সীমানার বাইরে...

নীলকান্ত এর ছবি
লিখেছেন নীলকান্ত (তারিখ: শুক্র, ১৪/০৫/২০১০ - ৯:১০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পলাশ রঞ্জন সান্যাল

(প্রথম পর্ব)

অঙ্কিতা চলে যাচ্ছে।
অনেকটা হঠাৎ করেই। রুদ্রের কল্পনাতেও এচিন্তা আসেনি যে অঙ্কিতা চলে যাবে।
রুদ্র ঘড়ির দিকে তাকায়। ৯টা বাজে। অঙ্কিতা এতক্ষণে এয়ারপোর্টে।
শেষ একবার কথা বলা কি উচিত ছিল?
না। রাতেই তো কথা হলো দাদা আর অঙ্কিতা দুজনের সাথেই।
এসব ভাবতে ভাবতে বিছানা ছেড়ে ওঠে রুদ্র। কদিন আগে ইন্টারের রেজাল্ট দিয়েছে। করার মত কাজ এখন -দিন ধরে ভর্তি কোচিং এ যাওয়া, (তাও ঠিক মত যায় না) টিভি দেখা আর ঘুমানো।
স্কুল জীবন মোটেও সুখের ছিল না রুদ্রের, কিছুটা নিজের দোষে, কিছুটা পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে।
অনেক কিছুই বুঝতো না, বুঝতে চাইতো না রুদ্র। অনেক কিছু মেনে নিতেও পারতো না।
ঝগড়া করত, মারামারি করত্ত, আর বাসায় এসে সবকিছু নিয়ে ভাবতো।
কিন্তু এর মাঝেও স্কুলের শেষের দিকে একজন প্রকৃত বন্ধু পেয়েছিল রুদ্র।
অঙ্কিতা।
হঠাৎ করেই তাদের বন্ধুত্বের শুরু। দরকারের কথা বলতে গিয়ে অদরকারের কথা শেষে বন্ধুত্ব।
অঙ্কিতা আর রুদ্রের বন্ধুত্বের কথা কেউ জানতো না। অঙ্কিতা বা রুদ্র দুজনের কেউই চাইতো না অন্য কেউ জানুক। কারণ দুজনকেই তাহলে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হতো।
রুদ্রের প্রতিদিন অঙ্কিতার সাথে কথা বলতে হবেই। সারাদিন কি হয়েছে এসে বলা চাই ই চাই। না বললে রুদ্র শান্তি পেত না। কলেজ, কোচিং শেষ করে বাসায় ফিরে একবার হলেও অঙ্কিতাকে কল দিত রুদ্র। কে কি বলেছে, কোথায় কি হয়েছে সব বলা চাই।
অঙ্কিতাও শুনতো। নিজের কথাও বলতো। ওদের দেখা হতো না। স্কুলের পর হাতে গোনা কয়েকবার দেখা হয়েছে। তাও অপরিকল্পিত সাক্ষাৎ।
রুদ্রের কাছে অঙ্কিতা পরম এবং অকৃত্রিম এক বন্ধু, যাকে সব বলা যায়, যার সব কথা শোনা যায়।
কলেজের শেষের দিকে অঙ্কিতার এক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রথমদিকে রুদ্রকে একটু আধটু আন্দাজ দিয়েছিল অঙ্কিতা। দাদ্র সাথে অঙ্কিতার সম্পর্ক হবার অনেক পরে দাদার সাথে পরিচয় হয় রুদ্রের।
সম্পর্ক, বিশেষ করে প্রেমের সম্পর্ক হলে বন্ধুদের আগের মত সময় দেওয়া আর যায় না। অঙ্কিতার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল। রুদ্র মেনে নিয়েছিল ব্যাপারটা। তবুও তাদের কথা হতো, আগের মতো না হলেও হতো।
রুদ্র রেডি হয়। কোচিং আছে।
রুদ্রের এক বড় সমস্যা একবার একটা জিনিস মাথায় ঢুকলে সহজে বের হয় না।
মোবাইলটা পকেটে নেবার আগে সময় দেখতে গিয়ে দেখে ৩টা মিসকল। অঙ্কিতা দিয়েছে।
রুদ্র তাড়াতাড়ি ফোন দেয়। বেশি আগে কল করেনি অঙ্কিতা। ৪ মিনিট।
ভাগ্যক্রমে পেয়ে যায় অঙ্কিতাকে।
“হ্যালো, রুদ্র আমি প্লেনে। এখনও টেক অফ করেনি। ভাবলাম তোমার সাথে শেষবার একটু কথা বলি।”
রুদ্র খুশি হয়ে যায়।
“আমি আবার কবে আসব জানি না, তোমার সাথে যোগাযোগও করা হবে না।হ্যালো শুনতে পাচ্ছো?”
রুদ্র সম্মতিসূচক উত্তর দেয়।
তুমি ভালো থেকো আর পারলে মাঝে মাঝে রাজীবের খবর নিয়ো। এখন রাখি প্লেন মনে হয় টেক অফ করবে।”
অঙ্কিতা ফোন রেখে দেওয়ার পর রুদ্র কিছুক্ষণ বসে থাকে খাটে।
তারপর একটা ছোট্ট শ্বাস ছেড়ে ব্যাগ কাঁধে বের হয়ে আসে বাইরে।
রিক্সা নিয়ে রওনা হয় গন্তব্যের দিকে।
কিছুক্ষণ পর এয়ার ইন্ডিয়ার এক প্লেন চলে যায় একই দিকে রুদ্রের মাথার ওপর দিকে।
রুদ্র তাকায়। তাকিয়ে থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত না চোখের সীমানার বাইরে চলে যায়। ঠোঁটে তখন তার এক চিলতে হাসি।


