যৌন হয়রানি এবং ভিকটিমের পক্ষে আইন

জোবাইদা নাসরীন এর ছবি
লিখেছেন জোবাইদা নাসরীন [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ২৩/০৯/২০০৯ - ৮:০৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

-জোবাইদা নাসরীন

বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে যৌন হয়রানি প্রসঙ্গ আলোচনায় এলেও এর পক্ষ-বিপক্ষ মত বিষয়টিকে সেভাবে এগোতে দেয়নি। ১৯৯২ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মাধ্যমে এ অপরাধের ধরনটি সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আনে এবং এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে আন্দোলনের পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করে। ১৯৯৮ সালের আগস্টে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে ওঠে ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন এবং দীর্ঘদিন আন্দোলন চলার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্তদের বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেয়। এরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একই ধরনের আন্দোলন হয়। আস্তে আস্তে জানা যায় এবং খোলাসা হতে থাকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানির নানা ঘটনার কথা।

কিন্তু বাংলাদেশে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কোনো আইনি সুরক্ষা ছিল না। এ বছরের মাঝামাঝি ১৪ মে ২০০৯ যৌন হয়রানি রোধে হাইকোর্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পর বাংলাদেশেই এ বিষয়ে মাইলফলক এই সিদ্ধান্ত হলো। ১৯৯৭ সালে ভারতে বিশাখা মামলাটির (যেটি 'বিশাখা বনাম রাজস্থান' সরকার মামলা হিসেবে পরিচিত) মাধ্যমে ভারত প্রথমবারের মতো এ বিষয়ে মনোযোগ দেয় এবং এ বিষয়ে আইন না থাকার ব্যাপারটি উপলব্ধি করে। সিডও সনদের ভিত্তিতে যৌন হয়রানি বিষয়ে গাইডলাইন তৈরি করে ভারতে এ মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল এবং বলা হয়েছিল, আইন তৈরি না হওয়া পর্যন্ত এই দিকনির্দেশনা বলবৎ থাকবে।

বাংলাদেশের রায়ে এর ছায়া দেখতে পাওয়া যায় এবং যা অনেকটাই ইতিবাচক। জাতীয় সংসদে এ বিষয়ে আইন পাস না হওয়া পর্যন্ত নির্দেশনা পালনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সব ধরনের কর্মক্রমকে এ রায়ের আওতায় আনা হবে। সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকার্টের দেওয়া দিকনির্দেশনামূলক রায় পালন করা বাধ্যতামূলক।

গত বছর একাধারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে। শিক্ষার্থীদের লাগাতার আন্দোলনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব কর্মেক্ষেত্রে যৌন হয়রানি নিরোধ নীতিমালা এবং আচরণবিধি তৈরি করার তাগিদ বোধ করে।

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, ২০০৮ সালের ৭ আগস্ট কর্মস্থল এবং শিক্ষাঙ্গনে নারী ও শিশুদের যৌন হয়রানি প্রতিরোধের জন্য দিকনির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্ট বিভাগে জনস্বার্থে রিট করেন বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক সালমা আলী। এ রায় তারই পরিপেক্ষিতে। রায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, এখানে বিভিন্নভাবে যৌন নিপীড়নকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।

যৌন নিপীড়নের সংজ্ঞায় আদালত বলেন, শারীরিক ও মানসিক যেকোনো ধরনের নির্যাতনই যৌন হয়রানির পর্যায়ে পড়ে। ই-মেইল, এসএমএস, টেলিফোনে বিড়ম্বনা, পর্নোগ্রাফি, যেকোনো ধরনের চিত্র, অশালীন উক্তিসহ কাউকে ইঙ্গিতপূর্ণভাবে সুন্দরী বলাও যৌন হয়রানির পর্যায়ে পড়ে। শুধু কর্মস্থল কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই এ ধরনের হয়রানি ঘটে না, রাস্তায় চলাচলের ক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের অশালীন উক্তি, কটূক্তি করা, কারও দিকে খারাপ দৃষ্টিতে তাকানো প্রভৃতি যৌন হয়রানি হিসেবে গণ্য করা হবে।

