বন্যাযাত্রা ১

গৌতম এর ছবি
লিখেছেন গৌতম (তারিখ: সোম, ৩০/০৭/২০১২ - ১১:১০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১. কুড়িগ্রামে ছিলাম বেশ ক’দিন। গত মাসের শেষ দিকে হঠাৎ করে কুড়িগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় আকস্মিক বন্যা শুরু হয়। মাঝখানে কয়েকটা দিন বিরতি দিয়ে এ মাসের মাঝামাঝি আবার নতুন করে বন্যার প্রকোপ বাড়ে। যে কাজে গিয়েছিলাম সেটি বন্যা-পরবর্তী-পুনর্বাসন বা ত্রাণ-সম্পর্কিত কাজ না হলেও আমার কাজের সাথে বন্যার একটি সরাসরি সম্পর্ক আছে। ফলে বন্যাপ্রকোপ এলাকাগুলোতে প্রচুর ঘুরাঘুরি করতে হচ্ছে। এর আগে রাজশাহী ও চাঁপাই নবাবগঞ্জের চরে কাজের অভিজ্ঞতা আছে। ওই এলাকাগুলোতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাজকর্ম কীভাবে চলে তা দেখতে গিয়েছিলাম একবার। ভোর ছয়টায় রওনা দিয়ে মাইলের পর মাইল হেঁটে যখন বিদ্যালয়ে পৌঁছতাম, অধিকাংশ দিনই গিয়ে দেখতাম বিদ্যালয়ের কাজকর্ম শেষ হয়ে গেছে। এভাবে দিনে ২৫ মাইলের বেশি হাঁটার অভিজ্ঞতা আছে। কিন্তু এখানকার অভিজ্ঞতা একেবারেই বিপরীত।

২. কুড়িগ্রাম জেলার কুড়িগ্রাম সদর, চিলমারী, রাজিবপুর, উলিপুর এবং নাগেশ্বরী- এই পাঁচটি এলাকা এবারে আকস্মিক বন্যায় বেশ ভালো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রৌমারীও সম্ভবত হয়েছে কিন্তু কুড়িগ্রাম থেকে রৌমারীর খোঁজখবর নেয়াটা বেশ ঝক্কিঝামেলার ব্যাপার, যতোটা সহজ জামালপুর বা শেরপুর থেকে নেয়া। তাছাড়া আমাদের সময় এবং লোকবলও সেটা পারমিট করে না। ফলে আমাদের কাজ আপাতত এই কয়টি জায়গাতেই সীমাবদ্ধ রেখেছিলাম। প্রথম দিন গিয়েছিলাম কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছি এবং যাত্রাপুর ইউনিয়নে।

৩. যাত্রাপুর ইউনিয়নের যাত্রাপুর বাজারের ঘাট থেকে নৌকা ভাড়া করার আগে কিছুক্ষণ পাটের দরদাম করলাম। পাটের মান কীভাবে নির্ধারিত হয় সেটা জানা নেই কিন্তু জানা গেল যে, কুড়িগ্রামের পাটের মান আর ময়মনসিংহ অঞ্চলের পাটের মান বাংলাদেশের সেরা। একজন ব্যবসায়ী দুই-তিন ধরনের পাট হাতে নিয়ে দেখালেন কোন কোন জাতের পাট সবচেয়ে ভালো। মনে হলো, পাটের তন্তু এবং রং দেখে মান বিচার করা হয়। তন্তু দেখে পাটের জাত বিচার করার বিষয়টা আমার মাথার উপর দিয়ে গেলেও মনে হলো যে পাট দেখতে যতো সাদা, সেটি ততো ভালো পাট। তাছাড়া মূল পাট গাছ কতোটা বড় বা ছোট হয় এবং কোন মাটিতে পাট উৎপন্ন হয়, তার ওপরও নাকি পাটের মান নির্ভর করে।


