পারমানবিক বিদ্যুৎ ও কিছু প্রাসঙ্গিক ভাবনা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ২০/১১/২০১১ - ১:২২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গত ২রা নভেম্বর,২০১১ তারিখে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে পারমানবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সংক্রান্ত এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিতে বাংলাদেশের পক্ষে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান এবং রাশিয়ার পক্ষে রাষ্ট্রীয় আনবিক শক্তি সংস্থা(ROSATOM)-এর মহাপরিচালক সের্গেই কিরিয়েঙ্কো সাক্ষর করেন। এই চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়া বাংলাদেশের পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপূর-এ ১০০০ মেগাওয়াটের দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করবে। চুক্তির বিস্তারিত প্রকাশ করা না হলেও বলা হয়েছে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকায় এতে কোন ধরনের দূর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা নেই। এই প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১.৫-২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আশা প্রকাশ করা হয়েছে ২০১৪ সালের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে এবং ২০১৮ সালের মধ্যে অন্তত একটি কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। বর্তমানে আমাদের বিদ্যুৎ ঘাটতি দৈনিক প্রায় ১৫০০ মেগাওয়াট। এই বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরনের জন্যে যৌক্তিক ও কার্যকরি উদ্যোগকে আমরা অবশ্যই সাধুবাদ জানাবো। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় পারমানবিক বিদ্যুৎ -এর ব্যয়, পরিচালনা, নিরাপত্তা, বর্জ্য-ব্যবস্থাপনা এবং আমাদের দেশে এই প্রযুক্তি পরিচালনার প্রয়োজনীয় দক্ষতা নিয়ে কিছু যৌক্তিক প্রশ্নের সমাধান জরুরী। আমরা এখানে পারমানবিক বিদ্যুৎ কি এবং এর ব্যয় ও ব্যবহার নিয়ে কিছু প্রাসঙ্গিক আলোচনা করার চেষ্টা করব-
পারমানবিক বিদ্যুৎ কি?ঃ
অধিকাংশ বিদ্যুৎ কেন্দ্রই চলে স্টীম টারবাইনে, যেখানে জ্বালানি পুড়িয়ে পানিকে বাস্পে পরিনত করা হয়। সেই বাস্প টারবাইনকে ঘুরায়। এই টারবাইনের সাথে জেনারেটর লাগানো থাকে। টারবাইন ঘুরলে জেনারাটর ঘুরে এবং বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়।
পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রেও ঠিক একই প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়। শুধু বাস্প তৈরির জন্য যে প্রচুর পরিমান তাপ প্রয়োজন হয় তা আসে পারমানবিক বিক্রিয়া থেকে। যে ভেসেলে বা পাত্রে এই বিক্রিয়া ঘটানো হয় তাকে বলে রিয়াক্টর। আর এই বিক্রিয়ার জ্বালানি হল ইউরেনিয়াম। ইউরেনিয়াম আবার ২ প্রকার। ইউরেনিয়াম-২৩৫, ইউরেনিয়াম-২৩৮। জ্বালানি হিসাবে ব্যবহৃত হয় ইউরেনিয়াম-২৩৫। কিন্তু প্রকৃতিতে যে ইউরেনিয়াম পাওয়া যায় তাতে মাত্র ০.৭২ শতাংশ থাকে ইউরেনিয়াম-২৩৫। বাকিটা ইউরেনিয়াম-২৩৮। অথচ পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য যে ধরনের ইউরেনিয়াম প্রয়োজন সেখানে কমপক্ষে ৩ থেকে ৫ শতাংশ ইউরেনিয়াম-২৩৫ থাকতে হবে। এজন্য বিশেষ প্রক্রিয়ায় প্রাকৃতিক ইউরেনিয়াম থেকে ইউরেনিয়াম-২৩৮ পরিমান কমিয়ে ইউরেনিয়াম-২৩৫ এর পরিমান বৃদ্ধি করা হয়। একে বলে ইউরেনিয়াম এনরিচমেন্ট।
একটা ইউরেনিয়াম-২৩৫ পরমানুকে ভাঙলে ২টি ভিন্ন পদার্থ, ২টি বা ৩টি নিউট্রন এবং প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয়। নতুন ২টি নিউট্রন আবার আরো ২টি ইউরেনিয়াম কে ভাঙ্গে। এভাবে এটা ক্রমাগত বাড়তেই থাকে এবং প্রচুর পরিমানে তাপ পাওয়া যায়। এটাকে চেইন রিয়াকশন বলে। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত চেইন রিয়াকশন বিশাল পরিমানে তাপ উৎপন্ন করবে যা বড় ধরনের দুর্ঘটনার সৃষ্টি করবে। এজন্য চেইন রিয়াকশন কে সঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রন করা প্রয়োজন।
এই নিয়ন্ত্রনের মুলনীতি খুব সহজ। প্রতিটি ইউরেনিয়াম-২৩৫ পরমানু ভাঙ্গার সময় যে ২ অথবা ৩ টি নিউট্রন পাওয়া যায়, তারাই চেইন রিয়াকশন শুরু করে। সুতরাং যদি নিউট্রন গুলোকে কোন ভাবে সরিয়ে ফেলা যায় তাহলেই তো রিয়াকশনের গতি নিয়ন্ত্রন করা যাবে। এই নিউট্রন গুলোকে সরানোর জন্য Boron বা Silver-indium-cadmium সংকরের রড ব্যবহার করা করা হয়। এসব রড মুক্ত নিউট্রন শোষন করতে পারে। এই রডকে বলে কন্ট্রোল রড। প্রয়োজন অনুযায়ি কন্ট্রোল রড মুল রিয়াক্টর বা বিক্রিয়াস্থলে প্রবেশ করানো যায়। আবার বের করা যায়। যখন কন্ট্রোল রড বেশি পরিমানে ঢুকানো থাকবে তখন অধিকাংশ নিউট্রন অ্যাবজর্ব হয়ে যাবে। ফলে খুব কম পরিমান ইউরেনিয়াম-২৩৫ ভাঙবে এবং কম তাপ উৎপন্ন হবে। আবার যখন কন্ট্রোল রড অল্প পরিমানে ঢুকানো থাকবে তখন কম পরিমান নিউট্রন অ্যাবজর্ব হবে, বাকিরা বিক্রিয়াতে অংশ নেবে। ফলে প্রচুর ইউরেনিয়াম-২৩৫ ভাংবে এবং বিশাল পরিমানের তাপ উৎপন্ন হবে। এভাবে প্রয়োজন অনুযায়ি কন্ট্রোল রড কে নিয়ন্ত্রন করে সঠিক পরিমানে তাপ উৎপাদন করা সম্ভব। আর প্রয়োজন অনুযায়ি সঠিক পরিমানে তাপ উৎপাদন করা গেলে, সাধারন স্টীম টারবাইনের মাধ্যমেই বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।
পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বাষ্পকে টারবাইনে ব্যবহারের পর কুলিং টাওয়ারের মাধ্যমে পানিতে পরিণত করে আবার রিয়েক্টরে ফেরত পাঠানো হয়। প্রয়োজনে অতিরিক্ত বাষ্প চিমনি দিয়ে বের করে দেওয়া হয় ও নতুন পানি বাহির থেকে সরবরাহ করা হয়। চুল্লীর মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় যেসব তেজস্ক্রিয় পার্টিকেল প্রস্তুত হয় তারমধ্যে Deuterium ও tritium অন্যতম। এগুলো পানির হাইড্রোজেন পরমাণুর সাথে নিউট্রন যুক্ত হয়ে সৃষ্টি হয়।

