বাতাসে লাশের গন্ধ, মাটিতে লেগে আছে রক্তের দাগ

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ১৪/১২/২০১২ - ৪:০৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

"এটা অবধারিত হয়, বুদ্ধিজীবীরাই জাগিয়ে রাখেন জাতির বিবেক, জাগিয়ে রাখেন তাদের রচনাবলির মাধ্যমে, সাংবাদিকদের কলমের মাধ্যমে, গানের সুরে, শিক্ষালয়ে পাঠদানে, চিকিৎসা, প্রকৌশল, রাজনীতি ইত্যাদির মাধ্যমে জনগণের সান্নিধ্যে এসে। একটি জাতিকে নিবীর্য করে দেবার প্রথম উপায় বুদ্ধিজীবী শূন্য করে দেয়া। ২৫ মার্চ রাতে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল অতর্কিতে, তারপর ধীরে ধীরে, শেষে পরাজয় অনিবার্য জেনে ডিসেম্বর ১০ তারিখ হতে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে দ্রুতগতিতে"

১৯৭১ সাল সিলেট শহর। হানাদার বাহিনীর বর্বর ধ্বংসলীলায় যখন মানুষ দিশেহারা পলাতক, এমন ভয়ঙ্কর অনিশ্চিত সময়ে আর্ত মানুষের সেবায় সংকল্পে স্থির ও নির্ভীক ছিলেন সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডাঃ শামসুদ্দিন আহমদ। প্রায় জনশূন্য সিলেট শহরে থেকে মুমূর্ষু যুদ্ধহত বীরদের তিনিই ছিলেন একমাত্র ভরসা। ছোট্ট মেডিকেল টিমের অগ্রসৈনিক ছিলেন তিনি। রাজাকার-আলবদর-আলশামস ও বর্বর পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে তাঁর যুদ্ধ ছিল মানবতা আর দেশপ্রেমের উজ্জ্বল তারা। তাঁর মেডিকেল টিমে ছিলেন তরুণ তুর্কি ইণ্টার্ন ডাক্তার শ্যামল কান্তি লালা। যারা সবুজ হৃদয়ে ছিল দেশের মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা। ভয়ঙ্কর দিনেও তিনি জাতির শ্রেষ্ট সন্তানদের সেবা করে গেছেন। চারিদিকে বারুদের গন্ধ পড়ে থাকা মা-বোনের লাশের উপর দিয়ে হাঁটা আর বর্বর রাজাকার-হানাদারদের বিষাক্ত জিহ্বার মধ্যে তিনি ছিলেন তরুণ শিখা। নিজে জ্বলে না, অন্যকে জ্বালাতেও পারে আবার পুড়িয়ে ছারখার করে সব।
সেই মেডিকেল টিমে ছিলেন সদাহাস্ব্যজ্বল, দৃঢ় মনোবলের মানব এম্বুলেন্স ড্রাইভার কোরবান আলী। যার কাজ ছিলো যখনই গুলির শব্দ কানে আসতো তখনই রাজপথে ছুটে গিয়ে আহত মা-বোন-ভাইকে গভীর মমতায় কোলে করে নিয়ে আসতেন। যেখানে পাকিস্তান সাপ-বিচ্ছুদের ভয় ছিল, ভয় ছিল তারই মায়ের কোল থেকে জন্ম নেওয়া শুকুরছানা রাজাকারদের। সেখানে নিজের জীবন কোরবান করার নেশায় ছুটে গেছেন আহতদের পাশে। এটাই হয়তো মাতৃভূমির প্রতি গভীর ভালোবাসা। দিবারাত্রী আহতদের সেবা করেছেন। দেশমায়ের মত আগলে রেখেছেন বুকে। ব্যাথা হলে বলেছেন, ওগুলো সেরে যাবে তেমন কিছু না। আহার-নিদ্রা ভুলে সেই মেডিকেল টিমের আরেক মানব অপারেশন থিয়েটারের নার্স মাহমুদুর রহমান। বর্বর হানাদার আর দোসর দালালরা এই ধামাল ছেলেদের ঠেকাতে না পেরে, নির্মমভাবে হাসপাতালের ভেতর হত্যা করেছিল। কতটুকু বর্বর মানুষ জাতি তারা যারা চিকিৎসারত অবস্থায় ডাক্তার রোগি হত্যা করে। আজ যারা তাদের জন্য মায়া কান্না করেন। তাদের কাছে জানতে ইচ্ছে করে..তোমরা কি তাদেরই বীর্য থেকে জন্মলাভ করেছ?
প্রিয় বন্ধুগণ এখানেই শেষ নয়। এই হত্যার প্রতিবাদ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সাহয্য করায় হত্যা করায় সিলেট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও সুপারেন-টেনডেণ্ট লেঃ কর্নেল ডাঃ জিয়াউর রহমান'কে। এভাবেই সারা বাংলাদেশ তথা সিলেটে অনেক মহান সন্তানকে হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদর-আলশামস হত্যা করেছে। জাতীকে মেধা শূন্য করে দিতে চেয়েছিল পশুরা।

