জং-ধরা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ১৬/০৫/২০১০ - ১:১২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১.

একটা গ্লাসে পানি ভর্তি করে টেবিলে রাখা আছে। টেবিলটা মনসুরদের বাসার খাওয়ার টেবিল। আমি তাদের বাসায় দুপুরে ভাত খাওয়া শেষ করে, খালি থালা সামনে নিয়ে বসে আছি, পানিটা খেয়েই চেয়ার ছেড়ে উঠব। এই সময়ে মনসুর বেসিনে হাত ধুতে ধুতে বলল, তুই যদি গীটারটা শিখিস তাহলে আমারও কিছু সুবিধা হয়। এই ধর কারো সাথে প্র্যাকটিস করতে পারি না, তুই একটু শিখে পড়ে নিলে দুই জন মিলে জ্যামিং করা যাবে।

এস.এস.সি পরীক্ষা শুরুর আগে মা বলেছিলেন, আমি যতগুলা বিষয়ে লেটার পাব আমাকে তত হাজার টাকা দিবেন। এখন রেজাল্টের পর আমি মায়ের কাছে চার হাজার টাকা বাগানোর ধান্ধা করছি আর সেটা কি কাজে লাগাবো তাই নিয়ে মনসুরের সাথে আলোচনা করছি। মনসুরের অবশ্য একটা অ্যাকুইস্টিক গীটার আছে, দেখতে সুন্দর ঝলমলে রঙীন। ইন্ডিয়ান গীটার, কিছু দিন আগে নতুন তার লাগিয়েছে, এখন যা সুন্দর শব্দ বের হয় না! একে বারে মাথা খারাপ হয়ে যায়। আমার অবশ্য পিয়ানোর শব্দ অনেক ভালো লাগে গীটারের চেয়ে, ভাবছিলাম যদি কোথাও পিয়ানোর লেসন নেওয়া যেত। আমি পিয়ানো সম্পর্কে তেমন কিছুই জানি না, মাঝে মাঝে টিভিতে দেখি অথবা কোন গানে শুনি এছাড়া তেমন কোনো ধারনা নাই। আর কোন বন্ধুর বাসায়ও নাই যে যেয়ে সামনা সামনি দেখব। আমার পিয়ানোর শব্দ ভালো লাগে, কেন লাগে তা আমি বলতে পারব না। তবে মনসুর বলল গীটার কেনাটাই ভাল হবে কারন গীটার শেখার জন্য নাকি লেসনের কোন অভাব হবে না, আর গীটার কাধে ঝুলিয়ে সহজে এ জায়গা থেকে ও জায়গায় নিয়ে বেশ ঘুরাঘুরিও করা যাবে।

২.

আমার ঘরটা তেমন বড় না, বাবা-মা আর বড় বোনের ঘরগুলো আমার চেয়ে বড়। কম্পিউটার ও তার টেবিল, পড়ার আলাদা আরেকটা টেবিল, চেয়ার, বুক শেল্ফ, একটা ছোট আলমারি আর খাট, ব্যাস, আর ঘরে পা ফেলার মত বেশী কোন জায়গা নেই। ওই এক ফালি খালি জায়গায়, মেঝেতে বসে মনসুর কীভাবে গীটারটায় তার লাগাচ্ছে দেখে আমি বার বার আতকে উঠছি, আমার নতুন ঝকঝকে গীটার, খাটের গায়ে ঠোকা লাগিয়ে দাগ ফেলে দিবে না তো?

গীটারটা কেনার আগে মায়ের কাছে টাকা চাইতে গিয়ে দেখি বাবা বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে আছে আর মা আলমারিতে কী জানি খুজছে। এই সময়ে ঘরে ঢুকব নাকি বুঝতে পারছিলাম না, তবে মা পিছনে ফিরে আমাকে দেখে বললেন, কি ব্যাপার? মাকে তার দেওয়া প্রতিশ্রুতি মনে করিয়ে দিতেই, বাবা বিছানা থেকে বলা শুরু করলেন, অ্যা? ছেলের মাথায় গীটার ঢুকেছে? এ্যাতো ছেলে মেয়ে জিপিএ ফাইভ পায় আর এই বোকা ছেলেটা কয়েকটা লেটার পেয়েই ধেই ধেই করে নাচা নাচি শুরু করেছে? এখন তো তাইলে সে গীটার নিয়েই লাগবে। দেখ উৎসবের মা, এই ছেলে গীটার কিনলে কিন্তু সারা দিন গান বাজনা করবে....আমি এখনই বলে রাখছি তুমি দরকার হলে লিখে টিখে রাখতে পার......।