এ রায়ে আরও বলা হয়, কোনো নারীকে ভয়ভীতি প্রদর্শন, যেকোনো ধরনের চাপ প্রয়োগ করা, মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে সম্পর্ক স্থাপন, অশালীন চিত্র, দেয়াল লিখন, আপত্তিকর কিছু করাও যৌন হয়রানির মধ্যে পড়ে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং কর্মেক্ষেত্র যৌন হয়রানির ক্ষেত্রে দিকনির্দেশনার কথা রায়ে বলা হয়েছে। কিন্তু এ রায়ের একটি বড়সড় 'মিসিং পয়েন্ট' হলো, এখানে পাবলিক পরিসরে যৌন হয়রানির কথা উল্লেখ করা হলেও এ ক্ষেত্রে দিকনির্দেশনার বিষয়টি খুব বেশি জোরালোভাবে আসেনি, যা যুক্ত করা খুবই জরুরি ছিল। এখনো প্রতিদিনই নারীকে রাস্তাঘাটে নানা ধরনের কটূক্তি শুনতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে একজন ভুক্তভোগী নারী কোথায় যাবেন, কীভাবে অভিযুক্তকে ধরবেন কিংবা চিহ্নিত করবেন অথবা কার সহায়তায় তা করবেন, তা জানা নেই তাঁর। পাবলিক প্লেসে যৌন হয়রানি রোধে এ রায় কার্যকর ভূমিকা রাখার নিশ্চয়তা দেয় না। তাই এ বিষয়ে ভবিষ্যতে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা প্রয়োজন।

আবার কিছু ক্ষেত্র আছে, যেগুলো একভাবে কর্মক্ষেত্র এবং পাবলিক প্লেস হিসেবে পরিচিত যেমন: দোকানপাট-সেখানে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে সেটির বিচার কোথায় হবে? যেমন, একজন নারী ক্রেতা কোনো পুরুষ বিক্রেতার কাছ থেকেও যৌন হয়রানির শিকার হন কিংবা হতে পারেন। কিন্তু পাবলিক প্লেসে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অপরিচিত ব্যক্তি দ্বারা নারী যৌন হয়রানির শিকার হন। সে ক্ষেত্রে কীভাবে এ ধরনের ঘটনা থেকে প্রতিকার পাওয়া যাবে? কিংবা অপরাধীকে কীভাবে আইনের আওতায় আনা হবে? তার পরও বলতে হয়, এটি একটি যুগান্তকারী রায়। কিন্তু এর প্রয়োগ আমরা কীভাবে করব, সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা কী, সেটি কোথাও বলা হয়নি।

এখানে মনে রাখা প্রয়োজন, বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র এবং পাবলিক প্লেসে (বিশেষ করে রাস্তাঘাট, মার্কেট কিংবা নিত্যদিনের চলার পথে কোথাও) যৌন হয়রানির প্রতিকার কোনোভাবেই একই দিকনির্দেশনায় সমাধানযোগ্য নয়, যদিও অপরাধের মাত্রা একই ধরনের। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কিংবা কর্মস্থলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অভিযুক্তের নাম ও পরিচয় পাওয়া সম্ভব হয় অভিযোগকারীর পক্ষে। কারণ অভিযুক্ত বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পূর্বপরিচিত থাকে। যেমন: বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রে বলা যায়, এই নীতি প্রণয়নের জন্য ডিসিপ্লিনারি কমিটি আছে, আছে সিন্ডিকেট, যারা এটি বাস্তবায়ন করবে। কর্মেক্ষেত্রও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পরিচালনা বোর্ড কিংবা কমিটির মাধ্যমে এগুলোর বিচার হতে পারে, কিন্তু পাবলিক প্লেসে হয়রানির ক্ষেত্রে এর বিচারের দায়িত্ব কোথায় যাবে? কিংবা যেসব কর্মেক্ষেত্রে একক ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণে (যেমন: অনেক অরেজিস্ট্রিকৃত গার্মেন্টস), সেখানে এই দিকনির্দেশনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব কার ওপর থাকবে? এ বিষয়ে অপরাধ চিহ্নিতকরণ কিংবা শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে মূল এজেন্সি কে হবে? হাইকোর্টের এ রায়ে অনেক বেশি স্বস্তি পাওয়া গেলেও এর প্রয়োগবিধি নিয়ে আরও ভাবতে হবে।

