠীর সুর দায়ী কি-না?

এ কারণেই, ফারুক ওয়াসিফের এই লেখাটি গুরুত্বপূর্ণ। দুনিয়াজুড়ে সকলকে দুটো শিবিরে বিভক্ত করো- হয় সন্ত্রাসবাদের পক্ষে নাহয় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে।
আর আমাদের দেশেও দুটো পক্ষ ইসলাম আর ইসলাম বিরোধী!!!!

হাস্যকর!!!!!

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

প্রিয় মাসুদা ভাট্টি,
আজকের দিনে আমার এটাই বলবার কথা। সেই কথাটাই দুর্বলভাবে বলবার চেষ্টা করছি। দুনিয়ায় যে বিভাজন-অবিশ্বাস আর আত্ম-বিভ্রমের যুগ নেমেছে, তা থেকে আমরা কেউই মুক্ত নই। সেটাও আমার বলবার কথা নালিশের আকারে, অভিযোগের আকারে নয়!
আর এটাও বলে রাখি, ইসলামী জঙ্গিবাদী উত্থান ইসলামী রাজনীতির একমাত্র প্রকরণ নয়. ঠিক যেমন ভারতীয়-মার্কিনীয় বা রুশ আধিপত্যের একমাত্র গড়ন নয় প্রিডেটরিয়াল ইন্টারভেনশন। একটি ক্রিয়া, অন্যটি প্রতিক্রিয়া। এটা বললে আমাকে সাম্প্রদায়িকও বলা হতে পারে। তারপরও আমি ইসলামের নামে যা চলছে আর তার প্রতিপক্ষতা যারা করছে উভয়কে আমি এক নিক্তিতে মানতে রাজি নই।
মাসুদা, এই আমি শিবিরের সঙ্গে লড়েছি, এই মুহূর্তে মোল্লাদের ভাস্কর্য ভাঙ্গার বিরুদ্ধের আন্দোলনে শসরীরে সামিল আছি, এও জানি যে, বাংলাদেশের মোল্রারা আমাদের নামনিশানা মুছে দিতে যাচ্ছে। চারুকলায় আমাদের প্রতিবাদ সভা এই মাত্র শেষও হল। এবং একইসঙ্গে আমি এখানে যা বলছি, সেটাই বলে যাচ্ছি। আমার কাছে এগুলো একই দৃষ্টিভঙ্গিজাত।
ধন্যবাদ, বাকি কথা পরে হবে আশা করি।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

লেখাটি ফরহাদ মজহার, এবনে সামাদ কিংবা আল-মাহমুদ গোত্রের কেউ লিখলে আপত্তি ছিল না, কিন্তু আপনাকে যে ওদের মতো ভাবতে পারছি না।

১. আপনি ফরহাদের অবস্থান আর আমার অবস্তানকে এক করে দেখায় আর কী বলা যায়, সীতার কপাল। পরীক্ষা দিয়ে যেতেই হবে!! তবে লেখাটা শাহরিয়ার কবির, মুনতাসির মামুন কিংবা ফরিদ জাকারিয়া বা আয়ান হিরসি আলির মতো হলে খুশি হতেন? বাই দা বাই সামহোয়ারে ফরহাদ মজহার-এর ধারার সঙ্গে বিতর্ক করে জান যাচ্ছে। আপনি এলে উপকৃত হতাম।

২. বললেনই যখন তখন বলেন, কাশ্মীরের গণহত্যা ও দখলদারির কী হয়েছে? কী হয়েছে বাবরি মসজিদ ধ্বংস এবং গুজরাত গণহত্যার। এনকাউন্টার নামে মুসলিম, নকশাল নিধনের। নানাবতীয় কমিশন মোদীদের নির্দোষ করেছে, যদিও পাথুরে প্রমাণ বিদ্যমান ছিল। কী করেছে কংগ্রেস বিজেপির ধর্মীয় ফ্যাসিবাদী আচরণের বিরুদ্ধে। কত বছর ধরে তারা খ্রীস্টান, দলিত, মুসলিমদের পুড়িয়ে আসছে বলেন তো?

