পশ্চাদপসরণের পথ খোঁজা হতভাগাদের ওপর ক্রুয়েল টেকওভার?

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি
লিখেছেন ফারুক ওয়াসিফ (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৬/০২/২০০৯ - ৫:০০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

'ক্রুয়েল টেকওভার'এর পথে প্রতিহিংসাই জিতবে?
স্নায়ুছেঁড়া ঘটনার চাপ এখনো শেষ হয়নি। ভেতরে এখনও অস্ত্র সমর্পণ চলছে। চলছে ভেতরে আটকা পড়া বিডিআর পরিবারদের অপসারণ। হাজারিবাগ, ধানমণ্ডি, জিগাতলা এলাকায় মাইকিং হচ্ছে সকলকে ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য। মানুষ সরে যাওয়া শুরু করেছে। বিডিআর গেট থেকে বন্ধু প্রতিবেদক জানালেন, আলামতটা 'ক্রুয়েল টেকওভারের'। বিশেষত যখন দেখা যাচ্ছে বিদ্রোহীরা নিরাপদ আত্মসমর্পণের পথ খুঁজছে তখন এটা হঠকারী আচরণ।
প্রতিহিংসা আদিম গোষ্ঠীগত ও ব্যক্তিগত প্রবৃত্তি। এর বশবর্তী হয়ে আক্রমণে যাওয়া উচিত নয় সেনাবাহিনীর। নিজ বাহিনীর তলাতেও ক্ষোভ-বিক্ষোভ থাকতে পারে। নতুন হামলা হলে সেখানেও অন্তর্দ্বন্দ্ব বাড়তে পারে। কিছুদিন আগে পুলিশ বাহিনীতেও একইরকম অভিযোগে মাঝারি মাপের বিদ্রোহ হয়েছে। সেটা ধামাচাপা দেওয়া গিয়েছিল। এখন বিডিআরকে পিষ্ট করলে সেই ক্ষত দেশের নিরাপত্তা কাঠামোকেই স্থায়িভাবে নির্জীব করে দেবে।

রাজনৈতিক নের্তৃত্ব জিতে পরাজিত!
বিদ্রোহী জওয়ানরা নিরস্ত্র হওয়া শুরু করেছেন কাল রাত থেকেই। এখনো দফায় দফায় অস্ত্র জমা দেওয়া হচ্ছে। আগেই বলেছি, আমার কাছে মনে হয়েছে রাজনৈতিক নের্তৃত্বের মাধ্যমে সরকারি উদ্যোগে শান্তির জন্য চেষ্টা করাই উত্তম বিকল্প। কারণ, পিলখানা আক্রান্ত হলে সারাদেশের বিডিআর শৃংখলাভঙ্গ করে সর্বাত্মক বিদ্রোহে জড়াতে পারে।
সরকারি উদ্যোগ: বিদ্রোহের তেজের কিছুটা প্রশমন ঘটিয়েছে। বেসামরিক জীবনকে হঠাত গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি থেকে রক্ষার চেষ্টা করেছে। অনেক জিম্মির জীবন রক্ষা করেছে।
যারা বিদ্রোহ করেছে, তারা জানে যে এর শাস্তি মৃত্যু। সেকারণেই বিদ্রোহকে জয়ী করা ছাড়া তাদের আর কোনো পথ নাই। সরকার ঘোষিত সাধারণ ক্ষমায় তাদের নিরাপত্তাবোধ ফেরত আসবার কথা ছিল। কিন্তু ক্রমাগতভাবে সেনাশক্তি বাড়ানো, তাদের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলা এবং আশপাশের ঘর-বাড়ি ফাঁকা করার নির্দেশ আবার উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। শেখ হাসিনার ভাষণটি মোটামুটি গ্রহণযোগ্য। তিনি আপসের দরজাও দেখিয়েছেন আবার বাড়াবাড়ি না করার হুশিয়ারিও দিয়েছেন। এখন আমাদের পরিষ্কারভাবে জানা দরকার যে, সেনাবাহিনীর আগবাড়ানো ততপরতার আদেশ কি সরকারের দিক থেকে এসেছে, নাকি সেটা তাদের নিজস্ব গরজ? সরকার যেভাবে কাজ করছিল, তাতে কিছুটা বিলম্ব হলেও শান্তিপূর্ণ সমাধানই সম্ভব ছিল। কারা হত্যা করেছে, কারা দায়ি এসব পরে ফয়সালা করার ব্যাপার। এখন দরকার ছিল সাধারণ জওয়ানদের মধ্যে প্রতিহিংসার ভীতি কাটানো। সেনাবাহিনীর ততপরতা তাই সংকটকে সহজ করবার বদলে আরো ঘনীভূতই করেছে মনে হচ্ছে। এখন যদি প্রায় নিরস্ত্র বিডিআরদের ওপর হামলা চলে, সেটা নিশ্চিতভাবেই গণহত্যায় গিয়ে গড়াবে। সেনা অফিসাররা তাদের শ্রেণীর অফিসারদের মর্মান্তিক মৃত্যুতে স্বাভাবিকভাবেই ক্রুদ্ধ। কিন্তু দেশের স্বার্থে, জনজীবনকে শীতল করবার প্রয়োজনে তাদেরও উচিত সরকারকে সহায়তা করা। তারপর দরকার সংকট কেটে গেলে উচ্চপর্যায়ের সিভিলিয়ানের নের্তৃত্বে তদন্ত কমিশন গঠন করা। তা আশু ও দীর্ঘমেয়াদে ব্যবস্থা নেবে, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের সুপারিশ করবে। অভিজ্ঞ মানুষ মাত্রই জানেন, বিচ্ছিন্ন করে রাখা হলে, উস্কানি না দিলে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিদ্রোহীদের মনোবল ভেঙ্গে পড়বে। পড়তে বাধ্য। তাদের সামনে কোনো লক্ষ্য না থাকাই এর কারণ। তারা রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে চায়নি যে সেটা না হওয়া পর্যন্ত লড়বে। তারা মূলত ফরিয়াদি, উপায় না পেয়ে অস্ত্র হাতে নিয়েছে। তাদের আর কিছু করার নাই। তারা এখন প্রতিহিংসা থেকে রেহাই চায়। সেটা নিশ্চিত করা গেলে পরে প্রয়োজনে আইনের মাধ্যমে উভয়পক্ষের দোষীদের শাস্তি দেওয়া যাবে। এসব এড়িয়ে বলপ্রয়োগ রাজনীতিবিদদের অভূতপূর্ব সাহসিকতা ধৈর্য ও আন্তরিকতার উদ্যোগকে ভেস্তে দেবে। তাহলে তারা জয়ী হয়েও পরাজিতই হবেন।

