স্থানীয় সংবাদ

হাসান মোরশেদ এর ছবি
লিখেছেন হাসান মোরশেদ (তারিখ: শুক্র, ২৫/০৭/২০১৪ - ২:৩৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সংবাদ এক।

স্থানীয় পত্রিকা 'সুরমা টাইমস' এর ১৭ জুলাই তারিখে প্রকাশিতঃ

নগরীতে যানজট সৃষ্টি করা ও পুলিশের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার সঙ্গে অশালীন আচরণ করায় সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার পৌর মেয়রের ভাই কামাল চৌধুরীকে পিঠিয়েছে পুলিশ-জনতা। বৃহস্পতিবার ইফতারের আগমুহুর্তে নগরীর নয়াসড়ক পয়েন্টে এ ঘটনা ঘটেছে বলে মহানগর পুলিশের পদস্থ এক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন।
আহত কামাল আহমদ চৌধুরীকে ওসমানী মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যদর্শীরা জানান, কামাল চৌধুরী তার বহনকারী প্রাইভেটকারটি নয়াসড়ক পয়েন্ট সংলগ্ন রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখেন। এ সময় ট্রাফিক সার্জেন্ট তাকে গাড়িটি সরাতে অনুরোধ করেন। কয়েকবার বলার পরও গাড়ি না সরিয়ে পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হন তিনি।
এসময় কামাল নিজেকে ছাতক উপজেলা পৌর মেয়রের ভাই পরিচয় দেন। এক পর্যায়ে ওই পয়েন্টে সাদা পোষাকে কর্তব্যরত উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) এজাজ আহমদ এগিয়ে গিয়ে তাকে গাড়ি সরাতে নির্দেশ দেন। কিন্তু কামাল চৌধুরী রাগান্বিত হয়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করেন। পরবর্তীতে পুলিশ-জনতা মিলে তাকে গণধোলাই দিয়ে হাসপাতালে প্রেরণ করে।

বিস্তারিতঃ
নগরীতে পৌরমেয়রের ভাইকে পুলিশ জনতার গনধোলাই

নিউজমিরর২৪.কম থেকে ২৪ জুলাই তারিখে জানা যায়

সিলেট কতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) ৫ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা রুজুর নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত।
বৃহস্পতিবার দুপুর দেড় টার দিকে উচ্চ আদালতে বিচারক সালমা মাসুদ চৌধুরী ও মো. হাবিবুল গনির সমন্বয়ে গঠিত একটি বেঞ্চ পুলিশের আইজিপি এবং সিলেটের পুলিশ কমিশনারকে এ নির্দেশনা দেন।
এছাড়া সংশ্লিষ্ট ঘটনাটি তদন্ত করে ৪ সপ্তাহের মধ্যে এ সংক্রন্ত একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য মানবাধিকার সংস্থার চেয়ারম্যানকেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
অভিযুক্তরা হলেন, কতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান, ওসি (তদন্ত) শ্যামল বনিক, উপ পরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রহিম, উপ সহকারি পরিদর্শক (এএসআই) তাহের ও কনস্টেবল অধির।
ছাতক পৌর মেয়রের ভাই কামাল আহমদ চৌধুরীরকে নির্যাতনের অভিযোগে তার আরেক ভাই শামীম আহমদ চৌধুরী দায়েরকৃত রিট আবেদনের ভিত্তিতে উচ্চ আদালত এ নির্দেশনা দেন।

বিস্তারিতঃ
পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা নিতে হাইকোর্টের নির্দেশ

সিলেটভিউ২৪.কম ২৫ জুলাই তারিখে জানায়ঃ

তবে শেষ রক্ষা আর হয়নি আতাউরের। তারা ‘প্রিয় দুর্নীতির আখড়া’ কোতোয়ালি থানা ছাড়তেই হয়েছে তাকে। তার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে একটি রিটের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে তাকে রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে ক্লোজড হওয়ার শেষমুহূর্ত পর্যন্ত বিভিন্নভাবে উচ্চমহলে তদবির করেন যান তিনি। কিন্তু কোনো তদবিরেই কাজ হয়নি! -

বিস্তারিতঃ
ওসির শাস্তি

দেখা যাচ্ছে, একজন নাগরিক প্রথমে আইনভঙ্গ করেছেন। 'পুলিশ ও জনতা' মিলে তাকে গনধোলাই দিয়েছেন। আক্রান্ত নাগরিক আইনের আশ্রয় নিয়েছেন। যদিও তিনি নিজে সরকার দলীয় নেতার পরিবারের সদস্য, তবু ধরে নিচ্ছি মহামান্য আদালত এই পরিচয়কে প্রাধান্য দিয়ে তাদের সিদ্ধান্ত নেননি। একজন নাগরিক আইনভঙ্গ করলে ও তাকে 'জনতার' সাথে মিলে গনধোলাই দেয়া পুলিশের জন্য ক্ষমতা বহির্ভুত চর্চা।

সংবাদ দুই।

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম জুলাই ২১ তারিখের একটি সংবাদের শিরোনাম
'পুলিশের সহায়তায় সংখ্যালঘু পরিবারকে ভিটেমাটি ছাড়া করার অভিযোগ'
সংবাদের বিস্তারিত অংশের এক জায়গায় জানানো হয়েছে