এই পাটকাঠিগুলো সাদা ধবধবে

৪. যাত্রাপুর বাজার ঘাট থেকে প্রায় ঘণ্টাখানিক পথ ট্রলারে পাড়ি দিয়ে পৌঁছলাম ঝুমকার চর এলাকায়। এই পথটুকু যেতে আমাদের দুটো নদী পেরুতে হয়েছে- ধরলা এবং দুধকুমার। পুরো রাস্তা শৌখিনভাবে ট্রলারের ছাদে বসে গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে যখন ঝুমকার চরে পৌঁছলাম, তখন প্রথম অনুভূতিটাই হলো এরকম যে, কেউ এখানে আমাদের মেরে ফেলে লাশ বড় বড় ঝোপে ফেলে গেলেও দুনিয়ার আর কেউ টের পাবে না। এই অনুভূতি হওয়ার কারণ হচ্ছে- এখানে আসার আগে যাত্রাপুর বাজারে কয়েকজন সাবধান করে দিয়েছিলেন, এবং বিশেষত তারা উপদেশ দিয়েছিলেন পরিচিত মাঝি নেওয়ার জন্য। আমরা নিজেরাই যেখানে বিদেশি, সেখানে পরিচিত কোথায় পাবো? তারপরও স্থানীয় এনজিওর একজনের সহায়তায় যার ট্রলারে উঠলাম তিনি দেখতে ডাকাতের মতো না হলেও ঝুমকার চরের একটু আগে ঘন অর্ধডুবন্ত ঝোপের কাছাকাছি গিয়ে ট্রলার নষ্ট হওয়াতে কিছুটা সন্দেহ হওয়াতে চমকিতে ওই সাবধানবাণীগুলোই কানে বাজে আগে।

৫. ঝুমকার চরে যাদের খোঁজে গিয়েছিলাম, বাড়িতে তাদের কাউকেই পেলাম না, কিন্তু পরিবারগুলোর অবস্থা দেখে মন খারাপ হয়ে গেল। প্রতিটা বাড়িই মোটামুটি হাঁটু-সমান পানিতে ডুবে আছে, এর মধ্যেই চলছে থাকা-খাওয়া-জীবন-জীবিকা। বাড়ির কারো সাথে কথা বলতে চাইলে একজন বেরিয়ে এলেন, তিনি প্রথমে নৌকা সেঁচে নৌকাটাকে হালকা করে বেরুলেন। পরে তার পিছন পিছন আরো কয়েকজন। সবারই কোমরের নিচ পর্যন্ত ভেজা। বললেন, এই জীবন মেনে নেয়া ছাড়া আর উপায় কী?


এদের জীবন এমনি, এরকম পানিতে নিমজ্জিত

৬. পাশের স্কুলঘরটি বন্ধ, বেশ ক’দিন ধরেই। ছবি দেখেই তো বুঝতে পারছেন এই স্কুল বন্ধ থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই!


এই স্কুল কবে আবার চালু হয়, কে জানে!

৭. বন্যায় সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকে শিশুরা। চরের এলাকার মানুষের খাবারই জোটে না, নৌকা কিনবে কোত্থেকে? একজন বললেন, অনেকে অনেক ধরনের ত্রাণ দেয়। অনেক ত্রাণই আমাদের কোনো কাজে আসে না। যার ঘরে চাল আছে, সে চাল দিয়ে কী করবে? যার ঘর ডুবে নি, কিন্তু যোগাযোগ বন্ধ, তাকে টিন দিয়ে কী হবে? চরের মানুষদের জরুরি প্রয়োজনে নৌকা দরকার, কিন্তু কেউ তো আর নৌকা দেয় না ত্রাণ হিসেবে! শিশুদেরও তাই ভরসা কলার ভেলা, শুধু শিশুরা না, এই কলার ভেলাগুলো ব্যবহার করে বড়রাও- এ বাড়ি থেকে ও বাড়ি যেতে। নিকটবর্তী যাত্রাপুর বাজারে যেতে দরকার বড় নৌকা। সেটা তৈরি করা বা কেনার সামর্থ্য তাদের নেই।


কী নিপুণ দক্ষতা!

৮. দুরন্তপনা কি কম! এই একটুখানি জায়গা পার হলেই পড়বে বিশাল ব্রহ্মপুত্র। কিন্তু এই শিশুদের দেখলে কি মনে হবে তারা ভয় পাচ্ছে? আমাদের নৌকাটি এর প্রায় দ্বিগুণ, তাতেই অনেকে ভয়ে অস্থির! শিশুরাই সম্ভবত ভয়কে উপেক্ষা করতে পারে, কিছুটা অবহেলাও করে।


ধরলা থেকে যাচ্ছে ব্রহ্মপুত্রে। কী সাহস!

