রাশিয়ার দিনলিপি

নীলকান্ত এর ছবি
লিখেছেন নীলকান্ত (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৮/১২/২০১৪ - ৭:৩৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

"হুয়াই ইউ আর হিয়ার?"
ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংলিশে রুশ রমণীর জিজ্ঞাসা। কাউন্টারের এক পাশে দাঁড়ানো আমি তার বয়স বোঝার চেষ্টা করি। রুশ নারীদের বয়স বোঝা অধিকাংশ ক্ষেত্রে কঠিন, ভারী সাজসজ্জা আর পোশাকের ভিড়ে।
বিষয়টা এমন নয় যে, রাশিয়ান মেয়েরা দেখতে অসুন্দর। বিষয়টা হলো, তাহারা সর্বদা পরিপাটি (মেকাপ) থাকতে পছন্দ করে। ভিখারীর পোশাকও আমার পোশাকের চেয়ে দামী।
অবশ্য ভিখারী খুব একটা দেখা যায় না। অন্তত গত দু'বারের অভিজ্ঞতা তাই বলে। এবার অবশ্য অবস্থা ভিন্ন। এমন এক সময় রাশিয়ায় এলাম যখন রুবেলের দাম গত চার মাসে অর্ধেক হয়ে গেছে। ১ ডলারে এখন ৬০ রুবেল পাবো, ৪ মাস আগে হলেই ৩০ পেতাম। বিষয়টা আমার জন্য যতটা সুখের, রাশিয়ানদের জন্য তার দ্বিগুণ চিন্তার।
রাশিয়া, এক অদ্ভূত দেশ। যে দেশে জন্ম নেওয়া যেকোন নাগরিকের আর যাই থাকুক না কেন নিজের দেশ নিয়ে গর্ব আছে, গরিমা আছে, আছে হারানো দিনের স্মৃতিকাতরতা। প্লেনে আসতে আসতে তিনজনের সাথে পরিচয় হলো। একজন জার্মান প্রবাসী রুশ, বছরের ৮ মাস জার্মানি আর বাকি সময় সেইন্ট পিটারসবার্গ। না এসে থাকতে পারে না ভ্লাদিমির। ৮৬ বছরের মা, আর ৪৩ বছর বয়সী বান্ধবী ছেড়ে জার্মানি থাকতে মন চায় না। কিন্তু অর্থ উপার্জনের ভালো বন্দোবস্ত থাকায় জার্মানি তাকে ফিরে যেতে হয়।
পরিচয় হলো নাতালিয়ার সাথে, মার্কিন-রুশ দ্বৈত নাগরিক। ৭ বছর আগে প্রেমের টানে আমেরিকায় পাড়ি দিয়েছিল নাতালিয়া। বয়স এখন ৬০। ফিরে যাচ্ছে ছেলের কাছে, বছরে দু'বার যাওয়া হয় তার।
লুবভের মন ছিল বিষণ্ন। মার মৃত্যু হয়েছে শুক্রবার, তিনদিন পর যাচ্ছে, দেশে না থাকবার এক অব্যক্ত যন্ত্রণা তার কথায়।
রাশিয়ানরা সবসময় বাইরে গোমড়া মুখো। মার্কিনদের মতো কথা না বার্তা নাই, "হাই হাঊয়ার ইউ?" বলে উত্তরের অপেক্ষা না করে চলে যায় না। প্রশ্ন করলে উত্তর প্রত্যাশা করে, প্রশ্ন করলে উত্তর দেবার চেষ্টা করে, ভাষা না জানলেও। আন্তরিকতা অন্য রকমের।
শুধুমাত্র কাস্টমসের লোকদের ছাড়া। প্রথমবার প্রত্যাশা ছিল আধা ঘন্টায় ছেড়ে দিবে। লেগেছিল এক ঘন্টা। আমার পাসপোর্ট আর ভিসা দুটো ঘন্টাখানেক পরীক্ষা করে দেখেছিল। মস্কোতে বিমানবন্দর চারখানা। এবং কোনটাই ফ্রাঙ্কফুর্ট বা নিউ ইয়র্ক থেকে ছোট না, কিন্তু ব্যস্ততার দিক থেকে অনেক পেছনে। আমি এখন পর্যন্ত কোথাও ৫ মিনিটের বেশি দাঁড়ায়নি কাস্টমসের লোকের কাছে পৌছানো পর্যন্ত। কিন্ত লোকের কাছে যাবার পর, সে এক অশেষ অপেক্ষা।
প্রতিবারের মত এবারও আর একজন এসে উপস্থিত। এবার ঝামেলা কম হবার কথা, আগের দুইবার সরকারী ভিসা, এইবার ভ্রমণ। আগের দুইবারেরটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে। আবার প্রশ্ন করে।
"হুয়াই ইউ আর হিয়ার?"
-ট্রাভেল।
অ্যান্ড হোয়ার ইউ লিভ নাউ?
-আমেরিকা।
এরপর দুজনের মাঝে ফিসফিসানি। অতঃপর আমার পাসপোর্ট বাবাজির সীল খাওয়া।
"ওয়েলকাম টু রাশিয়া।"
বাইরে আসতেই শীতল হাওয়া। না যতটা ভেবেছিলাম ততটা ঠাণ্ডা না।

সন্ধ্যা হতে শুরু করেছে, বেলা বাজে ২ঃ৩০।
শুরু হলো এবারের রাশিয়া ভ্রমণ, অনেককিছু ভিন্ন এবার-অর্থনীতি, রাজনীতি, উৎসবমুখরতা। এই ভিন্নতা কেমন লাগে, কে জানে। আগের দু'বার মুগ্ধ হয়ে ফিরে গিয়েছি, এবার দেখি কি হয়।

ছবি: 
01/06/2007 - 1:46পূর্বাহ্ন

মন্তব্য

মেঘলা মানুষ এর ছবি

শুরু তো করলেন, বাকিটা আসুক তাড়াতাড়ি হাসি

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

যখন ভাবছি ভ্রমণবৃত্তান্ত বুঝি এখন শুরু হতে যাচ্ছে, তখনই দেখি শেষ।

অতিথি লেখক এর ছবি

পড়তে পড়তে ভাবছিলাম বড় একটা পোস্ট পড়ছি। কিন্তু হঠাৎ পোস্ট শেষ হয়ে গেল!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

৭ বছর আগে প্রেমের টানে রাশিয়ায় পাড়ি দিয়েছিল নাতালিয়া।

এটা মনে হয় আমেরিকা হবে।

প্যারাগ্রাফগুলোতে স্পেস নেই কেন?

একটা ঘটনার কথা বললে সেখানে তোমার মতামত বা ব্যাখ্যার কথাও বলবে। দিনলিপিতে নিজের ভাবনাগুলো ফুটে না উঠলে কি চলে?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

রাশা ভ্রমনের মূল বিষয়টাই তো চাইপা গেলা! এইডা কি ঠিক? ক্রাসিভাদের বিষয়ে বিস্তারিত আসুক পরের পর্বে চোখ টিপি

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।