শন ইয়েট ও একজন -০৬

ইমরুল কায়েস এর ছবি
লিখেছেন ইমরুল কায়েস (তারিখ: রবি, ২০/০৪/২০০৮ - ৪:৩৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

(প্রথম পর্ব) (দ্বিতীয় পর্ব) (তৃতীয় পর্ব ) (চতুর্থ পর্ব)
( পর্ব ০৫)

আমি যে গবেষণাগারের কাজ করি সেটাকে অনেকটা চলমান গবেষণাগারও বলা যায়। কেননা আমাদের গ্রহের বিভিন্ন সার্কেলে অবস্থিত অপটিবল ক্যামেরায় ধারনকৃত দৃশ্য এখানে প্রদর্শিত হয় এবং সেই সাথে এখান থেকেই নিরাপত্তার প্রাথমিক ব্যবস্থাগুলো নেয়া হয়। এছাড়া ম্যাককো-১ ও ম্যাককো-২ এর কার্যক্রমগুলোও এখান থেকে পরিচালনা করা হয়। গবেষণাগারে ঢুকে আমি আমার ডেস্কের দিকে অগ্রসর হচ্ছি এমন সময় লক্ষ্য করলাম আমার সহকর্মী কফলিন মনোযোগ দিয়ে জায়ান্ট স্কিনে কিছু একটা পড়ছে। কৌতুহল চেপে রাখতে না পেরে আমি কফলিনের পাশে এসে দাড়ালাম।
- নোটিশটা লক্ষ্য করেছ MB।কফলিন আমাকে সাধারণত এ নামেই সম্বোধন করে।
আমি বললাম কোন নোটিশটা।
- ঐ যে রেড রুকটাইল কালির মোটা লেখাটা।
- ওহ। আমি মনোযোগ দিয়ে নোটিশটা পড়তে লাগলাম।
- এটা চাওয়ার কোন দরকার ছিলনা। কথাটা বলেই বিদায় নিল কফলিন।
বিষয়টা তেমন কিছুই নয়। গ্রহের মানুষদের মৃত্যুর পর সাত ঘন্টার মধ্যে FSO কে জমা দেয়ার কথা থাকলেও এখন সেটা পরিবর্তন করে দুইদিন করা হয়েছে। আমিও লেখাটা পড়ে কফলিনের মত মাথা নাড়তে নাড়তে বিদায় নিচ্ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ একটা প্রশ্ন আমাকে পেয়ে বসল। আমি চিন্তা করতে লাগলাম আচ্ছা এই মৃতদেহগুলো নিয়ে FSO তথা অডিয়াম কম্পিউটার কি করে। আমার মাথায় পৃথিবীর সভ্যতার কিছু অংশ আছে বলে আমি খেয়াল করে দেখেছি আমার কৌতুহল আদিষ্ট বা নিষিদ্ধ যে কোন জিনিসের ব্যাপারেই খুব বেশী। এবারের কৌতুহলটাও আমাকে বেশ ভালো ভাবেই পেয়ে বসল। আমি চিন্তা করে দেখলাম এর রহস্য জানা উচিত। অবশ্য আমি জানি FD402 বা অডিয়াম কম্পিউটারের কর্তৃক নিষিদ্ধ সব জিনিসেই একধরনের রহস্য লুকিয়ে আছে। এই যে আমি কিছুক্ষণ আগেই অডিয়াম কম্পিউটারের কাছে আমাকে নেবুলায় পাঠানোর মত হুমকি শুনে এলাম এটাও আমার কাছে অর্থহীন মনে হতে লাগল। আমি ঠিক করলাম এই কৌতুহলেরই আগে নিবৃত্তি হোক। একটু খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম এই মৃতদেহগুলোর ব্যাপারে খোঁজ নেয়া অডিয়াম কম্পিউটার কর্তৃক নিষিদ্ধ। একটু আশাহত হয়ে আমার ডেকে বসে আছি। নানারকম চিন্তা ভাবনা করছি এমন সময় মনে হল পুরো জিনিসটা জানা অপরাধ হতে পারে। হয়ত এরকম কোন সিষ্টেমের বর্ণনা অডিয়াম কম্পিউটারকেই দেয়া আছে। নিজে এটা বিচারের আগে সম্ভবত সে তার সিষ্টেমের সাথে ঘটনার বর্ণনাটুকু মিলে নেয়। অংশ অংশ করে আমাকে নিয়ে কোন অভিযোগ করলে হয়ত সে প্রতিটি ঘটনার অংশকেই তার সিস্টেমের পুরো ঘটনার সাথে মিলিয়ে নেবে। যে সামান্যটুকু মিলও সে পাবে তাও নিশ্চয়ই অভিযোগ প্রমানিত হওয়ার মত হবে না। বিষয়টা প্রমানের জন্য আমি একটা পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমি আমার এক সহকর্মীকে জিজ্ঞাসা করলাম FSOতে যোগ দেয়ার পর আমাকে প্রথম যে সমস্যাটি দেয়া হয়েছিল সেটা আমি যে সমাধান পারিনি তা জানো। সে বলল হ্যাঁ জানি। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম সমস্যাটি কি ছিল কি তুমি জান? সে উত্তর দিল -না। এরপর আমি তাকে বিদায় দিলাম। এরপরের সপ্তাহে বাড়ীতে ফিরে আমার মাকে আমি বললাম FSO প্রথম যে সমস্যাটি আমাকে দিয়েছিল সেটি সমাধান হলে তুমি হাসতে পারবে না এটা কি জান। আমার মা মুখটায় একটা বিস্ময় প্রকাশ করে বললেন তাই হয় নাকি। এরপর আমি আর কথা বাড়ালাম না। পরদিন বাড়ী থেকে FSO এর গবেষণাগারে আসব তার আগে আমার ভাইকে বলে আসলাম FSO প্রথম আমাকে যে সমস্যাটি দিয়েছিল সেটা হল এই পর্যন্ত বলে আমি থেমে গেলাম। আমার ভাই এরপরের কথা শোনার জন্য জেদ করার আগেই অক্টোবিট ভেইকলের২৪ মেশিনটা অন করে দিলাম। অফিসে এসেই কফলিনের সাথে দেখা। তাকেই আমি বলে বসলাম মস্তিষ্কের আনন্দ জাতীয় ব্যাপারগুলো যে নিউরন পরিবহন করে তাদের নিস্ক্রিয় করার ক্ষেত্রে তড়িৎও চৌম্বকক্ষেত্রকে কিভাবে কাজে লাগানো যায়। FSO আমাকে প্রথম সমস্যাটি দিয়েছিল সেটা আমি এই কয়েকজন মানুষকে অংশ অংশ করে বললাম ঠিকই কিন্তু কেউই কিছু বুঝতে পারল না। অডিয়াম কম্পিউটারের ভাষ্য মতে এই গোপন ব্যাপারটি লোকসমক্ষে প্রকাশ করা যাবে না। অর্থাৎ তার হিসাবে আমি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছি,কিন্তু করেছি অংশ অংশ করে মানে সামগ্রিকতা নেই যা আছে সেটা হল ঘটনার বিক্ষিপ্ততা। এখন আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম অডিয়াম কম্পিউটারের আচরণ কেমন হয়। আশ্চর্যের সাথেই যেটা লক্ষ্য করার কথা ছিল সেটাই লক্ষ্য করলাম। কয়েকদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করেও দেখতে পেলাম অডিয়াম কম্পিউটার আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আনছে না।