৩. আপনি একাত্তরের তুলনা টেনে বোঝাতে চেয়েছেন, পাকিস্তানের তুলনায় ভারত ভাল। সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটেনের তুলনায় জার্মানী অনেক ভাল ছিল, কিন্তু সেখানেই ফ্যাসিবাদ এসেছিল। পাকিস্তান এক অরাষ্ট্র, তার শাসকশ্রেণী দুবৃত্ত, গণত্যাকারী এবং সাম্রাজ্যের দোসর। তারা জঘন্য বলে ভারত রাষ্ট্রের শাসকদের খারাপ বলতে পারব না কোন দুঃখে। আবার এও সত্য যে, উপমহাদেশে ভারতের গণতান্ত্রিক অর্জন ও সেকুলার বিকাশের কাছে তো অনেক পশ্চিমা দেশও যেতে পারেনি। ভাল যেখানে বেশি বিকশিত হয়, প্রতিক্রিয়ায় মন্দ সেখানে বেশি সংগঠিত হয় নানান ফিকিরের আশ্রয়ে।

৪. দুই হাজার এক সালে বাংলাদেশে হিন্দুদের নিধন ও অত্যাচারের কথা বললেন। কিন্তু একাত্তরে যে লক্ষ লক্ষ হিন্দু নিধন হয়েছিল, যারা চিরকালের জন্য বাংলাদেশের জনসংখ্যাতাত্ত্বিক গঠনকে পাল্টে দিয়ে গেছে, এখানকার শাসকদের সকল অংশের সাম্প্রদায়িক আচরণের কথাও বলা দরকার। তারপরও আমি মনে করি, বাংলাদেশে হিন্দুদের বিরুদ্ধে কোনো জঙ্গিবাদ দাঁড়াবে না। কারণটা সোজা। কারণ, বাংলাদেশের হিন্দুরা আর কারো জন্য হুমকি নয়।
কবে এটাও বলি, ২০০১ এই বাংলাদেশের অনেক রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যম, মানববাধিকার কর্মীরা ওই ঘটনার প্রতিবাদের সোচ্চার হয়ে পথে নেমেছিলেন। ওই ঘটনা কিন্তু দাঙ্গা বা গণহত্যা নয়, ওটা ছিল সংঘবদ্ধ চক্রের বেছে বেছে হত্যা (একাত্তরের কায়দায়) এবং ভীতকরণ কর্মসূচি। ওই কাজ ইনশাল্লাহ আমরা পাবর্ত চট্টগ্রামেও চালিয়ে আসছি।

৫.

ইসলামী মৌলবাদের শুরু কিন্তু সেই আদ্দিকালে, যখন নতুন নতুন দেশ দখল করে সেই দেশের মানুষকে জোরপূর্বক, লোভ দেখিয়ে কিংবা আরও নানা পদ্ধতিতে ধর্মান্তরকরণ সম্পন্ন হয়েছে। নাদির শাহ্‌র দিল্লি লুট, হিন্দুদের কচু কাটা কিংবা বাংলার পুরোনো মসজিদ (আদিনা, সোনা মসজিদ) সমূহের দেয়াল উপমহাদেশ কিংবা বাংলায় এই মৌলবাদী উত্থানের সাক্ষী, যেখানে পাথরের হিন্দু দেবতাকে শক্তির জোরে পরিণত করা হয়েছে মসজিদের দেয়ালে।