৯. যাত্রাপুর বাজারের ঘাটে ফিরে মাছের দামদর করলাম। অসম্ভব দাম! পাঙ্গাস মাছ ১৪০ টাকা কেজি, মাঝারি আকারের চিংড়ি ৫২০ টাকা। জিজ্ঞাসা করলাম, এতো দাম দিয়ে কেউ কিনে? বিরক্ত মাছবিক্রেতা বললেন (কুড়িগ্রামের ভাষায়), বাহে, সবাই আপনার মতো ফকির না! রোজার দিন বলে বাজারের প্রায় সব খাবার দোকান বন্ধ। অনেক খুঁজে একটি রেস্টুরেন্ট পেলাম, এক প্লেট ভাতের সাথে টেংরা মাছের তরকারি আর দুই পিস বড় রুই মাছ খেয়ে বিল দিলাম ৫২ টাকা। তার মানেটা পরিষ্কার, ওই পাঙ্গাস আর চিংড়ি বিক্রেতারা আমাদেরকে ‘বিদেশি’ পেয়ে দাম হাঁকিয়েছে ইচ্ছেমতো, আর না কেনাতে ফকির বলতেও ভুলে নি।

১০. পাঁচগাছি ইউনিয়নে ঘুরে রুমে ফিরতে ফিরতে রাত আটটা। আমরা আছি কুড়িগ্রাম শহরে টেরে ডেস হোমস ও আরডিআরএস-এর গেস্ট রুম আর হোটেল অর্ণব-এ; ভাগাভাগি করে। টেরে ডেস হোমসটা পছন্দ হয়েছে। এর আগের নাম ছিল ছিন্নমুকুল। টিনের গেস্ট রুম, সামনে ছোট্ট একটা বসার জায়গা, প্রচুর গাছ, আছে একটা ছোট মাঠও। সেদিন রাতে খুব বৃষ্টি হলো। এসি রুমে বসে টিনের চালে বৃষ্টি পড়ার শব্দ, ওপাশে বাথরুমের জানালা দিয়ে ব্যাঙের ডাক ভেসে আসছে! ঘরের বাতি বন্ধ করে চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ টিনের চালে পানি পড়ার শব্দ শুনলাম। এই বৃষ্টিই চরের মানুষের কাছে বয়ে আনছে দুর্গতি, আমার কাছে অপূর্ব!

১১. কুড়িগ্রাম শহরের সবচেয়ে ভালো রেস্টুরেন্টের নাম হোটেল রাঁধুনি। আগের রাতে ছোট মাছ দিয়ে ভাত খাওয়াতে পরের রাতে গিয়ে দেখি বেয়ারা মালিককে লুকিয়ে আমাদের সবার জন্য ছোট মাছ রেখে দিয়েছে। এটা কি বড় বখশিশের ফসল? নাকি ছোট মাছের প্রতি আমাদের আগ্রহটাকে গুরুত্ব দেওয়া? কী আর করা! দেশি মুরগি বাদ দিয়ে সবাই ভাত খেলাম ছোট মাছ দিয়ে।

১২. ২০০৫ সালে ব্র্যাকে যোগদানের পর প্রথম আমাকে পাঠানো হলো কুড়িগ্রামের ফুলবাড়িতে। একা মানুষ. ভাবলাম যেতে হয়তো ঘণ্টা ছয়েক লাগতে পারে। ঢাকা থেকে বেরুলাম সেভাবেই। কুড়িগ্রামে পৌঁছতে কতোক্ষণ লাগতে পারে সেই ধারণা ছিল না; কিন্তু কুড়িগ্রামে পৌঁছতে পৌঁছতে হয়ে গেল সন্ধ্যা। একজনের কাছ থেকে পরামর্শ পেলাম, কুড়িগ্রাম থেকে নাগেশ্বরী যেতে হবে প্রথমে, তারপর সেখান থেকে ফুলবাড়ি। সেই নাগেশ্বরীতে যেতে যেতে পুরনো দিনের কথাগুলো ভাবছিলাম, নাগেশ্বরীর পিছন দিকে একটা ছোট্ট নদীতে চড়েছিলাম সেবার। এইটুকুন নদীতে তো বন্যা হওয়ার কথা না!


মোবাইলে প্যানারোমার ব্যর্থ চেষ্টা!