আমি ছিটকে ঘর থেকে বের হয়ে আসছিলাম, না এসে উপায় ছিল না, মনে হচ্ছিল চোখ দিয়ে পানি পড়বে কিন্তু মা দরজার কাছে এসে আমাকে ধরে ফেললেন। মা বাবার দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি থামো তো! এর পর অবশ্য গীটারটা কিনতে কোন সমস্যা হয় নি, মা আমাকে সেদিন পাচশ টাকা বেশী দিয়ে ছিলেন আর আমি লাফাতে লাফাতে মনসুরকে নিয়ে একটা ঝকঝকে কালো রঙের অ্যাকুইস্টিক গীটার আর এক সেট নতুন তার কিনে নিয়ে আরো বেশী লাফাতে লাফাতে বাসায় ফিরে এসেছিলাম!

মনসুরের তার লাগানোর প্রকৃয়া শেষ, এখন সে ট্যাং ট্যাং করে শব্দ করছে, আমি বললাম, কি রে তুই কি করছিস! সে বলে, গীটারটা টিউন করতে হবে না? ওহ! তোকে তো আমার কিছু লেসন দিতে হবে না হলে কথা-বার্তা কিছু বুঝবি না! আচ্ছা শুন এই জং-ধরা পুরানো তারগুলো কি করবি? যা ফেলে দে। আমি পুরানো তারগুলো কুড়িয়ে নিয়ে রান্না ঘরে এলাম, এখানে একটা ময়লা ফেলার বালতি আছে, আর দুই কাপ চা'ও বানাবো।

৩.

সারাটা সপ্তাহ ধরে গীটার নিয়ে টুং টাং করছি, যে ধরনেরই শব্দ বের হচ্ছে তাতেই মুগ্ধ হচ্ছি, তবে বীথি আপু এসে বলে গেছে দরজা-জানালা লাগিয়ে সাধনা করতে না হলে বাবা ঝাটা নিয়ে উপস্থিত হতে পারে। আমি অবশ্য আশঙ্কাটা পুরোপুরি উপেক্ষা করতে পারছি না আবার সব সময় দরজাটাও লাগাতে পারছি না, লাগালেই বাবা বা মা কেউ এসে ওপাশ থেকে হাক ছাড়বে, উৎসব তুই দরজা লাগিয়ে কি করছিস? খুলতো দেখি, এখুনি খুল!

মনসুর একটা কাগজে কিছু কর্ডের নাম লিখে দিয়ে গেছে, বলেছে ,তুই এখান থেকে ইচ্ছা মত কিছু কর্ড নিয়ে গীটারে বাজা, কেমন লাগে দেখ। নেটে গীটারের অনেক লেসন পাবি, পড়া শুরু কর। আমি অবশ্য মেজর মাইনর ইত্যাদি কর্ড নিয়ে একটার পর একটা বাজানোর চেষ্টা করছি তাতেই কখন যে সময় চলে যাচ্ছে বুঝতে পারছি না। এই কারনে কিছুটা সাবধানে থাকতে হচ্ছে কারন সামনে কলেজ ভর্তি পরীক্ষা, বাসায় শুধু শুধু গ্যাঞ্জাম করা ঠিক হবে না।

৪.

