খালি হাতে আত্মরক্ষা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ১৪/০৫/২০১৪ - ২:০৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

খালি হাতে আত্মরক্ষা
- মো. আনোয়ার পারভেজ
ধন্যবাদ নিজেকে, আমার একটা পরিচিতি আছে। পরিচিতিটা নতুন কিছু নয়, দশ বছরের পুরোনো। যদিও পরিচিতিটা নিয়ে আমি সত্যিকারের কোনো আত্মশ্লাঘা অনুভব করি না, কিন্তু ব্যর্থ ও পরিচিতিহীন কিছু বন্ধুর অবস্থা দেখে আমি এর কার্যকারিতা ও উপকারিতা হাড়ে হাড়ে টের পাই। এই পরিচিতি আমাকে সুসংগঠিত রেখেছে। সম্পূর্ণ অপরিচিত কিংবা আধা পরিচিত কোনো জায়গায় গেলে, নতুন কোনো মানুষের সাথে দেখা হলে কিংবা সদা আক্রমণোদ্যত সফল মানুষেরা অহমের উপর আঘাত করতে চাইলে এই ম্রিয়মাণ পরিচিতিটা বর্মের কাজ করে, প্রাথমিক ধাক্কাটা একটু টলমলভাবে হলেও সামলানোর চেষ্টা করে। সত্য মিথ্যা মিলিয়ে ভদ্রতার সীমার মধ্যেই কথাবার্তায় আমাকে কল্পিত পারিবারিক অবস্থান, বংশ, পদবী, আজন্ম নাগরিক পরিবেশে বেড়ে উঠার গর্বের ছোঁয়া লাগাতে হয় না কিংবা উচ্চ পদে আসীন, উচ্চ স্তরের মানুষের সাথে আমার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যোগাযোগের কোনো ইঙ্গিতও দিতে হয় না। আমার ব্যর্থ বন্ধুরা এরকম কাজ প্রায়ই করে। তাদের অবস্থাটা আমি বুঝি, হৃদয় দিয়ে অনুভব করি। মাঝে মাঝে তাদেরকে দেখি নিতান্ত তুচ্ছ ব্যাপারেও সম্পূর্ণ অস্তিত্বটাকে সামনে নিয়ে আসতে, আখেরে সেগুলো নিতান্ত পলকা বলে প্রমাণিত হয়। তখন তাদের বিব্রত অবস্থা দেখে পরিচিতি অর্জনের সক্ষমতা লাভের জন্য নিজেকে ধন্যবাদ জানাই।
আমি একজন শিক্ষক। এটাই আমার পেশা। আমার পরিচয়। শিক্ষকতাকে আমি ব্রত হিসেবে নিই নি, পেশা হিসেবেই নিয়েছিলাম। শিক্ষক হিসেবে চাকরি নেওয়ার পর তিন বছর আমি অন্য পেশায় সরে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু যেতে পারি নি। আটকা পড়ে গেছি। দশ বছর ধরে এ পেশায় আছি। এখন আর অন্যত্র যাওয়ার স্বপ্ন দেখি না। রাজধানীর এক প্রান্তে অবস্থিত এক বেসরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে সমাজ বিজ্ঞান, ইতিহাস, ভূগোল পড়াই। বুঝতেই পারছেন, আমি বিশেষায়িত কোনো শিক্ষক নই – কোনো প্রাইভেট টিউশন নেই, বাড়তি আয় নেই। বেতনের টাকায় আমাকে সংসার চালাতে হয়। স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে আমার সংসার। মেয়েটা পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে, ছেলেটা এখনো স্কুলে যায় না। নিতান্ত টানাটানির মধ্যেই যে আমার সংসার চলে, আশা করি সেটা আপনাদের বলতে হবে না। সত্যি কথা বলতে কি, আমি একটা গ্যাড়াকলে আছি। তবে প্রত্যেকটি মানুষের মত আমিও মুক্তির স্বপ্ন দেখি। গত তিন বছর ধরে আমি সেই স্বপ্নের পেছনে ছুটছি। কিন্তু আমার সেই স্বপ্ন পূরণের উপায়টার কথা বলতে আমি বেশ অস্বস্তি বোধ করছি। স্বপ্নটা হচ্ছে আরেকটু স্বচ্ছলতা। আর এই স্বচ্ছলতা অর্জনের জন্য আমি আমার