সিলেট ভ্রমণঃ ২য় দিন(১৯.৫.০৯-মঙ্গলবার)(আইজকা ছবিও আছে)

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ১৩/০৬/২০০৯ - ১১:৪৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মিরাজ আমিন

সকাল ৮:৩০ টায় ঘুম ভাঙ্গল। আমি অবশ্য মাঝখানে ভোরের দিকে নামাজের জন্য উঠেছিলাম। আমাদের ৪জনের জন্য মাত্র ১টি ছোট ঘর বরাদ্দ। শুরু হয়ে গেল ছোট ঘরে যাওয়ার সিরিয়াল। একেকজন ছোট ঘরে গেলে আর যেন বের হতে চায়না। মনে হয় ওখানেই খানিকটা ঘুম সেরে নেয়। যাই হোক সকালের নাস্তা কায়কোবাদেই করলাম। এরপর আমরা বেরিয়ে পড়লাম। উদ্দেশ্যে জাফলং এবং তামাবিল ০০ কি.মি.। তখন বাজে সকাল ১০টা। আম্বরখানা থেকে প্রায় ৬০কি.মি উত্তরে জাফলং। আমি এর আগে আরো ২বার সেখানে গিয়েছি। তবে বাংলাদেশের যেকোন দর্শনীয় জায়গায় বারবার যেতে আমার কোন আপত্তি থাকেনা কিংবা উৎসাহেও ভাটা পড়েনা। বেশ দরদাম করে একটি সি,এন,জি ঠিক করা হলো। আপ-ডাউন প্লাস ২ঘণ্টা যাত্রা বিরতি, ভাড়া ৬০০ টাকা।

জাফলং যখন পৌছলাম তখন প্রায় দুপুর। ১২টার মতো বাজে। আমরা সি,এন,জি থেকে নামার সাথে সাথে কিছু পিচ্চি ছেলে আমাদের ঘিরে ধরল। ওরা নাকি এখানকার গাইড। আমি আগে যখন এসেছিলাম তখন তাদের আনাগোনা দেখতে পাইনি। বেছে বেছে সবচেয়ে পিচ্চিটিকে নেয়া হলো। সাইজ ৩-৪ ফুট হবে। বয়স বুঝা যাচ্ছেনা, কারণ সে কথা বার্তায় খুব পটু। আমাদের কি কি দেখানো হবে একের পর এক বলে যাচ্ছে। আমরা প্রথমে গেলাম তিব্বত চা বাগানে। ফ্ল্যাট চা বাগান। তবে বাগানটি বেশ বড়। কিছু ছবি তুলে আর একটি হোটেলে কিছু খেয়েই চলে আসলাম। ওখানে রিক্সায় যেতে হয়েছিল। আপ-ডাউন প্রতি রিক্সা ৬০ টাকা। যাত্রাপথে খাসিয়া ও মনিপুরী উপজাতিদের ঘরবাড়ি,পান গাছ চোখে পড়ল। তবে ওদের রাজার বাড়িটি আমাদের সকলের নজরে আসে। মূলত একটি ললনা বাড়ির বাইরে কি যেন করছিল। এটা নিয়ে খানিক তর্ক-বিতর্কও হলো। একজন বলল ললনাটি রাজার মেয়ে, আরেকজন বলল-'না সে রাজার মেয়ে হতেই পারে না, রাজার মেয়ে কি বাইরে ওভাবে কাজ করতে পারে?' বাদানুবাদ যাই হোক না কেন উক্ত মেয়েটিই যে রাজার বাড়িটি নজরে আসার মূল কারণ সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে ফেরার সময় মেয়েটিকে আর দেখা যায়নি।

এখন বাজে প্রায় ২টা। এবার জাফলং থেকে বিদায় নেবার পালা। কিন্তু জাফলং এর জিরো পয়েন্টে এখনো যাওয়া হয়নি। আমরা যেখান আছি সেখান থেকেই জিরো পয়েন্ট দেখা যায়। তবে কাছে গিয়ে দেখার মজাই আলাদা। কিন্তু ভাড়া একটু বেশি। আপ-ডাউন ট্রলারে ৪০০টাকা আর নৌকায় ২০০টাকা। ফিক্সড রেট। আমরা সংখ্যায় কম তাই নৌকায় চেপেই জিরো পয়েন্টে গেলাম। আমাদের কোন দূরবীণ ছিল না। তবে এখানে দূরবীণের ব্যবস্থা আছে। ১০ মিনিট ২০টাকা। কোন ইচ্ছাই বাদ থাকলো না। ভাড়া করে দূরবীণ ব্যবহারও বাদ যাবে কেন? দূরবীণে ভারতীয় উপজাতিদের ঘর-বাড়ি দেখতে খুব ভাল লাগছিল। এছাড়া পাহাড়ের সৌন্দর্যতো আছেই। জাফলং দেখা শেষ হতেই আমারা চলে গেলাম তামাবিল ০০ কি.মি.। তামাবিলের পরেই ভারতের মেঘালয় শুরু। তামাবিল আর মেঘালয়ের একটি সংযোগ রাস্তা আছে। আমরা রাস্তার পাশেই দাঁড়িয়ে। রাস্তার পাশেই লেখা তামাবিল ০০কি.মি.। ভারতীয় বি,এস,এফ আর সাধারণ ২-১ জনকে দেখা যাচ্ছিল। আমারা প্রত্যেকেই পৃথকভাবে ২টি করে ছবি তুললাম। একটিতে বসে আর অন্যটিতে দাঁড়িয়ে।