একটা গ্লাসে সেভেন আপ ভর্তি করে টেবিলে রাখা, উপরে বরফ ভাসছে। টেবিলটা মনসুরের পড়ার টেবিল। আমি কাচের প্লেট থেকে বিস্কুট হাতে নিয়ে বললাম, কেমনে ভাঙল? মনসুর আমার দিকে না তাকিয়ে বলল, আমি যখনই মা'রে বললাম যে ভাল কোন কলেজেই ভর্তি হতে পারিনি, মা চিৎকার চেঁচামেঁচি শুরু করল, এরপর ক্যামনে কী, আমারে বুকে ধাক্কা দিয়া, ঘরে ঢুইক্যা গীটারটা উচু কইরা তুইল্যা সরাসরি মেঝেতে দিছে বাড়ি। দোস্ত! চোখের সামনে গীটারটা চুরমার হইয়্যা গেল, তুই বিশ্বাস করবি না আমি পাথরের মত দাড়ায়ে ছিলাম, থাপড়ায়া আমারেও মেঝেতে ফালায়া দিছে। এই দেখ দরজার সাথে লেগে গালটা কেটে গেছে। ...আমি রাইগ্যা-মাইগ্যা সবার সাথে কথা বলা বন্ধ কইরা দিছি, তুই যে আসছিস তোর সাথেও কথা বলতে ইচ্ছা করছে না। আচ্ছা শুন, তুই বাড়ি যাগা, এই সেভেনাপ টা তোর খাওয়া লাগবে না আমি খাব।

আমি অর্ধেক গ্লাস ফাঁকা করে মনসুরের বাসা থেকে বের হলাম এবং সরাসরি বাসায় যেয়ে গীটারটা কালো ব্যাগটায় ঢুকিয়ে রাখলাম। সময় আমারও খারাপ, আমি নিজেও ভাল কোথাও চান্স পাইনি, বীথি আপু বাবার সাথে এক পশলা ঝগড়া করেছিল গতকাল আমার পক্ষ নিয়ে। আমি নিজেও ঝড়ের আশঙ্কা করছি।

৫.

মনসুরের কলেজ আর আমার কলেজ ভিন্ন হল, এই কারনে আগে যে রকম এক সাথে যাওয়া আসা হত এবার তেমন একটা হল না। সে দিন কলেজ থেকে ফিরার সময় দেখি মনসুর তার নতুন কলেজের বন্ধুদের সাথে রাস্তার মোড়ে চায়ের দোকানটায় সিগারেট খাচ্ছে। সে চুল বড় রাখছে খেয়াল করলাম। আমার একটা কোচিং থাকায় আমি থামতে পারলাম না, পরে ওর বাসায় যাব খোঁজ খবর নিতে। কয়েক দিন আগে অবশ্য দেখা হয়েছিল, তখন বলল নতুন একটা গীটার কিনেছে। ইদানিং হাবভাবে কেমন জানি বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছে মনসুর।

৬.

আজকে একটা পরীক্ষা আছে পদার্থ বিজ্ঞানের উপর, ক্লাস টেস্ট, আর দুই ঘন্টার মধ্যে ঘর থেকে বের হব। আজকে আবার কাজের বুয়াটা আসে নি। মা আর বীথি আপু নানা বাড়ি গিয়েছে গত পরশু, আজকে বিকেলে চলে আসবে। অঙ্কগুলোতে গিয়ে বারবার সুক্ষ সুক্ষ ভুল করছি, এই সময় দেখি বাবা ঘরে ঢুকেছেন। উনি মনেহয় নিজেই ঘর ঝাড়ু দিচ্ছিলেন এতক্ষণ, হাতে বারুণ, উনার অফিসে যাবার কথা এখন। আমার মাথায় ঘুরছে পদার্থ বিজ্ঞানের 'বেগ' আর 'ত্বরণ', অঙ্ক মিলছে না, চোখে বাবাকে দেখছি কিন্তু উনার কথা বুঝতে পারছি না, কিছু একটা বলছেন মনে হল। এই সময়ে বাবা চিৎকার করে উঠলেন, উনি বারুণটা দিয়ে আমাকে মাথায় একটা ঘা দিলেন তারপর কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন। আমি কিছুই বুঝলাম না, আর বাকী পড়াটুকুও শেষ করতে পারলাম না। আমি বাসা থেকে বের হলাম, কলেজে যাবার পথে চায়ের দোকান থেকে একটা সিগারেট ধরিয়ে উদাস মনে হাটতে লাগলাম।