সাধ্য ও বিবেচনা অনুযায়ী একটা পথ বেছে নিয়েছি, যদিও কারো কারো কাছে সেটা স্বাভাবিক পথ বলে মনে নাও হতে পারে। ব্যবসার পথে যাই নি, কারণ ব্যবসা আমার রক্তে নেই। আমি বেছে নিয়েছি ইংরেজী ভাষায় দক্ষ হওয়ার সাধনা। (আমি দীন বাংলা মায়ের হীন সন্তান, বাংলা মা আমাকে ক্ষমা করবেন বলে আমি কামনা করছি। আমি বিশ্বাস করি- ধনে, জ্ঞানে, মানে একদিন প্রত্যেক জাতিই সমান হবে, তখন এ ধরণের চেষ্টার প্রয়োজন হবে না। আমি আমার স্বপ্নের বিপরীত আচরণ করছি! তাই না?আমার সময়ে জীবনের ভারবাহী চারপাশের মানুষগুলোর এমনধারা অসংখ্য বৈপরীত্যকে আমি যুক্তি হিসেবে দাঁড় না করিয়ে শুধু এটুকুই বলি এই অসংগতি আমাকে পীড়া দেয়।)আমি আর কোন পথ খুঁজে পাই নি। ইংরেজী ভাষায় দক্ষ হওয়ার যে জাতিগত সাধনা চলছে তাতে আমার মত একজন ক্ষুদ্র মানুষকে সামিল দেখে প্লিজ ভ্রূকুটি করবেন না। সত্যি কথা বলতে কি, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে আমি এ পথে আসি নি। নিতান্ত ঘটনাক্রমে এ পথে উঁকি দিয়েছিলাম, তারপর মনে হয়েছে, আরে, এটাই তো একটা উপায়। তিন বছর ধরে আমি এই পথের নীরব সাধক। তবে শুরুটা লজ্জাকর, অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং তিক্ত এক অভিজ্ঞতার সন্তান। তাহলে খুলেই বলি। তিন বছর আগে আমি একদিন নবম শ্রেণীর ইতিহাস ক্লাশ নিচ্ছিলাম। পড়াতে গিয়ে সন তারিখ নিয়ে এক জায়গায় কি একটা ভুল করেছিলাম। হঠাৎ করে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে গেল। বেশ শুদ্ধ উচ্চারণে ইংরেজীতে সে আমার তথ্য নিয়ে কিছু একটা বলল। কি বলেছিল আমি ঠিক বুঝতে পারি নি, কারণ সে ইংরেজীতে কথাগুলো বলছিল, আর আমি ইংরেজীতে নিতান্তই দুর্বল। তবে তার চোখের অভিব্যক্তিটা খুব খারাপ ছিল, চোখ বন্ধ করলে এখনও সেই তাচ্ছিল্য ভরা দৃষ্টিটা ভেসে উঠে। পুরো ক্লাসে তখন পিন পতন স্তব্ধতা। আমি ছেলেটার দৃষ্টি এড়িয়ে বেশ নরম স্বরে বললাম, ‘শিক্ষকরাও মানুষ। সবার মত তাদেরও জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা আছে। ভুল হতেই পারে।’ বাকী ক্লাসে আমার একমাত্র চেষ্টা ছিল ছেলেটার সঙ্গে আমার যাতে চোখাচোখি না হয়। আমি সেই ক্লাসটা তাড়াতাড়ি শেষ করে দিয়েছিলাম। আমার পিঠ দিয়ে ঘাম বের হয়েছিল। পরে জেনেছিলাম ছেলেটা একটা ইংরেজী মাধ্যমের স্কুল থেকে বহিষ্কৃত হয়ে এসেছিল। চার মাস পরেই আবার এই স্কুল ছেড়ে চলে যায়। কিন্তু আমার মনে খুব আঘাত লেগেছিল। মাতৃভাষা ভিন্ন অন্য একটা ভাষায় দক্ষ হলেই এত শক্তি আসে! পরে বিবেচনা করে দেখলাম, সুদূর আগামীতে অন্যরকম হলেও এখন ও নিকট ভবিষ্যতে (অন্তত আমার জীবদ্দশায়) এদেশে কারা একটু সুসংহতঅবস্থানে থাকবে তা এরই ভিত্তিতে নির্ধারিত হচ্ছে এবং হবে। মোটা দাগে বলা যায় একটা দক্ষতা জাতির অনেক সন্তানের ভাগ্য বিধাতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমিও জাতির সাধারণ মনস্তত্বের শরণ নিলাম, ইংরেজীতে দক্ষ হওয়ার