ক্যারোলিনার বাড়ি ফেরা-২

হাসান মোরশেদ এর ছবি
লিখেছেন হাসান মোরশেদ (তারিখ: সোম, ১১/০৬/২০০৭ - ৭:৫৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:
ক্যারোলিনার বাড়ি ফেরা-১ ----------------------------------------------------------- পুরোটা বিকেল কাটলো তার ভালো লাগা ঘোরে । ঘোর কাটলো সন্ধ্যেবেলা । ঘোর কেটে গেলো, যখন মধ্যবয়স্ক লিথুনিয়ান মহিলা তাকে নতুন পোষাক পড়তে দিলো । এতো খাটো পোষাক ক্যারোলিনা কোনোদিন পড়েনি এর আগে । লিথুনিয়ান মহিলা খুব স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলো কি কাজ করতে হবে তাকে আর কতো টাকায় সে আসলে বিক্রি হয়েছে তাদের কাছে । হায় ক্যারোলিনা । লিথুনিয়ার দরিদ্র বালিকা, সে এসেছিলো লন্ডন নগরে অনেক অনেক বেশী উপার্জনের আশায় । শরীর বিক্রী করতে হবে-জানা ছিলো না তার । ধীরে ধীরে সে আবিস্কার করে, তার মতো আরো অনেক মেয়েকে দিয়েই এ ব্যাবসা চালানো হচ্ছে । মেয়েরা আসছে লিথুনিয়া, চেকোশ্লোভিয়া,রুমানিয়া,রাশিয়া থেকে । কেউ আগে এসেছে, কেউ পরে । প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন মুখ । এদের অনেকে মেনে নিয়েছে এ জীবন । কিন্তু ক্যারোলিনা মেনে নিতে পারেনা । প্রায় মাস ছয়েক চলে যায় । এ সময় তার কথা হয়, আরেক ভারতীয় মহিলার সাথে । এই মহিলা ও দেহব্যাবসা করে । কিন্তু ক্যারোলিনাদের মতো সে বন্দী নয় । মুলতঃ গৃহবধু । মাঝে মাঝে টাকার প্রয়োজন পড়লে সে এই ফ্ল্যাটে আসে । ক্যারোলিনা সব কথা শুনে সে বুদ্ধি বাতলে দেয় । আরো পরে একদিন সুযোগ বুঝে সে বেরিয়ে আসে ফ্ল্যাট থেকে । ভাংগা ভাংগা ইংরেজীতে পথচারীদের কাছ থেকে জেনে নেয় পুলিশ ষ্টেশনের হদিস । এসব ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের পুলিশের মতো, বৃটিশ পুলিশ ও ঝামেলা এড়াতে চায় । তাই পুলিশ ক্যারোলিনা তুলে দেয় ইমিগ্রেশন কর্তপক্ষের কাছে । ইমিগ্রেশন কর্তপক্ষ জানতে চায়, সে এস্যালাইমের আবেদন করতে চায় কিনা? কিন্তু ক্যারোলিনা তখন ফিরে যেতে চায় তার দরিদ্র, নোংরা,ভবিষ্যতহীন লিথুনিয়ায় । সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে ইমিগ্রেশন অফিসার তাকে তুলে দেয় লিথুনিয়ার ফিরতি বাসে । ক্যারোলিনা যখন ফিরে আসে তার গ্রামে,তখনো সবুজ সব্জীখামার তমেনি রয়ে গেছে । একটু ও বদলায়নি তার দুই বেডরুমের ছোট বাড়ী আর নোনা ধরা দেয়াল গুলো । ক্যারোলিনা এখন কাজ করে লিথুনিয়ার অন্য এক শহরে । একটা ছোট চাকরী আর এক বয়ফ্রেন্ড । বয়ফ্রেন্ড কিছুই জানেনা সেইসব । মাঝে মাঝে এখনো তাকে আতংক তাড়া করে ফেরে, যদি সেই সব অপহরনকারী'রা ফিরে আসে আবার? [ ১৯৯০ এর পটপরিবর্তনের পর থেকেই এর শুরু । পুর্বইউরোপের সাবেক সমাজতান্ত্রিক দরিদ্রদেশগুলো থেকে প্রতিদিন গড়ে ১০০০ নারীপাচার হয়ে আসছে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোতে । এদের বেশীরভাগকে উন্নত জীবনযাপন ও ভালো উপার্জনের লোভ দেখিয়ে এনে বিক্রী করে দেয়া হচ্ছে পতিতালয়গুলোতে । এ বছর উদযাপিত হচ্ছে, বৃটেনে দাসব্যবসা সমাপ্তির ২০০ বছর । কিন্তু দাসব্যবসা রয়ে গেছে এখনো সেই আগের মতোই- ভিন্ন নামে, ভিন্ন ধরনে । *** ক্যারোলিনার উপর একটা ডকুমেন্টারী দেখেছিলাম, এমনেষ্টি ইন্টারন্যাশনালের ওয়ার্কশপে । ]

মন্তব্য

সৌরভ এর ছবি
প্রথম অংশটা পড়ে এমনটাই ধারণা করছিলাম । ঘটনাগুলো সবই এইরকম, শুধু পট আর ব্যক্তি আলাদা । ফিলিপিনোরা, চাইনিজ মেয়েরা একই ঘটনার শিকার হচ্ছে জাপানে। ------ooo0------ বিবর্ণ আকাশ এবং আমি ..

আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি
খারাপ লাগল অন্যদেশের অন্যরংয়ের কুৎসিত মানুষের গল্প শুনে। আসলে সব কুৎসিত মানুষ একই ধরনের।
নজমুল আলবাব এর ছবি
আমাদেরও কী এমন গল্প নেই? আসলে এইসব গল্প সব পৃথীবিতে একই রকম। অনুবাদক সেটা কীভাবে অনুবাদ করলেন তার উপর পাঠের আরাম বেআরাম নির্ভর করে। .................. ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
হাসান মোরশেদ এর ছবি
ঐ আর কি । ঠিক অনুবাদ না মামু । একটা ডকু দেখেছিলাম । তার সারসংক্ষেপ আসলে । সপ্তাহ দুয়েক আগে জিমেইল করেছিলাম, '*****'কিছু তথ্য চেয়ে । পাওনি? নাকি মেইল চালাচালি নিরাপদ না? -------------------------- আমি সত্য না হইলে গুরু সত্য কোনকালে?

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

নজমুল আলবাব এর ছবি
পাইছিলাম, কিন্তু... আমি সেইটা বুচ্ছিরে বাপ... অনুবাদ বলতে বলছি জীবনের গল্পগুলারে অক্ষরে নিয়া আসারে। এইটাওতো একধরনের অনুবাদ... !!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!! ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
হাসান মোরশেদ এর ছবি
রিস্ক না হলে, ঐ সংক্রান্ত ডিটেইলস মেইল করো । দু' এক জায়গায় আলাপ করেছিলাম । তবে ডিটেইলস দরকার । -------------------------- আমি সত্য না হইলে গুরু সত্য কোনকালে?

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সুমন চৌধুরী এর ছবি
পড়লাম। এরকম অনেক ক্যারোলিনা,গালিয়েভা,মারিনাদের গল্প মনে পড়ছে একসাথে...লিখবো কখনো... ....................................... ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।