বিদ্রোহ কি ন্যায্য?
কোনো বিদ্রোহই আইনের বিচারে ন্যায্য নয়। একাত্তরে ইপিআরের বিদ্রোহ আজ ন্যায্য কারণ তাদের উদ্দেশ্য পূরণ হয়েছে। এই বিদ্রোহও ন্যায্য হবে যদি জাতি কোনোদিন মনে করে নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর কাঠামোর মধ্যে যে শোষণ-বৈষম্য-দুর্নীতি ও ক্ষমতার চূড়ান্ত কেন্দ্রীভবন রয়েছে, তা জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী। ১-১১ কে আজ অনেকে বৈধতা দিচ্ছেন ঐ জাতীয় স্বার্থের নিরিখেই। ভেতরে ভেতরে এত যে বঞ্চনা, নিপীড়ন আর জুলুম চলেছে তা যদি বিদ্রোহের মাধ্যমে প্রকাশ না পেত, তবে অন্যভাবে প্রকাশিত হতোই। সেনাবাহিনীর অগণতান্ত্রিক ও এখতিয়ারবহির্ভূত ক্ষমতাচর্চা রাজনীতি ও রাষ্ট্রকে বহুভাবে পঙ্গু করেছে এবং তার ছাপ এখনও আমরা বহন করে চলেছি। সেটার সম্মিলিত ক্ষয়ক্ষতি এই বিদ্রোহের ক্ষতির সঙ্গে তুলনীয় নয়। কিন্তু ১-১১ যদি রাষ্ট্র দখল করে অনেক হত্যা-নির্যাতন ঘটিয়েও ছাড় পেতে পারে, অনুতপ্ত হলে এরা কেন সেই অনুকম্পা পাবে না? জাতির বৃহত্তম স্বার্থেই সেটা করা যায়, যদি আমরা প্রতিহিংসার ব্যাকরণে চিন্তা করা শুরু না করি। ঐ ব্যাকরণ ঘটনার কার্যকারণ দেখে না, দেখে ঘটনার ফল। সেই ফলের হিসাবে সম্ভবত ১৭০ জনের মতো বিডিআর, যাদের বেশিরভাগই অফিসার, মারা গেছেন। এখন প্রতিহিংসার আক্রমণে কয়েকশত মানুষ মারা যাওয়া নিশ্চয়ই শুভবোধের পরিচায়ক নয়। যারা আইনের আশ্রয় নেওয়ার কোনো সুযোগ পায়নি, যারা প্রতিবাদের জন্য নির্যাতন, বরখাস্ত এমনকি হত্যার শিকার পর্যন্তও হয়েছে, তারা এখন আইন হাতে তুলে নিয়েছে। খেয়াল করলে দেখব, একই রকম মনোভাব পাটকল শ্রমিকদের মধ্যে, গার্মেন্ট শ্রমিকদের মধ্যে, এরকম আরো অনেক দুর্দশার শিকার মানুষের মধ্যেও বিরাজ করছে। বিডিআর বিদ্রোহ সেই ক্ষোভের ডুবোপাহাড়ের চূড়া মাত্র। চূড়া কেটে ফেললেই তলার অংশটুকু কিন্তু গলে যাবে না।
অন্যভাবে, এই ঘটনা বেসামরিক কর্মকাণ্ডে সামরিক বাহিনীকে ঢোকাবার ফল। পাশাপাশি প্রায় দেড়শ বছরের উপনিবেশিক কাঠামোয় এই বাহিনীকে রেখে দেওয়ারও প্রতিক্রিয়া এটি। বিদ্রোহকে যদি দমনও করা হয়, তাহলেও তো সিভিল প্রশাসনে ঢুকে সামরিক কর্মকর্তাদের ভয়াবহ দুর্নীতি করা, ১-১১ এর দুই বছরের নির্যাতন, সংবিধান লংঘন, অফিসার বনাম সৈনিকের মধ্যে প্রভু-ভৃত্য সম্পর্কের সুবিধাভোগ; এসবের বিচারের প্রশ্নটা তো হারিয়ে যেতে পারে না। পারে কি?

আগের লেখা: বিডিআরের ক্লাস স্ট্রাগল
চলবে


মন্তব্য

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

অসম্পূর্ণ লেখা, ফিরে এসে আবার বসবো।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি
অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

আগুন লেখা এবং যথাযথ বিশ্লেষণ। স্যালুট।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

বুঝতে পারছি। সকল বিদ্রোহেই দেখা যায় তলার মাটি ওপরে যায় আর ওপরের মাটি তলায়। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। বিডিআর জওয়ানরা তাদের ওপর চলা অন্যায় ঘুরিয়ে দিয়েছে। এবং সেখানে যেটা হয়েছে সেটা কোনোভাবেই কাম্য ছিল না। তবে ঘটনাসূত্র যতটা আমরা জানি, তাতে ডিসিপ্লিন কিন্তু তারা ভাঙেনি। ভেঙ্গেছে অফিসাররা। যারা তাদের ফরিয়াদ শুনতে চায়নি, উল্টো নির্যাতন ইত্যাদি করেছে। কমান্ড তখনই কাজ দেয় যখন কমান্ডারদের ওপর আস্থা ও শ্রদ্ধা থাকে। সেনাবাহিনীর কাঠামোয় কমান্ডার অধীনস্তদের জীবন ও সম্মানের জিম্মাদার। সেই জিম্মাদারি তারা করেননি।
সংক্ষেপে বললে,
১. এ মুহূর্তে কোনো প্রতিহিংসা কোনো পক্ষেই নয়।
২. সবার জন্য সাধারণ ক্ষমা কার্যকর করা।
৩. তদন্ত সাপেক্ষে হত্যার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে সাধারণ আদালতে বিচার করা। বিচারে যে শাস্তি হবে সেটায় অনুকম্পা দেখিয়ে কিছুটা লাঘব করা যেতে পারে, কিন্তু কী ঘটেছিল এবং কারা তার জন্য দায়ি তা চিহ্নিত করতেই হবে এবং শাস্তির বিধান কার্যকর করতে হবে।
৪. আশু ভিত্তিতে বিডিআর জওয়ানদের অভিযোগের তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে, দোষী ও দুর্নীতিবাজ অফিসারদেরও বিচার করতে হবে।
৫. দীর্ঘমেয়াদে কমান্ড স্ট্রাকচারকে পুনর্গঠিত করতে হবে, যাতে অভ্যন্তরীণ সংহতি ও শৃংখলা আগের থেকে ভাল জয়াগায় নিয়ে যাওয়া যায়।
৬. কোনোভাবে সেনা নের্তৃত্বে কোনো সিভিল কর্মকাণ্ড হতে না দেওয়া।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

প্রধানমন্ত্রীর ওপর সেনাপ্রধানের দিক থেকে একটা বিরাট চাপ থাকবে। দেশব্যাপী বিডিআরের কমান্ড ভেঙে পড়ার ঝুকিঁর কথা তুলে তারা একটা দ্রুত সমাধান চাইবেন। সেক্ষেত্রে শক্তি প্রয়োগও করতে চাইবেন। 'আইন কেউ হাতে তুলে নেবেন না' - প্রধানমন্ত্রীর এই কথাটা সেনাবাহিনীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

এরকম একটি ঘটনার রেশ কাটতে অন্তত: তিনদিন দরকার। সেনাবাহিনীর বিডিআর ক্যাম্পাসে ঢোকার ওপর একটা নিষেধাজ্ঞা সরকার প্রধান ঘোষণা করতে পারেন। শুধু পরিস্থিতি পাল্টালে তিনি নতুন ঘোষণা দিতে পারেন।

