ইতিহাসের স্বপ্নভঙ্গ ও ভারতের বাম জমানার নয়া তত্ত্ব

গৌতম এর ছবি
লিখেছেন গৌতম (তারিখ: মঙ্গল, ০৮/০১/২০০৮ - ১০:১৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

‘সেদিন সুনীলদার, মানে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সাথে রাস্তায় হঠাৎ করেই দেখা। আমাকে দেখেই তিনি আমার হাতদুটো ক্যাঁক করে ধরলেন। বললেন- তোকে আজ আর ছাড়ছি না। চল, বাসায় চল। একা একা থাকিস। কী খাস, না খাস ভালো জানি না। তুই আজকে বাসায় খেয়ে তারপর যাবি। আমি প্রথমে যেতে চাই নি। এ কাজ-ও কাজের বাহানা দেখালাম। কিন্তু সুনীলদা নিয়ে যাবেনই। ফলে জোরাজুরি করেও লাভ হলো না। দুজন কথা বলতে বলতে সুনীলদার বাসায় চলে গেলাম।

স্বাতী বৌদি অনেককিছুর আয়োজন করিয়েছিলেন। সুনীলদা আর বৌদির সাথে কথা বলতে বলতে অনেককিছুই খেলাম। ভাতটাত খাওয়ার পর পান খেলাম, পানি খেলাম, কোমল-কঠোর পানীয়ও খেলাম। ততোক্ষণে রাত ১১টা বেজে গেছে। সুনীলদাকে বললাম- এবার যে দাদা উঠতে হয়!

আসার সময় সুনীলদা হঠাৎ করেই আমাকে বললেন, দেখ গৌতম, তোর সাথে অনেকদিনের পরিচয়। তোকে আমি কখনও কিছু দিই নি। তুই আজ প্রথম আমার বাসায় আসলি। তোকে একটা কিছু না দিলে আমার ভালো লাগছে না। কী দিই বলতো?

আমি বললাম, দাদা, আপনার হাতের ওই কলমটি আমাকে দিয়ে দিন।

সুনীলদা কিছুক্ষণ ভাবলেন। বললেন, না। তোকে আরেকটি জিনিস দিবো। আজকেই এই কলমটি দিয়ে নতুন একটি বই লিখে শেষ করেছি। বইটির নাম দিয়েছি ‘ইতিহাসের স্বপ্নভঙ্গ’। বইটি তোর নামে উৎসর্গ করবো।‘

যাদের কাছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘ইতিহাসের স্বপ্নভঙ্গ’ বইটি আছে, তারা পাতা উল্টিয়ে দেখতে পারেন বইটি তিনি উৎসর্গ করেছেন গৌতম রায়-কে (এবং এই গৌতম রায় কিন্তু আমি না, উনি পশ্চিমবঙ্গের একজন বিখ্যাত লেখক)।

আমার খুব প্রিয় কিছু বন্ধু আছে। কখনো কোনো বই ভালো লাগলে তাদেরকে জোর করে পড়াই। সমস্যা হলো, তাদের কেউ কেউ বই পড়তে খুব আগ্রহী না, কেবল আমার জোরাজুরির কারণে মাঝেমাঝে পড়ে। ‘ইতিহাসের স্বপ্নভঙ্গ’ নাম দেখে তারা ভেবেছে- এটি নির্ঘাৎ কোনে ইতিহাস-বিষয়ক প্রবন্ধের বই হবে, যে কারণে তাদের আগ্রহ দ্রুতই রূপ নিয়েছে অনাগ্রহের দিকে। ফলে আগ্রহ বাড়ানোর জন্য তাদের কয়েকজনের কাছে আমি এই চাপাটি মেরেছি। প্রায় সবাই বলেছে- এমনিতে পড়তাম না। তোর এই চাপার কারণে বইটি পড়ছি। কেবল একজন বলেছিলো- সত্যি, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সাথে তোর পরিচয় আছে? তুই কলকাতা গিয়েছিলি কবে?

গত ক’দিন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, জ্যোতি বসু ও প্রকাশ কারাতের বক্তব্য শুনে এই ঘটনাটির কথা মনে পড়ে গেলো। হঠাৎ করেই মনে হলো, প্রচণ্ড এক দ্বিধা, সংশয় আর অনিশ্চয়তার মধ্যে বাস করছি আমরা- বাস্তবে তো বটেই, তাত্ত্বিকভাবেও।


মন্তব্য

নিঘাত তিথি এর ছবি

অ্যাঁ
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

হয়তো আমারই বোঝার ভুল। ভারত/পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির খবর অল্পবিস্তর রাখি। তবু ঠিক স্পষ্ট হলো না। লেখায় আরেকটু বিস্তার আনা যায় না?

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

দিগন্ত এর ছবি

লেখাটা হঠাত করে শেষ হয়ে গেল না?


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

গৌতম এর ছবি

আসলে তাৎক্ষণিক এক আবেগ থেকে এটি লেখা। ফলে প্ল্যান ছাড়া যেমন শুরু করেছিলাম, তেমনি শেষ হলো। সিপিএম নেতৃবৃন্দ সমাজতান্ত্রিক আবহের মধ্যে শিল্পায়নের বদলে পুঁজিবাদে ব্যবস্থায় ঢোকার ফতোয়া দিচ্ছেন। সেটি ঠিক হচ্ছে কি-না, বুঝতে পারছি না।

..................................................
ছিদ্র খুঁজে বেড়াই, বন্ধ করার আশায়

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

গৌতম এর ছবি

ভারত/পশ্চিবঙ্গের বামপন্থী রাজনীতিকরা এখন সমাজতন্ত্রের কর্মকৌশল ছেড়ে পুঁজিবাদের কর্মকৌশলে প্রবেশ করার জন্য উন্মুক্ত বক্তব্য দিচ্ছেন। তারা মনে করছেন, সমাজতন্ত্রের কিছু মৌলিক বিষয় বাদ দিয়ে পুঁজিবাদের বিশ্বায়ন ও শিল্পায়নকে প্রাধান্য দেওয়া দরকার। এবং তারা এগুচ্ছেন সে লক্ষ্যেই। সুনীলের 'ইতিহাসের স্বপ্নভঙ্গ' বইতে কীভাবে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো পুঁজিবাদের দিকে গিয়েছে এবং সমাজতন্ত্রের দুর্বলতা (সাধারণ মানুষের ভাষায়) মানুষকে কীভাবে পুঁজিবাদে আকৃষ্ট করেছে, সেগুলো উঠে এসেছে। বামপন্থী রাজনীতিকরা তাদের মূল আদর্শকে ঠেলে এখন যেভাবে আগাতে চাইছে, তাতে ওই কাহিনীরই হয়তো পুনরাবৃত্তিই লক্ষ করা যাবে, ভিন্ন রূপে।

..................................................
ছিদ্র খুঁজে বেড়াই, বন্ধ করার আশায়

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

দিগন্ত এর ছবি

আপনি এ নিয়ে বিস্তারিত লিখুন না পরের পর্বে। টপিকটা খুব ভাল, আমার নিজেরও এ নিয়ে খুব উতসাহ আছে।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

গৌতম এর ছবি

ভারতের বামরাজনীতি কোন দিকে এগুচ্ছে, সেটার দিকে খেয়াল রাখছি আপাতত। যদি মনে হয়, তারা তাদের বর্তমান অবস্থান থেকে আমূল পরিবর্তনের দিকে যাবে, তাহলে এ ব্যাপারে কিছু লেখার আশা রাখি।

..................................................
ছিদ্র খুঁজে বেড়াই, বন্ধ করার আশায়

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।