হ্যাকিং

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ১৪/১০/২০১২ - ১২:২৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমি বা। বয়স একুশ। দিনকাল ভালোই যাচ্ছিল। মাসে মাসে বাপের পাঠানো টাকা, হলের খাবার আর অল্প-স্বল্প পড়াশুনা আমার অবস্থা এক কথায় বোঝানোর জন্য যথেষ্ট ছিল।

সবই ঠিকই ছিল। সমস্যার শুরু তখন থেকে যখন আমি আমার ক্লাসমেট রি নামের মেয়েটার প্রেমে পড়ে গেলাম। প্রেমের কথা বলার সাহস আমার ছিল না। মনের কথা বলতে না পেরে প্রচন্ড হতাশ হয়ে গেলাম। জীবন সম্পর্কে বিতৃষ্ণা চলে আসলো। কিছু ভালো লাগে না। গল্পের বই পড়তে ভালো লাগে না, গান শুনতে ভাল লাগে না, পিসিতে গেম খেলতে ভাল লাগে না, পড়াশুনা যা করতাম তাও করতে ভালো লাগে না। পুরাই বাজে অবস্থা। জোম্বির মত জীবনধারণ শুরু করলাম। ওদিকে আমার পছন্দের মেয়েটা দেখি খুব আনন্দে দিন কাটাচ্ছে। সহ্য করতে পারলাম না। আমি প্রেমে পড়ার পর পড়েই থাকব আর ও কেন খুশিতে থাকবে। মাথায় শয়তানি চাপল। মেয়েটার ফেসবুক আইডি হ্যাক করে ফেললাম।

আমি অবশ্য হ্যাকিং এর হও জানি না। তবে একথা সবাইকে মানতেই হবে, কারও হোম টাউন যদি খুলনা আর ছোট বেলার প্রিয় খেলা যদি লুডু হয় আর সে যদি তার ইমেইল অ্যাকাউন্টের সিক্রেট কোয়েশ্চান এগুলো দিয়ে রাখে তাহলে তার আইডি হ্যাক হওয়া বাধ্যতামূলক। হ্যাক করার পর অবশ্য কেমন যেন মায়া মায়া লাগল। কোন ক্ষতি করতে ইচ্ছা করল না। নতুন পাসওয়ার্ড রি র এক বান্ধবীকে মেসেজ করে বের হয়ে আসলাম। পাসোয়ার্ড পেয়ে সে অতি স্বত্বর তার আকাউন্টের মালিকানা উদ্ধার করে নিল।
কিন্তু এদিকে আমার অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গেল। আগে হতাশায় ভুগতাম, এখন অপরাধবোধে ভুগতে শুরু করলাম। সারাক্ষণ মনে হয় কাজটা করা ঠিক হয় নি।

এভাবে দুই-তিন মাস প্রচন্ড হতাশা আর অপরাধবোধের মধ্য দিয়ে কাটিয়ে দিলাম। তারপর ঠিক করলাম না এভাবে আর থাকা সম্ভব না। কিছু একটা করা দরকার। রিকে ফোন করে বললাম ‘একটা কথা বলব। মানসিকভাবে প্রস্তুতি নাও।’ ও বলল ‘নিলাম’। কিন্তু আমার মধ্যে আবার ভয় জেঁকে বসলো। বলে দিলাম ‘আমিও মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে নেই। তারপরে বলব’।

তারপর কয়েকদিন ধরে মানসিক প্রস্তুতি নিলাম। একদিন ক্যাম্পাসে ওকে একা পেয়ে বলে দিলাম-

দেখো রি, মাইর-টাইর দিও না। তোমার আইডি যে কালপ্রিট হ্যাক করছিল, সে আমি।

রি একেবারে চোখ গোল্লা গোল্লা করে আমাকে খেয়ে ফেলবে এমন ভঙ্গিতে প্রশ্ন করল-

কেন হ্যাক করছ?