কোন কারণে রিয়েক্টর বন্ধ করে দিলেও কয়েকদিন পর্যন্ত রিয়েক্টরের ভেতর উচ্চ তাপমাত্রা থাকে। কারণ পারমাণবিক বিক্রিয়া হঠাৎ করে সম্পূর্ণ থামিয়ে দেয়া যায় না। তাই রিয়েক্টর বন্ধ করে দিলেও ডিজেল জেনারেটর অথবা ব্যক আপ জেনারেটর দিয়ে পাম্প চালিয়ে রিয়েক্টরে পানির প্রবাহ সচল রাখা হয়। ডিজেল জেনারেটর কাজ না করলে ব্যাটারি ব্যাবহার করে পাম্প সচল রাখারও ব্যবস্থা আছে। এই পানির প্রবাহ যদি কোন ভাবে বন্ধ হয়ে যায়, তবে রিয়েক্টরের তাপমাত্রা কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না, ফলে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটবে। উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক কালে (18 March, 2011) জাপানের ফুকুশিমা পারমাণবিক চুল্লি একই সাথে প্রচন্ড ভূমিকম্প ও সুনামির আঘাতে মারাত্নকভাবে ক্ষতিগ্রস্থের কারণে বিকল্প পাম্পগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় চুল্লিতে পানি সরবরাহ সচল রাখা সম্ভব হয়নি। যার ফলে অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে বিস্ফোরণ ঘটে।
পানির ব্যবহারের তারতম্যের উপর ভিত্তি করে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে দুইভাগে ভাগ করা যায়: Pressurized Water Reactor ও Boiling Water Reactor।
এখানে আমরা পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কিভাবে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় সে সম্বন্ধে একটি সাধারন ধারনা পেলাম। কিন্তু রূপপূর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কোন প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে সে সম্বন্ধে সুষ্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি, শুধু হলা হয়েছে এতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি অনুসরণ করা হবে। আমরা যতদূর জানি ROSATOM কর্তৃক প্রয়োগকৃত সর্বাধুনিক প্রযুক্তি হচ্ছে VVER-1000 যা আসলে Pressurized Water Reactor (PWR) এর একটি আধুনিক রূপ। ROSATOM-এর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে এই প্রযুক্তিতে কোন ধরনের দূর্ঘটনা ঘটার কোন সম্ভাবনা নেই, এটি ১০ মাত্রার ভূমিকম্প এবং ভারী যাত্রীবাহি বিমানের আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু তাদের এই দাবি কতটুকু যৌক্তিক তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে। কারন বিখ্যাত পরিবেশবাদী সংগঠন GREENPEACE তাদের প্রকাশনায় vver-1000 সিরিজের নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট-এর বেশ কিছু কারিগিরি ত্রুটির কথ উল্লেখ করেছে এবং এই ধরনের বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভারী যাত্রীবাহি বিমানের আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন তুলেছে(http://www.aerohabitat.org/link/2004/10-03-2004 - Greenpeace, Siti nucleari e sciagura aerea (170KB).pdf )। GREEN PEACE-এর দাবি অনুযায়ি এই ধরনের রিয়েক্টর ৭০-এর দশকের জার্মান প্রযুক্তিতে নির্মিত রিয়েক্টরের চেয়েও অনিরাপদ। এছাড়া ভারতের তামিলনাড়ু্র KOODANKULAM পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র-এ স্থাপিত এই সিরিজের রিয়েক্টর নিয়েও যথেষ্ট বিতর্ক আছে। এর বিভিন্ন কারিগরি ত্রুটি, যেমন-ভেসেলের Material of construction ভঙ্গুর হওয়ার সম্ভাবনা, দূর্ঘটনায় কন্ট্রোল রডগুলো কাজ না করার সম্ভাবনাসহ আরও বেশকিছু কারিগরি ত্রুটির কথা জানিয়ে John Hallam(Nuclear Campaigner, Friends of the Earth Sydney), Uday Kumar(Co- Director of Programs, Institute of Race and Poverty, University of Minnesota), Valdimir Sliviak(Social- Ecological Union, Russia), Profesor Alexey Yablokov (Centre for Russian Environmental Policy) সহ আরও বেশ কজন স্বনামখ্যাত ব্যক্তি কেরালা, তামিলনাডু, অন্ধপ্রদেশ এবং নয়াদিল্লির মূখ্যমন্ত্রীর কাছে একটি চিঠি লেখেন(http://www.indiatogether.org/stories/nukeTN.htm )। এছাড়া তুরস্কের Akkuyu-তে এই ধরনের পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে স্থানিয় জনগন ও বিশেষজ্ঞদের আপত্তি এখন আন্দোলনে পরিনত হয়েছে।
পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যয়ঃ
এই ধরনের বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মান খরচ সাধারন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তুলনায় অনেক বেশি। আমাদের দেশে যে ধরনের বিদ্যুৎ কেন্দ্র(PWR type) নির্মান হবে সেই ধরনের সাম্প্রতিক কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের খরচ আমরা দেখি-
২০০৮ সালে তুরস্কে দুটি AP1000 বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের জন্য Florida Power & Light Company সর্বমোট ১১.৫-১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নির্মান ব্যয় হিসেব দেখায়( ক্যাপিটাল কস্ট, কুলিং টাওয়ার কস্ট, ল্যান্ড কস্ট এবং ট্রান্সমিশন কস্ট সহ)।
২০০৮ সালে Florida Progress Energy ঘোষণা করে দুটি AP-1000 সিরিজের ১০০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানে সর্বমোট ১৪ বিলিয়ন ডলার খরচ পড়বে( ক্যাপিটাল কস্ট, কুলিং টাওয়ার কস্ট, ল্যান্ড কস্ট এবং ট্রান্সমিশন কস্ট সহ)।
একইভাবে Virgil C. Summer Nuclear Generating Station ১০০০ মেগাওয়াটের দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানে খরচ পড়েছে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার।
উপরের প্রত্যেকটি উদাহারন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি দ্বারা নির্মিত। রাশিয়া বা চীনের কোম্পানিগুলোর খরচ কিছুটা কম। ২০০৯ সালের হিসেবে চারটি AP-1000 চীনা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের শুধু নির্মান ব্যয় পড়ে ৮ বিলিয়ন ডলার।
রাশিয়ায় Nizhny Novgorod-এ দুটি ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানে প্রতিটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের শুধু নির্মান ব্যয় পড়েছে ৩ বিলিয়ন ডলার করে। এর সাথে লাইসেন্সিং ফি, ট্রান্সমিশন কস্টসহ অন্যান্য ব্যয় যোগ করলে তা আরও অনেক বেশি হবে।( http://www.bellona.org/articles/articles_2011/russia_bangladesh )
পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের সময় এবং এর নির্মান খরচ নিয়ে বেশ কিছু দেশের তিক্ত অভিজ্ঞতা আমাদের সামনে আছে। তার কিছু উদাহারন এখানে উল্লেখ করা হল-
ব্রাজিলের ANGRA-1 বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রকল্প ব্যয় ছিল ৩২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং এটি ৫ বছরের মধ্যে উৎপাদনে যাওয়ার কথা। কিন্তু ১৩ বছর পর এটি উৎপাদনে যায় এবং খরচ হয় প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।(http://multinationalmonitor.org/hyper/issues/1986/05/kats.html )
ব্রাজিলের ANGRA-2 বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রকল্প ব্যয় ছিল ১.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং এটি ৮ বছরের মধ্যে উৎপাদনে যাওয়ার কথা। কিন্তু ২৬ বছর পর এটি উৎপাদনে যায় এবং খরচ হয় প্রায় ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।(http://www.greenpeace.org/international/Global/international/publications/nuclear/2010/Case Study_Angra 3 Reactor.pdf )
কানাডার Darlington Nuclear Generating Station কেন্দ্রের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, অথচ খরচ হয়েছে ১৪.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
ফিনল্যান্ডের Olkiluoto-৩ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪.১ বিলিয়ন ডলার। নির্ধারিত সময়ের ৩৭ মাস পরে কাজ শেষ হলে দেখা যায় প্রায় ৫০% বেশি ব্যয় হয়েছে। (http://en.wikipedia.org/wiki/Nuclear_power_in_Finland#Olkiluoto_plant )
সবচেয়ে বড় কথা বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের দায়িত্ব যে সংস্থাকে দেয়া হয়েছে সেই ROSATOM খোদ রাশিয়ার বুকে একই ধরনের(VVER-1000) বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানে অনেক বেশি সময় এবং খরচ নিচ্ছে। রাশিয়ার পরিবেশবাদী সংগঠন ECO DEFENCEএর Co-Chairman Vladimir Slivyak-এর দেয়া তথ্য অনুযায়ি রাশিয়ার মাটিতে এক একটি VVER-1000 সিরিজের বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসাতে খরচ পড়ে কমপক্ষে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং বাংলাদেশে বসাতে গেলে তা নূ্ন্যতম ১.৫-৪ গুন বেশি খরচ পড়বে। সেই হিসেবে আমাদের প্রতিটি ১০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মান খরচ পড়বে কম্পক্ষে ৪.৫ বিলিয়ন ডলার(১.৫ গুন ধরলে) বা ৩৩ হাজার কোটি টাকা অর্থাৎ ১০০০ মেগাওয়াটের দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান করতেই খরচ পড়বে প্রায় ৬৬ হাজার কোটি টাকা। যেখানে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় ৫ টি ৫০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের খরচ ধরা হয়েছে ৩.৫ বিলিয়ন ডলার।(http://phulbaricoal.wordpress.com/ )
অথচ আমরা দেখলাম রূপপূর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি ১০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মান খরচ ধরা হয়েছে মাত্র(!) ১.৫-২ বিলিয়ন ডলার। এটা কিসের ভিত্তিতে এবং এতে কোন কোন ব্যয় অর্ন্তভুক্ত তা কিছুই প্রকাশ করা হয়নি। অথচ জনমনে এমন একটা ধারনা দেয়া হচ্ছে যেন এই ১.৫-২ বিলিয়ন ডলার খরচ করলেই আমরা উৎপাদনে যেতে পারব।
এখানে আরেকটি তথ্যও যথেষ্ট সন্দেহ উদ্রেগকারী। আশা প্রকাশ করা হয়েছে রূপপূর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ ২০১৭-২০১৮ সালের মধ্যে সম্পন্ন হবে। অথচ যখন আমরা দেখি একই ধরনের রিয়েক্টর রাশিয়ার মাটিতে বসাতেই কমপক্ষে ৯ বছর সময় লাগে। এক্ষেত্রে সকল ডকুমেন্টেশন এবং লাইসেন্সিং-এর কাজ সম্পন্ন করা ছিল(যা করতে কমপক্ষে ২বছর সময় লাগে)। তাই এই আশাবাদের ভিত্তি কি তা যথেষ্ট প্রশ্নের উদ্রেগ করে।(http://www.bellona.org/articles/articles_2011/russia_bangladesh )
পারমানবিক বিদ্যুৎ সম্বন্ধে একটি সাধারণ ধারনা হল এর উৎপাদন খরচ অনেক কম। কিন্তু WIKIPEDIA থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী আমরা দেখতে পাচ্ছি যে পারমানবিক বিদ্যুৎ-এর খরচ বরঞ্চ অন্যান্য বিদ্যুৎ-এর তুলনায় বেশি।