সার্বিক বিবেচনায় বলা যায়, শুধু আইন বা নির্দেশনায় বড় কথা নয়, আইনের বাস্তবায়নও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আইন থাকলে সেটির প্রয়োগ কীভাবে হবে এবং তা সবাইকে জানানোর ব্যবস্থাও অনেক বেশি জরুরি। সরকারসহ যৌন হয়রানি রোধে সচেষ্ট সব মহল আশা করি সেটি ভেবে দেখবে এবং দ্রুত পদপে নেবে।

-জোবাইদা নাসরীন
zobaidanasreen অ্যাট জিমেইল ডট কম


মন্তব্য

রণদীপম বসু এর ছবি

এ বিষয়ে ১৪ মে ২০০৯-এ হাইকোর্টের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে সচলায়তনে গত ১৫ মে ২০০৯-এ একটি পোস্ট দিয়েছিলাম। পরবর্তী কোন আপডেট সংবাদ আর পাই নি বা আমার দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। যেসব মন্ত্রণালয়, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো, তারা এ বিষয়ে কতোটা এগুতে পারলো বা ফলাফল কী হলো, তার ব্যাপারে কোন তথ্য কি আপনার জানা আছে ? তাহলে আইনের রথের গতিটা আঁচ করতে পারতাম।

ধন্যবাদ বিষয়টাকে আবার তুলে আনার জন্য।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

আইনটার লৈঙ্গিক একরৈখিকতা দেখে বিস্মিত হয়ে রণদীপম বসুর পোস্টে একটা মন্তব্য করেছিলাম - কারো কোনো প্রতিক্রিয়া পাইনি। তাই সেই মন্তব্যটা হুবহু আবার আপনার লেখায় তুলে দিলাম।

মহিলা ও শিশুদের যৌন হয়রানি বলে যৌন হয়রানিকে আলাদা করার কোনো কারণ তো দেখি না।

পুরুষরাও যৌন হয়রানির শিকার হতে পারে। পুরুষরা নারীদের দ্বারা বা পুরুষদের দ্বারাও যৌন হয়রানির শিকার হতে পারে।

আইনের সংঙাগুলো নির্ধারণের ক্ষেত্রে আরেকটা জিনিস খেয়াল করা হয়নি যে নারীরাও নারীদের দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হতে পারে। সে কারণে সেরকম নারীদের যৌন হয়রানির কৌশলগুলোকে অপরাধের সংঙার আওতায় আনা হয়নি।
যেমন সিডাকশন বা নিজের শরীরের অংশ-বিশেষ দেখিয়ে যৌনতায় প্রলুব্ধ করা।

আমাদের দেশে আইন-কানুন বা জননীতি ইত্যাদি বানানোর সময় 'চাকা নতুন করে আবিষ্কার' করা হয়। অথবা বলা যায় - সাধারণ জ্ঞান দিয়ে তারা একটা বিশেষায়িত বিষয়কে বুঝে ফেলতে চায়। এইসব হাতুড়েদের হাত থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়া দরকার।

(আমাদের দেশে যারা আইন ড্রাফট করেন তাদের আইনের জ্ঞান হয়তো থাকে কিন্তু সমাজ ও বিশ্বের ভবিষ্যত গতি-প্রকৃতিকে বুঝে আইনকে দীর্ঘস্থায়িত্ব দেয়ার জন্য তাতে চিন্তার অগ্রসরতার ছাপ তারা রাখতে ব্যর্থ হন। এরাই আবার বৃটিশের একশো বছরের পুরনো সিআরপিসি-র উদাহরণ দিয়ে বলেন - বৃটিশের আইন- এখনও বদলাতে গেলে প্যাঁচ লেগে যায়।
তাড়াহুড়া করে আইন করাটাও একটা কারণ। তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংক্রান্ত সংবিধান সংশোধনের আইনি খসড়াটিও এরকম এডহক আইনি প্রচেষ্টার একটা প্রমাণ।
আইন প্রণেতাদেরকে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে দুরদর্শীতার পরিচয় দিতে হবে এবং অ্রন্যান্য ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে, আইন চূড়ান্ত করার আগে জনগণের পরামর্শ ও মতামত নিতে হবে।)

-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

হাসিব এর ছবি

এইখানে জার্মানির আইনটা গুতিয়ে দেখলাম । এরা আইনটাকে জেন্ডার বেইজড করেনি । নারী পুরুষ নির্বিশেষে এই আইন প্রযোজ্য হয় এখানে ।

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

শ্রদ্ধেয় শোহেইল মতাহির চৌধুরীর সাথে একমত ।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