এটা এই ভূখণ্ডে ইসলাম বিস্তারের ইতিহাস সম্পর্কে আপনার জানার সঙ্গে আমার জানার সমস্যা। এইভাবে ইতিহাস দেখায় বিজেপির ইতিহাসবিদেরা। নাদির শাহরা কোনো ধর্মের লোক না। তারা আলেকজান্ডারের মতোই পররাজ্য লুট করতে এসেছিল। উপমহাদেশে মুসলিম বিস্তারের ইতিহাস নিয়ে রিচার্ড ই ইটনের দুটি ভাল বই আছে ‌রাইজ অব ইসলাম ইন বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ার কিংবা আবু মোহাম্মেদ হাবিবুল্লাহ-র মুসলিম রুল ইন ইন্ডিয়া এবং রোমিলা থাপারদের কাজও দেখতে পারেন। ইংরেজরা এসে আমাদের শিখিয়েছিল, তোমরা সতিদাহ কর, তোমরা কুসংস্কার করো, তোমাদের ইতিহাস অন্ধকার যুগের। দেখা যাচ্ছে, আমরা আজো সেই ইতহাসেই বিশ্বাস রেখে বসে আছি।

৬.

ভারতীয় ফ্যাসিবাদের জুজু দেখছেন, কিন্তু বিশ্বব্যাপী জিহাদি-জোশকে উপেক্ষা করছেন; সংখ্যাগুরু-সংখ্যালঘুর রাজনৈতিক, সাংবিধানিক এবং অংশগ্রহণের সাম্য সম্পর্কে ভেবে দেখুন একবার, এবং বিশ্ব খুঁজে ভারতের মতো আরো একটি রাষ্ট্রকে বের করুন, তারপর ফ্যাসিবাদ নিয়ে আলোচনায় নামুন, তবে হ্যা নব্য ফ্যাসিবাদী উত্থান এখন বিশ্ব-প্রপঞ্চ, ভারতের একার নয়।

একদম ঠিক ধরেছেন, নব্য ফ্যাসিবাদী উত্থান বিশ্বপ্রপঞ্চ। ভারত তার সঙ্গে সামিল হচ্ছে এটাই আমার হশিয়ারি। কর্পোরেট ক্যাপিটাল মার্কিন আধিপত্য আর সনাতন বর্ণবাদী মতাদর্শের মিশ্রণে এই ফ্যাসিবাদ গঠিত হচ্ছে। জনবিচ্ছিন্ন প্রগতিবাদের নেকাবে ঢাকা চোখে সেটা চোখে না পড়লে তো সমস্যা। বিশ্বব্যাপী জেহাদ আল কায়েদার প্রচারিত প্রপঞ্চ। লেবানন-ফিলিস্তনে যা চলে সেটা জেহাদ নয়, জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম। গান্ধিও জনগণকে এক করতে রামরাজত্বের কথা বলেছিলেন, মার্টিন লুথার কিং তুলেছিলেন খ্রিস্টিয় সাম্যের কথা। এটা সমস্যা নয়। সমস্যা হলো আল কায়দা বা তালেবান মতবাদ। এটা বিশ্বে কতটা শক্তিশালী? এদের কে চালায়? কে এদের নামে কথা বলে? যেখানেই কাশ্মীর আছে, চেচেন আছে, আফগান-ইরাক-ফিলিস্তিন-লেবানন আছে, সেখানেই তার চারপাশে কিছু জঙ্গিবাদী থাকবে। তাদের ব্যবহার করবে কিছু রাষ্ট্র। প্রতিক্রিয়াশীল ধ্যানধারণা চঢ়াতে মদদ দেবে সৌদি শাহী। তারপরও এরা প্রতিক্রিয়া। এরা ক্রিয়া নয়। জনগণের ক্রিয়া তৈরি হলে এরা ভেসে যাবে। ঠিক কাশ্মীরে যেমন জঙ্গিরা ব্যর্থ হয়ে গেছে এবং সফল হচ্ছে কাশ্মীরের জনগণের গণঅভ্যুত্থান।

৭. লালন ভাস্কর্য জনগণের কত অংশ ভাংতে চায়? মিলিটারি-ফখরুদের সঙ্গে এই ঘটনার সম্পর্ক বিচার করলে বোঝা যায়, একাত্তরের মতো করেই দখলদার সরকারের সঙ্গি হচ্ছে এইসব ধর্মীয় মাফিয়াতন্ত্র। এরা সাম্রাজ্যের ডানের সহযোগি আর বাঁয়ের সহযোগি হলো এনজিও-সিভিল-কের্পারেটপুষ্ট মধ্যবিত্তের বড় অংশ।
আজ এপর্যন্তই।
শুভকামনা রইল।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

Mainul Ahsan এর ছবি

I was surprised... really surprised. Mr. Wasif even did not mention anything about those people who died in Mumbai incident. He was busy to prove how Hindu extremist might be involved in the event.