এখানে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মান খরচ, জ্বালানি খরচ, অপারেশন এবং মেন্টিনেন্স খরচ অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে কিন্তু Decommissioning Costহিসেবে ধরা হয়নি। পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের Decommissioning এর জন্যও একটি বড় অংকের বাজেট বরাদ্দ রাখতে হয়। উদাহারনসরূপ-
যুক্তরাষ্ট্রের Maine Yankee কেন্দ্র বন্ধের জন্য খরচ হয়েছিল ৬৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, Connecticut Yankee কেন্দ্র ব ন্ধের জন্য খরচ হয়েছিল ৮২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, Exelon -
Zion 1 & 2 কেন্দ্র দুটি বন্ধের জন্য খরচ হয়েছিল ৯০০-১১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
(http://en.wikipedia.org/wiki/Nuclear_decommissioning#Cost_of_decommissioning )
উপরের তথ্য উপাত্তগুলো পারমানবিক বিদ্যুৎ-এর খরচ নিয়ে আমাদের মনে শ্বেতহস্থী পালন করার এক ভয়াবহ আশংকা জাগায়।
পারমানবিক বর্জ্যঃ
প্রতিটি পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গড়ে প্রতি মাসে ২০-৩০ টন উচ্চমাত্রার পারমানবিক বর্জ্য নির্গত হয়। এই পারমানবিক বর্জ্য পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং এর আয়ুস্কাল অত্যন্ত বেশি। পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নির্গত অতি উচ্চমাত্রার তেজষ্ক্রিয় পদার্থের মধ্যে রয়েছে Technetium-99 (হাফ লাইফ ২২০০০০ বছর), iodine-129(হাফ লাইফ ১৫.৭ মিলিয়ন বছর), Neptunium-237(হাফ লাইফ ২ মিলিয়ন বছর), Plutonium-239(হাফ লাইফ২৪০০০ বছর)। সবচেয়ে আশংকার কথা এটাই যে এই পারমানবিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সঠিক উপায় এখনও আবিষ্কার করা যায়নি।
এই সকল পারমানবিক বর্জ্য থেকে ক্যান্সারসহ আরও অনেক জটিল রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ২৯ জানুয়ারি ২০০০ নিউইয়র্ক টাইমস-এর এক রিপোর্টে জানা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে আজ পর্যন্ত সেখানে পারমাণবিক অস্ত্র কারখানায় কর্মরত ৬ লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে।(http://www.nytimes.com/2000/01/29/us/us-acknowledges-radiation-killed-weapons-workers.html?scp=2&sq=CANCER nuclear january 2000&st=cse&pagewanted=2 )
এছাড়া অনেকেই জানেন না যে পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ক্ষতিকারক গ্রিনহাউজ গ্যাসও উৎপন্ন হয়।(http://en.wikipedia.org/wiki/Nuclear_power_debate#Indirect_nuclear_insurance_subsidy )
যুক্তরাষ্ট্রে এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য একটি ফান্ড রয়েছে, যার পরিমাণ ২৪ বিলিয়ন ডলার।আমাদের দেশে এর খরচ সমন্ধে কোন ধারনা দেওয়া হয়নি। বলা হচ্ছে ২৫ বছর পর্যন্ত উচ্চমাত্রার পারমানবিক বর্জ্য রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু এই তাদের এই আশ্বাসের পরও পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হওয়া যায় না। কারন খোদ রাশিয়ার পরিবেশবাদিরা দাবি করছে যে ROSATOM-এর এই বক্তব্যের মাঝে ফাঁকি আছে। কারন রাশিয়ার আইন অনুযায়ি কেবলমাত্র পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকৃত পারমানবিক বর্জ্যই শুধুমাত্র আমদানি করা যাবে, অথচ VVER-1000 সিরিজের বর্জ্য পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করার পদ্ধতি এখনও পর্যন্ত তারা আবিষ্কার করতে পারেনি।(http://www.bellona.org/articles/articles_2011/russia_bangladesh )
আর এই ২৫ বছরে কোন প্রক্রিয়ায় রাশিয়ায় বর্জ্য পাঠানো হবে তা বিস্তারিত বলা হয়নি। ২৫ বছর পরে(এই ধরনের বিদ্যুৎ কেন্দ্রের Operational life সাধারনত ৩৫ বছর) এর বর্জ্য ব্যবস্থপনা কি হবে তা নিয়েও কিছু বলা হয়নি।
এই বর্জ্য নিষ্কাশনের সমস্যা ছাড়া আরও সমস্যা আছে। পারমাণবিক চুল্লীকে ঠাণ্ডা রাখার জন্য তাকে ঘিরে ঠাণ্ডা পানির প্রবাহ চালানো হয় (জাপানে দুর্ঘটনা ঘটেছিল ওই পানি ঠান্ডা করার প্রযুক্তি বা কুলিং সিস্টেম অচল হয়ে পড়ায়)। যদি কোনোভাবে ওই পানির পাইপে ছিদ্র বা ফাটল সৃষ্টি হয় তাহলে প্রতিদিন চুলস্নীতে ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ পানি তেজষ্ক্রিয়তাযুক্ত হয়ে পড়বে। এর ফলে ওই পানি নিষ্কাশনের জন্য ব্যবহৃত নদী বা সাগরের পানিও দূষিত করবে। জাপানের ফুকুশিমা ও আমেরিকার থ্রি মাইল আইল্যান্ডের ঘটনায় আমরা জানি তেজষ্ক্রিয়তাযুক্ত পানি এই মূল পানির প্রবাহের সাথে মিশে আশেপাশের বিস্তীর্ন এলাকার, এমনকি প্রশান্ত মহাসাগরের ওপারের জনগণকেও বিরাট স্বাস্থ্যঝুঁকির মাঝে ফেলেছে।
দূর্ঘটনাঃ
পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সবচেয়ে বড় বিপদ হল নানা রকম দূর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা যা কখনোই উড়িয়ে দেয়া যায় না। ইতিমধ্যে সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ও নিরাপত্তামূলক মান সংরক্ষনকারী দুনিয়ার উন্নত দেশগুলোতেই ছোটবড় মিলিয়ে অসংখ্য পারমানবিক দূর্ঘটনা ঘটেছে। খোদ যুক্তরাষ্ট্রে কয়েকটি সংগঠন জরিপ অনুসারে কেবলমাত্র ১৯৮৭ সালেই সে দেশের বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত শক্তিকেন্দ্রগুলোতে ২৮১০ টি দূর্ঘটনা ঘটেছে(http://www.lutins.org/nukes.html )। তাছাড়া ১৯৭৯ সালের পেন্সিল্ভেনিয়ার থ্রি মাইল আইল্যান্ড কেন্দ্রে দূর্ঘটনার ফলে তাৎক্ষনিকভাবে ১ লক্ষ ৪০ হাজার মানুষ তাদের বাসস্থান ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিল।
