আইয়ুব বাচ্চু ......

শান্ত এর ছবি
লিখেছেন শান্ত [অতিথি] (তারিখ: শুক্র, ২৫/০৯/২০০৯ - ১০:৫৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গতকাল রাতে দেশ টিভি-তে ছিল “কল এর গান” নামক একটি অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে লাইভ পারফরমেন্স করেছেন এল.আর.বি। আইয়ুব বাচ্চু একে একে গেয়েছেন ঘুম ভাঙা শহরে, মেয়ে, সেই তুমি, ফেরারী মন, রূপালী গিটার, তারা ভরা রাতে, নীল বেদনা সহ অনেক জনপ্রিয় গান। গান শুনতে শুনতে হারিয়ে গিয়েছিলাম ৯০ এর সময়টাতে যখন সারাদিন ব্যান্ডের গান শুনে কাটতো। বরাবরের মতো বাচ্চুর সাথে তার হাতের গিটারও কথা বলে উঠে। অসাধারণ একটি অনুষ্ঠান।
আমি বাচ্চুর গান শোনা শুরু করি ৯৫ থেকে। তারপর একটানা শুনেছি ২০০০ পর্যন্ত। তারপর জানি না কি হলো বাচ্চু কিসব জানি আম্মাজান, এক চালা টিনের ঘর টাইপের গান গাওয়া শুরু করলেন। কমিয়ে দিলাম বাচ্চুর গান শোনা। কিন্তু পুরনো গানগুলি সবসময়ই টানতো। কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে এক একেকটা গানের সাথে। কালকে অনেকদিন পর আবার সেই সব স্মৃতি মনে পড়লো।
শুরু হয়েছিল ১৯৯১ সালে একসাথে দুইটা ক্যাসেট দিয়ে, তারপর তবুও, সেই তুমি ইত্যাদি। ১৯৯৯/১৯৯৮ সালে বন্যার সময় মাত্র একটি গান দিয়ে আইয়ুব বাচ্চু একটি এ্যালবাম বের করেছিলেন “বাচাও বিধাতা”। ক্যাসেট বিক্রির টাকা দেয়া হয়েছিল বন্যার্তদের সাহায্যে। প্রিন্স মাহমুদের সুরে করা মিক্সড এ্যালবামগুলো সবসময়ই ছিল হিট। আনপ্লাকড ফেরারী মন তো ছিল এককথায় অপূর্ব। উনার গানগুলোর মধ্যে সেরা কোনটা বললে বেছে নেয়াটা আসলেই কষ্টকর। হকার, ঘুমন্ত শহরে, পালাতে চাই, অভিযোগ নেই, চাদ মামা, মাধবী, ঘুম ভাঙা শহরে, মেয়ে, সেই তুমি, ফেরারী মন, রূপালী গিটার, তারা ভরা রাতে, নীল বেদনা, কষ্ট, বাংলাদেশ ................................................... অসংখ্য।
আমার আইয়ুব বাচ্চুর গান শোনার হাতেখড়ি হয় এলাকায় একজন বড় ভাইয়ের হাত ধরে। “নিপু মামা” বলে ডাকতাম আমরা সবাই উনাকে। প্রত্যেকটা ক্যাসেট বের হওয়ার সাথে সাথে ভিড় করতাম উনার বাসায়, কারণ ক্যাসেটের দোকানীদের সাথে উনার ভাল পরিচয় ছিল আর সেই সূত্রে ক্যাসেট বের হওয়ার আগের দিন কিভাবে জানি ক্যাসেট উনি পেয়ে যেতেন। স্কুলের টিফিনের টাকা ভিডিও গেম খেলার টাকা বাচিয়ে কোনমতে ৪০ টাকার প্রয়োজন। ব্যাস তাহলেই একটা ক্যাসেট হাতে পেয়ে যাবো। আর প্রত্যেকটা ক্যাসেটের সাথে একটি পোষ্টারের জন্য লাগতো আরোও ১০টাকা। মাঝে মাঝে ফ্রি পোষ্টার পাওয়া যেত। আমি আসলেই উনার কাছে কৃতজ্ঞ এর জন্য। তারপর শুরু হতো সারাদিন গান শোনা। মাঝে মাঝে প্রতিযোগীতা হতো কে বেশী জোড়ে ভলিউম দিয়ে এলাকায় গান বাজাচ্ছে। আর এই কারণে কতদিন মা বাবার হাতে পিটুনি খেয়েছি তার হিসাব নেই। একবার মনে আছে শুধুমাত্র “মেয়ে” গান শুনে শুনে কাটিয়ে দিয়েছিলাম অর্ধেক রাত। আরোও কত যে স্মৃতি.............
ইদানিং কালের গানগুলো আর আগের মতো টানে না। বয়সের ভারে গলায়ও নেই আগের সেই মধু, তারপরও বাংলাদেশের অন্যমত সেরা মিউজিশিয়ান, এশিয়ার মধ্যে অন্যতম সেরা গিটারিষ্টকে আমার স্যালুট। বেচে থাকুন একজন আইয়ুব বাচ্চু আমাদের মাঝে আরোও শত বৎসর। আরো আমরা উপহার পাই আরো আরো ভালো ভালো গান উনার কাছ থেকে। জয়তু বাচ্চু, জয়তু এল.আর.বি।
শান্ত