There are always some people who see conspiracy in light. For instance, some still believe that 9/11 was a conspiracy by Americans against Muslims. It looks like Mr. Wasif also sees conspiracy in Mumbai event. By the way, why should one believe Laskar E toiba-s statement regarding the incident? Indo-Pak relation is in a different stage these days. But still Paki Politicians don’t have control on ISI. And as CIA say, ISI is still helping terrorist organizations both inside Pakistan and in abroad. Laskar E Toiba is also a by product of ISI. And the dangerous thing is, those terrorist organizations already gained enough power that they are now out of control of ISI!

Still it’s not clear enough who is involved in the 9/11 of India. But I guess, Hindu extremism is so clever to do such an event. They might kill some Indian Muslims, but killing American or British is not on their agenda and even they don’t have that much MORALE strength.

One more thing, yes, Hindu extremists killed innocent Muslims in several incidents in India but that does not justify “Muslims” to kill other innocent people. By the way, In Bangladesh, government or Hindu people did not kill any innocent Muslims? So, why those TUPI people is killing innocent people in Bangladesh. Why are they (tupi people!) destroying our culture (for instance, Zia Biman Bondor Incident) in name of Islam? What elements are present in Bangladesh to fuel their hunger of terrorism (you might say extremism)?

It’s not Hindu or U.S.A., it’s the MUSLIMS that destroying themselves.

Mainul Ahsan এর ছবি

I was surprised... really surprised. Mr. Wasif even did not mention anything about those people who died in Mumbai incident. He was busy to prove how Hindu extremist might be involved in the event.

There are always some people who see conspiracy in light. For instance, some still believe that 9/11 was a conspiracy by Americans against Muslims. It looks like Mr. Wasif also sees conspiracy in Mumbai event. By the way, why should one believe Laskar E toiba-s statement regarding the incident? Indo-Pak relation is in a different stage these days. But still Paki Politicians don’t have control on ISI. And as CIA say, ISI is still helping terrorist organizations both inside Pakistan and in abroad. Laskar E Toiba is also a by product of ISI. And the dangerous thing is, those terrorist organizations already gained enough power that they are now out of control of ISI!

Still it’s not clear enough who is involved in the 9/11 of India. But I guess, Hindu extremism is so clever to do such an event. They might kill some Indian Muslims, but killing American or British is not on their agenda and even they don’t have that much MORALE strength.

One more thing, yes, Hindu extremists killed innocent Muslims in several incidents in India but that does not justify “Muslims” to kill other innocent people. By the way, In Bangladesh, government or Hindu people did not kill any innocent Muslims? So, why those TUPI people is killing innocent people in Bangladesh. Why are they (tupi people!) destroying our culture (for instance, Zia Biman Bondor Incident) in name of Islam? What elements are present in Bangladesh to fuel their hunger of terrorism (you might say extremism)?

It’s not Hindu or U.S.A., it’s the MUSLIMS that destroying themselves.

