যদিও আমার আফগানিস্তানবাস ছিলো স্বল্পকালীন তারপরও আফগানিস্তাদের ইতিহাস বিশেষ করে তালিবানদের ইতিহাস নিয়ে আমার যথেষ্ঠ জানার আগ্রহ ছিলো। তালিবানদের সম্পর্কে লিখতে গেলে শুরু করতে হয় ১৮৩৯ সাল থেকে, নাহলে বিস্তারিত প্রেক্ষাপট এবং ঘটনার ধারাবাহিকতা জানা যায়না। আমি এসম্পর্কে আফগানিস্তানের অনেকের সাথে কথা বলেছিলাম এবং কিছু ইংরেজী বইও পড়েছিলাম এবং যা থেকে ভালো ধারণা পেয়েছিলাম। ল ...যদিও আমার আফগানিস্তানবাস ছিলো স্বল্পকালীন তারপরও আফগানিস্তাদের ইতিহাস বিশেষ করে তালিবানদের ইতিহাস নিয়ে আমার যথেষ্ঠ জানার আগ্রহ ছিলো। তালিবানদের সম্পর্কে লিখতে গেলে শুরু করতে হয় ১৮৩৯ সাল থেকে, নাহলে বিস্তারিত প্রেক্ষাপট এবং ঘটনার ধারাবাহিকতা জানা যায়না। আমি এসম্পর্কে আফগানিস্তানের অনেকের সাথে কথা বলেছিলাম এবং কিছু ইংরেজী বইও পড়েছিলাম এবং যা থেকে ভালো ধারণা পেয়েছিলাম। লিখতে গিয়ে উইকপেডিয়ার সাহায্য নিতে হলো সালগুলো ঠিকমতো উল্লেখ করার জন্যে।
যাহোক, তালিবান বর্বরতার যে ভিডিওগুলো দেখেছি, তার কথা মনে পড়লো এখোনও গায় কাঁটা দেয়। বিশ্বাস হতে চায়না যে মানুষ এতো বর্বর হয় কিভাবে! কাবুল শহরের বাইরে একটা পুড়ে যাওয়া স্কুলের অবশেষ এখনও পড়ে আছে।
তালিবানরা ক্ষমতাদখলের পর প্রথমেই যে কাজগুলো করেছিলো তা হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে কম্পিউটার শিক্ষা বিলুপ্ত করেছিলো। ওই পোড়া স্কুলটা কম্পিউটার শিক্ষায় খুব ভালো ছিলো। একদিন তালিবানরা স্কুলের শিশুদের একটা রুমের মধ্যে ঝড় করে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে তারপর আগুন ধরিয়ে দেয়। বাকিটুকু কি আর না লিখলেই নয় .................!
ওরা ঘোষনা দেয় যে কম্পিউটার ভাংলে শয়তানের আসর থেকে মুক্তি পাওয়া যাবেনা কারণ এই কম্পিউটার শেখা বাচ্চাগুলোর মধ্যে শয়তান ইতোমর্ধেই বাসা বেঁধেছে। এই বাচ্চগুলোই বড় হয়ে অন্যদের কম্পিউটার শিখাবে এবং এতে করে মানবজাতির উপরে শয়তানের প্রভাব ক্রমশই বেড়ে চলবে। তাই এদেরকে শেষ করে দিলে শয়তান আর অন্ততঃ এদের মাধ্যমে সম্প্রসারিত হতে পারবে না। এরকমই আরও অনেক বর্বরতা।
সব নষ্টের গোড়া হচ্ছে ১৮৯৩ সালে স্বাক্ষরিত একটা এক পৃষ্ঠার দলিল, বৃটিশ ইনডিয়া ও আফগানিস্তানের মধ্যে। এবং ইংরেজী ভাষায় লেখা সেই দলিলে স্বাক্ষরকারী দু’জনের একজন ইংরেজ আর অন্যজন ইংরেজী ভাষায় বকলম। ইংরেজী বলতে, বুঝতে, পড়তে ও লিখতে সম্পূর্ণ অক্ষম একজন, কিং আমির আবদুর রহমান খান সেই ঐতিহাসিক দলিলের সিগনেটরি। আর দলিলটার নাম হলো “ডুরান্ড লাইন এগ্রিমেন্ট” বা “ডুরান্ড লাইন ট্রিটি”। যার নামে এই দলিলের নাম তিনি ছিলেন তৎকালীন বৃটিশ ইনডিয়ার পারাষ্ট্রসচিব হেনরি মোর্টিমার ডুরান্ড, দলিলের আরেজন সিগনেটরি। এই দলিলের মূল প্রতিপাদ্য ছিলো বৃটিশ ইনডিয়া (বর্তমান পাকিস্তান) ও আফগানিস্তানের মধ্যে একটা কৌশলগত সীমারেখা টানা যে সীমারেখার অন্য পারে আফগানিস্তান কখোনোই ঢুকবে না এবং যার ফলে আফগানিস্তানের কিছু অংশ বৃটিশ ইনডিয়ার সাথে এমনিভানে অঙ্গীভূত হবে যেখানে আফগানিস্তানের কোনওরকম কর্তৃত্ব থাকবে না। এখানে ডুরান্ড লাইনের একটা ম্যাপ দিলাম, সেল্ফ এক্সপ্লেনেটরি।