মন্তব্য

বন্যরানা এর ছবি

আপনার লেখা পড়ে ল্যাবে রাখা গীটারটা টুংটাং করতে করতে কিছুক্ষনের জন্য পেছনে হারিয়ে গিয়েছিলাম।

রেনেসাঁ [অতিথি] এর ছবি

এক চালা টিনের ঘর টাইপের গান গাওয়া শুরু করলেন। কমিয়ে দিলাম বাচ্চুর গান শোনা।

সহমত। আমি আরও অবাক হয়েছিলাম তিনি যখন ইভা রহমানের গান কম্পোজ করার জন্য লাইভ টিভি শোতে মাহফুজুর রহমানকে তেল মারলেন।

তারপরেও আইয়ুব বাচ্চু একজন মেধাবী শিল্পী । শুভ কামনা তাঁর জন্য।

আলমগীর এর ছবি

চলুক
লিখে যান।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

একেবারেই প্রথম থেকে এলআরবি আর বাচ্চুর গান শুনি আমি। মাঝে যখন সাংবাদিকতা করতাম। তখন ব্যাপক খাতির হইলো তার সঙ্গে। এবি কিচেনে দূর্দান্ত সব আড্ডা, একসঙ্গে কনসার্টে ঘুরাঘুরি...

তারপর একসময় বাচ্চু ভাইয়ের সঙ্গে আড্ডাগুলো আর মজা লাগতে লাগলো না। বিশেষ করে তার প্রথম আমেরিকা টু্রের পর থেকে। মনে হতে লাগলো তিনি আর সুরের উত্তরণ চান না। চান নিজের উত্তরণ। তাও আসলে না, চান নিজে যেখানে আছেন সেখানেই থাকবেন, কিন্তু অন্য কেউ যেন তাকে ছাড়িয়ে যেতে না পারে সেজন্য পেছনে কনুই বাড়িয়ে রেখেছেন।
ধীরে ধীরে তার আড্ডাঘরটা ভরে গেলো কুটনামিতে। আমিও সাংবাদিকতা ছেড়ে ধীরে ধীরে দূরে সরে গেলাম।

অনেক বছর পরে আবার একদিন এক ছোটভাই জোর করে ধরে নিয়ে গেলো। এবার গিয়ে আরো অবাক আমি। একেবারে পীর হয়ে গেছেন তিনি। চারদিকে সব ধর্মীয় কথাবার্তা। (ধর্মীয় কথা বলায় আমার কোনো সমস্যা নাই, কিন্তু কেন যেন পরিবেশটা ভালো লাগলো না)
খুব আড়ষ্ঠ বসে থেকে চলে এলাম কিছুক্ষন পরে।

তারও বছর কয়েক পরে সঞ্জীবদা যখন হাসপাতালে, তখন এক সন্ধ্যায় বাচ্চু ভাই এলেন এপোলোতে... জড়িয়ে ধরলেন... খুব কান্না কান্না...

কী জানি, হয়তো এখনো তার ভেতরে কোথাও পুরনো তিনি রয়ে গেছেন। যেই তিনি প্রেমিকার বিরহে সারারাত অস্থির থেকে মনের অজান্তেই গিটারে গেয়ে ওঠেন ফেরারী এ মনটা আমার...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

গৌতম এর ছবি

সেই পুরনো স্মৃতি মনে করিয়ে দিলেন। একটা সময় ছিলো- সারাটা দিন কাটতো আইয়ুব বাচ্চুর গান শুনে। বিশেষ করে আনপ্লাকড ওই ক্যাসেটটার প্রতিটি গান ছিলো মুখস্থ। সে সময় অসাধারণ কিছু গান তৈরি করেছিলেন ও গেয়েছিলেন আইয়ুব বাচ্চু।

তবে সেই আইয়ুব বাচ্চু এখন হারিয়ে গেছেন। তাঁর এখনকার গান শুনে বিরক্ত হই। কখনও সুযোগ আসলে পুরনো গানগুলোকেই বরং উল্টেপাল্টে দেখি।

আপনার লেখা ভালো লেগেছে। লিখতে থাকুন।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