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

সন্ধ্যা থেকে ভাস্কর্য-ভাঙ্গার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও সেটা নিয়ে মিটিং এ ছিলাম, এখনো আছি, তাই এত গুরুত্বপূর্ণ কমেন্ট থাকার পরো সাড়া দিতে পারিনি। আর আমার বাসায়ো নেট নেই। তাই কাল অফিসে গিয়ে আবার অংশ নেব। দুঃখিত।
..........................................................................................................
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

সুহাস এর ছবি

খুশি হলাম ভাস্কর্য রক্ষায় এতো কাজ করছেন জেনে। তবে একহাতে টেরোরিস্টদের ডিফেন্ড করবেন, আর অন্য হাতে ভাস্কর্য রক্ষার গান গাবেন তা তো হয় না। আপনি যদি সত্যই নিপীড়িতদের পক্ষে থাকতেন, সত্যই মৌলবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতেন, তা হলে মুম্বাই ঘটনার পর পরি এরকম একটা লেখা লিখে ফেলতেন না। কিছু মনে করবেন না - আপনার এই লেখাটা ওই কুখ্যাত মহিলা শর্মিলা বোসের সমগোত্রীয় - যিনি বাংলাদেশের গণহত্যাকে অস্বীকার করতে চান। আপনি জেনে শুনে মুম্বাই ম্যাসাকারের পেছনে হিন্দুদের হাত খুঁজে পেলেন, যেখানে প্রতিটি মিডিয়ায় ফলাও করে টেরোরিস্টদের পরিচিতি প্রকাশ পেয়েছে?

আপনাকে একটা কথাই মনে করিয়ে দেব। আপনারা মুসলিমরা অন্য দেশে মাইনোরিটি হয়েও নাইন-ইলেভেন ঘটাতে পারেন, মুম্বাইয়ে ম্যাসাকার করতে পারেন, আবার সেটাকে ডিফেন্ড করার জন্য কন্সপিরেসী তত্ত্ব, নিপীড়ন তত্ত্ব হাজির করতে পারেন। আর আমরা হিন্দুরা বাংলাদেশে কেমন আছি? সত্যিকার নিপড়ীত তো আমরা। আপনি ভাবতে পারেন, বাংলাদেশের গুটি কয় হিন্দু মিলে যদি মুম্বাইয়ের মত ঘটনা ঘটিয়ে ফেলত, তা হলে পুরো দেশে হিন্দুদের কি অবস্থা হত? পাশের দেশে একটা মসজিদ ভাংগলেই আমাদের জান নিয়ে টানাটানি পড়ে যায়। বিএনপি-জামাত গোষ্ঠি গত ইলেকশনে জিতার পর সংখ্যালঘুদের উপর কিভাবে অত্যাচার হয়েছিল তা কি ভুলে গেছেন? তারপরো আপনারা নিপীড়ন নিপীড়ন বলে বলে সন্ত্রাসকে আড়াল করতে পারেন। এটা কি ভাল বিশ্লেষণ হল? আপনার বিবেকের কাছে প্রশ্ন করলাম।

দিগন্ত এর ছবি

যারা এই লেখাটা পড়তে পছন্দ করেছেন তাদের জন্য আরো কয়েকটি সমধর্মী লেখার লিঙ্ক দিয়ে দিচ্ছি।

Mumbai Attacks an Inside Job?
More Proof Mumbai Attacks Inside Job
Real Objectives of the Mumbai Plot
This is India`s 9/11? Think again

তবে লেখাগুলো সবই লস্কর-ই-তৈবার (জামাত-উদ-দাওয়া আর লস্কর একই সংস্থা) সাইটের। লস্করের সাইটের লেখার লিঙ্ক সচলে দেবার জন্য দুঃখিত।


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

আলমগীর এর ছবি

এএফপির খবর বলছে পাকিস্তান তার আফগান সীমান্ত থেকে সৈন্য সরিয়ে ভারতীয় সীমান্তে মোতায়েন করছে। মনমোহন সিং পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠক বাতিল করেছে।

পরিস্থিতি কি পাক-ভারত যুদ্ধের দিকে যাচ্ছে?