এছাড়া ১৯৮৬ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের চেরনোবিল দূর্ঘটনা এযাবৎকালের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে বড় দূর্ঘটনা। এর ফলে আক্রান্তের সংখ্যা ৭০ লক্ষ, যার মধ্যে এখন পর্যন্ত মারা গিয়েছে ৩০ হাজার মানুষ।
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া জাপানের ফুকুশিমা দূর্ঘটনায় প্রাথমিকভাবে ৩ জন নিহত হয়। এই দূর্ঘটনার ফলে সেখানকার তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা বহুগুন বৃদ্ধি পায়, যার ফলে কৃষি পণ্য, পানীয় জল, নদী এবং সাগরের পানি, ভূ-গর্ভস্থ পানি, গৃহপালিত পশু এবং সর্বোপরি বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষের স্বাস্থ্যের উপর ব্যাপক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মাত্রার তেজস্ক্রিয়তার সন্ধান পাওয়া যায়। (http://en.wikipedia.org/wiki/Radiation_effects_from_Fukushima_Daiichi_nuclear_disaster#Total_emissions )
পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভবিষ্যৎঃ
সম্প্রতি জাপানের ফুকুশিমায় ঘটে যাওয়া বিপর্যয়ের পর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পারমানবিক বিদ্যুৎ-এর ভবিষ্যত নিয়ে নতুনভাবে ভাবা হচ্ছে। উন্নত বিশ্বের বহু দেশ নতুনভাবে পারমানবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন না করার ঘোষনা দিচ্ছে। এমনকি বর্তমানে চালু থাকা বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধে বিশাল অংকের বাজেট বরাদ্দ করছে। জার্মানি ২০২২, বেলজিয়াম ২০২৫ এবং সুইজারল্যান্ড ২০৩৪ সালের মধ্যে সকল পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধের ঘোষনা দিয়েছে। দূর্ঘটনার পর জাপান পারমানবিক বিদ্যুৎ থেকে সরে আসার ঘোষনা দিয়েছে। এছাড়া তাইওয়ান, বেলজিয়াম সহ আরও বেশ কিছু দেশ পারমানবিক বিদ্যুৎ হতে সরে আসার পরিকল্পনার কথা ঘোষনা করেছে। মোট চাহিদার প্রায় ৭০ ভাগ পারমানবিক বিদ্যুৎ থেকে উৎপাদন করা ফ্রান্সের সরকারও বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেওয়ার জন্য জনগনের প্রবল চাপের মুখে আছে।(http://en.wikipedia.org/wiki/Anti-nuclear_movement_in_France )। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল পৃথিবীড় সবচেয়ে বেশি পারমানবিক বিদ্যুৎ-এর অধিকারি এবং সবচেয়ে বেশি পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানকারি দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার নিজের দেশে ১৯৯৬ সালের পর থেকে বানিজ্যিকভাবে আর কোন বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান করেনি। (http://en.wikipedia.org/wiki/Nuclear_power#Future_of_the_industry )
এই বিশ্ববাস্তবতায় আমাদের মত একটি দেশে পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান করা কতটুকু যৌক্তিক হবে তা বিবেচনার বিষয়। বিশেষ করে জনসংখ্যার ঘনত্বের দিক দিয়ে শীর্ষে অবস্থনকারী বাংলাদেশের মত তৃতীয় বিশ্বের এক দেশে নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কোন একটি দূর্ঘটনা যে ভয়াবহ বিপর্যয়ের সূচনা করবে তা কল্পনা করার সাধ্য আমাদেও নেই। ফুকুশিমা দূর্ঘটনার পরে জার্মানির চ্যান্সেলর বলেছেন,’জাপান অত্যন্ত উন্নত শিল্পরাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বেও প্রাকৃতিক দূর্যোগের ফলে সংঘঠিত পারমানবিক দুর্ঘটনায় তারা অসহায়’ । জাপান এবং জার্মানির মত রাষ্ট্র যদি নিজেদের আনিরাপদ মনে করে তবে কোন দূর্যোগে বাংলাদেশের অবস্থা কল্পনাও করতে পারি না।সবচেয়ে বড় কথা এই প্রযুক্তির কিছুমাত্র আমরা এখনও আয়ত্ত্ব করতে পারিনি। আমাদের দেশের গ্যাস এবং ডিজেল চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো মেরামত করতেই যাখানে বিদেশি প্রকৌশলীদের ডাক পড়ে সেখানে পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সংঘঠিত কোন একটি দূর্ঘটনায় অপর দেশের প্রযুক্তিবিদদের উপর নির্ভর করা ছাড়া আমাদের কোন উপায় থাকবে না। আমরা বিজ্ঞানের অন্য যেকোন আবিষ্কারের মতো পরমাণু শক্তির ব্যবহারের বিরুদ্ধে নই। কিন্তু এর সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান, দক্ষতা-অভিজ্ঞতা ও পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা আয়ত্ত্ব করা ছাড়া ব্যবহারের যে ঝুঁকি রয়েছে তা এড়ানোর পক্ষে। এছাড়া আমাদের গ্যাস এবং কয়লার মজুদ যদি আমরা যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারি তাহলে নিকট ভবিষ্যতে আমাদের কোনো জ্বালানি সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু আমাদের দেশের শাসকদের যোগসাজসে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো গ্যাস ক্ষেত্রসমূহে হস্তগত করছে। দেশের কয়লা সম্পদ নিয়েও নানামুখী চক্রান্ত চলছে। প্রস্তাবিত খসড়া কয়লানীতি এবং মডেল পিএসসি ২০০৮ দুটোতেই যথাক্রমে কয়লা এবং গ্যাস রপ্তানির সুযোগ রাখা হয়েছে। অর্থ্যাৎ আমাদের শাসকদের ইচ্ছা আমাদের নিজেদের সম্পদ ব্যবহার করে সমস্যার দিকে নয় বরঞ্চ তারা একদিকে যেমন দেশের সম্পদ বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর হাতে তুলে দিতে চায় অপরদিকে এই সমস্যার সমাধানে বিদেশী পুজিঁ এবং প্রযুক্তি এদেশে ডেকে আনতে চায় শুধুমাত্র নিজেদের দূর্নীতির সুযোগ তৈরি করার জন্য।
পারমানবিক বিদ্যুৎ নিয়ে যেসব প্রশ্ন এবং বিভ্রান্তি সাধারন মানুষের মাঝে আছে তার সমাধান না করে তা নির্মানের উদ্যোগ নিলে সেটিও একই ধরনের সন্দেহের উদ্রেগ করবে। আমরা আশা করব সরকারের পক্ষ থেকে অবিলম্বে এই ব্যাপারে সকল বিভ্রান্তি কাটানোর উদ্যোগ নেয়া হবে।

