ছড়িয়ে দিচ্ছি ধ্বংস

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ১০/০৩/২০০৮ - ৫:৩৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আকাশে উড়ছে অনেকগুলো কাক। আর গুটিকয়েক চিল। কাকের দলেরা পিছু নেয়, চিলেরা হঠাৎ নেমে আসে। মনে হতে থাকে যেন দ্রুত নেমে আসছে মাটির বুকে। না তা হয়না। হতে নেই, চিলেদের স্বভাবে এভাবে তাড়া খেয়ে মাটিতে নামার নিয়ম নেই। আর কাকেদের ফিরে আসারও।

হঠাৎ একটা শব্দ । দ্রুত একটা বিমান চলে গেলো । বিমানের শব্দে বুঝে নিতে হয় পাশেই এয়ার বেইস। প্রতিনিয়ত নামছে আর উড়ছে সরু নাকের মেটালিক উড়ন্ত দানবগুলো। আর বাতাসের তীব্রতা বুঝিয়ে দেয় আমি দাড়িয়ে আছি কর্ণফুলীর মোহনায়।
কাকেরা আবার তেমন উড়ে নাকি ? চিলেরা পিছু নেয় ? কে কার পিছু নেয় কে’বা জানে। একটি চক্র ধরে যখন আমরা ঘুরতে থাকি আদতে কি জানি কে কার পেছনে? খেলা করে প্রতিনিয়ত। কখনো সম্মুখপানে, কখনো উড়ন্ত দৌড়। কখনো মনে হয় বিমানের তাড়া খেয়ে পালাচ্ছে দুটোই। চিল এবং কাক কিংবা যে কোন একটি। চিল এবং কাকের যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা কিংবা উড়ন্ত দৌড় প্রতিযোগিতা অনেকটা ম্রিয়মান মেটালিক দানবগুলোর কাছে।

মেটালিক দানবগুলো সম্পর্কে জানি আমরা সবাই কম-বেশি। নাম আর গতিতে ভিন্নতর হলেও কার্যক্ষমতায় পুরোপুরি ইউনিক হয়ে উঠছে এগুলো। সক্রিয়তায় সব দানব একে অপরের খুব কাছাকাছি; সমভাবাপন্ন। ধ্বংসেই তৃপ্তি এদের। আর এদের উড়ে যাওয়া মনে করিয়ে দেয় যুদ্ধ যুদ্ধ খেলার কথা।

যুদ্ধ ! যুদ্ধ মানেই তো লড়াই, বিরোধিতা আর ধ্বংস। আর এই যুদ্ধের প্রকরনে এমন এক গুণগত পরিবর্তন এসে গেছে যে এটাকে খেলা বলাটাই অধিক সমীচিন মনে হয় আমার কাছে। ধাতবযন্ত্রের খেলা। ধ্বংসের প্রতিযোগিতা ।
আজকালকার যুদ্ধে এতো বেশি স্বয়ংক্রিয়তা এসে গেছে যে আজকাল একেবারে যুদ্ধ বিমানের লুকোচুরি খেলা দেখি না। স্যাটেলাইট মিডিয়ার কল্যাণে পুরো যুদ্ধ চিত্রটাই চোখের সামনে জীবন্ত ধরা পড়ে। আর প্রাকৃতিক অবক্ষয়ের এগিয়ে যাওয়ায় আমাদের নগরজীবন এতটা প্রসারিত খুব একটা চোখে পড়ে না কাক-চিলের ফ্লাইং রান। ছোটবেলায় গ্রীষ্মের দুপুরে ছাদে উঠলে প্রায় চোখে পড়তো ফ্লাইংরান ।
শীতের প্রথমে কিংবা শেষে কখনো চোখে পড়তো এক ঝাঁক অতিথি পাখির ম্যারাথন যাত্রা। এখন তো ন্যাশনাল জিওগ্রাফী কিংবা ডিসকোভারি চ্যানেল একমাত্র ভরসা নিজের অস্তিত্বকে অনুভব করার; নষ্টালজিয়ায় ফিরে যাওয়ার।

যেখানে কাক আর চিলেদের নির্মল দৌড় ঝাঁপ আমাদের ছোটবেলার টুকরো টুকরো ক্ষণগুলো এক করে রাখতো তখন এই প্রজন্মের আমাদের শিশুরা ভাবতে থাকে মেটালিক দানবের যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা। অটোমেটিক গান হাতে রোবট কিংবা সমরবিদ কিংবা সাজানো ট্যাংকের বহরে পিসি গেইম নিমিশে ঢুকে যাচ্ছে মস্তিষ্কের কোষে কোষে।

স্যাটেলাইট মিডিয়ার কল্যাণে প্রাপ্ত জীবন্ত যুদ্ধচিত্রের কথা। কত সহজ হয়ে গেলো এই ধ্বংসকামনার রসদগুলো। আমরা কত সহজে চিবোচ্ছি হত্যা চিত্র এবং এর ভাবনাগুলো। সেকেন্ডে সেকেন্ডে লাইভ টেলিকাস্ট আর আমরা তিনবেলা হজম করছি রসালাপে।
ধ্বংসের ডেমোগুলো খুব সহজে রপ্ত করে নিচ্ছি আর ছড়িয়ে দিচ্ছি প্রজন্ম হতে প্রজন্ম।

-মাছরাঙ্গা : http://machranga.blogspot.com


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।