তানবীরা এর ছবি

নারী স্বাধীনতা, নারী স্বাধীনতা করে করে এই কথাগুলো আসে। স্বাধীনতা হলো মানুষের স্বাধীনতা। ব্যক্তি স্বাধীনতা চাই বলতে হবে নারী স্বাধীনতার বদলে।

সচলে স্বাগতম।

**************************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

গৌতম এর ছবি

যৌন হয়রানির আইন সম্পর্কে ভালো জানি না, তবে বাংলাদেশে এনজিওরা জেন্ডার, নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কাজ করার সময় যৌন হয়রানির সংজ্ঞাটা পুরোপুরি একরৈখিকভাবেই নির্ধারণ করে। তাদের টেক্সটগুলোতে বিষয়গুলো এমনভাবে লিখিত থাকে যেন যৌন হয়রানি শুধু নারীর ক্ষেত্রেই ঘটে। এর কারণ জিজ্ঞেস করলে বলা হয়- পুরুষদের ওপর খুব একটা যৌন হয়রানি হয় না, হলেও খুবই কম। এটা মূলত নারীকেই সহ্য করতে হয়। তাই বিষয়টার প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার জন্য যৌন হয়রানীর ক্ষেত্রে নারীর কথাটা বেশিবার এসেছে।

জিজ্ঞাসা করেছিলাম- বেশি-কম বড় কথা না, একটা ধারণা বা কনটেক্সট হিসেবে কোনো ধরনের জেন্ডার বায়াসড থাকা ঠিক কি না?

উত্তর এসেছিলো- আপনি নারী হলে এ প্রশ্নটা করতে পারতেন না।

উত্তর শুনে মনে হলো, এ বিষয়ে আলোচনা করা বৃথা।

যদি কোনো কাজে লাগে তাই অভিজ্ঞতাটা শেয়ার করলাম।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

s-s এর ছবি

নারী পুরুষের যৌন সম্পর্ক যেহেতু রাজনৈতিক, সুতরাং যৌন হয়রানির প্রেক্ষাপট এবং আইনের প্রয়োগেও সেই মারপ্যাঁচ থাকবে বৈকি। তবে বাংলাদেশের মত যৌন অনগ্রসর ভূখণ্ডে এমন "নারীবান্ধব" আইন এখনও দরকার আছে বলে বোধ করি। হয়তো প্রতীচ্যের, এমনকি পাশ্চাত্যের কোথাওও এর দরকার! কিন্তু শিশুদের ক্ষেত্রে পুং/ স্ত্রী নির্বিশেষে আইনটি বলবৎকরা বেশী প্রাজ্ঞতার পরিচয় দিতো বোধ হয়, কারণ বারো বছর পর্যন্ত ছেলে শিশুরাও অনেক অসহায় বয়স্কদের কাছে এটা প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। কাছের আত্নীয় (বাবা, মামা, চাচা, খালু ইত্যাদি) দের থেকে সুরক্ষার জন্য একটা কার্যকর পদক্ষেপও দরকার, সামাজিক কাঠামো যেখানে অর্থহীন নিরাপত্তার এক বোধ তৈরী করে মাত্র, নিরাপদ নয় বাংলাদেশে মেয়ে শিশু, কোনোভাবেই, নিজে মেয়ে শিশু হয়ে এবং যথেষ্ট সুরক্ষিত পরিবেশে বড় হয়েও সেটা টের পেয়েছি। ধর্মীয় অনুশাসনের নিগড়ে আবদ্ধ মেয়ে বাচ্চারা এখনও কি করে, ভাবলে বড় দম আটকে আসে মাঝে মাঝে। আন্দোলন করে, আইন করে কিছু হয় কি'না জানিনা,
তবুও--------------------------------- কিছুতো একটা হোক।
কিছু একটা।
ওইটুকুই আশা এই আইন থেকে।

বর্ষা এর ছবি

---- বিষয়টি সবসময় অবহেলার চোখে দেখা হয়। আইনি দুর্বলতা এবং আমাদের আলসেমি মূলত দায়ী।
--- 'কিন্তু পাবলিক প্লেসে হয়রানির ক্ষেত্রে এর বিচারের দায়িত্ব কোথায় যাবে?'----আমরা প্রায় প্রতেকেই এর শিকার হয়েছি।
----আর ঘরে ঘরে শিশু নির্যাতনের বিষয়টিও আওতায় আনতে হবে।
-----যে মেয়েটি মুখ খুলবে, সামাজিক ভাবে তাকে হেয় করার প্রবনতা কমাতে হবে।

