যুবকের ‘মাগনা’ আবিষ্কার

খন্দকার আলমগীর হোসেন এর ছবি
লিখেছেন খন্দকার আলমগীর হোসেন [অতিথি] (তারিখ: শুক্র, ১৪/০১/২০১১ - ৭:২৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১৯৮০ সালের সেপ্টেম্বর মাসের কোন একদিন ২৪ বছরের যুবক স্বপন ভাগ্যাণ্বেষণে উড়াল দিল সৌদি আরব। তখনও ঢাকা জেদ্দা সরাসরি ফ্লাইট শুরু হয়নি। যেতে হ’ত করাচী হয়ে। জীবনের প্রথম বিমান যাত্রা ভয় মিশ্রিত এক ধরণের শিহরণে উপভোগ করতে করতে আর বারংবার বিমানের উঠতে নামতে ক্রুদের ঘোষণার প্রথম অংশটুকু (যা বলা বাহুল্য ছিল আরবী ভাষায়) ‘না বুইঝ্যা’ শুনতে শুনতে যুবক প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় নিজের কাছে, এ ভাষাটা শেখা চাই তার।

অঙ্গীকারের প্রথম পরীক্ষাটা হয়ে যায় পরদিনই। যুবকের আসা উপলক্ষে সবাই একসাথে লাঞ্চ করে অফিসে। কোম্পানির সৌদি মালিক, তাঁর বড়ছেলে, এক হালি মিশরীয়, দু’জন ইয়ামেনী, একজন ইন্দোনেশী্যার আর ‘আমাগো’ ভাগ্যাণ্বেষী যুবক স্বপন। মুখচোরা যুবক থেকে থেকে খেয়াল করে, যখনই আরো খাবার নিতে সাধাসাধি চলছে, আরবরা হাত তূলে ‘ব্যস ব্যস’ করছে। মুহূর্তে বুঝে যায় সে, বাংলায় মুড়ি মুড়কির মত ব্যাবহার করা শব্দটা তাহলে তদ্ভব, আরবী থেকে ধার করা। প্রয়োগের সুযোগ এসে গেল নিমিষেই। মালিকের বড়ছেলে এছাম চিকেন টিক্কার একটা বড় টুকরা এগিয়ে দিতেই যুবক বলে ওঠে, ব্যস ব্যস। শুনে শোরগোল উঠে খাবার টেবিলে। মালিক দাঁড়িয়ে হাততালি দেয়, বলে, প্রথম দিনেই আরবী শিখে গেল, হবে একে দিয়ে। ‘স্পিকটি নট্’ থেকে প্রশংসা হজম আর চিকেন গলধঃকরণ করতে থাকে বাঙালি।

কে যেন বলেছিল, একটা ভাষা শিখতে শুরু করতে হয় সাইনবোর্ড পড়ে। সেটা মেনে নিয়ে কাজে নেমে যায় সে। সৌদি আরবে ভাষায় জের জবরের ব্যাবহার নেই। ওভাবেই ওঁরা বিনদাস পড়ে যায়। ঠেকতে ঠেকতে আমাদের যুবকও পড়তে শুরু করে। সবার আগে শেখে নামগুলো পড়তে, তারপর পুরো সাইনবোর্ড। মুজাওহারাত আব্দুর রহমান অর্থাৎ আব্দুর রহমানের জুয়েলারী, কিংবা দুকান সালমান মানে সালমানের দোকান।

হ্যাঁ, দোকান শব্দটিও আরবী। যার প্রতিশব্দ বাংলায় সম্ভবতঃ নেই। নিত্য নূতন বাংলায় বহুল ব্যবহৃত আরবী শব্দের আবিষ্কারে যুবকের নেশা চেপে যায়। আর দেশের সাহিত্য নিয়ে ভাবে। যেখানে লেখায় একটু বেশী আরবী শব্দ ব্যাবহার করলে লেখককে ব্র্যাকেট-বন্দী করে ফেলা হয়। অথচ নগদ, বাকী, খেসারত, জরিমানা, দাওয়াত, ইজারা, গলদ, নজর, জারী, শরীক, এখতিয়ার, খেলাপ, ফারাক, ইত্যাদি প্রাঞ্জল বাংলায় উপস্থিত শব্দগুলোও আরবী থেকে নেয়া। এমনকি গ্রামবাংলায় অতি প্রচলিত একটা শব্দ, যেটা যে সন্দেহাতীতভাবে ১০০% বাংলা তা নিয়ে চোখ বুঁজে হাজার টাকার বাজিও ধরা যায়, যুবকটি সেই ‘মাগনা’ শব্দটিও খুঁজে পায় আরবীতে।