চেষ্টায় নামলাম। স্কুলের ইংরেজী শিক্ষকের কাছ থেকে কৌশলে কিছু পরামর্শ নিলাম। দু’টো ভাল অভিধান, কয়েকটা ভাল ব্যাকরণ বই, থেসারাস, ফ্রেজাল ভার্বস ও ইডিয়মসের বই কিনলাম। তারপর লেগে গেলাম। আট দশ মাসের মধ্যেই ব্যাকরণটা আয়ত্ত করে নিলাম। তারপর শব্দের ভাণ্ডার, ইডিয়মস ও ফ্রেজাল ভার্বস। সেগুলো শিখতে সময় লাগল। এখনও চর্চা করছি। লক্ষ্যের মোটামুটি একটা সন্তোষজনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছি। জানি চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছা কোনদিনই সম্ভব হবে না। যতটুকু সম্ভব। দুর্বল স্মরণশক্তি একটা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল, বারবার চর্চা করে একটা সমাধানের চেষ্টা করেছি। পত্রিকায় ইস্যুভিত্তিক কয়েকটা চিঠি পাঠিয়েছিলাম, তার মধ্যে দু’টো ছাপা হয়েছে। ছোটখাট বই অনুবাদ করার কথা ভাবছি। দু’একটা টিউশন করে বা ব্যাচ পড়িয়ে স্বচ্ছলতা আনারও স্বপ্ন দেখছি। আরও কাজ করা যায় কিনা তা নিয়েও ভাবছি। ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের দু’একজন এ সম্বন্ধে জানে। মাসখানেক আগে এক বন্ধুর সঙ্গে পরিচিতির সূত্র ধরে আজহার নামের জনৈক ভদ্রলোক একটা বহুজাতিক কোম্পানীর নীতিমালা অনুবাদ করার কাজ দিয়েছিলেন। সপ্তাহখানেক আগে সেটা জমা দিয়েছি। বেশ শ্রমসাধ্য ছিল কাজটা। তবে শেষ করে যে একটা তৃপ্তির নিঃশ্বাস নিয়েছিলাম তা বলাই বাহুল্য। আজ কাজটার পারিশ্রমিক আনতে যাচ্ছি।
সত্যি কথা বলতে কি, বেতনের বাইরে এটা আমার প্রথম উপরি আয়। চল্লিশ পৃষ্ঠার কাজ। প্রতি পৃষ্ঠা চারশ করে ষোল হাজার টাকা। আমার জন্য অনেক। পাঁচশ টাকা করে দাবী করেছিলাম কিন্তু আজহার সাহেব, বন্ধুর সেই পরিচিত জন, আমাকে বললেন, ‘আমার জন্যও কিছু কমিশনের জায়গা রাখুন, চারশ টাকা করে রেট ধরুন।’ আমি আর অমত করি নি, শত হলেও আমার প্রথম পরীক্ষা। ভবিষ্যতে আরও পাওয়া যাবে নিশ্চয়ই, তখন দর কষাকষির সুযোগ থাকবে। আর এধরণের কাজের কিছু ক্ষেত্রও এদেশে তৈরী হবে। নতুন নতুন শিল্প কারখানা হচ্ছে - নতুন নতুন কোম্পানী, এনজিও আসছে – আর ইন্টারনেটের ব্যাপারটা তো আছেই। সহজ কথায় আমি স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম। প্রাথমিক ভিত্তি হিসেবে কাজটা নিলাম। তেমন কোন সমস্যা না ঘটিয়ে নির্ধারিত তারিখের দু’দিন পরে কাজটা জমা দিলাম। এরই মধ্যে টাকা পাচ্ছি এই আশায় জামানের কাছ থেকে ধার করে ছয় হাজার টাকায় একটা পুরোনো ওয়্যারড্রোব কিনে বাসায় তুলেছি। বাকী টাকা কিভাবে খরচ হবে তাও নির্ধারিত হয়ে গেছে। অভাবী সংসারে যা হয় আর কি। আজ টাকাটা পাওয়ার কথা। আজহার সাহেব সেরকমই বলেছেন। আমার গন্তব্য পল্টন মোড়ের একটু আগে তোপখানা রোড।