(প্রথম ও শেষ ছবিটি বাদে বাকি ছবিগুলো তোলা হয়েছে সহকর্মী জুয়েল ভাইয়ের ক্যামেরায়)


মন্তব্য

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

অনেকে অনেক ধরনের ত্রাণ দেয়। অনেক ত্রাণই আমাদের কোনো কাজে আসে না।

খুবই সত্যি একটা কথা। বাংলাদেশে ফুড এবং নন ফুড রিলিফের কোন স্টান্ডার্ডাইজেশন নেই। যার যেমন ইচ্ছে সে সেভাবে দিচ্ছে। স্ফিয়ার স্টান্ডার্ড নিয়ে কারো কোনও মাথাব্যাথা নেই। বছর তিনেক আগে ইউএনডিপি একটা কাজ করিয়েছে রিলিফ প্যাকেজের স্টান্ডার্ডাইজেশনের উপরে। আমার পরিচিত কিছু লোক কাজটি করেছে। কঠোর পরিশ্রম করে কাজটি করা হয়েছে এবং বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষজনের সাথে আলাপ করে। কিন্তু প্রয়োজনের সময় এই গবেষণাটির কতোটুকু বাস্তব প্রয়োগ হবে তা নিয়ে সন্দেহ থেকে যায়। ইউএনএর বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের বিশাল গ্যাপ। রিলিফ বিষয়ক ক্লাস্টার লিড হচ্ছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী (ডাব্লিউএফপি) কিন্তু গবেষণাটি করিয়েছে ইউএনডিপি। এদের কর্মীরা ঠিকঠাকমতো একে অপরেকেই চেনেনা।

আর বাস্তবতা হচ্ছে এই সেক্টরে আমাদের মতো মাঠের মানুষদের কোনও দাম নেই। দাম আছে তাদের যারা ছয়মাস ধরে একটা ছয় পাতার পলিসি বানায়, তার পরের ছয়মাস ধরে সেটাকে আবার রিভিউ করে, তার পরের ছয়মাস ধরে আবার সেই রিভিউ ফিডব্যাক ইনকর্পোরেট করে, তার পরের ছয়মাস আবার চেঞ্জড কনটেক্সটের সাথে সেই পলিসিকে ফিট করাতে কাজ করে, তার পরের ছয়মাস সেটা আবার রিভিউতে যায়, ইত‌্যাদি। এরাই সবথেকে দামী মানুষ।

আপনার অভিজ্ঞতা জেনে ভালো লাগলো। ছবিগুলোও দারুন হয়েছে।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

গৌতম এর ছবি

আপনার দ্বিতীয় প্যারার সাথে দ্বিমতের কোনো অবকাশ নেই। মাঠপর্যায়ে যারা কাজ করেন, তাদের অভিজ্ঞতার সাথে নীতিনির্ধারকদের একটা সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন সবাই, অনেক ক্ষেত্রে সেই কাজটি শুরুও হয়েছে। কিন্তু সার্বিক বিচারে মাঠপর্যায়ের কর্মীদের যতোটা গুরুত্ব দেয়ার কথা, ততোটা গুরুত্ব এখনো দেয়া হচ্ছে না।

আর সবচেয়ে বড় কথা, নীতিনির্ধারণী বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলার চাইতে তাৎক্ষণিক পর্যায়ে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেটি অনেক প্রতিষ্ঠানই করতে চায় না।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

উত্তম জাঝা! অসাধারণ একটা কাজের (লেখা ও ছবি) ধন্যবাদ!

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

গৌতম এর ছবি

পড়ার জন্য আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

নীলকান্ত এর ছবি

জীবন অনেক কঠিন মন খারাপ


অলস সময়

গৌতম এর ছবি

সেটা কতোটা কঠিন, ওখানে না গেলে বুঝা খুবই কঠিন।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

পথিক পরাণ এর ছবি

চরের মানুষরা বেশ ডাকাবুকো হয়। ওদের বাচ্চারাও খুব ছোটবেলা থেকে প্রকৃতির সাথে সংগ্রাম করে টিকে থাকতে শেখে। ওরা পানিকে ভয় পায় না মোটেও।

লক্ষ্য করেছেন কি না জানি না, চর এলাকায় জন্মহার অন্যান্য এলাকা থেকে অনেক বেশি মনে হয়। এই অধিক সংখ্যক শিশুরা আবার প্রায় শিক্ষাহীন একটা পরিবেশে বড় হচ্ছে। চরে ভালো বিদ্যালয় আশা করা যায় না। বিদ্যালয় থাকলেও সেখানে শিক্ষকরা থাকতে চান না। এন জি ও স্কুলগুলোর অবস্থাও মনে হয় খুব আশাপ্রদ নয়।

গৌতম এর ছবি

সম্প্রতি সিএলপি সেখানে অনেক কাজ করছে। কিন্তু আমার প্রশ্নটা অন্য জায়গায়- অধিকাংশ চরে থাকার পরিবেশ নেই কিন্তু মানুষ সেখানে দিনের পর দিন থাকতে বাধ্য হচ্ছে। সুযোগ-সুবিধাহীন একটা জায়গায় দিনের পর দিন এই মানুষগুলোকে রেখে সেখানে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার কর্মযজ্ঞ কতোটা ফলপ্রসু?