খন্দকার আলমগীর হোসেন


মন্তব্য

ধুসর গোধূলি এর ছবি

হুমম। ছোটবেলায় পড়েছি বাংলা ভাষায় অনেক বিদেশী শব্দ এসে গেছে আমাদের দেশে নানা সময়ে বিদেশীদের কেরদানীর ফলে। আরবী শব্দের পাশাপাশি এমনকি পর্তুগীজ শব্দেরও আধিক্য আছে বাংলায়। আংরেজীর কথা তো বলাই বাহুল্য।

আচ্ছা, আপনার উল্লেখিত শব্দগুলোর মধ্যে কয়েকটা ফার্সীতেও তো ব্যবহৃত হয় মনে হয়!

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

দাওয়াত আর একতিয়ার, এদুটোর ব্যাপারে শিওর যে ফার্সিতেও ব্যবহার হয়।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

অতিথি লেখক এর ছবি

ফার্সী শব্দের ৬০% এসেছে আরবী থেকে। সুতরাং আমিও আপনার সাথে একমত।

খন্দকার আলমগীর হোসেন

অতিথি লেখক এর ছবি

মোঘলরা এই উপমহাদেশে এসেছিল পারস্য থেকে। আর ইসলাম পারস্যে এসেছে আরবদের মাধ্যমে। সুতরাং ধরে নেয়া যায় কিছু ফার্সী শব্দ মূলতঃ এসেছে আরবী থেকে। একটু ঘাঁটাঘাটি করলে নিশ্চিত হওয়া যাবে ব্যাপারটা।

কোথাও পড়েছিলাম, ফার্সী শব্দভান্ডারের ৬০% এসেছে আরবী থেকে।

ইংরেজী earth শব্দটাও কিন্তু আরবীতে উপস্থিত 'আরদ', যার অর্থ মাটি কিংবা ভূমি। কোরান শরীফেও 'আরদ'
অসংখ্যবার রয়েছে। এটা আমি নিশ্চিত আরবী থেকে লোন নেয়া।

আমার বিশ্বাস, শুধু 'বিদেশীদের কেরদানীর' ফলে বিদেশী শব্দ আসে না। তাহলে ৩০০০ আরবী শব্দ ইংরজীতে স্হান পায় কি করে? একসময় আরবীরা জ্ঞানে বিজ্ঞানে পাশ্চাত্য দেশগুলো থেকে অনেক এগিয়ে ছিল। তারই প্রভাবে এমনটা হয়েছে।

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

মুস্তাফিজ এর ছবি

তবে সৌদিতে আজান কিন্তু বাংলায় হয়।

...........................
Every Picture Tells a Story

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

যখন দু'জন চিটাগনিয়ার কথা বলেন, আমি কিন্তু শুধুমাত্র তাদের ব্যবহৃত ইংরেজি এবং আরবী শব্দগুলোই বুঝি। মন খারাপ

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

অতিথি লেখক এর ছবি

ইংগিতটা বোঝা গেল না। তবে বলতে পারি সৌদী আরবে এসে অনেক বাংলাদেশী সুন্দর আজান দিতে শিখে যায়। আমি একজন বাংলাদেশীকে জানি, জেদ্দা শহরে এক সরকারী মসজিদে তিনি জোহরের নামাজে ইমামতি করতেন।
কি গর্বের কথা!

