শিলঙ

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ১৬/০৮/২০১০ - ৫:৪৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমি ছুটছি জলপাই রঙের অন্ধকারের ভেতর দিয়ে
পামির, সাহারা, আমাজান। অত:পর-
অবচেতনে এসে থামলাম
শিলঙের ছোট্ট সবুজ টিলায়।

যেখানে হাত দিলেই ছোয়া যেত শাদা মেঘের ভেলা
যেখানে অমিত কাকতালীয়ভাবে পেয়েছিল তার লাবণ্যকে
সেই পাহাড়টি আজ কেমন যেন রুক্ষ।

সবুজ ঘাস, গাছ-গাছালি আজ আর সবুজ নেই
দূরসীমায় চোখে পড়ে কিছু রক্তিম কাশবন
কতগুলো শকুন ছিড়ে খাচ্ছে একটি মেষশাবক
পেচার ডাক, বেগুনী আকাশে উড়ন্ত চিল সবকিছুই আছে।
আর অমিতের সেই জীপগাড়ি?
সেটি ভেদ করে জন্মেছে কিছু বিষাক্ত ক্যাকটাস।

যে ডাকপিয়ন বিশ্বনাথ নিত্য আনত নানান বণের্র চিঠি
তার কাছে আজ কিছু ছেড়া নীল খাম
হাতের লণ্ঠনটি ছড়াচ্ছে ঘুটঘুটে অন্ধকার
কাছে ভিরতেই অজানা আওয়াজে থামিয়ে বলল,
এখন আর শিলঙে বসন্ত আসেনা
পদ্ম, জবা, লালগোলাপ ফোটেনা
বুলবুলি, হলদে টিয়া, ময়নারা
অনেক আগেই বিদায় নিয়েছে শিলঙ থেকে।

এখন শিলঙ মানেই-
পেচা, শকুন, উড়ন্ত চিল, বেগুনী আকাশ, রক্তিম কাশবন
আর কিছু ছেড়া নীল খাম।

বিশ্বনাথের কথায় আমি বিষ্মিত হইনা
এমন শিলঙ এখন আর আমায় হতাশ করেনা
আমি আবারো ছুটি-
জলপাই রঙের অন্ধকার ভেদ করে
নতুন কোনো শিলঙের সন্ধানে।


মন্তব্য

হাসান মোরশেদ এর ছবি

পামির, সাহারা, আমাজন হয়ে শিলঙে?

এখন আর শিলঙে বসন্ত আসেনা

ইয়ে, আমি যতদূর জানি শিলং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় পাঁচহাজার ফুট উপরের এক পাহাড়ি শহর। প্রায় সারা বছরই ঠান্ডা আর বৃষ্টি লেগে থাকে। এখন কেনো কখনোই শিলঙে উল্লেখযোগ্য বসন্ত আসতোনা হাসি

সমালোচনায় কবির নরোম হৃদয় যেনো আহত না হয়।
শিলং নিয়ে আপনার স্যুরিয়েলিষ্টিক রোমান্টিসিজম মজা লাগলো ।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

অতিথি লেখক এর ছবি

মোরশেদ ভাই, আমি এই ব্লগে নতুন। কিন্তু ব্লগিংয়ে নতুন না। আমি সর্বদা সমালোচনাকে স্বাগত জানাই। আমার সমালোচনা ভালো লাগে। আমি একটি জনপ্রিয় ব্লগে প্রায় ১ বছর ধরে লিখি। ওখানে কোনো সমালোচকের দেখা পাইনি। ব্যাপারটা আমার কাছে ভালো লাগেনি। সমালোচনা না থাকলে ব্লগিং জমেনা। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

তবে এখানে শুধু শিলঙের বসন্তটাই না। পুরো শিলংটাও এখানে প্রতিকী। আপনি যদি শিলঙের বসন্তের কথা বলেন তাহলে বেগুনী আকাশ, রক্তিম কাশবন এগুলোকে কি বলবেন। শিলঙে কোনো এক যুগে বসন্ত আসলেও আসতে পারে। কিন্তু রক্তিম কাশবনতো কখনোই সম্ভব না। হাসি