পরীক্ষাটায় একটা অঙ্কও মিলাতে পারলাম না। ফেরার পথে মনসুরের বাসায় গেলাম। আমাকে দেখেই মনসুর বলল, এই তোর কাছে কি সিগারেট আছে? দে তো একটা। আমি এই মাত্র খেয়াল করলাম শেখ ছাড়া বাকী গোল্ড-লীফগুলা শেষ। একটা গোল্ড লীফ দিয়ে খেতে ইচ্ছে করছে।

আমি পকেট থেকে একটা লাল বাক্স বের করে ওর হাতে দিলাম। সে একটা ডায়েরী খুলে, হাতের বাক্সটা থেকে একটা সিগারেট বের করে আঙ্গুল দিয়ে আলতো করে মোচড়াতে থাকে আর ভিতর থেকে তামাকগুলো ঝরে ঝরে পড়তে থাকে সেখানে। আমি বললাম, কিরে তুই কি সিগারেট হালকা করে খাস নাকি? মনসুর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ওহ! তোকে তো বলা হয় নি!

সেদিন সন্ধায় বাসার দরজায় বেল দিয়েছি, দেখি বীথি আপু চলে এসেছে, দরজা খুলে দিল। আপু আমার দিকে অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে বলল, শুন, তুই কখনও আর চোখ লাল করে আমার সামনে আসবি না। আপুর চোখে কেমন যেন অবিশ্বাসের দৃষ্টি, আমি তার সামনে থেকে পালিয়ে আমার ঘরে ঢুকলাম, দরজাটা বন্ধ করে দিলাম। একটা গান ছেড়ে দিলাম পিংক ফ্লয়েডের, কমফোর্টেবলি নাম্ব। নিজেকে আমার পাখির পালকের মত ভাসমান মনে হল।

৭.

আমি নিজেকে আস্তে আস্তে সচল করতে চেষ্টা করলাম, সামনে এইচ.এস.সি পরীক্ষা, কোন মতেই খারাপ করা চলবে না। এরপর তো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য মহাযুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে, এখন সচেতন না হলে তখন একেবারেই টিকতে পারব না। বিথী আপু প্রতিদিন কিছু সময় আমার সাথে এসে গল্প করে, সাহস দেয় , এটা ওটা কিনে আনে আমার জন্য। আমি মন দিয়ে পড়ার চেষ্টা করি।

সে দিন শুক্রুবার সকালে মা এসে বলল, মনসুর দরজায় দাড়িয়ে আছে, ভিতরে ঢুকবে না, তোর সাথে কথা বলে চলে যাবে। মনসুর ফোন দিয়ে ছিল অবশ্য কিছুক্ষণ আগে, বলেছিল তার বেশ কিছু অডিও সিডি আমার কাছে আছে, সেগুলো সব নিয়ে যাবে। আমি সিডিগুলো হাতে নিয়ে দরজার কাছে গিয়ে দেখি, মনসুর এই কয়েক মাসে একে বারে শুকিয়ে গেছে। ওর চোয়াল ভাঙা, চোখগুলো ঘোলাটে নির্জীব, দেখে মনে হচ্ছে মৃত মানুষ, আগের মত কোন অনুভুতির স্পন্দন নাই। আমি বললাম, কিরে পিনিকে আছিস নাকি?

সে একটা হাসি দিয়ে আমার হাত থেকে সিডিগুলা নিল, তারপর বলল, আমি সেদিন তিরিশটা ফ্রিজিয়াম খেয়ে মরার ট্রাই করলাম কিন্তু কোন কাজ হল না...এরপর সে বিড়বিড় করতে করতে সিড়ি দিয়ে নেমে চলে গেল। আমি দরজায় অপ্রস্তুত হয়ে দাড়িয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ। তারপর মনে পড়ল, আমার জীবন এখন আমার হাতে, আমি পরীক্ষার পড়া পড়তে শুরু করলাম, যেখান থেকে উঠে গিয়েছিলাম ঠিক সেখান থেকে।

৮.