খন্দকার আলমগীর হোসেন

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাল্লাগলো।

---আশফাক আহমেদ

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি কৃতজ্ঞ।

খন্দকার আলমগীর হোসেন

সজল এর ছবি

দোকান = বিপণী।
লেখায় চলুক

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

অতিথি লেখক এর ছবি

বিপণী=দোকান=বাজার=হাট

অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন বলে ধন্যবাদ।

খন্দকার আলমগীর হোসেন

দ্রোহী এর ছবি

সৌদি আরবে আজান আর সালাম কিন্তু বাংলায় দেয়।

দেঁতো হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

তাহলে বোধহয় সৌদি আরবের লোকেরা বাংলায় কথাও বলে!

দ্রোহী এর ছবি

উঁহু কথা আরবীতেই বলে। শুধু আযান দেবার সময় আর কাউকে সালাম দেবার সময় বাংলা ব্যবহার করে। দেঁতো হাসি

ধুসর গোধূলি এর ছবি

সৌদী আরবে ক‌্যাম্বায় আযান দেয় তাইলে?
"অই সুদানীর পুতেরা, ক্যারা ক্যারা নমাজে আইবি তাত্তারি আয়। জমাতে খাড়ায়া গেলাম কৈলাম"- এ্যাম্বায়? চিন্তিত

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার জানা মতে সারা পৃথিবীতে আজান হয় একই ভাষায়, অভিন্ন শব্দাবলীতে, এবং তা আরবীতে।

খন্দকার আলমগীর হোসেন

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার রহস্য আমার বোঝার বাইরে। ক্ষান্ত দিলাম। চিন্তিত

অতিথি লেখক এর ছবি

রহস্যই থেকে গেল আপনার মন্তব্য আমার কাছে। ক্ষান্ত দিলাম।

খন্দকার আলমগীর হোসেন

অতিথি লেখক এর ছবি

ব্যাকরণ বইয়ে পড়েছিলাম যে, বাংলা ভাষার অনেক শব্দই বিদেশী শব্দ!! তার মাঝে আবার বেশির ভাগই আরবী! অ্যাঁ
রচনাটা এখানে দেবার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। হাসি দেঁতো হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

এতো সুন্দর মন্তব্য করে দেঁতো হাসি দিলেন যে! ভাল থাকুন।

খন্দকার আলমগীর হোসেন

অতিথি লেখক এর ছবি

এত সুন্দর মন্তব্য করে দেঁতো হাসির ইমো দিলেন যে। ভাল থাকুন। আপনার নামটা দেননি। মনে হচ্ছে নিজেকেই নিজে ভাল কমেনট দিয়েছি।

খন্দকার আলমগীর হোসেন

কৌস্তুভ এর ছবি

দেঁতো হাসি

আরে মশাই, বাঙালির ব্রেইন বলে কথা, প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব (এইটা অবশ্য খাঁটি সংস্কৃত) তো হবেই!

লেখা মজার হয়েছে। বাংলার বিদেশী শব্দসম্ভারের একটা বড় অংশ ওদিক থেকে এসেছে তো বটেই। এই নিয়ে শ্রী কুটুমবাড়ি মহাশয়ের মন্তব্যের অপেক্ষায় রইলাম।

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখা মজার হয়েছে জেনে ভাল লাগল। শুভেচ্ছা নিন। আপনি আগাম জানলেন কি করে শ্রী কুটুমবাড়ি মহাশয়ের মন্তব্য
আসছে??

কৌস্তুভ এর ছবি

নাঃ, ওনার সঙ্গে আমার মন্তব্যালাপ আছে কিন্তু পরিচয় নেই। এটা কেবল অনুমান, যে বানানের কথা যখন উঠেছে তখন সচলের বানান-অভিজ্ঞ বন্ধু কিছু মন্তব্য করবেন। তবে ঠিক পরের মন্তব্যটাই যে ওনার হবে টা কাকতালীয়। হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

পচুর বানান ভুল। একটু খেয়াল কৈরা বস। হাসি

মুখচোরা যুবক থেকে থেকে খেয়াল করে, যখনই আরো খাবার নিতে সাধাসাধি চলছে, আরবরা হাত তূলে ‘ব্যস ব্যস’ করছে। মুহূর্তে বুঝে যায় সে, বাংলায় মুড়ি মুড়কির মত ব্যাবহার করা শব্দটা তাহলে তদ্ভব, আরবী থেকে ধার করা।