দিগন্ত এর ছবি

সেকি, পাকিস্তান তো বলেছিল ভারত সেনা মোতায়েন করলে তারাও করবে। আমার মনে হয়নি ভারত সেনা পাঠাবে। দেখা যাক ... পাকিস্তান এখনো ভারত সীমান্তে সেনা পাঠায়নি, সবে পশ্চিম সীমান্ত থেকে সেনা তুলছে। ওই সীমান্তে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ব্যর্থ, শুধু কিছু নিরীহ মানুষকেই মেরেছে, জঙ্গীদের কিছুই করতে পারেনি। যুদ্ধ হবেনা নিশ্চিত ... তবে দাবা খেলা জমে উঠবে হাসি


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

আলমগীর এর ছবি

প্রথম-আলো আরো এক কাঠি বেশী বিপদের খবর দিচ্ছে। লিংক (এক্সপ্লোরার লাগবে)

প্রফাইল এর ছবি

শেষপর্যন্ত দুপক্ষের আসল চেহারা বেরিয়ে এল! এমূহূর্তে সবকিছু দেখেশুনে ছেলেবেলার কথা মনে পড়ছে:

"হোদল রাজা বলল ডেকে
বুদ্ধু রাজা আজকে থেকে
করব না আর যুদ্ধবাজি
তুই যদি ভাই থাকিস রাজি

বুদ্ধু বলে বেশ তো হোদল
আজ থেকে আর নয়কো কোঁদল
লাভটা কী বল লড়াই করে
লোক মেরে আর নিজেই মরে?"

সত্যি সেলুকাস, ভূ-ভারতে ভারতের মত দেশ আর এক্টিও পাওয়া যাবে না। রামায়ণ-মহাভারতে শুধু যুদ্ধ। একালেও তাই যুদ্ধই একমাত্র সমাধান। দুপক্ষেরি ত' দুচারটা এটম বোমা পাব্লিকের মাথায় পড়ার জন্য নিষপিষ করছে। দেশদুটোয় এতসব মেধাবী আর সৃজনশীল মানুষ থাকতেও কূটনীতি যেন মরে গেছে।

"নিপাত গেল হোদল রাজা
নিপাত রাজা বুদ্ধু"

এসব যুদ্ধংদেহী হোদল-বুদ্ধুদের কবল থেকে অত্র এলাকার আমজনতা মুক্তি চায়।

দিগন্ত এর ছবি

অবশেষে হোস্টেজদের ওপর অত্যাচারের খবরও এল। ডাক্তারের বক্তব্য -

"সবের মধ্যে ইজরায়েলীদের দেহেই সবথেকে বেশী অত্যাচারের চিহ্ন। এদের ২৬ তারিখেই হত্যা করা হয়েছিল। মারার আগে এদের বেঁধে অত্যাচার করা হয়েছে। আমি ভবিষ্যতে স্মৃতিতেও এসব আর আনতে চাই না।"

কিভাবে ছবি তোলা হয়েছে এই জঙ্গীদের সেটা দেখতে পারেন। যদি কোনো ফটোগ্রাফার থেকে থাকেন, তিনি দেখে উৎসাহ নেবেন। ছবিটা আগেই আমি অন্য পোস্টের কমেন্টে দিয়েছি।


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- আলোচনা ক্রমশঃ সরে গিয়ে বিভিন্ন ট্যাগে ট্যাগিত হয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্যটা করছি।

যারা এ ধরণের হিংস্র ঘটনা ঘটায় তারা আসলে এক কথায় মানবতার শত্রু। কেউ মুসলিম না, কেউ হিন্দু না, কেউ খ্রীস্টান বা ইহুদী না। তারা সুবিধাভোগী। এই ঘটনার হোতা যে-ই হোক, তাকে / তাদের 'মুসলিম জঙ্গী' 'হিন্দু জঙ্গী' 'খৃষ্টান জঙ্গী' আখ্যা দেয়া মানে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে ব্যস্ত হওয়া।

কোনো দেশ যদি পৃথিবী থেকে ফান্ডামেন্টালিজম তথা সন্ত্রাসবাদ দূর করতে সচেষ্ট হয় তাহলে তাদের উচিৎ হবে আগে ঘরসাফ করা। বাবরী মসজিদ ভেঙে উগ্র সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা উষ্কে দেওয়া আদভানী আর গুজরাটে গণহত্যার জন্য এন. মোদী কী করে ভারতের মতো দেশের যথাক্রমে প্রধানমন্ত্রী আর মূখ্যমন্ত্রী হবার ছাড়পত্র পায়, যেখানে ভারত সন্ত্রাসবাদের বিপক্ষে অবস্থান করে!