ছবি: 
24/08/2007 - 2:03am

মন্তব্য

নিটোল এর ছবি

হুম, বিশাল পোস্ট। অনেক খাটুনি আছে বোঝাই যায়। কিন্তু আপনার নামটা তো দিলেন না লেখার শেষে। ব্যাপারটা খেয়াল রাখবেন আশা করি।

গ্যালারীতে বসলাম।এই বিষয়ে আমার জ্ঞান খুব অল্প,তাই মন্তব্য করছি না। অন্যরা কী বলেন তা দেখার অপেক্ষায় আছি। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।

_________________
[খোমাখাতা]

সচল জাহিদ এর ছবি

চমৎকার পোষ্ট। চলুক চলুক চলুক
সচলে স্বাগতম। আপনার পরিচয়টি দিলে ভাল হতো।

পোষ্টটি নিয়ে কয়েকটি পরামর্শঃ

১) আমার জানামতে টার্মটি হবে নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎ, বা নিউক্লিয়ার শক্তি। নিউক্লিয়ার বাংলা হিসেবে 'পারমানবিক' শব্দটি বাংলাদেশে বহুল প্রচলিত তবে বলতে দ্বিধা নেই সেটি ভুল।

২) সম্পাদনায় আরেকটু মনযোগী হলে লেখাটি পড়তে আরেকটি সুবিধে হত। প্রয়োজনীয় লিঙ্কগুলি পাশে ব্র্যাকেটে না দিয়ে শুধুমাত্র নাম্বার দিয়ে পরে নিচে রেফারেন্স আকারে দিলে ভাল হতো।

৩) পোষ্টে নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্কিমেটিক ডায়াগ্রাম দিয়ে সাধারণ পাঠকদের সুবিধে হত।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

শমশের এর ছবি

চলুক

তাপস শর্মা এর ছবি

ব্যাপক একটি পোষ্ট। চলুক

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

ভালো লেগেছে, কিছু জানা আর কিছু অজানা তথ্যের সমন্বয়ে সুপাঠ্য লেখা। চলুক
কিন্তু সাধারণভাবে সবার ধারনা যে নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎ উৎপাদনের ফলে সব বিদ্যুৎ এর চাহিদা পূরণ হবে। জনগনের এই ভুল ভাঙ্গাতে হবে।

সুদীপ্ত এর ছবি

....অত্যন্ত গবেষণাধর্মী একটা লেখা পড়লাম। ভালো লাগল। পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনেকগুলো তাত্ত্বিক পরিসংখ্যান দেখানোর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।লেখাটা না পড়লে অনেক কিছুই অজানা থেকে যেত।

স্পর্শ এর ছবি

অসাধারণ একটি লেখা। কীভাবে যে চোখ এড়িয়ে গেল!

অনেক পাঠক উপকৃত হবেন লেখাটি থেকে। শেয়ার করছি হাসি


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

নুভান এর ছবি

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে নিউক্লিয়ার শক্তির কোনই বিকল্প নেই। এর বিরোধীতা করাটা নিতান্তই বোকামীর পর্যায়ে পরে। দেশের তেল-গ্যাস ও কয়লা সম্পদ বাঁচিয়ে রাখার একমাত্র অবলম্বন হল আমাদের বিকল্প শক্তি তথা নিউক্লিয়ার এনার্জির দিকে ঝুকতেই হবে, আজ অথবা কাল। তাই দেরী করার কোন মানেই হয়না। কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে আমি রাশান প্রযুক্তির বিরোধী। মার্কিন বা ইউরোপীয় প্রযুক্তি অপেক্ষাকৃত দামী হলেও নির্ভর যোগ্য। নিদেনপক্ষে কোরিয়ান বা জাপানিজ প্রযুক্তি গ্রহণ করাটা উচিৎ ছিলো। এবার আসি মূল প্রসঙ্গে, আর এ বিষয় নিয়ে আমার একটি পোষ্ট ছিলো 'পারমানবিক বিদ্যুৎ শক্তি নিয়ে কিছু প্রশ্নের উত্তর' তার আলোকে কিছু মন্তব্য করছিঃ

  • 'জার্মানী কিন্তু এরই মধ্যেই নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কমানো শুরু করেছে।'

ধনী দেশ গুলোর উদাহরন সম্পর্কে বলার আর কিছুই নেই। কারন ওরা নিজেদের আখের অনেক আগেই গুছিয়ে নিয়েছে। তাই জার্মানী ও অন্যন্য ধনি দেশগুলোর উদাহরন বাংলাদেশের জন্য কতখানি প্রযোজ্য হবে সেটি ভেবে দেখার বিষয়। গ্লোবাল ওয়ার্মিং বাংলাদেশের শুধু নয় সমস্ত বিশ্বের সমস্যা, কিন্তু এতে বাংলাদেশের কন্ট্রিবিউশান দশমিকের পরে তিন-চারটা শুণ্য দিলে যা হবে % তত ভাগও নয়। এযেন পরের পাপে নিজের শাস্তি।। তাই বাংলাদেশ তার দেশের উন্নতির জন্য যদি একটু পরিবেশ দুষন করে, তবে সেটা বৈশ্বিক ভাবে ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না, কারন যা ক্ষতি করার যুক্তরাষ্ট্র করে এখন সে অরন্যের রোদনে দরিদ্র দেশগুলোকে আমেরিকার মধু পিয়াসী বিশ্বব্যঙ্ক ও আই.এম.এফ-দের দিয়ে পরিবেশ সচেতন করানোর মহান তালিমে নেমেছেন, কিন্তু নিজেই কিওটো প্রটোকল মানছে না। মানুষ হিসেবে আমাদের প্রধান লক্ষ্য এ বিপর্যয়ের হাত থেকে বিশ্বকে উদ্ধার করা, কিন্তু বাংলাদেশী হিসেবে আমি মনে করি, পরিবেশের সর্বনিম্ন ক্ষতি করে হলেও আমাদের উন্নয়নের পথ ধরা উচিত। এ কেবল-ই আমার ব্যক্তিগত মতামত।

  • হাই কস্টিং সামাল দিব কি করে? এই নিউক্লিয়ার প্রযুক্তি রপ্তানী বাণিজ্যের পাশাপাশি চলা ঋণ বাণিজ্যটাও চলে হরদম। ব্রাজিল সহ আরো কয়েকটি দেশের উদাহরণ এখানে দেখা যেতে পারে।

কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ পড়ে প্রায় ০.৬ থেকে ১.৬ সেন্ট প্রতি কিলোওয়াট ঘন্টায় যেখানে প্রাকৃতিক গ্যাসে খরচ পড়ে প্রায় ০.০৭ থেকে ১.১ সেন্ট প্রতি কিলোওয়াট ঘন্টায় এবং জ্বালানী তৈল থেকে ১.২ সেন্ট।
এবার নবায়ন যোগ্য শক্তির প্রসঙ্গে আসা যাক, সৌর শক্তির মাধ্যমে উৎপাদিত বিদ্যুতের খরচ প্রায় ৫০ থেকে ৮০ সেন্ট প্রতি কিলোওয়াট ঘন্টায় আর বায়ু শক্তির মাধ্যমে উৎপাদিত বিদ্যুতের খরচ প্রায় ৫.৫ থেকে ১৩ সেন্ট প্রতি কিলোওয়াট ঘন্টায়, কিন্তু আমাদের দেশের একমাত্র কিছু উপকূলীয় এবং দ্বীপাঞ্চল ছাড়া বায়ু শক্তি কাজে লাগানোটা দুস্কর, তার ওপর এই উপকূলে ঝড়-ঝঞ্ঝার পরিমান বেশী হবার দরূন সব উপকূলীয় এলাকায় এগুলো স্থাপন করাটাও কতটুকু সমীচীন সেটা বিবেচনায় আনাটা জরুরী। কিন্তু নিউক্লীয় প্রযুক্তির মাধ্যমে বিদ্যুত উৎপাদন খরচ বেশ কম, আর তা মাত্র ০.২৫ থেকে ০.৬ সেন্ট প্রতি কিলোওয়াট ঘন্টায়।

  • আমাদের মত জনবহুল দেশে নিউক্লিয়ার প্ল্যান্ট বসানোর মত লোকেশন আদৌ আছে কি? এর সামান্য একটা একসিডেন্টের ফলাফল কি হতে পারে?