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

সুমাদ্রী এর ছবি

সরকারের তরফ থেকে এই বানভাসি মানুষদের সাহায্যার্থে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না? ছোট ডিঙি ধরনের নৌকা বানানোর খরচ কি ঢেউটিন এর চেয়ে বেশী পড়ে। ভাল একটা লেখা লিখেছেন গৌতম দা।

অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।

গৌতম এর ছবি

এমনিতে তারা রিলিফ পাচ্ছে। কিন্তু সেটা হয়তো প্রয়োজনের তুলনায় কম। আবার অনেকসময় প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা ত্রাণ পাচ্ছে না। চেয়ারম্যান-মেম্বাররা ত্রাণের জিনিস আত্মসাৎ করছেন সেরকম খবরও পত্রিকায় এসেছে। পুরো প্রক্রিয়াটি যদি ঠিক না থাকে, তাহলে যতো ত্রাণই দেয়া হোক না কেন, প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা উপকৃত হবে না কখনোই।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ভাই, আপনার লেখাটা বড়ই তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল। আগ্রহ নিয়ে পড়ছি। আশা করি চালু রাখবেন।

গৌতম এর ছবি

ধন্যবাদ পিপিদা। কেন যেন এখন আর লেখা আসে না মন খারাপ! এটার আরেকটা পর্ব আসবে।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

অমি_বন্যা এর ছবি

খুব ভালো লিখেছেন। বন্যার্ত মানুষের যন্ত্রণার সাক্ষী কেবল ওই ভুক্তভোগী মানুষেরাই । আমাদের কোর্ট টাই পরা কর্তাদের গ্রাউনড নলেজ একেবারেই নেই আর তা বাড়ানোর আগ্রহও দেখা যায় না। খুব খারাপ লাগলো এদের এই দুর্দশা দেখে !
বেশ কয়েক বছর আগে সিরাজগঞ্জের বন্যা দেখার সুযোগ হয়েছিল। তখন দেখেছি ত্রানের টিন দিয়ে গ্রাম্য চেয়ারম্যান মাতবরেরা কি আলিশান টিনের চৌচালা বানিয়ে রেখেছেন। অথচ বানভাসি মানুষদের মাথা গোজার ঠাই নেই।
হাইরে দেশ ! কবে তুই আবার হবি!
লেখার জন্যে ধন্যবাদ গৌতম দা।

গৌতম এর ছবি

বন্যা আমাদের দেশের নিয়মিত দুর্যোগ। এই দুর্যোগের বিরুদ্ধে দাড়াতে হলে দরকার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা, শুধু বছর বছর ত্রাণ দিয়ে এর সমাধান হবে না।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

তারেক অণু এর ছবি
গৌতম এর ছবি

পপকর্ন নিয়া বইসা লাভ নাই, আমি তারেক অণু না। যা লিখি সব এক-দুইটা লেখাতেই শ্যাষ!

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

দেঁতো হাসি

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

বন্দনা এর ছবি

হুট করে শেষ হয়ে গেল মনে হল। লিখা পড়ে মনে পড়ে গেল ৮৮ এর বন্যার কথা । আমরা তখন নিচতলা বাসায় থাকি। পানি বাড়তে থাকলে বাবা দরজায় ইট দিয়ে বাধ দিতে লাগল, কিন্তু পানি ক্রমাগত বাড়তেই থাক্লো। বাবা আমাদের সবাইকে গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছিল সেবার। অনেক ছোট ছিলাম, কিন্তু সেই ভোগান্তির কথা অল্প হলে ও মনে আছে।জানিনা কবে আমাদের সেই সামর্থ্য হবে ভালোভাবে এইসব দুর্যোগ মোকাবেলা করার।

গৌতম এর ছবি

আরেকটা পর্ব দেয়ার ইচ্ছা আছে, তখন হয়তো আরো কিছু কথা বলা হবে।

সামর্থ্য হয়তো অনেক পরের ব্যাপার, কিন্তু মানুষের ন্যূনতম সুবিধা নিশ্চিত করার ইচ্ছা সরকারের বা কর্তৃপক্ষের আছে কিনা সন্দেহ!