গত ১৫ জুন ২০১৪ তারিখে তারা আমাকে ও আমার ভাই রঞ্জিত কুমার দত্তকে আটক ও হাতকড়া পরিয়ে জৈন্তাপুর থানায় নিয়ে যায়। পরে থানার ওসি হারুণ অর রশিদ চৌধুরী, এসআই মশিউর রহমান ও এসআই ফরহাদ আমাদেরকে স্বপরিবারে দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে যাওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। আমি ও আমার ভাই তাতে রাজি না হওয়ায় আমাদের উপর চালানো হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। এর পর ওসি হারুণ অর রশিদ চৌধুরী ও এসআই মশিউর রহমান নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে সাদা কাগজে জোরপূর্বক আমাদের স্বাক্ষর গ্রহন করেন।

বিস্তারিতঃ পুলিশের সহায়তায় সংখ্যালঘু পরিবারকে ভিটেমাটি ছাড়া করার অভিযোগ

কামাল চৌধুরী আদালতে যেতে পেরেছেন, কিন্তু জিতেন্দ্র কুমার দত্তকে কে নিয়ে যাবে আদালত প্রাঙ্গনে ন্যায় বিচারের ভরসায়?


মন্তব্য

দীনহিন এর ছবি

বিচ্ছিন্ন ও আপাত গুরুত্বহীন সংবাদ দুটি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, সংখ্যাগুরু হওয়ার কি মজা, আর সংখ্যালঘু হওয়ার কি জ্বালা!

একজন নাগরিক আইনভঙ্গ করলে ও তাকে 'জনতার' সাথে মিলে গনধোলাই দেয়া পুলিশের জন্য ক্ষমতা বহির্ভুত চর্চা।

কোন দ্বিমত নেই, তবু, 'আক্রান্ত নাগরিক আইনের আশ্রয় নিয়েছেন', নাকি আইনকে ক্ষমতার জোরে নিয়ন্ত্রন করেছেন, সে বিষয়ে সংশয় রয়েই গেছে!

তবু ধরে নিচ্ছি মহামান্য আদালত এই পরিচয়কে প্রাধান্য দিয়ে তাদের সিদ্ধান্ত নেননি।

এই 'ধরে নেয়া'র কারণ কি? যেমনটা তর্কের খাতিরে ধরে নেয়ার কথা বলা হয়, তেমনি ধরে নিয়েছেন? নাকি সত্যি সত্যি কোন যুক্তি আছে আপনার ধরে নেয়ার পেছনে?

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

হাসান মোরশেদ এর ছবি

যুক্তি আছে। একজন 'প্রকাশ্য'খুনীকে ও রক্ষা করে আইনের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে পুলিশের দায়িত্ব। 'জনতা'র সাথে মিলে কিংবা নিজে নিজেই সম্ভাব্য অপরাধীকে পেটানো পুলিশের জন্য ও অপরাধ। আদালতের কাছে এই বিষয়টি নিয়ে যেতে পারলে এবং প্রমান করতে পারলে আদালত তার দায়িত্ব পালন করবেন।
আমার কনসার্ণ, আদালতের কাছে যেতে পারার পথটুকু তৈরী করা। কামাল চৌধুরী যেতে পেরেছেন, প্রতিকার পথ তৈরী হয়েছে। জিতেন্দ্র কুমার ও যদি যেতে পারতেন তার ও প্রতিকারের পথ তৈরী হতো বলে আমি ভরসা রাখি।
কিন্তু এই বৈষম্যটুকু রয়ে যাচ্ছে।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

দীনহিন এর ছবি

আমার কনসার্ণ, আদালতের কাছে যেতে পারার পথটুকু তৈরী করা। কামাল চৌধুরী যেতে পেরেছেন, প্রতিকার পথ তৈরী হয়েছে।

আসলে যুক্তিটি দাঁড়াচ্ছে না, মোরশেদ ভাই!
আপনার কনসার্ন কিন্তু দূর হয়নি, মানুষের আদালতের কাছে যেতে পারার পথটুকু তৈরী হয়েছে, এমন কোন অকাট্য প্রমান লেখাটিতে নেই!
সংখ্যালঘুরা যেতে পারে না, তা তো আপনার লেখাতেই পরিষ্কার। পাশাপাশি, আদালতের পথ সংখ্যাগরিষ্ঠ জনতার জন্যও রুদ্ধ! বিচারব্যবস্থা এতই শোচনীয়!

কামাল চৌধুরী আদালতে যেতে পেরেছেন, আমাদের মতে, সরকারী দলের নেতা বলেই! কামাল চৌধুরীর আদালত অ্যাক্‌সেস এমনকি সংখ্যাগরিষ্ঠ জনতার জন্যও প্রতিনিধিত্বশীল নয়; সংখ্যালঘুর জন্য তো নয়ই, যা আপনিও দেখিয়েছেন!

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আমি ও কিন্তু সেটাই বলছি।
সরকার দলের নেতা বলেই আদালত কামাল চৌধুরীর পক্ষে ছিলেন- সেটা নয়। কামাল চৌধুরীর পক্ষে আইন ছিলো আদালত দাঁড়াতে পেরেছেন। জিতেন্দ্র কুমার ও যদি আদালত পর্যন্ত যেতে পারেন, তার পক্ষে ও আইন আছে এবং আদালত সেই আইনের বলে তার পক্ষে থাকবেন।
কিন্তু সমস্যা ঐ 'যেতে পারার' সক্ষমতার মধ্যে।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।