আমি একটু ভাব নিয়ে নিলাম, হ্যাকাররা কেন হ্যাক করে? কারণ তারা হ্যাকার।

আমি আসলে ছাগল টাইপের ছেলে। নাইলে আমি তো বলতে পারতাম, রি, আমি ভালবেসে তোমার আইডি হ্যাক করেছি। এটা আমার ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ।

দুই সপ্তাহ আফসোস করলাম। কেন বললাম না? তারপরে আবার সিদ্ধান্ত নিলাম এবার ভালোবাসার কথা বলেই দিব। এস্পার ওস্পার হয়ে যাওয়া উচিত। ক্যাম্পাসে এক কোনায় রিকে ডেকে নিয়ে বললাম-

আরেকটা কথা বলব।মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নাও।

আবার কি অকাজ করছ?

বা কারণ ছাড়া অকাজ করে না। শুধু কিছু কথা বলব।

তাহলে বলেন বা সাহেব। শুনে ধন্য হই।

ইয়ে মানে রি, তোমাকে আমি অনেকদিন ধরে ভালবাসি। কথাটা না বলে শান্তি পাচ্ছি না।

জানি তো।

জান মানে?

আমি কি কচি খুকি নাকি? ক্লাসে সারাক্ষণ যে আমার দিকে তাকিয়ে থাক, কি ভাবছ জানি না?? আমার বাসার কাছে গিয়ে যে ঘুর ঘুর কর আমি লক্ষ্য করি না??

তাহলে এখন কি করব?

কি করবা মানে? আমার আইডি হ্যাক করছ আবার আমার পিছনে ঘুর ঘুর কর। দূরে যেয়ে মর।

ব্যর্থ মনোরথে পিছন ফিরে হাঁটা শুরু করলাম। উদ্দেশ্য দূরে যেয়ে মরব। পিছন থেকে রি ডাক দিল-
রাতে ফোন খোলা রাখবা। ফোন দিব।

রক্তিম


মন্তব্য

ক্রেসিডা এর ছবি

লেখাটা উদ্দেশ্যহীন ভাবে শেষ করে দিলেন না?

__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;

রক্তিম এর ছবি

লেখাটার শেষ নিয়ে বেশী চিন্তা করি নি। তাই হয়তো এ অবস্থা।

দ্রোহী এর ছবি

নাউজুবিল্লাহ! খাইছে

রক্তিম এর ছবি

নাউজুবিল্লাহ।

অতিথি লেখক এর ছবি

এইডা কী হইল? ভাই রক্তিম, আপনার লেখার হাতটা ভালো - ছোট ছোট কিছু সংলাপের মধ্য দিয়ে কিছু ছবি সুন্দর তুলে নিয়ে এসেছেন। কিন্তু কাহিনিটা কেন যেন ভালো লাগলো না - অপরিণত মনে হলো পড়তে গিয়ে।

লেখা চালিয়ে যান, আপনার লেখার হাত ভালো।

-অয়ন

শিশিরকণা এর ছবি

পোলাপাইন আকামে উৎসাহ পাবে আরো।

জানি তো।

এইটা মনে হয় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সত্যি। মেয়েরা কেমনে জানি আগে ভাগেই টের পেয়ে যায়।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

কই টের পায়? খাইছে

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

সাফিনাজ আরজু  এর ছবি

একালের মজনু খাইছে

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

গল্প না হয়ে সত্যি হলে খুশি হতাম। তাহলে, আপনাদের শুভকামনা জানানো যেত।
যাই হোক, লেখা ভাল লাগল।
লিখে যান।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

লেখা চলুক চলুক

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক এর ছবি

এই বয়সে কি এমন করেই ভালোবাসার প্রকাশ ঘটায় ? যদিও এই বয়সটা পার করে ফেলেছি কিন্তু জানা হয়নি । শুধু হাসলাম ব্যাপারটা ভেবে মানে আইডি হ্যাক করার মাধ্যমে বলতে চাওয়ার ধরনে ।

অপর্ণা

অতিথি লেখক এর ছবি

চালিয়ে যান ভাইয়া হাসি

-কিঙ্কর

অতিথি লেখক এর ছবি

চালিয়ে যান ভাইয়া হাসি

-কিঙ্কর

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

চলুক। চলুক।

মরুদ্যান এর ছবি

ভালৈসে! হাসি

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।