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আমি আসলে কবিদের প্রতীক ব্যবহারের সাথে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার কোন সংযোগ দরকার আছে কিনা সেটা বুঝতে চাইছিলাম।
আপনি শিলং কে যে প্রতীকি অর্থে ব্যবহার করেছেন, এটা কি শিলং সম্পর্কে আপনার কোন অভিজ্ঞতার আলোকে?
মানে ওটা শিলংই কেনো হলো? শিলং না হয়ে শিয়ালকোট ও হতে পারতো হাসি

কবির এই প্রতীক ব্যবহারের কোন বিশেষ কারন আছে কিনা জানতে চাইছিলাম আর কি। কাব্যের স্বাধীনতায় এমনি হলেই অবশ্য কোন কথা নেই।

সচলায়তনে স্বাগতম।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

অতিথি লেখক এর ছবি

শিলঙকে বলা হয় লাইলী-মজনুদের জেরুজালেম। প্রেমের তীর্থ। তাই এই ক্ষেত্রটার অস্থিরতা বুঝাতে প্রতীকি অর্থে শিলঙকে বেছে নেয়া। অন্যকোনো কারণ নেই। ধন্যবাদ।

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি

বাহ...বেশ তো! স্বাগতম। ভালো থাকবেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ।

ইশতিয়াক এর ছবি

মোরশেদ ভাই, আমার কাছে পড়ে মনে হয়েছে বসন্ত আসেনা বলতে এখানে শিলং এর অস্হির পরিস্হিতির কথা বুঝানো হোয়েছে।

ভালো লেগেছে।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

হতেই পারে। আবার কবিতায় সবকিছু বুঝতেই হবে এমনও না হাসি
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

অতিথি লেখক এর ছবি

শিলঙকে বলা হয় প্রেমিক-প্রেমিকাদের জেরুজালেম। তাই, বর্তমান যুগের প্রেম-ভালোবাসার যে অস্থিরতা সেটা বুঝানোর জন্য আমার কাছে মনে হয়েছে প্রতীকি হিসেবে শিলঙকে বেছে নেয়াই উত্তম। ধন্যবাদ ইশতিয়াক।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

শিলঙকে বলা হয় প্রেমিক-প্রেমিকাদের জেরুজালেম।

হাহাহা... তাই নাকি?

শিলঙ যদি জেরুজালেম হয় আমি ছিলাম তার যেশাস হাসি

মজা করলাম রে ভাই।
শিলঙ আমারো খুব প্রিয়। সে কারনেই একটু প্রগলভতা। ক্ষমা করবেন।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

অতিথি লেখক এর ছবি

হা হা হা । আমি তো এতদিন যেশাসের সন্ধানে ছিলাম। যাক, অবশেষে পেয়ে গেলাম। আমার যে শিলঙের যেশাসের আশীর্বাদ বড়ই দরকার। হাসি

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

বালক বয়সে শিলং যাই। অপূর্ব অভিজ্ঞতা হয়েছিল। তবু সন্ধ্যা নামতেই নিরাপত্তার খাতিরে প্রায়-কারফিউ দেখতে হয়েছিল। কেবল মেঘালয় না, পরে আরেকটু বড় হয়ে ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় গিয়েও সান্ধ্যকালীন টেনশনটা অনুভব করেছি। এই রাজ্যগুলোর পরিমণ্ডল আলাদা। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রে, "জলপাই রঙের অন্ধকারের ভেতর দিয়ে" কিছুক্ষণের জন্য হলেও যেতে হয়েছে। মোটা দাগে বললাম। একেবারেই বাইরের চলন্ত চোখ দিয়ে দেখা। কেউ হয়ত সুক্ষ্ম দাগে আলোচনা করবেন। তবে সেখানে মানুষ-সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা আমার খুব ভালো।
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ অনিন্দ্য বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে শিলঙের চিত্র বর্ণনা করার জন্য। ভালো থাকুন সব সময়।

তিথীডোর এর ছবি

এখন তো 'শেষের কবিতা' নিয়ে বসে যেতে ইচ্ছে করছে... চিন্তিত

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

অতিথি লেখক এর ছবি

"শেষের কবিতা" যতবার পড়ি চারিত্রগুলোকে ততবারই মনে হয় নতুন করে জানছি।
আপনার জন্য শুভকামনা।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।