সরকারের পতন অতঃপর

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ২৩/০৪/২০১৩ - ৯:৩৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমরা এক আজব পরিস্থিতি পার করে যাচ্ছি বেশ কিছু দিন ধরে। আমাদের দেশের প্রধান বিরোধী দল তত্বাবধায়ক বা নির্বাচন কালিন নিরপেক্ষ সরকারের দাবীতে আন্দোলন করে যাচ্ছেন বেশ কিছুদিন ধরেই। কিন্তু বর্তমানে তাদের আন্দোলন হচ্ছে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন । এখন প্রশ্ন হলো যদি তাদের আন্দোলনের ফলে সরকার পতন হয়েই যায় তবে দেশ চালাবে কে ?
দেশ কি তার নিজের মতই চলতে থাকবে? নাকি হবে। তত্বাবধায়ক সরকারের দাবীর তো কিছুটা হলেও যুক্তি ছিল (২০০৭ এর আগে সম্পূর্ণ যুক্তিযুক্ত ছিল বলে মনে করি)। এই এক দফার যুক্তিটা কি বুঝতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। আমাদের বিরোধী জোট (দুঃখিত তারা আমাদের না সরকারের বিরোধি জোট, যদিও পক্ষান্তরে তারা আমাদের বিরোধী জোট ও বলা যায় কারন সরকার মানেই তো জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি) কি সম্পূর্ন যুক্তি আমাদের কে জানাতে পারেন। শুধু মাত্র সরকারই কিন্তু আমাদের প্রতিনিধি না এই সরকার বিরোধীরাও কিন্তু আমাদের প্রতিনিধি। তারা আমাদের রায় নিয়েছে কিন্তু আমাদের কথা বলেন না শুধু নিজেদের আখের গোছেনোর চিন্তা করেন ।এখানে তারা বলতে কিন্তু সব দলের কথাই বলছি, কারন কেউ আমাদের কথা বলেন না যতটুকু বলেন তাও নিজেদের স্বার্থেই বলেন। সরকারী দল নিজেদের সম্পদ করতে আর বিরোধীরা আগের আমলে গোছানো সম্পদ ধরে রাখতে আর ভবিষ্যতে কিভাবে সম্পদ করা যাবে তার হিসাব মেলাতেই ব্যস্ত থাকে।
যাই হোক এসব কথা এ দেশের নাগরিক মাত্রেই জানা কথা। এখন আসি যা নিয়ে আলোচনা করতে চাই সে প্রসঙ্গে, ধরুন বাংলাদেশের সরকার বিরোধীদের আন্দোলন সফল হয়ে গেছে। সরকারে যে দল আছে তারা ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে গেল। তাহলে কি হবে? নিশ্চয় বিরোধীরা গিয়ে ক্ষমতা দখল করে নিবে ! নাকি অন্য কিছু হবে ? যদি সরকারী দল পালিয়ে গিয়ে থাকে আর নিরুপায় হয়ে বিরোধী দল হাল ধরে (যদিও সম্ভাবনা কম) তবে কি তাতে আমাদের আমজনতার ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটবে। আর দেশে এই রকম কোন ঘটনা ঘটবে বলে মনে হয় না যদি সরকার পালায় তবে আমাদের সেনারা দেশে রাজত্ব কায়েম করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বিশ্বে কোথাও কি সরকার পালিয়েছে এমন নজীর আছে? আমার জানা নেই হয়ত এবার সরকারের বিরোধীরা এ দেশে এ নজির স্থাপন করতে চাচ্ছে। ওহ এতো কথা বলছি তো যদি সরকার পালায় তবে কি হবে ভেবে কিন্তু সরকার তো পালাতে পারবে না তারা তাদের ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। তারা পালিয়ে গেলে এদেশে এরপর যত সরকারই আসুক না কেন তারা আর বাংলাদেশের সরকার হবে কিনা সন্দেহ আছে, হয়ত নতুন কোন নামে সরকার হতে পারে। বাংলাদেশ সরকার হলে তো অবৈধ হবে, তাই নাহ।