বাস থেকে নেমে পল্টন মোড়ের যান ও মানবজটে আটকা পড়ে গেলাম। শরীরটাকে ডানে বামে ঘুরিয়ে মুক্ত হতেই তার দেখা পেলাম। একজন মাঝবয়সী লোক। বিজয়নগর থেকে আসা রাস্তার ডিভাইডারে সে দাঁড়িয়েছিল। তাকে ঘিরে ছোটখাট একটা ভীড়। কিছু ভবঘুরে, নেশাখোর, টোকাইদের সমবায়ে গঠিত সেই জটলা – পৃথিবীর উপচে পড়া সম্পদের উচ্ছিস্ট ও ধবংসাবশেষের ভাগাড় খুঁড়ে বেড়ানোর নিয়তিতে আটকে পড়া এই মানুষগুলোই এ ধরণের প্রমোদের উপকরণের সবচেয়ে বড় সমঝদার। ডিভাইডারের পাকা অংশটার উপর বেশ খানিকটা জায়গা নিয়ে লোকটা কুংফুর একটা পরিচিত ভঙ্গীতে দাঁড়িয়েছিল। ডান পা সামনে, বাম পা পেছনে, হাত দু’টো মুষ্টিবদ্ধ, বাম হাত তুলনামূলকভাবে ডান হাতের চেয়ে খানিকটা পেছনে – বোঝাই যায় লোকটা কুংফুর আত্মরক্ষার ভঙ্গী নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। লোকটার এই ভঙ্গী দেখে তেমন চিন্তাভাবনা না করে প্রথমেই যে প্রশ্নটা আমার মনে উদিত হল, তা হচ্ছে – লোকটা কোন দিক থেকে আঘাতের আশঙ্কা করছে? আমার পা জমে গেছে, নড়তে পারছিলাম না, টোকাইদের থেকে একটু দূরে আমিও দাঁড়িয়ে রইলাম আমার জায়গাতে – লোকটা কি করতে চাইছে বা কি করবে তা দেখার জন্য উৎসুক হয়ে (নাগরিক স্বভাবের অন্যতম বৈশিষ্ট্য নিস্পৃহতার পুরোটা আমার আয়ত্তে নেই)।
আমার সমান বয়সী চল্লিশের আশেপাশের এই লোকটা গেল শতকের আশির দশকের কিশোরদের একটা সাধারণ প্রবণতার কিছু টুকরো টুকরো ছবি আমার মানস চোখে ভাসিয়ে দিয়ে গেল। তখন এমন কোনো কিশোর ছিল না যে ব্রুস লি-র ‘এন্টার দি ড্রাগন’ ছবিটি দেখে আলোড়িত হয় নি। ব্রুস লি ছিলেন এদেশের আশির দশকের কিশোরদের নায়ক। নিজেকে আর দশজনের চেয়ে শারীরিকভাবে শক্তিমান দেখার প্রলোভনের তীব্রতা কৈশোরেই সবচেয়ে বেশী থাকে। আমরা যারা আশির দশকে কৈশোর কাটিয়েছি তারা ছবিটিতে প্রদর্শিত ব্রুস লি-র অতিমানবিক ক্ষমতা দেখে ভীষণ আলোড়িত হয়েছিলাম, তাকে নমস্য জেনে শক্তির উপাসনায় মেতেছিলাম। পাড়া মহল্লায় তখন অসংখ্য কুংফু ক্যারাতের ক্লাব দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। আমারই সমান বয়সী লোকটা আমাকে আমার কৈশোরে নিয়ে যায় – একটা বাসের বিকট হর্ন সেখান থেকে এক ঝটকায় বর্তমানে, এই শহরে, এই রাজপথে নিয়ে আসে – আমি লোকটার সর্বাঙ্গে দৃষ্টি ফেলি। ব্রুস লির মত সেও পায়ে সমস্ত জোর চাপিয়ে দিয়েছে – এক জায়গায় শক্তি কেন্দ্রীভূত করায় মুখে সেই একই অভিব্যক্তি –ব্রুস লির কথা তেমনভাবেই অনুসরণ করছে যেমনভাবে এক শিক্ষার্থীকে তিনি প্রত্যেকটি পদক্ষেপের পেছনে আবেগ ঢেলে দেওয়ার জন্য উপদেশ দিচ্ছেন, বলছেন, ‘পুট ইমোশন ইনটু ইট।’ লোকটার অভিব্যক্তিতে আবেগের ঘাটতি নেই। একটু বেশীই আছে। কাঁদো কাঁদো অবস্থা। আমার মনে হচ্ছিল, সে কাঁদছে।