বিডিআরের মধ্যে কারো এজেন্ট কাজ করেছে কিনা তা বোঝা দরকার। যেভাবে হত্যাকান্ড চালানো হয়েছে তা রহস্যজনক। কিছু সেনাকর্মকর্তা আহত হয়েছেন আবার সদ্য পদায়নকৃত কর্মকর্তাদেরও হত্যা করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিশ্চই নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল। যারা হত্যা করেছে তারা তাদের মৃত্যুদন্ড নিশ্চিত জেনেই ফায়ারিং স্কোয়াড ফায়ারিং স্কোয়াড খেলেছে। এই বিপুল প্রাণক্ষয়ের কারণে বিডিআর অবশ্যই জনগণের সহানুভূতি হারিয়েছে।

সেনাবাহিনী নিশ্চই প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে পড়তে পারে। সমস্যা হচ্ছে সেই ধাক্কা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর পর্যন্ত আসতে পারে। পরিস্থিতি নাজুক।

বিডিআরের উচিত রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত দ্রুত মেনে নেয়া। এক্ষেত্রে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর একটা ভূমিকা থাকা উচিত।

সেনাবাহিনীকে এখন কোনোভাবেই ঐ ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেয়া উচিত নয়। আমরা কোনো প্রতিহিংসামূলক আচরণ আর কোনো প্রাণহানি দেখতে চাই না।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

সেনাবাহিনীর বিডিআর ক্যাম্পাসে ঢোকার ওপর একটা নিষেধাজ্ঞা সরকার প্রধান ঘোষণা করতে পারেন।

এটা এখন এই মুহূর্তেই দরকার
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

দিগন্ত টেলিভিশনে এক বিডিআর জওয়ান জানালেন, প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে তাঁরা সম্পূর্ণ নিরাপত্তা বোধ করছেন। দৃশ্যে দেখা গেল তারা অস্ত্র গেটে পাহারা সরিয়ে অস্ত্র তুলে নিচ্ছেন।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

ভালো উদ্যোগ। এখন শুধু সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বিডিআরের ওপর ঝাঁপিয়ে না পড়লেই হয়।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

সেনাবাহিনী যাতে কোনভাবেই রক্তপিপাসায় না মেতে ওঠে

একপক্ষ শান্ত হয়ে এসেছে, এখন টেনশন মিনিমাইজ করে ফেলাই একমাত্র পথ ... দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেয়ার যথেষ্ট সময় ভবিষ্যতে পাওয়া যাবে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

কেবল তা-ই নয়, যে বিপুল সেনা ইনস্টলেশন হয়েছে সেটা ভয়ের ব্যাপার। ব্যারাকের বাইরে উত্তেজক পরিস্থিতিতে এধরনের নড়াচড়া ঝুঁকিপূর্ণ।

দ্বিতীয়ত, সেনাবাহিনীর প্রতি হারানো শ্রদ্ধা দ্রুতই ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ দরকার। আমাদের এই একটিই সেনাবাহিনী। এবং দেশের জন্য তাদের অস্তিত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভেতর বা বাহির থেকে তাদের ক্রমাগতভাবে হেয় করার ঘটনার ফল ভাল নয়। এমন পরিবর্তন আনতে হবে, যাতে জনগণ এই বাহিনীকে তাদের জানের রক্ষক, মালের জিম্মাদার আর দেশের খুঁটি মনে করে_ ঠিক একাত্তরের পর তাদের যে ভাবমূর্তি ছিল সেটা ফেরত আনতে হবে। একই কথা রাজনীতিবিদদের বেলাতেও আরো বেশি প্রযোজ্য। তারাই বেশিরভাগ নষ্টের গোড়াতেই। তাদের অনৈতিক কাজকর্ম মনের দিক থেকে তাদের দুর্বল ও লোভী রাখে অন্যদিকে নৈতিক ঘাটতির কারণে সময় মতো বলিষ্ঠ ভূমিকা তারা নিতে পারে না।
মনে রাখতে হবে, সেনার বিপরীতে সিভিল সোসাইটি কোনো ভাল চয়েস নয়। সাধারণত এদের একাউন্টেবিলিটি তাদের প্যাট্রনদের কাছে দেশের ভেতরের মানুষের কাছে নয়।
এই ঘটনার পর বিডিআর-পুলিশও যাতে বোঝে তাদের দুঃখ জনগণ বোঝে, এবার তারা জনগণের প্রাপ্য আশা মেটাক।
সরকারের উচিত সর্বদলীয় কমিটি করে করণীয় ঠিক করা। বিএনপি এখনো পর্যন্ত যৌক্তিক আচরণ করেছে। এই ঘটনা প্রমাণ করেছে এরকম পরিস্থিতিতে রাজনীতিবিদদের ঐক্যই একমাত্র রক্ষাকবচ।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

পলাশ দত্ত এর ছবি

পশ্চাদপসরণের পথ খোঁজা হতভাগাদের ওপর ক্রুয়েল টেকওভার?
-বিডিআর জ্ওয়ানদের 'হতভাগা' বলা হচ্ছে ক্যানো?

বিডিআর গেট থেকে বন্ধু প্রতিবেদক জানালেন, আলামতটা 'ক্রুয়েল টেকওভারের'।
-'ক্রুয়েল টেক্ওভারে' যেতে চাইলে আগে 'রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা' টেক্ওভার করতে হবে। কারণ বাংলাদেশ সরকার এরকম কোনো বিষয়ে সম্মতি দেবে না। দ্বিতীয়ত, 'ক্রুয়েল টেক্ওভার' সেনাবাহিনীর আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি নষ্ট করবে। সে-কারণে সাধারণ সেনাসদস্যদের সমর্থন থাকবে না এ-ঘটনায়।

১-১১ যদি রাষ্ট্র দখল করে অনেক হত্যা-নির্যাতন ঘটিয়েও ছাড় পেতে পারে, অনুতপ্ত হলে এরা কেন সেই অনুকম্পা পাবে না?
-১-১১তে রাষ্ট্র দখল করা না-হ'লে যে-পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো তা ১-১১এর চেয়ে ভালো হতো?

প্রায় দেড়শ বছরের উপনিবেশিক কাঠামোয় এই বাহিনীকে রেখে দেওয়ারও প্রতিক্রিয়া এটি।
-পৃথিবীর যেসব দেশে সীমান্তরক্ষা বাহিনী আছে তাদের প্রায়ই কোনোটিই স্বায়ত্বশাসিত নয়। বাংলাদেশে এর ব্যতিক্রম ঘটবে ক্যানো?