সিলেটে এসেছি আর শাহজালালের দরবারে যাব না, তাই কি হয়? কায়কোবাদ হোটেল থেকে খুব কাছেই শাহজালালের দরবার। হেঁটেই যাওয়া যায়। শাহজালালের দরবার ঘুরে আমদের ইচ্ছা ছিল কয়েকটি শপিং মল ঘুরে দেখার। উদ্দেশ্য কিছুটা অসৎ। কিন্তু আফসোস কারণ ততক্ষণে বন্ধ হয়ে গেছে শপিং মলগুলো। রাতে তেমন আর কাজ নেই। মাত্র ৮:০০ বাজে। কায়েস আর নাসিফের মাথায় সন্ধ্যা থেকেই হলে বাংলা ছবি দেখার ভূত চেপে আছে। আমি ব্যাপারটা সিরিয়াসলি নেইনি। ভেবেছি রাতে যেহেতু iplএর খেলা আছে, তাই হয়তো ওরা যাবে না। কিন্তু ওদের ভূত আর নামানো সম্ভব হয়নি। এরপর আমরা হলের খোঁজ নিতে শুরু করলাম। কায়েসের মতে পানের দোকানদাররা নাকি এই সবের ভাল খোঁজ খবর রাখে। একটি পান দোকানদারই আমাদের প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করল। প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতে আমরা দু'টি হলে গেলাম। কিন্তু হলের ছবি পছন্দ হয়নি। একটিতে 'মনপুরা' আর অন্যটিতে 'বলবো কথা বাসর ঘরে' চলছে। আমাদের তৃতীয় এবং সর্বশেষ অপশন 'লালকুঠি'। কিন্তু লালকুঠি কোথায় আমরা জানিনা। একজন ফেরিওয়ালাকে জিজ্ঞাসা করা হলো,'ভাই, লালকুঠি কোথায়?', উনি উত্তর দিলেন,'লালকুটিতো বন্দ'। আমরাতো হতাশ হয়েই বললাম,'লালকুঠি এখন বন্ধ?',উনি আবার আবার বললেন,'লালকুটিতো বন্দ'। এরপর বহু কষ্টে আমরা ওনার কথা ডিকোড করলাম। উনি আসলে বলেছিলেন, লালকুঠিতো বন্দর মানে বন্দর বাজারে। আমরা এখন 'লালকুঠি'তে বসে আছি। অপেক্ষা করছি ছবি শুরু হবার জন্য। ৯টা-১২টার ছবি। ছবির নাম 'নির্দেশ'। ৯টা বাজতেই ছবি ছাড়ার জন্য দর্শকরা সম্মিলিত চিৎকার শুরু করল। আমাদের পক্ষ থেকে কাজটি করেছিল নাসিফ। ছবি শুরু হয়েছে একটি খুনের দৃশ্য দিয়ে। ভিলেন এক সাংবাদিককে খুন করে। এরপর চলতে থাকল একের পর এক খুন। এক পুলিশ অফিসার ভিলেনকে, ভিলেনের ছোট ভাই(ছবির প্রধান ভিলেন) আবার পুলিশ অফিসারকে খুন করে। তবে সবচেয়ে আশ্বর্যের বিষয় নায়ক একটি বড়সড় পানির ট্যাংক ফেলে দিতে পারলেও সামান্য নড়বড়ে দরজা ভাঙ্গতে পারেনি। এরপর বহু কষ্টে আমরা ৫০ মিনিটের মত সেখানে টিকতে পেরেছিলাম। অর্থাৎ ৯:৫০টায় আমরা সবাই হল থেকে বের হয়ে হোটেলে ফিরে গেলাম।




desc=


মন্তব্য

ইমরুল কায়েস এর ছবি

হুম। ভাল।
......................................................
পতিত হাওয়া

তানবীরা এর ছবি

নায়ক - নায়িকা কে ছিলো ছবির?

ফটো সুন্দর এসেছে।
---------------------------------------------------------
রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা
সূর্য নাহি ফেরে শুধু ব্যর্থ হয় তারা

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

এই তো কিছুদিন আগে আমিও সিলেট ঘুরে এলাম। ইচ্ছা আছে সে সম্পর্কে সামান্য কিছু লেখার, আর ছবি দেয়ার।

ভাল্লাগল আপনার লেখা, ছবি।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।