সরল রূপান্তর

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ০১/০৪/২০১৯ - ১১:২৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

"তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা , তুমি আমার সাধের সাধনা,
মম শূন্যগগনবিহারী।
আমি আপন মনের মাধুরী মিশায়ে তোমারে করেছি রচনা--
তুমি আমারি, তুমি আমারি, মম অসীম গগন বিহারী॥"

দুর্নিবার সাহা গান গাইছে। তার চক্ষু মুদিত। সে যখন বিভোর হয়ে গায় তখন তার চোখ আপনা আপনি বন্ধ হয়ে যায়। তবে এমন বিভোর করা গানের যিনি শ্রোতা তিনি শুনছেন হাসি হাসি মুখে। তিনি কেতকী সেন। তিনি গান বিভোর হয়ে শোনেন না। এমন পছন্দের গান শুনে তিনি আপ্লুত হন । সারা মুখে তার হাসি ছড়িয়ে পড়ে। সুখ ছড়িয়ে পড়ে। এই সুখের পাখায় ভর করে তিনি উড়তে থাকেন।

গান শেষ করে দুর্নিবার চোখ খুলে তাকাল । একেবারে চমকে উঠল। বার বার চোখ রগড়াতে লাগল। নিজেকে চিমটি কাটল বার দুয়েক। কেতকী সেন কোথায় গেলেন! দুর্নিবারের সামনে বসে আছে ১৬/১৭ বছরের এক কিশোরী। খুব আশ্চর্য্যের বিষয় হলো কিশোরীর মুখমন্ডল অবিকল কেতকী সেন। কেতকী সেনের পোশাকটি তার পরনে। কেবল চুলটি ঠিক মিলছে না। মেহেদী লাগান রঙ নয় । কালো কেশের মোটা লম্বা দুটি বেণী ঘাড় বেয়ে তার বক্ষের উপর দিয়ে ঝুলে আছে। দুর্নিবারের বাকহীন বিহ্বলতার থেকে খুব ক্ষীণ আওয়াজে উচ্চারিত হোল, "তুমি কি কেতকী সেনের মেয়ে?" কিশোরী খিলখিল করে হেসে আওয়াজ তুলে উত্তর দিল, " আমিই কেতকী সেন "। এবার দুর্নিবার হেসে বলল "দুষ্টামি হচ্ছে তাই না। তোমার মাকে কি তুমি খুঁজতে এসেছিলে? তিনি এখানে নেই? চলে গেছেন কি? তুমি একদমই তোমার মায়ের মত দেখতে।"

কিশোরী জোরে জোরে হাসতে লাগল। কিছুতেই হাসি থামাতে পারছিল না। যেন পাহাড়ের গা বেয়ে ঝরনা ধারা সশব্দে আছড়ে পড়ছে। অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে
বলল- " দেখ দুর্নিবার, তুমি যে আমাকে তুমি করে বলছ সেটা আমি খুব উপভোগ করছি। ভারী মিষ্টি শোনাচ্ছে। আমি সত্যি কিশোরী হয়ে গেছি নাকি সেটা তো আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। তবে এই মুহূর্তে মনটা আমার সত্যিই কিশোরীর মন। তবে এটা নতুন কিছু নয়। আমি যখন আমার প্রিয় শিল্পীদের কন্ঠে আমার প্রিয় গানগুলি শুনি, কেবল গান নয় আমার ছোট ছোট ভাললাগাগুলো আমাকে ধরা দেয় তখন আমি কিশোরী হয়ে যাই। এই যেমন জলের প্রবাহ দেখলে এমনকি জলাবদ্ধতা দেখলেও আমি চঞ্চল হয়ে কাগজ খুঁজি। এই বয়সেও আমি কাগজের নৌকা বানিয়ে ভাসাতে চাই। শরতের কাশবনে যেতে পারলে আমি আর শাড়ী পড়া রমণী থাকি না , আমি হয়ে যাই ফ্রক পড়া কিশোরী। নাটক পাড়ায় গিয়ে 'রক্ত করবী'র সংলাপ ছেড়ে আমি বিভোর হয়ে যাই নন্দিনীর ছন্দে। খুঁজি রঞ্জনকে। সবুজ গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা খালে অথবা বিলে যখন একঝাক হাঁস সাঁতার কাটে, পাখা ঝাপটায় তখন আমি যেন কিশোরী হয়ে ঝাঁপ দেই সেই প্রবাহে হাঁসগুলোকে জাপটে ধরতে। যখন কোন ভ্রমন পরিকল্পনা কেবল আতুর ঘরে থাকে আমি তখনই কিশোরী হয়ে যাই। আর ভ্রমণে গিয়ে যদি দেখতে পাই পাহাড়ের গা ঘেষে জলের ধারা প্রবাহিত হচ্ছে তবে তার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে পাহাড়ে সাথে সেই জলপ্রবাহের সম্পর্ক দর্শনের আনন্দে আমি কিশোরী হয়ে যাই। ছোট বেলার বন্ধু যখন সাদা চুলে এসে আমাকে বলে - তুই তো দেখছি তেমনটিই আছিস। তোকে তো আমার আগের মতোই ভাল লাগছে। তখন আমি কিশোরী হয়ে যাই।"

দুর্নিবার মনে মনে ভাবছে , কেতকী সেনের এইসব ভাল লাগায় তার মনটা কিশোরীর মত হয়ে যেতে পারে কিন্তু তার দেহ কি করে কিশোরীর দেহে রূপান্তরিত হতে পারে! এই দৈহিক পরিবর্তন দেখে দুর্নিবার যেন ভূত দেখার মত চমকে উঠছে । বিস্ময়ে সে হতবাগ। বাস্তবিক ভাবেই তার মুখ হা হয়ে আছে। আর এই হা হয়ে যাওয়া দুর্নিবারকে দেখে কিশোরী তো হেসেই খুন। সুদর্শন এই গায়ককে কি হাবা হাবা লাগছে। এই হতবাক গায়কের গালে একটা টোকা দিয়ে বিদায় জানিয়ে হাসতে হাসতে, বেণী দুলিয়ে নাচতে নাচতে সেখান থেকে চলে গেল কিশোরী কেতকী সেন। দুর্নিবার হা হয়ে কিশোরীর চলে যাবার পানে চেয়ে থাকল। তবে কতক্ষন দুর্নিবার ওভাবে তাকিয়ে ছিল সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা করার সময় ছিল না লেখকের।

করবী মালাকার


মন্তব্য

এক লহমা এর ছবি

অন্যরকম, চলুক হাসি

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।