তদ্ভব মানে কোনো ভাষা (তা আরবি/ফার্সি/সংস্কৃত/ইংরেজি যা-ই হোক না কেন) থেকে ধার করা নয়। বরং তদ্ভব মানে প্রকৃত বাংলা শব্দ। এই শব্দগুলো প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা (যার অন্যতম লিখিত রূপ সংস্কৃত ভাষা) থেকে বিভিন্ন স্তরের মাধ্যমে ক্রমপরিবর্তিত হয়ে বাংলায় রূপান্তরিত হয়েছে। ফার্সি 'বস' শব্দ থেকে বাংলা 'ব্যস' শব্দের উৎপত্তি। পারস্যদেশীয়রা যদি শব্দটি আরবি থেকে ধার করেও থাকে তা আমাদের বিবেচ্য বিষয় নয়। আমরা ফার্সি থেকে ধার করেছি এটাই বলা উচিত। নইলে ইতিহাস বিকৃতি হয় যে বড় ভাই!


এমনকি গ্রামবাংলায় অতি প্রচলিত একটা শব্দ, যেটা যে সন্দেহাতীতভাবে ১০০% বাংলা তা নিয়ে চোখ বুঁজে হাজার টাকার বাজিও ধরা যায়, যুবকটি সেই ‘মাগনা’ শব্দটিও খুঁজে পায় আরবীতে।

মাগনা শব্দটি সন্দেহাতীতভাবে ১০০% বাংলা। হতে পারে আরবরাই এ শব্দটি প্রাচীন আর্যভাষা থেকে ধার করেছে! হতে পারে না? হাসি

কুটুমবাড়ি

অতিথি লেখক এর ছবি

'প্রচুর বানান ভুল' দিয়ে মন্তব্য লেখা শুরু করলেন দেখে নড়েচড়ে বসেছিলাম। কই, এ নিয়ে কিছু লেখলেন না যে!

ব্যাকরণ পড়েছি চল্লিশ বছরেরও আগে। তখন বিদেশী তদ্ভব পড়ান হ'ত। সেই প্রেক্ষিতেই ‘ব্যস ব্যস’ কে তদ্ভব বলেছি। শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে কি সেটা উঠে গেল নাকি? নীচের লিংকটাতে গিয়ে দেখুন:

http://bn.wiktionary.org/wiki/%E0%A6%A4%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AD%E0%A6%AC

সেখানে তদ্ভব শব্দের অর্থঃ যে-সকল শব্দের উৎপত্তি সংস্কৃত (কখনো বিদেশী) শব্দের ধ্বনিগত পরিবর্তনের ফলে হয়েছে।

আর অনেক শব্দ সংস্কৃত থেকে প্রাকৃত এবং প্রাক হয়ে বাংলায় এসেছে বলে সংস্কৃতের অবদান যেমন অনুল্লেখ্য থাকছেনা, একইভাবে আরবি থেকে ধার করা না বলে ফার্সি থেকে ধার করেছি বললেই কি আরেক ধরনের ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ এসে যায় না!

মাগনা শব্দটি আরবরাই প্রাচীন আর্যভাষা থেকে ধার করেছে কিনা, দেখা গবেষণার বিষয়। ওটা আমার লেখার এখতিয়ারে পড়ে না।

সময় নিয়ে মন্তব্য লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

অতিথি লেখক এর ছবি

ডিসক্লেইমার : আমি ইচ্ছে করেই 'প্রচুর' বানানকে 'পচুর' লিখেছি। এটাকে চাইলে ইচ্ছাকৃত বানান ভুল বলতে পারেন আবার 'প্রচুর' বানানের অপভ্রংশও ভাবতে পারেন। তবে আমার মূল উদ্দেশ্য ছিল বানান ভুল কেমন বিড়ম্বনা সৃষ্টি করতে পারে তার দিকে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করা।

'প্রচুর বানান ভুল' দিয়ে মন্তব্য লেখা শুরু করলেন দেখে নড়েচড়ে বসেছিলাম। কই, এ নিয়ে কিছু লেখলেন না যে!