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

বকলম এর ছবি

১। যেকোন ধরনের প্রতিহিংসাপরায়নতা প‌রিহার্য।
২। তবে, যারা নেত্ঋত্ব দিয়েছে বা হত্যাকান্ডে ‌যুক্ত, তারা ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য না। regimented force এ বিদ্রোহের শাস্তি ম্ঋত্যু। নাহলে ২ দিন পর পুলিশ বিদ্রোহ করবে। তারপর আনসার - এদের তেল বিডিআরদের থেকে অনেক কম।
৩। বাংলাদেশের মাপে আর যোগ্যতার তুলনায় বিডিআর খুব‌‌‌ ভাল আছে (চোরাচালানীর হিস্যা বাদেই) । ‌আর্মিতো রীতিমত অশালীন রকমের ভালো আছে।
৪। ১/১১ এর পরে ২ বছর আর্মির দুর্নীতি সম্প‌র্কে জনমুখে যা শোনা যায়, তদণ্ত সাপেক্ষে তার বিচার হওয়া উচিত।
৫। প্রমান হল, যার যা কাজ - তাকে তা করতে দেয়া উচিত। বিডিআরকে চাল-ডাল বিক্রি করতে দেয়া একটা ছাগলামি ছিলো।
৬। এ পর্যন্ত সরকার বেশ বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

বিডিআর-এর এই উন্মত্ত বিক্ষোভ মোটেও প্রোলেতারিয়েতের বিপ্লব না। জেনে, বুঝে, সজ্ঞানে অনেক রকম হিংস্র কাজ করা হয়েছে। এটা ভুলে যাওয়া উচিত না।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাধারণ ক্ষমা চাওয়ার সময় বলা হয়েছিল যে অফিসাররা বেঁচে-বর্তে আছেন। কথাটা স্পষ্টতই মিথ্যা ছিল।

অপরাধের শাস্তি আইনের শাসনের জন্যই প্রয়োজন। অন্যথায় এই দিকেও "পরীক্ষায় বসলেই জিপিএ-৫ টাইপ অবস্থা হয়ে যাবে"। সবকিছু মাফ করে দেওয়ার অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসতে হবে আমাদের।

এরা বেচারা বা হতভাগা না। আর, এরা একটা আনস্টেবল ফোর্স এখন। এদের ডিসিপ্লিনে আনতে হবে। এটাকে আর্মির টেকওভার হিসেবে দেখি না আমি। আর্মি ক্ষিপ্ত হয়ে কিছু করলে আরো একদিন আগেই করতে পারতো। জনগণের স্বার্থেই এদের এই বিদ্রোহ কন্টেইন করতে হত, হবে। সেটা সেনাবাহিনীকেই করতে হবে।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

সবকিছু মাপ করে দেয়া হবে বলে মনে হয় না। কারণ, এবার ভিক্টিম বিডিআর।
আর্মি হলে প্রধানমন্ত্রীর মাপ নিয়েই মাথা ঘামাতো না। শেখ মুজিব নাই এই ৩৪ বছর, কেউ আর্মির নখও স্পর্শ করতে পারে নি। জিয়া কতোজন মুক্তিযোদ্ধাকে ফাঁসি দিয়েছেন, তা নিয়েও উচ্চাবাচ্য হয় নি।

দুনিয়া বড়ো অদ্ভূত জায়গা। এখানে 'দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি' সবসময় দুর্বলের ওপরেই প্রয়োগ করা হয়। এবারও তার অন্যথা হবে না। আর্মির যেসব দুর্ণীতি নিয়ে কথা উঠছে, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিদাতারা সে জিনিসটা নিয়েও কোনো উচ্চবাচ্য হতে দিবে না।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

আর্মির উপর আপনার ক্ষোভটা স্পষ্ট। আমি নিজেও তেমন একটা আর্মিভক্ত মানুষ না। সাধারণ মানুষও শুরু থেকেই আর্মির উপর আঘাত হওয়ায় খুশি ছিল। এগুলো সবই "আবেগ"। এই আবেগের বাইরে বেরিয়ে এসে দেখা উচিত মনে হয়। রাষ্ট্রের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা উচিত।

পাশাপাশি, বিডিআর-কে "গরীব" বা "দুর্বল" বলাটা খুব বড় আন্ডার-স্টেটমেন্ট। এরা দুধের শিশু কিংবা মানসিক প্রতিবন্ধী না। আর্মি-বিদ্বেষএর প্রি-কনসিভড মাইন্ডসেট থেকে বেরিয়ে এসে দেখা উচিত। ঘটনার প্রথম ৫-৬ ঘন্টা পর্যন্ত এভাবে দেখলে চলে। এখন ৪৯ ঘন্টা হয়ে গেছে।

'৭৫-এ আর্মি যা করেছিল, তার কারণে যদি আজকে তাদের উপর এভাবে হত্যা-অত্যাচারকে সাধুবাদ জানাই, তাহলে আমরা উন্নত হলাম কোন দিক থেকে? এদের কাছ থেকে আনুগত্য আর উপলব্ধিই বা আমরা আশা করবো কোন মুখে?

নির্বাচন এবং তারপরের সময়টায় আর্মির উপর সাধারণ মানুষের বিরক্তি স্পষ্ট। আমার মনে হয় না এটা না বোঝার মত গাধা তারা।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

ইশতি, আমার বক্তব্যে আবেগ থাকলেও যুক্তির সীমা অতিক্রম করছে না বলেই ধারণা। আমিও রাষ্ট্রের এবং অবশ্যই রাষ্ট্রের প্রকৃত মালিকের (জনগণ) দৃষ্টিকোণ থেকে রাষ্ট্রের ভালোর জন্যই বলছি।

বিডিআর অবশ্যই তুলনামূলকভাবে দুর্বল। দুর্বল না হলে তাদের মাথার ওপর আর্মি চাপিয়ে দেয়া যায় কিভাবে?

৭৫ বলে কথা নয়, স্বাধীনতার আগে পাক আর্মির যে রূপ ছিলো, স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশ আর্মির চরিত্র তার থেকে কোনো দিক দিয়েই ভালো হয় নি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা এই জনবিরোধী প্রতিষ্ঠানটির 'কৃতিত্বের' একটি উদাহরণমাত্র। বাংলাদেশে কত বছর আর্মি শাসন আর কত বছর জনগণের শাসন চলেছে, সে পরিসংখ্যানের দিকে তাকালেই বোঝা যায় এই বাহিনীটির মূল লক্ষ্য কি। তাদেরকে হত্যার সমর্থন একবারও করছি না, কিন্তু রাষ্ট্রের স্বার্থেই তাদেরকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। আমি বেতন দিয়ে আর্মি পুষবো আর আর্মি আমার অনুগত হবে না - এরকম হলে সেই আর্মি আমি পুষবো কেন?

সাধারণ মানুষের বিরক্তি কেয়ার করার মত অবস্থানে তারা নেই। ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় বাংলাদেশে কেউ সাধারণ মানুষকে কেয়ার করে না। আর আর্মি সাধারণ মানুষ থেকে একটা অত্যন্ত আলাদা সম্প্রদায়। দে আর ট্রেইন্ড টু কিল! সাধারণ মানুষকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তারা দশকের পর দশক দেশ শাসন করেছে, এখনও করছে। 'ব্লাডি সিভিলিয়ান' শব্দদুটো আকাশ থেকে আবিষ্কৃত হয় নি।

তত্ত্ব সরকারের আমলে দুদক অনেক ভাঙচুর চালিয়েছে। কিন্তু কতজন আর্মি অফিসার দুর্ণীতির দায়ে গ্রেফতার হয়েছে? কতজন আর্মি অফিসারের সম্পত্তির হিসাব নেয়া হয়েছে?