(চলবে)
----------------------------------------------------------
(পরিশিষ্ট)
১. ইয়েট মাইক্রোসকোপ : এক ধরনের বিবর্ধক যন্র যার সাহায্যে ছোট কোন জিনিসকে বড় করে দেখা যায়।
২. রুকটাইল কালি :এক ধরনের দীর্ঘস্থায়ীত্বের কালি। (কল্পনা)
৩. হিওটিট : রোবটদের উন্নত সংস্করণ। (কল্পনা)
৪. প্রাইসম : রোবটদের মস্তিস্কের একটি অংশ। (কল্পনা)
৫. WSO : World scientific organization।
৬. ইন্টারনেট : তথ্য ও প্রযুক্তি বিনিময়ের একটি মাধ্যম।
৭. উইরিয়াল সিগনাল : মানুষের মস্তিস্কের নিউরনের মাধ্যমে তথ্য ও প্রযুক্তি বিনিময়ের একটি মাধ্যম। (কল্পনা)
৮. ফ্লাবিশ ষ্কিন : এক ধরনের পর্দা যা আপতিত আলোর উপযুক্ত প্রতিচ্ছবি সৃষ্টি করতে পারে। (কল্পনা)
৯. অটোমেটিক লিন্ডিকার: রিমোটের ন্যায় এক ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস। (কল্পনা)
১০. নিউরন : মানুষের মস্তিস্কের একটা অংশ যা সংবেদন পরিবহনের কাজ করে। মানুষের মস্তিস্ক কোটি কোটি নিউরন নির্মিত।
১১. ডাই অপিনাইল : এক ধরনের ট্যাবলেট যা মৃত স্নায়ু বা কোষকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জাগিয়ে তুলে স্বল্প সময়ের জন্য জীবিত রাখতে পারে। (কল্পনা)
১২. ওথাল হোম : অজিওটিক ভাষায় সম্বোধনবাচক শব্দ। (কল্পনা)
১৩. থায়োডেজাট্রোব্লুটানেট : এক ধরনের যৌগ। (কল্পনা)
১৪. ওয়াল্ড্রল মাদার : ক্লোন শিশুদের যারা রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বে থাকে। (কল্পনা)
১৫. ব্লোনাড : ক্লোন শিশু। (কল্পনা)
১৬. লিওবিট টিউব : কলিংবেলের মত একধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস। (কল্পনা)
১৭. রিসাইকেলএবল : পূনরায় ব্যবহারযোগ্য করা যায় যা।
১৮. লেন্টালিন : এক ধরনের রাসায়নিক তরল যা অবশ স্নায়ুকে সংবেদন গ্রহনে সাহায্য করে। (কল্পনা)
১৯. ডুকাইল :ফ্লিজ জাতীয়। (কল্পনা)
২০. বিট্রিওল : এক ধরনের পিল। (কল্পনা)
২১. মিলকিওয়ে : পৃথিবী যে গ্যালাক্সীতে আছে তার নাম।
২২. গ্যালাক্সী : ছায়াপথ। প্রতিটি গ্যালাক্সীতে সূর্যের ন্যায় অসংখ্য নক্ষত্র থাকে।
২৩. নেবুলা : মহাকাশে ঘণীভূত হয়ে থাকা ভস্ম, গ্যাস, গলিত পদার্থ ইত্যাদি।
২৪. অক্টোবিট ভেইকল : এক ধরনের যানবাহন। (কল্পনা)
২৫. FSO: Federal Scientific organization
২৬. এলোবেশিয়ান : কুকুর ও বিড়ালের সংকর প্রজাতি। (কল্পনা)
eru

-------------------------------------------------
সুগন্ধ বিলোতে আপত্তি নেই আমার
বস্তুত সুগন্ধ মাত্রই ছড়াতে ভালবাসে।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।