আপনার লেখা বেশ মজার। আরও পড়তে চাই। তাই আমার সীমিত জ্ঞান থেকে কিছু লিখলাম। মিলিয়ে দেখে বলুন ঠিক লিখলাম কি না। হাসি

অশুদ্ধ=শুদ্ধ
ভাগ্যাণ্বেষণে=ভাগ্যান্বেষণে
হ’ত=হতো
বিমান যাত্রা=বিমানযাত্রা
ভয় মিশ্রিত=ভয়মিশ্রিত
এক ধরণের=এক ধরনের
(যা বলা বাহুল্য ছিল আরবী ভাষায়)=(বলাবাহুল্য যা ছিল আরবী ভাষায়)
প্রতিজ্ঞাবদ্ধ=প্রতীজ্ঞাবদ্ধ
ইন্দোনেশী্যার=ইন্দোনেশিয়ার অথবা ইন্দোনেশীয়
ভাগ্যাণ্বেষী=ভাগ্যান্বেষী
তূলে=তুলে
মুড়ি মুড়কির=মুড়িমুড়কির
ব্যাবহার(৩ বার)=ব্যবহার
প্রথম দিনেই=প্রথমদিনেই
সম্ভবতঃ=সম্ভবত

অপ্রমিত=প্রমিত
জুয়েলারী=জুয়েলারি
বেশী=বেশি
বাকী=বাকি
জারী=জারি
শরীক=শরিক
আরবী=আরবি
দু’জন ইয়ামেনী=দুজন ইয়ামেনি

শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে কি সেটা উঠে গেল নাকি? নীচের লিংকটাতে গিয়ে দেখুন:

http://bn.wiktionary.org/wiki/%E0%A6%A4%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AD%E0%A6%AC

সেখানে তদ্ভব শব্দের অর্থঃ যে-সকল শব্দের উৎপত্তি সংস্কৃত (কখনো বিদেশী) শব্দের ধ্বনিগত পরিবর্তনের ফলে হয়েছে।


উইকশনারি হোক আর উইকিপিডিয়া- রেফারেন্স হিসেবে এগুলো তেমন নির্ভরযোগ্য নয় কিন্তু।

বাংলা একাডেমীর ব্যবহারিক বাংলা অভিধান অনুসারে,
তদ্ভব=যেসব শব্দ প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা (যার অন্যতম লিখিত রূপ সংস্কৃত ভাষা) থেকে বিভিন্ন স্তরের মাধ্যমে ক্রমপরিবর্তিত হয়ে বাংলায় রূপান্তরিত হয়েছে
এ ছাড়া আমার জানামতে,
তৎসম=যেসব শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে সরাসরি বাংলায় এসেছে
দেশি শব্দ=যেসব অজ্ঞাতমূল ভারতবর্ষীয় শব্দ আবহমান কাল ধরে বাংলায় আছে
বিদেশি শব্দ=আরবি/ফার্সি/ইংরেজি/পর্তুগিজ/বার্মিজ/চায়নিজসহ অন্যান্য বিদেশি ভাষার যেসব শব্দ সরাসরি বা কিছুটা পরিবর্তিত আকারে বাংলায় এসেছে

একইভাবে আরবি থেকে ধার করা না বলে ফার্সি থেকে ধার করেছি বললেই কি আরেক ধরনের ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ এসে যায় না!

বাংলা একাডেমীর ব্যবহারিক বাংলা অভিধান অনুসারে ব্যস শব্দের উৎপত্তি হয়েছে ফার্সি ভাষা থেকে। আরবদের ব্যবহার করতে দেখেছেন বলেই শব্দটি আরবি ভাবছেন কেন? শব্দটি কি ফার্সি ভাষা থেকে আরবিতে যেতে পারে না চিন্তিত
মাগনা শব্দটি আরবরাই প্রাচীন আর্যভাষা থেকে ধার করেছে কিনা, দেখা গবেষণার বিষয়। ওটা আমার লেখার এখতিয়ারে পড়ে না।