সবচেয়ে বড় রিস্ক কোথায় জানো? যখন একজন তার দায়িত্ব ভুলে অধিকারের সীমা অতিক্রম করে এমন বিষয়ে নাক গলায়, যেটা তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। সিভিল অ্যাফেয়ার্সে আর্মির জড়িত হওয়া যত বাড়বে, দুর্ণীতি ততোই বাড়বে, তাদের মাস্তানিও ততোই বাড়বে। আশঙ্কার বিষয় হলো এই অধিকার বহির্ভূত বিষয়গুলোই এখন প্র্যাকটিসে পরিণত হয়েছে।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

সবগুলো কথার সাথেই একমত। আর্মির ভেতরে দুর্নীতি চিরকালই ছিল; সব দেশেই আছে। বাংলাদেশের আর্মির মধ্যে যেটা সবচেয়ে বেশি, তা হল প্রচণ্ড ঔদ্ধত্ব ও সাধারণ মানুষের প্রতি তাচ্ছিল্য। এগুলো নির্মূল করার পথ তো এভাবে তাদের হত্যা-জিম্মি করা নয়, আমার কথা এটাই। প্রয়োজনে আর্মির চুরির অভিযোগে সকাল-বিকাল থুতু-ক্যাম্পেইন (?) চালু করা হোক। কিন্তু অফিসারদের হত্যা করা, তাদের পরিবারকে জিম্মি করা, এগুলো ক্ষমার্হ না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে যা হয়েছে, তা প্রতিটা রাজনৈতিক দলই করে। নিজেদের একটা ক্লিন ইমেজ তৈরি করে আর সবাইকে কাদায় মেশানোর চেষ্টা করে সবাইই। এর প্রতিরোধ-প্রতিবাদ কেন এভাবে করতে হবে? আমাদের আইন আর্মির বিচার করার মত শক্ত না, আমরা একজন দুর্নীতিবাজ আর্মি অফিসারকে মুখের উপর "তুই চোর!" বলার মত সাহসী না। এর দায় কেন এভাবে বইতে হবে? এখানেই আমার আপত্তি।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

বুঝতে পারছি। এজন্যই হত্যার সমর্থন করছি না। দোষী ব্যক্তিদের বিচারের মাধ্যমে শাস্তি দেয়া হোক। একই সাথে এরকম ঘটনা যাতে না ঘটে, তার জন্য সমস্যার মূলে হাত দেয়া দরকার। আর্মিকে সিভিল প্রশাসনের ওপর খবরদারি বা সিভিল টেন্ডারে আর্মির অংশগ্রহণজাতীয় জিনিসগুলো দূর করতে হবে। সাথে সরকারের কাছে আর্মির জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। শাসন ক্ষমতার বলয় থেকে তাদেরকে দূরে রাখতে হবে। আমি চাই, শেখ হাসিনাকে যেন আর আর্মিচীফের শিখিয়ে দেয়া ভাষণ আবৃত্তি না করতে হয়।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

আলমগীর এর ছবি

আর্মির সাথে ইতোপূর্বে অন্যান্য যেসব ঘটনা ঘটেছে তাদেরকে কীভাবে ব্যাখ্যা কর? যেমন কারা-রক্ষীদের সাথে (সেখানেও আর্মি তাদের প্রধান), মেডিকেল কলেজে (সেখানেও আর্মি প্রধান)।

সবর্শেষ: ঢাবিতে ছাত্র-শিক্ষদের সাথে সংঘর্ষের সময় তাহলে কি সরকারের উচিৎ ছিল আর্মি দিয়েই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা? সে সময় আর্মি-ভক্ত কাউকে দেখিনি, প্রায় সবাই ছাত্রদের পক্ষ নিয়েছিল। (এবং যু্ক্তির খাতিরে নৈরাজ্য, গাড়ী ভাঙচুর কে সঠিক কাজ মনে করেছিল)। তাই নয় কি?

নির্বাচন এবং তারপরের সময়টায় আর্মির উপর সাধারণ মানুষের বিরক্তি স্পষ্ট। আমার মনে হয় না এটা না বোঝার মত গাধা তারা।

তোমার মনে হয় না তারা গাধা, আরেকজনের মনে হয় না তারা হিংস্র, আরেকজন ভাববে তারা শান্তিরক্ষা করে অনেক সুনাম কুড়িয়েছে তা হারাবে না।

কিন্তু অতীত কী বলে? বা ধরা যাক, র‌্যাব কেন এখনো বিলোপ হচ্ছে না?

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

র‌্যাব বিলোপ সরকারের সিদ্ধান্ত।

("ইট শুড কাম টু দি নিয়ন্ত্রণ অফ দি গভমেন্ট" -- জলিল সাহেবও একটা বাবরীয় উক্তি ছাড়লেন।)

আর্মির বিরুদ্ধে মানুষের রোষটুকু এই অবস্থায় সরকারের জন্য শক্তি। সরকার তা কাজে না লাগানোও সরকারেরই ব্যর্থতা। এতদিন করা যায়নি, কারণ নির্বাচনের পরও আগের আমলের বংশবদ চিন্তার রেশ রয়ে গেছিল। এই ঘটনার পর অবশেষে ৫০ দিন পর আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের পূর্ণ দায়িত্বভার গ্রহন করলো। সেনাবাহিনীর দুর্নীতি নিয়ে কিছু করবার এখনই সময়। দেখা যাক আগামী সপ্তাহ খানেকে কিছু হয় কিনা।

গাড়ি ভাংচুর আর প্রায় দেড় শ' জন সিনিয়র আর্মি অফিসার খুন করা এক নয়। এই মানুষগুলোর পেশাগত যোগ্যতার সাথে দেশের নিরাপত্তা জড়িত।

আর্মির শীর্ষনেতৃত্ব দিয়ে সবাইকে বিচার না করার কথাই বলছি আমি। যেকোন রকম দ্বন্দ্বে দুটো হার্ডলাইন গ্রুপ থাকে। সাথে থাকে কিছু মধ্যপন্থী ব্যক্তি, যারা চূড়ান্ত বিজয়ী নিরূপণ করেন। আমি বলছি এমন কোন চরমপন্থী অবস্থান না নেওয়ার কথা যা উভয় পক্ষের কোন মধ্যপন্থী মানুষকে দূরে সরিয়ে না দেয়।

আলমগীর এর ছবি

কারণ নির্বাচনের পরও আগের আমলের বংশবদ চিন্তার রেশ রয়ে গেছিল। এই ঘটনার পর অবশেষে ৫০ দিন পর আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের পূর্ণ দায়িত্বভার গ্রহন করলো।

কোনটা বড় অপরাধ, প্রাণের মান বাঁচানো বেশী দরকার না প্রাণ সে বির্তকে আর না যাই।

তোমার কি মনে হয় আলীগ সরকার চালাচ্ছে? আব্দুল জলিলের মতো নেতা তার উপর ঘটে যাওয়া নির্যাতনের কোন প্রতিকার পেলেন না। নাসিমের মতো দুধর্ষ নেতার কোন নাম গন্ধ শোনা যায় না।

বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনও হয়েছে যে সরকারের একজন দপ্তর-প্রধান স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর কথাকে বাতিল করেছেন? (দুদক মহাপরিচালক কদিন আগে রাজনৈতিক নেতাদের হয়রানি করা বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য উড়িয়ে দিয়েছে)।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