এখানে দেখুন, ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ক্যাজুয়ালিটির হার দেয়া আছে, যেখানে স্পশটতই দেখা যাচ্ছে নিউক্লিয়ার টেকনোলজি কতটা নিরাপদ। জাপানের ফুকুশিমার ঘটনাটি অনভিপ্রেত।

  • প্ল্যান্টের অর্থায়ন, প্ল্যান্ট বসানো ও মেইনটেইনেন্সের টেকনিক্যল এক্সপার্টিজ এবং জ্বালানি- তিনটার কোনটারই আমাদের হাতে নেই- মানে আমরা পুরোটাই বাইরের প্রভু রাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল। ফলাফল কি?

আচ্ছা, গ্যাস প্ল্যান্ট যেগুলো আমাদের দেশে আছে, এগুলো কি আমাদের দেশের অর্থায়নে বা ডিজাইনে তৈরী? সবগুলোই প্রভূ রাষ্ট্রের কারিগরী সহায়তায় তৈরী। এপর্যন্ত জ্বালানীর অভাবে কোন রিয়েক্টর শাট-ডাউন হয়েছে বলে শুনেছেন (ইরানের কথা বাদ দেন, ওইটা ভিন্ন কেইস) আর বিদ্যুৎ উৎপাদনের ইউরেনিয়াম এর গ্রেড আর উইপন্স গ্রেড এক না, এইটা সবাই জানে। বিশ্বের ৩০ টি দেশে ৪৩৭ টি পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনা আছে, আর ৫০ টি নির্মানাধিন।

  • এমন হাইলি টেকনিক্যল ও সফিসটিকেটেড প্রযুক্তি আনার মত টেকনিক্যল এক্সপার্টিজ আমাদের আছে?

হাইলি সফিসটিকেটেড টেকনলজির ব্যপারটা বোধগম্য নয়! নিউক্লিয়ার রিয়্যাক্টর থেকে শুধু আমরা শক্তি পাব, বাকি পুরোটাই কনভেনশনাল বয়লারে পানি গরম করে স্টিম বানিয়ে টার্বাইন ঘোড়ানো। প্রায় সত্তর-আশি বৎসর আগের একটা প্রযুক্তিকে আপনি হাইলি সফিসটিকেটেড বলতে পারেন না এখন আর। বর্তমানে প্রযুক্তি অনেক এগিয়েছে। জার্মানি-যুক্তরাষ্ট্র-জাপান যে সকল পারমানবিক চুল্লি বন্ধ করে দিচ্ছে, সেগুলো পুরাতন প্রযুক্তির। নিউ জেনারেশন নিউক্লিয়ার রিয়াক্টর গুলো ১০০% নিরাপদ আর প্ল্যান্ট লাইফ ৭০ বৎসর! তার মানে পুরো এক প্রজন্মের বিদ্যুৎ নিয়ে আর চিন্তা করতে হবে না। আর নিউ জেনারেশন নিউক্লিয়ার রিয়্যাক্টর 'পিবল বেড' টাইপ। সেই প্রাচীন মান্ধাতা নিউক্লিয়ার ফুয়েল রড দিয়ে চেইন বিক্রিয়া করানো হয় না যার কারনে আরেকটা ফুকুশিমা, চেরনোবিল বা থ্রি মাইল আইল্যান্ডের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই বলা যায় এটি শতভাগ সেইফ।
কিন্তু আমি রাশিয়ান টেকনোলজি সম্পর্কে কিছু জানিনা। তারা এখনোও প্রাচীন পদ্ধতি ব্যবহার করে কিনা। ব্যক্তিগত ভাবে এজন্য আমি রাশান প্রযুক্তির বিরোধী, আর সরকার একটু সস্তা দেখে যদি তাদের প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকে পরে, তাহলে ব্যাপারটা ভালো হবে বলে মনে হয় না। এর চেয়ে জাপানী বা দক্ষিন কোরিয়ান প্রযুক্তি অনেক উন্নতমানের ও নির্ভরযোগ্য। নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টের ডিজাইন, কন্সট্রাকসন, কস্টিং সবকিছু সম্পর্কে ধারনা পেতে চাইলে এম.আই.টি -র একটা প্রসেস ডিজাইন অভিসন্দর্ভ 'নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট ডিজাইন ' দেখতে পারেন।

মূলত মার্কিন প্রভূরা জানেন যদি নিউক্লিয়ার শক্তি জনপ্রিয় হয় তাহলে তাদের তেলের রাজনীতি বন্ধ হয়ে যাবে আর তাদের একচ্ছত্র আধিপত্ত থাকবেনা। ঠিক এই কারনেই তারা নিউক্লিয়ার শক্তির বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালাতে পটু। এ নিয়ে হলিউডে কিছু ফিল্ম-ও বানানো হয়েছে। কিন্তু আশা রাখি, অতি সত্বর সরকার নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যাপারে যথাযথ সিদ্ধান্ত নেবেন আর আমরা লোডশেডিং এর কবল থেকে রক্ষা পাব।

ফুয়াদ মাহ্মুদ এর ছবি

অনেক দিন পর বসলাম। ব্যস্ততার জন্য দেখা হয়নি। যারা এই পোষ্টে মন্তব্য করেছেন বা পরামর্শ দিয়েছেন তাদের ধন্যবাদ। তবে কিছু বিষয় পরিষ্কার করা উচিত। বিশেষ করে নুভান-এর মন্তব্য নিয়ে-
১। আমার লেখাটা সম্ভবত উনি ভাল করে পড়েননি। জার্মানিসহ বাকি দেশগুলো কেন পারমানবিক বিদ্যুৎ থেকে সরে আসছে তা কিন্তু লেখায় স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। এছাড়া লেখার সাথে লিঙ্ক গুলো দেখলেও বোঝা যাবে এই সরে আসার কারন মোটেও Global warming না। পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উচ্চ ঝুঁকি এবং খরচ আর সেই সাথে এটা নিয়ে তৈরি হওয়া জনগনের আন্দোলনের চাপ-এটাই এই দেশগুলোর পারমানবেক বিদ্যুৎ থেকে সরে আসার কারণ।
২।পারমানবিক বিদ্যুৎ-এর খরচ প্রতি কিলোওয়াট ০.২৫ থেকে ০.৬০ সেন্ট- এই তথ্য উনি কোথায় পেলেন। আমার লেখায় পারমানবিক বিদ্যুৎ এর সাথে অন্যান্য জ্বালানি হতে তৈরি বিদ্যুৎ-এর একটা তুলনামূলোক হিসেব সম্ভবত উনার চোখ এড়িয়ে গেছে। সেটা ইচ্ছাকৃত কিনা জানি না। তবে এখানে বলে রাখা ভাল যে এই বিষয় নিয়ে প্রচুর পরষ্পরবিরোধী তথ্য আছে। আমি Wiki-এর তথ্যকেই authentic ধরে নিয়েছি। আর উনার তথ্যটা কোথা থেকে নেয়া তা কিন্তু বলা হয়নি।
৩। পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দূর্ঘটনার সাথে অন্যান্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দূর্ঘটনা মিলিয়ে ফেলা অত্যন্ত হাস্যকর ব্যাপার। এই ব্যাপারে আমার খুব বেশি কিছু বলার নেই, সচেতন পাঠক-ই সেটা বিবেচনা করবেন।
৪। পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রযুক্তি কত বছর পুরানো সেটা দিয়ে কিন্তু আমাদের সক্ষমতা নির্ধারন করা যায় না। মহাকাশ নিয়ে গবেষণাও কিন্তু পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতোই বহুদিন আগের বিষয়। বিবেচ্য হচ্চে আমরা কতটুকু এই প্রযুক্তি আয়ত্ব করতে পেরেছি। আর ব্যবসার জন্য পৃথিবীর বহু দেশে পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিভাবে এর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে তা একটু উদাহারন সহ বুঝিয়ে বললে ভাল হতো। ধন্যবাদ।