শত শত বুদ্ধিজীবী আর জাতির মহান সন্তানদের যারা হত্যা করেছিল তারা আমাদেরই দেশে আমাদেরই পতাকা উড়িয়েছে বহুবার। আমাদের ব্যর্থতা আর জাতীর কিছু কুলাঙ্গারদের মদদপুষ্ট এই রাজাকার-আলবদর-আলশামসের আমরা এখনোও কিছু করতে পারিনি। শত শত বাঁধা আর কঠিন পথ অতিক্রম করেও হলে আমরা তাদের দড়িতে ঝুলাতে চাই। যে দড়ির অন্যপাশে ধরে আছেন আমাদের মহান আত্মত্যাগি ভাই-বোনের। দ্রুত সে দড়ি তাদের হাতে তুলে দেওয়া হোক। না হলে কোটি কোটি বিকের আগুন আরো বাড়বে বই কি কমবে না। শোক আমাদের শক্তি যোগায় দেশকে ভালোবাসায় কারণ এ শোক ছিল উন্মাদ কুকুরদের সঙ্গে রাজপথের মানুষের লড়াই। শুধু বলতে চাই দ্রুত যেনো দ্রুত সকল যুদ্ধাপরাধীর বিচার হয়।

"এদেশ কি ভুলে গেছে সেই দুঃসপ্নের রাত,সেই রক্তাক্ত সময়
বাতাসে লাশের গন্ধ, মাটিতে লেগে আছে রক্তের দাগ।"

পাপলু বাঙ্গালী


মন্তব্য

বিধুভূষণ ভট্টাচার্য এর ছবি

বুদ্ধিজীবী হত‌্যার কুচক্রীরা এখনও সক্রিয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

ঠিক দাদা এখনো ফণা তুলে সে।

পাপলু

তারেক অণু এর ছবি

ভুলি নাই, ভুলব না। বিচার হতেই হবে।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভুলি নাই, ভুলব না। বিচার হতেই হবে।

অবশ্যই হতেই হবে

skbj329 এর ছবি

আপনার বলিষ্ঠ লেখার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনাকেও ধন্যবাদ।

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রিয় বন্ধুগণ এখানেই শেষ নয়। এই হত্যার প্রতিবাদ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সাহয্য করায় হত্যা করায় সিলেট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও সুপারেন-টেনডেণ্ট লেঃ কর্নেল ডাঃ জিয়াউর রহমান'কে। এভাবেই সারা বাংলাদেশ তথা সিলেটে অনেক মহান সন্তানকে হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদর-আলশামস হত্যা করেছে। জাতীকে মেধা শূন্য করে দিতে চেয়েছিল পশুরা।

#প্রিয় পাপলু ভাই, শুভেচ্ছা আপনাকে, একটি কথা কি-তারা জাতিকে মেধাশূণ্য করে দিতে চেয়েছিল, সেটা করেছে এবং এখনো তাদের ডালপালা বিস্তারের মাধ্যমে করে চলেছে নানা ভাবে, তাই সাবধান থাকতে হবে। উত্তম জাঝা!

#ভাল থাকুন।

আশরাফুল কবীর

অতিথি লেখক এর ছবি

এখনো তাদের ডালপালা বিস্তারের মাধ্যমে করে চলেছে নানা ভাবে, তাই সাবধান থাকতে হবে।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমরা বোধহয় সব ভুলেই গেছি। চারপাশে শুধু শকুন। ভালো মানুষগুলো ঝিমুচ্ছে।

আজ যারা তাদের জন্য মায়া কান্না করেন। তাদের কাছে জানতে ইচ্ছে করে..তোমরা কি তাদেরই বীর্য থেকে জন্মলাভ করেছ?

চলুক

মহান মুক্তিযুদ্ধে সিলেটের চিকিৎসকসমাজের অবিস্মরণীয় ভূমিকা নিয়ে লেখার জন্য অশেষ ধন্যবাদ।

নির্ঝর অলয়

অতিথি লেখক এর ছবি

বিচার হতেই হবে, না হলে মাইরে মিস নাই।

অপ্রস্তুত লেনিন।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হতেই হবে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

চলুক

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।