একজন জঙ্গী সে তো কেবলই একজন জঙ্গী। তার আবার দল-মত কী? সে মানবতার শত্রু। মানবতার শত্রুকে ঘরে দুধকলা খাইয়ে পুষে, হাতে ক্ষমতার যাদুর দণ্ড দিয়ে মানবতা প্রতিষ্ঠায় অংশগ্রহন করাটা ঠিক শোভন ব্যাপার নয়।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

নির্বাক এর ছবি

একমত। কোন বিশ্লেষণ থেকে কে লাভবান হোল সেই হিসাব করার চেয়ে প্রকৃত সত্য উদ্‌ঘাটন করাই মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত।

_________________________________________
তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ
আমি আজ চোর বটে!

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

কথাটা ঠিক। কিন্তু আজকের যুগ তথ্যবিপ্লবের যুগ নয়, তথ্য কারচুপিকেই বিপ্লব বলে চালাবার যুগ। তাই সিটিজেন জার্নালিজমটা দরকার।

কে করেছে সেটা কাহিনীর পাত্রপাত্রী বিচার। আর কে লাভবান হলো সেটা দিয়ে রাষ্ট্রের মামলা না চললেও আমাদের ভূমিকাকে আমরা কারো দ্বারা কম ব্যবহৃত হতে দিতে পারি। এটা হচ্ছে মাথা দেখে পা খুঁজে নেওয়ার পদ্ধতি। এটা অভ্রান্ত নয়। কিন্তু এই পদ্ধতি নিজেদের ভূমিকা ঠিক করে নিতে পারি।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

সাজেদ এর ছবি

অনেক দিন আগে আমরা তামশা করে বলতাম, নোয়াখালীতেও যদি কোন খুন-খারাবি হয়, তবে এইটার বিশ্লেষনে সোভিয়েত বা কমুনিষ্টগো হাত খুজে পাওয়া যাইতো দৈনিক ইত্তেফাকে । সেই সময়ে জগতের সকল কুকামে উৎস যে সোভিয়েত আর কমুনিষ্ট তার 'প্রমান' পাওয়া যাইতো ইত্তেফাকের বিভিন্ন কলাম আর সম্পাদকীয়তে। ফারুক সাহেবের লেখা পইড়া মনে পইড়া গেল।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

কিছু হলেই মুসলিম জঙ্গি করেছে এই বয়ানও কি সেরকম নয়?

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

দিগন্ত এর ছবি

আজকে যে আসামে আরো একটা বোম পড়ল তাতে তো কোনো মুসলিমকে দায়ী করা হচ্ছেনা, হচ্ছে উলফাকে।

আরো একটা উদাহরণ দিই। ২০০৪ সালে মাদ্রিদে ট্রেনে বোমা বিস্ফোরণে অনেক মানুষ মারা যান। প্রথমে স্পেনের স্থানীয় জঙ্গী গোষ্ঠী ETA র হোসে ইবারেচ্চেকে মুখ্য অপরাধী বলে সরকারী ঘোষণাও করা হয়েছিল। কারণ ETA স্পেনে আগেও অনেক বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল। পরে তদন্তের পরে আল-কায়দা সহ স্থানীয় জঙ্গীদের নাম আসে। উল্টোদিকে ETA-কে নির্দোষ বলে স্বীকার করা হয়। এ নিয়ে আপনার কি মত?

