কর্মযজ্ঞ

শিশিরকণা এর ছবি
লিখেছেন শিশিরকণা (তারিখ: বুধ, ২১/০৭/২০১০ - ৩:১৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কারখানার বিশাল ফটকের ভিতরে শ্রমিকেরা ইতস্তত ঘুরে বেড়াচ্ছিল। এর তার সঙ্গে একটু আধটু আলাপ, বিড়ি টানা। ম্যানেজারবাবুরা তখনো এসে পৌছননি। শ্রমিকেরা এই চৌহদ্দির মধ্যেই থাকে, তাদের দূর দুরান্ত থেকে কাজে আসতে হয় না। তাই ম্যানেজারবাবুদের জন্য অপেক্ষা। তারা এসে হুকুম দিলে সেইমত শুরু হবে খাটুনি।

বাবুদের বহন করে আনা গাড়িগুলো ফটকের বাইরে এসে দাড়াবার শব্দ পাওয়া যায়। ফটক এক্তু ফাঁক করে একে একে পিলপিল করে ম্যানেজার বাবুরা ভিতরে ঢুকতে থাকেন। কেউ কেউ এসে সোজা তার অধিভুক্ত শ্রমিকদের উপর হম্বি তম্বি শুরু করেন। কেউ এসে আগে একটু অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে। সারাদিনে হাতে কি কি কাজ় করতে হতে পারে তার আন্দাজ করে। সবাই প্রস্ততি নিতে থাকে কাজের ঘন্টা বাজার জন্য। যেন ঘন্টা বাজার সাথে সাথে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে।

এক সময় সংকেত আসে কাজ শুরু করার। একদল শ্রমিক ছুটে গিয়ে ঘন্টায় বাড়ি দেয় সবাইকে সতর্ক করতে। শোরগোল শুরু হয়ে যায়। ম্যানেজাররা উঠে দাঁড়িয়ে হুম হাম শুরু করে। শ্রমিকরা তার সামনে দাঁড়িয়ে হাতে হাতে রঙের বালতি চালান দিতে থাকে। কেউ সেই রঙ ঢেলে দেয় পাইপের মধ্যে, কেউ জমা করে বড় ড্রামে। একদল শ্রমিক ম্যানেজার বাবুদের নির্দেশ মত দু'টা রঙ মিশিইয়ে তৃতীয় আরেকটা রঙ বানায়। আরেক দল ম্যানেজারের হুকুমে কিছু শ্রমিক নির্দিষ্ট রঙের বালতি পৌছে দিতে থাকে কারখানার পিছনে দাড়া করানো বিশাল কাঁচের জ়ানালার কাছে। কয়েকশ তলা উচু সেই কাঁচের জানালার পিছে ইস্পাতের কাঠামো গড়ে জ়ানালাটাকে ভাগ ভাগ করে ফেলা হয়েছে অনেক গুলা ছোট ছোট জানালাতে। প্রতি তলায় সারি সারি জানালা তাই।
ঘন্টা বাজার কয়েক মিনিটের মাঝেই বালতি বালতি রঙের যোগান এসে হাজির হয় জানালার কাছে। ইস্পাতের কাঠামোর প্রতি তলায় এতক্ষণ অপেক্ষা করা থাকা শ্রমিকেরা এবার কাজে নেমে পড়ে। রঙের বালতি হাতে নিয়ে নির্দিষ্ট জানালা গুলো কেবল রাঙ্গাতে থাকে। তার পিছে আরেকজ়ন যেতে থাকে আরেক রঙ্গে বাকি জানালাগুলোয় রঙ লাগাতে লাগাতে, ঠিক যেমনটা ম্যানেজারবাবু নিচ থেকে চিৎকার করে নির্দেশ দিয়ে চলছেন।