আমাদের সরকারের বিরোধীদল সরকারী দলকে ক্ষমতা থেকে তারাতে পারবে কি তাদের আন্দোলনের মাধ্যমে ? হয়ত পারবেনা অথবা পারতেও পারে। এখানে উল্লেখ্য যে গণপ্রজাতন্ত্রের সরকারী দল ও বিরোধী দল উভয় দলই সরকারের অংশ, যেমন আলোকে চিনতে অন্ধকার লাগে তেমন সরকারি দল চিনতে বিরোধীদল লাগে অথবা বলা যায় অন্ধকার আছে বলেই আলো এতটা প্রয়োজনীয় সেরকম বিরোধীরা আছে বলেই সরকার ভাল কাজ করতে বাধ্য হয়। বিরোধীরা সরকারের থেকে ক্ষমতা নিতে চায় তার জন্য প্রয়োজনে পিছনের দরজা দিয়ে হলেও তারা বিভিন্ন ভাবে সেনাবাহিনীকে সে কাজে আহ্বান ও করছে। আবার তাদের দ্বায়িক্তশীল এক নেতা সরকারকে পিছনের দরজা প্রশস্থ করতে বলাছেন কারন হিসাবে যদিও বলছেন যে সরকারকে পালাতে হবে পিছনের দরজা দিয়ে কিন্তু নিন্দুকেরা বলেন যে ঐ দরজা দিয়ে উনারা ডুকতে চান তো তাই (যিনি বলেছেন তিনি একটু মোটা তো তাই তার ডুকার জন্য একটু প্রসস্থ না হলে সমস্যা হতে পারে বলে মনে হয়, সে চিন্তা থেকেই হয়ত তিনি বলেছেন)।
আমরা যদি একটু খেয়াল করি কেন তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে এতো সমস্যার শুরু হল। হ্যাঁ এটা কিন্তু সত্য যে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল এক সময় আন্দোলন করেই তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে বাধ্য করেছিলেন ততকালীন একদলীয় নির্বাচনকারী সরকারকে যারা আজ সেই তত্বাবধায়কের কথা বলছেন। বর্তমান বিরোধীদলের চেয়ারপার্সন তখনকার প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন “পাগল আর শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয়।” এখন তিনিই আবার পাগলদের সরকারের দাবীতে সোচ্চার। কিন্তু কথা হল যে দলটির আন্দোলনের ফলে এই পদ্ধিতির জন্ম হল তারা কেন এই প্রথা বাতিল করলেন ? এর পিছনে কারনটা হল ২০০৬ এ নির্বাচনকালীন সরকার মানে প্রথা অনুযায়ী তত্বাবধায়ক এর প্রধান হিসাবে সুচারু রুপে তখনকার সরকার সমর্থীত বিচারপতিকে বসানোর ব্যবস্থা করে সরকার (বর্তমান বিরোধীরা)তারপরে কথা সবারই জানা আবার আন্দোলন ফলে সেনা সমর্থিত তত্বাবধায়ক দেশে আসল। এই সেনা সমর্থিত সরকার দেশের রাজনীতি বিদদের মেরুদন্ড ভাঙ্গার কাজে লিপ্ত হয় যদিও সে সময়ে সাধারণ জনতা তাদের এই কাজকে সাধুবাদ জানিয়েছিল। শুধু বিপদে পড়তে হয়েছিল অস্বাভাবিক ব্যবসায়ী আর রাজনীতিবিদ্দের। এখানে অস্বাভাবিক ব্যবসায়ী বলার কারন হল এই সকল ব্যবসায়ীরা বেশির ভাগই ছিল অসাধু তাই তাদের সঠিক পথে নেবার এক প্রচেষ্টা তারা চালিয়েছিল আর রাজনীতিবিদ মানেই হল ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাধারন মানুষের সম্পদ নিজের করে নেওয়া ঐ সাধারন মানুষের অসাধারন প্রতিনিধি। এখন রাজনীতি যারা করেন তারা আবার ভাল হবার শিক্ষা নিতে চান না বলেই হয়ত তত্বাবধয়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছেন।