এই দলিলের আগে বৃটিশ ইনডিয়া ও আফগানিস্তান দুইবার পরষ্পরের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। প্রথম যুদ্ধ চলে ১৮৩৯ থেকে ১৮৪২ সাল পর্যন্ত এবং বৃটিশ ইনডিয়া পরাজিত হয়। এবং দ্বিতীয় যুদ্ধ শুরু হয় ১৮৭৮ সালে এবং কয়েকবছর ধরে বিচ্ছিন্নভাবে যুদ্ধ চলার পর অমিমাংশিতভাবে শেষ হয়। অবশেষে ১৮৯৩ সালে এই দলিল স্বাক্ষরিত হয়। আমির আবদুর রহমান খান এই দলিল স্বাক্ষরের ব্যাপারে কারো কাছ থেকে কোনও মতামত নিয়েছিলেন না এবং এটা তার সম্পূর্ণ একক সিদ্ধান্ত ছিলো। এটা নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে কিন্তু কোনও যুক্তিসংগত কারণ বের করা সম্ভব হয়নি যে কেনো তিনি এই রহস্যময় শর্তযুক্ত দলিলটা স্বাক্ষর করেছিলেন। আরও মজার ব্যাপার ছিলো এই যে আফগানিস্তানের যে অঞ্চল এই ডুরান্ড লাইনের ওপারে থাকবে, সেই এলাকার লোকজনও এটা জানতেন না। আফগানিস্তানের এই অংশটুকুই বর্তমানে পাকিস্তানের নর্থ-ওয়েষ্ট ফ্রন্টিয়ার প্রভিন্স (এনডব্লিউএফপি) বা উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সীমান্ত প্রদেশ নামে পরিচিত। এই নুতন সীমারেখা মূলতঃ উভয় পার্শের পশতুন উপজাতিভুক্ত মানুষের মনে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি করে তাদের বৃহৎ জাতিস্বত্বার মাঝখানে একটা রাজনৈতিক বিভক্তি সৃষ্টির কারণে। সেই থেকে টেনশনের শুরু।
নানারকম টানাপেড়েনের মধ্যে দিয়ে ১৯৪৭ সাল চলে আসে আর বৃটেন এই সমস্যার কোনওরকম সমাধান না করে দিয়ে সমস্যাটা জিইয়ে রেখে দিয়ে চলে যায়। ফলে এই অঞ্চলটা নব্য পাকিস্তানের অন্তর্ভূক্তই থেকে যায়। পাকিস্তান বিশ্বাস করতো যে যে কোনও ধরণের বিভাজনের ফলে (মানে বৃটিশ ইনডিয়া ভেঙ্গে ভারত ও পাকিস্তান সৃষ্টি) আগের সম্পাদিত দ্বিপাক্ষিক চুক্ত স্বয়ংক্রিয়ভাবে উত্তরসূরি রাষ্ট্রের উপর ন্যাস্ত হয়। এবং এর পিছনে আন্তর্জাতিক অনেক আদালতের নজীর আছে এবং এটা ভিয়েনা কনভেনশন অনুমোদিত। বিষয়টা পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের কুটনৈতিক সম্পর্ককে তিক্ত থেকে তিক্ততর করে তুলতে লাগলো।
২৬ জুলাই ১৯৪৯, পাকিস্তানের একটা যুদ্ধবিমান আফগানিস্তানের ডুরান্ড লাইন এলাকায় বোমাবর্ষণ করলে সাথে সাথে তৎকালীন আফগান সরকার ডুরান্ড লাইন ট্রিটি এবং এর সমস্ত (মোট ৭ টা) শর্তাবলী বাতিল ঘোষনা করলো। তারা এ’ও ঘোষনা দেয় যে ভৌগলিক সীমারেখা দিয়ে একটা জাতিগোষ্ঠীকে বিভাজিত করার গোটা চুক্তিটাই ছিলো তাদের উপর চাপিয়ে দেয়া একটা বিষয়। তবে দুই দেশই তাদের অন্যান্য প্রতিবেশিদের সাথে যুদ্ধবিবাদ নিয়ে এতো বেশি ব্যাস্ত থাকতো যে কেউই বিষয়টার দৃশ্যমান এবং বাস্তবসন্মত নিষ্পত্তির জন্যে জাতিসংঘ পর্যন্ত এটাকে নিয়ে যায়নি।
১৯৫০ সালের ৩০ জুন বৃটেনের হাউস অব কমন্স রায় দেয় যে আন্তর্জাতিক নিয়মানুসারে পাকিস্তান বৃটিশ ভারতের উত্তরসূরী হিসেবে এর সমূদয় অধিকার এবং দায় অর্জন করবে এবং এই অধিকারের মধ্যে থাকছে ডুরান্ড লাইনের শর্তাবলী যা আফগানিস্তান স্বাক্ষর করেছিলো। এরপর ১৯৫৬ সালে সাউথইষ্ট এশিয়া ট্রিটি অর্গানাইজেশন পাকিস্তানের এই দখলের বৈধতা ঘোষনা দেয় এই বলে যে পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বে হবে ডুরান্ড লাইন পর্যন্ত। যদিও পাকিস্তান সাউথইষ্ট এশিয়া ট্রিটি অর্গানাইজেশন থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয় ১৯৭৩ সালে এবং সংগঠনটা ১৯৭৭ সালে বিলুপ্ত হয়ে যায়।