রাতারাতি তো আর হবে না... সময় দিতে হবে। আর্মি শাসন যতই মন্দ হোক না কেন, ১/১১-তে বিএনপি আর কোন উপায় রাখেনি। রাজনৈতিক শূন্যতার সুযোগ নিয়ে সেনাবাহিনী সব জায়গায় ঢুকেছে। এটা রাতারাতি পরিবর্তণ হবে না। তবে নিয়মতান্ত্রিক শাসন থাকলে আস্তে আস্তে এগুলো সিভিলিয়ান কর্তৃপক্ষ দিয়ে প্রতিস্থাপিত হবে।

আলমগীর এর ছবি

মার্জড।

অভিজিৎ এর ছবি

এই ব্যাপারটায় আমি কোন মন্তব্য করা থেকে ইচ্ছে করেই বিরত ছিলাম গত দু'দিন ধরে। কেননা বলতে গেলে অনেক কথাই বলতে হবে। কিছু কিছু লেখকের লেখা খুব সরলীকরণ দোষে দুষ্ট বলে মনে হয়েছে আমার। 'ক্লাস স্ট্রাগেল', 'প্রলেতরিয়েতের বিপ্লব' ইত্যকার রাশভারী শব্দনিচয় আমদানি করে অনেক সময়ই মুল বিষয় থেকে অনেক দূরে চলে যাওয়া হয়। বৈধতা দেয়া হয় হিংস্রতার। বৃদ্ধি পায় রিয়েকশনিজম। বিশ্লেষনের সময় আসলে সেই চিরন্তন ছক থেকে আমরা অনেকেই বোধ হয় বেরুতে পারি না। গরু রচনার মত সব জায়গায় চলে আসে ক্লাস, আর তারপর ক্লাসের কনফ্লিক্ট, আর শেষ মেষ বিদ্রোহের (এমনকি খুন খারাবি, হানাহানি, ডাকাতি ইত্যাদিরও) ন্যায্যতা দাবী। এটা শুধু এই ঘটনায় নয় - আগেও লক্ষ্য করেছি। কানসাট কিংবা ফুলবাড়িতে বিপ্লবের যে ব্যখ্যা দেয়া হয়, ঠিক একই ছকে বাধা ব্যাখ্যা হাজির করা হয় বিডিআর বিদ্রোহে, এমনকি ৯/১১ তে কিংবা মুম্বাই সন্ত্রাসেও। ভুলে যাওয়া হয় কানসাট বা ফুলবাড়ির একজন খেটে খাওয়া শ্রমিক বা কৃষকের সাথে একজন বিডিআর জোওয়ানের কিংবা একজন মুম্বাই সন্ত্রাসী কিংবা ৯/১১ সন্ত্রাসীর মাত্রাগত পার্থক্য বিস্তর। তাদের প্রত্যেকের প্রেক্ষাপটই আসলে আলাদা। কানসাট বিদ্রোহের সময় কৃষকদের ন্যায্য দাবী যে কোন সাধারন মানুষই সমর্থন করবে। আমি নিজেই কানসাট বিদ্রোহের সময় নিজে উদ্যোগী হয়ে সে সময়কার আপ্রাইজকে ডকুমেন্টেড করেছিলাম, তাদের বিদ্রোহকে আখ্যায়িত করেছিলাম কৃষক বিদ্রোহ হিসেবে (এটা দেখা যাবে এখানে)। কিন্তু একই ছক যখন ব্যবহার করেন আমাদের ফরহাদ মজহার সাহেব বিন লাদেনকে স্ট্যালিনের সাথে তুলনা করেন, আর বাংলা ভাইয়ের সন্ত্রাসী কাজকর্মকে 'প্রলেতারিয়েতের বিপ্লব' হিসেবে আখ্যায়িত করেন, তখন হতাশই হই। এতে বিশ্লেষনের দীনতা প্রকাশ পায়। স্থান কাল পাত্র ভুলে একই ছকে একই ঢং-এ কোন সন্ত্রাসী কত বড় প্রলেতারিয়েত, তারা কত শোষিত সেগুলো উপমা হাজির করেই ইনিয়ে বিনিয়ে হত্যা এবং সন্ত্রাসকে বৈধতা দেয়া হয়। একই বক্ত্যব্য - একই শন্দ - একটু অন্যভাবে হাজির করা হয়।

আবার বিপরীতটাও সত্য। সেনাবাহিনীতে রাজাকার আছে কিনা, গোলাম আজমের কোন ছেলে কোন বাহিনীর প্রধান - এইগুলা নিয়েও জল ঘোলা করে অনেকে। এমনকি বিডিআর নিয়ে এই সংকটের সময়ও এগুল্লোই বড় হয়ে দেখা দেয় অনেকের কাছে। এটা কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না যে, সেনাবাহিনী যে সিস্টেমকে রিপ্রেজেন্ট করে তা অবশ্যই শোষণমূলক এবং নিবর্তনমূলক। বিডিআর বিদ্রোহের ফলশ্রুতিতে আজকে শাকিল আর তার বউ অপারেশন ডালভাতের নামে ক্যামনে টাকা পয়সা মারছিলো সেগুলো লাইম লাইতে উঠে এসেছে। ঊঠে এসেছে কিভাবে সেনাবাহিনির এক হর্তা কর্তা তার বউয়ের অর্থ এবং স্বররণ চোরাচালানের সময় কিভাবে ছাড়িয়ে নিয়ে এসেছিলান। এগুলো আগে আসে নি কেন?

আগে আসেনি কারণ, জেনারেল মইন যে দু বছর ধরে রাজত্ব করে গেলেন, যেভাবে রাজনীতিবিদদের চুরি দারি ধরলেন (এটা আমি সর্ম্থন করি, চোর ত ধরাই উচিত), ঠিক ততটাই তৎপর ছিলেন আর্মিদের একতা 'পরিচ্ছন্ন' ইমেজ রচনায়। এত ঘটা করে পলিটিশিয়ানদের চুরি দারি ধরা হল, তথচ, একতা আর্মির দুর্নীতি নিয়ে কোন মিডিয়ায় কখনো উচ্চবাচ্য করা হল না। দুদকের ঝানুমাথাওয়ালারা সব দুর্নীতির খোঁজ পেলেন - কেবল আর্মির দুর্নীতি ছাড়া। খুব কায়দা করে দুর্নীতির অভিযোগ সে সময় কেবল রাজনীতিবিদ এবং সিভিল জনগণের উপরেই চাপিয়ে দেয়া হ্য়েছে, আর সামরিক "জলপাই বাহিনী" রয়ে গেছে সমস্ত অভিযোগের উর্ধ্বে।একজন "জলপাই"কেও দুর্নীতির অভি্যোগে আভি্যুক্ত করা হয় নি। অথচ, ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, বাংলাদেশে এই জলপাই বাহিনীই সবচেয়ে বেশী দুর্নীতি করেছে, ক্ষমতা দখল করেছে, যত পদের লুচ্চামী-লোফারি করা সম্ভব করেছে, রক্তের হলি খেলায় মেতে উঠেছে। অথচ তারা রয়ে গেছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এই বিডিআর-এর যে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয়েছে - তা আজকের নয়। এর পেছনেও মঈন সরকারের হাত প্রবল। বিডিআরকে অপাংক্তেয় করে তাদের মাথায় ছড়ি ঘড়ানোর জন্য প্রতিটি লেভেলে আর্মিকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে, এমনকি জাতিসংঘেও বিডিআর এর অন্ত্ররভুক্তি বাতিল করা হয়েছে। আর টাকা-পয়সা আর বেতন বৈষম্য তো আছে। ক্ষোভের সৃষ্টি তো আর এমনি এমনি হয় না। কি বলেন?