যদি তত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বহাল থাকত তাহলে আমাদের বিরোধীদলের কি কোন আন্দোলনের ইস্যু থাকত? আমার মনে হয় থাকতই কারন হল, আমাদের দেখা কোন সরকারই তার শেষের দিকে এসে আন্দোলনের মুখোমুখি হয়নি সে অভিজ্ঞতা নেই। প্রত্যেকবার কোন না কোন ইস্যুতে সরকার বিরোধীরা অন্দোলন করেছে। আর প্রত্যেকবার বিরোধীরা জয়লাভ করেছে তাই বলাই যায় যে পরবর্তি নির্বাচনে জিততে বিরোধীরা আন্দোলন করবেই সে যে ইস্যুতেই হোক। প্রয়োজনে নিজের ঘরে আগুন দিয়ে যেমন গ্রামে একে অন্যের বিরুদ্ধে মামলা করার চিন্তা করে তেমনি নিজের দলের লোক মেরে হলেও আমাদের রাজনীতিবিদেরা আন্দোলনের ইস্যু তৈরি করে আন্দোলনে নামে। কারন কিন্তু স্পষ্ট ক্ষমতার শীর্ষে অধিষ্ঠান করা অথবা ক্ষমতার সহযোগী হওয়া।
আমি কি আমার মূল প্রসংগ থেকে সরে গেছি ? নাহ এতক্ষন বললাম কেন আজকের সরকার পতনের আন্দোলন করতে হচ্ছে আমাদের সরকার বিরোধীদের। কিন্তু তারা তাদের তত্বাবধায়ক আন্দোলনের থেকে এখন অনেক দূরে আছে মানে এখন তত্বাবধায়ক চায়না তারা চায় সরকারের পতন। যদিও সরকার ও সরকার সমর্থকরা বলছেন যে তারা আসলে চান বর্তমানে চলমান মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের (যুদ্ধাপরাধীদের) বিচার কাজ বাঞ্চাল করতে। তাদের এ দাবী কিন্তু অমূলক নয়। কারন বিরোধীদল হিসাবে যারা রয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম দলের কান্ডারীরা আজ মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরধী অপরাধের বা যুদ্ধাপরাধের মামলায় বিচারের সম্মুখীন হয়েছে। এখন ঐ দলটির নেতারা তাদের শীর্ষ নেতাদের ছাড়াতে চাইবে এটা তো স্বাভাবিক আর তাদের সহযোগী হিসাবে বিরোধী সকল পক্ষই চাইবে এই বিচার কাজ বন্ধ করতে। কিন্তু আশ্চর্য লাগে যখন এই বিচার বন্ধ করতে চাওয়াটাকে তারা ভিন্ন ভাবে বলেন স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মানের দোহাই তুলে । যাই হোক আমি ঠিক বুঝতে পারিনি আজও কি হবে যদি এই সন্ত্রাসী আন্দোলনের মুখে সরকার পতন হয়েই যায়? তবে এতো চিন্তার পর একটা সমাধান বোধহয় পাওয়া গেল সেটা হোল হেফাজতে ইসলাম। তাদের এক নেতা ক’দিন আগে ঢাকার মোহাম্মদপুরে বলেছেন আগামী ৬ মে থেকে হেফাজত সরকার পরিচালনা করবে (পত্রিকাতে এসেছিল কথাটা)। তাহলে বিরোধীদলের এবার সরকার পতন করতে কোন সমস্যাই তো নাই সরকারের দায়িক্ত নেবার জন্য তথাকথিত অরাজনৈতিক সংঘঠন তো এসে গেছে। যেহেতু তারা অরাজনৈতিক বলে নিজেদের দাবী করে থাকেন তার মানে তারা দীর্ঘসময়ের জন্য রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকবে না বলে মনে হতে পারে।