সব কিছুর একটা প্যাটার্ন থাকে। লোকে প্যাটার্নের বশবর্তী হয়েই সন্দেহ করে, সন্দেহভাজনের দিকে প্রমাণ পরে সংগ্রহ হয়। এটা পৃথিবীতে সব দেশেই হয়ে থাকে। পরে অনেক সময়েই ভুল প্রমাণিত হয় আগের চিন্তা - ভুল থেকে মানুষ শিক্ষাও নেয়, নতুন প্যাটার্ন তৈরী হয়। এ ভাবেই তদন্ত চলে ... এটা মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি।


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

হিমু এর ছবি

অনুরোধ রইলো সচলে প্রকাশিত লেখা ৭২ ঘন্টার মধ্যে অন্যত্র প্রকাশ না করার। এ লেখাটি প্রথম পাতা থেকে স্থানান্তর করে আপনার নিজের ব্লগে প্রকাশিত হলো। ধন্যবাদ।


হাঁটুপানির জলদস্যু

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

আপনাকেও ধন্যবাদ।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

Sumit Mondal এর ছবি

মুম্বাই ঘটনার উপর েলখাটা পড়ে বিশ্ব সণ্ত্রাসবাদী সেই বিখ্যাত মিশনের কথা মনে পরে গেল আবার 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ '। নাকি আমরা ছুটছি মরীচিকার পিছনে।

বজলুর রহমান এর ছবি

কত অনায়াসে ক্রয় করা যায় দরিদ্র কাশ্মিরী, পাকিস্তানী, বাংলাদেশি বা ভারতীয় মুস্লিমের জীবন। কি অবলীলাক্রমে এই সব দেশের স্বল্পশিক্ষিত কাঠমোল্লাদের মাধ্যমে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করা, যায় ভিক্টিম হয় সাধারণ জনগন, যার মধ্যে মুস্লিমরাও আনুপাতিক হারে থাকে, কিন্তু যার প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থায় ক্ষতিগ্রস্থ হয় উপমহাদেশের সব মুসলমান, এমনকি মুসলিম নামধারী অবিশ্বাসীরাও্‌ -- শারীরিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে এবং/অথবা সামাজিকভাবে। কোন তদন্তই এই সব গোষ্ঠীর সীমানা ছাড়িয়ে মূল খলনায়কদের কাছে পৌঁছায় না।

পাকিস্তানীরা বা বাংলাদেশীরা নির্বোধের মত ষড়যন্ত্র করে মরতে পারে, এটা বিশ্বের কাছে খুব বিশ্বাসযোগ্য, কিন্তু বর্ণবাদী ভারতীয়রা বা ইস্রায়েলীরা দাবা খেলার মত গ্যাম্বিট ষড়যন্ত্র করতে পারে, এমন সম্ভাবনার কথা কেউ উল্লেখ করলেই সে মৌলবাদী বা তাদের দোশর।

চোখ-কান খোলা রাখুন।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

আমি নির্বিচারি সকল ইসরায়েলি-পাকিস্তানী-মার্কিনি বা বাংলাদেশিদের দোষারোপ করার পক্ষপাতি না। আমার অভিযোগ ঐসব রাষ্ট্র ও তাদের মধ্যেকার ডমিন্যান্ট রাজনীতির প্রতি। সব দেশেই, সব জাতির মধ্যেই ঐ দেশের শাসকদের ডমিন্যান্ট প্রবণতার বিরোধীরা থাকেন।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

আমি নির্বিচারি সকল ইসরায়েলি-পাকিস্তানী-মার্কিনি বা বাংলাদেশিদের দোষারোপ করার পক্ষপাতি না। আমার অভিযোগ ঐসব রাষ্ট্র ও তাদের মধ্যেকার ডমিন্যান্ট রাজনীতির প্রতি। সব দেশেই, সব জাতির মধ্যেই ঐ দেশের শাসকদের ডমিন্যান্ট প্রবণতার বিরোধীরা থাকেন।
ধন্যবাদ বজলুর রহমান।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।