তালিবানের জন্মকথা ও ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো (পর্ব ২)
তালিবানের জন্মকথা ও ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো (পর্ব ৩)
তালিবানের জন্মকথা ও ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো (পর্ব ৪)
তালিবানের জন্মকথা ও ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো (পর্ব ৫)
মন্তব্য
চলুক
নর্থ-ওয়েষ্ট ফ্রন্টিয়ার প্রভিন্স নিয়ে তো পাকিস্তানের কাঁদাকাটা অবস্থা।
সিরিজ চলুক।
প্রিয় রাতস্মরনীয়,
এই বিষয় নিয়ে জানার আগ্রহ অনেক দিনের। ধন্যবাদ। খুশি হবো যদি সিরিজটা চালিয়ে নিয়ে যান। ভালো থাকবেন।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
চমৎকারভাবে শুরু করেছেন। এবার চালাতে থাকুন।
কি মাঝি, ডরাইলা?
ভিডিও গুলার link দিলে ভালো হতো
-- কেমন সুর
ভিডিওগুলো দেখেছিলাম আহমাদ শাহ্ মাসুদের জন্মদিন উপলক্ষে আফগানের টিভি চ্যানেলগুলোতে যে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচান করেছিলো, ওই সময়ে। তবে আমি যদি কোনও সোর্স থেকে পাই তবে অবশ্যই শেয়ার করবো।
ধন্যবাদ।
রাতঃস্মরণীয়
দুর্বল নার্ভ বা ট্রমাটাইজড হওয়ার হিষ্ট্রি থাকলে এই ভিডিও না দেখা বাঞ্ছনীয়ঃ
http://www.youtube.com/watch?v=24LNQfIxbXI&feature=related
http://www.youtube.com/watch?v=NFBsVbwBgLU&feature=related
রাতঃস্মরণীয়
প্রথম পর্বটা আরেকটু বড় করা যেত, অন্ততঃ তালেবান শিরোনাম যেহেতু, তালেবান এর জন্ম পর্যন্ত গেলে ভালো হতো।
আফগানিস্থান নিয়ে আমারও বেশ আগ্রহ আছে, সিরিজ চলুক!
কাজী মামুন
অনেক কিছু জানলাম।
সিরিজ চলুক, পড়ব আশা করি।
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত প্রদেশ কিন্তু গণভোট দিয়ে পাকিস্তানে যোগ দিয়েছিল, তবে তাদের চয়েস দেওয়া হয়েছিল ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে। তাও, ধরে নেওয়া যায় তারা প্রায় স্বেচ্ছায় পাকিস্তানে যোগ দিয়েছিল, সুতরাং আমি আফগানিস্থানের দাবী খুব একটা আমল দিই না।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
দিগন্ত ভাই, উত্তর-পূর্ব সীমান্ত নিয়ে আপনার তথ্য সঠিক। তবে পাকিস্তানের সাথে আফগানিস্তানের সমস্যা উত্তর-পূর্ব সীমান্ত নিয়ে নয়, উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ (এনডব্লিউএফপি) নিয়ে। আফগানিস্তান কখোনোই পাকিস্তনের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত নিয়ে কোনও দাবী-দাওয়া করেনি।
রাতঃস্মরনীয়
দুঃখিত, আমার বক্তব্য ছিল উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ নিয়েই। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত প্রদেশ বলে পাকিস্তানে কিছু নেই। ফলাফল ছিল এরকম -
Number of votes 5,72,799
Polled votes (51%) 2,92,118
For Pakistan (51.5%) 2,89,244
For India 2,874
পড়তে পারেন এখানে -
http://pakteahouse.wordpress.com/2008/07/08/referendum-and-the-pakhtunistan-demand-nwfp-ii/
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
দিগন্ত ভাই, ধন্যবাদ লিংকটা শেয়ারের জন্যে। খুবই তথ্যবহুল। আমি ধারণা করেছিলাম পেশাওয়ার নিয়ে বোধ হয় কোনও ভোটাভুটি হয়েছিলো।
রাতঃস্মরণীয়
নতুন মন্তব্য করুন