যদি হেফাজতে ইসলাম ক্ষমতায় আসেই তবে কি হবে ? হতে পারে অনেক কিছুই আজকের আফগানিস্থানের তালেবানী শাষন সম্পর্কে যারা জানেন তারা বুঝতে পারছেন কেমন হবে এদের শাষনকাল। তবে আফগানিস্থান থেকে কিছু শিক্ষানিয়ে হয়ত আরো ভাল করে তথাকথিত ইসলামী শাষন কায়েম করবে যেন চিরতরে তারা এদেশে ক্ষমতায় থাকতে পারে। আর এখনকার বিরোধী আর সরকারী দলের নেত্রিদের যে কি হবে তা নয় নাই ভাবলাম। কিন্তু এদেশের সাধারন মানুষের কি হবে ? তারাতো তখন এই অপরাজনীতি থেকে অনেক দূরে চলে যেতে বাধ্য হবে। সাথে সাথে ১৬ কোটি থেকে ১৬ হাজারে নেমে আসবে তাদের পরিমান কারন অনুশাষন না মানায় সরকার মেরে ফেলবে পাথর নিক্ষেপ করে, না খেতে পেরে মরবে মানুষ আরো অনেক কিছু হতে পারে।
সবশেষে যারা সরকার পতনের আন্দোলন করছেন তারা দয়া করে বলবেন কি, আজ সরকার পতন হলে কাল কে সরকারী দ্বায়িক্ত পালন করবে ? তা ঠিক করে রেখেছেন কি ? আমি এই আন্দোলনকে সমর্থন করব যদি এর ফলে কি হবে এদেশে তা আমার কাছে স্পষ্ট হয় কারন শেয়ার বাজার শেষ করে দিয়েছে, হলমার্ক কেলেঙ্কারী করে আবার ধরেতে গেছে, ডেসটিনিরে ধরেছিল বিচার করতে গেছিল, শিবির মনে করে বিশ্বজিতরে সবার সামনে তাদের ছাত্র সংগঠনের কর্মীরা মেরে ফেলল, চিহ্নিত সন্ত্রাসীবাহীনির নেতাদের বিচার করছে অথচ সে বাহিনী সম্পর্কে সজাগ না হয়ে সাধারন মানুষ সহ পুলিশকে বাঁচাতে পারেনি তারা এমন আরো অনেক কারন আছে সরকার পতনের সমর্থন করার। কিন্তু যারা এই আন্দোলনে ডাক দিয়েছেন তাদের কাছে কি আমরা নিশ্চয়তা পাবো যেন তারা আর দূর্নীতিতে দেশকে প্রথম না করে, যেন তারা সিঙ্গাপুরে এদেশের টাকা পাচার না করে, যেন বিদ্যুতের পরিবর্তে শুধু খুঁটি দাড় করিয়ে না রাখেন, যেন সিন্ডিকেট করে বাজার নিয়িন্ত্রন না করে, যেন তাদের কোন কর্মী কাউকে খুন করে পুরুষ্কূত না হয়, যেন তারা দেশকে পিছনের দিকে ঠেলে না দেয়, যেন দেশ-বিরোধী কাউকে এদেশে প্রতিষ্ঠিত না করেন, যেন কথামত একটি নয় দুটি পদ্মা সেতু করেন (তারা কোন এক সময় এ প্রতিশুতি দিয়েছিলেন), যেন সারের আর বিদ্যুতের দাবী করাতে কোন সাধারন মানুষের উপর পুলিশ গুলি না করে। কি বলেন পারবেন আপনারা সরকারী ক্ষমতায় গিয়ে এ সব কিছু করতে। বিরোধীদলের এক নেতা বলেছেন ঠান্ডা ঘরে থেকে তাদের দাবী আদায় সম্ভব না বলে তারা মাঠে নেমেছেন কিন্তু কি নির্মম পরিহাস দেখেন তিনি কোন এক ঘরে বসেই এ কথা বলছেন । আর মাঠে নামা বলতে কিন্তু প্রেসক্লাবের সামনে একই সাথে একাধিক মানববন্ধনে একটু দাঁড়িয়ে থেকে বক্তব্য দেয়া অন্য দিকে সাধারন দিন-মজুরে কর্মীরা কত কিছু করছে তার ইয়ত্বা নেই। আপনারা ঠিকই ঠান্ডা ঘরে বসে কথা বলবেন মজা করে টিভিতে কর্মীদের মারা আর মরা দেখবেন আর ঐ হতভাগারা শুধু নিজেরা মারবে আর মরবে আপনাদের ক্ষমতার বলি হবে তারা। তবুও সরকার পতন হোক, কি বলেন?

--- Deedal


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

চিন্তার বিষয়।

- ইউক্লিড
http://www.facebook.com/iEuklid

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।