আপনার লেখা থেকে কিন্তু আমার মনে হয়েছিল শব্দটি আরবি ভাষা থেকে এসেছে এমনটি বলতে চেয়েছেন। আরবরা বাংলায় আসার আগে থেকেই মাগনা শব্দটি এখানে প্রচলিত ছিল এটাই আমার বক্তব্য। আশা করি ভুল বুঝবেন না। হাসি

কুটুমবাড়ি

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে 'পচুর বানান ভুল' লিখে থাকেন, তাহলে আমি নিশ্চিত আপনি ভাবনায় নিজেকে এমন উচ্চ অবস্হানে নিয়ে গেছেন, যেখান থেকে অন্যদেরকে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রাণী বলে গণ্য হচ্ছে।

কি বিড়ম্বনা সৃষ্টি করেছে আপনার কথিত 'বানান ভুল' সম্বলিত আমার এ লেখা আপনার বিরাগভাজন হওয়া ছাড়া? প্রায় ছয়শতবার দেখা হয়েছে লেখাটি। আমি সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট এবং পাঠকদের প্রতি কৃতজ্ঞ।

বাংলা একাডেমীর ব্যবহারিক বাংলা অভিধানকে আপনি বারবার সালিশ মানছেন কেন? ওটাতো মানব্যসৃষ্ট, কোরান শরীফতো নয়! বাংলা একাডেমীর অভিধান, হ'তে পারে অন্যতম রেফারেন্স, কিন্তু একমাত্র নয় কিন্তু। তারপরও কথা থেকে যায়। বাংলা একাডেমীর দশ বছর আগের অভিধান দেখুন, বিশ বছরের আগেরটা দেখুন, কিংবা ত্রিশ কি চল্লিশ বছর পূর্বের এডিশনটা দেখুন পাবলিক লাইব্ররীতে গিয়ে, চাই কি পঞ্চাশ বৎসর আগের সংস্করণটাও দেখতে পারেন। আমি শেষোক্ত সংস্করণের সময়কার লোক।

আপনি অশুদ্ধ বলেছেন হ’ত কে, বিমান যাত্রা কে, ভয় মিশ্রিত কে, এক ধরণের কে, বলা বাহুল্য কে, প্রতিজ্ঞাবদ্ধ কে, ইন্দোনেশীয়ার কে, মুড়ি মুড়কি কে, প্রথম দিনেই কে, সম্ভবতঃ কে, জুয়েলারী কে, বেশী কে, বাকী কে, জারী কে, শরীক কে, আরবী কে, ইয়ামেনী কে। আপনার মন্তব্য করার পুরো উদ্দেশ্যটাতেই আমার মনে হয়েছে একধরণের অশুদ্ধতা বিরাজ করছে। তিনটা বানানের ব্যাপার আপনার 'অশুদ্ধ' মন্তব্য শুদ্ধ। ওগুলো নেহায়েত টাইপো। নুতন শিখলে যা হয়।

কমেন্টে সময় নষ্ট না করে মৌলিক কিছু লিখতে থাকুন। সবার কাজে লাগবে। আমাকেও তাই করতে দিন।

ভাল থাকুন ভাই।

অতিথি লেখক এর ছবি

তাহলে দুঃখিত। বানান ভুল থাকলে পড়তে অসুবিধে হয়, অর্থাৎ পাঠকের কষ্ট হয় মূলত এটাই ছিল আমার বক্তব্য।

আপনি অশুদ্ধ বলেছেন হ’ত কে, বিমান যাত্রা কে, ভয় মিশ্রিত কে, এক ধরণের কে, বলা বাহুল্য কে, প্রতিজ্ঞাবদ্ধ কে, ইন্দোনেশীয়ার কে, মুড়ি মুড়কি কে, প্রথম দিনেই কে, সম্ভবতঃ কে, জুয়েলারী কে, বেশী কে, বাকী কে, জারী কে, শরীক কে, আরবী কে, ইয়ামেনী কে।

আমার আগের মন্তব্যটি পড়েছেন তো ঠিকমতো? অ্যাঁ আপনার এই কথার সাথে আমার মন্তব্যটি মিলিয়ে দেখার বিনীত অনুরোধ করছি। মন খারাপ