মন্তব্য

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

ক্যাটেগরী এইরকম কেনু?

---------------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

অতিথি লেখক এর ছবি

আশা করি পরের পব শীগ্রই পাবো।

মিতু
রিফাত জাহান মিতু

miturifat@gmail.com

হরফ এর ছবি

পলাশ শুরু তো ভাল-ই করেছেন, চালিয়ে যান জোর কদমে। " দাদ্র সাথে"-মানে বুঝলাম না। তার সাথে হবে কি?
-----------------------------------------
"ছুটলে কথা থামায় কে/আজকে ঠেকায় আমায় কে"

ছুটলে কথা থামায় কে/আজকে ঠেকায় আমায় কে

স্পার্টাকাস এর ছবি

কিছুটা আন্দাজ করছি, দেখি কোন দিকে যায় দেঁতো হাসি
তাড়াতাড়ি ছাড়েন।

---------------------------------------
জননীর নাভিমূল ছিঁড়ে উলঙ্গ শিশুর মত
বেরিয়ে এসেছ পথে, স্বাধীনতা, তুমি দীর্ঘজীবি হও।

জননীর নাভিমূল ছিঁড়ে উলঙ্গ শিশুর মত
বেরিয়ে এসেছ পথে, স্বাধীনতা, তুমি দীর্ঘজীবি হও।

অতিথি লেখক এর ছবি

@শু্ দাঃ খেয়াল করি নাই। ভুলে হয়ে গেছে। উপন্যাস হবে।দুঃখিত অনাকাঙ্খিত ভুলের কন্য।
@হরফ ঃ দাদা হবে। সংশোধনের জন্য ধন্যবাদ।
@স্পার্টাকাস এবং মিতু ঃ মাঝখানের কিছু অংশ লেখা শেষ। এর পরের অংশটা মানে দ্বিতীয় পর্ব কিভাবে শেষ করব বুঝতেছি না। শেষ হলেই পোষ্ট করবো। আপনাদের মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
পলাশ রঞ্জন সান্যাল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।