********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।

আহমেদুর রশীদ এর ছবি

সচলে স্বাগতম।

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

ফিরোজ জামান চৌধুরী এর ছবি

সচলে স্বাগতম।
আইনের চেয়ে আইনের প্রয়োগই বড় কথা।

ঝিনুক নীরবে সহো, নীরবে সয়ে যাও
ঝিনুক নীরবে সহো, মুখ বুঁজে মুক্তো ফলাও।

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

লিখে যান এমন বিষয়াদি নিয়ে। স্বাগতম।

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

জাহাঙ্গীরনগরে যখন ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের খবর পাচ্ছিলাম ঢাকায় বসে, তখন খুব অবাক লাগছিলো। একজন ধর্ষকের বিচার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ করবে কেন? তাকে বহিষ্কার করাটাই কেন শাস্তি? আইনী প্রক্রিয়ায় কেন বিচার চাওয়া হচ্ছে না?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আমি যদি আমার প্রতিবেশী নারীকে বা রাস্তায় কোন নারীকে যৌন হয়রানী করি তাহলে গণপিটুনীর বাইরে ফৌজদারী মামলাও আমার কপালে জুটবে, যদিনা আমি প্রভাবশালী কেউ হই। প্রভাবশালী হলেও মামলা হবে, তবে প্রভাব আর পয়সা খাটিয়ে আমি বের হয়ে আসতে পারবো। খুব আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে এই যে, আমি যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হই আর তখন আমার কোন ছাত্রীকে যৌন হয়রানী করি তাহলে আমি এক ধরণের ইনডেমনিটি পেয়ে যাই। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস মনে হয় বাংলাদেশের বাইরে তাই সেখানে একশটা ধর্ষন করলেও ফৌজদারি মামলা হয়না, শুধু সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এসব ক্ষেত্রে ফৌজদারী মামলা করতে বাধা কোথায় তা আমার বোধে আসেনা। ভিক্টিমের পরিচয় গোপন করেই এসব করা যায়, খালি এসবক্ষেত্রে আমাদের আবাল মিডিয়াগুলোর প্রবেশাধিকার নিয়িন্ত্রিত করলেই চলবে। নতুন আইন বানানোর খুব একটা দরকার আছে বলে মনে হয় না। আইনের সীমার ব্যাপারে স্বচ্ছ ধারণা আর আইনের যথাযথ প্রয়োগ থাকাটা জরুরী। আইনের প্রায় একই ধরণের বৈষম্যমূলক ব্যবহারের দরুণ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো অস্ত্র আর সন্ত্রাসের আড্ডাখানা হয়।

ফৌজদারী আইনের কয়েকটা লুচ্চা শিক্ষক-ছাত্রের শাস্তি হলে অনেক বীরপুঙ্গবই হাত গুটিয়ে নিত। কিন্তু তাতো হবার নয়। লাল-নীল-সাদা দলেরা আছে কী করতে গোষ্ঠীস্বার্থতো সকল আইনের ঊর্ধ্বে। একই কথা নানা রঙের দল-পার্টি-লীগদের ক্ষেত্রে। জাহাঙ্গীরনগরের ধর্ষনবিরোধী আন্দোলনের সময়ও পার্টিজান সুশীল ...য়রের বাচ্চাদের ধর্ষকদের পক্ষে এমন নির্লজ্জ সাফাই গাইতে দেখেছি।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

রণদীপম বসু এর ছবি

জাহাঙ্গিরনগর ইউনিভার্সিটিতে ছাত্রী নিপীড়ণ ইস্যু নিয়ে জনৈক শাহনাওয়াজ-এর লেখা অন্যরকম একটি উপসম্পাদকীয় কলাম পড়ে মনে অনেক প্রশ্নের জন্ম নেয়। এর উত্তর খোঁজার নিমিত্তেই গত ৯ নভেম্বর ২০০৮ তারিখের জনকণ্ঠের কলামটি পড়ে সচলায়তনে একটা পোস্ট দেই গত ১০-১১-২০০৮ তারিখে। এখানে অনেকের মন্তব্য-মতামতে কিছু বক্তব্য ভাবনাউদ্রেককারী তো অবশ্যই। পড়ে দেখতে পারেন।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।