পত্র

নীলকান্ত এর ছবি
লিখেছেন নীলকান্ত (তারিখ: শুক্র, ০৮/০১/২০১৬ - ২:৫৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রিয় স্বাক্ষর,

নামের বানানটা ভুল হয়ে থাকলে ক্ষমা করে দিও। আসলে তোমার সাথে আমার আগেই কথা বলা উচিত ছিল। কিন্তু বলবো বলবো করে কখন যে সময় শেষ হয়ে গেল বুঝে উঠতে পারিনি। আজ তাই মাঝরাতে তোমায় লিখতে বসা। আমার কেনো জানি অনেক কষ্ট হচ্ছে আজ, এক ধরনের অপরাধবোধ, মমতা আর অসহায়ত্ব। কিছু না করতে পারাটা কেন যেন মেনে নিতে পারছি না।

তোমায় নিয়ে গল্প লিখবো বলে ঠিক করেছি। বললে বিশ্বাস করবে না, কিভাবে যেন তুমি তিন প্রজন্মের এক অভূতপুর্ব বিষাদময় গল্পের অংশ হয়ে গেছো।

তুমি জেনে খুশি হবে, আমি ওকে এখন পর্যন্ত কাঁদতে দেখিনি। বিষয়টা আজ আমাকে হঠাৎ করে অবাক করেছে। গত পাঁচদিনে একবারের জন্য আমার মাথায় আসেনি অর স্বাভাবিকত্ব কতটা অস্বভাবিক। জীবন আসলেই আমার মতো মানুষকে হৃদয়হীন বানিয়ে ফেলে।

হয়তো কোথাও ছিঁটেফোঁটা আবেগ এখনও বেঁচে আছে, তাই মাঝরাতে এই লিখতে বসা, চোখটাকে ভিজিয়ে তোলা।

মা শুনলাম সিঁড়িতে বসে পড়েছিল। বাইরে যখন তার চোখ ভেজা, মনে শত ইচ্ছা একবার মাথায় হাত বুলিয়ে দেবার, ও তখন হাসি মুখে তাকিয়ে তাকিয়ে ছিল। কি যত্নেই না ও ওর কষ্টগুলো ঢেকে রেখেছে।

ও আমাকে অনেক কঠিন এক মানুষ মনে করে। তাইতো একবারও কাছে এসে বা ফোন করে বলেনি, "কিছু একটা করো, আমাকে একবার বলো ও ভালো হয়ে যাবে।" ও জানতো, তুমি আর কোনদিন ফিরবে না। ও মাঝে মাঝে বলে, "আসলে আমাদের ভাগ্যটাই খারাপ।" আমি ভেবে দেখি—আসলেই।

আফসোস থাকবে আমার, একবার অন্তত দেখা হতে পারতো। আফসোস থাকবে, আমি একবার চাইলে ফোনে কথা বলতে পারতাম।

এই আফসোসগুলো আমাকে আজীবন তাড়া করবে। জীবন থেমে থাকবে না, কিন্তু তোমার মৃত্যুটা আমাকে অনেককিছু শিখিয়ে গেছে। কেন, জানি না। এক মুহূর্ত থমকে বাইরে বৃষ্টিটা দেখেছি।

আমি ঠিক করেছি, তোমাকে মাঝে মাঝে লিখবো, জয়াকে লিখা হয়নি। কিন্তু তোমাকে আমি লিখবোই। হয়তো তাতে আমার অন্তর একটু শান্তি পাবে। ও তোমাকে খুবই ভালবাসতো, অভিমানী মানুষদের প্রকাশের ভঙ্গি আলাদা হয়, ও ব্যতিক্রম নয়।

তোমার মুখের হাসিতা কেন জানি ভুলতে পারছি না। হয়তো, বাবার মুখের মতো তোমার মুখটাও আমাকে কয়েক মাস ঘুমোতে দেবে না। ভালো মানুষগুলোকে এভাবেই অকালে চলে যেতে হয়।

তুমি বিশ্বাসী ছিলে, আমি প্রার্থনা করি তোমার ঈশ্বর তোমায় যেখানেই রাখুন, শান্তিতে রাখুন।

আজ এপর্যন্তই।

ইতি—
তোমার হতভাগ্য কাছের মানুষ।


মন্তব্য

মেঘলা মানুষ এর ছবি

মন খারাপ

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

কেমন একটা কনফিউশন নিয়ে শুরু লেখা। অথচ সম্পর্কটায় কনফিউশন নেই।

বললে বিশ্বাস করবে না, কিভাবে যেন তুমি তিন প্রজন্মের এক অভূতপুর্ব বিষাদময় গল্পের অংশ হয়ে গেছো।

চলুক

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।