লোকটার মুখ একটু চৌকা ধরণের, পোড় খাওয়া ফর্সা রকমের, সামনের দিকের চুল পাতলা। জীবন সংগ্রামের অনেক চিহ্ন মুখটাতে। পরনে শ্যাওলা রঙের হাফ শার্ট, কালো রঙের প্যান্ট, শার্ট কোমরে গোঁজা। পায়ে সাদা রঙের কেডস্‌। পোষাক পরিচ্ছদ ও চেহারায় লোকটার মধ্যে অতীত শিক্ষার প্রভাব, পারিবারিক নিরাপত্তার ছায়া ও আর্থিক সঙ্গতির আশীর্বাদের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর নয়। সেগুলোর কার্যকারিতা হয়ত কোনো এক কারণে বা সম্পূর্ণ অকারণে বাইরের প্রতিকুল শক্তির চাপে ভেঙ্গে পড়েছে – লোকটি অপ্রকৃতিস্থ হয়ে গেছে। একবার শিক্ষাসফরে ছাত্রদের সাথে মহাস্থানগড়ে গিয়েছিলাম। সেখানকার যাদুঘরে দেখা একটি পাথরে খোদাই মূর্তি কেন জানি না উপস্থিত মুহূর্তে আমার মনে ভেসে উঠে। নৃত্যরত এক পুরুষ – চারপাশে বীণা, ফুলের মালা, দেবতার অবস্থিতি–নৃত্যরত পুরুষটিকে যেন রক্ষা করছে, আশীর্বাদ করছে। পৃথিবীর রূপ, রস, ছন্দ ও সুষমায় গাঁথা সেই আশীর্বাদপুষ্ট প্রাচীন পুরুষের জীবনের আনন্দ নৃত্যের মুদ্রায় প্রকাশিত। টোকাইদের হৈ চৈ, গাড়ীর কালো ধোঁয়া আর বাস কন্ডাক্টরদের হাঁক ডাকে মুহূর্তের মধ্যেই সেই মুদ্রার মায়াজাল মিলিয়ে গিয়ে সামনের এই কুংফুর ভঙ্গীমায় দাঁড়ানো লোকটির উপর আমার মন ও দৃষ্টি আবার ফিরে আসে। তার জন্য কেমন একটা মায়া হয়। সে হয়ত পড়ালেখা করেছে, কৈশোরে শক্তির জন্য কুংফু-ক্যারাতে শিখেছে, অনেক ঝড় ঝাপটা সয়েছে। তারপর আর পারে নি। ভেঙ্গে পড়েছে।
লোকটি একটুও নড়ছে না। স্থির। তার চারপাশে ভীড় – কিন্তু সেদিকে তার নজর নেই। লোকটার গাল, মুখ ভিজে গেছে। এই ভ্যাপসা গরমে না চোখের পানিতে সেটা বোঝা যাচ্ছিল না। আমি আরও কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকি। লোকটার মধ্যে একটু প্রতিক্রিয়া, নড়ন চড়ন বা তার অবস্থানের বদল দেখার জন্য। কেমন অস্থির লাগে। ঘড়ির দিকে তাকাই। আজহার সাহেবের দেওয়া সময় বিশ মিনিট আগেই পার হয়ে গেছে। আমাকে যেতে হবে। আজহার সাহেব অফিসের বাইরে চলে যাবেন না, আমার জন্য অপেক্ষা করতেই থাকবেন – এমনটি না ভাবাই যুক্তিশীল মানুষের কাজ হবে। আমি একটা তাড়না অনুভব করি। হঠাৎ কি হয় জানি না, আমি টোকাইদের ভীড় ঠেলে লোকটার মুখোমুখি হই, চোখে চোখ রেখে বলি, ‘যান ভাই, বাড়ী যান।’ এরপর যা হয় তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। লোকটা আমাকে একটা ভেংচি কাটে। সাথে সাথে পরিবেষ্টনকারী টোকাই, ভবঘুরেরা হো হো করে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। আমি একবার সবার মুখের দিকে বোকার মত তাকিয়ে কোনোরকমে ভীড়টা ঠেলেঠুলে আমার গন্তব্যের দিকে পা বাড়াই। তখনও পেছন থেকে খিক খিক হাসির আওয়াজ ভেসে আসতে থাকে। তোপখানা রোডের আইকন টাওয়ারের বারো তলায় অবস্থিত জেনিথ ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টারের মালিক আজহার সাহেবের সাথে দেখা করার জন্য আমি লোকটাকে জনতার ভীড়ে ছেড়ে দিয়ে এগোতে থাকি।