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

এতে বিশ্লেষনের দীনতা প্রকাশ পায়।
একদম খাঁটি কথা।
পুরো কমেন্টে উত্তম জাঝা!
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

আলমগীর এর ছবি

চলুক, অভিজিতের খবর আছে ।

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

বিন লাদেনকে স্ট্যালিন বানানো সংক্রান্ত মাজহারিয় ছিটগ্রস্ততা নিয়ে অভিজিতের সরাসরি মন্তব্য দুর্দান্ত লাগলো।
নাহ, জগতে আমার মত ভাবে এরকম লোকের সংখ্যাই বেশি।
অভিজিৎ আরো একটু বেশি যোগ করে এই বিষয় সম্পর্কে আলাদা একটা বড় পোস্ট দিতে পারেন।
জয়তু অভিজিৎ।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

এই আলোচনায় লাদেন-মজহার কোথা থেকে এল বুঝতে পারলাম না। সরাসরি বললে সরাসরি উত্তর দিতে পারতাম।

বিস্তারিত পরে বলা যাবে। তার আগে জানতে চাই, আশেপাশে ঝোপ না পিটিয়ে এই ঘটনার একটা বিশ্লেষণ দিন। মিডিয়ায় যা এসেছে সেগুলোকে বাছবিচার না করে ঢেলে দিলেই কিন্তু বিশ্লেষণ হয় না। এখানে তাই অভিজিৎ আপনার বয়ানে প্রায় কিছুই পাওয়া গেল না। কেন এটা বিডিআর জওয়ানদের শ্রেণীগত দুরবস্থার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ নয়? এখানে দেশব্যাপী গরিব,নিম্নবিত্ত জনসাধারণের সমর্থন ও সহানুভূতি আসা কিসের ইঙ্গিত? কেন ঐ এলাকার তিনজন বেসামরিক গরিব লোক মারা গেলেও সেই মানুষরাই আবার বিডিআর জওয়ানদের পিঠ চাপড়ে দেয়, তাদের নিয়ে মিছিল করে?

এই মুহূর্তে আত্মসমর্পণকারী বিডিআর সদস্যদের অবস্থাটা কি জানা আছে আপনার? তাদের কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে? কেন বলা হচ্ছে তাদের বেশিরভাগই পলাতক? কেন মাত্র ২/৩ শ লোকের কথা স্বীকার করা হচ্ছে। সারাদেশের বিডিআর ক্যাম্পের বিদ্রোহীদের কী অবস্থায় রাখা হয়েছে? সরকারের কোন আচরণ তার স্বাধীন আর কোনটা সামরিক বাহিনীর চাপে পড়ে, জানেন কি কিছু? এসবের উত্তরের ভিত্তিতে আমি আমার মত পাল্টানোর দরকার হলে পাল্টাতে রাজি আছি। তার আগে তো আপনাকে আপনার বিশ্লেষণ নিয়ে নিশ্চিত হতে হবে, এবং অন্যদের কাছেও তা পরিষ্কার করতে হবে, তাই না?
ধন্যবাদ আপনাকে।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

অভিজিৎ এর ছবি

পাঠক হিসেবে আমি আমার ক্ষুদ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছি। কিন্তু তার বদলে আপনার কাছ থেকে যে উষ্মা দেখছি তাতে আসলে আমোদই অনুভব করলাম হাসি । পাঠকের সমালোচনা নিতে পারাটাও যে গুন হওয়া উচিৎ তা অনেক লেখকই ভুলে যান। না আমি যে আর্মির কোন সমর্থক নই তা শেষ দুটো প্যারা পড়লেই বুঝা যাবে। কিন্তু তা বলে 'শ্রেনী সংগ্রাম' 'শ্রেনী সংগ্রাম' করে সবকিছুকেই বৈধ্যতা দেওয়ার পক্ষপাতিও আমি নই।

আপনার লেখার একনিষ্ঠ পাঠক আমি। তাই মাঝে মধ্যে আমার মতামত জানাই। আপনার যদি আমার মন্তব্য থেকে ' কিছুই পাওয়া না যায়' কিংবা মনে করেন 'আশেপাশে ঝোপ' পিটাচ্ছি, তা হলে আমার আর কিছু বলার নেই। অনেকেরই যে সেরকম মনে হয়নি তা আমার উপরের মন্তব্যের পর অন্য অনেকের প্রতিক্রিয়া থেকে নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন। আর তা ছাড়া - 'সুন্দর লিখেছেন', 'দারুন লিখেছেন', 'আগুন লেখা' এ ধরনের মন্তব্য তো আপনি পানই সবসময় তাই না? আমি না হয় এক্ষেত্রে 'ডেভিস এডভোকেট'ই হলাম। ছোটবেলায় প্রেছিলাম - স্তাবক চ্যালার থেকে নাকি সমালোচনাকারি শত্রু উত্তম শয়তানী হাসি

মন ভাল করুন এবারে।



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

আপনার এ ধরনের প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে আমি পরিচিত। বিনয়ের সঙ্গে আবারো বলি আমি কিছু প্রশ্ন করেছিলাম। তার উত্তর না করে আপনি ভ্যালু জাজমেন্টে গেছেন। আমার কাজ বিশ্লেষণ মূল্যায়ন নয়।
আমাকে মাফ করবেন, আপনি আপত্তিকর ভঙ্গিতে এগচ্ছেন। 'উষ্মা' শব্দের অহেতুক ব্যবহার থেকে শুরু করে,

'সুন্দর লিখেছেন', 'দারুন লিখেছেন', 'আগুন লেখা' এ ধরনের মন্তব্য তো আপনি পানই সবসময় তাই না?
জাতীয় মনোভঙ্গিও প্রকাশ করে ফেলেছেন। অথচ ভাষা ও বিশেষণ থেকে আমিই কিন্তু আক্রান্ত বোধ করতে পারতাম। বলতে পারতাম, ''ভায়েরা আমার, আমি একা, আমাকে দলবেধে মারবেন না।''

ফলত আপাতত আপনার সঙ্গে আলোচনা এড়িয়ে যাওয়াই শ্রেয় মনে করছি। আমার বক্তব্য আমি স্বতন্ত্রভাবেই বলবো। বলে রাখি, সবকথা প্রকাশ্য করবার পরিস্থিতি দেশে নাই। এখানে বাস করে বাঘের দাঁত খিলাল করার দুঃসাহসও আমার নাই।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

ফারুক ভাই,
বিডিআর জওয়ানদের কপালে কি ঘটবে এই ব্যাপারটা কিভাবে যেন পর্দার আড়ালে চলে যাচ্ছে ... পাবলিক ইন্টারেস্ট এখন বিডিআর জওয়ানদের বিচার কিভাবে করা হবে শুধু তা নিয়ে