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ইয়াসির এর ছবি

অঃটঃ আপনার শিক্ষাবিষয়ক আলোচনাগুলো পড়ে আপনার কর্মজীবন সম্বন্ধে জানবার আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। এই লেখা পড়ে সেটা আরেকটু বেড়েছে। আপনার পুরনো কোন পোস্টে কি এই কৌতুহল মেটাবার উপায় আছে?

গৌতম এর ছবি

মনে হয় নাই। কোনোদিন সামনাসামনি দেখা হলে আলোচনা করা যাবে। হাসি

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

৮ নাম্বারে যে ছবিটা, ওই বয়সী দুটো বাচ্চা ওইরকম নৌকায় করে বন্যার সময় আমাকে পার করে দিতো আমার সাইকেলসহ। হঠাৎ মনে হয়েছিলো, সুযোগ যখন, নৌকা চালানো শিখে ফেলি। বৈঠা নিয়ে দেখি পাঁচ মিনিটের বেশি বাওয়া দুরূহতম কাজ। কি ভারী! দিক কন্ট্রোল করাও কঠিন কাজ। অথচ ছোট ছোট দুটো ছেলে কি অনায়াস দক্ষতায় নৌকা চালিয়ে যাচ্ছিলো!
সময় এবং পারিপার্শ্বিকতা, বোধহয় ওদেরকে সব শিখিয়ে দেয়।

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

গৌতম এর ছবি

নৌকা চালানো খুব কঠিন না কিন্তু! কঠিন হলো প্রথমবারে বিষয়টা ধরতে পারা। আপনাকে একবার দেখিয়ে দিলে আপনিও অনায়াসে নৌকা চালাতে পারবেন। পুরোপুরি দক্ষতা আসতে হয়তো কয়েকটা দিন সময় দিতে হবে এ কাজে।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

কবে থেকে শেখাতে পারবেন? (ইনোসেন্ট লুক)

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

গৌতম এর ছবি

কনসালট্যান্সি ফি দিবেন কতো? (ইনোসেন্ট কুয়েশ্চেন)

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

বাহ!
এই না শুনি যে জনস্বার্থে ব্র্যাক!! চিন্তিত

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

গৌতম এর ছবি

ব্র্যাক তো সেই কবে ছাড়লাম! চিন্তিত

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

বছর চল্লিশ আগেকার স্কুলের একটা চেহারা খুঁজতে আমরা একটা মাইক্রো নিয়ে সিলেট, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার পুরোটা চষে ফেলছিলাম। এমন এমন জায়গায় গেছি, যেখানে মাইক্রো যায় না, ফোর হুইলার জিপ নিয়ে গেছি, যেখানে জিপ যায় না সেই দুর্গম জায়গায় হেঁটে গেছি
তবু এক সপ্তাহ খুঁজে একটা পুরনো স্কুল বিল্ডিং পাইনি!
সবখানেই পাশে একটা নতুন বিল্ডিং... একই আদলের... সারাদেশে।
বুঝলাম, শিক্ষার ব্যাপক উন্নয়ন হইছে হাসি

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

গৌতম এর ছবি

সেটাই স্বাভাবিক। এসব বিষয়ের উন্নতির জন্য বেশ কিছু প্রকল্প চলছে দেশে। বিশেষ করে সরকারি বিদ্যালয়গুলোর অবকাঠামোগত পরিবর্তন করা হচ্ছে জোরেশোরে- পিইডিপির আওতায়।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

অতিথি লেখক এর ছবি

সমন্বয় বহুল ব্যবহৃত একটি শব্দ কিন্তু এর ব্যবহার কোথায় ঠিকভাবে হচ্ছে সে আর এক জটিল প্রশ্ন.........................যাইহোক সবকিছুই দূর থেকে একরকম কাছে গেলে অন্যরকম.....................কলাগাছের ভেলা দেখে শৈশবের কথা মনে পড়ছে...................সময় অনেক দূরে চলে যায়, কখনও আমাদের সাথে নেয় কখনও একা করে পালায়.........

জুঁই মনি দাশ

গৌতম এর ছবি

সমন্বয় বিষয়টা খুব জটিল না, যদি সমন্বয়ের ইচ্ছেটা জোরদার থাকে।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

লেখাটার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আরও কিছু পড়বার অপেক্ষায়.....।

গৌতম এর ছবি

আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।