দু'তিন সেকেন্ডের মাঝেই পুরো জানালাটা রঙ্গিন হয়ে উঠে আর জানালার ওপাশের পৃথিবী থেকে দেখা যায়, বাক্সবন্দী জানালায় লেখা হয়ে ফুটে উঠেছে,

auto

গত কয়েক যুগের সিলিকন বিজ্ঞানীদের শ্রম ও আবিষ্কারের প্রতি নতমস্তক বিনম্র অভিবাদন। কি জিনিষ বানাইছে একখান। ইলেক্ট্রনের ছুটছুটি নিয়ন্ত্রণ করে এলাহি কান্ড। কোটি কোটি ট্রানজিস্টর এমন করে ফিট করে ছেড়ে দিছে, সব চুপ চাপ কাজ করে সেবা দিয়ে যাচ্ছে এতকাল। একটা সচল এক মুহুর্তে কতগুলা ট্রানজিস্টর ঠিক ঠাক মত নাচাইতে পারলে মাউজের পয়েন্টার টা এক পিক্সেল নড়ে? মানুষ একটা চিজ বটে!

-শিশিরকণা-
(amihimi@gmail.com)
২০শে জুলাই, ২০১০।।


মন্তব্য

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

আসলেই মানুষ একখান চিজ বটে! ভালো লাগলো।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ। হাসি
-শিশিরকণা-

অতিথি লেখক এর ছবি

হা হা হা... আমি প্রথমে বুঝতেই পারিনি যে .. রঙের বালতি থেকে কিভাবে স্টার্টিং উইন্ডোজ আসলো...এখন বুঝলাম। মজা হইছে।


ছেড়া পাতা
ishumia@gmail.com

অতিথি লেখক এর ছবি

ইলেক্ট্রন কে শ্রমিক আর ভোল্টেজ কে ম্যানেজার দিয়ে বুঝানোর চেষ্টা করেছি। একটা বোতাম চিপি দিলে এই কম্পুর ভিতরে কত ইলেক্ট্রনের দৌড়াদৌড়ি লেগে যায়, তার পরে স্ক্রীনে একটা লেখা উঠে, চিন্তা করলে মাথা ভোঁ ভোঁ করে। আমার উচ্চশিক্ষার বিষয় এইটা, এখনো একটা দুইটা ট্রানজিস্টরকে কন্ট্রোল করা শিখে উঠতে পারলাম না, আর এরা কত কোটি কোটি গুলা এমনভাবে চাবি মাইরা দিছে ছাইড়া, যে জনম্ভর চলতে আছে। এদের এলেম দেখে হিংসা হয়, হতাশা হয়।
-শিশিরকণা-

শাওন [অতিথি] এর ছবি

বিজ্ঞান এর জটিল বিষয়কে গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরার ব্যাপারটা ভাল লগলো । বিজ্ঞান এর জটিল তত্তগুলো কেন যে বইয়ে আরো বেশি জটিল করে লেখে ঠিক বুঝতে পারি না | আপনার কাছ থেকে আরো এ ধরনের লেখা আশা করবো । টেক্সট বই লেখকরা যদি এভাবে লিখতো, তবে কতই না ভাল হতো।

অতিথি লেখক এর ছবি

আজকে এক বন্ধুর বাসায় একটা বই দেখলাম, "কার্টুন ফর লার্নিং কেমিস্ট্রি", বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলের বই। ইংরেজিতে এরকম বেশ অনেক বই দেখেছি, বাংলায় তেমন কিছু নেই। আর উচ্চশিক্ষার লেভেলে বাংলা টেক্সটবই তো নেই-ই। সামুতে একটা সিরিজhttp://www.somewhereinblog.net/blog/himika64/29084544 শুরু করেছিলাম, খুব ধীরে এগোচ্ছে। তবে এমন গল্পের মত করে লিখতে হলে বিষয়টা অনেক ভালো জানতে হয়। যারা দেশে বিদেশে উচ্চতর শিক্ষা নিচ্ছেন, তারা নিজদের বিষয় নিয়ে একটু আধটু লিখলে হতে পারে কাজটা।
-শিশিরকণা-

বইখাতা এর ছবি

মজার! হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।