ফুয়াদ মাহমুদ এর ছবি

দুঃখিত নামের বানানটা হবে ফুয়াদ মাহমুদ।

নুভান এর ছবি

ধন্যবাদ মিঃ ফুয়াদ আপনার মুল্যবান বক্তব্যের জন্য। আমার কমেন্ট কিছুটা বড় হয়ে যাচ্ছিলো বিধায় কিছু বিষয়ের লিঙ্ক রেফারেন্স এমবেড করতে পারিনি বলে দুঃখিত, এখন সেটা দিয়ে দিচ্ছি।

১। আপনি ঘুরে-ফিরে এক জার্মানির উদারহন কেন টানছেন এটা আমার বোধগম্য নয় (শুধু আপনি নন, ইন্টারনেটে 'নিউক্লিয়ার প্ল্যান্ট শাট ডাউন' লিখে সার্চ দিলে শুধু জার্মানির কিছু নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট বন্ধের কথা আসে বলে সবাই শুধু এটা নিয়েই মাথা ঘামায়। আমি স্পষ্টত মূল কারনটি বলে দিয়েছিঃ জার্মানি-যুক্তরাষ্ট্র-জাপান যে সকল পারমানবিক চুল্লি বন্ধ করে দিচ্ছে, সেগুলো পুরাতন প্রযুক্তির। আর পুরাতন প্রযুক্তির বলেই তাদের নিউক্লিয় বর্জ্যের পরিমান বেশি হয়, আর তাই তারা সেগুলো বন্ধ করে দিচ্ছে।

২। উইকির রেফারেন্স ভালো, অস্বীকার করার জো নেই। কিন্তু উইকি অনেকগুলো সাইটের রেফারেন্স থেকে কাটা-ছেড়া করা একটা আর্টিকেল যাতে প্রচুর অম্ব্যুগিটি আপনি পাবেন। তাই প্রযুক্তিগত তথ্যের জন্য সবথেকে ভালো সোর্স আমার মতে বৈজ্ঞানিক পেপার/জার্নাল অথবা কোন প্রজেক্ট রিপোর্ট/অভিসন্দর্ভ। আমি এখানে মার্কিন ও জার্মান দুটো সোর্স এর রেফারেন্স-ই আপনাকে প্রদান করবো।

এই সমীক্ষাটি নেয়া হয়েছে 'ওয়ার্ল্ড নিউক্লিয়ার এসোসিয়েশন' এর ওয়েবসাইট থেকে, ছবিতেই দেয়া আছে রেফারেন্স, তুলনা করে দেখবেন।

এই দ্বিতীয় সমিক্ষাটি নেয়া হয়েছে নর্ডহাউসেন ইউনিভার্সিটি অফ এপ্লাইড সায়েন্স, জার্মানির এক বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ টিমের প্রজেক্টের ফলাফল হিসেবে।
এবার আসি গ্যাস ভিত্তিক পাওয়ার জেনারেশনের খরচাপাতির হিসেবে, প্রাকৃতিক গ্যাস ভিত্তিক ৬৬০ মেগাওয়াট (দুটি ৩৩০ মেগাওয়াট) এর পাওয়ার প্ল্যান্ট বসাতে সর্বনিম্ন খরচ ধরা হয়েছে ৫৫০ মিলিয়ন ডলার। এবার আপনি কষ্ট করে এই লিঙ্কে গিয়ে দেখুন, প্রাকৃতিক গ্যাস ভিত্তিক শক্তি উৎপাদনের প্রজেক্ট লাইফ মাত্র ত্রিশ বৎসর। যেখানে আমি বলেছি দক্ষিন কোরিয়া ও জাপানের নতুন প্রজন্মের নিউক্লিয়ার রিয়াক্টরের প্ল্যান্ট লাইফ ৭০ বৎসর! এবার সহজ অঙ্ক কষুন, কোনটিতে বেশী লাভ, বলুন দেখি? আপনার জন্য ক্যুইজ রইলো।

৩। দক্ষিন কোরিয়ার ২১ টি নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ১৮.৭ গিগা ওয়াট (মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৩১%) আসে এবং আগামী কিছু দিনের মধ্যেই তা ৪৯% তে পৌছুবে, আর ২০৩০ সালের মধ্যে মোট ৪০ টি নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে তারা ৪৩ গিগা ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন করবে। তাদের দেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব আমাদের থেকে কম নয় (বসবাস অযোগ্য হাজার খানেকের বেশী পাহাড় থাকার জন্য যেখানে কোন কিছুই করা সম্ভব নয়)। তারা কি নিউক্লিয়ার রিয়্যাক্টরের দুর্ঘটনা সম্পর্কে কোন রিস্ক এসেসমেন্ট ছাড়াই এতগুলো চুল্লি বসাচ্ছে বলে মনে করেন? আমাদের পার্শ্ববর্তী ভারতের কথা ধরুন না কেন? ১৯ টি এখন চলমান অবস্থায় আছে। ভিয়েতনামের মতন দেশে ৫টি চুল্লি নির্মানাধীন। বিশ্বের ৩০ টি দেশে ৪৩৭ টি পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনা আছে, আর ৫০ টি অচীরেই চালু হতে যাচ্ছে। কেন? কারন উন্নতির মূলে আছে ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন আর তার মূলে আছে শক্তির যথাযথ (অপ্টিমাম) ব্যবহার আর এই নিশ্চিৎ শক্তির উৎস হল একমাত্র নিউক্লিয় শক্তি (এখন পর্যন্ত)। আমি আগেই বলেছি, ফসিল ফুয়েল পুড়িয়ে নষ্ট করাটা সব থেকে বোকামী, আর আমরা বোকার মতই সীমাহীন গ্যাস পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করছি, অথচ কখনও কি ভেবে দেখেছি এই গ্যাস শেষ হয়ে গেলে সার এর উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে, আর তখন চাউলের দাম কতটা বৃদ্ধি পাবে? যাই হোক, অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্য থেকে সরে আসি, পাঠককূল নিজেরাই বিচার করে নেবেন তারা কোন বিষয়ের পক্ষপাতি।

৪। একটি প্ল্যান্টের এখন সম্পুর্ণ অপারেশন এডভান্সড ইন্টেলিজেন্ট ইন্ডাস্ট্রিয়াল কন্ট্রোলার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় যেখানে প্রকৌশলিদের কাজ মূলত ডিস্ট্রিবিউটেড কন্ট্রোল সিসটেম বা ডিসিএস রুমে বসে শুধু প্রসেস মনিটর করা। এজন্য হ্যাজপ (HAZOP) স্টাডি করে কিছু সেট পয়েন্ট নির্ধারন করা থাকে। কোন একটি যন্ত্রাংশ ঠিক ভাবে কাজ না করলে অথবা বিকল হয়ে গেলে অথবা কোন বহিঃ কার্য (ডিস্টার্বেন্স) এর জন্য প্রসেস এর চুল পরিমান সেটপয়েন্ট থেকে বিচ্যুতি হলে প্রসেস স্বয়ংক্রিয় ভাবে সেগুলো ঠিক করে নেয়। যদি এখানে সে ফেইল করে, তাহলে ডিসিএস রুমে সঙ্গে-সঙ্গে লো-এলার্ট চলে যাবে, তখন ইঞ্জিনিয়াররা ওটা ম্যানুয়ালি ওভাররাইড করে দেবেন। যদি সেটাও ফেইল করে তখন মিডিয়াম এলার্ট চালু হয় আর সেই ইউনিট বন্ধ করে দিয়ে রিডানডেন্ট ইউনিট চালু করে দেন প্রকৌশলীগণ। যদি অতি-দৈব ক্রমে সেটাও ফেইল করে (যা কখনোই করে না, তবুও প্রশ্ন থেকে যায়) তখন সিস্টেমের সেই অংশটি বাই-পাস করে পুরো ইউনিট বন্ধ করে দেয়া হয়। এবার দেখুন, এতগুলো স্তর পার হয়ে আসার পর সিস্টেম বন্ধ হচ্ছে, তাই বলা হয়ে থাকে একটি আধুনিক প্ল্যান্ট, আপনার বাড়ির থেকেও নিরাপদ। আর বাংলাদেশের ৬০ বৎসরাধিক পুরোনো অতি-মাত্রায় পুরাতন ফেঞ্চুগঞ্জ আর ঘোড়াশাল সারকারখানাকে দেশীয় প্রকৌশলীরা যেভাবে সামলে রেখেছেন, সে তুলনায় একটি আধুনিক নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট এর অপারেশন আর মেইনটেনেন্স জলবৎ-তরঙ্গম!

