এলোমেলো সময়ের কথা

বন্দনা এর ছবি
লিখেছেন বন্দনা [অতিথি] (তারিখ: রবি, ০১/০৫/২০১১ - ৮:০৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সযত্নে প্লেটের ভাতগুলো ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দিলাম। প্রায় রাতেই এভাবে খাবার নষ্ট করছি।তারপর সবকিছু ধুয়ে গুছিয়ে, বিছানায় শুতে চলে এলাম।কোনও একটা গল্পের বই পড়তে পড়তে ঘুমানোর অভ্যেসটা কেমন করে যেনো রপ্ত হয়ে গেছে। গল্পের বই হাতে নিয়ে ও আজ নামিয়ে রাখলাম।মাঝেমাঝে আমার ঘরের জানালা দিয়ে তাঁরাভরা রাত দেখা যায়।কিংবা পূর্ণিমার ভরা চাঁদ যেদিন আমার জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে আলোয় ভরিয়ে ফেলে ছোট্ট রুমটা, বাতি নিভিয়ে দিয়ে মন খারাপ করে কতদিন বসে থেকেছি।পূর্ণ চাঁদ কিংবা অমাবস্যা দুটোই কেনো যেনো মন খারাপ করিয়ে দিতে ভীষণ ওস্তাদ।আজ ও আকাশে ভরা চাঁদ।খেতে বসে খারাপ হয়ে যাওয়া মনে ভরা চাঁদ আর ও একটু বাড়তি কষ্ট যোগ করে দিলো।আলো নিভিয়ে দিয়ে জালনার পাশে দাঁড়িয়ে গেলাম।এমন তীব্র চাঁদের আলো আমার ভিতরটা বরাবরই এলোমেলো করে দিতে থাকে। আকাশ পাতাল ভাবতে থাকি নিজের ফেলে আসা দিন।পাঁচ ভাইবোন নিয়ে বাবামার বড় সংসারে মানুষ হওয়া আমি এখন কেমন করে একলা থাকি ভাবতেই ভীষন অবাক লাগে।কখনোই আমার নিজের একার কোনও ঘর ছিলোনা দেশে, তিন বোনে মিলে রুম শেয়ার করেছি সবসময়। একবারে নিজের বলতে ছিল একটা পড়ার টেবিল তার সাথে জুড়ে দেয়া বই রাখবার জন্য ছোট্ট একটুকরো শেলফ, আর ছিলো কম্পিউটার। আলমিরাতে নিজস্ব একটু জামাকাপড় রাখার জায়গা নিয়ে কত ঝগড়া করেছি বোনদের সাথে। ছোটো বলে ড্রেসিং টেবিলে ও ছোট্ট একটু জায়গা ছিলো আমার জন্য বরাদ্দ। নিজস্ব একটা রুমের জন্য তাই খুব উতলা ছিলাম ভিতরে ভিতরে। এখন নিজের রুম, নিজের ড্রেসিং টেবিল, আলমিরা, সব আমার একার।কিন্তু এই সব পাওয়ার মাঝে আজ কোনও আনন্দ খুঁজে পাইনা, এই সব কিছু পেতে গিয়ে কখন যেনো অনেক একা হয়ে গেছি।এই কবছরে, আস্তে আস্তে আমার নিজস্ব জিনিসগুলোর ও মালিকানা বদল হয়েছে। আমার অবর্তমানে তাই আমার পড়ার টেবিল আর কম্পিউটার এখন ছোটো ভাই এর দখলে।আলমিরায় আমার বরাদ্দ জায়গাটুকু ও আর নেই।বাসার কোথাও যেনো আমার চিণ্হটুকু ও আজ নেই।এত বছর পরে আমি কেনো যেনো আমার ছোট্ট ছোট্ট নিজস্ব তুচ্ছ এই জিনিসগুলোর জন্য ভয়ঙ্কর টান অনুভব করতে থাকি।এই জিনিসগুলোর সাথে জড়িয়ে আছে আমার ফেলে আসা দিনের স্মৃতি, এরা যেন আমার অস্তিত্বেরই একটা অংশ।মানুষগুলো বদলাতে পারে কিন্তু এরা কখনো বদলাবেনা।মালিকানা বদলের কষ্টে আমি তাই নীল হতে থাকি।

আমার জগতটা অনেকটা স্হির সময়ের মত।অনেকটা সময় গেছে,অনেক কিছু বদলেছে, ছোটো ভাইগুলো অনেক বড় হয়ে গেছে আজ, কিন্তু আমি সেই স্হির সময়ের থেকে বের হয়ে আসতে পারিনা।ওদের কে ভাবতে থাকি সেই ছোট্টটি, যেমনটি রেখে এসেছিলাম।ছোটখাটো অনেক জিনিস নিয়ে আজকাল তাই ওদের সাথে একটু বচসা ও হয়ে যায়।আমি এখন ও ওদেরকে আঁকড়ে ধরে রাখতে চাই, বুঝতে চাইনা ওদের এখন আলাদা জগত হয়েছে, সেখানে আমি নেহায়েতই আগন্তুক মাত্র।ওদের জন্য ভিতরে ভিতরে তীব্র ভালোবাসা অনুভব করতে থাকি, কিন্তু ওদের ভালোবাসা এখন হয়তো অন্য কারোর জন্য। আমার অনুপস্হিতি তাই ওদেরকে কোনও কষ্ট দেয়না আজকাল, যেনো ভুলে গেছে আমি কখনো ছিলাম ওদের সাথে।আমার ভালোবাসার মানুষ ও আজ আমাকে ভুলে গেছে।আমাকে ছাড়া নাকি তার ও আজ দিব্যি চলে যায়। শুধু দিব্যি যায়না আমার দিনগুলো। সেই প্রজাপতির রঙ-মাখা অতীতের সময়গুলো ধরে বেঁচে থাকি বর্তমানের আমি। আর প্রতিদিনই এভাবে নষ্ট হতে থাকে আমার প্লেটের ভাত।

amibondana@yahoo.com
বন্দনা


মন্তব্য

ফাহিম হাসান এর ছবি

বিষাদে ভরা লেখাটা ভালো লেগেছে।

বন্দনা- এর ছবি

আসলেই অনেক বেশি বিষাদময় হয়ে গেছে লিখাটা।কষ্ট করে হলে ও পড়েছেন সেজন্য অনেক ধন্যবাদ।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

দিলেন মনটা খারাপ করে মন খারাপ

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

বন্দনা- এর ছবি

দুঃখিত ভাইয়া।নিজের মন খারাপ,আবার আপনাদের ও মন খারাপ করিয়ে দিচ্ছি।। এমন কষ্ট মার্কা লিখা আর লিখবোনা যান।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।