তদ্ভব মানে "বিদেশি ভাষা থেকে ধার করা" এই তত্ত্ব কোন ব্যাকরণ বইয়ে পড়েছেন জানার কৌতূহল হচ্ছে। দয়া করে বইটির নাম বা লেখকের নাম যদি জানান তাহলে কৃতজ্ঞ থাকব।

আপনি এই পোস্টে অনেকগুলো আরবি শব্দের কথা বলেছেন। তার মধ্যে আমি কেবল 'ব্যস' এবং 'মাগনা' এ দুটো শব্দের উৎপত্তি নিয়ে আপনার সাথে দ্বিমত জানিয়েছি। তা, আমি তো রেফারেন্স দিয়েছিই। আপনি কি কোনো রেফারেন্স দিতে পারেন? কোনো অভিধান বা বইয়ের নাম বললেও হবে। আমি জোগাড় করে দেখে নেব। অবশ্য আপনি "এ ধরনের রেফারেন্সের প্রয়োজন নেই" বা "আপনি বলেছেন তাই মেনে নেয়া উচিত" অথবা "নিজ কানে আরবদের বলতে শুনেছেন অতএব শব্দগুলো আরবি" জাতীয় মনোভাব পোষণ করেন তাহলে তো আর কথাই থাকে না। আমার সময়ের কথা ভাববেন না। বরং সম্পূর্ণ অযাচিতভাবে 'অশুদ্ধ' মন্তব্য করে আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করেছি এজন্য আবারও ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। ধন্যবাদ।

কুটুমবাড়ি

কৌস্তুভ এর ছবি

কুটুমবাড়ি, আপনার কয়েকটি সংশোধনের সাথে আমার দ্বিমত আছে, এই নিয়ে আপনার সঙ্গে সময় করে কখনও ঝগড়া করতে হবে। আপাতত এইটুকু বলে যাই, আমার ব্যকরণ শিক্ষার স্মৃতিও বলছে, তদ্ভব অর্থ সংস্কৃত থেকেই উদ্ভূত শব্দ। বিদেশী ভাষা থেকে উদ্ভূত হলেও সেগুলো বিদেশি শ্রেণীভুক্তই থাকে।

মাগনা শব্দটি প্রাকৃত মাঁগ (একই মূল থেকে মাগিয়া, মাঙ্গন) থেকে, যেটা সংস্কৃত মার্গ্‌ থেকে এসেছে। অতএব এটা তদ্ভব এবং (তদ্ভব'র ঐ অর্থ অনুযায়ী) ১০০% বাংলা শব্দ। আমার তাই ধারণা ছিল, হরিচরণবাবুও তাই বলছেন। নিলে আরবীই নিয়েছে, বা তারা অন্য কোনো ভাবে কাছাকাছি উচ্চারণের একটা শব্দে পৌঁছেছে।

আর হোসেন ভাইকে অনুরোধ করি, উত্তেজিত বা বিরক্ত না হতে। কুটুমবাড়ি ভাই আমাদের সুবিধার জন্যই আমাদের ভুলগুলো ধরিয়ে দিচ্ছেন, এতে ওনাকে কখনও অহঙ্কার করতে দেখিনি। আমার মনে হয় আপনি ভুল করছেন। উনি তো বলেন নি আপনার লেখা ওনার বিরাগভাজন হয়েছে? তবে বানান-সচেতন যাঁরা, যেমন বুনোহাঁস, বানানপ্রমাদাক্রান্ত লেখা হলে অবচেতন মনেই তাঁদের চোখে লাগবে।
আর আপনি যে বলছেন, 'আমি সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট', এই কথাটায় সমর্থন জানাতে পারলাম না। বানান ভুল যখন আছে, তখন সেটার প্রতি সচেতন হয়ে এবং সংশোধনের চেষ্টা না করে যদি আত্মসন্তুষ্ট হয়ে যান তাহলে মান বাড়বে কী করে, বানানপ্রমাদ দূর হবেই বা কী করে?
"কমেন্টে সময় নষ্ট না করে মৌলিক কিছু লিখতে থাকুন। সবার কাজে লাগবে। আমাকেও তাই করতে দিন।" এধরনের মন্তব্য কিন্তু পাঠকদের বিরক্তই করে তুলবে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।