এইচ.এস.সি পরীক্ষার আর এক মাস বাকী, আমি মডেল টেস্ট দিতে দিতে নিজের হালত খারাপ করে ফেলেছি, এমনই একটা সময় মনসুরের মা আমাকে বাসার টি.এন্ড.টি তে ফোন দিলেন।

"বাবা তোমার বন্ধুতো লাশ হয়ে ঘরে ফিরেছে.."
"জ্বী?"
"তোমার বন্ধু তো আর নাই, বাবা..."
"আন্টি...আমি...."

৯.

আমার এইচ.এস.সি পরীক্ষা খুব একটা ভাল হয় নি। তবে এই বার আমাকে বাসায় কেউ কিছু বলেনি। আমি মাঝে মাঝে ঘরে সিগারেট খেলেও কেউ কিছু বলে না। আমি সেদিন সিগারেটটা ছাই দানিতে নিভিয়ে ফেলে গীটারটা কালো ব্যাগ থেকে বের করলাম। ব্যাগের ভিতর থেকে মনসুরের লিখা কিছু কাগজ বের হল, যেখানে সে আমাকে কিছু কর্ড চার্ট, মিউজিক থিওরি, কিছু কর্ড প্রগ্রেশন, কিছু গানের কথা ও কর্ড লিখে দিয়েছিল। 'মনে পড়ে' নামে একটা গান ছিল ওয়্যারফেজের, সবাই গীটার শিখার সময় ওই গানটা তুলে, মনসুর সেই গানটা একটা কাগজে লিখে দিয়েছিল।

অনেক দিন গীটার বাজাই না, 'মনে পড়ে' গানটা বাজানোর জন্য কাগজে লিখা একটা কর্ড ধরে গীটারে একটা মৃদু টোকা দিলাম। তারগুলোতে কেমন যেন জং-ধরে গেছে, আর গীটারের টিউনও ঠিক নাই। আমি কি করব বুঝতে পারলাম না, গীটারটা নিয়ে বসে থাকলাম। আর মনসুরের সেই দিনের চেহারাটা মনে পড়ল, যেদিন আন্টি আমাকে ফোন করেছিলেন। সেদিন কয়েক ঘন্টা পরে আমি ওদের বাসায় গিয়েছিলাম। আন্টি আমাকে কি যেন বলেছিলেন হবে হয়ত হেরোইন ওভারডোজ, ঠিক খেয়াল করি নি, কারন আমি মেঝেতে রাখা কফিনের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। একটা হলদেটে লম্বা কাঠের বাক্সের ঢাকনাটা খোলা, সেখানে মনসুর শুয়ে ঘুমাচ্ছে। আমি নিশ্চিত সে মরে নি, এক্ষুণি আশেপাশের মানুষের মৃদু কথা-বার্তায় সে জেগে উঠবে। তার গালে খোচা খোচা দাড়ি। একজন সুদর্শন লম্বা তরুণ, কেমন নিশ্চিন্তের মত শুয়ে ঘুমাচ্ছে, মনে হচ্ছে অনেক-অনেক দিন পর তার এই ঘুমের সুযোগ হয়েছে। পাশে একটা টুলে তার মা বসে আমাকে কি যেন বলছেন বা কাঁদছেন কিছু একটা নিয়ে, কিন্তু তখনও শুধু আমার মনে হচ্ছে মনসুর এখুনি উঠে বসবে, এখুনি। বলবে, এ্যাই! তোর জং-ধরা তারগুলো ফেলে দিয়ে আয়।




ছেড়া পাতা
ishumia@gmail.com


মন্তব্য

দ্রোহী এর ছবি

গল্প ভালো লেগেছে।

ছেঁড়া পাতা হওয়া উচিৎ নামটা!