আমার ভয়টা তুলে ধরি, অন্য জায়গায়ও কমেন্ট করেছি, সেটাই তুলে ধরছি:

আরিফ জেবতিকের এই পোস্টে (http://amarblog.com/arifjebtik/41933) বলা হচ্ছে জাপা'র কোন এক এমপি পিলখানা ঘুরে এসে বলেছেন সাকুল্যে দু'শর মতো বিডিআর সদস্য সেখানে আছে, বাকীরা পালিয়ে গেছে ... আমার যে ভয়টা, ঐ পোস্টেও লিখছি, এখানেও লিখি

সরকার গন্ডগোল বাঁধতে না দেয়াটা বেশ ভালো সামাল দিলেও এখন অনেক কিছু অগোছালো মনে হচ্ছে

যেমন, কাল সারাদিন তো অনেক গুজব শোনা গেছে … যেমন শোনা গেছিলো পিলখানার ভেতরে শুধু লাশ আর লাশ … ধারনা করা হয়েছিলো এদের অধিকাংশ বিডিআর সদস্যদের লাশ … আর্মির কর্মকর্তা যারা বেঁচে এসেছেন তাদেরও কেউ কেউ বলেছেন যে লাশের উপর দিয়ে আসতে হয়েছে

অথচ আজ বিকেলে এখন পেপারের খবরে বলছে তিনটি গণকবরে ৪৫ টি লাশ পাওয়া গেছে … "পিলখানায় লাশের পর লাশ" বলে যেই খবরগুলো কাল শোনা গেছে বা সারভাইভারদের বক্তব্যে এসেছে — সেই লাশগুলো কোথায় এই প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে।

কাল রাতে পিলখানায় কি ঘটেছে তার কোন খবর নেই …

যতটুকু জানি পিলখানার যাবতীয় গেটগুলোর আশপাশে অন্ততঃ আর্মি অবস্থান নিয়েছে ২৫ তারিখ থেকেই … তাহলে এই ১০-১৫ হাজার বিডিআর সদস্যের মধ্যে মাত্র কয়েকশ ভেতরে থাকলো, আর বাকীরা পালিয়ে গেলো বললে, এরকম ম্যাসিভ মুভমেন্ট তো কারো না কারো চোখে পড়ার কথা

আসলে এই ১০-১৫ হাজার বিডিআর সদস্যরা কোথায়?

একটা খবরে বলছে ধরা পড়া বিডিআর সদস্য ৯৪ জনকে মিরপুর স্টেডিয়ামে আর ৬০ জনকে সাভারে রাখা হয়েছে
আরেকজনের ভাষ্যমতে (ব্লগে যেহেতু গুজবও হতে পারে): তিন ট্রাক আর্মির গাড়ীতে চোখবাঁধা জওয়ানদের নিয়ে যেতে দেখা গেছে … তিন গাড়ীতে একশজনের বেশী থাকার কথা না … বাকী কয়েকশ ভেতরে আছে ধরলেও প্রায় ১০ হাজারের উপর লোক দেয়াল টপকে পালিয়ে যাবার কথা ... এত লোক পালিয়ে গেল, আর কেউ টেরও পেলোনা!!!

এটার সত্যতা খতিয়ে দেখা দরকার।

আমার মতে পিলখানায় সেদিন বিডিআর সদস্য কারা কারা রিপোর্ট করেছে (যেহেতু সামরিক ব্যাপার, সেহেতু সম্মেলনে অংশ নেয়া সব বিডিআর সদস্যদেরই লিস্ট থাকার কথা) সেই লিস্ট জোগাড় করে, এদের সত্যিকারের খোঁজ নেয়া জরূরী ...আমি আর্মিকে একদম সন্দেহের ঊর্ধ্বে রাখতে পারছিনা

আরো কিছু পয়েন্ট আছে:

এখন জানা যাচ্ছে যে আর্মি অফিসারদের ২৫ তারিখ প্রথম প্রহরেই মেরে ফেলা হয়েছে ... অথচ ২৫ তারিখ বিকেলে গোলাগুলি শান্ত হলেও ২৬ তারিখ সারাদিনই গোলাগুলী চলেছে ... এই গুলিগুলো করে কাদের মারা হয়েছে?
একটা সন্দেহ এসেছে যে আর্মির কমান্ডোরাই বিডিআরের পোষাকে পিলখানায় ঢুকে প্রচুর বিডিআর হত্যা করেছে ...

এখানে সন্দেহগুলো আসার কারণ, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর পুলিশ ঢুকটে দেয়া হয়েছে ... যে সেনাবাহিনীকে ঢোকাবেননা বলে কথা দিয়েছিলেন সাহারা খাতুন সেই সেনাবাহিনীও আজ সকাল থেকে ঢুকছে ... সাংবাদিকদের ঢুকতে দেয়া হচ্ছে কি?

আরেকজন ব্লগার এই সন্দেহ করছেন যে পিলখানার ভেতরে ২শজনের মতো বিডিআর সদস্য আছে বলে জনৈক এমপি যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটা ইচ্ছাকৃত ... একটা গুজব ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে যে বিডিআররা সব পালিয়ে গেছে ... আসলে এদের গণহারে আটক করে রাখা আছে ....

********************************************

বুঝতে পারছি তথ্যের অভাবে সবই লোকের উর্বর মস্তিষ্কপ্রসূত চিন্তা, টাও কিছু চিন্তার খোরাক আছে বলে শেয়ার করলাম

আরো কিছু প্রশ্ন জমা হলো:
১। কাল সেনাবাহিনীকে পিলখানায় ঢুকতে দেয়া হয়নি, আজ দেয়া হলো কেন?
২। আজ যখন সেনা, পুলিশ, রেডক্রস এদের ঢুকতে দেয়া হচ্ছে, মিডিয়াকে আটকানো হচ্ছে কেন?
৩। বিডিআর যুবকদের বিচার কোন আদালতে হবে সেটা নিয়ে ঘোষনায় গড়িমসি চলছে কেন?
৪। সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পিলখানায় যাবার পরপরই সেনাপ্রধান পিলখানায় গেছেন, আবার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ দৃশ্যপটে নেই, নানক আক্রান্ত হয়েছেন শুনলাম (গুজব হতে পারে) — স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে কি ইচ্ছে করে সবকিছু থেকে দূরে রাখা হয়েছে?
৫।গত দুদিনের ফায়ারিংয়ে কি শুধু সেনাসদস্যরাই মারা গেছেন? বিডিআর সদস্যরাও তো মারা গেছে বলে শুনেছি। এদের কোন খবর আসছেনা কেন?
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

পলাশ দত্ত এর ছবি

দৈনিক পত্রিকা প্রথম আলোর ২৬ তারিখের প্রতিবেদনে লেখা হয়েছিলো বিদ্রোহের সময় তিন থেকে চার হাজার জওয়ান ভেতরে ছিলো।
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

আমারো প্রশ্ন: আসলে এই ১০-১৫ হাজার বিডিআর সদস্যরা কোথায়?

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

এটা আমারও প্রশ্ন ।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।