মধ্যসমুদ্রের কোলে এর ছবি

নেই আগের সেই মধু--- এ ব্যাপারে আমিও একমত। তবে ঐ অনুষ্ঠানে একটা গান শুনে আমি এতই টাচড হইছি, যে কারনে আপনার পোস্টে কমেন্ট করতে আসা, সেটা হলো--"ঘর ছাড়া এক সুখী ছেলে"। উনি এখনো এই গানটা গান, এটা আমার ভাবনার অতীত ছিলো।

শান্ত [অতিথি] এর ছবি

সবাইকে ধন্যবাদ চমতকার সব মন্তব্য করার জন্য।

৯০ দশকের সেই সময় বাচ্চুর কাছ থেকে চমতকার সব গান আমরা উপহার পেয়েছি।

রাত জাগা পাখি, ঊনিশ কিংবা কুড়ি, হ্যাপী, রিটাযার্ড ফাদার সহ অনেক ভালো ভালো গান এখন আর গান না মনে হয়।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

আইয়ুব বাচ্চুর-র পুরাতন গানগুলো আমার এতো পছন্দের ছিল! অনেক শোনা হতো। ফেরারী মন আনপ্লাগড মারাত্মক একটা অ্যালবাম! সবগুলো গান বহুবার শোনা।

লেখা ভালো লাগল। আরো লিখুন..

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

শো'টা দেখেছি। লাইভ পারফর্মেন্সটা বেশ ভালো লেগেছিলো। 'সুখি ছেলে' আর 'রুপালি গীটার' শুনে অনেক আগে চলে গিয়েছিলাম যেন...

প্যারা ঠিক মত আসেনাই। সামনের লেখায় খেয়াল রাখবেন।

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

অতিথি লেখক এর ছবি

আসলেই আগের গান গুলো এখনো শুনে মন ভরে উঠে।

দলছুট।
===========বন্ধু হব যদি হাত বাড়াও।

ভুতুম এর ছবি

কয়েক মাস আগে গিয়েছিলাম ডায়াট স্ট্রেইট ট্রিবিউটে, আইয়ুব বাচ্চু ছিলেম পারফরমার। ডায়ার স্ট্রেইট করে একে একে করলেন ডোরস, পিন্ক ফ্লয়েড, গানস এন্ড রোজেস। অনুষ্ঠানের শেষ দিকে অনেকটা বিষণ্ন হয়েই যেন বললেন, এগুলোই আমার রুট, করতে চাই এসবই। কিন্তু মিউজিকই পেশা বলে কমার্শিয়াল হতে হয়।

-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি

-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

পুরোনো দিনের বাচ্চু-ই বেঁচে আছে আমার কাছে!
......................................................................................................

আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

বাচ্চু ভাইয়ের একটা শোর কথা কোনোদিন ভুলবো না। বাচ্চু ভাই নিজেও স্বীকার করেন এইটা তার বেস্ট শো ছিলো।

বন্যাদূর্গতদের সাহায্যার্থে পাবলিক লাইব্রেরিতে একটা শো ছিলো। আহকামউল্লার কবিতা, রেজওয়ানা বন্যার গান সহ একটা জগাখিচুড়ি প্রগ্রাম ছিলো। আমি আয়োজকদের একজন ছিলাম। সেখানে বাচ্চু ভাই আইলো ব্যান্ড ছাড়া। শুধু গিটার বাজায়া গান গাইবো।
শুরু করলো বাচ্চু ভাই। প্রথম গানটা কী ছিলো মনে নাই। কিন্তু পাব্লিক খুব বিলা হইলো... তারা দুয়ো ধ্বনি দিলো... একজনরে এমনও বলতে শুনলাম যে "ঐ বাচ্চু, রবীন্দ্র সঙ্গীত গা"
বাচ্চু ভাই অডিয়েন্সের দিকে তাকাইলো একবার। তারপর শুরু করলো গান। তার নিজের যতোগুলা ঠাণ্ডা মেজাজের গান আছে, একে একে গাইলো। এতোটাই দরদ দিয়া গাইলো... পুরা অডিয়েন্সে তখন পিনপতন নীরবতা। বাচ্চু ভাই যখন গাওয়া শেষ করলো, পোলাপাইন সব আইসা তার পায়ে পড়ে গেলো। একেবারে ষাষ্টাঙ্গ প্রণাম।

সত্যি বলি... বাচ্চু ভাইয়ের কমপক্ষে ৫০টা কনসার্ট আমি স্বচক্ষে দেখছি। কিন্তু ঐদিন বাচ্চু ভাই আলাদা লোক ছিলেন। ঐ বাচ্চু ভাইরে আর কোনোদিন পাই নাই।

ঐটা যে তার সেরা পারফর্মেন্স ছিলো সেইটা তিনি এখনো স্বীকার করেন
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

আজকে আবার একটা অনুষ্ঠান আছে ইটিভি তে রাত ৮টায়। অবশ্যই দেখার চেষ্ঠা করবো।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।