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ।

নামটা নিবন্ধন করার সময় বানান ভুল করেছিলাম, এখন শুদ্ধ করে লিখলে পরবর্তীতে কোন সমস্যা হবে না কী বুঝতে পারছি না। তাই ...।


ছেড়া পাতা
ishumia@gmail.com

দ্রোহী এর ছবি

contactঅ্যাটsachalayatan.com এ মেইল দিয়ে অনুরোধ জানান।

সচলায়তনে স্বাগতম। হাত-পা খুলে লিখতে থাকেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

...খারাপ না......সুন্দর লাগসে

জনাব.বুড়ি

দময়ন্তী এর ছবি

পড়লাম৷
ভালই লাগল৷
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

মর্ম এর ছবি

বিষয় বাছাই ভালো লাগলো।
লেখার ধরণও সুন্দর।
পরের লেখা আরো সুন্দর হোক। হাসি
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ।
পরের লিখা আরো সুন্দর করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাব।


ছেড়া পাতা
ishumia@gmail.com

বইখাতা এর ছবি

ভালো লেগেছে আপনার গল্প।

মহাস্থবির জাতক এর ছবি

ভালো লাগলো। আপনার ডিটেলসের দিকে নজর, চিত্রনাট্যের মতো কাটা কাটা শটে বর্ণনা, পরিণতি-সব মিলিয়ে, চলুক।
________________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!

(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)

_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!

(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)

অতিথি লেখক এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে!


ছেড়া পাতা
ishumia@gmail.com

শরতশিশির এর ছবি

আমাদের সবার জীবনেই বোধহয় এরকম হারিয়ে যাওয়া বন্ধু আছে। ক'মাস আগে আমার ভাই-এর স্কুল ফ্রেন্ড কোন কারণ ছাড়াই শুধু হতাশায় ভুগে আত্মহত্যা করলো। ব্যাপারটা আমার ভাই আর ওর বন্ধুদের জন্য যে কীরকম কষ্টকর ছিলো, এমনকী আমার জন্যেও, বলে বুঝাতে পারবো না। জীবনের ঘৌড়দৌড়-এ অনেক সময় হাঁপিয়ে ওঠা আমাদের সেজন্য একদন্ড জিরোতে হয়, নিজের শখ-আহ্লাদ - এগুলোর পেছনে সময় দিতে হয়। ভুলে যাই দেখেই আমরা হতাশায়, নিরাশায় আর একাকীত্বে ভুগি, যেখান থেকে মর্মান্তিক ডিসিশন নেওয়া কোন ব্যাপারই হয় না। এটা যদি গল্প না হয়ে থাকে, তো সমবেদনা জানবেন। আর যদি গল্পও হয়ে থাকে, হোক না, গল্প তো জীবন থেকেই উঠে আসে।

ভাল থেকেন। ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা রইলো। হাসি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

অতিথি লেখক এর ছবি

এটা আসলে একটা সত্য ঘটনার উপর ভিত্তি করে লেখা, তবে বেশীর ভাগ দৃশ্যগুলোকে আমি পুরোপুরি ভিন্ন রুপ দিয়েছি। গল্পের সামান্য কিছু দৃশ্য সত্য।

আপনার অনুভবতার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।


ছেড়া পাতা
ishumia@gmail.com

তিথীডোর এর ছবি

গল্প ভালো লেগেছে।
সচলায়তনে স্বাগতম!হাসি

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

প্রখর-রদ্দুর [অতিথি] এর ছবি

যারে ফিরে আসতে পেরেছে সত্যি ঐ পথ থেকে তাদের আর এই জীবন পথে পিছলে ফেলে দিতে পারে এমন কোণ ফাদ থাকবে না...

আমাদের আগামী হোক আমাদের উজ্জল আলোকের শিখায় সবুজ প্রান্তরে । আমরা বাচি আর দশটা মা বাবা স্বাদের সন্তান হয়ে আর দশ জনের ত্রানের ভাই কিংবা বোন হয়ে । হে আগামী আমাদের আশির্বাদ করো ।

আরো লিখুন -

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

ভালো লাগলো! বিষয় নির্বাচন আর বর্নণা ভালো পেলুম। আরও লিখুন। যত লিখবেন ততো ভালো হবে। হাসি

-----------------------------------------------------------------------------------
...সময়ের ধাওয়া করা ফেরারীর হাত থিকা যেহেতু রক্ষা পামুনা, তাইলে চলো ধাওয়া কইরা উল্টা তারেই দৌড়ের উপরে রাখি...

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।