তবে এখানে বলা ভালো, বর্জ্য ব্যাবস্থাপনা একটা বড় ইস্যু। নিউক্লিয়ার ওয়েস্ট ট্রিটমেন্ট কম্পানী গুলো যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাধা পায় মাঝে মধ্যেই (সন্ত্রাসীদের কাছে বর্জ্য চলে যাবার ভয়ে)। তবুও কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা আছে যারা বর্জ্য ডাম্পিং না করে রিসাইকেল করে। আর কন্সট্রাকশন কম্পানী বর্জ্য পরিশোধনের দ্বায়ীত্ব নিয়ে থাকে মূলত, তাই যাদের এখানে প্ল্যান্ট বানানো হচ্ছে, তাদের দুশ্চিন্তার খুব বেশী কারন দেখিনা। বলা বাহুল্য উন্নত দেশগুলো এখন নিউক্লিয়ার বর্জ্য রিসাইকেল করার প্রযুক্তি চালু করেছে আর এটা অচীরেই আশা করা যাচ্ছে সুলভ হবে

আশা করি পাঠকগণ উত্তর গুলো যথাযথ ভাবেই পেয়েছেন। ধন্যবাদ।

ফুয়াদ মাহমুদ এর ছবি

ধন্যবাদ নুভান। প্রথমেই একটা কথা পরিষ্কার করা দরকার-জনগনের কল্যাণে নেয়া যেকোন উদ্যোগকেই আমাদের স্বাগত জানানো উচিত। কিন্তু এই পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের যে চুক্তি হয়েছে তা আমাদের জনগনের সামনে উপস্থাপন করা হয়নি। এই প্রকল্পের ব্যয় কত হবে,প্রতি ইউনিটে খরচ কত হবে,বর্জ্য-ব্যবস্থাপকনা কি রকম হবে তার কিছুই পরিষ্কার করা হয়নি।বরঞ্চ যতটুকু তথ্য দেয়া হয়েছে তা মানুষকে বিভ্রান্ত করছে আরো বেশি। তাই পারমানবিক বিদ্যুৎ নিয়ে পাওয়া বিভিন্ন তথ্য নিয়ে আমাদের যে আশংকা তা এই লেখায় তুলে ধরেছি। আপনি বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তারপরও কিছু প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে-
১। আপনি বলেছেন শুধু জার্মানির উদাহারন আমরা কেন দিচ্ছি? আমার এই লেখাতেই কিন্তু বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড এবং তাইওয়ানের উদাহারন দেয়া হয়েছে। এছাড়া অষ্ট্রেলিয়া, অষ্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, গ্রিস, আয়ারল্যান্ড, ইটালি, লাটভিয়া,লুক্সেমবার্গ,মাল্টা,পর্তুগাল,ইসরায়েল,মালয়েশিয়া,নিউজিল্যান্ড এবং নরওয়ে পারমানবিক বিদ্যুৎ-এর বিরোধিতা করছে( http://en.wikipedia.org/wiki/Nuclear_energy_policy )। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সর্বশেষ পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসিয়েছিল ১৯৯৬ সালে। শুধু ৮০ র দশকেই তারা ৫০-এর ও অধিক পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র-এর চুক্তি বাতিল করেছে।আপনার বক্তব্য অনুযায়ি যদি শুধুমাত্র পুরানো প্রযুক্তির কারনেই বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোবন্ধ করা হয়, তাহলে উক্ত দেশগুলো কেন নতুন প্রযুক্তির বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করছে না?
২। আপনি পারমানবিক বিদ্যৎকেন্দ্রের খরচের ব্যাপারে কিছু রেফারেন্স দিয়েছেন। কিন্তু আমি আগেই বলেছি এই ব্যাপারে প্রচুর পরষ্পরবিরোধী তথ্য আছে।নিচেই এইরকম কিছু লিংক নিচে দিলাম-
http://www.greens.org/s-r/11/11-09.html
http://www.nucleartourist.com/basics/costs.htm
http://www.nei.org/resourcesandstats/nuclear_statistics/costs/
http://www.igcar.gov.in/nuclear/alagh.htm
আমার লেখাটিতে দেয়া লিংকটিতে ২০০৪-২০০৯ পর্যন্ত বিভিন্ন পারমানবিক বিদ্যুৎ-এর গড় খরচ দেয়া আছে। এই ডাটা ভুল কিনা তা তিনি উল্লেখ করেননি।আপনি গ্যাসভিত্তিক পাওয়ার প্ল্যান্টের ক্যাপিটাল কষ্টের কথা বলেছেন,কিন্তু আমার লেখায় দেয়া বিভিন্ন পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাহাড়সম ক্যাপিটাল কষ্টের ব্যাপারে আপনি কিছুই বলেননি।
৩।বর্তমানে ব্যাপকভাবে পারমানবিক বিদ্যুৎ-এর দিকে ঝুকছে ৪ টি দেশ-চীন,ভারত,দঃ কোরিয়া এবং ব্রাজিল।কিন্তু এই সকল দেশেও এইসব প্রকল্পের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিরোধিতা এবং বিক্ষোভ আছে।সম্প্রতি ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের কুদামকুলাম-এর আন্দোলন এর একটি বহিঃপ্রকাশ। আর এই দেশগুলোর চাহিদার সাথে আমাদের মত দেশের চাহিদার কোন তুলনা না করাই মনে হয় বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
৪।আপনি পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অপারেশনের যে বর্ননা দিয়েছেন তাতে এই বিষয়ে আপনার ব্যাপক জ্ঞানের পরিচয় পাওয়া গেলেও আমার প্রশ্নের উত্তর কিন্তু পাইনি। কারন পারমানবিক প্রযুক্তি অধিকারি হওয়া মানে শুধু বিদ্যুৎ কেন্দ্র-এর অপারেশন চালানো নয়।যেকোন পরিস্থিতিতে এই প্রযুক্তি দক্ষতার সাথে সামালানোটাই মূল ব্যাপার।আমরা দেখেছে গ্যাস উত্তোলন করতে গিয়ে মাগুছড়া এবং টেংরাটিলায় বহুজাতিক কোম্পানিগুলো যে বিস্ফোরন ঘটায়, তাতে জাতীয় স্বার্থের কথা তারা বিবেচনা করেনি। জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট এই ক্ষেত্রগুলোতে জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর পূর্ন নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা এই জন্যই দরকার।আর তার আগে দরকার এই ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন।

meghdip এর ছবি

excelent post!কিন্তু নুভান এর reply টা best!

sumondhrubo এর ছবি

...অনেক বড় লেখা...তবে ভাল লাগল...।।

রাজীব এর ছবি

নুভান , আপনার রীপ্লাই তা ভাল লাগলো। পারমানবিক বর্জ্য নিয়ে সমস্যার বিষয়টি নিয়ে একটু বলেন। যদি পোস্ট লেখকের কথা ঠিক হয় তাহলে কপালে খারাপি আছে।

fahmid এর ছবি

nice চলুক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।