আজহার সাহেব সম্পর্কে আমি যতটুকু জানি তা হচ্ছে – তিনি ব্যবসায়ী, কিন্তু আহামরি রকমের সফল নন। ইন্ডেন্টিং তার মূল ব্যবসা। পাশাপাশি প্রিন্টিং, টেন্ডার, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, অর্ডার সাপ্লাই ইত্যাদির মত কাজও করে থাকেন। মাঝে মাঝে নিজের ব্যবসা সম্পর্কে এরকম খেদোক্তিও করে থাকেন, ‘ঠিক ছাপ্পড় মারতে পারছি না। এত ধান্ধা করি!’ আমার ধারণা তিনি সব জায়গাতেই নাক গলান, গাছেরটা, তলারটা অর্থাৎ সবটাই খেতে চান, এজন্যই যা কিছু বিপত্তি। মনে হয় তার নিজেরও এ ব্যাপারে কিছু ধারণা আছে। তাই পাথর পরেন, পাথর দিয়ে ভাগ্যের একটা ইউ-টার্ন ঘটানোর স্বপ্ন দেখেন। দু’হাতের দশ আংগুলে তার ছয়টি আংটি। বর্তমান মুহূর্তে আমার চোখ তার ডান হাতের তর্জনীর সবুজ পাথরের আংটির উপর নিবদ্ধ। আমার দৃষ্টি অনুসরণ করেই কিনা জানি না, তিনি বাম হাত দিয়ে সেই আংটিটা ঘোরাচ্ছেন। আমার বিরক্তি লাগছে। বিরক্তি লাগছে তার কালক্ষেপণের প্রক্রিয়া দেখে। অভ্যর্থনা কক্ষে বসিয়ে রেখেছেন আধা ঘণ্টা, তারপর রুমে ঢোকার পরে ফোনে কথা বলেছেন আট দশ মিনিট। ফোন রেখে আংটি নিয়ে খেলা। আমি আমার উষ্মার ঝাঁজ না লুকিয়ে বলি, ‘আজহার ভাই, আজ আমার আসার কথা ছিল। অনুবাদের টাকাটা।’ আজহার সাহেব একটু ইতঃস্তত করে কেশে গলা পরিষ্কার করে বলেন, ‘সাদেক ভাই, আপনাকে বলতে আমি বিব্রত বোধ করছি। কিন্তু না বলে পারছি না। পিএইচভি আপনার অনুবাদটা এ্যাকসেপ্ট করে নি। অনুবাদের মান ভাল না। .........’ । আমি তাকে থামিয়ে দিই, মাথায় যে আগুন ধরে গেছে সেটা না লুকিয়ে বলি, ‘আপনি অনুবাদটা পড়েছেন? কোথায় ঘাটতি আছে?’ আজহার সাহেব বলেন, ‘আমি শিল্প সাহিত্যের মানুষ নই। অনুবাদটা আমি পড়ি নি। পড়লেও বুঝতে পারব না। কিন্তু পিএইচভি বলেছে এটা দিয়ে তাদের কাজ হবে না।’ আমি চুপ করে থাকি। লজ্জা লাগছে নিজেকে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারি নি বলে, রাগ লাগছে আমার শ্রমটা জলে গেল বলে, হতাশ বোধ করছি আমার স্বপ্নটা চুরমার হয়ে যেতে বসেছে বলে। আজহার সাহেব আবার শুরু করেন, ‘তারা চেয়েছিল কোম্পানীতে নতুন কেউ যোগ দিলে তার হাতে এই নীতিমালাটা তুলে দিবে। অফিসার থেকে শুরু করে সাধারণ কর্মী পর্যন্ত। কিন্তু এটা নাকি কেউ বুঝবে না।’ আমি বলি, ‘আমি না বুঝার মত ভাষায় কিছু লিখি নি। আমি সহজ ভাষায় বলি এবং লিখি। আপনি পিভিএইচের সাথে একটা অ্যাপয়ন্টমেন্ট করে দিতে পারবেন?’ আজহার সাহেবে আমার কথার ধার দিয়েও যান না। আমার দিকে না তাকিয়ে আংটি নাড়াচাড়া করতে করতে স্বগতোক্তির মত বলতে থাকেন, ‘আমি তাদের কাছে কমিটেড। আমি তাদেরকে বলেছি, বাংলা নীতিমালাটা আমি দিব। আমি একটা অনুবাদ কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ করেছি। তাদের রেট অনেক বেশী। আমার গাঁট থেকে বরং টাকা যাবে। আমার পেছনে ফেরার পথ নেই। তাই এটা করতে হবে।’ আজহার সাহেব যেভাবে আমার প্রস্তাবটা এড়িয়ে যান তাতে আমার খটকা লাগে। তার আংটির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমার সন্দেহ হয়, লোকটা আমার সাথে মিথ্যা বলছে না তো? নিজেকে এতটা বাতিল, অগ্রহণযোগ্য মনে করতেও সায় পাচ্ছিলাম না ভেতর থেকে। আমি কিছুটা একরোখাভাবে প্রশ্ন করি, ‘আপনি কোন অনুবাদ কেন্দ্রের সাথে কথা বলেছেন?’ আজহার সাহেব কিছুটা দ্বিধান্বিত স্বরে বলতে থাকেন, ‘কি যেন নাম অনুবাদ কেন্দ্রটার? .........’ তার চোখ আবার আংগুলের আংটির উপর, যেন সেখান থেকেই নামটা সংগ্রহ করবেন এমনভাবে দেখতে থাকেন, বলেন, ‘নীলা, হ্যাঁ, নীলা অনুবাদ কেন্দ্র।’ নামটা শুনেই আমার সন্দেহ গাঢ় হয়। অনুবাদ কেন্দ্রের এমন নাম স্বাভাবিক নয়। আমি বলি, ‘কেন্দ্রটা কোথায়?’ আজহার সাহেব বলেন, ‘কাছেই, এই .........’। তিনি আরও কিছু বলতে যাবেন, তাকে ওখানেই থামিয়ে দিয়ে আমি বলি, ‘ওদের অনুবাদটা আমাকে দেখাবেন। আমি এত সহজে হার মানছি না। বললেই হল, পিভিএইচ অ্যাকসেপ্ট করে নি। পিভিএইচকে বলবেন, লিখিতভাবে আমার অনুবাদটা অ্যাকসেপ্টেড না হওয়ার কারণ জানাতে। তাদের প্যাডে দিতে হবে। অথবা একটা অ্যাপয়ন্টমেন্টের ব্যবস্থা করবেন।’ আমার মধ্যে একটা একগুঁয়েমি, অবুঝ জেদ চেপে বসে। আমি তার চোখে চোখ রেখে কথাগুলো বলছিলাম। আজহার সাহেব একটু রাগান্বিত স্বরে বলেন, ‘আপনি একটা ছোট বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি করছেন। আপনি কি আমাকে সন্দেহ করছেন?’ আমি বলি, ‘আমার জন্য বিষয়টা ছোট না। আর আপনাকে আমি সন্দেহ বিশ্বাস কোনোটাই করছি না।’ আজহার সাহেব একটু উঁচু স্বরে বলেন, ‘সন্দেহ করলে করেন। পিভিএইচের এত সময় নেই যে আপনাকে প্যাডে লিখে জানাবে। আমার কথাই আপনাকে মানতে হবে।’ আমি বলি, ‘বললেই হল। আপনার কথা আমি মানছি না .........।’ আজহার সাহেব আরও চড়া স্বরে বলেন, ‘আমি আর কোনো উত্তর দিব না। আপনি যদি কিছু করতে পারেন, করেন। আপনি এখন আসুন। আমার আরও কাজ আছে।’ ‘আমি এত সহজে ছাড়ছি না’ বলে বের হয়ে আসি। লিফট দিয়ে নামতে নামতে আমার ভেতর সন্দেহ, ক্রোধ, হতাশা, লজ্জার একটা অসহনীয় মিশ্রণ ফুঁসে উঠতে থাকে। কখনও নিজের উপর রাগ হতে থাকে, কখনও আজহার সাহেবের উপর, কখনও বা পিভিএইচ কোম্পানীর উপর। ইচ্ছে করছিল চিৎকার করে বলি, ‘আর কত?’ কার উপর রাগ করব, কার উপর রাগ করা ঠিক হবে খুঁজে না পেয়ে ভেতরটা চূর্ণ, বিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছিল। অস্তিত্বের টুকরো টুকরো অংশগুলো জামা, প্যান্টে ধরে রেখে কোনো রকমে রাস্তায় নেমে আসি। লোকজনের ঠেলায় ঠেলায় ভাসতে ভাসতে সেই পল্টন মোড়ে। বিজয়নগর থেকে আসা রাস্তাটার ডিভাইডারে তখনও লোকটা দাঁড়িয়ে। তাকে ঘিরে তখনও সেই জটলা। পা টানতে টানতে ভীড়টার কাছে আসি। ভীড়টা ঠেলে তার সামনাসামনি হই। লোকটার কোনো নড়ন চড়ন নেই, কুংফুর আত্মরক্ষার ভঙ্গীতে সেই একইভাবে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ইচ্ছে করেই তার কাঁধে আলতো একটা ঠেলা দেই। দেহভঙ্গি বা মুদ্রার কোনো পরিবর্তন হয় না। আস্তে আস্তে, কিন্তু বেশ স্পষ্ট স্বরে বলি অথবা ভেতরের এক গভীর অতল থেকে বের হয়ে আসে, ‘খালি আত্মরক্ষা করলেই হবে? পাল্টা আঘাত করতে হবে না?’লোকটা চোখ তুলে। ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে। এবার আর ভেংচি কাটে না।
...... সমাপ্ত......

অতিথি লেখক
মোঃ আনোয়ার পারভেজ


মন্তব্য

তিথীডোর এর ছবি

লেখার শেষে অথবা শুরুতে একবার নাম দেয়াই যথেষ্ট। হাসি

স্পেসবিহীন এরকম ঠাসাঠাসি ছাঁদের লেখা পড়তে চোখের ওপর চাপ পড়ে, যেটা ঠিক নিতে ইচ্ছে করে না। দুঃখিত।

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

রিক্তা এর ছবি

স্পেস এবং প্যারাগ্রাফের অভাবে লেখা পড়তে বেশ কষ্ট হয়েছে। কিন্তু পড়া শেষ না করে পারলাম না, বেশ ভালো লেগেছে। আমার পক্ষ থেকে পাঁচতারা।

নিয়মিত লিখতে থাকুন।

--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।

মেঘলা মানুষ এর ছবি

সম্ভবত আপনার প্রথমে লেখা, সচলে স্বাগতম। হাসি

গল্প ভালো লেগেছে, আরও লিখুন। প্রথমে খানিকক্ষণ সত্যঘটনা অবলম্বনে লেখা বলে মনে হচ্ছিল। তবে, শুরুর দিকে এত বেশি বেশি ডিটেইল না হলেও চলত। আপনি গল্পের শুরুর অংশটাকে যদি আরেকটু সংক্ষিপ্ত করতেন, তাহলে লেখাটা একটু 'হালকা' হত, গতিময়তাও বেশি থাকত।

আমি বেছে নিয়েছি ইংরেজী ভাষায় দক্ষ হওয়ার সাধনা। (আমি দীন বাংলা মায়ের হীন সন্তান, বাংলা মা আমাকে ক্ষমা করবেন বলে আমি কামনা করছি।

-এটা ভালো লাগলো না, ইংরেজিতে দক্ষ হতে হলে বাংলামায়ের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করার প্রয়োজন নেই। অনেকেই কিন্তু আছেন, যাঁরা চমৎকার ইংরেজি বলেন, লেখেন; আবার বাংলা শব্দচয়ন প্রয়োগেও সমান দক্ষ। অনেক ইংরেজিভাষী অ্যামেরিকান স্প‌্যানিশ শেখে, ফ্রেঞ্চ শেখে, জার্মান শেখে এমনকি ম্যান্ডারিন (চাইনিজ) ভাষাও শেখে। তারা কেউই 'ইংরেজি'-র কাছে ক্ষমা চেয়ে শেখা শুরু করে না।

ভাল থাকুন, শুভেচ্ছা হাসি

নিলয় নন্দী এর ছবি

বেশ ভালো লাগল।
আরো লিখুন।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

প্যারাগুলো আলাদা করে দিলে গল্পটা পড়ে আরো ভালো লাগতো। লিখতে থাকুন।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লেগেছে তয় জট পাকায় ফেলসেন পরবর্তীতে ছাড়াই নিয়েন৷
শুভেচ্ছা সচলায়তনে!
ধন্যবাদান্তে
________
শরিফুল_93

অতিথি লেখক এর ছবি

গল্পটা ভালো লাগলো। বিশেষ করে আপনার বর্ণনাভঙ্গি। প্যারাগ্রাফ দিলে ভালো হত যদিও।
তবে একটা জায়গা ক্লিয়ার হয়নি। কুংফু ভঙ্গিমা লোকটা কি পাগল, না কোনো স্ট্রিট আর্টিস্ট ছিলো?
গল্পটার নাম "খালি হাতে আত্মরক্ষা" না হয়ে শুধু "আত্মরক্ষা" হলে ভালো হত।

-অভিমন্যু সোহম

অতিথি লেখক এর ছবি

খুবই ভালো লাগলো। -//সাখাওয়াৎ

অতিথি লেখক এর ছবি

যাপিত জীবনের গল্প। শুরু আর শেষটা খুব সাধারণ হয়ে গেছে। লিখতে থাকুন। নিরন্তর শুভ কামনা।

-রায়হান শামীম

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।